☀ ☀ অধ্যায় ভৌত পরিবেশ (তাপ) একঝলকে : তাপ হল একরকম শক্তি যা গ্রহণ করলে সাধারণভাবে বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বর্জন করলে শীতল হয়ে যায়।...
☀☀ অধ্যায় ভৌত পরিবেশ (তাপ) একঝলকে :
তাপ হল একরকম শক্তি যা গ্রহণ করলে সাধারণভাবে বস্তু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বর্জন করলে শীতল হয়ে যায়। তাপের আকার নেই, আয়তন নেই, ভর নেই অথচ তাপ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, কাজ করবার সামর্থ্য জোগায় এবং রূপান্তরিত হতে পারে। তাই তাপ একপ্রকার শক্তি কোনো বস্তুর মধ্যস্থ মোট তাপকে মাপা যায় না। কিন্তু বস্তুকে গরম করলে বস্তু যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে অর্থাৎ, ‘বস্তু কর্তৃক গৃহীত তাপ’ এবং ঠান্ডা করলে যে পরিমাণ তাপ বর্জন করে অর্থাৎ, ‘বস্তু কর্তৃক বর্জিত তাপ’ পরিমাপ করা যায়। তাপের একক : SI পদ্ধতিতে জুল (J) এবং CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি (cal)।
☀ উষ্ণতা হল বস্তুর এমন এক তাপীয় অবস্থা যা স্থির করে যে একটি বস্তু অন্য বস্তুকে তাপ দেরে, না অন্য বস্তু থেকে তাপ নেবে। উষ্ণতার একক SI পদ্ধতিতে কেলভিন (K), CGS পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক ডিগ্রি সেলসিয়াস (°C), FPS পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক ডিগ্রি ফারেনহাইট (°F)।
☀ যে যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর উষ্ণতা মাপা হয় তাকে থার্মোমিটার বলে। গ্রিক ভাষায় thermos = উত্তাপ, metron = পরিমাপ। উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাসের জন্য কোনো বস্তু কতটা তাপ গ্রহণ করবে বা বর্জন করবে তা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর : (i) বস্তুর ভর, (ii) বস্তুর উন্নতা বৃদ্ধি বা হ্রাস এবং (iii) বস্তুর উপাদান বা পদার্থ।
☀ যে-কোনো পদার্থই তার এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় বদলে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে কিছু পরিমাণ তাপ সংগ্রহ করে বা বর্জন করে। কিন্তু এই তাপ ওই পদার্থের উষ্ণতার কোনো পরিবর্তন ঘটায় না এই তাপকে লীন তাপ বলে। CGS পদ্ধতিতে লীন তাপের একক ক্যালোরি/গ্রাম (cal/g)।
☀ জীবের বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় তাপ ও উন্নতার যথেষ্ট প্রভাব আছে। গরমের দিনে আমাদের শরীর থেকে ঘাম বেরোনোর হার বেড়ে যায়। কুকুরের জিভ থেকে লালা পড়ে। শীতপ্রধান অঞ্চলের কুকুর ও মেরু ভালুকের দেহ ঘন লোমে ঢাকা থাকে। আবার, গরম বালিতে গিরগিটি, সাপের মতো ঠান্ডা রক্তের প্রাণীরা রোদ পোহায়। খুব গরমে অনেক সময় চারাগাছ শুকিয়ে যায়। এসব ঘটনা পরিবেশে তাপ ও উষ্ণতার তারতম্যের জন্যই ঘটে।
এক সময়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল তাপ একপ্রকার ভরহীন অদৃশ্য কণা দিয়ে গঠিত। এই কণাগুলির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ক্যালোরিক’ (Caloric) বলা হয়েছিল বস্তু এই ক্যালোরিক কণা গ্রহণ করলে গরম হয়ে ওঠে এবং বর্জন করলে ঠান্ডা হয়ে যায়। পরবর্তীকালে রামফোর্ড, হামফ্রে ডেভি, জুল প্রমুখ বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে পাওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যালোরিক মতবাদ ভুল বলে প্রমাণিত হয়। জানা যায় তাপ কোনো জড় পদার্থ নয়। বিজ্ঞানী কাউন্ট রামফোর্ড প্রথম জানান তাপ একটি শক্তি।
- থার্মোমিটারের বেলনাকার বদ্ধ প্রান্তে একটি ছোটো ফাঁকা কুণ্ডও রাখা হয়, তার কারণ অনেক সময় অসতর্কতার জন্য যদি সর্বোচ্চ সীমা পেরিয়েও পারদসূত্র ওঠে তবে ওই ফাঁকা কুণ্ডে জমা পরে থার্মেমিটার ফেটে যায় না।
- সেলসিয়াস স্কেলকে আগে সেন্টিগ্রেড স্কেল বলা হত। কারণ সেলসিয়াস স্কেলে প্রাথমিক অন্তরকে সমান 100 ভাগে ভাগ করা হয়। আর ল্যাটিন ভাষায় centum 100, gradus = ধাপ।
- SI পদ্ধতিতে ব্যবহৃত উষ্ণতামাপক স্কেলটিকে বলা হয় উষ্ণতার পরম স্কেল বা কেলভিন স্কেল। কেলভিন স্কেলে উষ্ণতা প্রকাশ করার সময় ডিগ্রি চিহ্ন দেওয়া হয় না। − 273°C উষ্ণতায় সকল গ্যাসের আয়তন শূন্য হয়। এই উষ্ণতাকে পরমশূন্য উষ্ণতা বলে।
- পরমশূন্য উষ্ণতাকে (−273°C) শূন্য ধরে এবং উষ্ণতার প্রতি ডিগ্রি ব্যবধানকে 1°C উষ্ণতা পরিবর্তনের সমান ধরে, বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন উষ্ণতার যে স্কেল প্রনয়ন করেন, তাকে উষ্ণতার কেলভিন স্কেল বা পরম স্কেল বলে। এই স্কেলে 1°C উষ্ণতাকে 1K দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
1 ডিগ্রি সেলসিয়াস বা 1°C-এর দ্বারা একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে বোঝায়, সেলসিয়াস স্কেলে যার মান 1°। কিন্তু 1 সেলসিয়াস ডিগ্রি বা 1 C°-এর অর্থ হল সেলসিয়াস স্কেলে 1° উষ্ণতা বৃদ্ধি বা হ্রাস। সুতরাং, 1° C এবং 1 Cº-এর অর্থ এক নয়।
✹✹ গুরুত্বপূর্ণ নোটস মার্ক = ২/৩ ✹✹
১. থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধা কী?
➛ থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহারের সুবিধা : (i) পারদ তাপের সুপরিবাহী, এর কোনো অংশে তাপ প্রয়োগ করলে খুব তাড়াতাড়ি ওই তাপ সমগ্র অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সহজেই বস্তুর সমান উষ্ণতাপায়। (ii) বিশুদ্ধ পারদ কাচনলের গায়ে লেগে থাকে না। ফলে পারদ সরু কাচনলের মধ্য দিয়ে সহজেই ওঠা-নামা করতে পারে। (iii) পারদ অস্বচ্ছ এবং চক্চকে বলে নলের বাইরে থেকে খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায় এবং তাপমাত্রা দেখতে সুবিধা হয়।(iv) অন্যান্য তরলের চেয়ে পারদ অনেক কম উষ্ণতাতেও তরল থাকে। (v) তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে পারদের আয়তনের যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে পারদ থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রার সূক্ষ্ম তফাতও মাপা সম্ভব। (vi) পারদ সহজেই বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়।
২. জলে ভেজা গায়ে দাঁড়ালে তোমার ঠান্ডা লাগে। তবে জলে ভেজা গায়ে ঘূর্ণায়মান পাখার তলায় দাঁড়ালে তোমার বেশি ঠান্ডা লাগে কেন?
➛ জলে ভেজা গায়ে দাঁড়ালে আমাকে ঠান্ডা লাগে। কারণ গায়ের জল বাষ্পীভূত হয় আর বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ আমার শরীর থেকে গ্রহণ করে। তবে জলে ভেজা গায়ে ঘূর্ণায়মান পাখার তলায় দাঁড়ালে আমাকে বেশি ঠান্ডা লাগে। কারণ বায়ুপ্রবাহিত হলে বাষ্পায়নের হার বেড়ে যায়। ফলে শরীর থেকে জল লীনতাপ গ্রহণ করে দ্রুত বাষ্পীভূত হতে থাকে এবং বেশি ঠান্ডা লাগে।
৩. 0°C উষ্ণতার 5 গ্রাম বরফ 0°C উষ্ণতার 5 গ্রাম জলে পরিণত করতে কত তাপ লাগবে?
➛ বরফ গলনের লীন তাপ 80 ক্যালোরি/গ্রাম। অর্থাৎ, 0°C উষ্ণতায় 1 গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতায় 1 গ্রাম জলে পরিণত করতে 80 ক্যালোরি তাপ লাগে। 0°C উষ্ণতার 5 গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতার 5 গ্রাম জলে পরিণত করতে (80 × 5) বা 400 ক্যালোরি তাপ লাগে।
৪. মাটির কলশির জল শীতল হয় কেন?
➛ মাটির কলশিতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। মাটির কলশির জল এই ছিদ্র দিয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পীভবনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ মাটির কলশি এবং তার মধ্যস্থ জল সরবরাহ করে। ফলে মাটির কলশি এবং কলশির জল ঠান্ডা হয়ে যায়।
৫. হাতে স্পিরিট ঢাললে ঠান্ডা বোধ হয় কেন?
➛ স্পিরিট উদ্বায়ী তরল। স্পিরিট হাতে ঢাললে তা দ্রুত বাষ্পীভূত হয় এবং বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ আশেপাশের পরিবেশ ও হাত থেকে গ্রহণ করে। ফলে হাতের যেখানে স্পিরিট ঢালা হয় সেখানে ঠান্ডা লাগে।
৬. আগুনে জল দিলে আগুন নিভে যায় কেন?
➛ আগুনে জল দিলে সেই জল জ্বলন্ত বস্তু থেকে লীন তাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। ফলে জ্বলন্ত বস্তুর উষ্ণতা কমে যায়। আবার উৎপন্ন স্টিম জ্বলন্ত বস্তুর চারপাশ ঘিরে একটি আবরণ তৈরি করে। ফলে জ্বলন্ত বস্তু বায়ুর সংস্পর্শে আসতে পারে না এবং আগুন নিভে যায়।
৭. তাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
তাপ | তাপমাত্রা |
---|---|
1. তাপ হল একপ্রকার শক্তি। | 1. তাপমাত্রা হল বস্তুর তাপীয় অবস্থা। |
2. তাপ হল তাপমাত্রার কারণ। | 2. উষ্ণতা হল তাপের ফল। |
3. দুটি বস্তুর মধ্যে তাপ প্রবাহ তাদের তাপের ওপর নির্ভর করে না। | 3. দুটি বস্তুর মধ্যে তাপ প্রবাহ তাদের উন্নতার ওপর নির্ভর করে। |
4. দুটি বস্তুর উয়তা সমান থাকলেও তাদের তাপের পরিমাণ সমান নাও হতে পারে। | 4. দুটি বস্তুর তাপের পরিমাণ সমান হলেও তাদের তাপমাত্রা সমান নাও হতে পারে। |
5. অবস্থার পরিবর্তনের সময় বস্তুর মোট তাপের পরিবর্তন হয়। | 5. অবস্থার পরিবর্তনের সময় বস্তুর উন্নতা একই থাকে। |
6. বস্তুর তাপ পরিমাপ করা হয় ক্যালোরিমিটারের সাহায্যে। | 6. বস্তুর উষ্ণতা পরিমাপ করা হয় থার্মোমিটারের সাহায্যে। |
7. CGS পদ্ধতিতে তাপের একক ক্যালোরি। | 7. CGS পদ্ধতিতে উষ্ণতার একক ডিগ্রি সেলসিয়াস। |
৮. বাষ্পায়নে শৈত্যের সৃষ্টি হয় কেন?
➛ বাষ্পায়নের জন্য তরলের লীন তাপের প্রয়োজন হয়। বাইরে থেকে এই তাপ সরবরাহ না করলে, বাম্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল তার নিজ দেহ থেকে অথবা যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্র থেকে বা আশেপাশের বস্তু থেকে তাপ সংগ্রহ করে বাষ্পে পরিণত হয়। ফলে ওই তরল নিজে বা পাত্রটি বা আশেপাশের বস্তু তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। বাষ্পায়নের জন্য এভাবে শৈত্যের সৃষ্টি হয়।
৯. মাটির কলশি এবং পিতলের কলশির মধ্যে জল রাখলে কোনটিতে জল বেশি ঠান্ডা হবে ব্যাখ্যা করো।
➛ মাটির কলশির জল বেশি ঠান্ডা হবে। কারণ মাটির কলশির গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্রগুলি দিয়ে সামান্য পরিমাণ জল কলশির বাইরে বেরিয়ে আসে এবং ওই জল মাটির কলশি এবং কলশির মধ্যের জল থেকে প্রয়োজনীয় লীন তাপ সংগ্রহ করে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে মাটির কলশি ও কলশির জল তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হয়ে পড়ে। অপরদিকে ধাতব পিতলের কলশিতে কোনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র না থাকায় জল বাষ্পীভূত হতে পারে না ফলে পিতলের কলশির জল তেমন ঠান্ডা হয় না।
১০. জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় তাপের ভূমিকা উদাহরণসহ আলোচনা করো।
➛ জীবের অর্থাৎ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আকৃতি, প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার তারতম্যের পিছনে তাপ ও উষ্ণতার যথেষ্ট প্রভাব আছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে উদাহরণগুলি হল— প্রাণীর শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় তাপের প্রভাব : (i) শীতপ্রধান এলাকার প্রাণীরা গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার প্রাণীদের তুলনায় বেশি লোমশ হয়। এর ফলে তারা অতিরিক্ত ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পায়। (ii) গরমের দিনে আমাদের দেহ ঘেমে যায় । কুকুরেরা জিভ বের করে হাঁফায়। এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে দেহ ঠান্ডা হয়। (iii) মেরু ভালুকের দেহ ঘন লোমে ঢাকা থাকে। পেঙ্গুইনরা গা জড়াজড়ি করে থাকে যাতে তাদের শরীর গরম থাকে। উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় তাপের প্রভাব : (i) খুব গরমে জলের অভাবে চারাগাছ শুকিয়ে যায়। (ii) বাবলা, শুশনি, রাধাচূড়ার মতো কিছু গাছের পাতা দিনের বেলায় একটি নির্দিষ্ট উন্নতায় খুলে যায়। আবার রাত হলে মুড়ে যায়। (iii) বহু ফুলের পাপড়ি পরিবেশের উয়তা বেড়ে গেলে খুলে যায়। যেমন— টিউলিপ ফুল বেশি উষ্ণতায় ফোটে এবং কম উন্নতায় বুজে যায়।
সপ্তম শ্রেণি | পরিবেশ ও বিজ্ঞান |
---|---|
পরিবেশ ও বিজ্ঞান Class 7 PDF | Download Book |
পরিবেশ ও বিজ্ঞান অধ্যায় : | (আলো) প্রশ্নোত্তর নোটস |
No comments
Hi Welcome ....