B.Ed. 4th Semester Suggestion Notes 2023 WBUTTEPA | Course Code : VI (1.4.6) Gender, School and Society ❐ আরো পড়ুনঃ B.ED 4th Semester Co...

B.Ed. 4th Semester Suggestion Notes 2023 WBUTTEPA | Course Code : VI (1.4.6) Gender, School and Society

Group –A
Question Mark- 2
State any four hindrances of women empowerment.
❏ নারীর ক্ষমতায়নের চারটি বাধা হল-(i) পিতৃতন্ত্র (Patriarchy), (ii) পারিবারিক বন্ধন (Family Bondage), (iii) বাল্যবিবাহ (Early Marriage) এবং (iv) দারিদ্র্যতা (Poverty)।
২. নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রধান লক্ষ্য কী কী?
What is the basic aim of Feminist approach?
❏ নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রধান লক্ষ্যগুলি হল – নারীর মুক্তির জন্য কিংবা নারীর সমান অধিকারের জন্য লড়াই করা, (i) লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও বৈষম্য দূর করা, (ii) পুরুষের সঙ্গে নারীদের সমান যৌগিক অধিকারের দাবি করা ও নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা।
৩. স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে শিক্ষার দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য বিবৃত করুন।
State two Major aims of education according to the view of Swami Vivekananda.
❏ স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে শিক্ষার দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য হল— (i) শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা, স্বকীয়তা ও উৎকর্ষতার বিকাশ ঘটানো ও আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা। (ii) শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মোপলব্ধি জাগ্রত করা, যাতে করে তাদের মধ্যে চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ও আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে এবং মনুষ্যত্বের অধিকারী হয়।
৪. যে-কোনো দুটি যৌনতাসূচক অবাঞ্ছিত কারণ লিখুন।
Write any two un- expected behaviors driven by sexuality.
❏ যৌনতাসূচক দুটি অবাঞ্ছিত কারণ হল— (i) গণমাধ্যম তথা তার দ্বারা প্রচারিত বিজ্ঞাপনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। সেখানেও ক্ষমতাকেন্দ্রিক পুরুষের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে যে নারীকে উপস্থাপিত করা হয় তা মূলত পণ্য হিসেবে, ভোগ্যপণ্য বস্তু হিসেবে, দূরদর্শন জন সমাজের নিকট যে সমস্ত চ্যানেল গুলিকে উপস্থাপন করে সেখানে প্রায় 20 শতাংশই বিভিন্ন ধরনের নারীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা নির্যাতন সম্পর্কিত। বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা পুরুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যার ফল হয় বিষময়। (ii) মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য, পোশাক-আশাক অশ্লীল হওয়ার ফলে পুরুষদের মধ্যে যৌনতাসূচক ইচ্ছার উদ্ভব ঘটে।
৫. দ্বন্দ্বের প্রাক্ষোভিক উৎস হিসেবে উদ্বেগ কী?
What is anxiety as an emotional source of conflict?
❏ দ্বন্দ্বের প্রাক্ষোভিক উৎস হিসেবে উদ্বেগ বলতে এখানে মানসিক অশান্তিকেই বোঝানো হয়েছে। বিভিন্ন কারণের মানুষের মধ্যে অশান্তি, অস্থিরতার সৃষ্টি হয় আর সেই থেকেই মনের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
৬. প্রাক্ষোভিক দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝেন?
What is emotional conflict?
❏ দ্বন্দ্বের দুটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা যায় যার একটি সামাজিক দ্বন্দ্ব আর অপরটি প্রাক্ষোভিক দ্বন্দ্ব। সামাজিক দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত স্তর থেকে বৃহত্তর দলগত দ্বন্দ্ব পর্যন্ত বিস্তৃত, কিন্তু প্রাক্ষোভিক দ্বন্দ্ব তুলনামূলকভাবে ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ। কারণ প্রক্ষোভ ব্যক্তিগত সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি।
৭. লিঙ্গান্তর ও
যৌনান্তরের দুটি পার্থক্য লিখুন।
Mention two differences between transgender and transsexualism.
Mention two differences between transgender and transsexualism.
❏ লিঙ্গান্তরের ও যৌনান্তরের মধ্যে দুটি
পার্থক্য হল—
লিঙ্গান্তর |
যৌনান্তর |
(i) লিঙ্গান্তরের
ব্যক্তিবর্গ হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে
ভিন্ন। |
(i) যৌনান্তর
বলতে বিশেষ একটি প্রবণতা বোঝায় যখন সেক্স বা জৈব লিঙ্গ ব্যক্তির জেন্ডার বা
সাংস্কৃতিক লিঙ্গের সঙ্গে প্রভেদ তৈরি করে। |
(ii) লিঙ্গান্তর
একটি শ্রেণিগত পরিভাষা, যাতে
এমন ব্যক্তিদেরও যোগ করা হয়, যাদের
মানসিক লিঙ্গবোধ তাদের জন্মগত লিঙ্গ চিহ্নের বিপরীত। |
(ii) যৌনান্তর ব্যক্তিগণ
এমন একটি যৌন পরিচয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন যা ঐতিহ্যগত ভাবে তাদের নির্ধারিত
যৌনতার সঙ্গে স্থিতিশীল নয় এবং নিজেদেরকে স্থায়ীভাবে সেই লিঙ্গে পরিবর্তন করতে
চায়। |
Group –B
Question Mark- 5
১. নারীশিক্ষা ও সমাজসংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা লিখুন।
Discuss the contribution of Raja Rammohan Roy about women education and social reforms.
❏ রামমোহনের সমাজসংস্কার বা নারীমুক্তি আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল নারীশিক্ষার প্রবর্তন। তিনি নারীশিক্ষার সমর্থক ছিলেন। নানা হিন্দুশাস্ত্র থেকে উদাহরণ সংগ্রহ করে তিনি প্রমাণ করেন যে প্রাচীনকালে সমাজে নারীশিক্ষার বিশেষ প্রচলন ছিল, তিনি নারীশিক্ষার বিষয়ে প্রবল আগ্রহী ছিলেন। তিনি শিক্ষার ব্যাপারে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা দানের পক্ষপাতী ছিলেন। নারীশিক্ষা প্রবর্তনের জন্য তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। 1822 সালে তিনি ইংরেজিতে স্ত্রীশিক্ষা বিষয়ক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। নারীর অধিকার ও শিক্ষা বিষয়ে এই বইটিতে তিনি আলোচনা করেন । তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারীশিক্ষার প্রসার না ঘটলে নারীর বন্দিনী দশা কোনোদিন দূর হবে না বরং নারী শিক্ষিত হলে সে তার নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হতে শিখবে। অন্যায়-অবিচার মুখ বুজে সহ্য না করে তার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে। 1819 সালে সহমরণ বিষয়ক আলোচনা সভা বা বিতর্কসভায় তিনি নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকটি সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন। রামমোহন রায় সম্পাদিত ‘সম্বাদ কৌমুদী' পত্রিকায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার বক্তব্য বারবার তুলে ধরা হয়েছিল।
গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক 1829 সালের ডিসেম্বর মাসে 17 নং রেগুলেশন জারি করে এই প্রথাকে বেআইনি ও ফৌজদারি আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেন। এভাবে রামমোহনের উদ্যোগে ও লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রথার অবলুপ্তি হয়।
1. রামমোহন রায় ও বাংলার সমাজ সংস্কার আন্দোলন : মানব সভ্যতার প্রথম বসন্ত হল নবজাগরণ। বাংলা তথা ভারতবর্ষে নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ভারতবাসীকে মধ্যযুগের অন্ধকার থেকে আধুনিক যুগের আলোর ঠিকানা দেন। ঊনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতবর্ষের নবজাগরণ আন্দোলন বা সংস্কার আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন রামমোহন রায়। রামমোহন ছিলেন মূলত সমাজসংস্কারক, ধর্ম সংস্কারক ও শিক্ষা সংস্কারক। নীচে সমাজসংস্কার তথা নারী মুক্তি আন্দোলনে রামমোহনের ভূমিকা আলোচনা করা হল—
2. রামমোহনের সমাজসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি : সমাজসংস্কারক হিসেবে রামমোহনের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে চালিত করা। মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ছিল নানা কুসংস্কার ধর্মীয় গোঁড়ামিতা, ও অর্থহীন অমানবিক প্রথা বা সংস্কারের সমষ্টি। তৎকালীন ভারতীয় সমাজ বাল্যবিবাহ, কুলীন প্রথা বা বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতির দ্বারা আবদ্ধ ছিল। সমাজে নারীর কোনো মর্যাদা বা অধিকার বিশেষত অর্থনৈতিক অধিকার ছিল না। এ ছাড়া মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ জীবন নানারকম ধর্মীয় সংস্কার দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। সমাজে মূর্তিপূজা, বহু দেবদেবীতে বিশ্বাস, আড়ম্বরপূর্ণ পূজা-পার্বণ ও যাগযজ্ঞ প্রভৃতি প্রচলিত ছিল। এই সামাজিক পটভূমিতে রামমোহনের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত।
3. সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা : রামমোহনের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের একটি বিশেষ দিক হল সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি পুরুষ ও নারীর সমমর্যাদার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি হিন্দু নারীর বিষয় সম্পত্তির অধিকার সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। সেই সময় সমাজে পারিবারিক সম্পত্তিতে মেয়েদের কোনো অধিকার ছিল না। এই বিষয়টির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সামগ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। মেয়েরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায় সেদিকে তার দৃষ্টি ছিল সজাগ ।
4. কৌলিন্য প্রথা বা বহু বিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন : মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের একটি অন্যতম কু-প্রথা ছিল কৌলিন্য প্রথা। দ্বাদশ শতকে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। কৌলিন্য প্রথার ফলে একদিকে বালিকার সঙ্গে বৃদ্ধের বিবাহ, কুলীনদের বহুপত্নী গ্রহণ, বাল্যবৈধব্য প্রভৃতি সমস্যা সমাজে দেখা দেয়। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলার সচেতন জনগণ এর কুফল সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠলেন। 1815 সালে আত্মীয় সভার মাধ্যমে তিনি কৌলিন্য প্রথা তথা বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। 1819 খ্রি: প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বন্ধে কুলীন কন্যাদের অসহায় অবস্থার চরিত্র তুলে ধরেন। 1822 সালে প্রকাশিত ‘Brief Remarks regarding Modern Encroachments on the ancient rights of Females, according to the Hindu law of Inheritance' এ রামমোহন তীব্রভাষায় এই প্রথার সমালোচনা করেন।
5. বিধবা বিবাহ : সতীদাহ প্রথা রদ হওয়ার পর বাঙালি সংস্কারকরা বিধবা বিবাহ সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠলেন। রামমোহনের জীবনকাল 1772-1830 সাল পর্যন্ত ছিল। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশে ঊনিশ শতকের তিরিশের দশকের বছরগুলি থেকে বিধবাবিবাহ নিয়ে সমাজে আলোচনা শুরু হয়। রামমোহন তাঁর কোনো গ্রন্থে বিধবা বিবাহের সমর্থনে কিছু বলেন নি। তিনি বিধবা বিবাহ ব্ৰষ্মচর্য অবলম্বনই সমর্থন করতেন।
গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক 1829 সালের ডিসেম্বর মাসে 17 নং রেগুলেশন জারি করে এই প্রথাকে বেআইনি ও ফৌজদারি আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করেন। এভাবে রামমোহনের উদ্যোগে ও লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রথার অবলুপ্তি হয়।
1. রামমোহন রায় ও বাংলার সমাজ সংস্কার আন্দোলন : মানব সভ্যতার প্রথম বসন্ত হল নবজাগরণ। বাংলা তথা ভারতবর্ষে নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যাকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ভারতবাসীকে মধ্যযুগের অন্ধকার থেকে আধুনিক যুগের আলোর ঠিকানা দেন। ঊনিশ শতকের বাংলা তথা ভারতবর্ষের নবজাগরণ আন্দোলন বা সংস্কার আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন রামমোহন রায়। রামমোহন ছিলেন মূলত সমাজসংস্কারক, ধর্ম সংস্কারক ও শিক্ষা সংস্কারক। নীচে সমাজসংস্কার তথা নারী মুক্তি আন্দোলনে রামমোহনের ভূমিকা আলোচনা করা হল—
2. রামমোহনের সমাজসংস্কার আন্দোলনের পটভূমি : সমাজসংস্কারক হিসেবে রামমোহনের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে চালিত করা। মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ছিল নানা কুসংস্কার ধর্মীয় গোঁড়ামিতা, ও অর্থহীন অমানবিক প্রথা বা সংস্কারের সমষ্টি। তৎকালীন ভারতীয় সমাজ বাল্যবিবাহ, কুলীন প্রথা বা বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতির দ্বারা আবদ্ধ ছিল। সমাজে নারীর কোনো মর্যাদা বা অধিকার বিশেষত অর্থনৈতিক অধিকার ছিল না। এ ছাড়া মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ জীবন নানারকম ধর্মীয় সংস্কার দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। সমাজে মূর্তিপূজা, বহু দেবদেবীতে বিশ্বাস, আড়ম্বরপূর্ণ পূজা-পার্বণ ও যাগযজ্ঞ প্রভৃতি প্রচলিত ছিল। এই সামাজিক পটভূমিতে রামমোহনের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত।
3. সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা : রামমোহনের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের একটি বিশেষ দিক হল সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি পুরুষ ও নারীর সমমর্যাদার পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি হিন্দু নারীর বিষয় সম্পত্তির অধিকার সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। সেই সময় সমাজে পারিবারিক সম্পত্তিতে মেয়েদের কোনো অধিকার ছিল না। এই বিষয়টির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সামগ্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। মেয়েরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায় সেদিকে তার দৃষ্টি ছিল সজাগ ।
4. কৌলিন্য প্রথা বা বহু বিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন : মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের একটি অন্যতম কু-প্রথা ছিল কৌলিন্য প্রথা। দ্বাদশ শতকে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। কৌলিন্য প্রথার ফলে একদিকে বালিকার সঙ্গে বৃদ্ধের বিবাহ, কুলীনদের বহুপত্নী গ্রহণ, বাল্যবৈধব্য প্রভৃতি সমস্যা সমাজে দেখা দেয়। ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলার সচেতন জনগণ এর কুফল সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠলেন। 1815 সালে আত্মীয় সভার মাধ্যমে তিনি কৌলিন্য প্রথা তথা বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। 1819 খ্রি: প্রবর্ত্তক ও নিবর্ত্তকের দ্বিতীয় সম্বন্ধে কুলীন কন্যাদের অসহায় অবস্থার চরিত্র তুলে ধরেন। 1822 সালে প্রকাশিত ‘Brief Remarks regarding Modern Encroachments on the ancient rights of Females, according to the Hindu law of Inheritance' এ রামমোহন তীব্রভাষায় এই প্রথার সমালোচনা করেন।
5. বিধবা বিবাহ : সতীদাহ প্রথা রদ হওয়ার পর বাঙালি সংস্কারকরা বিধবা বিবাহ সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠলেন। রামমোহনের জীবনকাল 1772-1830 সাল পর্যন্ত ছিল। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশে ঊনিশ শতকের তিরিশের দশকের বছরগুলি থেকে বিধবাবিবাহ নিয়ে সমাজে আলোচনা শুরু হয়। রামমোহন তাঁর কোনো গ্রন্থে বিধবা বিবাহের সমর্থনে কিছু বলেন নি। তিনি বিধবা বিবাহ ব্ৰষ্মচর্য অবলম্বনই সমর্থন করতেন।
২. সমাজ সংস্কারক হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদান বর্ণনা করুন।
Describe the contribution of Begam Rokeya as a social reformer.
❏ ঊনবিংশ শতাব্দীর মুসলিম সমাজ ছিল চূড়ান্ত রক্ষণশীল। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে মুসলিম মেয়েদের পরিবারের বাইরে কারও সঙ্গে মেলামেশা এবং সাধারণ বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ করা ছিল অসম্ভব। যদিও হিন্দু পরিবারগুলিও ছিল যথেষ্ট রক্ষণশীল তবুও তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে শিক্ষার আলোক প্রবেশ করে রক্ষণশীলতার প্রাচীর অনেকটাই ভাঙছিল। বিশেষভাবে ব্রাহ্মসমাজ এবং ভারতীয় খ্রিস্টান পরিবারের মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার প্রসার হিন্দু মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহিত করেছিল। এ ব্যাপারে আলোকপ্রাপ্ত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দু পুরুষদের উদ্যমও ছিল লক্ষণীয়। এই পরিস্থিতিতে বেগম রোকেয়ার আবির্ভাব। তিনি শুধু মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করেই থেমে যাননি, অক্লান্তভাবে মুসলিম সমাজের রক্ষণশীলতাকে ভাঙতে চেয়েছিলেন। তাঁর মাত্র 52 বছরের জীবনে কলম চলেছে অক্লান্তভাবে। উপন্যাস, কবিতা, ছোটোগল্প, কল্পবিজ্ঞান, প্রবন্ধ, ব্যঙ্গরচনা সবকিছুতেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি সওয়াগত, মহম্মদী, নবপ্রভা, মহিলা, ভারত মহিলা, এই ইসলাম, নওরোজ, বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা ইত্যাদি সমকালীন নানা পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে লিখেছেন। তাঁর প্রথম রচনা 'পিপাসা' (1920) পরে লেখেন 'মতিচুর’ (1905) ‘সুলতানার স্বপ্ন' (1908) ইত্যাদি। তাঁর সর্বশেষ অসমাপ্ত প্রবন্ধ নারীর অধিকার। সমস্ত রচনার অভিমুখ মুসলিম মেয়েদের অধিকার অর্জন, তাদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতি ।
1916 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় কিছু অনুগামী শিক্ষিত মুসলিম মহিলাকে নিয়ে অঞ্জুমান-এ-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম (Women's Association for Muslim or Muslim Women's Association) এই সংগঠন ব্যাপকভাবে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার সপক্ষে প্রচার ও আন্দোলন সংগঠিত করে। এ কথা মনে করলে ভুল হবে যে তাঁর উদ্যোগ অবাধ ও প্রতিরোধবিহীন হয়েছিল। সেই সময়ে তা সম্ভব ছিল না। কিন্তু তিনি সমস্ত বাধাবিপত্তি শত্রুতাকে দুই হাতে ঠেলে তাঁর কাজ করে যান। 1926 খ্রিস্টাব্দে তিনি Bengal Women's Education Conference - এ সভাপতির আসন অলংকৃত করেন এবং সময়োপযোগী মনোজ্ঞ ভাষণে সকলকে মুগ্ধ করেন। বেগম রোকেয়াকে প্রথম নারীবাদী মুসলিম মহিলা বলা হয়। 1924 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'পদ্মরাগ'-এ তিনি লিখেছেন, বিবাহ করাই মেয়েদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এই উক্তি সেকালের কোনো মুসলিম মহিলার পক্ষে সত্যিই দুঃসাহসিক। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন" একটি ব্যঙ্গ রচনা। এখানে একটি কাল্পনিক দেশের কাহিনি বলা হয়েছে যেখানে পুরুষরা পর্দার আড়ালে থাকে মেয়েদের অধীনে। সেখানে একজন পর্দানসিন পুরুষ আক্ষেপ করে বলেছেন, শুনেছি ভারতবর্ষ নামে এক দেশ আছে সেখানে পুরুষরা স্বাধীন, মেয়েরা পুরুষের অধীন পর্দানসিন। 1931 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘অবরোধবাসিনী'-তেও তিনি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সোচ্চার।
প্রথম দিকের শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন দাদার গোপন সাহায্যে সাহসও অর্জন করেছিলেন দাদার নিকট থেকেই । বিবাহের পর স্বামীর সহায়তায় তাঁর শিক্ষা ও সাহস আরও দৃঢ় হয়। তারই প্রমাণ পাওয়া যায় রোকেয়ার পরবর্তী কর্মকাণ্ডে। মুসলিম পুরুষ নেতাদের রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে তিনি একজন প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, সমাজসংস্কারক চিন্তাবিদ ও সংগঠক হিসেবে নিজের অনন্য প্রতিভার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশে নারী নির্যাতন ক্রমবর্ধমান। আজও মেয়েদের পুরোপুরি অবরোধ মুক্তি হয়নি। উপরন্তু নানাভাবে সমাজ এখনও অনেকটা পশ্চাৎমুখী। শুধু পার্থক্য এই যে মুসলিম মেয়েরা আজ অনেকটা অগ্রসর, আর এই অগ্রগতির সূচনা করে বেগম রোকেয়া শিক্ষা ও সামাজিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলাদেশের রংপুরে তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং সেখানে প্রতিবছর তাঁর জন্ম তথা মৃত্যুদিনটিকে 9 ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
৩. যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আইনের নির্দেশিকা উল্লেখ করুন।
Mention about the laws for preventing and redressing of sexual harassment.
❏ যৌন নির্যাতনের প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আইনের নির্দেশিকাগুলিকে নিম্নে বর্ণনা করা হল-
1. নারী সুরক্ষা আইন (Women Protection Act): ভারতীয় দণ্ডবিধি আইন, Indian Penal Code,1860 এর মধ্যে ধারা সংখ্যা 294 (অশ্লীল কার্য বা সংগীত কটূক্তি), 327 (মহিলাদের শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে আঘাত বা বলপ্রয়োগ), 354 (মহিলাদের শ্লীলতাহানি), 377 (ধর্ষণ), 279 (মহিলাদের প্রতি অমর্যাদাকর উদ্ভি অঙ্গভঙ্গি বা কর্ম) ইত্যাদি।
2. যৌন হয়রানি সংক্রান্ত শিল্প আইনসমূহ (Industrial Laws regarding sexual harrassment): বিরোধ আইন, 1947 (Industrial Disputes Act, 1947), শিল্প আইন, 1948 (Factories Act, 1948) বাগিচা শ্রমিক আইন, 1971 (Plantation Labour Act, 1971), খনি আইন, 1972 (Mines Act, 1972), মাতৃত্বজনিত সুবিধা আইন, 1961 (Maternity Benefit Act, 1961), বিড়ি ও সিগার কর্মী (নিযুক্তির শর্তাবলি) আইন, 1976 (Equal Remuneration Act 1976), মহিলাদের অশালীন প্রদর্শন নিবারণ আইন, 1987 Indecent Representation of Women Prohibition Act, 1987), দিল্লি কিশোরী-উত্যক্তকরণ নিবারণ আইন, 1988 (Delhi Prohibition of Eve Teasing Act, 1988) প্রভৃতি লাঘু আছে। এতগুলি আইন প্রণীত হলেও সেগুলির কোনোটিতেই মহিলাদের যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি উল্লিখিত নেই। বিষয়টির গুরুত্ব বিচার করে ও এই ব্যাপারে অসুবিধা দূরীকরণে ভারতের জাতীয় মহিলা কমিশন 2000 খ্রিস্টাব্দে একটি বিলের প্রস্তাব করেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা আইন প্রণয়ন এযাবৎ সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
3. যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন, 2012 (Protection of Children from Sexual Offences Act, 2012): বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ব্যক্তির উদ্যোগে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ভারতীয় আইনসভা 19 জুন, 2012 তারিখে ‘যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন, 2012' (Protection of Children from Sexual Offences Act, 2012) অনুমোদন করে। এই আইনে শিশুদের উপর সংঘটিত কী কী নিপীড়নমূলক কর্ম যৌন অপরাধের পর্যায়ে গণ্য করা হবে, সে সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তার জন্য সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান উল্লিখিত হয়েছে।
4. বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন, 2006 (Child Marriage Prohibition Act, 2006): নাবালক-নাবালিকা অবস্থায় বিবাহ যৌন নিপীড়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। একটা সময়ে মেয়েদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা করার জন্য কম বয়সে বিবাহ দিয়ে তাদের পিতামাতা দায়মুক্ত হতেন এবং বাল্যবিবাহ কুপ্রথায় পরিণত হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও কার্যকরীভাবে নিরক্ষর পরিবারগুলির নাবালিকা কন্যারা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। এই প্রথা বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌন নিপীড়ন শিশু ও নারী পাচারের মতো জঘন্য অমানবিক কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। এই আইন প্রণয়নের পর দশ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভারতীয় সমাজে, বিশষত গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা এখনও যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকরী এবং প্রতি বছর বহু সংখ্যক মেয়েকে বাধ্যতামূলকভাবে বিদ্যালয় পরিত্যাগে বাধ্য করছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতির ক্ষেত্রেও অন্তরায়। তবে আশার কথা, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি এই আইন প্রয়োগের বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছেন ও তার প্রভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
Discuss briefly different aspects of gender discrimination in textbook in School Curriculum.
❏ পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গবৈষম্যের ধরন পাঠ্য বিষয়ভেদে কিছুটা আলাদা হয়। পাঠক্রমের মাধ্যমে যে লিঙ্গবৈষম্যের সূচনা,পাঠ্যপুস্তকে তার বিস্তার এবং পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত শ্রেণিকক্ষের সমস্তরকম কর্মকাণ্ডের মধ্যে তার পরিণতিলাভ ঘটে। যেহেতু বিষয়বস্তুর প্রকৃতি অনুযায়ী পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচি নির্ধারিত হয়, সেহেতু বিষয়ভেদে লিঙ্গবৈষম্যের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়। পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের তিনটি ক্ষেত্র UNESCO চিহ্নিত করেছে।
1. বিষয়বস্তু: বিষয়বস্তু নির্বাচনের সময় বিশেষত পাঠ্যসূচি তৈরি করার সময় যা কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার মধ্যে ছেলেদের অভিজ্ঞতা অর্থাৎ পুরুষসুলভ অভিজ্ঞতার প্রাধান্য থাকায় লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের মনে বদ্ধমূল ধারণা হতে পারে যে ছেলেরাই শুধু সৈনিক, পুলিশ, কৃষক, গাড়ির ড্রাইভার, বিমান চালক কিংবা সামাজিক সেবক হয়ে থাকে। অন্যদিকে মেয়েরা হয় গৃহকর্মী, রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ইত্যাদি।
2. দৃশ্যরূপ: বিষয়বস্তু নির্বাচনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিত্ররূপ অর্থাৎ ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েরা সবসময় প্রথাগত স্ত্রীসুলভ ভূমিকা পালনে রত। খুব ছোটো শিশুদের জন্য যে সমস্ত ছড়ার বই সচরাচর ছবিসহ ছাপা হয় সেখান থেকেই এই বিভাজন স্পষ্ট। ছড়াতে এবং ছবিতে খুকুর চেয়ে খোকার প্রাধান্য বেশি। ছড়ার খোকা মাছ ধরতে যায়, তাকে দুধমাখা ভাত খাওয়ানোর জন্য ডাকাডাকি করা হয়, পুত্রসন্তান আদরের ধন, কিন্তু খুকি ইলিশ মাছের ঝোল রান্না করে অপেক্ষা করে কখন সোনা ফিরবে। ছবিগুলির মধ্যে ছেলে এবং মেয়ের সাজসজ্জাও লক্ষণীয়। ছড়ার বই থেকে পাঠ্যপুস্তকে পৌঁছোলে রকমফের হলেও মূল ধারা একই থাকে, অর্থাৎ অব্যাহত থাকে লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টির প্রয়াস।
3. মূল্যায়ন: পাঠান্তে মূল্যায়নের জন্য যে অনুশীলনী রচিত হয় সেখানেও লিঙ্গবৈষম্য যথেষ্ট প্রকট। সেখনে মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব কম, ছেলেদের প্রতিনিধিত্ব বেশি।
4. ভাষা: অপর একটি বিশ্লেষণে, বিষয়বস্তু নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বকে লিঙ্গবৈষম্যের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার পাশাপাশি যে ভাষায় পাঠ্যপুস্তক লেখা হয় সেই ভাষার মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের প্রবল প্রভাব লক্ষ করেছে। অধিকাংশ ভারতীয় ভাষায় পুরুষ লিঙ্গবাচক শব্দ এবং স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ আলাদা। স্বাভাবিকভাবেই দুই লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করে পুস্তক রচনা করা হয় না। ইংরেজিতে He, She, King, Queen ইত্যাদি শব্দ যেমন আছে তেমনি Tiger-Tigress, Man-Woman কিন্তু এরকম অসংখ্য শব্দ আছে, আবার যা দুই লিঙ্গকেই বোঝায় এরকম শব্দও আছে। পাঠ্যপুস্তক রচনার সময় He, Man. Tiger জাতীয় শব্দগুলিই বেশি ব্যবহার হয়। যদি নির্দিষ্টভাবে স্ত্রীলিঙ্গব্যবহারের প্রয়োজন হয় তখনই She Woman জাতীয় শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়। বাংলায় সর্বনাম পদগুলির লিঙ্গভেদ নেই (ইংরেজি You, We, I, এগুলির বেলাতেও নেই) কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, নারী-পুরুষ ইত্যাদি কিছু কিছু শব্দ আছে যেগুলি কখনো-কখনো একসঙ্গেই ব্যবহার হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় পুরুষবাচক শব্দই ব্যবহৃত হয়। যেমন— ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষক দিবস, কৃষক, ডাক্তার, উকিল, মহাপুরুষ, সভাপতি ইত্যাদি অসংখ্য শব্দ। বাংলায় আমজনতাকে বোঝাতে রাম, শ্যাম, যদু, মধু জাতীয় নাম, ইংরেজিতে Tom, Dick, Harry ইত্যাদির মধ্যে কেউ মেয়ে নয়। সেই কোনো সুদূর অতীতে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর প্রবন্ধে রামা কৈবর্ত আর হাসিম শেখ নাম উল্লেখ করেছিলেন একই উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ এটিই স্বাভাবিক।
যাইহোক, প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে লেখকের তুলনায়, লেখিকাদের প্রতিনিধিত্ব কম, ছেলেদের নামের চেয়ে মেয়েদের নাম কম, পুরুষ বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞের তুলনায় মহিলা বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ নগণ্য। এই জাতীয় অভিযোগ থাকলেও বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিচার্য শর্তগুলির পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো প্রতিনিধিত্বের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয় না। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে পাঠা বিষয় ব্যাখ্যা করার সময় অনুরূপ অন্যান্য লেখিকা, বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞের প্রসঙ্গ উত্থাপন করার প্রচেষ্টাও থাকে অনুপস্থিত।
Describe briefly the problems of women empowerment in India.
❏ ভারতে নারীর ক্ষমতায়নে সমস্যাগুলি হল-
1. পিতৃতন্ত্র (Patriarchy): পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর স্থান পুরুষের অধীনে এ কথা পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুরুষেরই সৃষ্টি সেহেতু তারা নিজেদের জন্য সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ করে নিয়ে নারীর স্থান রেখেছে অনেকটা নীচে। যুগ যুগ ধরে এই ব্যবস্থা চলতে থাকায় নারী সমাজও সেটা নির্বিচারে মেনে নিয়েছে। প্রকৃত বাধা এখানেই যে নারী নিজেকে দুর্বল ও হীন ধরে নিয়ে পুরুষের অধীনে থাকাটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে। সমস্ত সুযোগসুবিধা স্বেচ্ছায় পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে নিজেকে দুর্বলতর করেছে। ব্যতিক্রম বাদ দিলে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা।
2. পারিবারিক বন্ধন (Family Bondage): মেয়েরা স্বাভাবিকভাবে পরিবার প্রিয়। তারা স্বেচ্ছায় যত সহজে পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়, পুরুষ ততটা নয়। লিঙ্গ পরিচয় ও লিঙ্গসুলভ ভূমিকা গ্রহণ পর্ব যখন থেকে সূত্রপাত হয় তখন থেকেই মেয়েদের পরিবারের প্রতি বিশেষ আকর্ষণেরও সূত্রপাত হয়, কারণ এই বিষয়টি লিঙ্গসুলভ ভূমিকারও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।একটু বড়ো হওয়ার পর যখন তাদের হাতে সাংসারিক কাজ, ছোটো ভাইবোনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তখন তাদের কাছে সেটা অস্বাভাবিক মনে হয় না। স্বাধীন চিন্তা, নিজের জন্য ভবিষ্যৎ জীবনের রূপকল্পনা অসংখ্য মেয়ের ক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ।
3. বাল্যবিবাহ (Early Marriage): সম্ভবত আমাদের সমাজে এর চেয়ে বড়ো ও ক্ষতিকর অভিশপ্ত ব্যবস্থা আর কিছু নেই। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, আইন প্রণয়নসহ দেড়শো বছরের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও বাল্যবিবাহ প্রথা বিপুলভাবে জগদ্দল পাথরের মতো সমাজের বুকে চেপে বসে আছে। তার কারণ মেয়েদের ক্ষমতাহীনতা, আবার এই প্রথাই মেয়েদের ক্ষমতাহীনতার কারণ। বাল্যবিবাহের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের নেতিবাচক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা কঠিন নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হলেও আর্থিক সংগতিসম্পন্ন পরিবারেও বাল্যবিবাহ যথেষ্ট সংখ্যায় এবং উৎসাহের সঙ্গে ঘটে।
4. অর্থনৈতিক বাধা (Economic Obstacle): দারিদ্র্য ক্ষমতায়নের বড়ো বাধা। দারিদ্র্যের কারণে পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা এবং অশিক্ষা আমাদের দেশে খুব সাধারণ ব্যাপার। দারিদ্র্যের জন্য বাল্যবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের কুফল সম্বন্ধে অজ্ঞতার প্রসঙ্গে আগে বলা হয়েছে। কিন্তু তা ছাড়াও দারিদ্র্যের জন্য শিশুশ্রম আইন করেও কমানো যায়নি। তার আর একটি কারণ শিশুশ্রম অর্থ সস্তা শ্রম। কম মজুরিতে পণ্য উৎপাদন লাভজনক। সুতরাং, দারিদ্র্যকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায় লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী। এই শোষণ ও বঞ্চনার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে ভেদ নেই। গৃহকাজে সহায়িকার কাজ করে যে বালিকারা তাদের মতো অক্ষম আর কেউ নেই। যে সমস্ত শ্রমিক বিশেষত নারীশ্রমিকরা ফসল বোনা এবং ফসল কাটার সময় এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যায় তারা তাদের সন্তানদেরও সঙ্গে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারা অবহেলায় কিছুটা বড়ো হয়, তারপর একটু বড়ো হলে তখন নিজেরাও শ্রমিকে পরিণত হয়। অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা আর ক্ষমতাহীনতা প্রায় সমার্থক।
5. বর্ণবিভাজন নীতি (Casteism): বর্ণবিভাজনের কথাও ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। সমাজে বর্ণবিভাজন অত্যন্ত প্রাচীন এবং প্রায় দুরপনেয়। কারণ বর্ণবিভাজনের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য বর্ণের স্তরবিন্যাস। উচ্চবর্ণ, উচ্চতম বর্ণ, নিম্ন তথা নিম্নতম বর্ণ একশ্রেণির মানুষকে অন্য শ্রেণির মানুষের চেয়ে দূরে সরিয়ে রেখেছে। বহু অঞ্চলে উচ্চবর্ণের মানুষরা নিম্নবর্গের মানুষের সেবা গ্রহণ করেন, কিন্তু তাদের সর্বত এড়িয়ে চলেন এবং সগর্বে তা প্রচার করতেও দ্বিধা করেন না। এই রকম একটি বিভাজিত সমাজে সর্বস্তরের নারীর ক্ষমতায়ন ঘটানো কঠিন। বহু সম্প্রদায়ের মানুষ যারা প্রান্তিক শ্রেণির তাদের ভোটাধিকার আছে, কিন্তু স্বাধীনভাবে মতামত জানানোর অধিকার নেই।
৬. পরিবার ও সমাজে লিঙ্গ পক্ষপাতের প্রভাবগুলি আলোচনা করুন।
Discuss the effects of Gender bias in Society and Family.
❏ লিঙ্গের যত প্রকারভেদই থাকুক না কেন বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো একটি লিঙ্গের প্রতি পক্ষপাতিত্বের প্রসঙ্গে শুধুমাত্র নারী ও পুরুষ এই দুই লিঙ্গেরই প্রাধান্য দেখা যায়। লিঙ্গ পক্ষপাত পরিবারে, বৃহত্তর সমাজে বিদ্যালয়ে, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় কিংবা রাজনৈতিক যেকোনো ক্ষেত্রেই দেখা যায় ।
1. পরিবার (Family): পরিবারের সূচনাতে অর্থাৎ যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্তান আগমনের ফলে পরিবার পূর্ণতা পাওয়ার মুখে, তখনই লিঙ্গ পক্ষপাতের সূত্রপাত। পুত্রসন্তান ও কন্যাসন্তানের মধ্যে যে-কোনো একটিকে কামনা করে দাম্পত্য জীবনের শুরু হয়। কিন্তু ভারতীয় সমাজে প্রবলভাবে পুত্রসন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে প্রায় সর্বজনীন চাহিদা হিসেবে দেখা যায়। বাস্থিত লিঙ্গ না হলে নবজাত সন্তানের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এবং তজ্জনিত অবহেলা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও দুর্লভ নয়। বিশেষ করে কন্যাসন্তানের প্রতি অবহেলা পরিবারস্থ অন্য সদস্যদের মধ্যে তো বটেই, তা ছাড়া দম্পতির মধ্যেও অনেক দেখা যায়। পরিবারে লিঙ্গ পক্ষপাতের প্রকাশ ঘটে অনেকগুলি বিষয়ের ক্ষেত্রে ।
2. খাদ্যবণ্টন (Food Sharing): ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় বেশি পরিমাণ ও ভালো খাবার পায়। ছেলেদের
পুষ্টির প্রতি অপেক্ষাকৃত বেশি নজর দেওয়া হয়। যেখানে খাদ্যের পরিমাণ সীমিত সেখানে তুলনামূলকভাবে মেয়েদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
3. শিক্ষা (Education): মেয়েদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছেলেদের চেয়ে কম এবং মেয়েদের বিদ্যালয়ছুট হয়ে যাওয়ার হার বেশি। অন্যান্য নানা কারণের মধ্যে মেয়েদের পশ্চাদ্বর্তিতার অন্যতম কারণ পরিবারে মেয়েদের উপর নানা দায়দায়িত্ব অর্পণ করে বাধা সৃষ্টি করা। ছোটো ভাই বা বোনের দেখাশোনা, গৃহকর্মে সাহায্য করা, কখনো-কখনো রান্না করা, গৃহপালিত পশুর দেখাশোনা করা ছাড়াও নানারকম ছোটোখাটো ফরমায়েশ পালন করার ভার সাধারণত মেয়েদের উপরই বর্তায়। এর ফলে স্কুলে ঘনঘন অনুপস্থিতির পর একসময় পড়া বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে নানা সুযোগসুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও উপরোক্ত মনোভাব সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেছে এমন কথা বলা কঠিন ।
4. বাল্যবিবাহ (Child Marriage): এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি। বাল্যবিবাহের প্রথায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েরা। তার কারণ পরিবারে এমন একটি যুক্তি দেখানো হয় যে প্রতিপালন ও ভরণপোষণে অক্ষম হয়ে মেয়ের খাওয়াপরা সম্বন্ধে কিছুটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অল্পবয়সে বিবাহ দিয়ে মেয়েকে বিদায় করা হয়। বাস্তবিক পক্ষে এই যুক্তি একান্তই অজুহাত মাত্র, আসল কথা হল মেয়ের প্রতি নেতিবাচক পক্ষপাত ।
5. সমাজ (Society): পরিবারের বাইরে বৃহত্তর সমাজে মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ আছে যা পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেক শিথিল। মেয়েদের কাছে সামাজিক প্রত্যাশা কম। সেই কারণে তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার বিচার হয় স্বতন্ত্র মানদণ্ডে।
6. যৌন নির্যাতন (Sexual Harassment): মেয়েরা নানাভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। খুব কম হলেও অনেক সময় পরিবারও মেয়েদের পক্ষে পুরোপুরি নিরাপদ নয়। পথে ঘাটে, স্কুলের গেটে মেয়েদের প্রতি কটূক্তি করা,অশ্লীল ইঙ্গিত ও ভাষা ব্যবহার অতিসাধারণ ও নিয়মিত ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই জাতীয় নির্যাতন ঘটে দলবদ্ধ পুরুষদের হাতে চূড়ান্ত অবমাননা, অবহেলা, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
Group – C
Question Mark- 10
১. স্বাধীনতার পর থেকে বিদ্যালয় পাঠক্রমের কাঠামোতে লিঙ্গবোধের নির্মাণ সম্পর্কে আলোচনা করুন।
Discuss the constructions of gender in school curriculum framework since Independence.
❏ 1975 খ্রিস্টাব্দে প্রথম NCERT একটি পাঠক্রম কাঠামো তৈরি করে যার উদ্দেশ্য ছিল দশ বছরের মাধ্যমিক শিক্ষার দিক্নির্দেশ করা। সেই কারণে এর নাম দেওয়া হয় 'The Curriculum for the Ten-Year School A Framework, 1975' এই কাঠামোর মূল লক্ষ্য ছিল CBSE পরিচালিত সারা দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কার করা। তিনটি বৈশিষ্ট্য সচেতনভাবে এই পাঠক্রম কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যথা- ➊ বিভিন্ন রাজ্যে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পাঠক্রম কাঠামোটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে চাহিদা ও পরিস্থিতি অনুযায়ীনমনীয়তা অনুসরণ করার নীতি। ➋ নির্ধারিত পাঠক্রম ও গুপ্ত পাঠক্রমের মধ্যে ফারাক যথাসাধ্য কমিয়ে আনা। ➌ প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক নীতি (Pragmatic) গ্রহণ করা। এর মধ্যে গুপ্ত পাঠক্রমের বিষয়টি পরে স্বতন্ত্রভাবে এই পরিচ্ছেদেরই আর একটি অংশে আলোচনা করা হবে। শুধু এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে নির্ধারিত পাঠক্রম পঠনপাঠনের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করার সময় বিদ্যালয়ের মান, দৃষ্টিভঙ্গি, কল্পিত চাহিদা ইত্যাদির ভিত্তিতে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও বেশি পরিবর্তিত হয় এটি গুপ্ত পাঠক্রম। সুতরাং পাঠক্রম কাঠামোতে সরাসরি লিঙ্গবৈষম্যের প্রসঙ্গ না থাকলেও সম্ভবত কাঠামো রচয়িতাদের চিন্তায় বিষয়টি ছিল।
প্রয়োগের যে দিকটি সম্বন্ধে বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক নীতির কথা বলা হয়েছে সেটি বিষয়ভিত্তিক গুরুত্ব, পিরিয়ড ও সময়ের বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ক যা স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়গুলির বেলায় কঠোরভাবে মেনে চলা সম্ভব বা উচিত কোনোটিই নয়। 1975 খ্রিস্টাব্দের পর 1988 খ্রিস্টাব্দে NCERT আবার একটি পাঠক্রম কাঠামো প্রকাশ করে। তবে এই কাঠামো মূলত 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতির কার্যকর রূপ দেওয়ার প্রয়াস হিসেবে রচিত হয়। The National Curriculum for Elementary and Secondary Education — A Framework (1988) নামে পরিচিত কাঠামোতে সরাসরি মেয়েদের শিক্ষা সম্পর্কিত কোনো স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ নেই। অর্থাৎ 1975 খ্রিস্টাব্দ থেকে যে 'Common School (10+2) Common Curriculum'-এর নীতি প্রচলিত হয় এবং জাতীয় শিক্ষানীতিতে তার সমর্থন পাওয়ায় উক্ত পাঠক্রম কাঠামোতে নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন ঘটেনি। তার আর একটি কারণ মেয়েদের আরও বেশি সংখ্যায় বিদ্যালয় শিক্ষায় অংশগ্রহণ করা ও শিক্ষা সমাপ্ত করার সমস্যা তখনও যথেষ্ট জোরালো। 1998 খ্রিস্টাব্দ থেকে বিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থার নতুন করে পর্যালোচনা শুরু হয়। NCERT-র উদ্যোগে এই পর্যালোচনায় একাধিক রাজ্যে অনেকগুলি আলোচনা সভা (Seminar) ও নানা বিশেষজ্ঞ, সরকার এবং SCERT-গুলির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।
1988 খ্রিস্টাব্দের পাঠক্রম কাঠামো যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলেও সিদ্ধান্ত হয় যে আরও অনেক কিছু বাকি। কাজেই এই সমস্ত প্রক্রিয়ার ফলে 2000 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় আর একটি জাতীয় পাঠক্রম কাঠামো (National Curriculum Framework 2000) এই কাঠামো পূর্ববর্তী নীতি থেকে সরে আসেনি বা তাকে বর্জন করেনি বরং তাকে আরও সম্প্রসারিত, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করেছে। বিদ্যালয় শিক্ষা ও পাঠক্রমে ছেলে ও মেয়েদের সমতা রক্ষার নীতি থেকে বিচ্যুত না হলেও এখানে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আরও একটু প্রগতিশীল মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। NCF, 2000-এ বলা হয়েছে, ❝নারী-পুরুষের সমতা ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে গৃহীত। তা ছাড়াও মহিলাসহ জনগণের পিছিয়ে পড়া অংশের সংরক্ষণমূলক বৈষম্যের অধিকারও স্বীকৃত। 1968 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতি, শিক্ষার সুযোগের সমতা থেকে 1986 খ্রিস্টাব্দের শিক্ষানীতিতে নারীর সাম্যের জন্য ও ক্ষমতায়নের জন্য শিক্ষা এই নীতিতে সরে এসেছে।❞
উপরোক্ত উক্তির কার্যকরী রূপদানের জন্য 2000 খ্রিস্টাব্দের পাঠক্রম-কাঠামোর দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে যে সমস্ত বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল-
- শিক্ষাকে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যেন আরও বেশি সংখ্যক মেয়ে তাতে অংশগ্রহণ করতে পারে।
- বিদ্যালয় পাঠক্রম থেকে সমস্তরকম লিঙ্গ পক্ষপাতিত্ব আর লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে।
- পাঠ্যপুস্তক থেকে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে।
- পঠনপাঠনের কৌশলও হবে লিঙ্গ পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত।
- পুরুষ ও নারী এই দুই লিঙ্গের মানুষের মধ্যে ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে, যা কিছু সর্বোৎকৃষ্ট তা চিহ্নিত করে প্রতিপালন করতে হবে ইত্যাদি।
2005 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত জাতীয় পাঠক্রম কাঠামোতে আবার নতুন করে শিক্ষায় সমতা আনার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে মেয়েদের শিক্ষার চেয়েও গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির শিক্ষায় সমতা আনার উপর। কিন্তু সমাজবিদ্যা সম্পর্কিত পাঠক্রমের কাঠামো, বিষয়বস্তু নির্বাচন এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে সংহতির কথা বলা হয়েছে সেখানে লিঙ্গ সম্পর্কিত সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা সৃষ্টির একটি প্রয়াস উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রহণ করা
হয়েছে। তার কারণ কাঠামো রচয়িতারা মনে করেন, ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের মধ্যেই এই সংবেদনশীলতা একদিকে সামাজিক অসাম্য ও কুসংস্কার দূর করতে সক্ষম হবে এবং অন্যদিকে লিঙ্গ সমতা অর্জনের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। যেমন—জলকে কেন্দ্র করে সমাজবিদ্যার পাঠে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জলের উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান করার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বহু অঞ্চলে জল আনার জন্য মেয়েদের যে কঠোর পরিশ্রম, অপরিমিত সময় ব্যয় করতে হয় তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
উপসংহারঃ সুতরাং সমস্ত দিক বিচার করে বলা যায় যে, পাঠক্রম সম্পর্কিত নীতি ও কাঠামোতে আধুনিককালে অন্তত লিঙ্গ স্বাতন্ত্র্য নির্মাণের কোনো সচেতন প্রয়াস নেই। তবে পাঠক্রম ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমগুলি নিয়ে দেশের 34 টি বোর্ড সমস্ত রাজ্য মিলিয়ে বিদ্যালয় শিক্ষার যে নিজস্ব পাঠক্রম রচনা করে তার মধ্যে কোথাও এই বিভাজন নেই এ কথা বলা কঠিন। কারণ যখন পাঠক্রম থেকে পাঠ্যসূচি তৈরি হয়, পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক আঞ্চলিক ভাষায় রচিত হয় এবং তার ভিত্তিতে বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠন পরিচালিত হয়, মূল্যায়ন হয় তখন গুপ্তভাবে অর্থাৎ অলিখিত কার্যক্রম হিসেবে লিঙ্গ বিভাজনের সমস্যা থাকে কিনা তা ব্যাপক অনুসন্ধানের বিষয়।
২. ভারতীয় সমাজের পটভূমিকায় জাতি ব্যবস্থা, শ্রেণি, ধর্ম, নৃকূলগত সচেতনতা ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সাম্য ও ন্যায়ের’ ধারণাটি বিবৃত করুন।
Explain the concept of Equity and Equality in relation to caste, class, religion, ethnicity and disability with reference to the context of Indian society.
❏ ভারতীয় সংবিধানে সকলের সমান অধিকার ঘোষিত হলেও সমাজের সকল মানুষ আজও এই অধিকারগুলি সমানভাবে ভোগ করার সুযোগ পায় না। অর্থাৎ ভারতীয় সমাজজীবনে অসাম্য আজও বিরাজমান। সাধারণভাবে সমাজজীবনে এই অসাম্য বিরাজ করার প্রেক্ষিতগুলি সংক্ষেপে নিম্নে উল্লেখ করা হল- ➊ জাত ব্যবস্থা (Caste) ➋ শ্রেণি (Class) ➌ ধর্ম (Religion)
➊ জাত ব্যবস্থা (Caste) : সমাজজীবনে অসাম্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ‘জাত-ব্যবস্থা’। সমাজজীবনে নিম্নবর্ণের মানুষের তুলনায় উচ্চবর্ণের মানুষ অনেক বেশি সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা ভোগ করে থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জাত-ব্যবস্থা সমাজে অসাম্যকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। জাতগত বৃত্তিবিভাগ এর ফলে নানা পেশাগত বৃত্তি উৎপত্তির জন্য উঁচু-নীচু জাত-ব্যবস্থার সঙ্গে পেশাগত মর্যাদা, অর্থ প্রভৃতি দিকে মানুষে মানুষে সাম্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অধ্যাপক এস.সি দুবের মতে, জাত-ভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্তর্গত বিভিন্ন জাত সামাজিক পদমর্যাদার দিক থেকে উঁচু-নীচু নানা স্তরে বিন্যস্ত। এই উঁচু-নীচু অবস্থানের প্রেক্ষিতে জাতগত পেশা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এখানে ‘শুদ্ধ’ ও ‘মহৎ’ পেশাগুলি উচ্চ সামাজিক মর্যাদালাভ করলেও তথাকথিত ‘অশুদ্ধ’ ও নিম্নবর্তী পেশাগুলির সঙ্গে যুক্ত সেই সমস্ত মানুষগুলি সামাজিক মর্যাদায় হীন প্রতিপন্ন হয়। যেমন, ব্রাক্ষ্মণ জাতির পেশা উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হলে মেথর অথবা চণ্ডালের পেশা নিম্নমর্যাদা সম্পন্ন। জাত-ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় সামাজিক বিধিনিষেধ মেনে চলা। অধ্যাপক এস.সি দুবের মতে, সমাজে যে জাতের অবস্থান যত উঁচুতে ‘শুদ্ধতা’ বজায় রাখার জন্য তাদের আচার-সংস্কারও তত জটিল। স্তরবিন্যাসের উঁচু স্তরে অবস্থিত ব্রাষ্মণজাতি সমাজের নিয়ম অনুসারে অপরাপর ‘শুদ্ধ’ জাতের মানুষের হাত থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করতে পারলেও, ‘অশুদ্ধ’ পেশাজীবী ‘নীচু’ জাতের মানুষের কাছ থেকে জলগ্রহণের সুযোগ থাকে না। এর ফলশ্রুতিতে জাত-ব্যবস্থা সমাজে এক অসাম্যকে বিস্তৃত করে তোলে। এই জাত-ব্যবস্থার আর এক বৈশিষ্ট্য হল উচ্চ ও প্রভাবশালী মহলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্বলাভ। বস্তুত, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধিকারী উঁচু জাতের সঙ্গে শিক্ষাসংস্কৃতিহীন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিহীন ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থেকে দূরে থাকা নীচু জাতের মানুষের অসাম্য প্রকট হয়ে ওঠে।
➋ শ্রেণি (Class) : সমাজজীবনে শ্রেণি হল এমন সব বৃহৎ সামাজিক গোষ্ঠীসমূহ যাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী অর্থনৈতিক কাঠামোয় নিজের অবস্থানের ভিত্তিতে অন্য কোনো সামাজিক গোষ্ঠীর শ্রম আত্মসাৎ করতে সর্বদা সচেষ্ট। সমাজতাত্ত্বিক ওয়েবার-এর মতে, শ্রেণি হল এমন কিছু ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত একটি দল যাদের জীবনধারণের মান মোটামুটি একই রকমের। শ্রেণির অস্তিত্ব সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলির মধ্যেকার অর্থনৈতিক বৈষম্যের ওপর নির্ভরশীল এবং বিষয় সম্পদের ওপর অধিকার, উৎপাদনের ওপর কর্তৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈষম্য হল শ্রেণিগত পার্থক্যের ভিত্তি। এই শ্রেণি পার্থক্যের একটি অন্যতম প্রধান ভিত্তি হল শ্রম বা কার্যের পরিবেশ এবং কার্যসম্পর্কিত বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে অসাম্য। ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত না করে একটি নির্দিষ্ট পেশার অন্তর্গত সমস্ত মানুষকেই এই সাম্য প্রভাবিত করে।
পেশাগত অবস্থান ও প্রকৃতির কারণে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা হেতু সমাজে উচ্চ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত মানুষরা উন্নত মানের শিক্ষা-সংস্কৃতি, সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক কর্তৃত্বলাভের সুযোগ প্রাপ্ত হয়। উচ্চশ্রেণির মানুষের সন্তানগণ স্বাভাবিকভাবেই যে সুযোগ ও অধিকার ভোগ করার পরিস্থিতি লাভ করে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না নীচু শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষগুলির পারিবারিক জীবনে ও সন্তানদের ক্ষেত্রে। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণে তখন তারা সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক কর্তৃত্ব অধিকারের সুযোগগুলি থেকেও বঞ্চিত থাকে সুতরাং বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অসাম্য স্বাভাবিকভাবেই প্রকট হয়ে ওঠে।
➌ ধর্ম (Religion) : ধর্ম হল এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিয়ন্ত্রক। সমাজজীবনে বিভিন্ন নৈতিক অনুশাসন এবং আচার-বিধির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে মানুষের ধর্ম-সম্পর্কীয় অনুভূতি বা বোধ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ধর্ম’ সহায়তা করলেও অনেক ক্ষেত্রে ‘ধর্ম’ কুসংস্কারের জন্ম দেয়, বৈজ্ঞানিক মানসিকতা তৈরির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ধর্মীয় কারণে অনেক গোষ্ঠীতেই শিক্ষা, সংস্কৃতির দিক থেকে যেমন সংকীর্ণতা এবং পশ্চাৎপদতার ঘটনা ঘটে তেমনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার গোষ্ঠীজীবনকে অনুন্নত জীবনের পথে চালিত করে থাকে। কার্ল মার্কস-এর মতানুসারে, দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শাসক শ্রেণির হাতে ধর্ম এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। মার্কস-এর মতে, ধর্মের ক্ষেত্রে মানুষ অতিলৌকিক এক বাহ্যিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়। ধর্ম হল নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস’। সুতরাং ধর্মকে কেন্দ্র করেও মানবসমাজে ‘শোষক’ ও ‘শোষিত’ শ্রেণির উদ্ভব ঘটে, যা প্রকৃতপক্ষে অসাম্যেরই প্রতিফলন।
উপসংহারঃ অনেকক্ষেত্রে ধর্ম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পৃথিবীর বহু দেশে প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থরক্ষার জন্য ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেও দেখা যায়। এইভাবে ধর্মভিত্তিক অসাম্যও সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে বিদ্যমান।‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান' নামে যে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আজ আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তা ধর্মভিত্তিক অসাম্যেরই ফলশ্রুতি।
➌ ধর্ম (Religion) : ধর্ম হল এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিয়ন্ত্রক। সমাজজীবনে বিভিন্ন নৈতিক অনুশাসন এবং আচার-বিধির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে মানুষের ধর্ম-সম্পর্কীয় অনুভূতি বা বোধ। সামাজিক নিয়ন্ত্রণে ধর্ম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ধর্ম’ সহায়তা করলেও অনেক ক্ষেত্রে ‘ধর্ম’ কুসংস্কারের জন্ম দেয়, বৈজ্ঞানিক মানসিকতা তৈরির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ধর্মীয় কারণে অনেক গোষ্ঠীতেই শিক্ষা, সংস্কৃতির দিক থেকে যেমন সংকীর্ণতা এবং পশ্চাৎপদতার ঘটনা ঘটে তেমনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার গোষ্ঠীজীবনকে অনুন্নত জীবনের পথে চালিত করে থাকে। কার্ল মার্কস-এর মতানুসারে, দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য শাসক শ্রেণির হাতে ধর্ম এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। মার্কস-এর মতে, ধর্মের ক্ষেত্রে মানুষ অতিলৌকিক এক বাহ্যিক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ অস্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় বিচ্ছিন্নতার শিকার হয়। ধর্ম হল নিপীড়িত মানুষের দীর্ঘশ্বাস’। সুতরাং ধর্মকে কেন্দ্র করেও মানবসমাজে ‘শোষক’ ও ‘শোষিত’ শ্রেণির উদ্ভব ঘটে, যা প্রকৃতপক্ষে অসাম্যেরই প্রতিফলন।
উপসংহারঃ অনেকক্ষেত্রে ধর্ম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পৃথিবীর বহু দেশে প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থরক্ষার জন্য ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেও দেখা যায়। এইভাবে ধর্মভিত্তিক অসাম্যও সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে বিদ্যমান।‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান' নামে যে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আজ আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তা ধর্মভিত্তিক অসাম্যেরই ফলশ্রুতি।
No comments
Hi Welcome ....