Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

Class 5 Bengali Tal Navami Question Answer | তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পের প্রশ্ন উত্তর

পঞ্চম শ্রেণী বাংলা পাতাবাহার | তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পের  হাতেকলমে  প্রশ্ন উত্তর ❐ আরো পড়ুনঃ  পঞ্চম শ্রেণী বাংলা প্রশ্নও উত...

Class 5 Bengali Talnabami

পঞ্চম শ্রেণী বাংলা পাতাবাহার | তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গল্পের হাতেকলমে প্রশ্ন উত্তর

(toc) #title=(Table of Content)


তালনবমী—বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

❐ লেখক পরিচিতি :
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বসিরহাটের এক গ্রামে। বহু উপন্যাস, ছোটো গল্প, ভ্রমণ কাহিনি ও শিশুসাহিত্য তিনি রচনা করেন। গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও সামাজিক জীবনযাত্রাকে লেখক খুব ভালোবাসতেন। তাই গ্রামবাংলার দুঃখ, দারিদ্র্য, স্বপ্ন, আশা এবং পল্লি প্রকৃতি ও অরণ্যের প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপে তাঁর লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘পথের পাঁচালি’। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় এই সাহিত্য প্রতিভার প্রয়াণ ঘটে। মৃত্যুর পর ১৯৫১ সালে তাঁকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার' প্রদান করা হয়।

❐ বিষয়বস্তু আলোচনা : দরিদ্র ক্ষুদিরাম ভট্টাচার্যের দুটি পুত্র—বারো বছরের নেপাল ও দশ বছরের গোপাল। ভাদ্র মাসে এক বর্ষার দিনে পরপর দুদিন আহার জোটেনি তাদের। ক্ষুধার্ত নেপাল ও গোপাল গ্রামের এক সম্পন্ন গৃহস্থের সন্তান চুনির কাছ থেকে জানতে পেরেছিল যে পাড়ার বিত্তশালিনী জটি পিসির বাড়িতে ডাল ভাঙা হচ্ছে। ক-দিন বাদে মঙ্গলবার লোকজনকে নেমন্তন্ন করা হবে তালনবমী ব্রতে তালের বড়া খাওয়ার জন্য। তালের বড়া খেতে পাওয়ার লোভে দুই ভাই গোপনে ঠিক করে যে দিঘির পাড় থেকে তাল কুড়িয়ে জটি পিসিকে দিয়ে আসবে। তাহলে অবশ্যই জটি পিসি তাদের নিমন্ত্রণ করবে। এই আশায় ভোর রাতে সাপের ভয় না করে গোপাল ভারী দুটি তাল কুড়িয়ে জটি পিসির কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়।

জটি পিসি আগ্রহের সঙ্গে তাল দুটি নিলেন ঠিকই, কিন্তু দরিদ্র বালকটিকে নিমন্ত্রণ করার প্রয়োজন বোধ করলেন না আশা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে মঙ্গলবার এসে পড়ল। পাড়ার সকলেই যাচ্ছে জটি পিসির বাড়ি। দীনু ভট্টাচার্যের ছেলে কুড়োরাম যখন গোপালকে বলল যে, জটি পিসি বেছে বেছে লোক নেমন্তন্ন করেছে তখন হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ে গোপাল বলল যে জটি পিসি তাদেরও বলেছে। সজল চোখে তারা দুইভাই তাকিয়ে দেখল পাড়ার সবাই চলে যাচ্ছে তাদের সামনে দিয়ে জটি পিসির বাড়ি।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. জেনে নিয়ে নিজের ভাষায় লেখো :
১.১ কোন মাসে তাল পাকে?
উত্তর : শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে তাল পাকে।
১.২ আউশ ধান কোন ঋতুতে ঘরে ওঠে?
উত্তর : আউশ ধান ভাদ্র মাসের শেষে শরৎ ঋতুতে ঘরে ওঠে।
১.৩ গ্রাম জীবনে পালিত হয়, এমন দুটি ব্রত, পরব বা অনুষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তর : গ্রাম জীবনে পালিত হয় এমন দুটি ব্রতের নাম ইতু পূজা, নবান্ন, চরক ইত্যাদি।
১.৪ বর্ষাকালে অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় কেন?
উত্তর : বর্ষাকালে সাপেদের গর্ত সব জলে ভরে থাকে। চলাফেরার পথে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায় সেইজন্য বর্ষাকালে অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয়।
১.৫ তাল থেকে তৈরি কোন কোন খাবার তোমার প্রিয়?
উত্তর : তাল থেকে তৈরি তালের বড়া, তালক্ষীর, তালের পরোটা আমার প্রিয়।

২. নীচের এলোমেলো বর্ণগুলো সাজিয়ে শব্দ তৈরি করো :
হু দূ র ব র্তী র—বহুদূরবর্তী
র পা ত্ত উ ড়া—উত্তরপাড়া
অ মস্ক ন ন্য—অন্যমনস্ক
ল পি তি লি টু—তিলপিটুলি
লগ বা র ম—মঙ্গলবার।
কু ঠা খো র কা—খোকাঠাকুর।

৩. অর্থ না বদলে নীচের বাক্যগুলো শব্দঝুড়ির সাহায্য নিয়ে অন্যভাবে লেখো (একটা তোমার জন্য করে দেওয়া হলঃ
৩.১ ক্ষুদিরাম ভট্চার্যের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি
উত্তর : যেমন—ক্ষুদিরাম ভট্চার্যের বাড়ি দুদিন রান্না হয়নি।
৩.২ কতক্ষণে যে রাত পোহাবে
উত্তর : কতক্ষণে যে রাত কাটবে।
৩.৩ কিন্তু সাহসে কুলোয় না তার।
উত্তর : কিন্তু সাহস হয় না তার।
৩.৪ আমারও পেট চুঁই ছুঁই করছে
উত্তর : আমারও খুব খিদে পেয়েছে।
৩.৫ বাঁশঝাড় নুয়ে পড়চে বাদলার হাওয়ায়।
উত্তর : বাঁশঝাড় হেলে পড়ছে বাদলার হাওয়ায়।
৪. ঘটনাক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে লেখো :
৪.১ ঘুমের মধ্যে ওসব কী হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল।
৪.২ ক্ষুদিরাম ভট্চাজের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি।
৪.৩ গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদিঘির ধারে।
৪.৪ গোপাল বললে ‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা’?
৪.৫ ‘ওরা নেমন্তন্ন করবে, দেখিস দাদা, কাল তো তালনবমী।'
উত্তর : ক্ষুদিরাম ভট্চাজের বাড়ি দুদিন হাঁড়ি চড়েনি।
গোপাল একছুটে চলে গেল গ্রামের পাশে সেই তালদিঘির ধারে।
‘ওরা নেমন্তন্ন করবে, দেখিস দাদা, কাল তো তালনবমী।'
ঘুমের মধ্যে ওসব কী হিজিবিজি স্বপ্ন সে দেখছিল।
গোপাল বললে, ‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা?

৫. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
৫.১ গল্পের নানান জায়গায় খুঁজে দেখো ‘তাল’ নামে ফলটার অনেক ধরনের বিশেষণ খুঁজে পাবে। সবগুলো লেখো।
উত্তর : কালো হেঁড়ে তাল, ভালো তাল, মিশকালো তাল, বড়ো আর কালো কুচকুচে তাল, গোটা-তিনেক ছোটো তাল।
৫.২ ‘মেঘাচ্ছন্ন আকাশ’ কথাটার অর্থ মেঘে ভরা আকাশ। ঠিক এই অর্থটাই বোঝায় এমন আর একটা বিশেষণ
গল্পেই আছে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর : মেঘ-জমকালো আকাশ।
৬. শব্দঝুড়ি থেকে কোনটি কী ধরনের শব্দ, খুঁজে নিয়ে লেখো :


৭. নীচের বাক্যগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখো শব্দে তোমার মনে হচ্ছে কাজ শেষ হয়ে গেছে, আর কোন কোন কোন শব্দ মনে হচ্ছে কাজ এখনও শেষ হয়নি, সেগুলো আলাদা করে লেখো :
৭.১ কদিন ধরে পেট ভরে না খেতে পেরে ওরা দুই ভায়েই সংসারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠেছে।
উত্তর : কাজ এখনও শেষ হয়নি।
৭.২ জটি পিসিমা আর কিছু না বলে তাল দুটো হাতে করে নিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন।
উত্তর : কাজ শেষ হয়েছে।
৭.৩ রেগে দাঁড়িয়ে উঠে বললে, ‘কেন করবে না আমাদের নেমন্তন্ন'?
উত্তর : কাজ এখনও শেষ হয়নি।
৭.৪ খুব ভোরবেলা উঠে গোপাল দেখলে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে।
উত্তর : কাজ শেষ হয়েছে।
৮. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
৮.১ ‘সদর দোর’ কথাটার মানে জেনে নাও, শব্দটা নিজে কোনো বাক্যে ব্যবহার করো।
উত্তর : ‘সদর দোর’—প্রধান ফটক রাতেরবেলা সদর দোর প্রতিদিন আমি বন্ধ করি।
৮.২ ‘কপাট’ শব্দটির অর্থ লেখো। এই শব্দটা ব্যবহার করে নিজে একটি বাক্য লেখো।
উত্তর : কপাট—দরজা। কপাট বন্ধ করে গ্রাম্যবধূ নদীতে জল আনতে যাচ্ছে।
৯. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো : 
সলজ্জ, সুখাদ্য, অন্ধকার, সাধ্য, আগ্রহ।
উত্তর : সলজ্জ—নির্লজ্জ। সুখাদ্য—কুখাদ্য। অন্ধকার—আলো। সাধ্য—অসাধ্য। আগ্রহ—অনাগ্রহ।
১০. বাক্যরচনা করো :
 গৃহস্থ, পিঠে, আশ্চর্য, জোনাকি, তালনবমী
গৃহস্থ—গৃহস্থ বাড়িতে পূজা-পার্বণ লেগেই থাকে।
পিঠে—পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠে পায়েস হয়।
আশ্চর্য—বর্ষাকালে বিকেলবেলা আকাশে রামধনু দেখে ছোটোরা আশ্চর্য হয়।
জোনাকি—গভীর বনে জোনাকিরা সারারাত আলো দিয়ে যায়।
তালনবমী—তালনবমী ব্রত ভাদ্রমাসের শুক্লা নবমী তিথিতে হয়।

১১. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১১.১ এ গল্পে বৃষ্টির দুরকম ছবি আছে। ঝঝম্ আর টিপ্‌টিপ্। এই শব্দ দুটো ছাড়া কেবল ধ্বনি থেকেই বুঝে
নেওয়া যায়, এমন কতকগুলো শব্দ লেখো।
উত্তর : ঝিরঝির, টাপুর-টুপুর, টপটপ, ঢিবঢিব, গুড়গুড়, গরগর, ঝরঝর ইত্যাদি।
১১.২ হাওয়ার শব্দ বোঝাচ্ছে এমন দুটি শব্দ গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর : শোঁ শোঁ, হু হু।
১১.৩ গল্পে ‘বাঁড়ুজ্যে, ভট্চাজ’—এগুলি কোন কোন পদবি থেকে এসেছে? এরকম আরও তিনটি লেখো।
উত্তর : বাঁড়ুজ্যে—বন্দ্যোপাধ্যায়, ভট্চাজ—ভট্টচার্য, এইরকম আরও তিনটি পদবি চাটুজ্জে—চট্টোপাধ্যায়, মুখুজ্যে— মুখোপাধ্যায়, গাঙ্গুলি—গঙ্গোপাধ্যায়।
১১.৪ পড়েচে, খেয়েচে—এই শব্দগুলি কোন কোন শব্দ থেকে এসে এরকম চেহারা পেয়েছে?
উত্তর : পড়েছে, খেয়েছে শব্দ থেকে পড়েচে, খেয়েচে এসেছে।
১২. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১২.১ এই গল্পটা কোন ঋতুর তা বোঝবার অনেকগুলো সূত্র গল্পটার মধ্যে ছড়ানো আছে। আছে মাসের নাম, ব্রতের
নাম ইত্যাদি। এ ছাড়াও কোন কোন সূত্র তুমি নিজে খুঁজে পাও লেখো।
উত্তর : গোপাল তালনবমীর দিন ঘুম থেকে উঠে বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। শুধুমাত্র এই নয় নারকেল গাছের পাতা থেকে জল পড়া, বকুল গাছের তলা থেকে ব্যাঙের ডাক, বাদলা হাওয়া এই সবই বর্ষা ঋতুর বার্তাবহ। বর্ষার আগমনেই মাঠ ঘাট কাদাজলে পূর্ণ হয়ে যায় এবং গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোপাল তালনবমী নিমন্ত্রণের ভাগীদার হওয়ার জন্য ওই কাদাজল অতিক্রম করে পুকুর পাড়ে তালের সন্ধানে রওনা দেয়। ওইসব দৃষ্টান্ত থেকে পরিষ্কার যে—গল্পটি বর্ষা ঋতুর পরিচায়ক। এ ছাড়াও গল্পে কয়েকটি উক্তির মধ্য দিয়ে বর্ষাকালীন ঘটনার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন—জটি পিসিমা নেপাল ও গোপালকে বলেছেন, ‘আচ্ছা এসো গে বাবা, সন্ধে হয়ে গেল, অন্ধকারে চলাফেরা করা ভালো নয় বর্ষাকালে।' গ্রামের উত্তরপাড়ার গণেশ কাওরা গোপালকে দেখে বলে, ‘বড্ড সাপের ভয় খোকাঠাকুর, বর্ষাকালে ওখানে যেও না একা-একা’।

১২.২ এ গল্পে দাদা একসময়ে ছোটো ভাইকে বলেছে, ‘একটা বোকা!’ তোমার কি সত্যি মনে হচ্ছে ভাইটা বোকামিই
করেছে? ছোটো ভাই, যার নাম গোপাল, সে যদি তোমার বন্ধু হত, তবে তুমি তাকে কী করতে বলতে?
উত্তর : আমার মনে হয় তালনবমী গল্পে ছোটোভাই গোপাল মোটেই বোকা নয় বরং সে সাহসী। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তারা দিন কাটায়। ভালো খাবারের কথা তারা ভাবতেই পারে না। এক্ষেত্রে একমাত্র নিমন্ত্রণের আশায় জটি পিসির কাছে তালের বিনিময়ে গোপাল মূল্য নিতে চায়নি। ছোটো ভাই গোপাল যদি আমার বন্ধু হত তবে আমি তাকে বলতাম মানুষ কেবলমাত্র অর্থকেই মূল্য দেয়। দুঃখী মানুষের দুঃখকে অনুভব করার শক্তি কতজনের আছে? এক্ষেত্রে গোপালের জটি পিসিমার বাড়ি নিমন্ত্রণের আশা করা ঠিক হয়নি।

১২.৩ কী ধরনের বৃষ্টি তোমার পছন্দ এবং কেন তা বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : ব্যক্তিগতভাবে আমার মুশলধারে বৃষ্টিই বেশি পছন্দ। সারাদিন ধরে অঝোরে বৃষ্টিতে যে শুধুমাত্র আবহাওয়ার
পরিবর্তন হয় তাই নয়, রাস্তাঘাট অনেকটা সময় ব্যাপী অপরিষ্কার থাকে, যার দরুন সাধারণ মানুষের নিত্য জীবনযাপন সামান্য হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। প্রকৃতিতে সতেজতা ফেরেই না, বরং নানা রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটে। ক্ষণিকের জন্য ঝোড়ো হাওয়াতে আবহাওয়া অনুকূল হলেও অস্বস্তিকর ভাব কাটে না। মুশলধারে বৃষ্টিতে গ্রীষ্ম প্রকৃতির রিক্ততা শুষ্কতার অবসান ঘটে। গাছের পাতার ধূলিকণা বৃষ্টির ধারায় ধুয়ে যায় এবং প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। তা ছাড়া রাস্তায় জল ভরতি হওয়ায় ওই জলে শিশুরা নৌকা ভাসাতে ভীষণ পছন্দ করে।
১৩.১ ‘পথের পাঁচালী' বইটির লেখক কে?
উত্তর : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৩.২ তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা ছোটোদের দুটি বইয়ের নাম ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘তালনবমী’।
১৩.৩ কত সালে তাঁকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্রদান করা হয়?
উত্তর : ১৯৫১ সালে।
১৪. পাঠ্য অংশটি পড়ে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১৪.১ গল্পে মোট ক- টি শিশুচরিত্রের কথা আছে? তাদের নাম পরিচয় লিখে তাদের স্বভাব বিষয়ে দুটি করে বাক্য লেখো।
উত্তর : তালনবমী গল্পে চারটি শিশুচরিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
(১) গোপাল—ক্ষুদিরাম ভট্চাজের দশ বছরের ছেলে গোপাল। সে খুব সাহসী। দরিদ্র পরিবারের ছেলে গোপাল সংসারের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ছিল। (২) নেপাল— গোপালের থেকে দু-বছরের বড়ো ভাই নেপাল বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ছিল। সে জটি পিসিকে বিনা পয়সায় তাল বিক্রি করতে রাজি ছিল না। (৩) কুড়োরাম—গ্রামের দীনু ভট্চাজের ছেলে কুড়োরাম। জটি পিসির বাড়ি তালনবমী ব্রতে আমন্ত্রিতদের মধ্যে কুড়োরাম ছিল। (৪) চুনি—গ্রামের শিবু বাঁড়ুজ্যের ছেলে চুনি। জটি পিসির বাড়ি তালনবমী ব্রতের কথা চুনি গোপাল ও নেপালকে জানিয়েছে।

১৪.২ ভরা বর্ষায় ক্ষুদিরাম ভট্চাজের দিন কীভাবে কাটে?
উত্তর : ভরা বর্ষার ক্ষুদিরাম ভট্চাজের ঘরে দুদিন হাঁড়ি চড়েনি, তাদের অনাহারে দিন কাটে।
১৪.৩ চুনির মা জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল কেন? 
উত্তর : চুনির মা ডাল ভেঙে দিতে জটি পিসিমার বাড়ি গিয়েছিল।
১৪.৪ জটি পিসিমার বাড়িতে কী বারে, কেন তালের প্রয়োজন হয়েছিল?
উত্তর : জটি পিসিমার বাড়িতে মঙ্গলবারে, তালনবমী ব্রত উপলক্ষ্যে তালের প্রয়োজন হয়েছিল।
১৪.৫ কে, কীভাবে জটি পিসিমাকে তাল জোগাড় করে এনে দিয়েছিল?
উত্তর : গোপাল ভোরবেলা জলের ধার থেকে দুটি তাল কুড়িয়ে জটি পিসিমাকে এনে দিয়েছিল।
১৪.৬ জটি পিসিমার ভালো নামটি কী?
উত্তর : জটি পিসিমার ভালো নাম হরিমতী।
১৪.৭ বর্ষারাতে গোপালের দেখা স্বপ্ন কীভাবে মিথ্যা হয়ে গেল, তা গল্প অনুসরণে লেখো।
উত্তর : সামান্য আয়ের গৃহস্থ ক্ষুদিরাম ভট্চাজের দশ বছরের ছেলে গোপাল বিনা পয়সায় দুটি পাকা তাল জটি পিসির বাড়ি তালনবমী উপলক্ষ্যে দিয়ে এসেছিল। সে নিশ্চিতভাবে জানত যে তাদের দুই ভাইয়ের ব্রত উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ করা হবে। পরের দিন নিমন্ত্রণ বাড়ি যাওয়ার কথা। ভোররাতে উত্তেজনায় গোপালের ঘুম হচ্ছিল না। সে শুয়ে শুয়ে নিমন্ত্রণের স্বপ্ন দেখছিল। সে দেখছিল ভালো ভালো খাবার, নিমন্ত্রণ বাড়িতে মানুষের আতিথেয়তা। হঠাৎ সকালবেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে গেল এবং গোপাল বুঝতে পারল যে, মানুষ কেবল অর্থকেই মূল্য দেয়—দুঃখী মানুষের দুঃখকে হৃদয়ে অনুভব করার শক্তি তাদের নেই।

 ❐ শরৎ কবিতাটির বিষয়বস্তু :
বর্ষাঋতু বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরৎ তার অপরূপ শোভা ও বিশেষত্ব নিয়ে আমাদের সামনে আবির্ভূত
হয়। মুগ্ধ করে আমাদের দৃষ্টিকে। বসন্ত ঋতুরাজ হলেও শরতের শোভা বসন্ত অপেক্ষা অনেক বেশি সুন্দর। শরতের শোভা দেহ-মনকে অপূর্ব তৃপ্তি দেয়। রৌদ্রের উত্তাপ আমাদের সহনশীলতায় থাকে, বাতাস থাকে আমাদের মনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, মেঘমুক্ত নীল আকাশে আমাদের দৃষ্টিকে অবিরত হাতছানি দেয়। শরতের রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন গান রচনা করেছেন। যেমন—‘আজিকে তোমার মধুর মূরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে।’ আবার ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি।'
 এই সকল গনের মধ্য দিয়ে কবি মনোহর সাজে সজ্জিতা শরৎ রানির প্রাকৃতিক শোভা বর্ণনা করেছেন। সমগ্র কবিতাটিতে আমরা দেখতে পাই শরৎ ঋতুর নয়ন ভোলানো এই অতিবাস্তব ছবি। এই সময় সকালবেলা ঘাসের আগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু প্রভাতি আলোয় ঝলমল করে। মানুষের হৃদয়ে শরৎ তার নিজস্ব সৌন্দর্যের আসন দখল করে থাকে। শরতের মুক্ত নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা আমাদের মনকে আকর্ষণ করে শিউলি ফুলের সুমিষ্ট গন্ধে কাশ ফুলের চামর উড়িয়ে প্রকৃতিরানি অরুণ আলোর অঞ্জলি সাজিয়ে বাঙালির ঘরে ঘরে উপস্থিত হয়। 

শরৎ তোমার (গান)—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দু-এক কথায় উত্তর দাও :
১। শরৎ তোমার’ কবিতাটি কে লিখেছেন?
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শরৎ তোমার’ কবিতা বা গানটি লিখেছেন।
২। রবীন্দ্রনাথের এই গানটি কোন পর্যায়ভুক্ত?
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘শরৎ তোমার’ গানটি, ‘প্রকৃতি’ পর্যায়ভুক্ত।
৩। শরতের কোথায় কী ছাপিয়ে গেল?
উত্তর : শরতের অরুণ আলোর অঞ্জলি ছড়িয়ে মোহন অঙ্গুলি ছাপিয়ে গেল।
৪। ‘কুন্তল’ শব্দের অর্থ কী? 
উত্তর : কেশ বা চুলের রাশিকে বলা হয় কুন্তল।
৫। অঞ্জলি কাকে বলে?
উত্তর : মিলিত দুই হস্তের প্রসারিত তালুতে প্রদত্ত ফুলসমূহ বা জলের অর্ঘ্য।
৬। শরৎ, তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে’ পঙ্ক্তিটির ভাবগত অর্থ কী?
উত্তর : শরতের ভোরে শিশিরভেজা সবুজ মাঠে নতুন সূর্যের যে কিরণ পড়ে তাকেই বলা হয়েছে শিশিরভেজা অঞ্জলি।
৭। ‘অঞ্চল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : অঞ্চল শব্দটির এক অর্থ হল এলাকা, দ্বিতীয় অর্থ হয় আঁচল অর্থাৎ, মেয়েদের শাড়ির দৈর্ঘ্য দিকের শেষ ভাগ। এখানে শাড়ির আঁচলের কথা বোঝানো হয়েছে।
৮। ‘বনের-পথে-লুটিয়ে-পড়া অঞ্চলে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : সবুজ বনের পথ হয় আঁকাবাঁকা এবং তা কবির দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে মেয়েদের শাড়ির দীর্ঘ আঁচলের মতো।
৯। ‘আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি’ বলা হয়েছে কোন অর্থে?
উত্তর : শরতের আকাশ, বাতাস, সমূহ প্রকৃতি হয় অতি স্নিগ্ধ, চোখ জুড়োনো। শরতের সেই শিশিরভেজা ভোরে
সূর্যকিরণ লেগে চারদিক ঝিকিমিক করছে এই অর্থে বলা হয়েছে।
১০। ‘মানিক’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘মানিক’ এক প্রকার বর্ণময় মূল্যবান ধাতু, যাতে সূর্যের আলো পড়লে ঝকমক করে।
১১। ‘শ্যামল অঙ্গন’ বলতে তুমি কী বুঝেছ?
উত্তর : সাধারণত শরৎকালের প্রকৃতি শান্ত থাকে, চারদিকে সবুজের স্নিগ্ধতা দেখা যায়, তাই কবি প্রকৃতির সেই
মনভোলানো দৃশ্যকে বলেছেন ‘শ্যামল অঙ্গন'।
১২। ‘কুঞ্জছায়া’ কাকে বলে?
উত্তর : ঘন লতাপাতাবেষ্টিত ছোটো বনকে বলা হয় কুঞ্জবন, আর সেই ছোটো বনের ছায়াকে বলে কুঞ্জছায়া।
১৩। টীকা লেখো : 
অরুণ আলো, শরৎ।
উত্তর : অরুণ আলো—অন্যান্য গ্রহগুলির মতো আমাদের পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে সারাক্ষণ নিজ কক্ষে ঘুরে চলেছে। ঘুরতে ঘুরতে অভিগত গোলাকার পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিক থাকে তখন তাকে বলে দিনের আলো। তখন পৃথিবীর বিপরীত প্রান্ত থাকে আলোবিহীন অর্থাৎ অন্ধকার। এভাবে আমরা পৃথিবীর বিপরীতপৃষ্ঠ অর্থাৎ আলোহীন অংশে যখন থাকি তখন সেই সময়কে বলে রাত্রি। প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিমি বেগে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী যখন ধীরে ধীরে আবার আলোকিত অংশে মুখ ফেরায় সেই ক্রমাগত আলোর স্বচ্ছ প্রকাশক্ষণকে বলা হয় অরুণ আলো।

শরৎ—মৌসুমি বায়ুর দেশ আমাদের মাতৃভূমি ভারতবর্ষ। পৃথিবীর এমন এক অংশে আমাদের ভারতবর্ষের অবস্থান যে এখানে প্রকৃতির বুকে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ও বসন্ত এই চারটি ঋতু অত্যন্ত স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। কিন্তু বর্ষার ঠিক পরের চার মাস অর্থাৎ ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই চারটি মাসের মধ্যে যে দুটি ঋতুর রূপ আমরা উপভোগ করি তা হল শরৎ ও হেমন্ত। আবার, হেমন্ত অপেক্ষা শরতের সৌন্দর্য অতুলনীয়। সমগ্র প্রকৃতির বুকে অনুভূত হয় এক শান্ত স্নিগ্ধ মনোরম বাতাবরণ। বিশেষত বাংলার শ্যাম বনাঞ্চলে শরৎ ঢেলে দেয় এক নয়ন ভোলানো সবুজের উজাড় করা পসরা।

❐ কবি পরিচিতি: ১৯৫০ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের চাঁদপুর অঞ্চলে প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছদ্মনাম কুন্তক, শুভময় রায় এবং পোশাকি নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তাঁর পিতার নাম মণীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মাতার নাম অমলা ঘোষ। কবি প্রথম জীবনে পাবনা জেলার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠে এবং পরবর্তীকালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করেন। শঙ্খ ঘোষ একজন প্রথিতযশা আধুনিক কবি। রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষক শঙ্খ ঘোষ কবিতার সঙ্গে সঙ্গে মননশীল প্রবন্ধ লিখেও যশস্বী হয়েছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল—‘আমনধানের ছড়া’, ‘সকালবেলার আলো’, ‘সুপুরি বনের সারি’, ‘শব্দ নিয়ে খেলা’, ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘ওকাম্পোয় রবীন্দ্রনাথ’, ‘ঊর্বশীর হাসি’, ‘নির্মাণ ও সৃষ্টি’, ‘শব্দ আর সত্য’, ‘ঐতিহ্যের বিস্তার’ প্রভৃতি।

 বিষয়বস্তু আলোচনা :
কবি শঙ্খ ঘোষ ‘একলা’ ‘কবিতায় প্রকৃতির বুকে গাছপালা, পথ, পশুপাখিকে আপনজন করে নিয়েছেন। কবি
কোনো সময়েই একা নন। সবুজ গাছপালার ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া পথ কবির ডাকে সাড়া দেয়। কাঠবেড়ালি কবির খুবই প্রিয়। কাঠবেড়ালি খুব চঞ্চল জীব। এরা কোথাও এক মুহূর্ত স্থির হয়ে বসতে পারে না। কাঠবেড়ালি খুব অল্প সময়ে মানুষের সঙ্গী হয়ে যায়। মানুষের হাত থেকে এরা টুকরো টুকরো খাবার খেতে খুব ভালোবাসে। এরা খুব দ্রুত দৌড়ায়। এক দৌড়ে যে কোথায় চলে যায় আর দেখাই যায় না। সবুজ বনের পথ দিয়ে একলা যাওয়ার সময় গাছ থেকে ঝরা পাতা যেন কবির মাথায় আশীর্বাদস্বরূপ এসে পড়ে বলে কবির মনে হয়। শালবনে বা তাল সুপুরির বনে কবির নিজেকে কখনও একলা বলে মনে হয় না। ঘরে-বাইরে কবির কাছে একই রকম মনে হয়। কবি যখন চুপ করে থাকেন তখন তাঁর মনে হয় মনের কোণে কে যেন একভাবে বাজনা বাজিয়ে চলেছে।

একলা—শঙ্খ ঘোষ

হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. নিজের ভাষায় লেখো :
১.১ তুমি কখন একলা থাকো?
উত্তর : আমি দুপুরবেলা একলা থাকি।
১.২ সবুজ গাছপালায় ছাওয়া পথ তুমি কোথায় দেখেছ? সে পথে চলতে তোমার কেমন লেগেছে?
উত্তর : সবুজ গাছপালায় ছাওয়া পথ আমি বোটানিক্যাল গার্ডেনে দেখেছি। সেই পথে চলার সময় আমার একবারও নিজেকে একা মনে হয়নি। প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে পথে এগিয়ে যেতে আমার খুব ভালো লেগেছে।
১.৩ কত রঙের, কত রকমের পাথর তুমি দেখেছ?
উত্তর : হলুদ, লাল, নীল, সাদা, সবুজ ইত্যাদি রঙের আর পোখরাজ, পান্না, নীলা, মুক্তো ইত্যাদি রকমের পাথর আমি দেখেছি।
১.৪ গাছের থেকে কোন ঋতুতে পাতা ঝরে? কোন কোন্ গাছ থেকে পাতা ঝরতে তুমি দেখেছ?
উত্তর : গাছের থেকে হেমন্ত ঋতুতে পাতা ঝরে। আমগাছ, বেলগাছ, জবাগাছ, নিমগাছ থেকে পাতা ঝরতে আমি দেখেছি।
১.৫ গাছ আমাদের কী কী দেয় তা পাঁচটি বাক্যে লেখো।
উত্তর : গাছ আমাদের ফল, ফুল, শাকসবজি, জীবনদায়ী ওষুধ দিয়ে থাকে। আসবাবপত্র তৈরির জন্য এবং জ্বালানির জন্য কাঠ দেয়। গাছ আমাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেয়। গ্রীষ্মের দুপুরে গাছ শীতল ছায়া দেয়। গাছপালার জন্য বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
১.৬ পশ্চিমবঙ্গের কোন জেলায় ‘শালবন’ রয়েছে? শালপাতাকে মানুষ কী কী ভাবে ব্যবহার করে?
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলায় শালবন আছে। শালপাতাকে মানুষ নানাভাবে ব্যবহার করে। যেমন—শালপাতায় খাবার খাওয়া, ফুল, মিষ্টি বিক্রির জন্য গ্রামাঞ্চলে শালপাতা মোড়ক করে ব্যবহৃত হয়। অনেক জায়গায় শালপাতা দিয়ে ঘরের ওপরের অংশ ঢাকা দেওয়া হয়।
১.৭ ‘বাজনা’ শব্দটা শুনলে তোমার চোখে কোন কোন ছবি ভেসে ওঠে? কোন কোন বাজনার নাম তুমি জানো?
কোন কোন বাজনা বাজতে দেখেছ তুমি?
উত্তর : ‘বাজনা’ শব্দটা শুনলে আমার প্রথমে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, ঘণ্টা বাজিয়ে মা দুর্গার আরতির ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হারামোনিয়াম, ঢোল, তবলা, গিটার, পিয়ানো, বাঁশি, বেহালা ইত্যাদির নাম আমি জানি। এগুলির সবই বাজনা বাজতে দেখেছি।

২. নীচের কথাগুলো তুমি মুখে বললে যেভাবে বলতে, সেইভাবে সাজিয়ে লেখো :
২.১ ভুলিয়ে দেয় সব হিসাব ও
উত্তর : সব হিসাব ও ভুলিয়ে দেয়।
২.২ থাকে না আর দুঃখ কোনোই
উত্তর : আর কোনোই দুঃখ থাকে না।
২.৩ ঠিক যদি দিই সাড়া
উত্তর : যদি ঠিক সাড়া দিই।

৩. নীচের এলোমেলো শব্দগুলো সাজিয়ে দেখো চেনা চেহারা পায় কিনা :
পুরি তা সু ল—তালসুপুরি
লা পা ছ গা—গাছপালা
লি ড়া কা বে ঠ—কাঠবেড়ালি
ত ত স্ত ইইতস্তত।
৪. ‘এদিক-ওদিক’—এই কথাটায় এক ধরনের শব্দেরা যেমন পাশাপাশি বসে আছে, সেইরকম পাশাপাশি বসে-থাকা
শব্দ পারলে নিজেই লেখো, নয়তো খুঁজে নাও শব্দঝুড়ি থেকে :
এপারওপার।
একালসেকাল।
এখানে—ওখানে।
এরকম—সেরকম।
৫. ‘ঘর-বার’ এইরকম পাশাপাশি বসে থাকা উলটো কথা তুমি ক-টা জানো লেখো।
উত্তর : উঠা-বসা, চলা-ফেরা, আশ—পাশ, দিন–রাত, কেনা-বেচা, দিন—ক্ষণ।
৬. শব্দঝুড়ি থেকে খুঁজে বার করো নীচের কোন শব্দটার সঙ্গে কোন শব্দটার বিপরীত সম্পর্ক আছে :
মস্ত—ছোট্ট।
দুঃখ—সুখ।
আশীর্বাদ—অভিশাপ।
শব্দঝুড়ি : অভিশাপ,

৭. নীচের দাগ দেওয়া শব্দগুলো দেখে বিশেষ্য বিশেষণ আলাদা করে লেখো :
৭. আমি যখন একলা থাকি...
উত্তর : বিশেষণ
৭.২ থাকে সবুজ গাছপালা..
উত্তর : বিশেষণ
৭.৩ মস্ত আশীর্বাদের মতো মাথার উপর ইতস্তত........
উত্তর : বিশেষ্য
৭.৪ গাছের থেকে ঝরতে থাকে পাতা.......
উত্তর : বিশেষ্য

৮. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলোকে বিশেষণে বদলালে কী হবে :
গাছ—গেছো।
পাথর—পাথুরে।
বন—বুনো।
মাটি—মেটে।
দুঃখদুঃখী/দুঃখত

৯.১ তুমি যখন একলা থাকো, তখন তোমার কেমন লাগে? মন খারাপ লাগে/ভয় করে/ ভালোই লাগে/ ইচ্ছে
করে অন্তত একজন-দুজন প্রিয়বন্ধু সঙ্গে থাকুক।
এই গুলোর কোনোটা যদি তোমার মনে হয়, তবে সেই কথাটাই নীচের বাক্যে লেখো, কিংবা এগুলো ছাড়া আরও
অন্য কোনো কথাই যদি মনে আসে, তবে লেখো সেই কথাটাই :
উত্তর : আমি যখন একলা থাকি, তখন আমার ভালোই লাগে।

৯.২ কোন গাছ তোমার সবচেয়ে পছন্দের?
সে গাছ কি তুমি দেখেছে?
উত্তর :  হ্যাঁ দেখেছি আমগাছ।
কেন ওই গাছকেই সবচেয়ে ভালো লাগে তোমার?
উত্তর :  আম গাছটাকেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে কারণ আমি আম খেতে খুব ভালোবাসি।
৯.৩ কেমন বন্ধু তোমার ভালো লাগে?
উত্তর : আমার ভলো লাগবে যদি আমার বন্ধু হয় একজন ফুটবলপ্রেমী। তাহলে ছুটির শেষে আমরা অন্যান্য বন্ধুদের
সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারি।
১০১ কবি শঙ্খ ঘোষের প্রথম কবিতার বই কোনটি?
উত্তর : কবি শঙ্খ ঘোষের প্রথম কবিতার বই ‘দিনগুলি রাতগুলি’।
১০.২ তাঁর লেখা দুটি ছোটোদের বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা দুটি ছোটোদের বইয়ের নাম ‘ছোট্ট একটা ইস্কুল’, ‘শব্দ নিয়ে খেলা’।
১০. ‘একলা’ কবিতাটি তাঁর কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘একলা’ কবিতাটি কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আমায় তুমি লক্ষ্মী বলো’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
১১. নিজের ভাষায় লেখো :
১১.১ কবি যখন একলা থাকেন, তখন তাঁর সঙ্গে কারা থাকে?
উত্তর : কবি যখন একলা তখন তাঁর সঙ্গে সবুজ গাছপালা, চলাচলের পথ এবং কাঠবেড়ালি থাকে।
১১.২ কবিতায় বর্ণিত কাঠবেড়ালিকে ধরতে পারার চেষ্টায় কবি সফল হন কি?
উত্তর : ‘একলা’ কবিতায় বর্ণিত কাঠবেড়ালিকে ধরতে পারার চেষ্টায় কবি শঙ্খ ঘোষ সফল হননি। কাঠবেড়ালি অতিশয় চঞ্চল প্রাণী। এরা এক জায়গায় এক মুহূর্ত স্থির থাকে না। ধরতে গেলে এরা কোথায় যে হঠাৎ পালিয়ে যায় দেখা যায় না।
১১.৩ কবি কোন বিষয়কে ‘মস্ত আশীর্বাদ’ বলেছেন?
উত্তর : কবি কাঠবেড়ালিকে বনের পথে ধরতে ছুটে ছুটে যখন বিফল হন তখন গাছ থেকে ঝরা পাতা কবির মাথায়
এসে পড়ে। কবির এক্ষেত্রে মাথার ওপর ঝরে পড়া পাতাকে মস্ত আশীর্বাদ বলে মনে হয়।
১১.৪ কবির মনে কখন আর কোনো দুঃখই থাকে না।
উত্তর : কবি শঙ্খ ঘোষ যখন একলা শালবনে বা তালসুপুরির বনে উপস্থিত হন তখন তাঁর জীবনে কোনো দুঃখ নেই
বলে মনে হয়।
১১.৫ চুপ-থাকাটাও কীভাবে কবির মনে বাজনা বাজায়?
উত্তর : প্রকৃতিপ্রেমী কবি শঙ্খ ঘোষের কাছে ঘর-বাহির সবই একরকম লাগে। এর মধ্যে কোনো পার্থক্য কবি খুঁজে পান না। তাই কবি যখন চুপ করে থাকেন তখন তাঁর মনে হয় মনের কোণে কে যেন বাজনা বাজিয়ে চলেছে।
১১.৬ মনে করো একদিন তুমি বাড়িতে একলা ছিল। সারাদিন তুমি যা যা করেছ দিনলিপির আকারে লেখো।
উত্তর : দিনলিপি তাং ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ : এই দিনটিতে আমি বাড়িতে একলা ছিলাম। একলা থাকলেই আমি
আমার পড়ার ঘরের জানলার কাছে বসে বসে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখি।
[সারাদিন তুমি যা যা করেছ দিনলিপির আকারে শিক্ষক মহাশয়কে লিখে দেখাও।]
১১.৭ পরিবারে কে কে তোমার সঙ্গে থাকেন?
উত্তর : পরিবারে বাবা, মা, দাদা, দিদি, কাকা, কাকিমা, ঠাকুমা এবং ঠাকুরদাদা আমার সঙ্গে থাকেন।
১১.৮ স্বাধীনভাবে তোমাকে ছুটে যেতে দেওয়া হলে তুমি কোথায় যেতে চাইবে?
উত্তর : স্বাধীনভাবে ছুটে যেতে দেওয়া হলে আমি আমাদের বাড়ির সামনে নীল আকাশের নীচে খোলা মাঠে যেতে
চাইব। খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে সীমাহীন নীল আকাশের বুকে অস্তগামী সূর্যের রূপ দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
১১.৯ ‘কাঠবেড়ালি’ নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের খুব সুন্দর একটা ছড়া আছে। শিক্ষকের থেকে শুনে
নিয়ে খাতায় লিখে রাখো।
উত্তর :
খুকি ও কাঠবেড়ালি
— কাজী নজরুল ইসলাম
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও
ডাইনি তুমি হোঁতকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারী লেজ উঁচিয়ে পুটুস্ পাটুস্ চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

১১.১০ জগদীশচন্দ্র বসু আমাদের শিখিয়েছেন যে, ‘গাছেরও প্রাণ আছে।'—তুমি একথা কীভাবে বুঝতে পারো?
উত্তর : একটি ছোটো শিশু যেমন আস্তে আস্তে কথা বলতে শেখে, ইশারায় সব কথা বোঝাতে শেখে, হাঁটতে শেখে
ও শেষে একটি পরিণত মানুষে পরিণত হয় তেমনি একটি ছোটো চারাগাছও আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে বিশালাকার রূপ ধারণ করে। মানুষের যেমন প্রাণ আছে, একটি গাছেরও তেমনি প্রাণ আছে। মানুষের হাঁটাচলা, কথাবার্তা বলা ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করা যায়, কিন্তু একটি গাছের কিছুই প্রত্যক্ষ করা যায় না, সবই অনুভূতির দ্বারা বুঝতে হয়।

১১.১১. তোমার পরিবেশে তুমি কোন কোন কীটপতঙ্গ/পশু/পাখি নজর করেছ?
উত্তর : আমার পরিবেশে আমি নানান কীটপতঙ্গ, পশু, পাখি দেখেছি। সেগুলি হল—
কীটপতঙ্গ : পিঁপড়ে, মশা, মাছি, আরশোলা, ফড়িং, মৌমাছি, শুঁয়োপোকা।
পশু : গোরু, কুকুর, বিড়াল, ছাগল ইত্যাদি।
পাখি : টিয়া, শালিক, কাক, পায়রা, চড়াই, বক, চিল, হাঁস, মুরগি, শকুন ইত্যাদি।

১১.১২ তোমার প্রতিদিনের চলার পথটি কেমন? সে পথের দু-পাশে তুমি রোজ কী কী দেখো তা বন্ধুর সঙ্গে
আলোচনা করো। খাতায় দুজনের কথাবার্তার আদলে লেখো।
উত্তর : আমার প্রতিদিনের চলার পথটি ভালো। সেই পথের দু-পাশে আমি রোজ যা যা দেখি তা নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা- নিশা : অনেকদিন পর তোর সঙ্গে দেখা রীনা। ভালো আছিস? তুই কি রোজ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করিস? তোকে তো দেখতে পাই না। রীনা : না, আমি তো এই পথ ব্যবহার করি না। আমি যে পথটি ব্যবহার করি, সেখানে সামনেই পড়ে একটা মসজিদ। নিশা : আর কী কী আছে বল্ না? ওই জায়গাটা বোধহয় আমার সম্পূর্ণ অজানা। রীনা : মসজিদ থেকে একটু এগিয়ে যাবার পর একটা বাজার পড়ে। এটাই আমাদের এখানকার সবচেয়ে বড়ো বাজার। স্কুল যাবার সময়তো প্রতিনিয়ত আমি বাজারের বহু লোকের ভিড় ঠেলে যাই। তুই কোন পথ দিয়ে
যাতায়াত করিস? নিশা : আমার যাতায়াতের পথটা আবার তোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং নির্জন অবশ্যই। দু-ধারে মাঠ, গুটিকয়েক ঘরবাড়ি আর সারি সারি গাছ। তবে যাবার পথে অন্য একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ও আছে। আচ্ছা রীনা, আজ আমার একটু তাড়া আছে। অন্য কোনো একদিন তোর সঙ্গে অনেক গল্প করব। একদিন আমাদের বাড়িতে আয়। জমিয়ে খাওয়াদাওয়া আর গল্পগুজব হবে। রীনা : নিশ্চয়ই যাব নিশা। আজ আমিও চলি, পড়তে যেতে হবে। ভালো থাকিস।

আকাশের দুই বন্ধু প্রশ্ন উত্তর

 ❐ লেখক পরিচিতি ১৯২৮ সালে বিখ্যাত নাট্যকার শৈলেন ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি সাহিত্যে অনুরাগী ছিলেন। কৈশোর বয়সে ছোটোদের পত্রিকা ‘মাস পয়লা'র লেখক প্রথম কবিতা লেখা শুরু করেন। ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ শিশু নাটকটি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। লেখকের রচিত উপন্যাস ‘মিতুল নামে পুতুলটি’ জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়। লেখকের রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘আমার নাম টায়রা’, ‘গল্পের মিনারে পাখি’, ‘ভূতের নাম আক্কুশ’, ‘টুই টুই’ ইত্যাদি। এ ছাড়াও তিনি ছোটোদের জন্য অজস্র গল্প, ছড়া, নাটক রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গল্প সংকলন—‘হাসি ঝলমল মজা’, ‘স্বপ্ন দেখি রূপকথায়’, ‘ভালোবাসি পশুপাখি’, ‘গল্পের রং রকম রকম’ ইত্যাদি।

❐ আকাশের দুই বন্ধু বিষয়বস্তু :
পেটকাটা ও চাঁদিয়াল—এরা দুজন আকাশের দুই বন্ধু। মানুষ কাগজ কেটে যত্ন সহকারে এদের তৈরি করেছে।
উৎসবের যে-কোনো একটি দিনে আকাশে ওড়াবার জন্য। এরা দুটি রঙিন কাগজের ঘুড়ি। আকাশে নিজেরাই এরা
গল্প করে, নীচের মানুষের আনন্দ উল্লাস দেখে। তারপর লড়াই শুরু হয় নিজেদের মধ্যে। কে যে কখন ভোকাট্টা হয়ে কোথায় পড়বে কেউ জানে না। হয়তো গাছে, ইলেকট্রিক তারে, নয়তো কারও ছাদে, নদীর জলে পড়বে। এদের জন্য কেউ সমবেদনা জানায় না, দুঃখ প্রকাশ করে না। দুটি ঘুড়ির দুজন মালিক থাকে। যখন দুটি ঘুড়িকে আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয় তখন থেকে শুরু হয় সুতো ছাড়ার খেলা। আকাশের অনেক ওপর উঠে যায় দুই বন্ধু। মাঝে মাঝে ঘুড়ি দুটো তাদের ল্যাজের সঙ্গে নদীর তুলনা করে। মানুষের হাতের সুতোটাকেই তারা নিজেদের ভাগ্য বলে মনে করে। ওই সূতো যদি প্যাঁচের সময় নিজেরাই ছিঁড়ে ফেলে জট পাকিয়ে দিতে পারে, তবে এরা মুক্তি পাবে। আকাশের অসহায় দুই বন্ধু এরা। এরই মাঝে পেটকাটা ও চাঁদিয়ালের মধ্যে সুতোর লড়াই লেগে যায়। দুই বন্ধু নিজেরাই নিজেদের সান্ত্বনা দেয়। তারপর হঠাৎ সুতো ছিঁড়ে একসঙ্গে পড়ে গেল দুটি ঘুড়ি। নীচের মানুষের উল্লাস তখন থেমে যায়। অবাক হয়ে দু-দলই তখন আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। হার হয় দু-দলেরই। কারণ কেউ জানে না তারা কেমন করে আকাশে ভেসে থাকে—জানে শুধু আকাশ, কারণ আকাশ তাদের বন্ধু।

আকাশের দুই বন্ধু—শৈলেন ঘোষ

হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১.১ আকাশের দিতে তাকিয়ে তুমি কী কী দেখতে পাও?
উত্তর : আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি পাখি, চাঁদ, সূর্য, তারা ইত্যাদি দেখতে পাই।
১.২ আকাশে তুমি কী কী উড়তে দেখেছ?
উত্তর : আকাশে আমি বক, চিল, শকুন ও অন্যান্য পাখি এবং বিমান উড়তে দেখেছি।
১.৩ কোন কোন উৎসবে তুমি ঘুড়ি উড়তে দেখেছ?
উত্তর : বিশ্বকর্মা পূজায় আমি ঘুড়ি উড়তে দেখেছি।
১.৪ আকাশ কেমন থাকলে ঘুড়ি ওড়াতে সুবিধা হয়? ঘুড়ি ওড়াতে গেলেই বা কী কী লাগে?
উত্তর : আকাশ স্বচ্ছ, নির্মল, মেঘমুক্ত থাকলে ঘুড়ি ওড়াতে সুবিধা হয়। ঘুড়ি ওড়াতে গেলে ঘুড়ি, লাটাই, সুতো লাগে ঘুড়িতে মাঞ্জা দিতে হয়।
১.৫ ঘুড়ি সাধারণত কোন কোন জিনিস দিয়ে তৈরি? সুতোয় মাঞ্জা দিতে কী কী লাগে?
উত্তর : ঘুড়ি সাধারণত রঙিন কাগজ, কাঁপকাঠি দিয়ে তৈরি হয়। সুতোয় মাঞ্জা দিতে সাদা সুতো, রং, কাচগুঁড়ো, সাবুর মাড় ইত্যাদি লাগে।
১.৬ ‘আকাশের দুই বন্ধু’ গল্পে দুটি জিনিস নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলেছে। অপ্রাণীবাচক দুটি জিনিস নিজেদের
মধ্যে কথা বলেছে, এমন আর কোন গল্প তুমি জানো?
উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ‘উদ্ভিদের জীবন’, নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের লেখা ‘কাজের লোক’ ইত্যাদি গল্প আমি জানি।
২. নীচের এলোমেলো শব্দগুলো সাজিয়ে লেখো :
ঠি প কা কাকাঁপকাঠি।
নি নি না চো কা বা—নাকানিচোবানি।
৩. ‘ক’ আর ‘খ’-স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো :


৪. ঠিক উত্তরটা বেছে নিয়ে প্রতিটি বাক্য আবার লেখো :
৪.১ এমনি করে পৃথিবী রোজ (নতুন/পুরোনো) হচ্ছে।
উত্তর : এমনি করে পৃথিবী রোজ নতুন হচ্ছে।
৪.২ বুকের (ঝাপকাঠি/কাঁপকাঠি) ছিটকে গেলে, সে তখন একটা কাগজের টুকরো।
উত্তর : বুকের কাঁপকাঠি ছিটকে গেলে, সে তখন একটা কাগজের টুকরো।
৪.৩ একসঙ্গে লড়াই না করলে কেউ বোধহয় (বিস্তার/নিস্তার) পায় না।
উত্তর : একসঙ্গে লড়াই না করলে কেউ বোধ নিস্তার পায় না।
৫. নীচে অনুচ্ছেদের বাক্যগুলিতে দেখো কোন কোন শব্দে মনে হচ্ছে কাজ শেষ হয়ে গেছে, আর কোন কোন
শব্দে মনে হচ্ছে কাজ শেষ হয়নি, সেগুলি আলাদা করে লেখো : (অনুচ্ছেদটি পাঠ্যপুস্তকের ১২৪ পাতায় দেখো।)
উত্তর : ওদের কিনে আনা হয়েছে দোকান থেকে।—কাজ শেষ হয়েছে।
উৎসবের দিনে উড়বে ওই দুটো ঘুড়ি।—কাজ শেষ হয়নি।
তারপরে লাট খেতে খেতে ওরা লড়াই করবে আকাশে।—কাজ শেষ হয়নি। কে যে ভোকাট্টা হয়ে কোথায় পড়বে,
কেউ জানে না।—কাজ শেষ হয়নি। কেউ গড়িয়ে পড়তে পারে গাছে, কিংবা ইলেকট্রিক তারে।—কাজ শেষ হয়নি।
লুটিয়ে পড়তে পারে কারও ছাদে, নয়তো নদীর জলে।—কাজ শেষ হয়নি।
নদীর জলে নাকানিচোবানি খেয়ে তার বুকের কাঁপকাঠি ছিটকে গেলে, সে তখন কেবলই একটা ফাটা কাগজের
টুকরো।—কাজ শেষ হয়নি। তখন কেউ চোখ ফিরিয়ে দেখবে না তাকে।—কাজ শেষ হয়নি।

৬. চাঁদিয়াল আর পেটকাটা—গল্পে ঘুড়ি দুটোর নাম পেলে। আরো অনেকরকম নাম হয় ঘুড়িদের, ছোটো দলে ভাগ
হয়ে নিজেরা কথা বলে দ্যাখো আর কোনো ঘুড়ির নাম নিজেরাই জানো কিনা। নয়তো, বাড়িতে-স্কুলে বড়োদের
কাছে জেনে নাও, তারপর লেখো।
উত্তর : ঘুড়ির নাম—একতে, দোতে লেজওয়ালা ঘুড়ি, বাঁশমার, পতাকামার, চাপরাস, গলাকাটা ইত্যাদি।

৭. ঘুড়িদের প্যাঁচের লড়াইয়ে একটা অদ্ভুত ফল হয়েছে গল্পে। মানুষের হিসেবে দু-দলই হেরেছে, ঘুড়িদের উদ্যোগে
জিতেছে দুজনেই। তুমি কি ঘুড়ির লড়াই দেখেছ কখনো? এমন অদ্ভুত ফল কিন্তু সচরাচর হয় না। সচরাচর এমন
লড়াইয়ে যেটা হয়, সেটা চার-পাঁচ লাইনে লেখো।
উত্তর : ঘুড়িদের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি ঘুড়িই প্রথম থেকে একে অপরকে কাটতে চায়। একবার এ ওর
ঘাড়ের ওপর দিয়ে আর একবার অন্যটি তার ঘাড়ের ওপর দিয়ে যায়। এভাবে হঠাৎই একটা ঘুড়ি ভোকাট্টা হয়ে কেটে
যায়, অন্যটি আকাশে উড়তে থাকে।

৮. চাঁদিয়াল আর পেটকাটা—এই দুই ঘুড়ি আকাশ থেকে নীচের পৃথিবীকে দেখে অনেক গল্প করেছে নিজেরাই।
মনে করো, তুমি উড়ে যেতে পেরেছ আকাশে, সঙ্গে তোমার বন্ধুও আছে। আকাশ থেকে নীচের পৃথিবীকে দেখে
কী গল্প করবে তোমরা, সেটা লেখো :
উত্তর : গতবছর পুজোর ছুটিতে আমি, আমার বাবা মা, আমার প্রিয় বন্ধু জয়ন্ত এবং তার বাবা মা এই ছয়জন মিলে
শিলং বেড়াতে গিয়েছিলাম। শিলং যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে আমরা গুয়াহাটি যাই। এই প্রথম আমি ও জয়ন্ত বিমানে আকাশে উড়লাম । দিনের আকাশে নিজেদের কখনও ঘুড়ি আবার কখনও পাখি বলে মনে হচ্ছিল। আকাশ থেকে নীচের পৃথিবীকে দেখতে বেশ ভালো লাগে। ওপর থেকে গাছপালা, ঘরবাড়ি, মানুষজন, নদী, যানবাহন সবই দেখা যাচ্ছে, তবে খুব ছোটো আকারে। সাদা সুতোর মতো নদীগুলি এঁকেবেঁকে গেছে। বিমানযোগে আকাশপথে যাওয়ার সময় আমার একটু ভয় ভয় করলেও গুয়াহাটি শহরে সমতলভূমিতে নামার সময় আমার বেশ ভালো লেগেছে।

৯. অর্থ লেখো :
কুঁড়ি, বাহার, গোলাম, মুক্ত।
উত্তর : কুঁড়ি— ফুল ফোটার আগের অবস্থা। বাহার—রূপ। গোলাম—ভৃত্য, চাকর। মুক্ত—বাঁধনহারা।
১০. সমার্থক শব্দ লেখো :
নদী, আকাশ, গাছ, বন্ধু, সাগর।
উত্তর : নদী—প্রবাহিণী, তরঙ্গিণী। আকাশ—গগন, নভঃ। গাছ—বৃক্ষ, পাদপ। বন্ধু—সখা, প্রিয় সঙ্গী।
সাগর—সমুদ্র, সিন্ধু, পারাবার, জলধি।
১১. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো : 
চিৎকার, আনন্দ, ঠিক, অসহায়, সাধ্য।
উত্তর : চিৎকার—চুপচাপ। আনন্দ—নিরানন্দ। ঠিক—ভুল। অসহায়—সহায়। সাধ্য—অসাধ্য।
১২. বাক্যরচনা করো :
বন্ধুত্ব, চোখ, দয়া, ভোকাট্টা, উল্লাস।
উত্তর : বন্ধুত্ব—বন্ধুত্ব করা সহজ, কিন্তু বজায় রাখা কঠিন।
চোখ—শকুনের চোখের দৃষ্টি খুব তীক্ষ্ণ।
দয়া—ভগবান সকলকে দয়া করেন।
ভোকাট্টা—হরির ঘুড়িটা তাড়াতাড়ি ভোকাট্টা হয়ে গেল।
উল্লাস—খেলার মাঠে মোহনবাগান জেতার জন্য তাদের সমর্থকরা উল্লাস করছে।

১৩. কোনটি কোন প্রকারের বাক্য লেখো :
১৩.১ মনে মনে বলব, বাঃ!
উত্তর : বিস্ময়বোধক বাক্য
১৩.২ তুই কেমন করে জানলি?
উত্তর : প্রশ্নবোধক বাক্য
১৩.৩ বরফ নাকি খুব ঠান্ডা!
উত্তর : বিস্ময়বোধক বাক্য
১৩.৪ জানে শুধু আকাশ।
উত্তর : অস্ত্যর্থক বাক্য
১৩.৫ খাবার চাইছে মায়ের কাছে।
উত্তর : নির্দেশক বাক্য

১৪. কোনটি কোন ধরনের শব্দ, ঝুড়ি থেকে বেছে নিয়ে আলাদা করে লেখো :


১৫. ক্রিয়ার নীচে দাও দাও :
১৫.১ কে জানত, একদিন হঠাৎ ওদের দেখা হবে।
 উত্তর : কে জানত, এদিন হঠাৎ ওদের দেখা হবে
১৫.২ আবর্জনা নিয়ে কে আর দয়া দেখায় !
উত্তর : আবর্জনা নিয়ে কে আর দয়া দেখায় !
১৫.৩ এমনি করে রোজ পৃথিবী নতুন হচ্ছে।
উত্তর : এমনি করে রোজ পৃথিবী নতুন হচ্ছে
১৫.৪ উল্লাসে ভরে যায় চারিদিক।
উত্তর : উল্লাসে ভরে যায় চারিদিক।
১৫.৫ জানে শুধু আকাশ।
উত্তর : জানে শুধু আকাশ।

১৬.১ ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ বইটি কার লেখা?
উত্তর : ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’ বইটি শৈলেন ঘোষের লেখা।
১৬.২ তাঁর অন্যান্য দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর অন্যান্য দুটি বইয়ের নাম ‘টুইটুই’, ‘আমার নাম টায়রা’।
১৬.৩ তোমার পাঠ্য ‘আকাশের দুই বন্ধু’ গল্পটি কোন্ বই থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘আকাশের দুই বন্ধু’ গল্পটি ‘স্বপ্ন দেখি রূপকথায়’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
১৭. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১৭.১ গল্পে প্রকৃতির বৈচিত্র্যময়, সুন্দর রূপ কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর : ‘আকাশের দুই বন্ধু’ গল্পে লেখক প্রকৃতির এক বৈচিত্র্যময় সুন্দর রূপকে তুলে ধরেছেন। এই প্রকৃতিতে শুধুমাত্র
যে মানুষই বসবাস করে তা নয়, এখানে গাছপালা, পশুপাখি, এরাও বাস করে। একটি বীজ মাটিতে পুঁতলে ধীরে ধীরে
সেটি থেকে গাছ বের হয়, তারপর সবুজ পাতা, ফুলের কুঁড়ি এবং সবশেষে ফুল ফোটে, সে কথাই লেখক বলেছেন!
আবার, গাছে যে পাখি থাকে তাতে মা-পাখি তার ডিমে তা দিলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, তারপর তারা কিচিরমিচির
করে। এরপর একদিন ডানা মেলে আকাশে উড়ে যায়।
১৭.২ পেটকাটা ও চাঁদিয়ালের কীভাবে দেখা হয়েছিল? তাদের বন্ধুত্বই বা কীভাবে গড়ে উঠল?
উত্তর : পেটকাটা ও চাঁদিয়াল দুটি কাগজের ঘুড়ি। এরা আকাশে উড়ছিল। উড়তে উড়তেই এদের দেখা হয়েছিল।
এরা দুজনেই বুঝেছিল যে, মানুষ এদের নিয়ে শুধুমাত্র খেলা করে। এদের প্রতি মানুষের কোনো অনুভূতি বা সমবেদনা
নেই। এরা আকাশে উড়তে উড়তে নানান সুখদুঃখের গল্প করতে থাকে। নীচে নদী, মানুষজন, সবই দেখে। প্রাণপণ
দুজনেই একসঙ্গে বাঁচার চেষ্টা করে। এভাবেই তাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।

১৭.৩ বন্ধুত্বকে অটুট রাখতে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল?
উত্তর : বন্ধুত্বকে অটুট রাখতে তারা ভেবেছিল যদি সুতো প্যাঁচের সময় তারা দুজনেই জট পাকিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে
পারে, তবে হয়তো তারা রক্ষা পেতে পারে। উপড়ে যেতে পারে আকাশে একসঙ্গে। তখন কেউ তাদের ধরতে পারবে
না, তারাও অসহায় বোধ করবে না। পুরোপুরি মানুষের হাত থেকে মুক্তি পাবে তারা।

১৭.৪ তাদের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কীভাবে সফল হল?
উত্তর : পেটকাটা ও চাঁদিয়াল দুই ঘুড়ির মধ্যে প্যাঁচের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে দুজনেই প্রাণপণ জেতার চেষ্টা করতে থাকল।
মানুষের কাছে তারা হার মানতে চায় না। দুজনেই সুতোয় টান মারতে থাকে। এভাবে হঠাৎই সত্যি সত্যি উপড়ে গেল
একসঙ্গে দুটি ঘুড়ি। খুশিতে দুজনেই মাথা নাড়তে নাড়তে উড়ে গেল। এভাবেই তাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছিল।

১৭.৫ গল্পে আকাশ কীভাবে দুটি বন্ধু-ঘুড়ির বন্ধু হয়ে উঠল?
উত্তর : পেটকাটা ও চাঁদিয়াল এরা যেমন দুই বন্ধু, আবার এদের দুজনের বন্ধু হয়ে গেল আকাশ। ওদের আনন্দে ভেসে
থাকার জায়গা হল আকাশ। আকাশের বুকে ওরা সুখ-দুঃখের গল্প করে। আকাশে ভাসতে ভাসতে ওরা যে কোথায়
হারিয়ে যায় তা আমরা কেউ জানি না, জানে কেবল আকাশ, কেননা আকাশ ওদের বন্ধু।

১৮. একটা ছবি আঁকো—আকাশে দুটো ঘুড়ি উড়ছে পাশাপাশি, ঘুড়ি দুটোতে ইচ্ছেমতো রং দাও।
উত্তর : 


বোম্বাগড়ের রাজা প্রশ্ন উত্তর

 কবি পরিচিতি : সুকুমার রায় ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর কলকাতার গড়পারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের মসুয়ায়। সুকুমার রায়ের পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক ছিলেন। সিটি স্কুল থেকে তিনি প্রবেশিকা পাশ করেন। রসায়নে অনার্সসহ প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হন। বিএসসি পাশ করে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ফোটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গুরুপ্রসন্ন ঘোষ স্কলারশিপ' লাভ করে বিলেত যান। সুকুমার রায় একজন বিশিষ্ট অভিনেতাও ছিলেন। তিনি অবনীন্দ্রনাথের সহ অভিনেতারূপে ‘গোড়ায় গলদ’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তিনিও পিতার মতো শিশুদের নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলার এক বিশিষ্ট ও খ্যাতনামা লেখক হলেন সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে ‘আবোল তাবোল’, ‘খাই খাই’, ‘পাগলা দাশু’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে ‘অবাক জলপান’, ‘ঝালাপালা’, ‘হিংসুটি’, ‘ভাবুকসভা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি ভালো ছবিও আঁকতে পারতেন। তিনি একজন সুগায়ক ছিলেন। কবি সুকুমার রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

 বোম্বাগড়ের রাজা বিষয়বস্তু আলোচনা : কবি সুকুমার রায় তাঁর ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতাটির মধ্যে রাজা নিজে এবং তাঁর পারিষদরা যা যা করছে সেসব করার কারণ কী—এই প্রশ্নই রেখেছেন তাঁর কবিতার মধ্যে। এখানে রাজা নিজে আমসত্ত্ব ভাজা ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছে। রানি দিনরাত মাথায় বালিশ বেঁধে রেখেছে, রানির দাদা পাউরুটিতে পেরেকে ঠোকে। সর্দিকাশি হলে লোকে ডিগবাজি খায়, জোছনা রাতে সবাই চোখে আলতা মাখে, ওস্তাদরা মাথায় ঘাড়ে লেপমুড়ি দেয়, পণ্ডিতেরা ডাকের টিকিট তাদের টাকের ওপর মারে, ঘিয়ের মধ্যে ট্যাকঘড়িটা চুবিয়ে রাখে—এই সবকিছু করার কারণ কী এই প্রশ্নই কবি করেছেন। আবার কী কারণে শিরীষ কাগজ দিয়ে রাজা বিছানা পাতে, সভাস্থলে হুক্কা হুয়া বলে রাজা চেঁচায় কেন? মন্ত্রীর রাজার কোলে বসে কলশি বাজানোর কারণ কী? রাজার পিসি কুমড়ো নিয়ে খেলে কী কারণে, রাজার খুড়ো হুঁকোর মালা পরে নাচতে থাকে কেন? এসব কিছু প্রশ্নের উত্তর কবি পাঠকের কাছে জানতে চাইছেন।

বোম্বাগড়ের রাজা—সুকুমার রায়

হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতাটি পড়ে সেখানকার মানুষ ও নিয়মকানুন তোমার কেমন লাগল, তা নিজের ভাষায়
লেখো।
উত্তর : ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতাটিতে যেসব মানুষজনের নিয়মকানুনের কথা বলা হয়েছে তাদের সবটুকুই অদ্ভুত
ধরনের। বাস্তবে এসব নিয়মকানুনের প্রয়োগ হয় না। কবির এটি একটি কৌতুকময় কবিতা। এখানে রাজামশাই আমসত্ত্ব
ভাজা সবসময় ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখেন। রানির মাথায় সারাদিন বালিশ বাঁধা থাকে। রানির দাদা পাঁউরুটিতে পেরেক
ঠোকে। সর্দিকাশি হলে সেখানকার লোকেরা ডিগবাজি খায়। জোছনা রাতে সবাই চোখে আলতা মাখে। ওস্তাদেরা মাথায়
ঘাড়ে লেপমুড়ি দেয়। পণ্ডিতেরা টাকের ওপর ডাকটিকিট মারে। ঘিয়ের মধ্যে ট্যাকঘড়িটা ডুবিয়ে রাখে। শিরীষ কাগজ
দিয়ে রাজা বিছানা পাতে। এ ছাড়াও মন্ত্রী, রাজার পিসি, খুড়ো এরাও নানান অদ্ভুত ধরনের কাজ করে। এক কথায় এটি
সুকুমার রায়ের একটি হাসির কবিতা এবং মজার কবিতা।

২. বোম্বাগড়ে যাওয়ার পরে, রাজার সঙ্গে যদি তোমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়, আর তোমাকেই নিয়মকানুন একট-আধটু
বদলে নিতে বলেন তিনি, কিংবা, বলেন জুড়ে দিতে নতুন কোনো নিয়ম, অথবা, একটি দিনের জন্য তোমাকেই
করে দেন বোম্বাগড়ের রাজা, তবে তুমি কী কী করবে?
উত্তর : বোম্বাগড়ে গিয়ে সেখানকার রাজামশাইয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হলে তিনি যদি একটি দিনের জন্য সেখানকার
রাজ সিংহাসনে আমাকে বসতে দেন তবে আমি বোম্বাগড় রাজ্যের রাজা হিসেবে প্রথমেই প্রজাদের প্রতি নজর দেব।
কেননা আমি জানি, প্রজাদের কাছে রাজা হলেন পিতার সমান। পুত্রের সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ যেমন একজন পিতা লক্ষ
রাখেন সেইরকম প্রজাদেরও সুবিধা-অসুবিধার কথা জেনে তাদের রক্ষা করা রাজার প্রথম ও প্রধান কাজ। আমার রাজ্যে
বেশ কয়েকটি নিয়ম চালু থাকবে। তার প্রথমেই রাজ্যের কোনো প্রজা যদি অন্যায় কাজ করে তবে উপযুক্ত শাস্তির
ব্যবস্থা থাকবে। অপরদিকে অন্যায়ভাবে কোনো প্রজাকে শাস্তি দেওয়া হবে না। বহিঃশত্রুর হাত থেকে রাজ্যকে রক্ষা
করার জন্য সেনাবাহিনী নিযুক্ত থাকবে।

৩. ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতাটির সঙ্গে সুকুমার রায়ের লেখা ‘একুশে আইন’ কবিতাটির খুব ভাবগত মিল রয়েছে।
শিক্ষকের থেকে কবিতাটি শোনো। ভালো লাগলে খাতায় লিখে নাও। এমন আরও কবিতা সংগ্রহ করো, যেখানে
অদ্ভুত সব নিয়মের কথা রয়েছে।

একুশে আইন
সুকুমার রায়
শিব ঠাকুরের আপন দেশে
আইনকানুন সর্বনেশে
কেউ যদি যায় পিছলে পড়ে
প্যায়দা এসে পাকড়ে ধরে
কাজির কাছে হয় বিচার—
একশো টাকা দণ্ড তার।।

সেথায় সন্ধে ছটার আগে
হাঁচতে হলে টিকিট লাগে
হাঁচলে পরে বিন্ টিকিটে
দম্ দমাদম্ লাগায় পিঠে,
কোটাল এসে নস্যি ঝাড়ে
একুশ দফা হাঁচিয়ে মারে।।

কারুর যদি দাঁতটি নড়ে,
চারটি টাকা মাশুল ধরে,
কারুর যদি গোঁফ গজায়
একশো আনা ট্যাক্‌সো চায়
খুঁচিয়ে পিঠে গুঁজিয়ে ঘাড়,
সেলাম ঠেকায় একুশ বার।।

চলতে গিয়ে কেউ যদি চায়
এদিক ওদিক ডাইনে বাঁয়,
রাজার কাছে খবর ছোটে,
পল্টনেরা লাফিয়ে ওঠে
দুপুর রোদে ঘামিয়ে তায়
একুশ হাতা জল গেলায়।।

যেসব লোকে পদ্য লেখে,
তাদের ধরে খাঁচায় রেখে,
কানের কাছে নানান সুরে
নামতা শোনায় একশো উড়ে,
সামনে রেখে মুদির খাতা
হিসেব কষায় একুশ পাতা।।

৪.১ সুকুমার রায়ের বাবার নাম কী?
উত্তর : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
৪.২ ‘আবোল তাবোল’ কবিতার বইটি কার লেখা?
উত্তরঃ ‘আবোল তাবোল’ কবিতার বইটি সুকুমার রায়ের লেখা।
৪.৩ তাঁর লেখা অন্য দুটি বইয়ের নাম লেখো। 
উত্তর : তাঁর লেখা অন্য দুটি বইয়ের নাম ‘অবাক জলপান’, ‘পাগলা দাশু'।

এক কথায় উত্তর দাও :
১। ‘বোম্বাগড়ের রাজা' কবিতাটি কোন কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতাটি ‘আবোল তাবোল’ কবিতার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
২। রানির মাথায় অষ্টপ্রহর কী বাঁধা?
উত্তর : রানির মাথায় অষ্টপ্রহর বালিশ বাঁধা থাকে।
৩। বোম্বাগড়ের রাজা ছবির ফ্রেমে কী বাঁধিয়ে রাখেন?
উত্তর : বোম্বাগড়ের রাজা ছবির ফ্রেমে আমসত্ত্ব ভাজা বাঁধিয়ে রাখেন।
সংক্ষেপে উত্তর দাও :
১। বোম্বাগড়ের রানি সারাদিন কীভাবে থাকে এবং তার দাদা কী করে?
উত্তর : বোম্বাগড়ের রানি সারাদিন মাথায় একটা বালিশ বেঁধে রাখে এবং রানির দাদা পাউরুটিতে পেরেক ঠোকে।
২। জোছনা বলতে কী বোঝো? জোছনা রাতে কারা কী করে?
উত্তর : রাতেরবেলা চাঁদের আলোকে জোছনা বলে। এর শুদ্ধ ভাষা হল জ্যোৎস্না। বোম্বাগড়ের মানুষ জোছনা রাতে চোখে আলতা মাখে।
৩। বোম্বাগড়ের লোকেরা কখন, কোথায় আলতা মাখে?
উত্তর : বোম্বাগড়ের লোকেরা জোছনা রাতে সবাই চোখে আলতা মাখে।
৪। ‘বোম্বাগডের রাজা’ কবিতায় কে, কেমন অদ্ভুত কাজ করেন তার তিনটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : ‘বোম্বাগড়ের রাজা’ কবিতায় লোকে সর্দি হলে ডিগবাজি খায়, ওস্তাদেরা মাথায় ঘাড়ে লেপ মুড়ি দেয় এবং মন্ত্রী
রাজার কোলে বসে কলশি বাজায়।


বই পড়ার কায়দা-কানুন

সংক্ষেপে উত্তর দাও :
১। বই জিনিসটা কী?
উত্তর : অজানাকে জানার সবথেকে বড়ো মাধ্যম হল বই। এতে অনেক খবর থাকে। বই হল মনের একটা বড়ো জানলা।
২। বইগুলোর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর : বইয়ের চেহারা মানুষের মতোই। কোনো বই মোটা, রোগা, খাটো। আবার কোনো বই চৌকো, আয়তাকার, লম্বাটে।
৩। আখ্যাপত্র কাকে বলে?
উত্তর : বইয়ের প্রথম পাতায় বইয়ের নাম, লেখকের নাম ইত্যাদি থাকে। একে আখ্যাপত্র বা নামপত্র বলে। একেই
ইংরেজিতে Title Page বলে।
৪। বইয়ের কাগজ কীরকম থাকে?
উত্তর : কোনো বইয়ের কাগজ চকচকে, কোনোটা মোটা, কোনোটা মসৃণ, কোনোটা একটু হলদেটে থাকে।

দীর্ঘধর্মী প্রশ্নের উত্তর দাও :
১। আমাদের কী কী জানতে ইচ্ছা করে?
উত্তর : আমাদের পুরোনো দিনের রাজরাজরার কাহিনি, অভিযানের রোমাঞ, মহাকাশে কী আছে, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের
গল্প, সমুদ্রের গভীরে কী খেয়ে বাঁচে তিবি বা অক্টোপাস, কোন্ ভাষায় কথা বলে তাহিতি দ্বীপের মানুষ...আরও কত
কী জানতে ইচ্ছা করে।
২। বইয়ের যত্ন কীভাবে নিতে হয়?
উত্তর : বইয়ের যত্ন নিতে নীচের বিষয়গুলি মেনে চলতে হবে— (১) বই যেখানে রাখব সেই জায়গাটা ভালো করে দেখে নেব সেখানে জল, তেল বা চটচটে কোনো জিনিস থাকলে তার ওপরে বই রাখব না। নইলে বই নষ্ট হবে। (২) ময়লা হাতে বই ধরব না। খেতে খেতে বই পড়ব না। নইলে, পাতায় দাগ পড়বে আর পাতা নষ্ট হয়ে যাবে। (৩) বই-এর কোণ বা পাতা মুড়ব না বা ভাঁজ করব না। (৪) বই-এর পাতায় অযথা দাগ কাটব না। বই খোলা অবস্থায় উলটে রাখব না বা বইয়ের মধ্যে পেনসিল, পেন বা রাবার জাতীয় কোনো জিনিস রেখে বই মুড়ে রাখব না। বই রোদে দিয়ে শুকোব না।


Tags : পঞ্চম শ্রেণি বাংলা,তালনবমী,পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা তালনবমি,তালনবমী প্রশ্ন উত্তর,পঞ্চম শ্রেণী,তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,বাংলা কার্টুন,তালনবমী গল্প,মধু আনতে বাঘের মুখে পঞ্চম শ্রেণি গল্প,বাংলা ছোট গল্প,#তালনবমী,তালনবমী ভিডিও,তালনবমী কার্টুন,class 5 তালনবমী গল্প,তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,বাংলা গল্প,বাংলা ক্লাস,তালনবমী বিভূতিভূষণ বন্ধোপাধ্যায়ের লেখা,বাংলা সাহিত্য,আকাশের দুই বন্ধু শৈলেন ঘোষ,আকাশের দুই বন্ধু,আকাশের দুই বন্ধু শৈলেন ঘোষ প্রশ্ন উত্তর,class- 5 আকাশের দুই বন্ধু,class v আকাশের দুই বন্ধু,আকাশের দুই বন্ধু পঞ্চম শ্রেণীতে,আকাশেই দুই বন্ধু প্রশ্ন উত্তর,আকাশের দুই বন্ধু গল্প,আকাশের দুই বন্ধু কাটুন,পঞ্চম শ্রেণীর,পঞ্চম শ্রেণি,৫ম শ্রেণির বাংলা ক্লাস,৫ম শ্রেণির বাংলা কবিতা সংকল্প,৫ম শ্রেণির বাংলা অনলাইন ক্লাস,বাংলা অনলাইন ক্লাস ৫ম শ্রেনি,৫ম শ্রেণির বাংলা কবিতা সংকল্প এর সকল প্রশ্ন উত্তর, বোম্বাগড়ের রাজা,বোম্বাগড়ের রাজা,বোম্বাগড়ের রাজা কবিতা,বোম্বাগড়ের রাজা সুকুমার রায়,,পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা,পঞ্চম শ্রেণি বাংলা,বম্বাগড়ের রাজা,সুকুমার রায়ের মজার কবিতা বোম্বাগড়ের রাজা,বোম্বাগড়ের রাজা কবিতা,পঞ্চম শ্রেণি,সুকুমার রায়ের বোম্বাগড়ের রাজা কবিতা,বাংলা কবিতা,কেউ কি জান সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা-,বাংলা কবিতা আবৃত্তি,বম্বাগড়ের রাজা,বোম্বাগড়ের রাজা সুকুমার রায়,বাংলা মজার কবিতা,কিশোরদের ছড়া বাংলা সাহিত্য, পাতাবাহার পঞ্চম শ্রেণি,পঞ্চম শ্রেণি,,পঞ্চম শ্রেণী,পাতাবাহার পঞ্চম শ্রেণী,পঞ্চাম শ্রেণী বাংলা,পঞ্চম শ্রেণি বাংলা,পঞ্চম শ্রেণী এতোয়া মুন্ডার কাহিনী বাংলা,পঞ্চম শ্রেণীর পাতাবাহার বইয়ের লেখক ও লেখিকার নাম,পঞ্চম শ্রেণি বাংলা প্রথম অধ্যায়,পঞ্চম শ্রেণীর পাতাবাহার বইয়ের বচ্ছদ ও অলংকার কে করেন?,পঞ্চম শ্রেণী বাংলা পাতাবাহার গল্প বুড়ো কবিতা হাতে কলমে প্রশ্ন উত্তর,পঞ্চম শ্রেণী এতোয়া মুন্ডার কাহিনী বাংলা সব প্রশ্ন উত্তর

No comments

Hi Welcome ....