❏ ভারতের শাসন বিভাগ ✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮ 1. ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষ...

❏ ভারতের শাসন বিভাগ
✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮
1. ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ করো।
2. অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো।
3. ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বিবরণ দাও।
4. ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
________________
1. ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ করো।
▢ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি : ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই প্রকৃত শাসক। সংবিধানের ৭৫(১) নং ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে—
[1] লোকসভার নেতা : লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভা গঠন করেন। লোকসভার কার্যক্রম তিনি স্থির করেন। প্রধানমন্ত্রী লোকসভার কার্যপরিচালনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। লোকসভার অধিবেশন কখন ডাকা হবে, কতদিন চলবে, কোন কোন বিষয়ের ওপর আলোচনা চলবে সে-সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত নেন। অধিবেশন স্থগিত রাখা বা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে লোকসভায় সরকারি নীতিগুলি ব্যাখ্যা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলের ওপর বক্তৃতা ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করাও তাঁর প্রধান দায়িত্ব | কোনো মন্ত্ৰী লোকসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে অসুবিধায় পড়লে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সংসদে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রেখে চলেন।লোকসভা পরিচালনা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্পিকারকে সাহায্য করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য।
animated-new-image-0047 Read More ..... উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস MCQ সাজেশন ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২৪ মার্ক - ৮ উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত সাজেশন ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন ২০২৪ উচ্চমাধ্যমিক এডুকেশন সাজেশন ২০২৪
[2] মন্ত্রীসভার নেতা : সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রীসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা চূড়ান্ত। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য' বলে অভিহিত করলেও, এটা দেখা যায় যে, মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।
[3] সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা : প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা হিসেবে কাজ করেন। লোকসভার ভেতরে ও বাইরে তাঁকে দলের বা জোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে হয়। দল বা জোটের ঐক্য এবং সংহতি অটুট রাখা তাঁর দায়িত্ব। দল বা জোটের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকারি কাজকর্মের মাধ্যমে রূপায়ণ করার ব্যাপারে তাঁকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। দলের বা জোটের জনপ্রিয়তা রক্ষা ও বৃদ্ধি করার দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে। নির্বাচনে দল বা জোটের সাফল্যের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল।
[4] রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা : প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে সরকারের উচ্চপদাধিকারীদের নিয়োগ করেন। দেশের সমগ্র শাসনব্যবস্থা কার্যত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির নামে পরিচালিত হয়। সংবিধানের ৪২তম এবং ৪৪তম সংশোধনের ফলে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য।
[5] পররাষ্ট্রনীতির রূপকার : প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রনীতির প্রধান রূপকার। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সদর্থক ভূমিকা অবলম্বনের প্রধান দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। কমনওয়েলথ সম্মেলন, জাতিপুঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন, নির্জোট নেতাদের সম্মেলন এবং সার্ক বা আসিয়ানের মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
[6] জাতির নেতা : প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির নেতা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা বিশ্লেষণে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুধাবন, জনমতের উপলব্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার ওপর সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
▢ উপসংহার : ভারতের সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জোট সরকারের চল শুরু হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি তাঁর বিচক্ষণতা, সমন্বয়সাধনকারী নেতৃত্ব ও যোগ্য ব্যক্তিত্বের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
2. অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো।
❏ ভূমিকা : প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ এস. আর মাহেশ্বরী তাঁর State government in India গ্রন্থে বলেছেন: “of all the functionaries mentioned in the constitution the governor has clearly been the most powerful" সংবিধানের ১৫৫ ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালকে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি।
❏ রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলি হলো (১) শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা,(২) আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, (৩) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা, (৪) বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা, (৫) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
❏ শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা : সংবিধানের ১৫৪ (১) ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর নামে সম্পাদিত হয়। রাজ্যপালের শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর নিয়োগ-সংক্রান্ত ক্ষমতা। রাজ্যপাল এই ক্ষমতাবলে রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো অন্যান্য মন্ত্রীদেরও তিনি নিয়োগ করেন। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।
❏ আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার অচ্ছেদ্য অঙ্গ। রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহবান করা বা অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে। রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর হাতে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে সাধারণত রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে চলেন।
❏ আর্থিক ক্ষমতা : রাজ্যপালের সুপারিশ ছাড়া কোনো ব্যয়বরাদ্দের দাবি উত্থাপন করা যায় না। তাঁর অনমুতি নিয়েই অর্থবিল বিধানসভায় পেশ করা হয়। রাজ্যপালের তত্ত্বাবধানে থাকে জরুরি তহবিল।
❏ বিচার ক্ষমতা : রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে আইন অমান্য জনিত অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তিকে রাজ্যপাল ক্ষমা করতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপতির মতো তিনি কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করতে পারেন না।
❏ স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা : সংবিধানের ১৬৩ নং ধারায় রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। (i) রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে অসমের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে অসমের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে। (ii) রাষ্ট্রপতি যদি কোনো রাজ্যের রাজ্যপালকে পার্শ্ববর্তী কোনো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসক নিযুক্ত করেন, তা হলে তিনি ঐ অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার ব্যাপারে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।
❏ উপসংহার : দু-একটি ক্ষেত্র বাদ দিলে, ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে রাজ্যপালগণ মোটামুটিভাবে নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভূমিকা পালন করেছেন। সরোজিনী নাইডু সুন্দরভাবে বলেছেন, রাজ্যপাল হলেন সোনার খাঁচায় বন্দি পাখি” মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীমণ্ডলী প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী। আজও রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা সম্পর্কে বিতর্ক শেষ হয়নি। আমাদের সংবিধানের বিধানগুলিও অস্পষ্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের মধ্যেও সমতা নেই। সংবিধান সংশোধন করে এই অসংগতি দূর করা দরকার।
3. ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বিবরণ দাও।
❏ ভূমিকা : ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। সংবিধানের ১৫৩ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য একজন রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তবে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে। রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকার কথা তুলে ধরা যেতে পারে। রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক, তাই তাঁর পদটিকে নেহাত নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্ৰকাশ করেন।
❏ অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা :
[1] রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুসারে ক্ষমতা প্রয়োগ : সংসদীয় প্রশাসনে রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাজ্যপালকে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তা ছাড়া সংবিধানে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, রাজ্যপালকে পরামর্শ দান ও সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। রাজ্যপাল এই সাংবিধানিক নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বাধ্য।
[2] রাজ্য মন্ত্রীসভার দায়বদ্ধতা : সংবিধান অনুসারে রাজ্যের মন্ত্রীসভা তাদের সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য রাজ্য বিধানসভার কাছে যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকে, রাজ্যপালের কাছে নয়। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসক নন, তিনি একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসকমাত্র।
[3] মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা : নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল, বিধানসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, তার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করে থাকেন। রাজ্যপালের এই ক্ষমতা নেহাতই আনুষ্ঠানিক।
[4] মন্ত্রীসভা বাতিলের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা: মন্ত্রীসভাকে বাতিল করার যে ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে থাকে তাকেও তত্ত্বগত বলা হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রেও রাজ্যপাল কতকগুলি নিয়ম অনুসরণ করেই কাজ করেন। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের গরিষ্ঠতা হারালে মন্ত্রীসভা পদচ্যুত হয়। অতএব, রাজ্য মন্ত্রীসভার টিকে থাকার বিষয়টি বিধানসভাতেই স্থির হয়ে যায়। সংবিধানের ১৬৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’-র ওপর মন্ত্রীদের ক্ষমতাসীন থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল।
[5] জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি: অনেকে মনে করেন, সংবিধান রচয়িতারা রাজ্যপালকে নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কারণে তিনি নির্বাচিত না হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। তাই মন্ত্রীরা যেখানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সেখানে রাজ্যপাল হলেন রাষ্ট্রপতির দ্বারা মনোনীত একজন ব্যক্তিমাত্র।
[6] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: রাজ্যপালের যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রয়েছে, সেক্ষেত্রেও তিনি একনায়কের মতো যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। আদালতের বিভিন্ন রায়ে একথা বলা হয়েছে। ১৯৫০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে ঘোষণা করেন যে, রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়া স্বেচ্ছাধীনভাবে রাজ্যপালের কাজ করার ক্ষমতা নেই। গণপরিষদের সদস্যদের মধ্যে কৃষ্ণমাচারি এবং মুন্সী প্রমুখ এই মতামত ব্যক্ত করেন। আম্বেদকরের বক্তব্য, রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দায়িত্বশীল সংসদীয় ব্যবস্থায় কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এম ভি পাইলির মতে, এটা স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে যে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বাস্তবে চরম ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে না। কারণ চরম স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হল স্বৈরতন্ত্রের একটি উপাদান।
4. ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
▢ ভূমিকা : জরুরি অবস্থা বলতে কী বোঝায় তা সুস্পষ্ট বলা কঠিন। তাছাড়া ভারতীয় সংবিধানে কোনো সংজ্ঞা নির্দেশ করা হয়নি। তবে ডঃ কেভিয়ারের মতে, “জরুরি অবস্থা বলতে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে বোঝায়, যখন দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণ অনিবার্য বলে বিবেচিত হয়।”
▢ জরুরি অবস্থা-সংক্রান্ত ক্ষমতা : ভারতীয় সংবিধানের অষ্টাদশ অংশে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা-সংক্রান্ত ক্ষমতা আলোচনা করা হয়েছে। সংবিধানে জরুরি অবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা – (১) জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২নং ধারা), (২) রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা জনিত জরুরি অবস্থা (৩৫৬ নং ধারা), (৩) আর্থিক জরুরি অবস্থা (৩৬০ নং ধারা)।
▢ জাতীয় জরুরি অবস্থা : সংবিধানের ৩৫২ নং ধারা অনুসারে যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ কিংবা দেশের মধ্যে বিদ্রোহের ফলে সমগ্র ভারত বা তার কোনো অংশে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে অথবা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করলে রাষ্ট্রপতি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে আজ পর্যন্ত ভারতে মোট তিনবার রাষ্ট্রপতি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
▢ রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা (৩৫৬ নং ধারা) : কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের রিপোর্ট-এর ভিত্তিতে যদি রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হন যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালিত হচ্ছে না, তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
▢ উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে রাষ্ট্রপতির হাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে কার্যত সংবিধান প্রণেতাবর্গ গণতান্ত্রিক অযুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী নীতিগুলিকে সংবিধানের মধ্যে স্থান দিয়েছেন। তাই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং গণতন্ত্রপ্রিয় প্রতিটি মানুষ সংবিধানের ওই সব অগণতান্ত্রিক অংশকে বাতিল করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে।
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস MCQ সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২৪ মার্ক - ৮
- উচ্চমাধ্যমিক সংস্কৃত সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল সাজেশন ২০২৪
- উচ্চমাধ্যমিক এডুকেশন সাজেশন ২০২৪
No comments
Hi Welcome ....