Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

বি-উপনিবেশীকরণ | উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন ২০২৪ মার্ক - ৮

❏ বি-উপনিবেশীকরণ ✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : প্রশ্নের মান-৮ 1. বি-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝো? এর কারণ ও ফলাফল উল্লেখ করো। (Mark : 3+5...


❏ বি-উপনিবেশীকরণ
✱ নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : প্রশ্নের মান-৮

1. বি-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝো? এর কারণ ও ফলাফল উল্লেখ করো। (Mark : 3+5)
2. আলজেরিয়া কীভাবে স্বাধীন হয় তা সংক্ষেপে আলোচনা করো। (Mark : 8)
3. স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো। (Mark : 4+4)
4. সার্ক (SAARC) কীভাবে গঠিত হয়েছিল? সার্কের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? (Mark : 3+5)
5. সার্কের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো। এর উদ্দেশ্য কী ছিল? (Mark : 3+5)
_____________________________

1. বি-উপনিবেশীকরণ বলতে কী বোঝো? এর কারণ ও ফলাফল উল্লেখ করো।
❏ ভূমিকা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাধারণত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশ পাশ্চাত্য দেশগুলির অধীনতা থেকে মুক্তি পেতে জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক দশকের মধ্যেই ওই রাষ্ট্রগুলির অধিকাংশই স্বাধীনতালাভে সক্ষম হয়। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার রাষ্ট্রগুলির ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাবমুক্ত হওয়ার ঘটনাকে সাধারণত বি-উপনিবেশিকরণ বলা হয়। 1932 খ্রিস্টাব্দে জার্মান পণ্ডিত মরিজ জুলিয়াস বন সর্বপ্রথম ‘বি-উপনিবেশিকরণ' বা 
Decolonization শব্দটি ব্যবহার করেন। স্প্রিং হল বি-উপনিবেশিকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, এটি হল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাত থেকে জাতিরাষ্ট্রগুলির হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা সমর্পণ করা।

❏ বি-উপনিবেশিকরণের কারণ ও ফলাফল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের 35 বছরের মধ্যেই বিশ্বের অধিকাংশ পশ্চিমি উপনিবেশই স্বাধীনতা লাভ করে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ওই সময় বিভিন্ন কারণে উপনিবেশবাদের অবসান ঘটেছিল। উপনিবেশবাদের অবসান বা বি-উপনিবেশিকরণের প্রধান কারণগুলি ও ফলাফল গুলি নিন্মে আলোচনা করা হল—

(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে পশ্চিম ইউরোপের প্রধান দুই ঔপনিবেশিক শক্তি, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স আর্থিক দিক থেকে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই দুই দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্বযুদ্ধের ফলে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়। ফলে দুরবর্তী উপনিবেশগুলিতে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখা তাদের কাছে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের অভুতপূর্ব সাফল্য এশিয়া ও আফ্রিকার উপনিবেশগুলির মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা আন্দোলনও এর ফলে তীব্রতর হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় উপনিবেশগুলির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির কাছে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প ছিল না।

(২) ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির পারস্পরিক দ্বন্দ্ব : উপনিবেশের দখল নিয়ে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তিও পরস্পরের সঙ্গে বিরোধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছিল। এই অবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি পারস্পরিক বিরোধে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় উপনিবেশগুলির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারেনি। এ ছাড়া একটি ঔপনিবেশিক শক্তি নিজেদের সমর্থনের আশায় অপর ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনস্ত অঞ্চলের মানুষদের সমর্থন ও সহায়তা দান করতে থাকে। ফলে উপনিবেশ বিরোধী মুক্তিসংগ্রাম শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

(৩) জাতীয়তাবাদের প্রসার : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারত, আলজিরিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশসহ অন্যান্য উপনিবেশগুলিতে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে। তখন তারা প্রত্যেকেই ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির কাছে নানাভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানায়। ওইসব দেশে বিভিন্ন সংগঠন দলের উৎপত্তি ঘটে এবং ক্ষমতাবৃদ্ধি হয়। এরা শাসনক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করে।

(৪) পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আদর্শের প্রভাব : ঔপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে উপনিবেশগুলিতে পাশ্চাত্য দর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতিরও প্রসার ঘটেছিল। ফলে উপনিবেশগুলির অধিবাসীদের মধ্যে গণতন্ত্র, সাম্য, স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত ধারণার উৎপত্তি ও বিস্তার ঘটে। তারা নিজেদের পরাধীনতা এবং ঔপনিবেশিক শোষণকে উপলব্ধি করতে থাকে। এছাড়া উপনিবেশের বহু প্রগতিশীল নাগরিক ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেই শিক্ষাকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্যবহার করে।

(৫) আর্থিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা : ঔপনিবেশিক পশ্চিমি দেশগুলি উপনিবেশগুলির ওপর চূড়ান্ত শোষণ চালিয়ে উপনিবেশগুলিকে কাঁচামালের সংগ্রহস্থল ও উৎপন্ন দ্রব্যের বাজারে পরিণত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উপনিবেশগুলিতে মুদ্রাস্ফীতি, কালোবাজারি, মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্ভিক্ষ ঔপনিবেশিক শোষণের স্বরূপকে উপনিবেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত করে দেয়। তারা উপলব্ধি করে যে আর্থিক দুর্দশা থেকে মুক্তিলাভ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ঔপনিবেশিক শক্তির অপসারণ একান্ত প্রয়োজন।

(৬) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো মহাশক্তিধর দেশগুলি নিজেদের স্বার্থগত প্রয়োজনে উপনিবেশগুলির স্বাধীনতালাভকে সমর্থন করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রো-এশীয় দেশগুলিতে শিল্প ও বাণিজ্যের মাধ্যমে পুঁজিবাদের প্রসার ঘটাতে চেয়েছিল। অপরদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন চেয়েছিল ওই দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের প্রসার। ফলস্বরূপ, উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতাদানের জন্য এই দুই শক্তি পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

(৭) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান। জাতিপুঞ্জের সনদেও বহুবার উপনিবেশগুলিকে স্বাধীনতাদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিপুঞ্জের উদ্যোগের ফলে বহু উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে এবং পরবর্তীকালে ওই সংস্থার সদস্যপদ গ্রহণ করে।

(৮) নির্জোট আন্দোলনের প্রভাব : 1940-এর দশকের শেষের দিকে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ভারত, যুগোশ্লাভিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশগুলি ধনতান্ত্রিক বা সমাজতান্ত্রিক কোনো প্রকার জোটেই শামিল হতে চায়নি। ভারতের নেতৃত্বে এরা সূচনা করেছিল নির্জোট আন্দোলনের। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ও প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি কোরিয়া, কিউবাসহ বিভিন্ন দেশে উপনিবেশবাদ বিরোধী প্রচার চালিয়েছিল।

❏ উপসংহার : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই নানা কারণে বিশ্বে ঔপনিবেশিকতার অবসান বা বি-উপনিবেশিকরণের সূচনা ও প্রসার ঘটে। পশ্চিমি দেশগুলিও তাদের প্রাচ্য উপনিবেশগুলি বজায় রাখতে অসমর্থ হয়েছিল। ওইসব দেশের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব স্পষ্টভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা করেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিভিন্ন উপনিবেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন যা উপনিবেশবাদের অবসানকে ত্বরান্বিত করেছিল।
_____________

2. আলজেরিয়া কীভাবে স্বাধীন হয় তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
❏ ভূমিকা :
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় শক্তিগুলি আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। এদের মধ্যে ফ্রান্স ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফ্রান্সের লক্ষ্য ছিল আফ্রিকার উপনিবেশগুলিকে ফরাসি সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত করা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আফ্রিকার এই ফরাসি উপনিবেশগুলিতে মুক্তিসংগ্রামের সূচনা হয়। এই উপনিবেশগুলির মধ্যে আলজিরিয়ার মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে আলজিরিয়ার অধিবাসীগণ ফ্রান্সের অধীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সংগ্রামের সূচনা করেছিল।

❏ আলজেরিয়ার মুক্তিসংগ্রামের প্রসার : বেন বেল্লার নেতৃত্বে আলজিরীয়দের মুক্তিসংগ্রাম সহিংস ও সশস্ত্র রূপ ধারণ করে। 1954–1958 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাসি সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলজিরিয়ার জাতীয়তাবাদীদের সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। 1958 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ফ্রান্সের অভ্যন্তরেই এই যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত গড়ে উঠতে থাকে। এমতাবস্থায় চার্লস দ্য গল ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি পদে নিযুক্ত হন। তিনি আলজিরিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় উৎসাহী ছিলেন।

❏ আলজেরিয়ার স্বাধীনতা লাভ : রক্ষণশীল ফরাসি সৈন্যবাহিনীর বিরোধিতা স্বত্ত্বেও রাষ্ট্রপতি দ্য গল 1961 খ্রিস্টাব্দে আলজিরিয়ায় গণভোটের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আলজিরীয়গণের একমাত্র দাবি ছিল পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে 1958–62 এই দীর্ঘ চার বছর জাতীয়তাবাদী নেতা বেন বেল্লার সঙ্গে বৈঠকের পর ফ্রান্স আলজিরিয়াকে স্বাধীনতা দান করতে স্বীকৃত হয়। 1962 খ্রিস্টাব্দে আলজিরিয়া স্বাধীনতা লাভ করলে ফরাসি ঔপনিবেশিকগণ সেদেশ ত্যাগ করে। স্বাধীন আলজিরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান নেতা বেন বেল্লা।

❏ আলজেরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের কারণ : ফ্রান্সের উপনিবেশ হিসেবে আলজিরিয়া নানা কারণে শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিল। ফলে ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজিরিয়াবাসীদের অসন্তোষ পূঞ্জীভূত হয়ে উঠেছিল। তাদের এই অসন্তোষের কারণগুলি হল—

(১) বর্ণবৈষম্য : ঔপনিবেশিক শাসনকালে আলজিরিয়ায় বহু শ্বেতাঙ্গ ফরাসি বসবাস করতে শুরু করে। এই ধনী ও প্রভুত্বকারী শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীই ছিল আলজিরিয়ার অধিকাংশ কৃষিজমির মালিক। তারা আলজিরিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীদের ওপর নিরঙ্কুশ প্রভুত্ব চালাত। আলজিরিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীগণ শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নানাভাবে শোষিত হত। ফলে ফরাসি শ্বেতাঙ্গদের ওপর আলজিরিয়ার অধিবাসীরা ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

(২) ফ্রান্সের দমনমূলক নীতি : আলজিরিয়ার উপনিবেশের নিয়ন্ত্রণ রক্ষার বিষয়ে ফ্রান্স ছিল বিশেষভাবে সচেতন। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলজিরিয়ার অধিবাসীগণ ফ্রান্সের আধিপত্য থেকে মুক্তিলাভের জন্য মুক্তিসংগ্রামের সূচনা করলে ফ্রান্সও প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আলজিরিয়াবাসীর ওপর দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে। ফরাসিদের লক্ষ্য ছিল আলজিরিয়াকে তাদের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রাখা। ফলে আলজিরিয়াবাসীদের মুক্তিসংগ্রামকে স্তব্ধ করার জন্য ফ্রান্স চূড়ান্ত কঠোরতার নীতি গ্রহণ করে।

(৩) ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনা : ফরাসি উপনিবেশ আলজিরিয়ায় স্থানীয় অধিবাসী কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গ ফরাসিদের শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হত। একদিকে শ্বেতাঙ্গ ফরাসিরা নানা প্রকার সুযোগসুবিধা ভোগ করত অন্যদিকে, কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীগণ সর্বপ্রকার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসিদের প্রভুত্ব আলজিরিয়ার অধিবাসীদের মেনে নিতে হয়েছিল। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আলজিরিয়ার অধিবাসীগণ মুক্তিসংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল।

(৪) প্রতিক্রিয়াশীল নীতি : 1945 খ্রিস্টাব্দের 1 মে আলজিরিয়ার অধিবাসীগণ ঔপনিবেশিক ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। কিন্তু ফরাসি সরকার সেই মিছিলের ওপর চূড়ান্ত দমনপীড়ন শুরু করে। যার ফলে বেশ কিছু আলজিরীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও ফ্রান্স আলজিরিয়ার ওপর দমনপীড়ন বৃদ্ধির জন্য প্রতিক্রিয়াশীল জেনারেল জ্যাকুয়িস ম্যাসুকে সেখানে প্রেরণ করে। তাঁর প্রতিক্রিয়াশীল নীতি একদিকে আলজিরিয়ার সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি করেছিল অন্যদিকে, আলজিরীয় জাতীয়তাবাদীদের ঔপনিবেশিক শাসন উচ্ছেদের জন্য দৃঢ় সংকল্প করে তুলেছিল।

(৫) ইন্দোচিনের সাফল্যের দৃষ্টান্ত : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ফ্রান্সের অপর একটি এশীয় উপনিবেশ ইন্দোচিনে ফরাসি স্বাধীনতা সংগ্রাম ঘটে। এতে সেখানকার অধিবাসীদের সাফল্য অন্যান্য উপনিবেশগুলির মতো আলজিরিয়াকেও অনুপ্রাণিত করেছিল। আলজিরিয়ার অধিবাসীগণ উপলব্ধি করে যে ফ্রান্স অপরাজেয় নয়, তাই মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে আলজিরিয়ায় ফরাসি উপনিবেশের অপসারণ করা সম্ভব।

❏ উপসংহার : এই পরিস্থিতিতে 1950-এর দশকে আহমেদ বেন বেল্লা নামক এক জাতীয়তাবাদী নেতার উদ্ভব হয়। তিনি ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট’ নামে একটি প্রতিরোধমূলক চরমপন্থী গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। তিনি গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। 1954 খ্রিস্টাব্দ থেকে তাঁর নেতৃত্বে আলজিরিয়ায় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের সূচনা হয়।
_____________


3. স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
❏ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা :
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু (কার্যকাল: ১৯৪৭-৬৪ খ্রি.)-এর উদ্যোগে ভারতে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হল সুসংহত ও সুপরিকল্পিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বিশেষ। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারতেও বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং তা বর্তমানকালেও চালু আছে।

❏ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য : [i] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও দেশভাগের প্রভাবে ভারতের ভেঙে পড়া অর্থনীতি মজবুত করে তোলা। [ii] দেশের মুদ্রাস্ফীতি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। [iii] উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা। [iv] রাস্তাঘাট তৈরি, সেচের প্রসার, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দ্রুততর করা। [v] খাদ্য ও কাঁচামালের সংকট দূর করা। [vi] ভারতীয়দের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।

❏ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব : কিছু ত্রুটি সত্ত্বেও প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। [1] এই পরিকল্পনার ফলে ভারতের জাতীয় আয় ১৮ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ১০.৮ শতাংশ, কৃষি উৎপাদন ২২ শতাংশ এবং শিল্প উৎপাদন ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। [2] সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতিও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। [3] এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতীয় অর্থনীতিতে দীর্ঘকাল ধরে চলা স্থিতাবস্থার অবসান ঘটে। [4] প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতে পরিকল্পিত অর্থনীতির পথচলা শুরু হয়। [5] এই পরিকল্পনার ফলে ভারতবাসীর মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দেয়।

❏ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা : স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু সদ্য-স্বাধীন ভারতের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে মজবুত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫১- ৫৬ খ্রি.) মোটামুটিভাবে সফল হওয়ার পর দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

❏ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য : [i] ভারতবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় আয় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা। [ii] সরকারি উদ্যোগে ভারী ও যন্ত্রপাতি নির্মাণশিল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়ে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করা। [iii] ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য বিদেশ থেকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করা। [iv] অন্তত ১ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। [v] ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের বিকাশ ঘটানো। [vi] আয় ও সম্পদের বণ্টনে সমতা এনে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা। [vii] অর্থনৈতিক ক্ষমতা বণ্টনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।

❏ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব : কিছু ব্যর্থতা সত্ত্বেও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উদাহরণ স্বরূপ—[i] দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে দুর্গাপুর, ভিলাই ও রাউরকেল্লায় ইস্পাত কারখানা নির্মিত হয়। [ii] এই পরিকল্পনায় শক্তি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। [iii] ভারী শিল্প ও শিল্পপ্রযুক্তির অগ্রগতিও সন্তোষজনক হয়। [iv] অন্তত ৯০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। [v] বিদ্যুৎ উৎপাদন, রেল ও সড়ক পরিবহণ, জাহাজ ও বিমান চলাচল প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। [vi] দেশে স্কুল-কলেজের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। [vii] বহু স্থানে নতুন নতুন চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। এক কথায়, দেশের দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক বিকাশের ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।

❏ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা : দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬-৬১খ্রি.) বিভিন্ন ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬ খ্রি.) গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনা মোটামুটিভাবে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অনুকরণে তৈরি হয়। তবে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় কৃষির উন্নতি ব্যাহত হওয়ায় তৃতীয় পরিকল্পনায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

❏ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য : তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল— [i] জাতীয় আয় প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা। [ii] মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৩১০ টাকা থেকে ৩৮৫ টাকা করা। [iii] খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়া। [iv] শিল্পের কাঁচামাল ও রপ্তানিযোগ্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, [v] শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১০.৮ শতাংশে পৌঁছোনো। [vi] ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প-যন্ত্রপাতি, শক্তি প্রভৃতি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করা। [vii] কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। [viii] অর্থনৈতিক শক্তির সুষম বণ্টনের মাধ্যমে আর্থিক বৈষম্য হ্রাস করা।

❏ তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার গুরুত্ব : বিভিন্ন ব্যর্থতা সত্ত্বেও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কয়েকটি গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন—[i] এই পরিকল্পনার দ্বারা ঔপনিবেশিক অর্থনীতির গতিহীনতা দূর হয়। [ii] জাতীয় আয় ৬২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। [iii] শিল্পক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্য আসে।
_____________

4. সার্ক (SAARC) কীভাবে গঠিত হয়েছিল? সার্কের উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?
❏ সার্ক গঠন :
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজে সক্রিয় উদ্যোগ নেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো (১৯৮১খ্রি.), কাঠমান্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি:), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে (৭-৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলিকে নিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

❏ 'সার্ক’-এর উদ্দেশ্য : ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধি বলেছিলেন যে, সার্ক দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির আত্মনির্ভরতার সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সাক্ষরতার প্রসার, অপুষ্টি ও রোগ দূরীকরণের সঙ্গে যুক্ত। সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি হল—
(১) উন্নয়ন : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো।
(২) আত্মনির্ভরতা : সার্কের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ আত্মনির্ভরতার শক্তি বৃদ্ধি করা।
(৩) উৎসাহ প্রদান : অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় সক্রিয় সহযোগিতার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে উৎসাহিত করা।
(৪) যোগাযোগ বৃদ্ধি : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান এবং সেসব দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।
(৫) জনকল্যাণ : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনগণের কল্যাণসাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।
(৬) সহযোগিতা : সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, কারিগরি, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙে এই সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
(৭) উন্নয়ন : দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির দ্বারা সার্কের সদস্যগুলির অর্থনৈতিক বিকাশ, সামাজিক অগ্রগতি ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটানো।
(৮) বোঝাপড়া : সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।
 _____________
Ads7

5. সার্কের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করো। এর উদ্দেশ্য কী ছিল?
❏ ভূমিকা :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বি–উপনিবেশিকরণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আন্তরিক প্রয়াস দেখা যায়। সেই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে যে আন্দোলন শুরু হয় তার অন্যতম পরিণতি হল দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের প্রতিষ্ঠা।

❏ উদ্ভবের প্রেক্ষাপট : আঞ্চলিক পর্যায়ে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন এবং পারস্পরিক লেনদেনের প্রয়োজন দেখা দেয়। নিরাপত্তা ও প্রগতি বজায় রাখার লক্ষ্যে তারা একটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের ভাবনাচিন্তা শুরু করে। এমন ভাবনা থেকেই 1965 খ্রিস্টাব্দে ইউরোপীয় অর্থনীতিক গোষ্ঠী এবং 1967 খ্রিস্টাব্দের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক সংগঠন বা আসিয়ান গঠন করা হয়। 1970-এর দশকের শেষ দিক পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ সেভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। এ বিষয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। 1979 খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতামূলক আঞ্চলিক সংস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন।

প্রধানত তাঁর উদ্যোগেই দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ একাধিক বৈঠকে যোগদান করেন। তাঁদের পারস্পরিক আলোচনার ফলে শেষ পর্যন্ত 1983 খ্রিস্টাব্দে দিল্লি সম্মেলনে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (
South Asian Association for Regional Co-operation) বা SAARC-এর গঠন হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত 1985 খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংস্থা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। 1985 খ্রিস্টাব্দে সার্ক প্রতিষ্ঠার সময় ওই সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ছিল সাতটি—ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। তবে নতুন কোনো রাষ্ট্রকে সদস্য হিসেবে গ্রহণের ব্যবস্থাও সার্কে রয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে যে-কোনো দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্র সার্কের সদস্যপদ লাভ করতে পারবে যদি সে সার্কের নীতিগুলিকে পালন করে চলে।
Ads8

❏ সার্কের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি : (১) দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ ও তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। (২) এই অঞ্চলের অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নতিসাধন করে প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা ও বিকাশের পরিবেশ তৈরি করা। (৩) দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যৌথ আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা। (৪) সদস্য দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা ও সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করা। (৫) আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কারিগরি ও বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ করা। (৬) উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলির সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করা। (৭) সমজাতীয় স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সার্কের সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করা। (৮) আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্তরের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। (৯) সদস্য রাষ্ট্রগুলির অখণ্ডতা রক্ষা ও তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।

❏ উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুষ্ঠুভাবে কার্যসম্পাদন করার জন্য সার্ক প্রথম থেকেই একটি সুবিন্যস্ত কাঠামো লাভ করেছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিও সার্কের দৃষ্টির অগোচরে ছিল না। কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলির রাজনৈতিক অস্থিরতা, মতপার্থক্য, অসহযোগিতা ও পারস্পরিক বিবাদ সার্কের কার্যাবলিতে মাঝে মধ্যেই বাধার সৃষ্টি করেছে।
_____________

 animated-new-image-0047   Read More .....

No comments

Hi Welcome ....