B.Ed Notes 1st Semester Mark-5 Course : I (1.1.1) 2nd-Half ❐ আরো পড়ুনঃ B.Ed Notes A2z 1st Semester Notes
B.Ed Notes 1st Semester Mark-5 Course : I (1.1.1) 2nd-Half
❐ আরো পড়ুনঃ B.Ed Notes A2z
What are the different ways of nurturing creativity?
➧ যে বয়সে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে সেই বয়সের মধ্যে তাদের সৃজনধর্মী বৈশিষ্ট্য একটি নির্দিষ্ট রূপ গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। তাই মনোবিদগণের মতে, শিক্ষক-শিক্ষিকা সৃজনশীল ব্যক্তিসত্তার সৃষ্টি করতে না পারলেও তাদের সৃজনক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করতে পারেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা নিম্নলিখিত কয়েকটি কৌশলের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের সৃজনক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করতে পারেন—- আগ্রহ সঞ্চার : সাধারণ শিক্ষার্থী ও সৃজনধর্মী শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম থেকেই একটি আচরণগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির হয়, একা থেকে একান্ত আপন জগতে চিন্তাভাবনা করে। এরা যেহেতু বিদ্যালয়ের গতানুগতিক কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে না, তাই শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের অপছন্দ করেন। এই অপছন্দের মনোভাব তাদের সৃজনক্ষমতা বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সৃজনক্ষমতা বিকাশের জন্য তাদেরকে বিদ্যালয়ের কাজে আগ্রহী করতে হবে। এটি তখনই সম্ভব যদি তাদের জন্য উন্নত মানসিক প্রক্রিয়াযুক্ত কর্ম নির্বাচন করা হয়। সৃজনক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করতে হলে এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত চিন্তার খোরাক দিতে হবে।
- স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের সুযোগ: সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকার মতামতের সমালোচন করে থাকে অনেকসময়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সৃজনক্ষমতার বিকাশে সত্যই সহায়তা করতে চাইলে তাদের স্বাধীন মতামতের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
- অভিনব চিন্তনে উৎসাহদানঃ সৃজনধর্মী শিক্ষার্থীরা চিত্তনশীল ও কল্পনাপ্রবণ হয়। সুতরাং, পাঠ্যবিষয়ের অনুশীলন ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তারা যাতে স্বাধীন চিন্তার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। অভিন কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের সৃজনক্ষমতার বিকাশ করতে পারেন।
- সংগতিবিধানে সহায়তা: সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা মনঃপ্রকৃতির দিক থেকে অন্যদের থেকে আলাদা হয়। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা সহজে অভিযোজন করতে পারে না, অন্য শিক্ষার্থীরা তাদেরকে অনেক সময়েই বিরক্ত করে বা উপহাস করে। এর ফলে তাদের ব্যক্তিসত্তা আহত হয়। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকার দায়িত্ব হবে শ্রেণিকক্ষে এমন পরিবেশ রচনা করা যাতে শিক্ষার্থীরা সকলের সঙ্গে সংগতিবিধান করতে পারে।
- Brainstorming: সৃজনধর্মী শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সহায়তা করার জন্য শিক্ষককে গতানুগতিক পাঠ পরিচালনার রীতির মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা সাধারণত প্রচলিত তথ্য পরি নের মধ্যেই নিজেদের কাজকে সীমাবদ্ধ রাখেন, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত উত্তর আশা করেন। এইভাবে শিক্ষার্থীদের অভিসারী চিন্তনকে উৎসাহিত করা গেলেও অপসারী চিন্তা উৎসাহিত হয় না। শিক্ষার্থীদের সৃজনস্পৃহা জাগর করতে হলে তাদেরকে সমস্যার সমাধানে উৎসাহিত করতে হবে। এই সম্পর্কে মনোবিদ Osborn, Brainstorming-এর ধারণা দিয়েছেন। সাধারণত একই আর্থসামাজিক পরিবেশের 5 থেকে 10 জনকে নিয়ে Brainstorming-এর দল গঠিত হয়। এখানে দলটিকে কোনো সমস্যাসমাধানের বিভিন্ন উপায়ের কথা চিন্তা করতে বলা হয়। সদস্যগণ বাস্তব-অবাস্তব সমস্তরকমের সমাধানের উপায় ব্যক্ত করতে পারেন। কোনোরকম বাধাদান করা হয় না। এইভাবে সমস্ত সদস্যের বক্তব্যগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়। সকলের মতামত নেওয়ার পর সমাধানগুলির যথার্থতা বিচার করা হয় এবং সর্বোৎকৃষ্ট সমাধানটিকে নির্বাচন করা হয়।
- বৈচিত্র্য: শিক্ষার বিষয়বস্তু ও পদ্ধতির মধ্যে বৈচিত্র্য থাকা প্রয়োজন। কারণ সৃজনশীল শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক বিষয়ের প্রতি অনীহা থাকতে পারে।
- সহনশীলতা: প্রথাবহির্ভূত বা অভিনব উত্তর, কার্যপদ্ধতি ইত্যাদি মেনে নেওয়া, ছাত্রছাত্রীর উত্তরের মূলধারা অক্ষুণ রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা এবং সৃজনশীল শিক্ষার্থীদের অভিনব প্রশ্ন করার প্রবণতা মেনে নেওয়া ইত্যাদি শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষে অবশ্যকর্তব্য।
2. সৃজনশীলতার বিভিন্ন উপাদানগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
Give a brief account on the components of creativity.
➧ সৃজনক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি আচরণগত লক্ষণ পাওয়া যায়। এই আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলি সৃজনশীল ব্যক্তির সৃজনাত্মক কর্মসম্পাদনের সময় দেখা যায়। সৃজনাত্মক চিন্তনের এই আচরণগত বৈশিষ্টাগুলিকেই বলা হয় ‘সৃজনক্ষমতার উপাদান’। বিভিন্ন মনোবিদ সৃজনক্ষমতার যে উপাদানগুলি আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করেছেন সেগুলি নিম্নরূপ-
➧ সৃজনক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি আচরণগত লক্ষণ পাওয়া যায়। এই আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলি সৃজনশীল ব্যক্তির সৃজনাত্মক কর্মসম্পাদনের সময় দেখা যায়। সৃজনাত্মক চিন্তনের এই আচরণগত বৈশিষ্টাগুলিকেই বলা হয় ‘সৃজনক্ষমতার উপাদান’। বিভিন্ন মনোবিদ সৃজনক্ষমতার যে উপাদানগুলি আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করেছেন সেগুলি নিম্নরূপ-
- ক্ষিপ্রতা (Fluency): প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির ক্ষিপ্রতা সৃজনক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ক্ষিপ্রতা বলতে দ্রুত চিন্তা করার ক্ষমতা বোঝায়।
- স্বকীয়তা (Originality): স্বকীয়তা বলতে বোঝায় মৌলিকতা। সৃজনশীল ব্যক্তির কাজের মধ্যে তার নিজস্বত থাকে। অর্থাৎ অন্যদের তুলনায় সে কতখানি অন্যরকম চিন্তা করে তা থেকেই তার স্বকীয়তা বোঝা যায়, যেমন—গোল বস্তুর ছবি আঁকতে বললে বেশিরভাগই বৃত্ত আঁকবে বা কেউ রসগোল্লা আঁকবে। খুব কম জনই গোল লেন্সের চশমা আঁকবে। যারা এই চশমা আঁকবে তাদের স্বকীয়তা বেশি বলা হবে।
- কৌতূহলপ্রবণতা (Curiosity): কৌতূহলপ্রবণতা না থাকলে নতুন আবিষ্কারের চেষ্টা শুরুই হয় না। সৃজনশীল রাখে। সুতরাং, সৃজনশীল ব্যক্তির কৌতূহল কেবলমাত্র প্রবণতা দ্বারা চালিত হয় না।
- পরিবর্তনশীলতা (Transformation): পরিবর্তনশীলতা হল সৃজনশীল ব্যক্তির সেই ক্ষমতা, যার দ্বারা তিনি পূর্বের কোনো ধারণাকে সম্পূর্ণ নতুন তাৎপর্যে উপস্থাপন করে, যুক্তির মাধ্যমে তাকে পরিবর্তন করে, আরও ব্যাপক রূপ দিতে পারেন।
- সম্প্রসারণ ক্ষমতা (Elaboration): সৃজনশীল ব্যক্তি খুব সামান্য সাধারণ উপকরণ দিয়েই অভিনব কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, যা সাধারণ মানুষ পারে না। সৃজনশীল ব্যক্তির এই ক্ষমতাকেই বলা হয় সম্প্রসারণ ক্ষমতা, যা সৃজনক্ষমতার একটি বিশেষ উপাদান। এক্ষেত্রে একটি সমস্যার রূপরেখা থেকে সৃজনশীল ব্যক্তি সমস্যাটির পূর্ণতা বিধান করতে পারে।
- মূল্যায়ন ক্ষমতা (Ability to Evaluate): সৃজনশীল ব্যক্তি যে-কোনো নতুন কর্মসম্পাদনের পর সত্যতা বিচারকরণের দ্বারা নতুন সিদ্ধান্তগ্রহণ করেন। এই বিচারকরণকেই বলা হয় মূল্যায়ন। সুতরাং, মূল্যায়ন করার ক্ষমতা সৃজনক্ষমতার একটি উপাদান।
3. সৃজনশীলতার সংজ্ঞা দিন। সৃজনশীলতার উপাদান হিসেবে ‘নমনীয়তা’ ও ‘মৌলিকতা'-র ব্যাখ্যা দিন।
Define creativity. Explain 'Flexibility' and 'Originality on factors of creativity.
➧ সৃজনশীলতা এমন একটি মানসিক সক্ষমতা, যার সাহায্যে বিশেষ কিছু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে এবং কোনো বিশেষ মানসিক প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে মৌলিক ধারণা বা চিন্তার জন্ম দেয় এবং উপযুক্ত পরিবেশে তার প্রকাশ ঘটায় "Creativity is that ability which in combination with some personality characteristics stimulate specific mental processes leading to the production of some novel or original idea or thought and that finds expression in an appropriate environment."
➧ সৃজনশীলতা এমন একটি মানসিক সক্ষমতা, যার সাহায্যে বিশেষ কিছু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে এবং কোনো বিশেষ মানসিক প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে মৌলিক ধারণা বা চিন্তার জন্ম দেয় এবং উপযুক্ত পরিবেশে তার প্রকাশ ঘটায় "Creativity is that ability which in combination with some personality characteristics stimulate specific mental processes leading to the production of some novel or original idea or thought and that finds expression in an appropriate environment."
নমনীয়তা (Flexibility): নমনীয়তা বলতে বোঝায় এমন অবস্থা যেখানে চিন্তন কোনো ধরাবাঁধা পূর্বনির্দিষ্ট পথে চলে না। নমনীয়তা দু-প্রকার— (ক) স্বতঃস্ফূর্ত নমনীয়তা (Spontaneous flexibility): এক্ষেত্রে সৃজনশীল ব্যক্তি এক ধরনের চিন্তা থেকে অন্য ধরনের চিন্তায় নিজের মানসিক প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করতে পারে। কোনো রকম সংস্কার বা সংকীর্ণতা তার চিন্তার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। (খ) অভিযোজনমূলক নমনীয়তা (Adaptive flexibility): এক্ষেত্রে সৃজনশীল ব্যক্তি যে-কোনো পরিবেশে অভিনব কৌশলে সমস্যাসমাধান করতে পারে। অর্থাৎ যে-কোনো সমাধান পদ্ধতিকে নিজের মতো করে গঠন করে নতুন সমস্যা সমাধান করতে পারে।
স্বকীয়তা (Originality): স্বকীয়তা বলতে বোঝায় মৌলিকতা। সৃজনশীল ব্যক্তির কাজের মধ্যে তার নিজস্বতা থাকে। অর্থাৎ, অন্যদের তুলনায় সে কতখানি অন্যরকম চিন্তা করে তা থেকেই তার স্বকীয়তা বোঝা যায়। যেমন—গোল বস্তুর ছবি আঁকতে বললে বেশিরভাগই বৃত্ত আঁকবে বা কেউ রসগোল্লা আঁকবে। খুব কম জনই গোল লেন্সের চশমা আঁকবে। যারা এই চশমা আঁকবে তাদের স্বকীয়তা বেশি বলা হবে।
4. সৃজনশীল ব্যক্তির যে-কোনো পাচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।
Mention five characteristics of a creative person.
➧ মনোবিদগণ সৃজনক্ষমতা চিহ্নিতকরণের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল—
➧ মনোবিদগণ সৃজনক্ষমতা চিহ্নিতকরণের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল—
- সৃজনশীল ব্যক্তি একই সময় বহুবিধ কর্মচিন্তা নিয়ে সচেতন থাকতে পারে।
- সৃজনশীল ব্যক্তির বাচনভঙ্গি এবং চিন্তনে সাবলীলতা প্রকাশ পায়।
- সৃজনশীল ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য একাকী থাকা পছন্দ করে।
- সৃজনশীল ব্যক্তি বৈচিত্র্যের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে পারে।
- সৃজনশীল ব্যক্তি অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হয়।
- এরা খোলামেলা মুক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। কঠোর অনুশাসন এদের অপছন্দ।
- এরা গতানুগতিক কাজে খুব তাড়াতাড়ি বিরক্ত বোধ করে, কিন্তু বিশেষ কোনো বিষয়ের প্রতি এদের কৌতূহল অপরিসীম।
- চিন্তার দিক থেকে এরা স্বাধীন ও স্বয়ংনির্ভর। এরা অপসারী চিন্তন থেকে অভিসারী চিন্তায় মগ্ন হতে পারে।
- এদের কর্মশক্তির স্তর (Energy level) এত উঁচু যে, কাজ শুরু করলে এরা কাজে বিভোর হয়ে যায়।
- এরা নারীসুলভ অনুরাগ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
- এরা সংস্কারমুক্ত, তবে অত্যধিক আবেগপ্রবণ এবং ব্যক্তিগত প্রাধান্য প্রকাশ করতে ভালোবাসে।
- এরা নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি গভীর আস্থাশীল, তাই সাধারণ ঘটনাকেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে এবং নিজের মানদণ্ডে বিচার করে।
5. সৃজনশীলতার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করুন।
Explain about process of creativity.
➧ Wallse (1926) এবং Patrik (1955) সৃজনশীল প্রক্রিয়ার 4টি স্তর নির্দিষ্ট করেছেন (a) প্রস্তুতি (Preparation): এটি হল মানসিক প্রস্তুতির স্তর। এখানে বিষয়টিকে অধ্যয়ন করা হয়, প্রকল্প গঠন করা হয়, প্রশ্ন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করা হয়, যা সৃজনশীল ব্যক্তির কৌতূহল পূরণ করে এই স্তরটি সময়সাপেক্ষ। (b) সুপ্ত পর্যায় (Incubation): প্রস্তুতি স্তরের মতো এই স্তরটি ব্যক্তির স্ব-নিয়ন্ত্রিত নয়। সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির মধ্যে ঘটে থাকে, কিন্তু তার সম্পর্কে ব্যক্তি সচেতন নয়। এটি হল সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশের জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকা। পর্যায়টি ডিমে ‘তা’ দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বাইরে থেকে ডিমের উপর কিছু করা হয় না। তবে ডিমের তাপ বজায় রাখা হয় এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোবার অপেক্ষায় থাকে। সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় এই অবস্থা ঘটে থাকে। একেই সুপ্ত পর্যায় বলা হয়। (c) উদ্ভাবন (Illumination): এই পর্যায়ে সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়। সমাধানের পথ দেখা যায়। অধ্যয়ন শেষে, নিরীক্ষণের পর, সুপ্ত পর্যায়ের অবসান ঘটলে ব্যক্তি সমস্যার উত্তরটি খুঁজে পেয়ে পুরস্কৃত হয়। (d) যাচাই করা (Verification): এটি সৃজনশীলতা প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ পর্যায়। আবিষ্কৃত সমাধানের পথটি বাস্তবতা, সময়, অর্থ, নতুনত্ব, প্রয়োগযোগ্যতা প্রভৃতির প্রেক্ষিতে বিচার করা হয়। সমাধানের পথটিকে আরও বিশ্লেষণ করে পথটিকে আরও মসৃণ, সহজ এবং উন্নত করে তোলা হয়।
➧ Wallse (1926) এবং Patrik (1955) সৃজনশীল প্রক্রিয়ার 4টি স্তর নির্দিষ্ট করেছেন (a) প্রস্তুতি (Preparation): এটি হল মানসিক প্রস্তুতির স্তর। এখানে বিষয়টিকে অধ্যয়ন করা হয়, প্রকল্প গঠন করা হয়, প্রশ্ন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসংগ্রহ করা হয়, যা সৃজনশীল ব্যক্তির কৌতূহল পূরণ করে এই স্তরটি সময়সাপেক্ষ। (b) সুপ্ত পর্যায় (Incubation): প্রস্তুতি স্তরের মতো এই স্তরটি ব্যক্তির স্ব-নিয়ন্ত্রিত নয়। সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তির মধ্যে ঘটে থাকে, কিন্তু তার সম্পর্কে ব্যক্তি সচেতন নয়। এটি হল সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশের জন্য উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকা। পর্যায়টি ডিমে ‘তা’ দেওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। বাইরে থেকে ডিমের উপর কিছু করা হয় না। তবে ডিমের তাপ বজায় রাখা হয় এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোবার অপেক্ষায় থাকে। সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় এই অবস্থা ঘটে থাকে। একেই সুপ্ত পর্যায় বলা হয়। (c) উদ্ভাবন (Illumination): এই পর্যায়ে সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়। সমাধানের পথ দেখা যায়। অধ্যয়ন শেষে, নিরীক্ষণের পর, সুপ্ত পর্যায়ের অবসান ঘটলে ব্যক্তি সমস্যার উত্তরটি খুঁজে পেয়ে পুরস্কৃত হয়। (d) যাচাই করা (Verification): এটি সৃজনশীলতা প্রক্রিয়ার একটি বিশেষ পর্যায়। আবিষ্কৃত সমাধানের পথটি বাস্তবতা, সময়, অর্থ, নতুনত্ব, প্রয়োগযোগ্যতা প্রভৃতির প্রেক্ষিতে বিচার করা হয়। সমাধানের পথটিকে আরও বিশ্লেষণ করে পথটিকে আরও মসৃণ, সহজ এবং উন্নত করে তোলা হয়।
6. উৎকণ্ঠা কী? শ্রেণিপঠনে এর প্রয়োগ আলোচনা করুন।
Discuss anxiety and its classroom implications.
➧ উৎকণ্ঠা: উৎকণ্ঠা হল একটি অস্বাভাবিক এবং অস্বস্তিকর ভীতির অনুভূতি, যা কোনো বাস্তব পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়ার ফলে বা নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকার দরুন সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন প্রকার শারীরিক অবস্থার সাহায্যে উৎকণ্ঠা বোঝা যেতে পারে, যেমন—অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, অত্যধিক দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা ইত্যাদি। American Psychological Association (APA)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, উৎকণ্ঠা (Anxiety) হল এক প্রকারের প্রক্ষোভ, যা দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ইত্যাদি মানসিক অনুভূতি এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি ইত্যাদি শারীরিক প্রতিবর্তন দ্বারা চিহ্নিত করা যায়।
শ্রেণিকক্ষ পঠনে উৎকণ্ঠার প্রয়োগ: প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে উৎকণ্ঠিত হয়। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার উৎকণ্ঠা দূর হয়। Yerkes Dodson এর সূত্র অনুযায়ী, যদি কোনো কাজ খুব কঠিন হয়, তবে ব্যক্তির উৎকণ্ঠা বাড়ে এবং প্রেষণা কমে। আবার কোনো কাজ যদি খুব সহজে হয়, তাহলে সেই বিষয়ে ব্যক্তির উৎকণ্ঠা তেমন থাকে না। ফলে প্রেষণাও কমে। কিন্তু কাজের কাঠিন্যের মান মাঝামাঝি হলে প্রেষণা সবচেয়ে বেশি হয়। অর্থাৎ যথাযথভাবে কার্য সম্পাদনের জন্য উৎকণ্ঠা প্রয়োজন। তবে উৎকণ্ঠার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হলে আবার কার্য সম্পাদন হ্রাস পায়। Sarason, অভীক্ষা-উৎকণ্ঠার পাঁচটি প্রধান বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেছেন— (i) যখন পরীক্ষাটি কঠিন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। (ii) যখন শিক্ষার্থীরা তাদেরকে প্রদত্ত কাজটি সঠিকভাবে শেষ করতে অক্ষম। (iii) ব্যক্তিগত অক্ষমতার জন্য শিক্ষার্থীরা অনভিপ্রেত ফলাফল সম্পর্কে বেশি চিন্তা করে। (iv) আত্মসমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, যা শিক্ষার্থীদের প্রজ্ঞামূলক কার্যকারিতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। (v) শিক্ষার্থীরা ব্যর্থতার ভয় পায় এবং অন্যদের সামনে অপমানিত হওয়ার ভয় পায়।
একজন আদর্শ শিক্ষক/শিক্ষিকার কর্তব্য হল শিক্ষার্থীদেরকে সকলসময় উৎসাহিত করা, যাতে তারা আরও বেশি পরিশ্রম করতে সচেষ্ট হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকার উচিত শিক্ষার্থীদেরকে বোঝানো যে, শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার ফলাফলই শেষ নয় বা ব্যর্থতা জীবনের শেষ নয়। বরং তাদের উচিত অভীক্ষাগুলিকে উৎকর্ষতার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা। শুধু তাই নয়, শ্রেণিকক্ষের পঠন-পাঠনকে আনন্দময় করে তুলতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মনে অহেতুক ভীতি বা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি না হয়।
7. প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির যে-কোনো চারটি উপাদানের ব্যাখ্যা করুন। এই ধরনের বুদ্ধির যে-কোনো একটি শিক্ষাগত তাৎপর্য উল্লেখ করুন।
Explain any four components of Emotional intelligence Mention any one educational significance of this intelligence.
➧ ড্যানিয়েল গোলম্যান (Daniel Goleman) প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির পাঁচটি উপাদানের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- (i) আত্মসচেতনতা (SelfAwareness) : আত্মসচেতনতা বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তির নিজস্ব মনোভাব, আগ্রহ, তাড়না ইত্যাদি বোঝার ক্ষমতা এবং অন্যদের উপর এগুলির প্রভাব নির্ধারণ করা ও সেই সম্পর্কে সচেতনতা কোনো ব্যক্তি যদি নিজের প্রক্ষোভগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, প্রক্ষোভগুলিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে তাহলে বলা যায় যে উক্ত ব্যক্তি আত্মসচেতন। আত্মবিশ্বাস, আত্ম-মূল্যায়ন ইত্যাদি আত্মসচেতনতার পরিচায়ক। (ii) স্ব-প্রবিধান (Self-Regulation): স্ব-প্রবিধান হল নিজের প্ররোচনামূলক প্রবৃত্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা, কাজ করার পূর্বে চিন্তা করার ক্ষমতা ইত্যাদি। বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা, পরিবর্তনশীলতা ইত্যাদি স্ব-প্রবিধানের পরিচায়ক। (iii) অভ্যন্তরীণ প্রেষণা ( Internal Motivation): যে ব্যক্তির মধ্যে কোনো কাজের প্রতি অভ্যন্তরীণ প্রেষণা থাকে, সেই ব্যক্তি তার নিজের মধ্যে থেকে লক্ষ্যপূরণের তাড়না অনুভব করে। এই তাড়না অনুভব করার জন্য বাইরে থেকে কোনো উদ্দীপকের প্রয়োজন হয় না। এই ধরনের ব্যক্তিরা কাজ করার আনন্দেই কাজ করে থাকেন। ফলের কথা চিন্তা করেন না। সাফল্যের তাড়না, আশাবাদিতা ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ প্রেষণার পরিচায়ক। (iv) সমানুভূতি (Empathy): অপর ব্যক্তির মনোভাব, অনুভূতি, প্রক্ষোভ ইত্যাদি বোঝার ক্ষমতাকেই সমানুভূতি বলে। (v) সামাজিক দক্ষতা (Social Skills): সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কস্থাপন, পরস্পরের মধ্যেকার সাদৃশ্যর উপর ভিত্তি করে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি সামাজিক দক্ষতার অন্তর্গত। দলগঠন, নেতৃত্বদান ইত্যাদি সামাজিক দক্ষতার অন্তর্গত।
প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির শিক্ষাগত তাৎপর্য: ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র, যেমন—শিক্ষা, বৃত্তি ও সমাজজীবনে সাফল্যের জন্যই প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির প্রয়োজন তা নয়। আমাদের জীবনের অধিকাংশ সমস্যা গৃহ ও পরিবারগত সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা বা রাজনৈতিক, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক সমস্যার অন্যতম কারণ হল অন্য ব্যক্তি বা দল বা সমাজ বা জাতির অনুভূতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা। যদি অল্প বয়স থেকেই প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির বিকাশের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় তাহলে সমস্যার প্রতিরোধ ও প্রতিকার সহজ হয় এবং সুখ, শান্তি ও সহযোগিতার আবহাওয়া তৈরি হয়। যদি শিক্ষার্থীদের প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি উন্নত হয় তাহলে অবশ্যই শিক্ষাক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দূর হবে, হিংসা দূর হবে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে পারদর্শিতা বৃদ্ধি পাবে।
8. প্রবৃত্তি এবং প্রক্ষোভের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করুন।
Distinguish between Instincts and Emotions.
অথবা, প্রক্ষোভের কয়েকটি শিক্ষাগত গুরুত্ব আলোচনা করুন।
Write few educational importances of emotions.
অথবা, শিক্ষায় প্রক্ষোভের প্রয়োগ উল্লেখ করুন।
Mention the educational implications of emotions.
➧ ম্যাকডুগাল প্রবৃত্তির উপর একটি সার্বিক সংজ্ঞা প্রদান করেন। যেমন—প্রবৃত্তি হল বংশধারা সূত্রে প্রাপ্ত জৈব-মানসিক প্রবণতা, যা ব্যক্তিকে বিশেষ শ্রেণির বস্তুকে প্রত্যক্ষণ করতে এবং তার প্রতি মনোসংযোগ করে এবং প্রক্ষোভ সৃষ্টি করে যা ব্যক্তিকে সক্রিয় করে তোলে এবং বস্তুর প্রতি বিশেষ ধরনের আচরণে বাধ্য করে (An instinct is an inherited psycho-physical disposition which determines its possessor to perceive and pay attention to an object of a certain class; to experience an emotional excitement and an impulse to action, which finds expression in a specific mode of behaviour in relation to that object)। প্রবৃত্তির এই সংজ্ঞাটির মধ্যে ব্যক্তির তিনটি মাত্রাই দেখা যায়— জ্ঞানমূলক মাত্রা (Cognitive Domain), অনুভূতিমূলক মাত্রা (Affective Domain) এবং কর্মমূলক মাত্রা (Conative Domain)। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে তোলা যেতে পারে। এক ব্যক্তি চলার পথে হঠাৎ একটি সাপ প্রত্যক্ষণ করে (জ্ঞানমূলক মাত্রা বা Cognitive Domain) প্রত্যক্ষণ করার। পরেই নিরাপত্তার প্রশ্নে তার মধ্যে ভয়ের উদ্রেক হয় (অনুভূতিমূলক মাত্রা বা Affective Domain), তখনই ব্যক্তি হয় ছুটে পালায় বা সাপটিকে মারতে সচেষ্ট হয় (কর্মমূলক মাত্রা বা Conative Domain)
মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অন্তদর্শনের দিক থেকে বিচার করলে সংবেদনের মাধ্যমে আমাদের বস্তুর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে। অতঃপর প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে বস্তু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান হয় এবং পরে বস্তুটির প্রতি ভালো লাগা, মন্দ লাগা প্রভৃতি অনুভূতির সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতি প্রক্ষোভ সৃষ্টি করে। প্রক্ষোভ মনের এক বিচলিত অবস্থা। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীগণের মতে, প্রক্ষোভ বলতে আমরা বুঝি স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশমান অবস্থা, যা ব্যক্তিকে দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে বিচলিত করে। ব্যবহারবাদী মনোবিজ্ঞানী উডওয়ার্থ-এর মতে, প্রক্ষোভ হল দেহের এক বিচলিত অবস্থা। ম্যাকডুগাল বলেছেন, প্রবৃত্তিমূলক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানসিক অবস্থাই হল প্রক্ষোভ। তাঁর মতে, আমাদের সবরকম আচরণ ও চিন্তার মূলে কতকগুলি সহজাত প্রবৃত্তি বর্তমান। প্রতিটি সহজাত প্রবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত আছে প্রক্ষোভ। প্রক্ষোভ যখন প্রাণীর মধ্যে সঞ্চারিত হয় তখন প্রবৃত্তিটি কার্যকরী হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পলায়নবৃত্তি হলো একটি সহজাত প্রবৃত্তি, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রক্ষোভটি হল ভয়। প্রাণীর মধ্যে ভয় দেখা দিলে তার মধ্যে পলায়ন প্রবৃত্তিটি কার্যকরী হয়।
ব্যক্তির আচরণের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক হল প্রক্ষোভ। আমরা যতই চাই ব্যক্তির আচরণ যুক্তি ও চিন্তনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হোক, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমাদের আচরণের উপর চিন্তন ও যুক্তি থেকে আবেগের প্রভাব যে অনেক বেশি এ কথা অস্বীকার করা যায় না। ম্যাকডুগাল-এর কথায়, আবেগই আমাদের সকল কাজের প্রেষণা জোগায়। মনোবিজ্ঞানী রস (Ross) মানুষের জীবনের উপর আবেগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রক্ষোভ ও শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এ টি জারশিল্ড একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন শিক্ষকের অন্যতম কর্তব্য হবে শিক্ষার্থীদের প্রক্ষোভমূলক জীবনের সুপরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার সঙ্গে প্রক্ষোভের সম্পর্ক তিন দিক থেকে বিচার করা যায়, যেমন— প্রথমত, প্রাক্ষোভিক বিকাশে সহায়তা করা। দ্বিতীয়ত, শিখন এবং সার্থক অভিযোজনের স্বার্থে হানিকর প্রক্ষোভগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা। তৃতীয়ত, হিতকর প্রক্ষোভগুলিকে উদ্দীপিত করে শিখন এবং ব্যক্তিগত অভিযোজনে সাহায্য করা।
বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকারের দলগত কাজ ও সহপাঠক্রমিক কাজ, যেমন—ব্রতচারী, এনসিসি, স্কাউট, বিতর্ক সভা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর বাঞ্ছিত প্রক্ষোভগুলির বিকাশকে সুসংহত করতে হবে। অন্য দিকে অবাঞ্ছিত বা হানিকর প্রক্ষোভগুলির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনবোধে শাস্তি দিয়ে এবং ঋণাত্মক রি-ইনফোর্সমেন্টের সাহায্যে অবাঞ্ছিত প্রক্ষোভগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
9. উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলি ব্যাখ্যা করুন।
Explain some measures to control anxiety.
➧ উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-
- ঘুম: উদ্বেগ থাকলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। আর এতে মানসিক চাপ বাড়ে। উদ্বেগ দূর করার প্রথম পদক্ষেপ ঘুম। প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমালে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে। এতে উদ্বেগ দূর হয়।
- হাসা: বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, খুব বেশি উদ্বেগের মধ্যে থাকলে জোর করে হলেও হাসা উচিত। হাসি সত্যিই কিছুটা হলেও মনকে শান্ত করবে।
- শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম: উদ্বেগ কমানোর একটি ভালো হাতিয়ার হল শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম। ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া মস্তিষ্ককে শিখিল করে।
- চুপ থাকা: উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তায় থাকলে এলোমেলো ভাবনাগুলি বারবার মাথা চাড়া দিতে থাকে। একে কমাতে কিছুক্ষণ চুপ থাকার চেষ্টা করতে হবে। শব্দ থেকে দূরে থাকা। এটিও কিন্তু উদ্বেগ কমানোর একটি পদ্ধতি।
- ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত 20 মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। এটি যেমন ক্যালোরি ঝরাতে কাজে দেবে। তেমনি উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা দূর করবে। আর খুব বেশি উদ্বেগ বোধ করলে বেশি পরিমাণে শারীরিক কাজ করা শুরু করতে হবে।
10. শিক্ষায় সান্নিধ্যের গুরুত্ব কতখানি?
What are the significance of attachment in education?
➧ নতুন পরিস্থিতিতে (Strange situation) পিতামাতার সঙ্গে শিশুর সান্নিধ্য (Attachment) পরিমাপ করা হয়। এই পদ্ধতিতে কিছু সময়ের জন্য শিশুর সঙ্গে পিতামাতাকে পৃথক রেখে পুনরায় মিলন ঘটানো হয় এবং শিশুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা হয়। এই প্রতিক্রিয়াগুলির সাহায্যে শিশুর সঙ্গে পিতামাতার সান্নিধ্যের সম্পর্কের বিন্যাস (Pattern of Attachment Relationship) নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে তিন ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়—
1. যে সমস্ত শিশু পুনর্মিলনে পিতামাতার নিকট চলে যায় এবং তাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে তার অসুবিধা ব্যক্ত করে, সেক্ষেত্রে পিতামাতার সঙ্গে শিশুর গভীর এবং হার্দিক সান্নিধ্য সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন ওঠে না। 2. এ ছাড়া কোনো কোনো শিশু আছে যাদের প্রতিক্রিয়া বা আচরণে বিচ্ছিন্ন সান্নিধ্যের (Disorganised) পরিচয় মেলে, যেমন—উপেক্ষা করা, রেগে যাওয়া ইত্যাদি। 3. আবার যে সমস্ত শিশু পুনর্মিলনে পিতামাতার প্রতি নজর দেয় না, কথাবার্তা বলার জন্য সক্রিয় হয় না, সান্নিধ্যের (Attachment) নিশ্চয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই তিন ধরনের সান্নিধ্যমূলক আচরণকে পরিবর্তন করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন হল শিশুর প্রতি পিতামাতার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশুদের সমর্থন করা, তার প্রতি স্নেহভালোবাসা প্রদর্শন, তাকে বোঝার চেষ্টা করা, সংবেদনশীল হওয়া এবং তার সঙ্গে খেলাধুলা করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাঞ্ছিত এবং হার্দ্য সান্নিধ্য গড়ে তোলা সম্ভব। অপরদিকে গৃহে অশান্তি, শিশুকে ভয় দেখানো, অবহেলা করা ইত্যাদির ফলে শিশুর সঙ্গে পিতামাতার সান্নিধ্য বিচ্ছিন্নতার রূপ নেয়।
শৈশবে শিশুর সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্কের গভীরতা এবং সমগ্র জীবনে তার প্রভাবের ফল বিবেচনা করে শৈশব অবস্থা থেকেই পিতামাতার সঙ্গে শিশুর ইতিবাচক সান্নিধ্য যাতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায় সে ব্যাপারে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন হল আনন্দের বিষয়বস্তু এবং স্থায়িত্বসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা। এর জন্য কার্যকরী উপায় হল ভিডিয়ো ফিডব্যাকের সাহায্যে পিতামাতাদের এ ব্যাপারে আরও সংবেদনশীল করা। এর ফলে পিতামাতারা একদিকে যেমন তাদের মিথস্ক্রিয়ার স্টাইল সম্পর্কে সচেতন হয়, অন্যদিকে তেমনি শিশুর চাহিদা সম্পর্কেও সচেতন হয়। ভালো ফল পাওয়ার জন্য এর স্থায়িত্ব কম করা উচিত (5 সেকেন্ডের কম) এবং তখনই শুরু করা উচিত যখন শিশুর 6 মাস বা তার অধিক বয়স হবে। সবেশেষে বলা যায়, শিশুর সঙ্গে পিতামাতার বাঞ্ছিত সান্নিধ্য বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের প্রয়োজনমতো সামাজিক এবং আর্থিক সম্পদের অধিকারী হতে হবে যাতে শৈশব থেকেই তারা সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
11. প্রবৃত্তির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করুন।
Mention the characteristics of Instinct.
➧ প্রবৃত্তিজাত আচরণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল-
- প্রবৃত্তি হল সহজাত: জন্মের পর থেকেই প্রবৃত্তি সক্রিয় হয়। যেমন—জন্মের পরেই শিশু কেঁদে ওঠে, হাত-পা ছোড়ে ইত্যাদি।
- প্রবৃত্তি হল বংশগত: জন্মের পরেই শিশু যে কাঁদে এটি শুধু কোনো নির্দিষ্ট সময়ে জন্মপ্রাপ্ত শিশুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে। এর কারণ হল শিশুর কান্না বংশধারা সূত্রে প্রাপ্ত।
- প্রবৃত্তিমূলক আচরণ সমতা রক্ষা করে: প্রবৃত্তি সমজাতীয় প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। যেমন—সব মাকড়সার জাল তৈরি করার পদ্ধতি এক।
- প্রবৃত্তিমূলক আচরণ যান্ত্রিক এবং অপরিবর্তনীয়: অনেকে মনে করেন প্রবৃত্তিমূলক আচরণ যান্ত্রিক এবং অপরিবর্তনীয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের সাহায্যে প্রবৃত্তিমূলক আচরণের পরিবর্তন করা সম্ভব। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এই বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
- প্রবৃত্তি হল উদ্দেশ্যমুখী: প্রবৃত্তি চেতনভাবে উদ্দেশ্যহীন হলেও, অচেতনভাবে উদ্দেশ্যমূলক। প্রবৃত্তি আত্মরক্ষা এবং বংশবিস্তারমূলক উদ্দেশ্য (Biological purpose) সাধন করে। বাৎসল্য একটি প্রবৃত্তি। এই প্রবৃত্তির কারণেই জননী তার শিশুকে শত অসুবিধা সত্ত্বেও লালনপালন করে।
- প্রবৃত্তি এবং প্রক্ষোভ: ম্যাকডুগাল-এর মতে প্রতিটি প্রবৃত্তির সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রক্ষোভ যুক্ত থাকে, যেমন-পলায়ন প্রবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত থাকে ভয় ও প্রক্ষোভ।
- প্রবৃত্তির সংখ্যা: প্রবৃত্তির মোট সংখ্যার প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়।
- যেমন—ম্যাকডুগাল-এর মতে 14টি, ক্যালভিন-এর মতে 25টি, উডওয়ার্থ-এর মতে 100টি।
12. প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির গুরুত্ব আলোচনা করুন।
Discuss the importance of Emotional Intelligence.
➧ ব্যক্তি এবং সমাজের কল্যাণের জন্য প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির সাহায্যে ব্যক্তির প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি সম্পর্কে সচেতনতা এবং শিক্ষা সমাজের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বই এ বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছে। প্রখ্যাত মনস্তত্ত্ববিদ ড. ডানিয়েল গোলেম্যান (Dr. Daniel Goleman)-এর লিখিত পুস্তক 'Emotional Intelligence-why it can matter more than IQ and working with Emotional Intelligence"-এ প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন।
- প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি বুদ্ধ্যঙ্কের মতো শক্তিশালী। অনেক সময় বুদ্ধ্যঙ্ক অপেক্ষা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধ্যঙ্ক অধিক শক্তিশালী। বুদ্ধ্যঙ্ক ব্যক্তির জীবনে সফলতার জন্য 20% দায়ী। অবশিষ্ট শতাংশর জন্য দায়ী অন্যান্য উপাদানসমূহ, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি, ভাগ্য এবং সামাজিক শ্রেণি।
- জীবনে সফলতা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে বুদ্ধ্যঙ্ক অপেক্ষা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি অধিক কার্যকরী। উচ্চ প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা অধিক।
- শিক্ষা এবং বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে শিশু এবং ব্যক্তিদের প্রাক্ষোভিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি বৃদ্ধি করা সম্ভব। যা ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে, আনন্দ দান করে এবং জীবনে সাফল্য অর্জনে সাহায্য করে, অন্যদিকে বুদ্ধ্যঙ্ক বৃদ্ধি করা সাধারণত সম্ভব নয়।
- বুদ্ধাঙ্ক এবং আদর্শ পারদর্শিতার অভীক্ষা দ্বারা ব্যক্তির সাফল্য সম্পর্কে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। অপরদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের পূর্বাভাস সম্পর্কে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি এবং সামাজিক কর্মসূচি শিক্ষাগত ক্ষমতা থেকে অধিক সফল।
- কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক এবং পেশাগত উৎকর্ষতা অপেক্ষা প্রাক্ষোভিক বুদ্ধি অধিক পরিমাণে কার্যকরী। পেশাগত দক্ষতার অধিকারী ব্যক্তি যদি দুর্বল প্রাক্ষোভিক বুদ্ধিসম্পন্ন হয়, সেক্ষেত্রে নিজের এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে তার অসুবিধা হয়।
- জীবনের সব ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জনে প্রাক্ষোভিক বুদ্ধির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যাবলি (যেমন—প্রক্ষোভ সম্পর্কে সচেতনতা, প্রক্ষোভের দ্বারা প্রেষণা সম্ভার, অন্যান্যদের প্রক্ষোভকে গুরুত্বদান এবং সম্পর্ক তৈরি করা ও বজায় রাখা) সাহায্য করে। জীবনে সুন্দর ও সার্থক হতে গেলে সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা বিশেষ প্রয়োজন।
13. চিত্র সহযোগে Maslow-এর তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
Briefly discuss Maslow's theory with diagram.
➧ মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক আব্রাহাম ম্যাসলো (Maslow) বিশ্বাস করতেন — মানুষ যেমন সমাজ বা পারিপার্শ্বিক উন্নতিবিধানের জন্য কাজ করে তেমনই সে নিজের অন্তর্গত চাহিদার জন্যও কাজ করে। তাঁর মতে, চাহিদা ও প্রেষণার মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক তার মূল কারণ তিনটি—(ক) বেদনা পরিহার, (খ) সুখের চাহিদা ও (গ) উত্তেজনা প্রশমন। তিনি বলেন, চাহিদাগুলি ক্রমান্বয়ে সজ্জিত। একটি চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী চাহিদা জন্ম নেয়। এই চাহিদাগুলিকেও তিনি দু-ভাগে বিভক্ত করেন— (i) প্রাথমিক চাহিদা; এগুলিকে তিনি বলেন শারীরবৃত্তীয় চাহিদা। যেমন—ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি। এগুলির পূরণ হলে মানুষ চায় নিরাপত্তা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ইত্যাদি। (ii) বৃদ্ধির চাহিদা বা আত্মযথার্থীকরণ: প্রত্যেক মানুষ চায় তার মধ্যে যা কিছু ক্ষমতা এবং সম্ভাবনা আছে, তাকে বাস্তবায়িত করতে অর্থাৎ আত্মপ্রকাশ করতে। ম্যাসলো শারীরবৃত্তীয় চাহিদা থেকে আত্মযথার্থীকরণ পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক চাহিদার ক্রম উল্লেখ করেন। এই চাহিদা নীচে দেখানো হলো -
(a) শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অস্তিত্ব রক্ষার চাহিদা : ম্যাসলো-এর মতে এটিই প্রাথমিক চাহিদা এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এই চাহিদা পূরণ না হলে অন্য কোনো চাহিদাও আসে না, প্রেষণাও জন্মায় না। প্রাথমিক চাহিদা হিসেবে খাদ্য, বস্ত্র, জল, আশ্রয় এগুলির উল্লেখ করা যায়। শিশু যদি খাবার না পায় তবে সে খাবার পাওয়ার আশায় নানারকম আচার-আচরণ করতে থাকে এবং এগুলিকে নিম্নগামী কার্য বলা যায়। কিন্তু যদি তার চাহিদা পূরণ হয় তবে তার নতুনতর কাজের আগ্রহ জন্মায় এবং তা অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের।
(b) নিরাপত্তার চাহিদা: শারীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরণ হলেই মানুষের নিরাপত্তাবোধ জন্মায়। তাই মানুষ একটি নিয়মকানুনের মধ্যে কোনো এক শক্তির ছায়ায় আশ্রয় পেতে চায়। জমি কেনা, ঘরবাড়ি বানানো, এলআইসি করা ইত্যাদি নিরাপত্তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শিশুদের এই নিরাপত্তা দেন অভিভাবকরা যাতে শিশুর শারীরিক ক্ষতি না হয়। ফলে শিশুর মনে সাহস জন্মায় ও নতুনতর পরিবেশের সঙ্গে সে মোকাবিলা করতে শেখে।
(c) যূথবদ্ধতা বা অন্তর্ভূক্তির চাহিদা: মানুষ সামাজিক জীব। তাই সে সবসময়ই কোনো না কোনো দলের সভ্য হিসেবে বাস করতে চায়। এর ফলে সমাজে সংহতি বজায় থাকে। কিন্তু বর্তমান নগর সভ্যতায় পরস্পরের মধ্যে এমন বিচ্ছিন্ন ভাব লক্ষ করা যায় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই শিশুদের মধ্যে যূথবদ্ধতা অভিভাবকেরাই জাগিয়ে তুলবেন। এতে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে।
(d) আত্মমর্যাদাবোধ: এই বোধ দু-ধরনের হতে পারে। নিজের কাছে নিজের রূপ অথবা অপরের কাছে নিজের রূপ। আত্মমর্যাদা, আত্মসম্মান, আত্মোপলব্ধি এগুলি ব্যক্তির নিজের কাছে নিজের বোধ। অপরটি অন্যের কাছ থেকে পাওয়া শ্রদ্ধা, সম্মান, স্বীকৃতি, যশ ইত্যাদি। আগের চাহিদাগুলি পূরণ হলে এই বোধ জন্মায়।
(e) আত্মযথার্থীকরণ: ম্যাসলো-এর মতে এটিই চাহিদার চরমতম পর্যায়। কোনো ব্যক্তির সমস্ত দিক থেকে যতদূর সম্ভব পরিপূর্ণতা লাভই যথার্থীকরণের অর্থ। নিম্ন পর্যায়ের চাহিদাগুলি পূরণ হলেই কোনো ব্যক্তি তার প্রবণতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোনিবেশ করেন, যতক্ষণ না তিনি পরিপূর্ণ তৃপ্তি পান। এর পেছনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল স্বাধীনতা। কোনোরকম সামাজিক বাধা-নিষেধ-বন্ধন বা টানাপোড়েন থাকলে যথার্থীকরণ সম্ভব নয়। টিকে থাকার তাগিদ নিয়ে উৎকণ্ঠা এ ধরনের ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য নয়। বরং কাজের মধ্যে আনন্দ উপভোগই তার
কাম্য। তাই নিজের ক্ষমতা ও সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে আত্মোপলব্ধি ও ক্ষমতা প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করেই সে আনন্দ পাবে।
14. অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রেষণার মধ্যে পার্থক্য লিখুন।
Distinguish between Intrinsic and Extrinsic motivation.
➧ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রেষণার মধ্যে পার্থক্য হল—
অভ্যন্তরীণ প্রেষণা | বাহ্যিক প্রেষণা |
---|---|
1. কোনো কোনো ব্যক্তি তার নিজের মধ্য থেকেই লক্ষ্য পূরণের তাড়না অনুভব করে। এই তাড়না অনুভব করার জন্য বাইরে থেকে কোনো উদ্দীপকের প্রয়োজন হয় না। একেই অভ্যন্তরীণ প্রেষণা বলে। | 1. কোনো বিমূর্ত বা মূর্ত উদ্দীপকের সাহায্যে ব্যক্তির মধ্যে যে প্রেষণা সৃষ্টি করা হয়, তাকে বাহ্যিক প্রেষণা বলে। |
2. সব ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের প্রেষণা দেখা যায় না। | 2. সকল শিক্ষার্থীর মধ্যেই এই প্রকার প্রেষণা সৃষ্টি করা সম্ভব। |
3. প্রেষণার কার্যকারিতার দিক থেকে বিচার করলে এটি আদর্শ অবস্থা। | 3. এটি আদর্শ অবস্থা নয়। |
4. অভ্যন্তরীণ প্রেষণার ক্ষেত্রে ব্যক্তি কাজ করার আনন্দেই কাজ করে থাকেন, ফলের কথা চিন্তা করেন না। | 4. বাহ্যিক প্রেষণার ক্ষেত্রে ব্যক্তির কাছে ফললাভ বা কর্মাস্তের পুরস্কারটিই আসল। |
5. অভ্যন্তরীণ প্রেষণার জন্য বাইরে থেকে কোনো উদ্দীপকের প্রয়োজন হয় না। | 5. বাহ্যিক প্রেষণার জন্য প্রশংসা, পুরস্কার, সার্টিফিকেট, অধিক নম্বর ইত্যাদি উদ্দীপকের প্রয়োজন। |
6. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা দীর্ঘস্থায়ী। | 6. বাহ্যিক প্রেষণা দীর্ঘস্থায়ী নয়। ফললাভের সঙ্গে সঙ্গেই অন্তর্হিত হয়। |
15. বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেষণার অর্থ লিখুন। উদাহরণ সহযোগে এই দুই ধরনের প্রেষণার পার্থক্য ব্যাখ্যা করুন।
Write the meaning of extrinsic and intrinsic motivation. Explain the differences between
these two types of motivation with the help of example.
➧মনোবিদগণ প্রেষণাকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন— 1. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা ( Intrinsic Motivation) 2. বাহ্যিক প্রেষণা (Extrinsic Motivation). 1. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা (Intrinsic Motivation): অভ্যন্তরীণ প্রেষণার অন্যতম শর্ত হল—কোনো বাহ্যিক উদ্দীপক বা পুরস্কার ছাড়াই ব্যক্তি উদ্দেশ্যপূরণের জন্য ক্রিয়াশীল হয়। এর প্রধানতম শক্তি হল ব্যক্তির নিজের চাহিদা, প্রবণতা, আগ্রহ, কৌতূহল ইত্যাদি। 2. বাহ্যিক প্রেষণা (Extrinsic Motivation): বাহ্যিক প্রেষণার ক্ষেত্রে ব্যক্তি আপাতভাবে কোনো নির্দেশ মেনে নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাহ্যিক প্রেষণা সৃষ্টি হয় সামাজিক চাপ, পুরস্কার, বাহ্যিক নানা উন্মাদনা ও প্রকৃতি থেকে। শুধুমাত্র বাহ্যিক আচরণ দেখে কোনটি অভ্যন্তরীণ ও কোনটি বাহ্যিক প্রেষণা থেকে উদ্ভূত তা বোঝা যায় না। আচরণের কারণ বা উৎস বিশ্লেষণের সময়ই কোনটি অভ্যন্তরীণ ও কোনটি বাহ্যিক প্রেষণা তা বোঝা যায়। যেমন—একজন ছাত্র গানবাজনা বা আঁকা তার নিজস্ব আগ্রহে করতে পারে (অভ্যন্তরীণ), আবার ওই একই কাজ সমাজে বা পরিবারের কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েও করতে পারে (বাহ্যিক)।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের আচরণগুলি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুই প্রকার প্রেষণার একটি ধারাবাহিকতার মাঝামাঝি স্তরে বিচরণ করে। তবে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রেষণা কোনো ধারাবাহিকতার দুটি প্রান্ত নয়, সম্পূর্ণ পৃথক দুটি অবস্থান। এগুলি পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণহীন। তবে আমাদের প্রতিটি কাজই কিছুটা অভ্যন্তরীণ ও কিছুটা বাহ্যিক প্রেষণার ফল। বাহ্যিক প্রেষণার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল-
- বাহ্যিক প্রেষণা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মাঝে মাঝে প্রেষণা দুর্বল হওয়ার প্রবণতা থাকায় নতুন করে বাইরের উদ্দীপনা প্রয়োজন হয়।
- লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা বজায় থাকলেও তাঁর সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের যোগ থাকে কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোনোর পর ঈপ্সিত ফল পাওয়া যাক বা না যাক, ব্যক্তি কিছুটা যেন মুক্তি পেয়ে বাঁচে। আমাদের দেশের অনেক ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়া বাহ্যিক প্রেষণা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
- ক্রমাগত বাহ্যিক প্রেষণা দ্বারা পরিচালিত হলে শেষ পর্যন্ত নিজের লক্ষ্য নিজে স্থির করার আগ্রহ ও ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তখন অন্য কেউ দিশা না দেখালে অনেকের সমস্যা হয় এবং কিছুটা দিশাহীনতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- অসহায়ত্ব বোধ অপেক্ষাকৃত বেশি হলে এবং অন্যের প্ররোচনায় নিজের ক্ষমতার অতিরিক্ত লক্ষ্যের প্রতি অগ্রসর হলে মধ্যপথে প্রেষণা সম্পূর্ণ তিরোহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ব্যর্থতার সম্ভাবনা সর্বদাই জাগরুক থাকে।
- প্রশংসা ও পুরস্কারের আশায় প্রেষণা সৃষ্টি হলেও তা বাহ্যিক প্রেষণা হিসেবে গণ্য। কারণ সেখানে সাফল্যের তৃপ্তি বা আনন্দের চেয়ে পুরস্কার ও প্রশংসা পাওয়ার সন্তুষ্টি বড়ো হয়ে দেখা দেয়।
অভ্যন্তরীণ প্রেষণার বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
- শিশুবয়সে নিয়ন্ত্রিত হয় স্বাভাবিক বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য ও জৈবিক তাড়নার ভিত্তিতে।
- অপেক্ষাকৃত বড়োদের বেলায় অভ্যন্তরীণ প্রেষণা নিয়ন্ত্রিত হয় প্রধানত প্রজ্ঞামূলক বৈশিষ্ট্য দ্বারা (Cognitive factor)। কারণ তারা তাদের বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ও সামাজিক পরিবেশ বিচার করে সুচিন্তিত লক্ষ্য স্থির করতে পারে।
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড়োরাও জৈবিক চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রেষণা অনুভব করে। কিন্তু তা কখনোই সমাজ ও বুদ্ধি নিরপেক্ষ হয় না।
- অভ্যন্তরীণ প্রেষণা ব্যক্তির আত্মসক্ষমতা (Self efficacy) এবং আত্মবিকাশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে স্বেচ্ছানির্বাচিত লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তা স্থায়ী ও ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিকে কর্মে নিয়োজিত রাখে।
- বাহ্যিক প্রেষণা থেকে অভ্যন্তরীণ প্রেষণাতে উত্তরণই হওয়া উচিত শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য।উভয় প্রেষণার বৈশিষ্ট্যাবলির দিকে আলোকপাত করলে পার্থক্যগুলি সহজে বোঝা যায়।
16. প্রেষণার উপর বিভিন্ন বিষয়ের প্রভাব সম্পর্কে টীকা লিখুন।
Write a note on factors affecting motivation.
➧ প্রেষণা যেমন মানুষকে কাজে উদ্বুদ্ধ করে তেমনি লক্ষ্যে পৌঁছোনোর শক্তিরূপেও কাজ করে। কতকগুলি শর্তের দ্বারা আবার প্রেষণা নির্ধারিত হয়। এই শর্তগুলিকে প্রেষণার উপাদান বা নির্ধারক বলা হয়। এগুলি হল—
- আগ্রহ (Interest): ব্যক্তির কোনো বিশেষ বিষয়ে প্রেষণা তার সুপ্ত আগ্রহের দ্বারা নির্বাচিত হয়। কোনো চাহিদাকে তৃপ্ত করার জন্য চাহিদা নিবৃত্তির বিভিন্ন লক্ষ্যের মধ্যে যেটির প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ আছে, সেটিকেই সে নির্বাচন করে।
- কৌতূহল (Curiosity): ম্যাকডুগাল কৌতূহলকে প্রাথমিক প্রক্ষোভ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, যে বিষয়ে কোনো ব্যক্তির কৌতূহল জাগে, সেই বিষয়ে কৌতূহল নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সে অস্বস্তি অনুভব করে। সুতরাং কৌতূহল শিক্ষার্থীর প্রেষণার অন্যতম ভিত্তি। কাজেই শিক্ষক-শিক্ষিকার কর্তব্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়ে তোলা, যা তাদের প্রেষণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- উদ্বেগ (Anxiety): প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়। আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার উদ্বেগ দূর হয়। কোনো বিষয়ে সাফল্য লাভের জন্য উদ্বেগ না থাকলে অনেকসময় প্রেষণা কমে যায়। এই ব্যাপারে Yerkes Dodson-এর একটি সূত্র আছে। এই সূত্রে বলা হয়েছে যে, কোনো কাজ যদি খুব কঠিন হয়, তবে ব্যক্তির উদ্বেগ বাড়ে এবং প্রেষণা কমে। আবার কোনো কাজ যদি খুব সহজে হয়, তাহলে সেই বিষয়ে ব্যক্তির উদ্বেগ তেমন থাকে না। এই সময় প্রেষণাও কমে যায়, কিন্তু কাজের কাঠিন্যের মান মাঝামাঝি হলে প্রেষণা সবচেয়ে বেশি হয়।
- নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Locus of Control): প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের আচরণের কারণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। মনোবিদ Rotter এই আচরণের দু-ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কথা বলেছেন।
(a) বাহ্যনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (External locus of control): বাহা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কোনো ঘটনা ঘটলে ব্যক্তি সেই দায়িত্ব নিজে নিতে চায় না। মনে করা হয় বাইরের কোনো পরিস্থিতি এই আচরণের জন্য দায়ী। যেমন— কোনো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খারাপ হলে সে তার ব্যাখ্যা দেয় যে, প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিল বলেই তার ফল খারাপ হয়েছে। প্রশ্নপত্র কঠিন এক্ষেত্রে বাহ্য নিয়ন্ত্রক। (b) অন্তর্নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Internal locus of control): কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করে কোনো ঘটনা ঘটার জন্য এবং যা তার আচরণের জন্য সে নিজেই দায়ী। একে অন্তর্নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলে। যেমন—অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খারাপ হলে, তার ব্যাখ্যা হিসেবে সে বলে, সে ঠিকমতো প্রস্তুতি নেয়নি, বা তার শারীরিক বা মানসিক অবস্থার জন্য সে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেনি।
দক্ষতা সম্বন্ধে আত্মবিশ্বাস (Self-Efficacy): নিজের দক্ষতা বা ক্ষমতা সম্পর্কে আস্থাকেই বলা হয় আত্মবিশ্বাস। কোনো কোনো ব্যক্তি তাদের জীবনকে নির্দিষ্ট পথে পরিচালনা করতে পারে। তারা অনুমান করতে পারে, ভবিষ্যতে তারা কী করতে পারবে। এইসব ব্যক্তি সহজেই যে-কোনো কাজে প্রেষণা পায়। আবার কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করে তার জীবনে যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সে হয়তো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। অর্থাৎ ওইসব ব্যক্তি নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে না এবং এর ফলে তারা কোনো কাজে প্রেষণা পায় না। এই দুই বিপরীতধর্মী ব্যক্তিত্বই আমাদের সমাজে দেখা যায়। নিজের দক্ষতার প্রতি বিশ্বাসকেই আত্ম-কার্যকারিতা (Self-Efficacy) বলে। একজন যোগ্য শিক্ষকের কর্তব্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, যাতে তারা যেসব বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলিকে সহজে অতিক্রম করতে পারে।
17. ওয়াইনার-এর কারণ নির্দেশক তত্ত্বে উল্লিখিত তিনটি নির্দেশক মাত্রা সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করুন।
Write a short note on the three causal dimensions in Weiner's Attribution theory of motivation.
➧ কারণ নির্দেশক তত্ত্বের প্রবক্তা বার্নার্ড ওয়াইনার (Bernerd Weiner)। তাঁর মতে, শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য উভয়ের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রেষণার সৃষ্টি হয়। ওয়াইনার তাঁর তত্ত্বে বলেছেন, শিক্ষার্থীর সাফল্য-অসাফল্য কয়েকটি মৌলিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলি হল一
(i) নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Locus of Control): শিক্ষার্থীর প্রেষণার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র তার অভ্যন্তরীণ মানসিক শক্তি হতে পারে। অথবা বাইরের কোনো উদ্দীপক দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বিভিন্ন প্রাক্ষোভিক প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র অভ্যন্তরীণ হলে শিক্ষার্থীর মধ্যে অপরাধবোধ ও উদ্বেগ তৈরি হয়। (ii) স্থায়িত্ব (Stability): যে বৈশিষ্ট্যগুলি সহজে পরিবর্তিত হয় না সেগুলিকে স্থায়ী বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন—শিক্ষার্থীর ক্ষমতা, দক্ষতা, শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। স্থায়ী বৈশিষ্ট্যগুলিই শিক্ষার্থীর সাফল্য বা অসাফল্যের কারণ। আবার অস্থায়ী বৈশিষ্ট্যগুলি হল শিক্ষার্থীর অসুস্থতা, ভাগ্য ইত্যাদি।
(iii) নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা (Controllability): শিশু তার সাফল্য ও অসাফল্যের কারণগুলিকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তা নির্ভর করে তার নিজের বিশ্বাসের উপর। যেমন-শিক্ষার্থী সফল হওয়ার জন্য কতটা প্রচেষ্টা করবে তা তার নিয়ন্ত্রণাধীন কিন্তু কাজটি কতটা কঠিন হবে সেটি তার নিয়ন্ত্রণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীর অসাফল্যের কারণ যদি বাহ্যিক এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য না হয় তাহলে তার মধ্যে অর্জিত অসহায়ত্ব (Learned Helplessness) সৃষ্টি হয়।
18. MeClelland-এর সাফল্যলাভে প্রেষণার তত্ত্বটি সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
Discuss in brief about McClelland theory of Achievement Motivation.
➧ সাম্প্রতিককালে সাফল্যলাভের প্রেষণার (Achievement Motive) উপর মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজতত্ত্ববিদ এবং শিক্ষাবিদদের নজর আকর্ষিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আর্থিক বিকাশের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে আমরা সকলেই সচেতন। মনস্তত্ত্ববিদগণ বিষয়টিকে মনস্তত্ত্ব, সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রক্ষমতা এমনকি দার্শনিক দিক থেকে বিচার করেছেন। ব্যক্তির সামাজিকতা দেশের আর্থিক উন্নয়ন সম্পর্কিত সমস্যার উপর কী প্রভাব ফেলে তা মনস্তত্ত্ববিদদের নিকট বিরাট প্রশ্ন। বিভিন্ন দেশের আর্থিক উন্নয়নের বৈষম্যের মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলি সম্পর্কে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক David MeClelland অনুসন্ধান করেন। তিনি মনে করেন, ব্যক্তি ও জাতির মনস্তত্ত্ব অধ্যয়ন করলে এই বিষয়ে অনেক তথ্য জানা যেতে পারে। আর্থিক উন্নয়নের পশ্চাতে গতানুগতিক আর্থিক উপাদানের ধারণাকে তিনি বাতিল করেন।
তিনি তাঁর, 'Acheiving Society' নামক পুস্তকে এই বিষয়ে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, কেবলমাত্র আর্থিক উপাদানের দ্বারা ধনতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করা যায় না। তাঁর মতে, ব্যক্তির মৌলিক বিকাশ এবং মনোভাব দেশের আর্থিক বিকাশে প্রেরণা সঞ্চার করে। তিনি আরও বলেন, 'সাফল্যলাভের প্রেষণা'র মাত্রার দিক থেকে ব্যক্তিগত পার্থক্য বর্তমান। ব্যক্তির মধ্যে এই পার্থক্য বিভিন্ন দেশের আর্থিক বৈষম্যের অন্যতম কারণ। 1951 খ্রিস্টাব্দে MeClelland এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তাঁর সহযোগীগণ ‘সাফল্যলাভের প্রেষণা'র উপর একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন। সাফল্যলাভের প্রেষণার সংজ্ঞায় তিনি বলেছেন, “A reintegration of a change in a fact by
a cue and anticipation of a future change in affect contingent upto certain actions." তাঁর এই সংজ্ঞায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্তমান। প্রথমটি হল 'reintegration' যার অর্থ হল পারিপার্শ্বিক কোনো ঘটনা যা ব্যক্তির মধ্যে সচেতনভাবে মানসিক প্রক্রিয়াগুলিকে পুনরায় সচল করে। অপরটি হল 'cue' যার অর্থ হল এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে অনুভূতির সঞ্চার হয়। উদাহরণস্বরূপ দীর্ঘকাল পরে শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ কোনো শিক্ষার্থীর মনে পুরোনো দিনের মানসিক প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় হয়।
a cue and anticipation of a future change in affect contingent upto certain actions." তাঁর এই সংজ্ঞায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্তমান। প্রথমটি হল 'reintegration' যার অর্থ হল পারিপার্শ্বিক কোনো ঘটনা যা ব্যক্তির মধ্যে সচেতনভাবে মানসিক প্রক্রিয়াগুলিকে পুনরায় সচল করে। অপরটি হল 'cue' যার অর্থ হল এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে অনুভূতির সঞ্চার হয়। উদাহরণস্বরূপ দীর্ঘকাল পরে শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ কোনো শিক্ষার্থীর মনে পুরোনো দিনের মানসিক প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় হয়।
McClelland এবং Atkinson-এর মতে, প্রতিটি মানুষই চায় বিভিন্ন কর্মে সাফল্যলাভ করতে। শিশু অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা বিকাশ লাভ করে। এই আকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়। যার মধ্যে সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা যত বেশি তার সফল হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি। যেমন—কোনো শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী চায় ওই পরীক্ষায় মোটামুটি ফলাফল, আবার কেউ চায় কেবল পরীক্ষায় পাস করতে। অর্থাৎ এই সাফল্যলাভের আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত।
19. বাহ্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলতে কী বোঝায়? একজন শিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে এদের প্রয়োগ আলোচনা করুন।
What is meant by external situational locus of control? Discuss its classroom implications,
as a teacher.
➧ যখন মানুষ কোনো কাজে ভালো ফললাভ করে, তখন সে মনে করে এতে তার ভাগ্য সহায়তা করেছে। কেউ কেউ মনে করে সে এই ফললাভের জন্য যোগ্য বা উপযুক্ত। কখনও আমরা কোনো আচরণের কারণ নিজের মধ্যেই নিহিত আছে বলে মনে করি, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের আচরণের কারণ হিসেবে বাইরের কাউকে দায়ী করি। রটার (Rotter) আচরণ বা ঘটনার দু-ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কথা বলেছেন। যখন কোনো শিক্ষার্থী মনে করে তাদের এই কাজের পরিণামের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যেমন—যখন সে বিশ্বাস করে তার পরীক্ষার ফলাফল ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল, নিজস্ব সামর্থ্যের উপর নয়—তখন তাকে বলা হয় বাহ্য নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (External locus of control)
আবার যখন শিক্ষার্থী মনে করে তার ফল খারাপ হয়েছে তার নিজস্ব প্রস্তুতি, দক্ষতা বা প্রচেষ্টার অভাবে অর্থাৎ ফলের কারণ তার নিজের মধ্যেই নিহিত রয়েছে, তখন তাকে বলা হয় আন্তঃনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Internal locus of control)। উইগফিল্ড (Wigfield, 1994) দেখিয়েছেন যে, ব্যক্তির বয়স এবং সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সাধারণত, পরিণতির সঙ্গে সঙ্গে ও ব্যক্তি যত বেশি সাফল্যের সম্মুখীন হয়, ততই সে নিজের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রটির অনুসন্ধান করে।
ড্যাসি (Dacey, 1989) নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সম্পর্কে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন ও তাঁর সিদ্ধান্তগুলি হল—
(i) শিক্ষকরা বাহানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রপ্রবণ শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলিতে গুরুত্ব বেশি দেন এবং শিক্ষার্থীরাও এইসব শিক্ষকদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। (ii) বাহ্যনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রপ্রবণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের প্রত্যাশা সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করে ভালো ফল করতে পারে। (iii) বাহানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রপ্রবণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় অন্তঃনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রপ্রবণ শিক্ষার্থীরা প্রাপ্ত তথ্যের অনুধাবন ও প্রয়োগে ভালো ফল দেখাতে পারে। (iv) প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে অন্তঃনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রপ্রবণ শিক্ষার্থীরা বাহানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রযুক্ত শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো ফল করতে পারে, কারণ বাহানিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রযুক্ত শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ অপেক্ষাকৃত বেশি।
20. শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রেষণা সৃষ্টি করার বিভিন্ন কৌশলগুলি ব্যাখ্যা করুন।
Explain different strategies for motivating students to learning.
➧ শিখনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর প্রেষণা সৃষ্টি করার বিভিন্ন কৌশলগুলি হল— (i) সুখ ও দুঃখ দান: এটি অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতি। শিক্ষার্থীকে কখনও সুখ, কখনও দুঃখ দিয়ে শিক্ষক তাকে দিয়ে সঠিক কাজটি করিয়ে নেবেন। (ii) পুরস্কার ও শাস্তি: পুরস্কার শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ জাগায় এবং তাকে সদর্থক কাজে ব্রতী হতে সাহায্য করে। অপরদিকে শাস্তি অনেক সময় নির্দিষ্ট আচরণ থেকে নিবৃত্ত করে। তাই শাস্তির নীতি খুব সতর্কভাবে প্রয়োগ করতে হবে। পুরস্কার অবশ্যই মানসিক, পার্থিব, প্রশংসা ইত্যাদি নানাপ্রকার হতে পারে। (iii) উচ্চাশার স্তর: কোনো শিক্ষার্থীর উচ্চাশার স্তর কতখানি তা জানা প্রয়োজন। শুধু আশা থাকলেই চলবে না, শিক্ষার্থী ওই লক্ষ্যে পৌঁছোনোর কতটা উপযুক্ত অর্থাৎ তার ক্ষমতার পরিমাপও প্রয়োজন। উচ্চাশার স্তর অনেকটাই শর্তসাপেক্ষ। যেমন—বুন্ধি, আর্থসামাজিক অবস্থা, পিতামাতার সম্পর্ক প্রভৃতি বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভরশীল। (iv) প্রশংসা ও নিন্দা: প্রশংসা শিক্ষার্থীদের আত্মশ্রদ্ধার চাহিদা পরিতৃপ্তিতে সহায়তা করে। নিন্দা অপেক্ষা প্রশংস শিক্ষার্থীর প্রেষণা উন্মেষে অধিক কার্যকরী। কারণ, অধিক নিন্দায় ব্যক্তিত্বের অসামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। প্রশংস নানাপ্রকার হতে পারে। যেমন—শিক্ষকের হাস্যোজ্জ্বল মুখ, সম্মতিসূচক দৃষ্টি, মৌখিক বাহবা ইত্যাদি। প্রশংস বা নিন্দার কার্যকারিতা শিক্ষকের ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে। শিক্ষক এই দুই উদ্বোধক খুব সতর্কভায়ে শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করবেন। (v) প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা: শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার মনোভাব শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণ সঞ্চার করে। প্রতিযোগিতা তিন প্রকার হতে পারে। যেমন—(ক) সঙ্গীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের প্রতিযোগিত
(খ) দলগত প্রতিযোগিতা, (গ) আত্মগত প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতার মনোভাব শিক্ষার্থীকে শিখনের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে উৎসাহি করে। আর সহযোগিতামূলক কাজে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা বাড়ে। সহযোগিতাই দলগত সম্পর্ক রক্ষার মূলভিত্তি তাই শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণা সঞ্চারের জন্য শিক্ষক এই দুই কৌশলই বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে প্রয়োগ করবেন। (vi) ঘাটতিপূরণ: সাধারণভাবে এই পদ্ধতিকে পুনঃসংযোজন বলা যায়। কারণ, যে শিক্ষার্থীর যে স্থানে অভাব লক্ষ করা যাবে তাকে সেই অংশে উদ্দীপনা জোগান দিলেই সঠিক সাড়া পাওয়া সম্ভব হবে। (vii) অভিনবত্ব: বিষয় বা উপস্থাপনার অভিনব প্রকাশভঙ্গি শিক্ষার্থীর মনে আগ্রহ সঞ্চার করে। শিশুদের খেলাধুল এবং শিক্ষকের রসিক মনোভাব, কার্যকরী শিখনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই শিক্ষক পাঠ্যবিষয় এবং তা উপস্থাপনায় অভিনবত্ব রাখবেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহল ও আগ্রহ সৃষ্টি করে প্রেষণা সঞ্চারে সাহায্য করবে (viii) লক্ষ্য স্থিরীকরণ: প্রেষণা একটি লক্ষ্যাভিমুখী ক্রিয়া। যদি কোনো শিক্ষার্থীর কাছে আনন্দদায়ক কোনো লক্ষ্য স্থির থাকে, তবে সে কিছু কষ্ট স্বীকার করেও সুখ সন্ধানে ব্রতী হয়। তাই শিক্ষক যে-কোনো কাজের আগে তার লক্ষ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সঠিক ধারণা দেবেন।
Q21. সক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র কীভাবে প্রেষণ ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে আলোচনা করুন।
Discuss how self efficacy and locus of control affects motivation.
➧ কোনো-কোনো ব্যক্তি তাদের জীবনকে নির্দিষ্ট পথে পরিচালনা করতে পারে। তারা অনুমান করতে পারে ভবিষ্যতে কী করতে পারবে এবং জীবনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চালাতে পারবে। এর ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মায় এইসব ব্যক্তি সহজেই যে-কোনো কাজে প্রেষণা পায়। আবার কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করে তার জীবনে যেসব ঘটেছে তাতে তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সে হয়তো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না। তার বেঁচে থাকাই বৃথা অর্থাৎ ওইসব ব্যক্তি নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে না, যার ফলে তারা কোনো কাজে প্রেষণা পায় এই দুই বিপরীতধর্মী ব্যক্তিত্বই আমাদের সমাজে দেখা যায়। যারা আত্মবিশ্বাসী তারা সমাজের বাধাগুলি জয় করার পর চেষ্টা করে, আর যারা মানসিক দিক থেকে দুর্বল তারা বাধাগুলিকে জয় করার চেষ্টা তো করেই না বরং নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাসকেই (Self-efficacy) বলা যেতে পারে। একজন উপযুক্ত শিক্ষকের কর্তব্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা, যাতে তারা যেসব বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তাকে সহজে অতিক্রম করতে পারে। আত্মবিশ্বাস এবং আত্মকার্যকারিতা শিক্ষার্থীকে পঠনপাঠনে প্রেষণা জোগায়, ফলে তারা সাফল্য পায়।
নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Locus of Control) : প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজের আচরণের কারণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, একেই বলে আচরণের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। মনোবিদ Rotter এই আচরণের দু-ধরনের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কথা বলেছেন। (a) বাহ্যনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (External locus of control): বাহা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কোনো ঘটনা ঘটলে ব্যক্তি সেই দায়িত্ব নিজে নিতে চায় না। মনে করা হয় বাইরের কোনো পরিস্থিতি এই আচরণের জন্য দায়ী। যেমন— কোনো পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খারাপ হলে সে তার ব্যাখ্যা দেয় যে, প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছিল বলেই তার ফল খারাপ হয়েছে। প্রশ্নপত্র কঠিন এক্ষেত্রে বাহ্য নিয়ন্ত্রক। (b) অন্তর্নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (Internal locus of control): কোনো কোনো ব্যক্তি মনে করে কোনো ঘটনা ঘটার জন্য এবং যা তার আচরণের জন্য সে নিজেই দায়ী। একে অন্তর্নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলে। যেমন—অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল খারাপ হলে, তার ব্যাখ্যা হিসেবে সে বলে, সে ঠিকমতো প্রস্তুতি নেয়নি, বা তার শারীরিক বা মানসিক অবস্থার জন্য সে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারেনি।
22. শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকা আলোচনা করুন।
Discuss the role of motivation in learning.
➧ প্রেষণা শিখন প্রক্রিয়াতে বিভিন্নভাবে কাজ করে। এগুলি হল—
(i) প্রেষণা ব্যক্তিকে কর্মে উদ্যম বা শক্তি জোগায়: প্রতিটি আচরণের জন্য প্রয়োজন উদ্যমের। প্রেষণার মাধ্যমে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ উদ্যমকে জাগানো প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির মধ্যে উদ্যম সৃষ্টির জন্য শাস্তি, প্রশংসা, নিন্দা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উদ্বোধক ব্যবহার করা হয়। এইসব উদ্বোধকগুলি স্থায়ীভাবে শিক্ষার্থীদের উদ্যম সৃষ্টি করতে পারে না। শিক্ষণীয় বিষয়কে যদি বিভিন্নভাবে আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তবে তা উদ্বোধকের কাজ করে যা শিক্ষার্থীদের স্থায়ী প্রেষণা সৃষ্টি করে। (ii) আচরণের প্রকৃতি নির্বাচন করা: আমাদের আচরণের প্রকৃতি নির্বাচনধর্মী। এই নির্বাচনমূলক আচরণের পশ্চাতে রয়েছে আমাদের মধ্যে প্রেষণার বিভিন্নতা। যখন কোনো শ্রেণিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাঠ দেবেন সেটিকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত, নতুবা বিভিন্ন শিক্ষার্থী তার আগ্রহ অনুযায়ী ওই পাঠের বিভিন্ন অংশের প্রতি মনোযোগ দেবে এবং তার ফলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। (iii) প্রেষণা ও কাজ সম্পন্ন করা: প্রেষণার ফলে মানুষ শুধু কাজে উদ্যোগী হয় তাই নয়, কাজটি যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। প্রেষণার দরুন মানুষ নিজের চেষ্টাতেই অনেক কাজ করে। বাধা এলেও তাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। এই বাধা অতিক্রম করার জন্য অন্যের সাহায্য নিতেও সে দ্বিধা বোধ করে না। শিক্ষাকে কার্যকরী করতে হলে শিক্ষার্থীকে যেমন উদ্যোগী করতে হবে তেমনি শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে তাকে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলেই শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টা লক্ষ্যের উপযোগী হবে এবং অনর্থক বা অপ্রয়োজনীয় আচরণ করে সময় ও শ্রমের অপব্যয় করবে না। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য প্রয়োজনমতো সে শিক্ষক, অভিভাবক ও সহকর্মীদের সাহায্য নেবে। (iv) প্রেষণা শিক্ষার্থীর শিখন কৌশলকেও প্রভাবিত করে: প্রেষণার দরুন শিক্ষার্থীর কোনো কিছু শেখার জন্য প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। পাঠকে অর্থপূর্ণভাবে শেখার সম্ভাবনা বাড়ে। ডিউই-র মতে শিক্ষার প্রত্যেকটি অভিজ্ঞতা-ই যাতে শিক্ষার্থীর কাছে অর্থপূর্ণ হয় সেদিকে নজর দেওয়া শিক্ষকের অন্যতম কর্তব্য। শেখার সময় কেবলমাত্র যান্ত্রিক প্রচেষ্টা বা ভুল পদ্ধতিতে না শিখে শিক্ষার্থী যাতে অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োগ করতে পারে সে বিষয়ে তাকে সাহায্য ও পরিচালনা করা শিক্ষকের কর্তব্য। একেই প্রেষণার জ্ঞানমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বলে।
সুতরাং একজন সুশিক্ষকের কর্তব্য হল শিক্ষার্থীদের প্রেষণাগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা এবং বিচক্ষণতার সঙ্গে এগুলিকে উদ্বুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত কর্মপ্রচেষ্টা সৃষ্টি করা। যদি শিক্ষকের স্নেহ, সহপাঠীদের সহমর্মিতা ও সমবেদনা, বিদ্যালয়ে তার নিজস্ব অধিকার ইত্যাদি সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা যায় তাহলে একদিকে যেমন তাকে প্রচেষ্টা করতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিতৃপ্তিও সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
23. শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগসহ মনোযোগের যে-কোনো পাঁচটি নির্ধারক আলোচনা করুন।
Discuss any five determinants of attention with their application in education.
➧ শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের পাঁচটি নির্ধারক হল- (i) উদ্দীপকের তীব্রতা (Intensity of stimulus): স্বাভাবিকভাবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি যে অবস্থায় আছে, অর্থাৎ যে তীব্রতার সঙ্গে অভিযোজন করে সক্রিয় আছে তার থেকে তীব্রতার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলে সেইদিকে মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। স্বাভাবিক আলোর মধ্যে তীব্র আলোর ঝলকানি, শব্দের তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি, ত্বকের উপর চাপ বৃদ্ধি, তীব্র গন্ধ, তীব্র স্বাদ সবকয়টিই মনোযোগ আকর্ষণের কারণ হতে পারে। (ii) সামঞ্জস্যের পরিবর্তন (Change of harmony): যে গান নির্ধারিত ও যথার্থ সুরে গাওয়া হচ্ছে, আকস্মিকভাবে সুরে ভুল হলে, কবিতায় ছন্দভঙ্গ হলে, অভ্যস্ত দৃশ্যের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সেদিকে সহজেই মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। বিপরীতক্রমে গোলমালের মধ্যে সংগীতের সুর, নীরস গদ্যের মধ্যে কবিতার ছন্দ আলাদাভাবে আমাদের মনোযোগ টানে। সামঞ্জস্যহীনতার চেয়ে সুষম আকৃতি, নকশা, ধ্বনি ইত্যাদি অনেক বেশি কার্যকর মনোযোগের নির্ধারক। (iii) উজ্জ্বলতা (Brightness): উজ্জ্বল বর্ণ আমাদের মনোযোগের অন্যতম নির্ধারক। বিশেষত খুব ছোটো শিশুদেরও উজ্জ্বল বর্ণের প্রতি আকর্ষণ থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা ছোটো শিশুদের অক্ষিগোলকের ঘোরাফেরা ফটোর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যখনই কোনো উজ্জ্বল রঙিন উদ্দীপক উপস্থিত হয় তখনই কয়েক সেকেন্ডের জন্য অক্ষিগোলক স্থির হয়ে যায় এবং শিশুর দৃষ্টি তার প্রতি স্থির হয়ে থাকে। একে মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর মনোযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। (iv) আকৃতি (Size): সাধারণ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট জনতার মধ্যে একজন অত্যন্ত দীর্ঘ আকৃতির অথবা খর্বকায় ব্যক্তি সহজেই অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছোটো গাছপালার মধ্যে খুব লম্বা গাছ, সমতলের মধ্যে উচ্চ পাহাড় বা টিলার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। (v) ব্যতিক্রম (Exception): মুদ্রিত পুস্তকের কিছুটা অংশ বাঁকা অক্ষরে (Italics) কিংবা মোটা অক্ষরে (Bold) ছাপ থাকলে সেদিকে সহজেই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। বিপরীতক্রমে পুস্তক প্রণেতা বিশেষ বিশেষ অংশের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে ওই অংশগুলি বাঁকা অক্ষরে কিংবা মোটা অক্ষরে অথবা কখনো কখনো রঙিন অক্ষরে ছেপে দেন।
24. ঐচ্ছিক এবং অনৈচ্ছিক মনোযোগের মধ্যে উদাহরণসহ পার্থক্য নির্ণয় করুন।
Differentiate between additional and non-additional attention with examples.
➧ বিভিন্ন মনোবিদ মনোযোগ প্রক্রিয়াকে বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করে মনোযোগের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। বেশিরভাগ মনোবিদই মনোযোগের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে মনোযোগের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। ফলে এগুলির দ্বারা মনোযোগের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপ বোঝা যায় না। মনোবিদ রস্ (Ross) মনোযোগের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মনোযোগের শ্রেণিবিভাগ করেছেন। রস্ (Ross) মনোযোগকে প্রাথমিকভাবে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন-
1. ইচ্ছা-নিরপেক্ষ মনোযোগ (Non-volitional Attention ) : যে মনোযোগ মানুষের ইচ্ছাশক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কেবলমাত্র চিরস্থায়ী জৈব-মানসিক সংগঠন দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে বলা হয় ইচ্ছা-নিরপেক্ষ মনোযোগ। যেমন—খিদের তাড়নায় আমরা খাদ্যবস্তুর প্রতি যখন মনোযোগ হই তা ইচ্ছা নিয়ন্ত্রিত নয়, জৈবিক তাগিদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইচ্ছা-নিরপেক্ষ মনোযোগকে রস্ আবার দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—
(i) প্রবৃত্তি-প্রযুক্ত মনোযোগ (Enforced Attention): মনোযোগ যখন জন্মগত জৈব-মানসিক প্রবণতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে প্রবৃত্তি-প্রযুক্ত মনোযোগ বলা হয়। যেমন—খিদের তাড়নায় খাদ্যবস্তুর প্রতি মনোযোগ এবং স্নেহের তাড়নায় শিশুর প্রতি মনোযোগ। (ii) স্বতঃস্ফূর্ত মনোযোগ (Spontaneous Attention): বিকাশের ফলে জন্মগত প্রবণতাগুলির সমন্বয়ের ফলে যখন সেন্টিমেন্ট তৈরি হয়, তখন সেন্টিমেন্ট দ্বারা সেসব মনোযোগ নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে বলা হয় স্বতঃস্ফূর্ত মনোযোগ। যেমন—বিশেষ কোনো ব্যক্তির প্রতি সেন্টিমেন্টের জন্য তার প্রতি যে মনোযোগ এবং দেশের প্রতি সেন্টিমেন্টের ফলে বিদেশে গেলে দেশ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া।
2. ইচ্ছাপ্রণোদিত মনোযোগ (Volitional Attention):
যখন মনোযোগ আমাদের ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে বলা হয় ইচ্ছা-প্রণোদিত মনোযোগ। যেমন—পরীক্ষার দিন এগিয়ে এলে ছাত্রছাত্রীরা পড়ার প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে যে মনোযোগ দেয়। ইচ্ছা-প্রণোদিত মনোযোগকেও রস্ দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যেমন— (i) গুপ্ত মনোযোগ (Implicit Attention): সামান্য ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করেই যখন কোনো বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া যায়, তখন তাকে বলা হয় গুপ্ত মনোযোগ। (ii) ব্যক্ত মনোযোগ ( Explicit Attention): যখন বারবার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয় তখন তাকে বলা হয় ব্যক্ত মনোযোগ।
25. পাঠ্যবিষয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টির উপায় বা কৌশলগুলি বর্ণনা করুন।
Describe strategies for building students' interest in classroom activities.
➧ পাঠ্যবিষয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টির কৌশলগুলি হল— (i) শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ( Pupil's experience): শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, তাদের সামাজিক ও পারিবারিক পটভূমি থেকে পাওয়া জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে শিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা বিষয়বস্তুর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তাদের স্থায়ী মনোযোগ নিশ্চিত করা যায়। কারণ তারা পাঠ্যবিষয়টিকে আর অবাস্তব মনে করে না। তার প্রতি যথেষ্ট মূল্য বা গুরুত্ব আরোপ করে। (ii) পাঠ্যবিষয়ের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য (Inner beauty of the discipline): বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি সমস্ত পাঠ্যবিষয়ের নিজস্ব অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য আছে। শিক্ষক তাঁর শিক্ষণ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যদি সেই সৌন্দর্য অনুভব করার পথ উন্মুক্ত করে দেন, তবে শিক্ষার্থীরা যে আনন্দ পায় তা বিষয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ সৃষ্টি করে এবং গভীর মনোযোগ নিশ্চিত করে। (iii) শিখনের আনন্দ (Pleasure of learning): পরীক্ষা ও উচ্চ সাফল্যের তাগিদে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তা প্রকৃত আগ্রহ নয়। যদি ছাত্রছাত্রীরা শিখনের মাধ্যমে আনন্দ অনুভব করে, সমগ্র পঠনপাঠন আনন্দদায়ক হয় তবে আগ্রহ সৃষ্টি হয় স্বাভাবিক নিয়মে। তখন মনোযোগের জন্য স্বতন্ত্রভাবে চেষ্টা করার প্রয়োজন হয় না। মনে রাখতে হবে আগ্রহ শুধুমাত্র মনোযোগেরই শর্ত নয়, প্রেষণারও শর্ত। অভ্যন্তরীণ প্রেষণাই (Intrinsic motivation) সত্যিকারের প্রেষণা, বাইরের চাপে সৃষ্টি হওয়া প্রেষণা কৃত্রিম আগ্রহ সৃষ্টি করলেও তা স্থায়ী হয় না। (iv) সক্রিয় শিখন (Active learning): হাতেকলমে শেখা, অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের উৎস। অনেক সময় দেখা যায় বক্তৃতা শোনার চেয়ে যখন হাতেকলমে সরাসরি তথ্যসংগ্রহ করা দরকার হয় শিক্ষার্থীরা গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করে। তার কারণ, এই কাজ প্রকৃত আগ্রহজনক।
26. মনোযোগ ও আগ্রহের মধ্যে সম্বন্ধ আলোচনা করুন।
Discuss the relationship between attention and interest.
➧ মনোযোগে বিশেষ বস্তু বা বিষয় নির্বাচন করে আমরা তার প্রতি মনোযোগ দিই। মনোযোগ একটি প্রেষণামূলক কাজ। প্রতিটি প্রেষণামূলক কাজের পিছনেই একটি মানসিক সংগঠন কাজ করে, যা শক্তি জোগায়। মনোযোগের ক্ষেত্রে এই জাতীয় যে মানসিক সংগঠন কাজ করে তা হল আগ্রহ। আগ্রহ হল মনোযোগের অভ্যন্তরীণ নির্ধারক। তাই মনোযোগ ও আগ্রহের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্তমান। মনোযোগে কোন্ বস্তু নির্বাচিত হবে, তা নির্ণয় করে আগ্রহ। রাম যখন খুব মনোযোগ দিয়ে গান শুনছে তখন আমরা বলি, 'রাম আগ্রহের সঙ্গে গানটি শুনছে'। আগ্রহ এখানে একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু রামের গানের প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহ থাকলে বলি, 'রামের গানের প্রতি খুব আগ্রহ আছে। এখানে আগ্রহ হল মানসিক সংগঠন। সুতরাং প্রক্রিয়াটি হল মনোযোগ এবং যে মানসিক সংগঠন প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটি হল আগ্রহ। তাই ম্যাডুগাল (McDougall) বলেছেন, “আগ্রহ হল সুপ্ত মনোযোগ এবং মনোযোগ হল সক্রিয় আগ্রহ।” (Interest is latent attention and attention is interest in action)। মনোবিদ রস (Ross) ম্যাণ্ডুগাল-এর এই মতবাদকে সমর্থন করে বলেছেন যে, মনোযোগ এবং আগ্রহ একই মুদ্রার দুটি পিঠ। কারণ উভয়েরই মূলভিত্তি হল মনের মধ্যে সুসংবদ্ধ প্রবণতার সংগঠন। আগ্রহ একটি সক্রিয় প্রবণতা যা মনোযোগের প্রেরণা জোগায়। মানসিক সংগঠনের নিষ্ক্রিয় অবস্থাকে বলা হয় আগ্রহ আর যখন সেটি ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে তখন সেটি হল মনোযোগ।
27. শিক্ষায় আগ্রহের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করুন।
Mention different types of characteristics of interest in education.
➧ শিক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহের বিশেষ গুরুত্ব আছে। বর্তমান শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিশুর ব্যক্তিগত আগ্রহকে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্য দেওয়া হয়। কারণ শিশুর আগ্রহকে কাজে লাগাতে না পারলে তার বিকাশ সম্পূর্ণ যান্ত্রিক হয়ে যাবে। আগ্রহই শিশুকে পাঠ্যবিষয়ের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। সুতরাং, শিক্ষার সঙ্গে আগ্রহের সম্পর্ক নিবিড়। শিক্ষকের প্রধান কাজ হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথাযথ আগ্রহ সৃষ্টি করে তার কাজে সতিয়তা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। আগ্রহই শিক্ষার্থীকে উদ্যোগী করে তোলে। বিষয়বস্তু কঠিন হলেও শিক্ষার্থী যে শিখতে চায় তার মূল কারণই হল শিক্ষার্থীর ওই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ। শিক্ষার্থীর কাছে আগ্রহ হল কৌশল আর শিক্ষকের কাছে আগ্রহ হল লক্ষ্য।
সুতরাং, যে আগ্রহ শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার কীভাবে করা যায় তার উপায় নির্ধারণ করা শিক্ষকের কর্তব্য। শিক্ষক নিম্নলিখিত কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষার্থীর মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেন এবং শিক্ষা-শিক্ষক প্রক্রিয়ায় প্রয়োগ করতে পারেন।
- শিক্ষার্থীর বয়স, মানসিক বিকাশ, স্বাভাবিক আগ্রহ সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যবিষয় নির্বাচন করতে হবে।
- বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর আগ্রহের বিষয়ও পরিবর্তিত হয়। পাঠ্যবিষয় নির্বাচনের সময় শিক্ষককে এই ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
- পাঠ্যবিষয় যেমন খুব সহজ হবে না তেমনি আবার কঠিনও হবে না। কারণ, পাঠ্যবিষয় খুব সহজ হলে শিক্ষার্থী তা অপ্রয়োজনীয় মনে করবে। ফলে শেখার জন্য স্বাভাবিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে না। আবার পাঠ্যবিষয় যদি খুব কঠিন হয় তাহলে শিক্ষার্থী তা আয়ত্ত করতে না পেরে আগ্রহ হারাবে। পাঠদানের সময় শিক্ষক ‘সহজ থেকে জটিল' (from simple to complex), 'মূর্ত থেকে বিমূর্ত' (from concrete to abstract), 'জানা থেকে অজানা' (from known to unknown) প্রভৃতি শিক্ষানীতিগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন।
- শৈশবে খেলার মাধ্যমে শিশুকে সক্রিয় করে তুলে তার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে, ফলে তার ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার শিক্ষাটি সম্পন্ন হবে। শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার কল্পনাশক্তি, স্মৃতি, বিচারবুদ্ধি প্রভৃতি মানসিক প্রক্রিয়াগুলিকে উদ্দীপিত করে পাঠ্যবিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।
- শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে উপযুক্ত প্রেষণা সঞ্চার করে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে সচেতন করে তুলবেন। যার ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষা সম্পর্কে স্বাভাবিক আগ্রহের সৃষ্টি হবে।
- শিক্ষক পাঠ্যসূচি এমনভাবে নির্বাচন করবেন যাতে নতুন বিষয়ের সঙ্গে পূর্বে অর্জিত অভিজ্ঞতার সংযোগ রক্ষা হয়। এর ফলে কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ স্থায়ী রূপ পাবে।
- শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টির জন্য পাঠ্যবিষয়কে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে হবে। পাঠ্যবিষয়কে চিত্তাকর্ষক করে তোলার জন্য পাঠ্যবিষয়কে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীর কাছে উপস্থাপন করতে হবে, প্রয়োজনে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
- শিক্ষকের ব্যক্তিসত্তাও শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। শিক্ষকের হাসিখুশি মেজাজ, পোশাক-পরিচ্ছদ, কৌতুকবোধ, কাজের প্রতি আগ্রহ ও সক্রিয়তা শিক্ষার্থীকে পাঠে মনোযোগী করে তোলে। অর্থাৎ শিক্ষক নিজেকে শিক্ষার্থীদের নিকট মডেল হিসেবে তুলে ধরবেন।
- পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে ব্যাবহারিক জীবনের সংযোগ স্থাপন করতে পারলে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তাই বিষয়গুলিকে যতদূর সম্ভব ব্যাবহারিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষা দিলে তা শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টি করবে।
- শিক্ষামূলক প্রদীপন, যেমন—চলচ্চিত্র, চিত্র, ম্যাপ, মডেল, টিভি, বিভিন্ন খেলার উপকরণ ইত্যাদি ব্যবহার করে শিক্ষা দিলে তা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
Mention the Educational Significance of Attention.
➧ শিক্ষার সঙ্গে মনোযোগের সম্পর্ক নিবিড়। শিখন ও শিক্ষণের প্রথম শর্তই হল শিক্ষার্থীদের মনোযোগ। শিখনের আচরণমূলক ও জ্ঞানমূলক উভয় তত্ত্বেই মনোযোগের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানমূলক তত্ত্বে যদিও মনোযোগকে পৃথক কোনো মানসিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, তবে শিখন পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতার ক্ষেত্রে মনোযোগের গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কীভাবে আকর্ষণ করা যায় সে সম্পর্কীয় তথ্য এবং পাঠদানে তার প্রয়োগের কৌশল শিক্ষকের জানা বিশেষভাবে প্রয়োজন। নিম্নে কৌশলগুলি উল্লেখ করা হল-
- ব্যক্তিজীবনে মনোযোগের রূপ এক থাকে না। শৈশবকালে নিরপেক্ষ মনোযোগের প্রাধান্য দেখা যায়। এই স্তরে বস্তুর বৈশিষ্ট্যই মনোযোগের নির্ধারক। উপদেশ দিয়ে বা চাপ সৃষ্টি করে মনোযোগ আনার চেষ্টা করা উচিত নয়। শিক্ষণীয় বিষয়গুলি বা করণীয় কাজগুলির মধ্যে এমন সব বৈশিষ্ট্য আনতে হবে, যা শিশু-শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। শিশুর চাহিদা সম্পর্কে শিক্ষক জ্ঞাত হবেন। চাহিদাকে কেন্দ্র করে শিশুর শিখনকে বিন্যস্ত করতে হবে। খেলা শিশুর অন্যতম চাহিদা। প্রাক্প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে পাঠক্রম হবে খেলাভিত্তিক এবং শিক্ষণ পদ্ধতি হবে ক্রীড়াকেন্দ্রিক। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখা যায়। সুতরাং এই স্তরে শিক্ষার্থীদের উপদেশ বা কিছুটা চাপ সৃষ্টি করে মনোযোগ আনা সম্ভব।
- পরবর্তী স্তরে যখন ইচ্ছা সাপেক্ষে বা ঐচ্ছিক মনোযোগ দেখা যায় তখন বিশেষ জ্ঞান অর্জনের তাৎপর্য অর্থাৎ লক্ষ্য, " উদ্দেশ্য, ব্যাবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে অবহিত করে, আদর্শ রস (Sentiment) সৃষ্টি করে, উপদেশ প্রয়োজন হলে লঘু শাসন ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সচেষ্ট হতে হবে। প্রসঙ্গত মনোযোগের বিকাশের সঙ্গে সংগতি রেখে স্বতঃস্ফূর্ত মনোযোগের সহায়তায় ক্রমশ ঐচ্ছিক মনোযোগ সৃষ্টি করাই মনোবিজ্ঞানসম্মত। এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, জ্ঞানমূলক শিখনের ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত মনোযোগ বাঞ্ছিত এবং প্রাক্ষোভিক শিখনের ক্ষেত্রে ইচ্ছা প্রণোদিত মনোযোগের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
- বিষয়বস্তু নির্বাচনে শিক্ষককে লক্ষ রাখতে হবে যে, এটি যেন শিক্ষার্থীর মনোযোগের পরিসর অতিক্রম না করে। শব্দ, বাক্য যাতে শিক্ষার্থীদের গড় মনোযোগের পরিসরের মধ্যে থাকে সেদিকে পুস্তক রচয়িতাগণ বিশেষ নজর দেবেন। প্রয়োজন হলে বৃহৎ বাক্যকে ছোটো ছোটো সরল বাক্যে রূপান্তরিত করতে হবে।
- মনোযোগের নির্ধারকগুলিকে প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করতে হবে। তীব্রতা, স্পষ্টতা, নতুনত্ব, পুনরাবৃত্তি প্রভৃতি মনোযোগের বস্তুগত নির্ধারকগুলিকে শিখনীয় বিষয়গুলির বিন্যাসে গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের মুদ্রণগুলি যাতে উপযুক্ত পরিমাণে বড়ো হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে বৈচিত্র্য এনে, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের সাহায্যে শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা প্রয়োজন। পাঠ্য বিষয়বস্তুকে ইতিমধ্যে অর্জিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন করলে মনোযোগ আকর্ষণ আরও সহজ হবে।
- মনোযোগের পরিবর্তনশীলতা এবং সঞ্চালন সম্পর্কে শিক্ষককে সচেতন হতে হবে। মনোযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কিছুক্ষণ অন্তর এটি বিষয়ান্তরে গমন করে। আবার মনোযোগ দেওয়া সত্ত্বেও কিছু সময় অন্তর মনোযোগ অন্তর্হিত হয়। এই বৈশিষ্ট্য দুটি অর্থাৎ মনোযোগের পরিবর্তনশীলতা ও সঞ্চালনের প্রকৃতি ব্যক্তিভেদে এবং বয়সভেদে পরিবর্তিত হয়। শিক্ষক এই ব্যাপারে অবহিত হবেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনো কিছু অধিক সময়ব্যাপী আলোচনা না করে মাঝে মাঝে তিনি বিষয়ান্তরে চলে যাবেন।
- পরিশেষে বলা যায় যে, মনোযোগ আকর্ষণ শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত। তাই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য লিখিত ও অলিখিত সব ধরনের চেষ্টা করতে হবে যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর প্রতি সুস্থ এবং স্বাভাবিক মনোযোগ সৃষ্টি হয়।
Discuss Guilford's theory of intelligence.
➧1966 খ্রিস্টাব্দে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের পরীক্ষাগারে অধ্যাপক গিলফোর্ড ও তাঁর সহযোগীগণ এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। গিলফোর্ড-এর মতে, মন ত্রিমাত্রিক। মানুষের ধীশক্তির গঠনবিন্যাস অনেকটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক ঘনকের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ ঘনকের মতো। ঘনকের 3টি মাত্রার (Dimension) মতো ধীশক্তি গঠনের ক্ষেত্রেও 3টি মাত্রা বিবেচনা করা হয়—
(i) প্রক্রিয়ার মাত্রা (Operational Dimension)
(ii) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimension)
(iii) উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimension)
➧1966 খ্রিস্টাব্দে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের পরীক্ষাগারে অধ্যাপক গিলফোর্ড ও তাঁর সহযোগীগণ এই তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। গিলফোর্ড-এর মতে, মন ত্রিমাত্রিক। মানুষের ধীশক্তির গঠনবিন্যাস অনেকটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক ঘনকের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ ঘনকের মতো। ঘনকের 3টি মাত্রার (Dimension) মতো ধীশক্তি গঠনের ক্ষেত্রেও 3টি মাত্রা বিবেচনা করা হয়—
(i) প্রক্রিয়ার মাত্রা (Operational Dimension)
(ii) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimension)
(iii) উৎপাদনগত মাত্রা (Product Dimension)
(i) প্রক্রিয়ার মাত্রা (Operational Dimension) :
- প্রত্যাভিজ্ঞা : এই প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সচেতন বোধগম্যতার বিকাশ ঘটে।
- স্মৃতি (Memory): এই প্রাথমিক মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা কালের বিষয়কে সংরক্ষণ করা যায় ও চেনা যায়।
- অভিসারী চিন্তন (Divergent Thinking): এই অভিসারী বা কেন্দ্রাপসারী চিন্তনে বিভিন্নভাবে চিন্তা করা হয়, যার ফলে চিন্তার প্রসার এবং নতুন অন্বেষণের প্রসার ঘটে।
- কেন্দ্রানুগ চিত্তন (Convergent Thinking): প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যগুলি থেকে সাধারণ কেন্দ্রানুগ তথ্য নির্ণয় করা হয়।
- মূল্যায়ন (Evaluation): মূল্যায়ন প্রক্রিয়া হল—যা স্মরণ করা হয়, চিন্তা করা হয়, যা জানা যায়, যা উৎপাদন করা হয়—তার নৈর্ব্যক্তিকতা, উপযুক্ততা ও যথার্থতা বিচার করা।
(ii) বিষয়বস্তুগত মাত্রা (Content Dimension):
- চিত্রগত বা মূর্ত বিষয়বস্তু (Figural Content): যেসব বস্তুর প্রত্যক্ষণজাত অবয়ব আছে, যেমন—দৃশ্যগ্রাহ্য বাস্তব-আকার, আকৃতি, রং ইত্যাদি।
- প্রতীকরূপী বিষয়বস্তু (Symbolic Content): এটি হল অক্ষর সংখ্যা এবং অন্যান্য প্রথাগত সংকেত, যা বিন্যস্ত থাকে, যেমন–বর্ণমালা (Alphabet), সংখ্যা শ্রেণি ( Number Series), আঙ্কিক চিহ্ন (+,ㅡ, ✖=) ইত্যাদি।
- বিমূর্ত বা ভাষামূলক বিষয়বস্তু (Semantic Content): ভাষা স্বতন্ত্রভাবে বৌদ্ধিক ক্রিয়ার বাহন। ভাষা হল ধারণা (concept), চিন্তন (thinking) ইত্যাদির মাধ্যম।
- আচরণমূলক বিষয়বস্তু (Behavioural Content): এটি হল সামাজিক আচরণ, যার সাহায্যে নিজেদের ও অন্যান্যদের বোঝার এবং মেলামেশার ক্ষমতা বোঝায়।
(iii) উৎপাদনগত মাত্রা বা ফলশ্রুতি (Product Dimension):
- একক (Unit): বিচ্ছিন্ন, ক্ষুদ্রতম বা একটি মাত্র কোনো কিছুর ধারণা।
- শ্রেণি (Class): কোনো শব্দ বা ভাবধারাকে শ্রেণিবন্ধ করার ক্ষমতা।
- সম্পর্ক (Relations): এককগুলির মধ্যে বা শ্রেণিগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় বা সম্বন্ধবোধ।
- ব্যবস্থাপনা (System): তথ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত সংগঠিত সমষ্টিই হল সংগঠন। তাই ক্ষমতার সাহায্যে ব্যক্তি পুরোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতার সম্পর্কস্থাপন করে।
- পরিবর্তনশীলতা (Transformation): প্রাপ্ত তথ্যের বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তনই হল সঞ্চালন। এই পরিবর্তন গুণগত, অর্থগত, কার্যগত বা ব্যবহারগত বিভিন্ন দিকে সঞ্চালিত হতে পারে।
- তাৎপর্য বিচার (Implication): প্রত্যক্ষণজাত অভিজ্ঞতার অতীত যে বিমূর্ত ধারণা তাই অনুসিদ্ধান্ত।
Write a short note on verbal intelligence test.
➧1905 খ্রিস্টাব্দে বিশেঁ (Binet) সহকারী সাইমন (Simon)-এর সহযোগিতায় প্রথম অভীক্ষা প্রস্তুত করেন। শিক্ষ নিরপেক্ষ যুক্তি, কল্পনা, স্মৃতি, বিচার ইত্যাদি জটিল মানসিক ক্রিয়া প্রতিফলিত হয় এরকম 30টি প্রশ্নের সমন্বয়ই হল 1905 খ্রিস্টাব্দের বুদ্ধি অভীক্ষা। এই অভীক্ষার প্রকৃত নাম ছিল 'A Metrical Scale of Intelligence"। প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই অভীক্ষায় অনেক ত্রুটি ছিল। 1908 খ্রিস্টাব্দে বিনেঁ উক্ত বুদ্ধি অভীক্ষার সংস্কার করে নতুন নামে প্রকাশ করেন। এই অভীক্ষার নামকরণ হয় 'Development of intelligence in children'। এই নতুন সংস্করণে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়। প্রশ্ন সংখ্যা 30 থেকে দাঁড়ায় 58টি এবং ওইগুলিকে 3 থেকে 13 এই 11টি Age scale-এ বিভক্ত করা হয়। এই অভীক্ষার আর- একটি বৈশিষ্ট্য হল, এতে মানসিক বয়সের ধারণা স্থাপন করা হয়।
➧1905 খ্রিস্টাব্দে বিশেঁ (Binet) সহকারী সাইমন (Simon)-এর সহযোগিতায় প্রথম অভীক্ষা প্রস্তুত করেন। শিক্ষ নিরপেক্ষ যুক্তি, কল্পনা, স্মৃতি, বিচার ইত্যাদি জটিল মানসিক ক্রিয়া প্রতিফলিত হয় এরকম 30টি প্রশ্নের সমন্বয়ই হল 1905 খ্রিস্টাব্দের বুদ্ধি অভীক্ষা। এই অভীক্ষার প্রকৃত নাম ছিল 'A Metrical Scale of Intelligence"। প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই অভীক্ষায় অনেক ত্রুটি ছিল। 1908 খ্রিস্টাব্দে বিনেঁ উক্ত বুদ্ধি অভীক্ষার সংস্কার করে নতুন নামে প্রকাশ করেন। এই অভীক্ষার নামকরণ হয় 'Development of intelligence in children'। এই নতুন সংস্করণে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়। প্রশ্ন সংখ্যা 30 থেকে দাঁড়ায় 58টি এবং ওইগুলিকে 3 থেকে 13 এই 11টি Age scale-এ বিভক্ত করা হয়। এই অভীক্ষার আর- একটি বৈশিষ্ট্য হল, এতে মানসিক বয়সের ধারণা স্থাপন করা হয়।
1911 খ্রিস্টাব্দেই বিনেঁ মারা যান। তাঁর এই বুদ্ধির অভীক্ষা পাশ্চাত্য জগতে এক আলোড়ন এনে দেয়। বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আমেরিকায় এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। গডডার্ড (Goddard) 1908 খ্রিস্টাব্দের বিনে-র অভীক্ষার ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন সাধন করেন। স্টার্ন (Stern) বুদ্ধ্যঙ্ক (IQ) পদটি প্রবর্তন করেন। আমেরিকায় এরপর যেসব সংস্করণ প্রকাশিত হয় তার মধ্যে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টারম্যান (Terman)-এর প্রকাশিত অভীক্ষাটি উল্লেখযোগ্য। তিনি 1911 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বিনে-র অভীক্ষাটির একটি ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশ করেন 1916 খ্রিস্টাব্দে। এই সংস্করণে তিনি ব্যাপক পরিবর্তন আনেন।
1911 খ্রিস্টাব্দে টারম্যান বিনেঁ-র প্রমাণিত অভীক্ষার একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় 1937 খ্রিস্টাব্দে। তিনি এই অভীক্ষা মেরিল-এর সহায়তায় করেছিলেন বলে এটিকে টারম্যান-মেরিল সংস্করণও বলা হয়। এই অভীক্ষাটি বহুল প্রচলিত একটি বাচনিক অভীক্ষা। এই অভীক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ — (i) এই অভীক্ষাটিতে L-form ও M-form নামক একই মানবিশিষ্ট দুটি সমান্তরাল অভীক্ষা আছে। সমান্তরাল বলে একটিকে অপরটির প্রতিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। (ii) প্রতি অভীক্ষায় 129টি করে প্রশ্ন ছিল। (iii) এই অভীক্ষায় বয়স শ্রেণিকে প্রসারিত করা হয়েছে। এই অভীক্ষার সর্বনিম্ন বয়স হল 2 বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স হল উন্নত বয়স্ক III ইত্যাদি। (iv) এই অভীক্ষার একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়েছে যাতে প্রয়োজনবোধে তাড়াতাড়ি বুদ্ধি পরিমাপের জন্য এই সংক্ষিপ্ত অভীক্ষা প্রয়োগ করা যায়। (v) বুদ্ধ্যঙ্ক নির্ণয়ের সময় বয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণ বয়সকে সব সময় 15 বছর ধরতে হবে। কারণ, টারম্যান এবং মেরিল-এর মতে 15 বছরের পর বুদ্ধির বিকাশ হয় না। এই অভীক্ষায় সবচাইতে বেশি বুদ্ধ্যঙ্ক হল 152.
31. বুদ্ধির বহু উপাদান সম্পর্কিত গার্ডনারের তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
Discuss Gurdner’s theory of multiple intelligence.
➧ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক এবং মনস্তাত্ত্বিক ড. হাওয়ার্ড গার্ডনার 1983 খ্রিস্টাব্দে বহুমুখী বুদ্ধিতত্ত্বের (Theory of Multiple Intelligence, MI) কথা উল্লেখ করেন। স্পিয়ারম্যান-এর সাধারণ বুদ্ধির ধারণা এবং বুদ্ধিকে একটি সংখ্যা (বুদ্ধ্যঙ্ক) দ্বারা ব্যক্ত করার তীব্র বিরোধিতা তিনি করেন। তিনি মনে করেন, প্রতিটি বুদ্ধির একটি সূচক আছে যা পরস্পর নিরপেক্ষ। গার্ডেনার মনে করেন, মানুষের মধ্যে ন্যূনতম সাত প্রকারের বুদ্ধি আছে। নিম্নে সাত রকম বুদ্ধির উল্লেখ করা হলー (i) ভাষাগত বুদ্ধি (Linguistic Intelligence ): মনের ভাবকে প্রকাশ করতে এবং অন্যকে বুঝতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে ভাষাগত বুদ্ধি বলে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল লিখিত ও কথা বলা ভাষার প্রতি অনুভূতিশীলতা, ভাষা শিখন এবং লক্ষ্য অর্জনে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা। নিজেকে প্রকাশ করতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা এবং তথ্য সংরক্ষণের উপায় হিসেবে ভাষার ব্যবহার এই বুদ্ধির অন্তর্ভূক্ত। গার্ডনার-এর মতে লেখক, কবি, আইনজীবী এবং বক্তাগণের মধ্যে এই শ্রেণির বুদ্ধি অধিক পরিমাণে দেখা যায়। (ii) যুক্তি-গাণিতিক বুদ্ধি (Logical-mathematical Intelligence): যুক্তিভিত্তিক সমস্যা বিশ্লেষণে, গাণিতিক কাজে এবং বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানে এই বুদ্ধির প্রয়োজন। গার্ডনার-এর মতে, এই বুদ্ধি প্যাটার্ন অনুসন্ধানে, অবরোহী যুক্তিদানে এবং যুক্তিপূর্ণ চিন্তার প্রয়োজন হয়। এই বুদ্ধি বিজ্ঞান এবং গাণিতিক চিন্তনে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ যেভাবে কাজ করেন এই বুদ্ধি সেইভাবে সক্রিয় হয়। (iii) সংগীত বা ছন্দাশ্রয়ী বুদ্ধি (Musical/Rhythmic Intelligence): সংগীতের ভাষায় চিন্তা করা, সংগীতের তাল বোঝার এবং সেই নিয়ে কাজ করার ক্ষমতায় এই বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। যেসব ব্যক্তির এই বুদ্ধি অধিক তারা শুধু সহজেই সংগীত মনে রাখে তাই নয়, তারা মন থেকে সংগীত সৃষ্টি করতে পারে। (iv) শারীরিক বা দেহ-সঞ্চালনগত বুদ্ধি (Bodily/Kinesthetic Intelligence): শারীরিক বা দেহসঞ্চালনগত বুদ্ধি হল যে মানসিক ক্ষমতা যা দৈহিক সঞ্চালনগুলির সমন্বয় সাধন করে। অ্যাথলেটিক, সম্পাদনমুখী শিল্প বিশেষ করে সংগীত এবং নৃত্যে এই ধরনের বুদ্ধির অধিক প্রয়োগ হয়। (v) স্থানিক বুদ্ধি (Spatial Intelligence): মনের মধ্যে স্থানিক জগতের প্রতিচ্ছবি গড়ে তোলার ক্ষমতাই হল এই বুদ্ধি। একটি বৃহৎ মুক্ত বা বন্ধ ক্ষেত্রকে বোঝা এবং তাকে সঠিকভাবে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করার ক্ষমতা হল স্থানিক বুদ্ধি। একজন নাবিক বা একজন পাইলট মুক্ত সমুদ্র বা মুক্ত আকাশে জাহাজ বা উড়োজাহাজ চালায় বা বদ্ধ স্থানে একজন দাবাড়ু চাল দেয় সবই স্থানিক বুদ্ধির সাহায্যে। পরিবেশের কিছু বৈশিষ্ট্যকে জানতে, শ্রেণিকরণ করতে এবং সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এই বুদ্ধি ব্যক্তিকে সাহায্য করে। (vi) অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি (Intrapersonal Intelligence): নিজেকে বুঝতে নিজের অনুভূতি, ভয় এবং প্রেষণাকে সম্মান দিতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন তাকে বলে অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি। গার্ডনার-এর মতে, নিজেকে কার্যকারী মডেল হিসেবে বিবেচনা করা এবং তদনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালিত করা। (vii) আন্তর্ব্যক্তি বৃদ্ধি (Inter Personal Intelligence): অন্যান্য ব্যক্তির ইচ্ছা, প্রেষণা, উদ্দেশ্য বোঝার ক্ষমতাই হল। আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি। অন্যান্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে এই বুদ্ধি সাহায্য করে। এই বুদ্ধি আমাদের সকলেরই প্রয়োজন—তবে শিক্ষাবিদ, সেলসম্যান, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা ও পরামর্শদাতাদের বা যাদের অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
➧ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক এবং মনস্তাত্ত্বিক ড. হাওয়ার্ড গার্ডনার 1983 খ্রিস্টাব্দে বহুমুখী বুদ্ধিতত্ত্বের (Theory of Multiple Intelligence, MI) কথা উল্লেখ করেন। স্পিয়ারম্যান-এর সাধারণ বুদ্ধির ধারণা এবং বুদ্ধিকে একটি সংখ্যা (বুদ্ধ্যঙ্ক) দ্বারা ব্যক্ত করার তীব্র বিরোধিতা তিনি করেন। তিনি মনে করেন, প্রতিটি বুদ্ধির একটি সূচক আছে যা পরস্পর নিরপেক্ষ। গার্ডেনার মনে করেন, মানুষের মধ্যে ন্যূনতম সাত প্রকারের বুদ্ধি আছে। নিম্নে সাত রকম বুদ্ধির উল্লেখ করা হলー (i) ভাষাগত বুদ্ধি (Linguistic Intelligence ): মনের ভাবকে প্রকাশ করতে এবং অন্যকে বুঝতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে ভাষাগত বুদ্ধি বলে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল লিখিত ও কথা বলা ভাষার প্রতি অনুভূতিশীলতা, ভাষা শিখন এবং লক্ষ্য অর্জনে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা। নিজেকে প্রকাশ করতে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা এবং তথ্য সংরক্ষণের উপায় হিসেবে ভাষার ব্যবহার এই বুদ্ধির অন্তর্ভূক্ত। গার্ডনার-এর মতে লেখক, কবি, আইনজীবী এবং বক্তাগণের মধ্যে এই শ্রেণির বুদ্ধি অধিক পরিমাণে দেখা যায়। (ii) যুক্তি-গাণিতিক বুদ্ধি (Logical-mathematical Intelligence): যুক্তিভিত্তিক সমস্যা বিশ্লেষণে, গাণিতিক কাজে এবং বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানে এই বুদ্ধির প্রয়োজন। গার্ডনার-এর মতে, এই বুদ্ধি প্যাটার্ন অনুসন্ধানে, অবরোহী যুক্তিদানে এবং যুক্তিপূর্ণ চিন্তার প্রয়োজন হয়। এই বুদ্ধি বিজ্ঞান এবং গাণিতিক চিন্তনে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ যেভাবে কাজ করেন এই বুদ্ধি সেইভাবে সক্রিয় হয়। (iii) সংগীত বা ছন্দাশ্রয়ী বুদ্ধি (Musical/Rhythmic Intelligence): সংগীতের ভাষায় চিন্তা করা, সংগীতের তাল বোঝার এবং সেই নিয়ে কাজ করার ক্ষমতায় এই বুদ্ধির প্রয়োজন হয়। যেসব ব্যক্তির এই বুদ্ধি অধিক তারা শুধু সহজেই সংগীত মনে রাখে তাই নয়, তারা মন থেকে সংগীত সৃষ্টি করতে পারে। (iv) শারীরিক বা দেহ-সঞ্চালনগত বুদ্ধি (Bodily/Kinesthetic Intelligence): শারীরিক বা দেহসঞ্চালনগত বুদ্ধি হল যে মানসিক ক্ষমতা যা দৈহিক সঞ্চালনগুলির সমন্বয় সাধন করে। অ্যাথলেটিক, সম্পাদনমুখী শিল্প বিশেষ করে সংগীত এবং নৃত্যে এই ধরনের বুদ্ধির অধিক প্রয়োগ হয়। (v) স্থানিক বুদ্ধি (Spatial Intelligence): মনের মধ্যে স্থানিক জগতের প্রতিচ্ছবি গড়ে তোলার ক্ষমতাই হল এই বুদ্ধি। একটি বৃহৎ মুক্ত বা বন্ধ ক্ষেত্রকে বোঝা এবং তাকে সঠিকভাবে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করার ক্ষমতা হল স্থানিক বুদ্ধি। একজন নাবিক বা একজন পাইলট মুক্ত সমুদ্র বা মুক্ত আকাশে জাহাজ বা উড়োজাহাজ চালায় বা বদ্ধ স্থানে একজন দাবাড়ু চাল দেয় সবই স্থানিক বুদ্ধির সাহায্যে। পরিবেশের কিছু বৈশিষ্ট্যকে জানতে, শ্রেণিকরণ করতে এবং সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এই বুদ্ধি ব্যক্তিকে সাহায্য করে। (vi) অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি (Intrapersonal Intelligence): নিজেকে বুঝতে নিজের অনুভূতি, ভয় এবং প্রেষণাকে সম্মান দিতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন তাকে বলে অন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি। গার্ডনার-এর মতে, নিজেকে কার্যকারী মডেল হিসেবে বিবেচনা করা এবং তদনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালিত করা। (vii) আন্তর্ব্যক্তি বৃদ্ধি (Inter Personal Intelligence): অন্যান্য ব্যক্তির ইচ্ছা, প্রেষণা, উদ্দেশ্য বোঝার ক্ষমতাই হল। আন্তর্ব্যক্তি বুদ্ধি। অন্যান্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করতে এই বুদ্ধি সাহায্য করে। এই বুদ্ধি আমাদের সকলেরই প্রয়োজন—তবে শিক্ষাবিদ, সেলসম্যান, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতা ও পরামর্শদাতাদের বা যাদের অন্যান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করতে হয় তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
32. বুদ্ধির পরিমাপ প্রসঙ্গে আলোচনা করুন।
Discuss about measurement of intelligence.
➧ বুদ্ধি একটি পরিমাপযোগ্য মানসিক প্রক্রিয়া। সুদূর অতীতেও এর পরিমাপের চেষ্টা লক্ষ করা যায়, যদিও সেই প্রচেষ্টাগুলি বর্তমানে প্রায় পরিত্যক্ত। প্রাচীন পদ্ধতিগুলি যে পুরোপুরি অনুমানভিত্তিক তা নয়। কিছু যুক্তি এখানেও দেখা যায়। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফিজিয়োগনমি (Physiognomy), ফ্রেনোলজি (Phrenology), গ্রাফিয়োলজি (Graphiology) ও সেনসরি ডিক্রিমিনেশন (Sensory discrimination)। Physiognomy-তে ব্যক্তির মুখের অবয়বের সঙ্গে বুদ্ধির সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করা হত। প্রাচীনকালে মুখের গড়ন, ঠোঁট, নাক, চোখ, ভূ প্রভৃতি বিচার করে ব্যক্তির বুদ্ধি সম্পর্কে মন্তব্য করার প্রবণতা ছিল। এ সম্পর্কে Blackford এবং Newcomb লিখিত 'The Job, the Man, the Boss' পুস্তকে বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। Phrenology-তে মস্তিষ্কের পরিমাপের সঙ্গে বুদ্ধির সম্পর্ক নির্ণয় করা হত। বৃহৎ মস্তিষ্ক বৃহৎ বুদ্ধি—এই ধারণা প্রচলিত ছিল। গল (Gall) ও স্পারজা (Spurzheih) এই মতের প্রবর্তক ছিলেন। Graphiology-তে হস্তলিপির প্রকৃতি বিচার করে বুদ্ধি নিরূপণ করা হত। Hall ও Montgomery হস্তলিপির বিভিন্ন ধরনের উপর গবেষণা করেছিলেন। আবার Sensory Discrimination পদ্ধতিতে সংবেদনের পার্থক্য নিরূপণের ক্ষমতাকে ভিত্তি করে ব্যক্তির বুদ্ধি সম্পর্কে মন্তব্য করা হত। এক্ষেত্রে গ্যালটন (Galton) ও ক্যাটেল (Cattell)-এর মতে, যে ব্যক্তি যত সূক্ষ্মতার সঙ্গে সংবেদন পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম হবে তার বুদ্ধি তত বেশি বলে বিবেচিত হবে। সংবেদন পার্থক্য নিরূপণের জন্য Galton বিভিন্ন যন্ত্র Galton Bar Galton whistle ইত্যাদি নির্মাণ করেন।
➧ বুদ্ধি একটি পরিমাপযোগ্য মানসিক প্রক্রিয়া। সুদূর অতীতেও এর পরিমাপের চেষ্টা লক্ষ করা যায়, যদিও সেই প্রচেষ্টাগুলি বর্তমানে প্রায় পরিত্যক্ত। প্রাচীন পদ্ধতিগুলি যে পুরোপুরি অনুমানভিত্তিক তা নয়। কিছু যুক্তি এখানেও দেখা যায়। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফিজিয়োগনমি (Physiognomy), ফ্রেনোলজি (Phrenology), গ্রাফিয়োলজি (Graphiology) ও সেনসরি ডিক্রিমিনেশন (Sensory discrimination)। Physiognomy-তে ব্যক্তির মুখের অবয়বের সঙ্গে বুদ্ধির সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করা হত। প্রাচীনকালে মুখের গড়ন, ঠোঁট, নাক, চোখ, ভূ প্রভৃতি বিচার করে ব্যক্তির বুদ্ধি সম্পর্কে মন্তব্য করার প্রবণতা ছিল। এ সম্পর্কে Blackford এবং Newcomb লিখিত 'The Job, the Man, the Boss' পুস্তকে বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। Phrenology-তে মস্তিষ্কের পরিমাপের সঙ্গে বুদ্ধির সম্পর্ক নির্ণয় করা হত। বৃহৎ মস্তিষ্ক বৃহৎ বুদ্ধি—এই ধারণা প্রচলিত ছিল। গল (Gall) ও স্পারজা (Spurzheih) এই মতের প্রবর্তক ছিলেন। Graphiology-তে হস্তলিপির প্রকৃতি বিচার করে বুদ্ধি নিরূপণ করা হত। Hall ও Montgomery হস্তলিপির বিভিন্ন ধরনের উপর গবেষণা করেছিলেন। আবার Sensory Discrimination পদ্ধতিতে সংবেদনের পার্থক্য নিরূপণের ক্ষমতাকে ভিত্তি করে ব্যক্তির বুদ্ধি সম্পর্কে মন্তব্য করা হত। এক্ষেত্রে গ্যালটন (Galton) ও ক্যাটেল (Cattell)-এর মতে, যে ব্যক্তি যত সূক্ষ্মতার সঙ্গে সংবেদন পার্থক্য নিরূপণে সক্ষম হবে তার বুদ্ধি তত বেশি বলে বিবেচিত হবে। সংবেদন পার্থক্য নিরূপণের জন্য Galton বিভিন্ন যন্ত্র Galton Bar Galton whistle ইত্যাদি নির্মাণ করেন।
উপরোক্ত প্রাচীন মতবাদগুলি বিজ্ঞানভিত্তিক না হওয়ায় সমালোচনার সম্মুখীন হয়। মনস্তত্ত্ববিদ ও শিক্ষাবিদগণ বিজ্ঞানভিত্তিক বুদ্ধি পরিমাপে সচেষ্ট হলেন। এইরকম একটি অবস্থায় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুদ্ধি অভীক্ষার জন্ম হয়। ফরাসি দেশে বুদ্ধি অভীক্ষার জন্ম। উদ্ভাবক হলেন ফরাসি দেশের মনস্তত্ত্ববিদ স্যার আলফ্রেড বিনেঁ (Sir Alfred Binet)। ঘটনাটি হল—তদানীন্তন ফরাসি দেশের শিক্ষাবিভাগ কিছু কিছু ছাত্রদের একাধিকবার অকৃতকার্যতায় উদ্বিগ্ন হলেন। এইসব শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্যতার কারণ ও তার প্রতিকারের সুপারিশের জন্য তাঁরা একটি কমিশন গঠন করলেন। ওই কমিশনের অন্যান্যদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক রূপে আলফ্রেড বিনে ও চিকিৎসক হিসেবে সাইমন (Simon) যোগদান করেন। বিনে অনুমান করলেন, মানসিক কোনো শক্তির স্বল্পতাই অকৃতকার্যতার মূল কারণ। প্রশ্ন হল, কীভাবে সেই শক্তি পরিমাপ করা যাবে। তখনকার প্রচলিত পদ্ধতি যেমন— স্মৃতিশক্তি, মনোযোগের বিস্তার, প্রত্যক্ষণের হার ও নির্ভুলতা এবং সংবেদনের পার্থক্য নিরূপণের উপর তিনি ভরসা করতে পারলেন না।
তিনি নিজেই সেই মানসিক শক্তি পরিমাপের জন্য উচ্চস্তরের মানসিক প্রক্রিয়া, যেমন—যুক্তি, কল্পনা, বিচারকরণ ইত্যাদির সাহায্য নিলেন। শিক্ষা নিরপেক্ষ, কিন্তু মানসিক প্রক্রিয়াগুলি প্রতিফলিত হয় এমন কয়েকটি প্রশ্ন নিয়েই বুদ্ধি অভীক্ষা গঠিত। সেই থেকে বিজ্ঞানসম্মত বুদ্ধি অভীক্ষা প্রস্তুত হতে লাগল। 1905 খ্রিস্টাব্দ থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের বহু বুদ্ধি অভীক্ষা তৈরি হয়েছে। বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে অভীক্ষাগুলিকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণিকরণ করা যেতে পারে।
33. থাস্টোন-এর তত্ত্ব অনুযায়ী যে-কোনো পাঁচটি প্রাথমিক মানসিক শক্তির আলোচনা করুন।
Discuss factors or primary mental abilities proposed by Thurstone in his theory of intelligence.
➧ থার্স্টোন তাঁর বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত করেছেন যে, মানসিক ক্ষমতা পরস্পর নিরপেক্ষ সাতটি প্রাথমিক মানসিক উপাদান দ্বারা গঠিত। থার্স্টোন 56 রকমের বিভিন্ন বুদ্ধির অভীক্ষা 240 জন শিক্ষার্থীর উপর প্রয়োগ করেন। এইসব পরীক্ষার ফলাফলের উপাদান বিশ্লেষণ করে থার্স্টোন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, বিভিন্ন বৌদ্ধিক কাজের মধ্যে সহগতি আছে এটি ঠিক, কিন্তু তার পরিমাণ এত কম যে, তার থেকে তাদের মধ্যে একটি সাধারণ উপাদান আছে,
এই সিদ্ধান্ত করা যায় না। বরং এই বিশ্লেষণ থেকে বলা যায় যে, কতকগুলি কাজ একটি শ্রেণিতে, দলবদ্ধ অবস্থায় থাকে। একই দলভুক্ত কাজগুলি একই মানসিক ক্ষমতার পরিচায়ক। তিনি নিম্নলিখিত 7 টি উপাদানের কথা বলেছেন—
➧ থার্স্টোন তাঁর বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল থেকে সিদ্ধান্ত করেছেন যে, মানসিক ক্ষমতা পরস্পর নিরপেক্ষ সাতটি প্রাথমিক মানসিক উপাদান দ্বারা গঠিত। থার্স্টোন 56 রকমের বিভিন্ন বুদ্ধির অভীক্ষা 240 জন শিক্ষার্থীর উপর প্রয়োগ করেন। এইসব পরীক্ষার ফলাফলের উপাদান বিশ্লেষণ করে থার্স্টোন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, বিভিন্ন বৌদ্ধিক কাজের মধ্যে সহগতি আছে এটি ঠিক, কিন্তু তার পরিমাণ এত কম যে, তার থেকে তাদের মধ্যে একটি সাধারণ উপাদান আছে,
এই সিদ্ধান্ত করা যায় না। বরং এই বিশ্লেষণ থেকে বলা যায় যে, কতকগুলি কাজ একটি শ্রেণিতে, দলবদ্ধ অবস্থায় থাকে। একই দলভুক্ত কাজগুলি একই মানসিক ক্ষমতার পরিচায়ক। তিনি নিম্নলিখিত 7 টি উপাদানের কথা বলেছেন—
(i) স্থান প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা (Spatial ability): বুদ্ধির একটি প্রধান শর্ত হল প্রত্যক্ষণজনিত ক্ষমতা। স্থান প্রত্যক্ষণ বলতে বোঝায় দুটি বস্তুর মধ্যে দূরত্ব, গঠন, আকৃতি প্রভৃতি। স্থান প্রত্যক্ষণের ক্ষমতার দ্বারা ব্যক্তি বস্তুর অবস্থানজনিত বৈশিষ্ট্য, বৈচিত্র্য, পরিমাপ ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যাসমাধান করতে পারে। (ii) সাধারণ প্রত্যক্ষণের ক্ষমতা (Perceptual ability): ব্যক্তি গ্রাহক ইন্দ্রিয়ের দ্বারা পরিবেশ থেকে যে সংবেদন গ্রহণ করে, প্রত্যক্ষণের মাধ্যমেই তার অর্থ ব্যক্তির কাছে প্রতিভাত হয়। প্রত্যক্ষণ দ্রুত হলে তাই ব্যক্তির পরিবেশ থেকে তথ্যসংগ্রহের হার বৃদ্ধি পায়। ফলে বৌদ্ধিক প্রক্রিয়াগুলি উন্নততর হয় এবং সমস্যাসমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই কারণেই শিশু শিক্ষায় প্রত্যক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। (iii) সংখ্যা নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা (Numerical ability): বুদ্ধির এই উপাদান সংখ্যাগত সমস্যাসমাধানে সাহায্য করে। যার মধ্যে বুদ্ধির এই উপাদান থাকে তার গণিতে দক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (iv) শব্দ ব্যবহারের ক্ষমতা (Word fluency): শব্দের সঠিক প্রয়োগের ক্ষমতা বুদ্ধির একটি অন্যতম উপাদান। বুদ্ধির এই উপাদানের সাহায্যে ব্যক্তি ভাষা বা শব্দ সম্পর্কে ধারণার সঙ্গে সঙ্গে সঠিকভাবে তা প্রয়োগও করতে পারে। (v) স্মৃতি (Memory): মানসিক ক্ষমতা প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হল স্মৃতি। স্মৃতিতে ব্যক্তির অভিজ্ঞতাজনিত তথ্য সংরক্ষিত থাকে। স্মৃতিতে সংরক্ষিত তথ্যগুলির পুনরুদ্রেক করে ব্যক্তি কোনো সমস্যাসমাধান করার চেষ্টা করে। (vi) ভাষার দক্ষতা (Verbal fluency): ভাষার দক্ষতা বুদ্ধির পরিচায়ক। শিশুর ধারণা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তার ভাষার বিকাশ ঘটে। প্রতিটি ধারণার সঙ্গে শিশু একটি করে শব্দ যোগ করে। ভাষার দক্ষতার ফলেই শিশু বিমূর্ত ধারণা প্রকাশ করতে পারে। (vii) যুক্তিশক্তি (Reasoning): বুদ্ধির একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হল যুক্তিশক্তি। যুক্তিশক্তির ফলে শিশুর বিচারকরণ ক্ষমতা তৈরি হয়। এই ক্ষমতার ফলে শিশু কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারে এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে। যে ব্যক্তির এই ক্ষমতা যত বেশি সে তত সহজে জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারে। থাস্টোন-এর মতে, উপরোক্ত প্রাথমিক উপাদানগুলি বিভিন্ন বৌদ্ধিক কাজের মধ্যে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে। কোনো মানসিক সক্রিয়তাবিশিষ্ট বিশেষ কাজে এক বা একাধিক এই বিশেষধর্মী মানসিক শক্তির প্রয়োজন। থাস্টোন-এর এই তত্ত্ব নিয়ে নানা বিরূপ সমালোচনা হলেও বর্তমানে অনেক বুদ্ধির অভীক্ষাই এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গঠন করা হচ্ছে।
34. কীভাবে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ায় বহুমুখী বুদ্ধির তত্ত্ব শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করা সম্ভব?
How can multiple intelligences be applied in the teaching-learning process?
➧ শিক্ষাক্ষেত্রে গার্ডনার-এর তত্ত্ব ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই সর্বপ্রথম বলেন যে, যে-কোনো প্রকার কাজের জন্য বুদ্ধির প্রয়োজন। কাজেই শিক্ষার্থীদের যথাযথ বিকাশের জন্য তাদের মধ্যে সুপ্ত বৌদ্ধিক ক্ষমতার জাগরণ প্রয়োজন। নিম্নলিখিত উপায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি প্রয়োগ করা যেতে পারে - (i) যে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাষা, ধ্বনি ইত্যাদি সম্পর্কে আগ্রহ আছে, তাদেরকে নিজে নিজে কোনো বিষয় সম্পর্কে মতামত লেখা, রিপোর্ট লেখা, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ইত্যাদিতে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। (ii) নৃত্য, গীত, সুর-ছন্দ-তাল সৃষ্টি সকল কিছুর জন্যই বুদ্ধি প্রয়োজন। কাজেই যে সকল শিক্ষার্থী পাঠ্যবিষয়ে ততটা মনোযোগী নয় কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে দক্ষ, তাদেরকেও শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষ থেকে উৎসাহদান একান্ত প্রয়োজন। (iii) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রেষণা, শক্তি, দুর্বলতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে যদি সে ভবিষ্যতে সাফল্যলাভ করতে চায়। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের সাহায্য করতে পারেন এবং তাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে সেগুলির উন্নতিতে সহায়তা দান করতে পারেন। (iv) শিক্ষাক্ষেত্রে বরাবরই ভাষামূলক এবং যুক্তি-গাণিতিক বুদ্ধি সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে Gardner অন্যান্য বুদ্ধিগুলির গুরুত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। (v) শিক্ষণবিজ্ঞান (Pedagogy) এবং পাঠক্রম উভয়ক্ষেত্রেই Gardner-এর তত্ত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, শিশু শিক্ষার্থীদের উপর প্রথম থেকেই পাঠক্রমের এত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা কোনো কিছু সম্পর্কেই প্রকৃত
বোধ লাভ করে না।
➧ শিক্ষাক্ষেত্রে গার্ডনার-এর তত্ত্ব ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। তিনিই সর্বপ্রথম বলেন যে, যে-কোনো প্রকার কাজের জন্য বুদ্ধির প্রয়োজন। কাজেই শিক্ষার্থীদের যথাযথ বিকাশের জন্য তাদের মধ্যে সুপ্ত বৌদ্ধিক ক্ষমতার জাগরণ প্রয়োজন। নিম্নলিখিত উপায়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি প্রয়োগ করা যেতে পারে - (i) যে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে ভাষা, ধ্বনি ইত্যাদি সম্পর্কে আগ্রহ আছে, তাদেরকে নিজে নিজে কোনো বিষয় সম্পর্কে মতামত লেখা, রিপোর্ট লেখা, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ইত্যাদিতে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। (ii) নৃত্য, গীত, সুর-ছন্দ-তাল সৃষ্টি সকল কিছুর জন্যই বুদ্ধি প্রয়োজন। কাজেই যে সকল শিক্ষার্থী পাঠ্যবিষয়ে ততটা মনোযোগী নয় কিন্তু সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে দক্ষ, তাদেরকেও শিক্ষক-শিক্ষিকার পক্ষ থেকে উৎসাহদান একান্ত প্রয়োজন। (iii) শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত প্রেষণা, শক্তি, দুর্বলতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে যদি সে ভবিষ্যতে সাফল্যলাভ করতে চায়। এক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের সাহায্য করতে পারেন এবং তাদের দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে সেগুলির উন্নতিতে সহায়তা দান করতে পারেন। (iv) শিক্ষাক্ষেত্রে বরাবরই ভাষামূলক এবং যুক্তি-গাণিতিক বুদ্ধি সর্বাধিক প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে Gardner অন্যান্য বুদ্ধিগুলির গুরুত্বকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। (v) শিক্ষণবিজ্ঞান (Pedagogy) এবং পাঠক্রম উভয়ক্ষেত্রেই Gardner-এর তত্ত্ব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, শিশু শিক্ষার্থীদের উপর প্রথম থেকেই পাঠক্রমের এত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় যে, তারা কোনো কিছু সম্পর্কেই প্রকৃত
বোধ লাভ করে না।
35. দ্বি-উপাদান তত্ত্বের শিক্ষামূলক তাৎপর্য উল্লেখ করুন।
Mention the educational implications of two factor theory.
➧ বুদ্ধির প্রকৃতি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে স্পিয়ারম্যান প্রথমে চার প্রকার সক্ষমতা পরিমাপ করার জন্য চারটি অভীক্ষা একই দলের উপর প্রয়োগ করেন। এই অভীক্ষা CAVD Test নামে পরিচিত (Sentence Coprehension-C, Arithmetic Reasoning-A, Vocabulary-V and Following Direction D)। অভীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত চার প্রকার পরিমাপের প্রত্যেকটির সঙ্গে প্রত্যেকের সহগতি (Correlation) নির্ণয় করে দেখা গেল প্রত্যেক পরিমাপের সঙ্গে প্রত্যেকের অনেকটা ইতিবাচক সম্পর্ক আছে, কিন্তু কোনো দুটি অভীক্ষাই একই সক্ষমতা পরিমাপ করে না। এরপর উৎপাদক বিশ্লেষণ (Factor Analysis) নামক গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি বুদ্ধির উপাদানগুলি চিহ্নিত করেন।
➧ বুদ্ধির প্রকৃতি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে স্পিয়ারম্যান প্রথমে চার প্রকার সক্ষমতা পরিমাপ করার জন্য চারটি অভীক্ষা একই দলের উপর প্রয়োগ করেন। এই অভীক্ষা CAVD Test নামে পরিচিত (Sentence Coprehension-C, Arithmetic Reasoning-A, Vocabulary-V and Following Direction D)। অভীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত চার প্রকার পরিমাপের প্রত্যেকটির সঙ্গে প্রত্যেকের সহগতি (Correlation) নির্ণয় করে দেখা গেল প্রত্যেক পরিমাপের সঙ্গে প্রত্যেকের অনেকটা ইতিবাচক সম্পর্ক আছে, কিন্তু কোনো দুটি অভীক্ষাই একই সক্ষমতা পরিমাপ করে না। এরপর উৎপাদক বিশ্লেষণ (Factor Analysis) নামক গাণিতিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি বুদ্ধির উপাদানগুলি চিহ্নিত করেন।
তাঁর যুক্তি ছিল যেহেতু CAVD অভীক্ষার সবকয়টিই স্বতন্ত্রভাবে বুদ্ধি পরিমাপ করে সেহেতু এদের মধ্যে ধনাত্মক সহগতি (Positive correlation) থাকবে। আর যদি সবকয়টি পরিমাপের কোনো সাধারণ উৎপাদক থাকে তবে ওই সহগতির মানগুলি একটি বিশেষ গাণিতিক শর্তপূরণ করবে। এই যুক্তি এবং প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য বিচার করে তিনি সিদ্ধান্ত করেন, বুদ্ধির দুই প্রকার উপাদান আছে। যথা— (i) সাধারণ উপাদান (General Factor): বুদ্ধির এই উপাদান সমস্তরকম বৌদ্ধিক ক্রিয়ার জন্য অবশ্য প্রয়োজন। এই উপাদানের নাম দেওয়া হয় G-factor বা সাধারণ বুদ্ধি (General ability or General Intelligence) (ii) বিশেষ উপাদান (Specific factor): এই জাতীয় উপাদান সংখ্যায় অনেক কিন্তু বিশেষ বিশেষ বৌদ্ধিক সক্রিয়তার জন্য স্বতন্ত্র বিশেষ উপাদান আছে। এইগুলির নাম দেওয়া হয় বিশেষ সক্ষমতা। স্পিয়ারম্যান-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেক ধরনের বৌদ্ধিক সক্রিয়তার জন্য নির্দিষ্ট S-উপাদান বিশেষ সক্ষমতা হিসেবে স্বতন্ত্রভাবে পরিমাপযোগ্য। কিন্তু সাধারণ উপাদান একবার পরিমাপ করা হলে কোনো ব্যক্তি কতটা বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতী তার মান জানা যায়।
36. বুদ্ধ্যঙ্ক পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করুন।
Mention the causes of changes in IQ.
➧ অনেকের ধারণা মানুষের বুদ্ধিকে প্রশিক্ষণ দ্বারা বৃদ্ধি করা সম্ভব। B Schmidt, BL William, HM Skuls বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এই সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান মনোবিজ্ঞান মনে করেন বুদ্ধি যেহেতু জন্মগত একটি মানসিক ক্ষমতা সেহেতু তার পরিমাপের সূচক ও সব বয়সে সমান থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুদ্ধ্যঙ্কের যে পার্থক্য দেখা গেছে তা বাহ্যত। তার অন্যান্য কিছু কারণ আছে। বুদ্ধির পরিবর্তনশীল প্রকৃতির জন্য নয়। বস্তুত কোনো মানসিক অভীক্ষাই সম্পূর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ কোনো বুদ্ধি অভীক্ষা কৃষ্টিমূলক অভিজ্ঞতাকে বাদ দিয়ে তৈরি করা যায় না। তা ছাড়া পরীক্ষার্থীর দৈহিক, প্রাক্ষোভিক সত্তা, পরীক্ষকের ব্যক্তিগত ত্রুটি, এগুলি ধ্রুবক রাখা সম্ভব নয়। ফলে বুদ্ধির সূচক IQ পরিমাপে ত্রুটি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ উল্লেখ থাকে। যেমন—1937-এর Stanford সংস্করণের সম্ভাব্য ত্রুটি 3-4 একক অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক যদি 100 হয় তবে বুদ্ধ্যঙ্কের সীমা 96-104-এর মধ্যে হতে পারে। এই পরিবর্তন বুদ্ধ্যঙ্কের অস্থিরতার পরিচায়ক নয়।
➧ অনেকের ধারণা মানুষের বুদ্ধিকে প্রশিক্ষণ দ্বারা বৃদ্ধি করা সম্ভব। B Schmidt, BL William, HM Skuls বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে এই সিদ্ধান্ত ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমান মনোবিজ্ঞান মনে করেন বুদ্ধি যেহেতু জন্মগত একটি মানসিক ক্ষমতা সেহেতু তার পরিমাপের সূচক ও সব বয়সে সমান থাকে। বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুদ্ধ্যঙ্কের যে পার্থক্য দেখা গেছে তা বাহ্যত। তার অন্যান্য কিছু কারণ আছে। বুদ্ধির পরিবর্তনশীল প্রকৃতির জন্য নয়। বস্তুত কোনো মানসিক অভীক্ষাই সম্পূর্ণভাবে নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ কোনো বুদ্ধি অভীক্ষা কৃষ্টিমূলক অভিজ্ঞতাকে বাদ দিয়ে তৈরি করা যায় না। তা ছাড়া পরীক্ষার্থীর দৈহিক, প্রাক্ষোভিক সত্তা, পরীক্ষকের ব্যক্তিগত ত্রুটি, এগুলি ধ্রুবক রাখা সম্ভব নয়। ফলে বুদ্ধির সূচক IQ পরিমাপে ত্রুটি হতে পারে। তবে তার পরিমাণ উল্লেখ থাকে। যেমন—1937-এর Stanford সংস্করণের সম্ভাব্য ত্রুটি 3-4 একক অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির বুদ্ধ্যঙ্ক যদি 100 হয় তবে বুদ্ধ্যঙ্কের সীমা 96-104-এর মধ্যে হতে পারে। এই পরিবর্তন বুদ্ধ্যঙ্কের অস্থিরতার পরিচায়ক নয়।
তবে অনেক মনোবিদ এর চেয়েও বেশি পরিমাণ পরিবর্তন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে লক্ষ করেছেন। ওই পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক অবস্থাই দায়ী। যে সমস্ত কারণে বুদ্ধ্যঙ্কের আপাত পরিবর্তন হয় সেগুলি হল—
(i) দৈহিক কারণ: অনেক সময় অভীক্ষা প্রয়োগের সময় শিক্ষার্থীর কোনো বিশেষ দৈহিক অসংগতিকে অগ্রাহ্য করা হয়। পরে পরীক্ষা করতে যাওয়ার সময় তা যদি থেকে যায় তাহলে বুদ্ধ্যঙ্কের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। প্রক্ষোভগত কারণ: বুদ্ধির কোনো অভীক্ষা গ্রহণ করার সময় শিক্ষার্থী যদি ভীত হয় বা রেগে যায় বা নার্ভাস হয় তাহলে বুধ্যঙ্কের উপর তার প্রভাব বিস্তার করে। (ii) পরীক্ষক সংক্রান্ত কারণ: অনেক সময় পরীক্ষকের ব্যক্তিগত ত্রুটির জন্য বুদ্ধ্যঙ্কের পরিবর্তন হয়। পরীক্ষকের ত্রুটি বুদ্ধির পরিমাপে অবাঞ্ছিত প্রভাব বিস্তার করে। (iii) পরীক্ষা পরিস্থিতি: অনেক সময় পরীক্ষা পরিস্থিতি আদর্শ না হওয়ার জন্য বুদ্ধির পরিমাপ সঠিকভাবে অভীক্ষার ত্রুটি: অভীক্ষার ত্রুটির জন্যও বুদ্ধ্যঙ্কের পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যে অভীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়নি তা থেকে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না। (iv) কৃষ্টিগত কারণ: কৃষ্টিগত (Cultural) প্রভাব বুদ্ধির অভীক্ষার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সবশেষে এই মন্তব্য করা যায় যে, আদর্শ শর্তসাপেক্ষে সম্ভাব্য ত্রুটির সীমার মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্ক ব্যক্তিজীবনে স্থির থাকে। সবশেষে মন্তব্য করা যায় যে আদর্শ শর্তসাপেক্ষে সম্ভাব্য ত্রুটিই সীমানার মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্ক ব্যক্তি জীবনে স্থির থাকে।
No comments
Hi Welcome ....