Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

সাঁওতাল-বিদ্রোহ-টীকা-কারণ-ও-ফলাফল

  The Santal Rebellion ( সাঁওতাল বিদ্রোহ ) {tocify} $title={Table of Contents} ✱   সাঁওতাল বিদ্ৰোহ? ▹ সাঁওতালরা ছিল সরল প্রকৃতির, কঠোর পরিশ্...

সাঁওতাল বিদ্রোহ টীকা
 

The Santal Rebellion (সাঁওতাল বিদ্রোহ)


{tocify} $title={Table of Contents}

 সাঁওতাল বিদ্ৰোহ?
সাঁওতালরা ছিল সরল প্রকৃতির, কঠোর পরিশ্রমী ও কৃষিজীবী আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা বাংলার মুর্শিদাবাদ এবং বিহারের ভাগলপুর অঞ্চলের মাঝামাঝি ‘দামিন-ই-কোহ” অঞ্চলে বসবাস করত। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা যে সংগ্রাম করেছিল তা ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ' নামে পরিচিত।

সাঁওতাল বিদ্ৰোহ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ৩০ জুন
সাঁওতাল জনসংখ্যা  ৮২,৭১৫ (১৮৫১)
সাঁওতাল গ্রাম ১৪৩৭টি
বিদ্ৰোহের প্রধান নেতা সিধু, কানু
বিদ্ৰোহে নেতৃত্ব দেয় সিধু, কানু ছাড়াও চাঁদ ও ভৈরব নামে দুই ভাই এবং বীর সিং, কালো প্রামাণিক, ডোমন মাঝি

সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণসমূহ : কঠোর পরিশ্রমী, শান্তিপ্রিয় ও সরল প্রকৃতির আদিবাসী সাঁওতালরা কোম্পানি সরকারের ভূমিরাজস্ব নীতির কারণে ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল থেকে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের একাংশে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তারা জঙ্গল কেটে ও পাথুরে জমিকে আবাদযোগ্য করে তুললে কোম্পানি সরকার সেখানেও রাজস্ব আরোপ করে নতুন আইনকানুন চাপায়৷ এমতাবস্থায় বহিরাগতদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিধু, কানু প্রমুখ নেতার নেতৃত্বে সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কোম্পানি সরকারের সামরিক বাহিনী ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্রোহ দমন করলেও তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি।
(১) উচ্চহারে রাজস্ব আদায় : ইংরেজরা রাজস্ব দিতে বলায় সাঁওতালরা নিজেদের আদি বাসভূমি ছোটোনাগপুর অঞ্চল পরিত্যাগ করে রাজমহল পাহাড়ের পাদদেশে বীরভূম ও মুরশিদাবাদ এসেছিল এই কারণে যে, সেখানে ভূমিরাজস্ব দিতে হবে না। কিন্তু তারা পাথুরে জমিকে চাষযোগ্য করে তুললে ভাগলপুরের কালেক্টর ক্লিভল্যান্ড এই এলাকাতেও রাজস্ব ধার্য করে এবং জমিদাররা সরকার-নির্দিষ্ট রাজস্বের বহুগুণ সাঁওতালদের কাছ থেকে জোর করে আদায় করত।
(২) মহাজনদের শোষণ: সরকার নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় নগদ অর্থে খাজনা দেওয়ার রীতি চালু করায় সাঁওতালরা নগদ অর্থের জন্য মহাজনদের কাছে ফসল বিক্রি করত এবং চড়া সুদে (৫০% থেকে ৫০০ %) ঋণ দিতে বাধ্য হত। সুদখোর মহাজনরা সাঁওতালদের নিরক্ষরতা ও দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে ‘কামিয়াতি’ ও ‘হারওয়াতি’ নামে দু-ধরনের বন্ডে সই করিয়ে নিতেন এবং তাদের জমিতে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করতেন।
(৩) ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি : সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সরলতা ও অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে সাঁওতালদের ঠকাত। তারা সাঁওতালদের কাছ থেকে কিছু কেনার সময় ‘কেনারাম’ নামক বেশি ওজনের বাটখারা এবং সাঁওতালদের বিক্রি করার সময় ‘বেচারাম’ নামক কম ওজনের বাটখারা ব্যবহার করে ঠকাত।
(৪) রেল কর্মচারী ও ঠিকাদারদের অত্যাচার : ডালহৌসির সময়কালে রাজমহল, রামপুরহাট, ভাগলপুর প্রভৃতি অঞ্চলে রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। সেখানকার স্থানীয় সাঁওতালরা রেলের কাজে শ্রমিক হিসেবে যুক্ত হয়। কিন্তু রেল কর্মচারী ও ঠিকাদাররা তাদের প্রাপ্য মজুরি না দিয়ে নামমাত্র মজুরিতে খাটাত; এমনকি তাদের হাঁস, মুরগি, ছাগল কেড়ে নিত ও সাঁওতাল রমণীদের ওপর অত্যাচার চালাত।
(৫) নিজস্ব আইন ও সম্মানে আঘাত : কোম্পানি সরকার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য নতুন আইন ও বিচারব্যবস্থা প্রচলন করে। এই নতুন আইন ও বিচারব্যবস্থা সাঁওতালদের ঐতিহ্য ও পরম্পরায় আঘাত হানে, যা তারা মেনে নিতে পারেনি।
 ❏ সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলাফল/গুরুত্ব :
(১) সাঁওতাল পরগনা গঠন : সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনের পর ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের প্রতি নমনীয় মনোভাব গঠন করে উত্তরে গঙ্গার কাছাকাছি তেলিয়াগড়াই পরগনার সঙ্গে বীরভূম ও ভাগলপুর থেকে ৯ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে সাঁওতালদের জন্য সাঁওতাল পরগনা নামে একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড গঠন করে। এই এলাকায় ব্রিটিশ আইনবিধি কার্যকর না হয়ে সাঁওতালদের চিরাচরিত নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা কার্যকরী হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
(২) বিশেষ সুবিধা প্রদান: এই বিদ্রোহের পর ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সাঁওতাল পরগনায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশবাহিনীর বদলে মাঝি, পরগনায় প্রভৃতি সাঁওতাল গোষ্ঠীপতিদের হাতে ক্ষমতা প্রদান করে। এছাড়া বাজেয়াপ্ত গবাদি পশু সাঁওতালদের ফিরিয়ে দেয়।
(৩) বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি : সাঁওতালদের দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, সরলতার সুযোগ নিয়ে বহিরাগত মহাজন, ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের বিভিন্নভাবে ঠকাত। তাই বিদ্রোহের পর বহিরাগতদের অত্যাচার ও শোষণ কমানোর উদ্দেশ্যে সাঁওতাল পরগনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়।
(৪) খ্রিস্টান মিশনারিদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি : বহিরাগতদের সাঁওতাল পরগনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও সরকার ইউরোপীয় খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রবেশে অবাধ সুযোগ করে দিয়েছিল। ফলে খ্রিস্টধর্ম প্রচার, শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে মিশনারিরা সাঁওতালদের উন্নতি সাধন করার সুযোগ পায়।

উপসংহার : সাঁওতাল উপজাতি তাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষার জন্য এবং বিভিন্ন শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে সাঁওতাল ছাড়াও অন্যান্য জাতি ও পেশার স্থানীয় মানুষরা এই বিদ্রোহে যোগদান করে বিদ্রোহটিকে গণবিদ্রোহে পরিণত করেছিল। গবেষক সুপ্রকাশ রায়ের মতে, এই বিদ্রোহ ছিল মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত স্বরূপ।

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।

▹ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্র, বরুণ দে, অমলেশ ত্রিপাঠী প্রমুখ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, অরণ্যে সাঁওতালদের অধিকারকে কেন্দ্র করেই সাঁওতাল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছিল। কেউ একে উপজাতি বিদ্রোহ, কেউ গণবিদ্রোহ, কেউ কৃষক বিদ্রোহ রূপে চিহ্নিত করেছেন।

সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র :
  • উপজাতি বিদ্রোহ : সাঁওতালরা ভারতের অন্যতম আদিম উপজাতি। ব্রিটিশদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই তারা এই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। তাই অনেকেই একে একটি উপজাতি বিদ্রোহ বলেছেন ৷
  • নিম্নশ্রেণির গণবিদ্রোহ : এই বিদ্রোহে তাঁতি, কুমোর, কামার, জেলে, মুচি প্রভৃতি নানা পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল। তাই অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ সাঁওতাল বিদ্রোহকে 'নিম্নশ্রেণির গণবিদ্রোহ বলেছেন।
  • ব্রিটিশ বিরোধী গণবিদ্রোহ : সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকার বিরোধী হওয়ায় একে অনেকে ব্রিটিশ বিরোধী গণবিদ্রোহ বলেছেন। আবার কোনো ঐতিহাসিকেরা মতে, এই বিদ্রোহের প্রধান কারণ হচ্ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা। গবেষক সুপ্রকাশ রায় একে প্রথম মুক্তিসংগ্রাম বলেছেন।
  • কৃষক বিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের সংখ্যা ছিল অনেক। তাই কেউ কেউ এটিকে কৃষক বিদ্রোহও বলেছেন।
  • উপসংহার : প্রাবল্য ও গভীরতার বিচারে সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ভিন্ন ধরনের। তা সত্ত্বেও এই গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
❐ আরো পড়ুনঃ 

✱ সাঁওতাল বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ আলোচনা করো।

সিধু, কানু প্রমুখের নেতৃত্বে আদিবাসী সাঁওতালরা নিজেদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করা এবং স্বাধীনভাবে বসবাসের জন্য ইংরেজ সরকার ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগনাডিহির মাঠে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। কিন্তু শেষপর্যন্ত নিম্নলিখিত কারণে এই বিদ্রোহ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে দমিত হয়।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ :
(১) ইংরেজদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী : সিধু, কানুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা সশস্ত্র বিদ্রোহ করলেও তাদের অস্ত্র ছিল পুরোনো তিরধনুক, বল্লম, কুঠার প্রভৃতি। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বিদ্রোহ দমন করার জন্য অশ্বারোহী, পদাতিক, হস্তী ও কামান বাহিনী প্রভৃতি পূর্ব ভারতের যেখানে যত বাহিনী ছিল সব সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় জড়ো করেছিল। এমনকি নীলকর সাহেব ও জমিদাররা অস্ত্র, সৈন্য, হাতি, রসদ ও অর্থ দিয়ে ইংরেজ বাহিনীকে সাহায্য করায় এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়।
(২) যোগ্য নেতৃত্বের অভাব : সাঁওতাল বিদ্রোহে সিধু ও কানুর মতো নেতারা নেতৃত্ব দিলেও বিদ্রোহকে সংগঠিত ও শক্তিশালীভাবে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। এমনকি সিধু, কানুকে গ্রেফতারের পর সাঁওতাল বিদ্রোহকে নেতৃত্ব দেওয়ার তেমন কেউ না থাকায় ইংরেজ সেনাপতি মেজর বারোজ ও মেজর সাকবার্গের মতো অভিজ্ঞ সেনাপতিরা এই বিদ্রোহ দমন করেন।
(৩) ইংরেজদের কূটনীতি ও উন্নত রণকৌশল প্রয়োগ : ইংরেজরা সাঁওতাল বিদ্রোহীদের মধ্যে ফাটল তৈরি করে বিদ্রোহকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের নীতি গ্রহণ করেছিল এবং বিদ্রোহীদের এলাকার এক একটি দিক আক্রমণ করে পর্যুদস্ত করেছিল।
(৪)  বিদ্রোহের আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা : সাঁওতাল বিদ্রোহে সাঁওতাল উপজাতিদের সঙ্গে স্থানীয় নিম্নবর্ণের মানুষরা যোগদান করলেও এই বিদ্রোহ বীরভূম, ভাগলপুর, মুঙ্গেরের মধ্যেই সীমিত ছিল। শিক্ষিত ও শহুরে সম্প্রদায়ের মানুষ এই বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি। বরং দেশীয় রাজা বা নবাব, জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ীরা এই বিদ্রোহ দমনে সরকারকে সাহায্য করেছিল।
উপসংহার : ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ দমন করা হলেও এই বিদ্রোহের পর ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের জন্য 'সাঁওতাল পরগনা’ নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করে এবং তাদের পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সর্বোপরি এই বিদ্রোহে সাঁওতালরা যে অসীম বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে তা পরবর্তী বিদ্রোহ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যোগায়।

✱ সাঁওতাল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

▹ আদিবাসী সাঁওতালরা বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুশিকার ও পশুপালন, চাষাবাদের মাধ্যমে সহজ-সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ইংরেজ কোম্পানি সরকারের নতুন ভূমিব্যবস্থা ও বহিরাগত জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের অত্যাচার ও শোষণে বিপর্যস্ত ও হতাশ হয়ে অরণ্যে নিজেদের অধিকার ও স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার উদ্দেশ্যে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব, ডোমন মাঝি, কালো প্রামাণিক প্রমুখ নেতার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এই বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল—

সাঁওতাল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য :
(১) সর্বস্তরের মানুষের যোগদান : সাঁওতাল উপজাতির বিদ্রোহে সাঁওতালরা ছাড়াও স্থানীয় নিম্নবর্ণের কামার, কুমোর, তাঁতি, তেলি, ডোম প্রভৃতি জাতি ও পেশার মানুষ যোগদান করেছিল। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহ গণবিদ্রোহে পরিণত হয়েছিল।
(২) সশস্ত্র বিদ্রোহ : সাঁওতালরা তিরধনুক, বল্লম, কুঠার নিয়ে ইংরেজ সেনার বিরুদ্ধে অসীম সাহসে লড়াই করেছিল। এমনকি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা দলবেঁধে জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ীদের ওপর আক্রমণ করেছিল; রেলস্টেশন, থানা, সরকারি অফিস-কাছারি, জমিদার ও মহাজনদের ঘরবাড়ি ভাঙতে উদ্যত হয়েছিল। তাই এই বিদ্রোহকে সশস্ত্র উপজাতি বিদ্রোহ বলা হয়।
(৩) স্বত:স্ফূর্ত বিদ্রোহ : ঔপনিবেশিক শাসক ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, অরণ্যের ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং উপজাতীয় ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করতে সাঁওতালরা বদ্ধপরিকর ছিল। তাই তারা বাইরের কারও দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত না হয়ে তাদেরই উপজাতীয় নেতাদের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।
(৪) ধর্ম প্রভাবিত বিদ্রোহ : খ্রিস্টান মিশনারিদের সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় ধর্মান্তর করণ বন্ধ করতে এবং বহিরাগত ইংরেজ, জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে শক্তিশালী করতে সিধু, কানু ধর্মকে ব্যবহার করেছিলেন। সিধু ও কানু ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁরা ঠাকুরের স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন ভাগনাডিহিতে তাঁদের বাড়িতে ঠাকুরের আবির্ভাব ঘটবে এবং ঠাকুর সাঁওতালদের হয়ে যুদ্ধ করবেন। এ ছাড়া তারা মহাজন, ইংরেজসহ বহিরাগতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে পাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে প্রচার করে আদিবাসীদের বিদ্রোহে শামিল করেছিল।
(৫) বিদ্রোহের নৃশংসতা : সাঁওতালরা জমিদার, মহাজন, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারীদের অত্যাচার ও শোষণে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল। ক্ষুব্ধ সাঁওতালরা বিদ্রোহের সময় জমিদার, মহাজন ও পুলিশদের আক্রমণ ও হত্যা করে এবং সরকারি অফিস, রেলস্টেশন; জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। কুখ্যাত মহাজন কেনারাম ভগত এবং দিঘিথানার দারোগা মহেশলাল দত্তকে তারা হত্যা করেছিল।
উপসংহার : চিরায়ত অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সাঁওতালরা সশস্ত্রভাবে যে বিদ্রোহ করেছিল তাতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যোগদান করেছিল। তাদের এই বিদ্রোহ পরবর্তী বিদ্রোহের অনুপ্রেরণা ছিল। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে যদি স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে মনে করা হয় তাহলে সাঁওতাল বিদ্রোহকেও স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যাদা দেওয়া উচিত।

No comments

Hi Welcome ....