Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

class 12 political science suggestion 2024 ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা

❏ ভারতের বিচারব্যবস্থা ✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮ 1. ভারতের কোনো রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা ক...



❏ ভারতের বিচারব্যবস্থা
✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: প্রতিটি প্রশ্নের মান-৮

1. ভারতের কোনো রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো।
2. ভারতের লোক আদালতের গঠন, ক্ষমতা কার্যাবলি বর্ণনা করো।
3. ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
4. “ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক”—আলোচনা করো।

___________________

1. ভারতের কোনো রাজ্যের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো।
❏ ভূমিকা :
সংবিধানের ২১৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ থাকবে। তবে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতে বর্তমানে ২৯টি রাজ্যে মোট ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে। সংবিধানের ২১৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ভারতীয় নাগরিকত্ব, যে-কোনো বিচারবিভাগীয় পদে কমপক্ষে ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা, হাইকোর্ট বা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে ১০ বছর একটানা আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যিক। হাইকোর্টের বিচারপতিরা বর্তমানে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকতে পারেন। তবে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগের ভিত্তিতে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন। রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি দেওয়া হয়।

❏ হাইকোর্টের ক্ষমতা / গঠন ও কার্যাবলি : হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে—
[1] মূল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা : রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্গত। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সব হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা নেই শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রয়েছে।

[2] আপিল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা : রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হল হাইকোর্ট। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। হাইকোর্টের কোনো বিচারকের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এছাড়া আইন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে কোনো অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় ঊর্ধ্বতন আদালত যে রায় দেয় তার বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে সাত বছরের অধিক কারাদণ্ড দিলে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এ ছাড়া কয়েকটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে।

[3] লেখ জারির ক্ষমতা : সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্টগুলি নিজ নিজ এলাকায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ ও আদেশ জারি করতে পারে [২২৬(১) নং ধারা]। প্রসঙ্গত বলাযায়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি সংরক্ষণ করা ছাড়াও হাইকোর্ট অন্য যে-কোনো উদ্দেশ্যে লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও হাইকোর্টের ‘বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ’ ধরনের লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করা যায় না।

[4] সাংবিধানিক বৈধতা বিচারের ক্ষমতা : কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার ক্ষমতাও হাইকোর্টের হাতে রয়েছে। এক্ষেত্রে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে প্রণীত যে-কোনো আইনকে হাইকোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে।

[5] তত্ত্বাবধান-সম্পর্কিত ক্ষমতা : সংবিধানের ২৭৭ নং ধারা অনুযায়ী সামরিক আদালত ও সামরিক ট্রাইব্যুনাল ছাড়া নিজ এলাকাভুক্ত অন্য সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালগুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতগুলিকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও হাইকোর্টের রয়েছে।

[6] মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা : সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে (২২৮ নং ধারা)।

[7] নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা : অধস্তন আদালতগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। জেলা আদালত ও অন্যান্য অধস্তন আদালতের বিচারপতি, কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

[8] অন্যান্য ক্ষমতা : হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে। হাইকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন নিজে তৈরি করতে পারে। ও হাইকোর্ট অভিলেখ আদালত হিসেবে (
Court of Records) কাজ করে থাকে।

❏ উপসংহার : অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে হাইকোর্টের গঠন ও ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি অঙ্গ। হাইকোর্টের গঠন ও কাজকর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি, অপসারণ, নতুন হাইকোর্ট গঠন, এক্তিয়ার সীমিতকরণ, বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস ইত্যাদি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাছাড়া হাইকোর্টের যে-কোনো সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করে দিতে পারে এবং সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশিত বিধিবিধান অনুসরণ করা হাইকোর্টের পক্ষে বাধ্যতামূলক। সুতরাং, হাইকোর্টকে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থেকে সহায়ক আদালত হিসেবে বিচারকার্য সম্পদান করতে হয়।

2. ভারতের লোক আদালতের গঠন, ক্ষমতা কার্যাবলি বর্ণনা করো।
❏ ভূমিকা :
ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় লোক আদালত হল প্রচলিত আদালতগুলির বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির একটি বিকল্পব্যবস্থা। বিচারব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের কাছে স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে পৌঁছে দেওয়ার এক প্রগতিশীল পদক্ষেপ হল লোক আদালত। ভারতবর্ষের বিচারব্যবস্থা ক্রমশ ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের লক্ষ্যে লোক আদালত গঠন করা হয়।

❏ লোক আদালতের গঠন : ভারতের বিচারব্যবস্থার একটি সাম্প্রতিক মৌলিক সংযোজন হল লোক আদালত বিচারব্যবস্থাকে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে লোক আদালত গঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে ভারত সরকারের আইনমন্ত্ৰক ‘আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৮৭' (
Legal Service Authorities Act, 1987) নামে যে আইন প্রবর্তন করেন তাতে সমাজের দুর্বলতর শ্রেণিকে বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দেওয়ার জন্য লোক আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৪ সালে এই আইনটি সংশোধন করে কেন্দ্র, রাজ্য, জেলা ও তালুকে ‘আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়। এই কর্তৃপক্ষের হাতে লোক আদালত গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। লোক আদালত একজন জেলা বিচারক এবং তাঁর মনোনীত কোনো অধস্তন বিচারক অথবা কোনো ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে গঠিত হয়।

❏ লোক আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : লোক আদালত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ করে। আইন-আদালত সম্পর্কে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ধারণা পোষণ করা হয় লোক আদালত সেরকম নয়। লোক আদালতে জটিল বিষয়গুলি বিচারের জন্য গৃহীত হয় না। সাধারণত যেসব মামলার দীর্ঘদিন কোনো নিষ্পত্তি হয়নি, ও বিচারের আগে অন্য কোনো আদালত বা বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো বিরোধের বিষয় ইত্যাদি লোক আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়। তবে লোক আদালতের বিচারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সম্মতি আবশ্যক। তাই লোক আদালতের বিচারকে একতরফা বিচার বলা যায় না। সাধারণত, ক্ষতিপূরণ-সম্পর্কিত দাবি, বিবাহ সংক্রান্ত বিরোধ, বিমা কোম্পানিগুলির কাছে অর্থদাবি ইত্যাদি বিষয় লোক আদালতের বিচারাধীন। প্রসঙ্গত বলা যায়, লোক আদালতের রায় চূড়ান্ত। এই রায় মানতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি বাধ্য। লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যায় না।

❏ উপসংহার : লোক আদালত একটি বিকল্প বিচারালয় হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিচারবিভাগের চিরাচরিত কাঠামোর বাইরে লোক আদালত এক বিকল্প বিচারব্যবস্থা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। জোহারির মতে, লোক আদালত বিবদমান পক্ষগুলির কাছে বন্ধু ও পথপ্রদর্শক হিসেবে এমনভাবে কাজ করে যাতে তারা একটা বোঝাপড়া বা মীমাংসায় পৌঁছোতে পারে।

3. ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
❏ ভূমিকা :
ক্রেতা আদালত এক বিশেষ ধরনের আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারির মতন চিরাচরিত আদালতগুলি এমনকি হাল আমলের লোক আদালতের থেকেও এর প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের। ক্রেতা আদালতের অপর নাম ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। আইনের ভাষায় ‘ক্রেতা’-কে বলা হয় ‘কনজিউমার’ উপভোক্তা। সাধারণভাবে যাঁরা হাট, বাজার, দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্য দিয়ে কোনো জিনিস বা পরিসেবা ক্রয় করে থাকেন তাঁদের ক্রেতা বা কনজিউমার বলা হয়। এই ক্রেতা কোনো জিনিস বা পরিসেবা কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন, তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত (
Consumer Court)। প্রসঙ্গত বলা যায়, ভারতে ১৯৮৬খ্রিস্টাব্দে ‘ক্রেতাসুরক্ষা আইন’ (Consumer Protection Act, 1986) অনুসারে ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়।

❏ ক্রেতা আদালতের উদ্দেশ্য : ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই তার মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার অভিযোগ বা নালিশের আইনসম্মত সুষ্ঠু প্রতিকার বা নিষ্পত্তিবিধানই এর উদ্দেশ্য। দেশের ক্রেতা সাধারণের উপকার ও সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যেই গঠিত হয় ক্রেতা আদালত।

❏ ক্রেতা আদালতের গঠন : ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তর রয়েছে এগুলি হল— (i) জেলা স্তরের ক্রেতা আদালত, (ii) রাজ্য স্তরের ক্রেতা আদালত এবং (iii) জাতীয় স্তরের ক্রেতা আদালত। ক্রেতা সুরক্ষা আইনে অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে আদালতের পরিবর্তে ‘কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল এজেন্সিজ’ ক্রেতা বিরোধ নিষ্পত্তির এজেন্সি বলে অভিহিত করা হয়েছে। যাই হোক, বর্তমানে সারা ভারতে জেলাস্তরে ক্রেতা আদালত রয়েছে ৪৫০টিরও বেশি। রাজ্যস্তরে প্রতি রাজ্যে আছে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন ও জাতীয় স্তরে রয়েছে জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন।

[1] জেলা ক্রেতা আদালত: সাধারণভাবে প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা ক্রেতা আদালত রয়েছে। অবশ্য রাজ্য সরকার প্রয়োজন মনে করলে একটি জেলায় একাধিক ক্রেতা আদালতও স্থাপন করতে পারেন। জেলা ক্রেতা আদালত ৩ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছেন একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, বাকি দুজন হলেন কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রিধারী মহিলা এবং পুরুষ। এই আইন অনুসারে জেলা জজ হবেন জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি। বাকি দুজন হবেন এর সদস্য। এর প্রত্যেক সদস্য পাঁচ বছরের জন্য অথবা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওই পদে থাকতে পারবেন।

[2] রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন: রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন রাজ্যস্তরে কাজ করে। একজন সভাপতি ও অন্য দুজন সদস্য, মোট তিনজনকে নিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন গঠিত হয়। হাইকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অন্য দুজন সদস্য হলেন কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন মহিলা ও একজন পুরুষ। রাজ্য কমিশনের সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য অথবা ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন। জেলা ক্রেতা আদালত ও রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশনের সদস্যদের বেতন, ভাতা এবং চাকরির শর্তাবলি রাজ্য সরকার নির্ধারণ করে।

[3] জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন: জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন জাতীয় স্তরে কাজ করে। জাতীয় কমিশন একজন সভাপতি ও চারজন সদস্যসহ মোট পাঁচজনকে নিয়ে গঠিত হয়। সুপ্রিমকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অন্য চারজন সদস্যকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক ও স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। এঁদের মধ্যে একজন হবেন মহিলা। এই সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য বা সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন। জাতীয় কমিশনের সদস্যদের বেতন ও চাকরির শর্তাবলি কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করে। জাতীয় কমিশন নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। তবে সার্কিট বেঞ্চ হিসেবে এই কমিশন দেশের অন্য জায়গাতেও তার কাজ করতে পারে।

❏ ক্রেতা আদালতের বৈশিষ্ট্য : ক্রেতা আদালত প্রচলিত আদালতগুলির চেয়ে একেবারে ভিন্ন। ক্রেতা আদালতের কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে—
[1] শুধু ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত : ক্রেতা আদালত শুধুমাত্র ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত। এই আদালতে ক্রেতা বা উপভোক্তা ছাড়া অন্য কেউ এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে যে আইনে ক্রেতা আদালতের জন্ম হয়, সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এই আইনের লক্ষ্য হল শুধুমাত্র ক্রেতার সুরক্ষা, বিক্রেতার নয়। বিক্রেতা বা পরিসেবা প্রদানকারী তার নিজের অভিযোগ নিয়ে ক্রেতা আদালতে আসতে পারেন না এবং ক্রেতা আদালতও ওই নালিশ গ্রহণ করতে বা বিচার করতে পারেন না।

[2] তিনটি স্তরে বিন্যস্ত : ক্রেতা আদালত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। শীর্ষে রয়েছে জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন, তার পরবর্তী ধাপে রয়েছে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন এবং সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছে জেলা ক্রেতা আদালত। এই আইনে ক্রেতা-বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘এজেন্সি’ বলা হয়ে থাকে।

[3] শুধুমাত্র বাদী পক্ষ বা অভিযোগকারীর নালিশ: ক্রেতা আদালতের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে শুধুমাত্র বাদী পক্ষ অর্থাৎ ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে নালিশ গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য আদালতে বাদী ও বিবাদী দু-পক্ষেরই নালিশ বা অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

[4] ক্রেতা আদালতের আদেশ আপিলযোগ্য : এখানে তিন স্তরের আদালতের আদেশই আপিলযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, যেমন, জেলা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাজ্য কমিশনে আপিল করা যায়। অনুরূপভাবে, রাজ্য কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করা যায়। সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় সুপ্রিমকোর্টে।

[5] দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ও ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রয়োগ: ক্রেতা আদালতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এখানে মামলা বিচারের সময় প্রয়োজন হলে দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ও ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রয়োগ ঘটানো যায়। যেমন, কোনো সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে সমন পাঠিয়ে ক্রেতা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা, হলফনামার আকারে সাক্ষ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি।

4. “ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক”—আলোচনা করো।
❏ সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা :
সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুইটজারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের তুলনায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা যথেষ্ট ব্যাপক ও শক্তিশালী। কৃষ্ণস্বামী আয়ারের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের শীর্ষ আদালতের চেয়ে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট অধিক ক্ষমতা ভোগ করে (
The Supreme Court in the Indian Union has more powers than any Supreme Court in any part of the world)। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত, সর্বোচ্চ আপিল আদালত, সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা এবং মৌলিক অধিকারের সংরক্ষক। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবেও সুপ্রিমকোর্টের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

❏ সুপ্রিমকোর্ট ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক :
[1] সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা :
সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোনো অংশের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। তাঁর এই ব্যাখ্যা অস্বীকার করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের নেই। পার্লামেন্টের আইনকানুন এবং সংবিধানের যে-কোনো অংশের ব্যাখ্যা সুপ্রিমকোর্ট করতে পারে।

[2] মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা : ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশে বর্ণিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের। ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের এই ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংবিধান রচয়িতারা মৌলিক অধিকারগুলির গণতান্ত্রিক কাঠামো সংরক্ষণের দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টকে দিয়ে ১৩(২) নং ধারায় বলেছেন, মৌলিক অধিকারগুলিকে ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো আইন রাষ্ট্র প্রণয়ন করতে পারবে না। সুপ্রিমকোর্ট নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এভাবে বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্ট-প্রণীত আইন এবং রাষ্ট্রপতির নির্দেশ বাতিল করেছে।

[3] সর্বোচ্চ আপিল আদালত: দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ও সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিমকোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। সামরিক আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য যে-কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।

[4] রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা : ভারতীয় সংবিধানের ১৪৩(১) , ১৪৩(২) নং ধারা অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারে।

[5] বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা : পার্লামেন্টের আইন, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের আদেশ সংবিধানবিরোধী কি না তা বিচার করে দেখার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। পার্লামেন্টের আইন বা রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের আদেশ বা নির্দেশ সংবিধানসম্মত না হলে সুপ্রিমকোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সুপ্রিমকোর্টের অবৈধ ঘোষণার ফলে সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ বা নির্দেশটি বাতিল হয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে ‘বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা’ বলা হয়। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭০ সালে রাজন্যভাতা বিলোপ-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ বাতিল করে দেয়।

❏ উপসংহার : ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে আজও স্বীয় ক্ষমতায় আসীন। ৪৪তম সংবিধান সংশোধনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মতো শক্তিশালী না হলেও ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ব্রিটেনের বিচার বিভাগের মতো দুর্বলও নয়। সুপ্রিমকোর্ট স্বয়ং একটি মামলার রায়ে জানিয়েছিল যে, এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান মধ্যবর্তী পর্যায়ে। ভারতের সাম্প্রতিককালের সাংবিধানিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। সাম্প্রতিককালে সুপ্রিমকোর্ট প্রচলিত এক্তিয়ারের বাইরে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে (বিচারপতিদের বদলি, নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পরিবেশ সংরক্ষণ, রাজনৈতিক দুর্নীতি প্রভৃতি) ঐতিহাসিক রায়দানের পরিপ্রেক্ষিতে তার ভূমিকাকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। অনেকে একে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বা ‘
Judicial activism' বলে অভিহিত করেছেন।

No comments

Hi Welcome ....