Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

B.ED 4th Semester Suggestion Course- X (1.4.10) Creating an Inclusive School

❐ আরো পড়ুনঃ   B.ED 4th Semester Assignment   B.ED 4th Semester Suggestion 


আরো পড়ুনঃ


B.ED 4th Semester (2 Mark) Suggestion Notes 2023

Course- X (1.4.10)

Creating an Inclusive School


১. বৌদ্ধিক প্রতিস্পর্ধিতার সংজ্ঞা দিন।

২. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য RCI এর যে-কোনো চারটি উদ্দেশ্য লিখুন। 

৩. ‘SLD’ বলতে কি বোঝেন?

৪. কেন এবং কখন BASIC-MR এবং FACP ব্যবহৃত হয়?

৫. বাস্তব শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার যে কোনো একটি সমস্যা উল্লেখ করুন।

৬. কোন বছর RCI-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? SVNIRTAR-এর পুরো নাম লিখুন।

৭. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?

৮. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দুটি সুবিধা লিখুন।

৯. ব্যতিক্রমী শিশুর সংখ্যা লিখুন।

১০. সমন্বিত শিক্ষার সংজ্ঞা দিন।

১১. মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়?

১২. RTE ACT 2009 এর দুটি সুপারিশ লিখুন।

১৩. দৃষ্টি বাধাগ্রস্থ অবস্থার দুটি কারণ উল্লেখ করুন।

১৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সহযোজন বলতে কী বোঝায়?

১৫. গ্রুমিং ও মেন্টর শব্দ দুটির অর্থ লিখুন।

১৬. DDST-কী?

১৭. Buddy system কী?

১৮. ‘Peer tutoring’ কী?



B.ED 4th Semester (5 & 10 Mark) Suggestion Notes 2023

Course- X (1.4.10)

Creating an Inclusive School


১. সংক্ষিপ্ত টীকা লিখুন : একীভূত শিক্ষায় শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থাপনা।

২. FACP সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।

৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় ICT কিভাবে CWSN দের শিখনে উপকৃত করে তা বর্ণনা করুন।

৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় যুক্ত শ্রেণীকক্ষে পড়াবার জন্য একজন শিক্ষকের বাঞ্ছনীয় দক্ষতাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

৫. অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক হিসাবে আপনি কিভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের চাহিদা পূরণ করবেন?

৬. মাধ্যমিক স্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের বাঞ্ছনীয় দক্ষতাগুলি আলোচনা করুন।

৭. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

৮. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার শিক্ষক তৈরীর প্রস্তুতি সম্পর্কে NCF-2005 এর সুপারিশ গুলি আলোচনা করুন।

৯. RTE ACT 2009 এর উপর একটি টীকা লিখুন।

১০. জাতীয় শিক্ষানীত ১৯৮৬ তে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সম্পর্কে কি কি সুপারিশ করা হয়েছে?

১১. প্রতিবন্ধকতার জাতীয় নীতি ২০০৬ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।

১২. প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে RCI এর ভূমিকা উল্লেখ করুন।

১৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মানবিক মাত্রাটি আলোচনা করুন।

১৪. সমন্বিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি লিখুন।

১৫. বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার তাৎপর্য কি।

১৬. ব্যক্তি ও সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করুন।

১৭. সমন্বিত শিক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক লিখুন।





B.ED 4th Semester (2 Mark) Suggestion Notes 2023

Course- X (1.4.10)

Creating an Inclusive School


১. বৌদ্ধিক প্রতিস্পর্ধিতার সংজ্ঞা দিন।

➲ সাধারণত জন্মগত কোনো কারণে অথবা অসুখ-বিসুখ বা দুর্ঘটনাজনিত কোনো কারণে 18 বছর বয়সের পূর্বে বৌদ্ধিক বিকাশের অসম্পূর্ণতাকে বৌদ্ধিক প্রতিস্পর্ধিতা বলা হয়। এই সমস্ত শিশুদের IQ সাধারণ শিশুদের IQ 'অপেক্ষা অনেক কম হয়।

২. বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য RCI এর যে-কোনো চারটি উদ্দেশ্য লিখুন। 

➲ ➊ ওই শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নির্ধারণ করা। ➋ এদের জন্য বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র গুলিতে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা। ➌ বিশেষ শিক্ষার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ➍ বিশেষ শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করা।

৩. ‘SLD’ বলতে কি বোঝেন?

➲ ‘শিখন অক্ষমতা’ বা ‘শিখন প্রতিবন্ধকতা' Specific Learning Disorder একধরনের জ্ঞানমূলক অক্ষমত (Cognitive Disorder) এটি চিন্তা করা এবং যুক্তিদানে অক্ষমতা। শিখনে অক্ষম শিশুরা নিজের বয়সি অন্য শিশু ও সহপাঠীদের মতো প্রায় একইরকম আচরণ করে। শিখনের কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা অন্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো একইভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে আবার কোনো ক্ষেত্রে সমান তালে চলতে পারে না। এই অপারগতার কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়ায় স্বল্পতা।

৪. কেন এবং কখন BASIC-MR এবং FACP ব্যবহৃত হয়?

➲ মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের অ্যাসেস করার ক্ষেত্রে BASIC-MR ব্যবহৃত হয়। আর শিশুদের গুণবাচক ও পরিমাণবাচক পারদর্শিতার পরিমাপ করার ক্ষেত্রে FACP ব্যবহৃত হয়।

৫. বাস্তব শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার যে কোনো একটি সমস্যা উল্লেখ করুন।

➲ বাস্তব শ্রেণিকক্ষে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বেশ কিছু সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। এইসব সমস্যাগুলির মধ্যে কয়েকটি হল— (i) পরিকাঠামোগত সমস্যা (ii) নির্দেশনাদানের সমস্যা (iii) শিক্ষার উপকরণের সমস্যা (iv) শিক্ষাদান পদ্ধতিতে সমস্যা।

৬. কোন বছর RCI-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল? SVNIRTAR-এর পুরো নাম লিখুন।

1986 খ্রিস্টাব্দে RCI প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। SVNIRTAR-এর পুরো নাম হল- Swami Vivekananda National Institute of Rehabilitation Training and Research.

৭. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলতে কী বোঝায়?

➲ অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থ একত্রীকরণ, যারা শিক্ষার আলোকবৃত্তের বাইরে আছে তাদের সকলকে একত্রিত করে শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করার নাম অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা। আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক কোনো বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা নয়, শুধু একটি দর্শন বা নীতি। মূল উদ্দেশ্য UNESCO কর্তৃক গৃহীত সকলের জন্য শিক্ষা এই প্রস্তাবকে কার্যকর করার উপযোগী নীতিই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা নামে পরিচিত হয়েছে। মূলস্রোতে আনয়ন, সংহতিমূলক শিক্ষার অসম্পূর্ণতা দূর করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য এবং পূর্ণাঙ্গ নীতির নামই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা।

৮. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দুটি সুবিধা লিখুন।

➲ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দুটি সুবিধাগুলি হল— (১) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে অনেক বেশি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া যায়। (২) এর ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের সামাজিক সম্পদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব।

৯. ব্যতিক্রমী শিশুর সংখ্যা লিখুন।

➲ কোনো শিশুকে তখনই ব্যতিক্রমী বলা হয় যখন তার মধ্যে এমন এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায় যা গড়পড়তা অন্যান্য শিশুদের চেয়ে অনেকটা বিচ্যুতিসম্পন্ন (A child is considered exceptional when he/she has one or more characteristics that deviate much from the other average children) তার অর্থ ব্যতিক্রম শুধুমাত্র অক্ষমতাকেই বোঝায় না, অতিসক্ষমতাকেও বোঝায়। সেই কারণে প্রতিভাবান শিশুরাও ব্যতিক্রমী।

১০. সমন্বিত শিক্ষার সংজ্ঞা দিন।

➲ সমন্বিত শিক্ষা বলতে সেই শিক্ষা কার্যক্রমকে বোঝায় যেখানে ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীরা আংশিক সময়ে অথবা পূর্ণ সময়ের জন্য স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একই সঙ্গে শিক্ষাগ্রহণ করে। এই কার্যক্রম হল প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেওয়ার সঙ্গে কিছুটা বিশেষজ্ঞের সহায়তা ও পরিসেবা দান।




১১. মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়?

➲ মানবাধিকার একটি আন্তর্জাতিক শপথ যেখানে বিশ্বের সমস্ত ব্যক্তির মানবিক আচরণের, পাওয়ার এবং দেওয়ার অধিকারের কথা আছে। মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রত্যেক মানুষ তার সমস্ত স্বাতন্ত্র্য, বৈশিষ্ট্য, জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস, দেশ ও কাল নির্বিশেষে এক-একজন বিশ্ব নাগরিক। বিশ্বের যে-কোনো স্থানে তার মানুষ হিসেবে অধিকার সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকারই মানবাধিকার।

১২. RTE ACT 2009 এর দুটি সুপারিশ লিখুন।

➲ (১) সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে নথিভুক্ত করা এবং (২) বিদ্যালয় ছুট বা  Drop out শিশুদের চিহ্নিত করা।

১৩. দৃষ্টি বাধাগ্রস্থ অবস্থার দুটি কারণ উল্লেখ করুন।

➲ দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত অবস্থার দুটি কারণ হল – (১) বংশগত কারণ বলতে শিশুর জন্মের সময় জিনবাহিত যে, বংশগতি নিয়ে জন্মায় তার কিছু ত্রুটি। (২) গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় যত্নের ত্রুটিজনিত কারণ, অর্থাৎ খাদ্যের অভাব, অপুষ্টি, তীব্র প্রতিক্রিয়াজনিত ওষুধ সেবন, দুরারোগ্য ব্যাধি, অস্বাভাবিক মানসিক চাপ, গর্ভাবস্থার অর্থ্যেকর মনোসামাজিক, পরিবেশ জীবন নির্বাহজনিত কারণসমূহ।

১৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় সহযোজন বলতে কী বোঝায়?

➲ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে শিক্ষা প্রসঙ্গিক যে-কোনো কিছুকে দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ করাকে অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় ‘সহযোজন' বলা হয়ে থাকে।

১৫. গ্রুমিং ও মেন্টর শব্দ দুটির অর্থ লিখুন।

➲ গ্রুমিং শব্দটি একটি প্রক্রিয়াসূচক, যার আভিধানিক অর্থ, কাউকে কোনো পেশার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। আর মেন্টর শব্দটি ব্যক্তিসূচক, যার অর্থ, কোনো অনভিজ্ঞ ব্যক্তির জ্ঞানী ও বিশ্বস্ত সাহায্যকারী।

১৬. DDST- কী?

DDST-র পুরো অর্থ Denver Developmental Screening TestDDST অভীক্ষা চলাকালীন পাঁচটি বিষয়ে আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়— (১) আচরণ যেমন সাধারণত হওয়া উচিত, স্বাভাবিক (Typical): Yes অথবা No (২) নির্দেশ পালন (Compliance): সর্বদাই, সাধারণত, খুব কম। (৩) চারপাশের সবকিছুর প্রতি আগ্রহ (Interest in Surroundings) : খুব তৎপর, কিছুটা আগ্রহহীন, ভীষণভাবে আগ্রহ কম। (৪) ভয় পাওয়ার প্রবণতা (Fearfulness): নেই, অল্প পরিমাণ আছে, চরম। (৫) মনোযোগের পরিসর (Attention Span): যথাযথ, কিছুটা ব্যাঘাতপ্রবণ, অত্যন্ত ব্যাঘাতপ্রবণ।

১৭. Buddy system কী?

➲ বাডি সিস্টেম হল এমন একটি পদ্ধতি (Procedure) যাতে দুটি ব্যক্তি (Two buddies) একে অপরের সঙ্গী হয় একত্রে একটি একক গঠন করে এবং পরস্পরকে সাহায্য করে। Merrium Webster-এর কথামতো 'Buddy system' কথাটি পরিচিতি পায় 1942 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। তিনি বলেন, এটি এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে দুটি ব্যক্তি একত্র হয় অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পারস্পরিক নিরাপত্তা দিতে “An arrangement in which two individual are paired (as for mutual safety in a hazardous situation)"। দুটি ব্যক্তিকেই এখানে কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। যাতে কাজটি নিরাপদে শেষ হবে এই নিশ্চয়তা পাওয়া যায় অথবা দক্ষতা/শিখন কার্যকরীভাবে এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে সঞ্চালিত হয়।


১৮. ‘Peer tutoring’ কী?

➲ যখন একজন অগ্রণী ছাত্র শিক্ষকের ভূমিকা নেয় এবং শিক্ষার্থীদের (Peer group) শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নেয় তখন তাকে সহপাঠী কর্তৃক শিক্ষণ (Peer Teaching ) আখ্যা দেওয়া হয়।



B.ED 4th Semester (5 & 10 Mark) Suggestion Notes 2023

Course- X (1.4.10)

Creating an Inclusive School


১. সংক্ষিপ্ত টীকা লিখুন : একীভূত শিক্ষায় শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থাপনা।

➲ একীভূত শিক্ষায় যেখানে বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে শিশুরা আসে সেখানে যে-কোনো প্রকার নির্দেশদান থেকে উপকৃত হতে শ্রেণিকক্ষ বিষয়ক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি (Effective classroom management is required if students are to benefit from any form of instruction, especially in inclusive classrooms where students display a wide range of diversity. - Jones and Joans 2007) । কার্যকরী শ্রেণিকক্ষ সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনা ব্যতীত কোনো ছাত্রেরই শিখন সর্বোচ্চ আশাব্যঞ্জক হতে পারে না। একীভূত শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করার জন্য শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ঘটাতেই হবে। এতে শিশুর মধ্যে সঠিক মনোভাবের বিকাশ ঘটবে। সকলে মিলে পারস্পরিক সহযোগিতায় একত্রে চলায় এবং যৌথ প্রচেষ্টায় শিক্ষালাভের গুরুত্ব অনুধাবন করবে। যাদের দৈহিক অক্ষমতার কারণে হুইলচেয়ার প্রয়োজন তাদের ঘোরাঘুরির জন্য জায়গা রাখতে হবে। চলতে থাকা কার্যকলাপে অংশ নিতে ব্ল্যাকবোর্ডের কাছে পৌঁছোতে সঠিক জায়গা ফাঁকা থাকা প্রয়োজন বা শ্রুতি সমস্যাগ্রস্তদের জন্য একেবারে সামনের সারিতে বসার সুযোগ দিতে হবে যাতে শিক্ষকের ঠোঁট নাড়া দেখে সে বুঝতে পারে যে শিক্ষক কী বলছেন। দৃষ্টিহীনদের জন্য বাধাহীন পরিবেশ, ধীর শিখনগতিসম্পন্ন, বৌদ্ধিক পশ্চাৎপদ এবং শিখন সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সহপাঠীদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের মতো ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য।

  1. শ্রেণিকক্ষ খোলামেলা, আলো-বাতাসযুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে।
  2. শব্দযন্ত্রণা কমাতে শ্রেণির মেঝেতে কার্পেট এবং দেওয়ালে কর্কবোর্ড দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে।
  3. প্রতিফলিত আলো যাতে চোখে এসে না পড়ে তা দেখতে হবে।
  4. বিপজ্জনক কোনো বাধাসৃষ্টিকারী বস্তু (Dangerous obstacles) দূর করতে হবে।
  5. ঘরে Furniture এবং অন্য কিছুর Arrangement প্রতিনিয়ত পালটানো চলবে না।


২. FACP সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।

 ➲ FACP হল একটি কর্মসূচিভিত্তিক চেকলিস্ট যার সাহায্যে মানসিক অনগ্রসর শিশুর মূল্যায়ন ও কর্মসূচি পরিকল্পনা করা হয়। চেকলিস্ট উল্লেখিত কর্মসূচি দৈনন্দিন জীবন-যাপনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য। এই অভীক্ষা শিশুর শারীরিক বয়স অনুযায়ী তার গুণগত ও পরিমাণগত উন্নতিতে গুরুত্ব দান করে। এটিও NIMH সেকেন্দ্রাবাদ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। FACP 2004 প্রস্তুতির নেপথ্যে NIMH-এর যেসব বিশেষজ্ঞদের নাম জানা যায়, তারা হলেন Jayanthi Narayana, Shaik Saleem এবং V.Padma.

শিশুর বয়স ও কর্মসূচি অনুসারে সাতটি পর্যায়ভিত্তিক চেকলিস্ট আছে যেমন—

1. প্রথম পর্যায় — প্রাক্ প্রাথমিক (Pre-Primary)

2. দ্বিতীয় পর্যায় — প্রাথমিক

3. তৃতীয় পর্যায় — প্রাথমিক

4. চতুর্থ পর্যায় — মাধ্যমিক

5. পঞ্চম পর্যায় — (ক) প্ৰাক্‌ বৃত্তিমূলক-1

6. ষষ্ঠ পর্যায় — (খ) প্রাক্ বৃত্তিমূলক-2

7. সপ্তম স্তর — কেয়ার গ্রুপ

যেভাবে চেকলিস্টে প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করা হয় তা হল—

1. শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ নিজে কোনো সাহায্য ছাড়া কর্ম সম্পাদন করলে, প্রাপ্য রেটিং Yes.

2. শিক্ষার্থীকে সাহায্য করলে বা বিরল সময়ে সূত্র সরবরাহ করলে, প্রাপ্য রেটিং OC (Occasionally Cuing)

3. শিক্ষার্থীকে মুখে বলে কাজে সাহায্য করলে প্রাপ্য রেটিং VP (Verbal Prompt)

4. শিক্ষার্থীকে মুখে না বলে দৈহিক ইঙ্গিতে বুঝিয়ে সাহায্য করলে রেটিং PP (Physical Prompt)

5. শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ সাহায্য করে কর্ম সম্পাদন করলে প্রাপ্য রেটিং No (Nothing Original)

বিনোদনমূলক কাজগুলিতে যেভাবে রেটিং হয় এখানে রেটিং গ্রেড দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন—

A = উদ্যোগ গ্রহণ করে ও দক্ষতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে।

B = অন্যরা উদ্যোগ নিলে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

C = উদ্যোগে শিক্ষার্থী নিয়ম না জেনে যুক্ত থাকে।

D = শিক্ষার্থী সক্রিয় থাকে না, পর্যবেক্ষণ করে।

E = শিক্ষার্থী আগ্রহী থাকে না। উদাসীন থাকে।

NE = শিক্ষার্থীর কোনো প্রকাশ থাকে না (আগ্রহ, ইচ্ছা, সক্রিয়তা ইত্যাদি)

FACP-এর সাহায্যে প্রতি মাসের শেষে একমাসের কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়। তিনমাসের জন্য কাজের লক্ষ্যমাত্রা ও উদ্দেশ্য স্থির করা হয়। BASIC MR-এর প্রাপ্ত তথ্যাবলি পরিমাণগত ও গুণগত উভয়প্রকার হয়। তার একটি অগ্রগতির প্রতিবেদন অভিভাবকের কাছে দেওয়া হয়।


৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় ICT কিভাবে CWSN দের শিখনে উপকৃত করে তা বর্ণনা করুন।

শিখন ও শিক্ষণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT for Learning and Teaching): শিখন ও শিক্ষণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে আইসিটির আবির্ভাব এবং যখন শিক্ষার্থী শুনে শেখে এবং দেখে শেখে তা গতানুগতিক প্রথায় শিখনের চেয়ে বেশি। তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত উপকরণ হল বহুবিধ, যেমন—হোয়াইট বোর্ড, ভিডিয়ে সম্মেলন, ওয়েবভিত্তিক সম্পদ, ইলেকট্রনিক ও ডিজিটাল লাইব্রেরি ও আরও অনেক কিছু যা শিখন ও শিক্ষণকে সাহায্য করে তোলে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপকরণের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানের সীমা আশ্চর্যজনকভাবে বাড়াতে পারে, সমস্যাসমাধান কৌশল আয়ত্ত করতে পারে, অসংখ্য তথ্যসম্ভার নিজের কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করতে পারে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ধারণার বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সর্বোপরি উচ্চক্রমের বিশ্লেষণী জটিল চিন্তন দক্ষতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। কেবলমাত্র শিক্ষার্থী নয় শিক্ষকও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে উপকৃত হতে পারেন। এ পাঠটীকা প্রস্তুতকরণে, ওয়ার্কশিট, রিপোর্ট তৈরিতে শিক্ষকের অযথা লিখনেও পরিশ্রম কমাতে সাহায্য করে। এই প্রযুক্তি কোনো বিষয়ের মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপন, শ্রুতি ও দৃশ্য সম্মেলনের (Audio and video conferencing) মাধ্যমে শিক্ষকের শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। শিক্ষকগণের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে মত বিনিময় করতে পারেন, বিশেষ অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিতে পারেন।

আইসিটি উপকরণ (ICT Tools) : নতুন ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তিসমূহ (Digital ICTs) একক কোনো উপকরণ নয়। এগুলি হল হার্ডওয়্যার, সফট্ওয়্যার, মাধ্যম ও বণ্টন ব্যবস্থা (Delivery system) সমূহের মিলিত সমাবেশ। প্রাচীন প্রযুক্তি সম্পদ থেকে এই নবতম প্রযুক্তির বহু বিষয়ে পার্থক্য আছে। বহুবিধ মাধ্যম একত্রিত হয়ে এখানে কোনো বিশেষ শিক্ষণ বিষয়ে প্রযুক্ত হতে পারে। এরা পারস্পরিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল (Interactive) এবং সংযুক্ত হয়ে তথ্য পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ, পরিবর্তন, পরিচালন সমৃদ্ধ করতে পারে। এগুলি পৃথিবীর যে-কোনো অংশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারে যার ইন্টারনেট আছে, তথ্যের আদানপ্রদান করতে পারে। চারটি বিষয় এই আধুনিক প্রযুক্তিকে পুরাতন প্রযুক্তি থেকে পৃথক করেছে সেগুলি হল—বহুবিধ মাধ্যমের সংহতি (Integration of multiple media), পারস্পরিক প্রতিক্রিয়াশীলতা (Interactivity), ব্যবহারে নমনীয়তা (Flexibility of use) এবং সংযোগশীলতা। এসব কারণে বর্তমান শিক্ষাবিদার নতুন নতুন পথের ভাবনা করেছেন যাতে এই প্রযুক্তিকে (ডিজিটাল আইসিটি) শিক্ষা পাঠক্রমে স্থান দিয়ে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করা যায়।

শিক্ষণ ও শিখনে আইসিটির সম্ভাব্য প্রয়োগ ক্ষেত্র (Possible areas of Teaching and Learning for the use of ICT): শিক্ষণ ও শিখনের বহুবিধ ক্ষেত্র আছে যেখানে তথ্য ও প্রযুক্তিসমূহকে ব্যবহার করা সম্ভব। যেমন-

i. উপস্থাপন

ii. গণন

iii. তাৎক্ষণিক বাচনিক যোগাযোগ

iv. তথ্যের উৎসরূপে

v. লিখন

vi.পঠন

vii. অ্যাসাইনমেন্ট সম্পূর্ণকরণ

viii. বিজ্ঞানে পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ

ix. সাধারণ ও পেশাগত প্রয়োগে বিদ্যালয়ে ব্যবহারে

x. বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে

xi. মাইক্লোওয়ার্ল্ডে পরিচিত হতে

xii. শিখনের নকশা, পরিকল্পনা ও গঠনে

শিক্ষণ ও শিখনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারে সুবিধা (Advantages of using ICT in different Teaching and Learning Situations) : (a) ধীরগতি শিক্ষার্থী, সমাজে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী, মানসিক ও দৈহিকভাবে প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী, প্রতিভাবান শিক্ষার্থী, প্রত্যন্ত ও গ্রামাঞ্চলে বাস করা শিক্ষার্থী প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থী যাদের শিক্ষার চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন এবং সামর্থ্যও ভিন্ন ধরনের তাদের সহায়তা করে। (b) বহুধা মাধ্যম (Multimedia) প্রয়োগে হাইপারমিডিয়া সংযোগের প্রেক্ষিতে শিখনকে অধিক কার্যকরী করে তোলে। (C) স্থানীয় চাহিদা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমস্যার সঙ্গে পরিচিতি ঘটিয়ে তার সমাধানে অগ্রসরমান হতে সাহায্য করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের চাহিদা কেমন হবে তার নকশা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং তথ্যভান্ডার গড়ার জন্য বহুবিধ শিখন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে। শিখন সফলতা কীরকম হবে জানতে বোধের পরিমাপ জরুরি। বোধ পরিমাপ করতে আবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্য দরকার হয়ে পড়ে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিখন পরিবেশকে প্রভাবিত করে (ICTs: Mediator of Learning Environment) : এই প্রযুক্তি শিখন/শিক্ষণের পরিবেশটিকেই পালটে দেয়। একে আরও সক্রিয় করে তোলে। শিক্ষার্থীরা এই প্রযুক্তির সাহায্যে স্বয়ং শিখনেও প্রবৃত্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীর সফলতা বৃদ্ধি পায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ে। শুধু শ্রেণিকক্ষেই নয়, শ্রেণিকক্ষের বাইরেও বহু কিছু শিখন তথ্য তাদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। অনলাইন প্রথায় তারা সেগুলি সংগ্রহ করতে পারে, প্রতিসংকেত দিতে পারে, নিজের বোঝাকে (Understanding) পরিশীলিত করতে পারে করতে পারে। শিখনের বিষয় ব্যাপ্ত হয়। শিখন গভীর থেকে গভীরতর হয়।


৪. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় যুক্ত শ্রেণীকক্ষে পড়াবার জন্য একজন শিক্ষকের বাঞ্ছনীয় দক্ষতাগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

 দক্ষতা ও যোগ্যতা এর মধ্যে পার্থক্য: দক্ষতা হল ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা যা ওই ব্যক্তিকে প্রদত্ত যে-কোনো ব্যক্তিকে যে-কোনো কাজে সফল হওয়ার দিকে পরিচালিত করে। 

অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশে একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয় কিছু দক্ষতা ও যোগ্যতার তালিকা:

দক্ষতা (Skills): 

1. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা লাভে দক্ষতা।

2. শ্রেণিকক্ষে প্রতিটি শিশুর দায়িত্ব অনুধাবনে দক্ষতা।

3. বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষণ নির্দেশদানের কৌশল সম্বন্ধে জানা।

4. কৌশলসমূহকে কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করার দক্ষতা।

5. ভারতের সংবিধানে শিক্ষার অবস্থানকে উপলব্ধি করা।

6. উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিখন চাহিদা অনুধাবন এবং তদনুযায়ী উপযুক্ত নির্দেশদানমূলক নকশা প্রস্তুত করা।

7. পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শিখন চাহিদা অনুধাবন এবং তদনুযায়ী উপযুক্ত শিখন পরিবেশ রচনা।

8. শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সমাজমিতি অনুধাবন।

9. শিক্ষা একটি সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া তা অনুধাবন করার দক্ষতা।

সামর্থ্য (Competencies) :

1. শিশুর ব্যক্তিগত আগ্রহকে গুরুত্বদান এবং তাদের মানসিক অবস্থা ও চাহিদাকে অনুধাবনের ক্ষমতা।

2. শিশুর জন্য উচ্চমানের বিকল্প প্রত্যাশাকে গড়ে তোলার ক্ষমতা।

3. প্রতিটি শিক্ষার্থী সম্বন্ধে উপযুক্ত প্রত্যাশা গড়ে তোলার ক্ষমতা।

4. চাহিদা অনুযায়ী পাঠক্রমিক অভিযোজনের সামর্থ্য।

5. বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার্থীর সুবিধা হয় এভাবে শ্রেণিকক্ষের নকশার পরিবর্তনসাধনের ক্ষমতা।

6. শিক্ষার্থীর সমস্ত ধরনের দক্ষতাকে মূল্য দিতে শেখা।

7. প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাত্যহিক অগ্রগতি নিরূপণের ক্ষমতা এবং তা তাকে জানানো।



৫. অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক হিসাবে আপনি কিভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের চাহিদা পূরণ করবেন?

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের একান্ত প্রয়োজন। কারণ এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক যে সকল দক্ষতা অর্জন করবে তার সাহায্যেই তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রতি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হতে পারবেন। এর পাশাপাশি তার মধ্যে যে সব গুণের বিকাশ ঘটবে তা হল সহায়তা দাতা, পথনির্দেশক, সামাজিক ও ব্যক্তি চাহিদার মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী ইত্যাদি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা কেন ঘটে, এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন গবেষণায় ও পর্যবেক্ষণে বিবিধ ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে। যেমন—দর্শনেন্দ্রিয়ের গঠনগত ত্রুটির জন্য অক্ষমতা হতে পারে, তেমনই আঘাত, সংক্রামক ব্যাধি, অপুষ্টি ইত্যাদি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে দেখা যায়। উত্তর ভারতে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতিকল্পে যে শিক্ষা সংক্রান্ত সার্বিক পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছিল 1986 সালে তা জাতীয় শিক্ষানীতি রূপে পরিচিত এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সেটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। 

❏  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের চাহিদা পূরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ :  

(i) মান নির্ধারণ করা : শিক্ষার বিষয়বস্তু বা প্রশিক্ষণে নীতি কেবলমাত্র নয়, আ সি আই সমস্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি গুণগত মান নির্ধারণ করতে চায়। অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যেন অন্যান্য ব্যক্তির মতো একটি নির্দিষ্ট গুণগত মানের পরিসেবা পায়, তা সুনিশ্চিত করাই আর সি আই-এর অন্যতম কাজ। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে নানান উদ্যোগ রূপে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা  পালন করবে। 

(ii) দ্রুত চিহ্নিতকরণ : অনেক প্রতিবন্ধকতা জন্মগত হলেও সূচনাপর্বে ব্যবস্থা নিলে তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাই জন্মগত বা অর্জিত যে-কোনো প্রতিবন্ধকতা দ্রুত চিহ্নিতকরণের ওপর গুরুত্ব দান করা হয় শিক্ষা ক্ষেত্রে ।

(iii) প্রতিরোধ : যে-কোনো অক্ষমতা বা অনগ্রসরতা দু-ভাবে ব্যবস্থা করা যায়একটি চিকিৎসামূলক পদক্ষেপ অন্যটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। অক্ষমতাগুলির ক্ষেত্রে দুটি দিকেই গুরুত্বারোপ করা উচিত। তবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদি ফলদায়ী, তাই এইদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

(iv) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও মহিলার প্রতি মনোযোগ : সামাজিকীকরণের ধারা অনুযায়ী শিশু ও মহিলা প্রতিবন্ধীরা অবহেলিত ও উপেক্ষিত থেকে যায়। 2006-এর আইনে এই ব্যক্তিবর্গের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

(v) সামাজিক সুরক্ষা প্রদান : মহিলা ও শিশু তো বটেই সমগ্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গকে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবন্ধী ভাতা, চিকিৎসা, সহায়ক উপকরণ, পুনর্বাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে ইত্যাদি।

উপসংহারঃ-  প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে হবে। এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় নমনীয়তা কাম্য, প্রয়োজন অনুসারে বিদ্যালয়ে বিশেষ শ্রেণি বা সমন্বিত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া শ্রবণ, দর্শন, মানসিক প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে পৃথক ও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যতদূর সম্ভব আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। তার পাশাপাশি এই প্রকার শিশুদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবার জন্য উৎসাহ দিতে হবে সেক্ষেত্রে শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 


৬. মাধ্যমিক স্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের বাঞ্ছনীয় দক্ষতাগুলি আলোচনা করুন।

➲ শিক্ষক প্রস্তুতিপর্বে শিক্ষক-প্রশিক্ষকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এই প্রশিক্ষকগণ দুরকম দলকে সাক্ষাৎ করেন। একদল যারা পেশায় শিক্ষক এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষণ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছে। দ্বিতীয়দল যারা ভবিষ্যতে শিক্ষক হবেন— সেই যোগ্যতা অর্জন করবার জন্য এসেছেন। এই দুইদলের দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, নির্দেশ অনুসরণ করা ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তারতম্য আছে। প্রশিক্ষকদের দায়িত্ব হল— এই তারতম্য সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একটি শিক্ষকসুলভ মূল্যবোধ সঞ্চার করা।

এই প্রশিক্ষকদের যে সমস্ত সামর্থ্য ও দক্ষতা প্রয়োজনীয় তা হল—

(i) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

(ii) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসিক স্তর চিহ্নিত করা।

(iii) তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষের উপযোগী কর্মসূচিগুলি বোঝানো।

(iv) এক একটি বিষয়ভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করা ও গুণ/দুর্বলতা বিশ্লেষণ করা।

(v) শিক্ষণ শিখন সামগ্রী সম্পর্কে আলোকপাত করা।

(vi) মূল্যায়ন কৌশল ও তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন করা।

(vii) অন্তর্ভুক্তিকরণের ধারণা দেওয়া ও সচেতন করা।

(viii) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সক্ষমতা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন করা।

(ix) সময়ের যথার্থ প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন করা।

(x) শিক্ষক-প্রশিক্ষকের নিজের বাস্তবিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলা।

শিক্ষক প্রশিক্ষকগণের প্রচলিত দায়িত্বগুলির সঙ্গে একটি প্রয়োজনীয় বিষয় ‘আবশ্যিক বিষয়রূপে’ মান্যতা পেয়েছে, সেটি হল ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা’ সম্পর্কে সচেতন করা ও নির্দেশনা দেওয়া। আগে এটি একটি অপশনাল বা ঐচ্ছিক বিষয়রূপে পাঠক্রমে স্থান পেয়েছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ‘আবশ্যিক পত্র’ (Compulsory paper) রূপে পরিগণিত হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একটি আদর্শ অবস্থা যেখানে মূলস্রোতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিকাঠামোগত ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার সমন্বয় ঘটিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের একত্রে পাঠদান করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষককে সুষম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে।

শিক্ষক প্রশিক্ষক বা অধ্যাপক শিক্ষার্থী-শিক্ষককে এইভাবে নির্দেশনা দেবেন, যেন এই শিক্ষার্থী শিক্ষক—

(i) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করতে পারে।

(ii) বিশেষ চাহিদার বিষয়টি বুঝে নিতে পারে ও পূরণ করতে পারে।

(iii) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে শ্রেণিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারে।

(iv) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর অর্জিত দক্ষতার মূল্যায়ন করতে পারে।

৭. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্ষেপে আলোচনা করুন।

➲ প্রযুক্তির মাধ্যমে যখন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে বা শিক্ষাদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তখন তা হয় প্রযুক্তিবিদ্যা মাধ্যমে শিক্ষা। বর্তমানে আমাদের ভারতবর্ষে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য আছে। যে উদ্দেশ্য গুলি পালনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করে যে সকল বিষয়গুলো তে সবচেয়ে বেশি উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রকাশ শিক্ষা মনোযোগী হয়ে ওঠা ইত্যাদি। এই কারণে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা আছে। এখানে শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যার কয়েকটি ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার যে সকল ভূমিকা গুলি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো — ১)  শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের আত্মতৃপ্তি ঘটেছে। আত্মতৃপ্তি একটি শিক্ষার্থীকে আত্ম বিকাশে সহায়তা করে। আর প্রযুক্তিবিদ্যা আত্মতৃপ্তি আনে এটি মানুষের দেহে ও মনে অভিনবত্বের প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম। ২)  প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে থাকে। প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের চাহিদা ভিত্তিক বিষয় নির্বাচন করে সে বিষয়ে আত্ম সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ প্রযুক্তি বিদ্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। ৩)  প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহারের ফলে বা শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যা গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে বিশেষজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ তৈরি হওয়ার পথকে সুগম করে তুলতে পারে। অর্থাৎ শিক্ষায় প্রযুক্তি বিদ্যা ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরিনত হতে পারে। ৪)  যে কোন বিষয়ে একঘেয়ে পাঠদান শিক্ষার্থীদের কাছে ও তৃপ্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু শিক্ষাদানের মধ্যে যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া করা হয় তবে তা একঘেয়েমি দূর করতে সক্ষম ও খুব সহজে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করে থাকে। ৫)  শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার অন্যতম ভূমিকা হল শিক্ষার্থীরা খুব সহজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং আত্ম সক্রিয়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে আত্মনির্ভরশীল করে তার বলিষ্ঠ জীবন আদর্শ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ৬)  বর্তমানে সমাজে সুস্থভাবে বাঁচতে গেলে প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান যথেষ্ট প্রয়োজন।এই কারণে বর্তমান দিনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তি শিক্ষার একটি যথেষ্ট ভূমিকা আছে। কারণ প্রযুক্তি বিদ্যার শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ পরিণত হতে পারে ও সামাজিক মর্যাদা পেয়ে থাকে। ৭)  প্রযুক্তি বিদ্যায় মানব সম্পদের যথার্থ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ নতুন নতুন বিষয় কে আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারের মানুষের মনে তৃপ্তি আসে ও মানবসম্পদ অপচয় রোধ হয়। ৮)  শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারে।কারণ এই আধুনিক চিন্তাধারা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োগ হলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক হয়ে ওঠে উন্নত জাতি গঠনে সক্ষম হয়ে উঠবে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করলে তা ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবন গতিশীল করে তুলতে সক্ষম। বিজ্ঞান চেতনা মূলক প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে স্বনির্ভর ও আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। সুতরাং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।  

৮. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার শিক্ষক তৈরীর প্রস্তুতি সম্পর্কে NCF-2005 এর সুপারিশ গুলি আলোচনা করুন।

➲ জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা (National Curriculum Framework – NCF) 2005 অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার উপর জোর দেয়। এটি বলে সমস্ত ধরনের সমস্ত রকম চাহিদাযুক্ত শিশুকে সাধারণ বিদ্যালয়ের এক ছাতার তলায় আনতে হবে। প্রত্যেক শিশুকে যথাযথ মূল্য দিয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনা (Potentiality)-কে মর্যাদা দিতে হবে। সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষা (Universal Elementary Education-UEE)-র দায়বদ্ধতা অনুযায়ী নবগঠিত পাঠক্রমের নকশা কেবল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকেই মূল্য দেবে না পরন্তু চাইবে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে আসা

শারীরিক, মানসিক ও বৌদ্ধিক ভিন্নতাযুক্ত সকল শিশু ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা নিয়ে একই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আসবে এবং শিখনে সাফল্য অর্জন করবে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় লিঙ্গ, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সামর্থ্যগত ভিন্নতা থাকলে তার যথাযথ মোকাবিলা করতে হবে। এটি কেবলমাত্র কতকগুলি নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই হবে না কতকগুলি শিখনের নকশা ও কার্যক্রম (Learning design & set of Learning tasks) গ্রহণের মাধ্যমে অসংলগ্নতা দূর করতে হবে এবং তা করতে হবে শৈশবকাল থেকেই। সমস্ত শিক্ষার্থীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা এক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় বিষয়। ‘‘NCF focus group on education for children with special needs''এ বিষয়টিতে সবিশেষ গুরুত্ব দিল। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলে—সক্ষমতা এবং দুর্বলতা নির্বিশেষে সকল শিশু মূল স্রোতের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য। সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্তির ভাবনা (Feeling of belongingness)-য় বলা হয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অন্যান্য  কর্মসহযোগী সবাই অন্তর্ভুক্তির পরিবেশে থেকে এগিয়ে যাবে। অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষা হল সামাজিক গোষ্ঠী, জাতি, শ্রেণি , লিঙ্গ এবং শিশুর অক্ষমতা নির্বিশেষে সকলের জন্য।

NCF 2005-এর আলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার জন্য সুপারিশ ও  শিক্ষক প্রস্তুতি : (১) বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশু (Children with Special needs-CWSN) সহ সকল শিশুর দক্ষতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা, পটভূমি, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র্যকে মূল্য দিয়ে পাঠক্রম/শিক্ষা পরিচালনা। (২) সকল শিশুর সম এবং ভিন্নধর্মী (Equal and diverse) অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রেণিশিক্ষণ ত্বরান্বিতকরণ। শ্রেণিশিক্ষণে Peer Tutoring, Group Learning কৌশলের সহযোগে যূথবদ্ধ বিনিময়ধর্মী শিক্ষণ (Collaborative Teaching)-এর ব্যবস্থা গ্রহণ। (৩) শিশুদের সাহায্যের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথভাবে তৈরি করা রুটিনের ভিত্তিতে শিক্ষণ-শিখন সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।

যখন যেমন প্রয়োজন তার ভিত্তিতে বিশেষভাবে নির্মিত আসবাব/উপকরণ সরবরাহ করা যাতে শ্রেণিকক্ষের প্রাকৃতিক এবং গতির ক্ষেত্রে বাধা দূর হয় এবং শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অসুবিধা না হয়। (৪) শিখনে অসুবিধা হ্রাসকরণের জন্য অঙ্গগত অসুবিধাগ্রস্ত শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে সংবেদনশীলতা প্রদর্শন। (৫) বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুদের শিক্ষার বাধামুক্তির জন্য কী কী সুবিধা প্রাপ্য সে সম্পর্কে পরিচিতি। (৬) নির্দেশের ভাষা মাধ্যম প্রাত্যহিক ব্যবহৃত ভাষা অনুযায়ী হবে। (৭) শ্রেণিতে সংকেত (Sign) / সম্পূর্ণ (Total) যোগাযোগ মাধ্যমকে অতিরিক্ত নির্দেশ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা। (৮) বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুদের (CWSW) জন্য শিখন প্রক্রিয়া (জ্ঞান নির্দেশ) সুনির্বাচিত শিক্ষণ-শিখন সহায়ক উপকরণের মাধ্যমে নিবিড় হস্তক্ষেপ (Intense interventions)-এর মাধ্যমে হবে। (৯) শিক্ষার্থীর শিখন চাহিদা, সাধারণ চাহিদা, সহায়ক কৌশল, নিরাময় ব্যবস্থা সঠিকভাবে চিহ্নিতকরণ এবং তদনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থাপনা করার জন্য রিসোর্স শিক্ষক/শিশু লালন-পালনকারী (Caregivers)/স্বেচ্ছাসেবকের সাহায্য ও সমর্থন গ্রহণ জরুরি। (১০) বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশু (CWSW) সহ সকল শিশুর জ্ঞান নির্মাণ ও সৃজনে শিক্ষকের অধিক নমনীয় এবং সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুকে কখনোই ভর্ৎসনার পাত্র হিসেবে দেখা চলবে না।


৯. RTE ACT 2009 এর উপর একটি টীকা লিখুন।

1950 খ্রিস্টাব্দে যখন আমাদের দেশের সংবিধান তৈরি এবং গৃহীত হয় তখন থেকেই 14 বছরের কমবয়সি শিশুদের অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এরপর কোঠারি কমিশন (1964-66) শিশুদের শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার জন্য ‘কমন স্কুল সিস্টেম'-এর সুপারিশ করেন। 1993 খ্রিস্টাব্দে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট একটি রায়ে 14 বছরের কমবয়সি শিশুদের শিক্ষাকে সুনিশ্চিত করার জন্যে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের কথা শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হলেও, স্বাধীনতার 62 বছর পরেও শিক্ষার মৌলিক অধিকার আইন স্বীকৃতি পায়নি। অবশেষে 2002 খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সর্বপ্রথম শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং 2009 খ্রিস্টাব্দে এই অধিকার বাস্তবায়িত করার জন্য “শিশুদের বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন তৈরি করেন”। The Right of Children to Free and Compulsory Education Act 2009. এই আইনটি 1 এপ্রিল 2010 থেকে জম্মু এবং কাশ্মীর ছাড়া ভারতের সমস্ত রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে চালু হয়েছে।


শিক্ষার অধিকার আইনে শিশুদের যে সমস্ত অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল— (১) 6 বছর থেকে 14 বছর বয়সি সমস্ত শিশু প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা পাওয়ার অধিকারী। (২) শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুরাও যে-কোনো বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিশুদের মতোই সমানভাবে বিনামূল্যে শিক্ষা পাবে। তাদের শিক্ষার জন্য পার্সন উইথ ডিসেবিলিটি অ্যাক্ট 1996 অনুযায়ী হবে। (৩) 6 বছরের বেশি বয়সি কোনো শিশু, যে শিক্ষার আওতার বাইরে ছিল বা কিছুদিন পড়ে ছেড়ে দিয়েছে তাকেও বয়স অনুযায়ী শ্রেণিতে ভরতি করতে হবে। (৪) কোনো ব্যক্তি বা কোনো বিদ্যালয় শিশুর বিদ্যালয়ে ভরতির ব্যাপারে কোনো রকম ক্যাপিটেশন ফি নিতে পারবে না। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (৪) কোনো শিশুকে কোনো একটি শ্রেণিতে এক বছরের বেশি রাখা যাবে না। (৫) কোনো শিশুকে কোনোভাবেই বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। (৬) কোনো শিশুকে কোনো কারণেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না।

এই আইনে রাজ্য সরকারগুলির দায়িত্ব ও কর্তব্য : (১) এই আইন কার্যকরী হওয়ার 3 বছরের মধ্যে রাজ্য সরকারকে প্রতিটি জনবসতির । কিমি-র মধ্যে এটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং 3 কিমি-র মধ্যে একটি করে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। (২) বিদ্যালয়গুলিতে প্রতি 30-35 জন ছাত্রছাত্রী পিছু 1 জন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকবেন। (৩) রাজ্য সরকারগুলিকে এই আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো, শিক্ষক/শিক্ষিকা এবং শিক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) রাজ্য সরকারগুলিকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। (৫) রাজ্য সরকারগুলিকে দুর্বলতর শ্রেণি এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণি থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের যাতে বিদ্যালয়ে কোনো রকম বৈষম্যের শিকার না হতে হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। (৬) এই আইনকে বাস্তবায়িত করতে অর্থের ব্যবস্থা করা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলির যৌথ দায়িত্ব। (৭) 6 থেকে 14 বছর বয়সি প্রতিটি শিশুকে বাড়ির কাছাকাছি কোনো একটি বিদ্যালয়ে ভরতি করা পিতামাতা ও অভিভাবকদের কর্তব্য। (৮) কোনো কারণেই যাতে শিশুটির শিক্ষা ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর দেওয়াও পিতামাতা এবং অভিভাবকদের একান্ত কর্তব্য।

১০. জাতীয় শিক্ষানীত ১৯৮৬ তে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সম্পর্কে কি কি সুপারিশ করা হয়েছে?

➲ 1986 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে যে কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে তা হল—

সাধারণ বিদ্যালয় ব্যবস্থার অঙ্গ হিসেবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে : (১) সাধারণ বিদ্যালয়ে গ্রহণ করার জন্য প্রতিবন্ধী শিশুদের বাছাই করার একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি নিরূপণ করতে হবে। (২) যেসব শিশুদের প্রয়োজনীয় চাহিদা সাধারণ বিদ্যালয়ে পূরণ করা যাবে না তাদের জন্যই কেবল বিশেষ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। (৩) তৎকালীন সময়কে ভিত্তি করে বলা হয়েছিল সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকাল (7th Plan Period)-এর প্রত্যেক বছরে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে অন্তর্ভূক্তির হার শতকরা 25 ভাগ করে বাড়াতে হবে। (৪) প্রতিবন্ধী শিশুদের সাধারণ বিদ্যালয়ে ঠিকমতো শিক্ষাদানের জন্য একটি দলকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করতে থেকে তিনজন, ডায়েট (DIET— District Institute of Education and Training) থেকে তিনজন এবং হবে। এই দল গঠন করা হবে এসসিইআরটি (State Council of Educational Research and Training ) প্রতিটি মহকুমা স্তর থেকে একজনকে নিয়ে। এরাই আবার সাধারণ বিদ্যালয় (Normal Schools)-এর কিছু শিক্ষককে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন যাতে তারা সাধারণ বিদ্যালয়ে পিছিয়ে পড়া শিশুদের সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেন। (৪) এই সব শিশুদের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় (Common Education system) সঠিক তত্ত্বাবধান এবং ব্যবস্থাপনা করার ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষা প্রশাসকদের জন্য নির্দেশিকা সংবলিত বিশেষ বই (Special Handbook) প্রকাশ করতে হবে।


বিশেষ বিদ্যালয়ে পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষা : (১) জেলা এবং মহকুমাতেও বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। (২) বিশেষ বিদ্যালয়ের একই ছাতার তলায় যাতে সবরকম প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় , প্রারম্ভিক ক্ষেত্রে তার ব্যবস্থা করতে হবে। (৩) বিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে বা সন্নিহিত অঞ্চলে একটি বৃত্তি শিক্ষণ কেন্দ্র (Vocational training centre) সংস্পনের ব্যবস্থা করতে হবে। (৪) ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে। (৫) সপ্তম পরিকল্পনাকালে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীনে 400টি বিশেষ বিদ্যালয় খুলতে হবে। প্রত্যেক বিদ্যালয়ে সবরকম প্রতিবন্ধী মিলিয়ে 60জন ছাত্র থাকতেই হবে। (৫) UGC, NCERT, NIH (National Institute of the Handicapped)-এর সহায়তায় মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর  শিক্ষকদের বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। (৬) প্রতিবন্ধী শিশুদের সঠিক পুনর্বাসনের জন্য এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানী, অস্থি চিকিৎসক, ফিজিয়োরোপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।


১১. প্রতিবন্ধকতার জাতীয় নীতি ২০০৬ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখুন।

➲ ভারত সরকার 2006 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতীয় নীতি' (The National Policy for Persons with Disability) ঘোষণা করে যা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয় "The Ministry of Social Justice and Empowerment, Government of India'-র উপর। এই নীতির বয়ানে বলা হয় যে এই নীতি অসমর্থ ব্যক্তিগণ (Persons with Disabilities)-কে দেশের অন্যতম মূল্যবান মানবসম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে এবং এমন একটি সমাজ সৃজনের কথা বলে যা তাদের সমাজে সকল কাজে সমান সুযোগ দেওয়া, অধিকার রক্ষা এবং যে-কোনে কাজে পূর্ণ সুযোগ দানের ব্যবস্থা করবে। শিক্ষাকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি সঞ্চারে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে ঘোষণা করে এই নীতি অনুযায়ী 18 বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত প্রতিবন্ধী শিশুকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের (Mainstreaming)-এর মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তির শিক্ষা (Inclusive Education)-কে জোরদার করার কথা ঘোষণা করে। ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ জন্য সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে PWD-দের শিক্ষাকে মূলস্রোতীকরণ এ কারণে এই জাতীয় নীতি 2020 খ্রিস্টাব্দকে সময়সীমা ঘোষণা করে এবং বলে বয়স অনুযায়ী যে যেখানে আছে তাদের সকলকে এই সময়ের মধ্যে প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এটি করার জন্য— 

(i) সমস্ত সাধারণ বিদ্যালয়কে সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতার জন্য প্রবেশে বাধামুক্ত করতে হবে। এবং (ii) সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় শিক্ষণ, শিখন উপকরণ এবং অন্যান্য Support Services সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

(iii) RCI Act, 1992 যা পুনর্বাসন সেবার জন্য মানবশক্তি উন্নয়নের কথা বলে। (iii) National Trust for Welfare of Persons with Autism, Cerebral Palsy, Mental Retardation and Multiple Disability Act 1999 যা প্রতিবন্ধী মানুষের স্বাধীন জীবনযাত্রার জন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে দায়বদ্ধ। এই আইনবিধি রচনার সঙ্গে সঙ্গে মানব শক্তি উন্নয়নের জন্য 7টি জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। সারা দেশে পাঁচটি সংহত পুনর্বাসন কেন্দ্র, RRC (Regional Rehabilitation Centre) এবং 120টি DDRC (District Disability Rehabilitation Centre) যারা PWD-দের পুনর্বাসন সেবায় নিয়ত কর্মরত। এ ছাড়া Ministry of Health & Family Welfare-এর অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও PWD-র পুনর্বাসনে কর্মরত। এদের অবস্থান মুম্বাই, মাইসোর, রাঁচি। NHFDC (National Handicapped Finance and Development Corporation) PWD-দের দ্বারা স্বনিয়োগ পরিকল্পনায় রাজ্য সংস্থার মারফত সাহায্য দানের ব্যবস্থা করে। এবং  PWD-দের কল্যাণে উদ্যোগ নিতে PRI (Panchayet Raj Institutions)-গুলিকে গ্রাম/শহর/জেলা ভিত্তিতে দায়বদ্ধ করার ব্যবস্থা হয়েছে।



১২. প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে RCI এর ভূমিকা উল্লেখ করুন।

RCI যে উদ্দেশ্যে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পরে ধাপে ধাপে তা অনেকটা সম্প্রসারিত হয়, সেকথা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে RCI যে সমস্ত কাজে নিয়োজিত তার তালিকাটি দীর্ঘ।

❏ প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতি ও কার্যক্রম (Policy and Programmes of Training): RCI-এর প্রথম এবং প্রধান কাজ বিভিন্ন ধরনের অক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিদের শিক্ষাদানের জন্য যে সমস্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং যতরকম শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম সারা দেশে পরিচালিত হয় সেগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন, নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকি করা। এই ধরনের কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও বিস্তৃত হল শিক্ষক-শিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম। B.Ed Special Education সংক্রান্ত একাধিক কার্যক্রম সারাদেশে প্রচলিত আছে তার কিছুটা বিশেষ বিশেষ প্রতিবন্ধকতার জন্য বিশেষজ্ঞ কার্যক্রম (Visual impairment, Hearing impairment ইত্যাদি) আর কিছুটা সাধারণ। তা ছাড়া M.Ed Special Education কার্যক্রম যার উদ্দেশ্য প্রশিক্ষক তৈরি করা। এই সমস্ত কার্যক্রম সম্পর্কিত নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা কার্যকর করার উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা RCI-এর কাজ। আইন অনুযায়ী NCTE-র মতো RCI-এর সিদ্ধান্তও সংশ্লিষ্ট সমস্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসক সকলে মেনে চলতে বাধ্য।

মান নির্ধারণ (Standaion): উপরোক্ত কার্যক্রমগুলি এবং তার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান ও পেশাদার ব্যক্তিরা তাদের পরিসেবার যথাযথ মান বজায় রাখে এবং যে মান আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির অনুসরণ করে রচিত তা নির্ধারণ করা এবং নজরদারি করা RCI-এর কাজ। এই কারণে RCI-এর নির্ধারিত মান অগ্রাহ্য করে এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদন ব্যতিরেকে দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান এবং পেশাদারি ব্যক্তি কাজ করতে পারবেন না।

ন্যূনতম যোগ্যতা (Minimum Qualification): অক্ষমতাযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিযুক্ত শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য প্রযুক্তিকুশলী ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম যোগ্যতা মান নির্ধারণ করা RCI-এর কাজ। এই নির্ধারিত মান অর্জন না করে কোনো পেশাদারি পরিসেবা আইনত গ্রাহ্য নয়। এই কারণে B.Ed ইত্যাদি পাঠক্রমগুলিতে ভরতি হওয়ার যোগ্যতা, সংশ্লিষ্ট কলেজগুলিতে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের যোগ্যতা, প্রযুক্তি ও চিকিৎসা (Therapy) সংক্রান্ত কাজের জন্য যোগ্যতা এই সবই RCI নির্ধারিত মান অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন।

নিয়ন্ত্রণ করা (Regulating): সারাদেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করা অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র (Clinic), সহায়ক উপকরণ নির্মাণ ও ব্যবহার, অন্যান্য যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ইত্যাদি সবকিছুই RCI নিয়ন্ত্রিত।

প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন (Recognition of Institutes ) : যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, শিক্ষক শিক্ষণ, পরিসেবাদানের জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ, কলাকুশলীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত তাদের সকলের জন্য নির্ধারিত মান অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া RCI-এর কাজ। RCI-এর অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান চালানো আইনত অপরাধ। এই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ডিগ্রি (Degree), ডিপ্লোমা (Diploma) ইত্যাদি বেআইনি এবং কোনো অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে তাদের নিয়োগ করাও নিষিদ্ধ।


১৩. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মানবিক মাত্রাটি আলোচনা করুন।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অর্থনৈতিক মাত্রা (Economical Dimension of Inclusive Education) :

শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পদের সমন্বয়সাধন ও সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার অর্থনৈতিক ভিত্তি বিশ্লেষণ করা একান্ত প্রয়োজনীয়। নীচে এই সম্পর্কে আলোচিত হল—

সম্পদের সদ্ব্যবহার : শিক্ষার পরিকাঠামো যত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়, তত বেশি মাত্রায় তার সদ্ব্যবহার হয়। বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী এই পরিষেবা পেয়ে থাকে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় স্বাভাবিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর দল একই পরিকাঠামোগত সুযোগসুবিধা উপভোগ করে। এর ফলে সম্পদকে খণ্ডিত ব্যবহার না করে সমগ্রভাবে ব্যবহার করা যায়।

শিখন উপকরণের উপযুক্ত প্রয়োগ : শিখন-পঠন সামগ্রী বা শিক্ষার উপকরণ নির্বাচন করা হয় পাঠ্য বিষয় পরিবেশনার জন্য, শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য এবং তার আর্থিক মূলর বিচার করে। সুতরাং শিক্ষার কোনো উপকরণ যদি অনেক বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাজে লাগে তবে শিক্ষায় স্বাভাবিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী শিক্ষার একই উপকরণ ব্যবহার করে শিক্ষায় অংশগ্রহণ করলে শিক্ষার ব্যয়ভার লাঘব হয়।

শিক্ষার ব্যয়ভার : প্রশাসনিক স্তরে দেশের উন্নয়নের জন্য যখন পরিকল্পনা ও তার ব্যয়বরা স্থির করা হয়, তখন স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর জন্য মূলস্রোতের বিদ্যালয়গুলিতে যে মাথাপিছু খরচ ধার্য করা হয়, বিশেষ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর বায় স্বভাবতই অনেক বেড়ে যায়। এ ছাড়া বিশেষ বিদ্যালয়গুলি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বা কোনো ব্যক্তিগত দানের ওপর নির্ভরশীল থাকে। এক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ সমানভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বন্টন করা সম্ভব হবে।

আর্থিক স্বনির্ভরতা : শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ স্বাধীন জীবনের জন্য প্রস্তুত করা এবং আত্ম-নির্ভর করে তোলা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীকে উৎপাদনমুখী করার জন্য, তার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাগুলির বিকাশ ঘটানোর জন্য শিক্ষার সূচনাকাল থেকে একমাত্র স্বাভাবিক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহাবস্থান দরকার।

মানবাধিকার : বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত শিশু প্রথম থেকেই মূলস্রোতের শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে, অর্থাৎ বিভাজনের শিকার। তার ফলে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ধার্য ও অধিকারসমূহ তার তথ্য সমানভাবে পরিবেশিত হয় না। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় সমস্ত শিক্ষার্থী একসঙ্গে অংশগ্রহণ করার দরুন সম্বন্ধে অধিকার সংক্রান্ত তথ্যগুলি তারা অবগত হয় ইত্যাদি।


১৪. সমন্বিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য গুলি লিখুন।

➲ সমন্বিত শিক্ষণ হল এমন একটি শিক্ষা-ব্যবস্থাপনা যেখানে ব্যতিক্রমী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে আংশিক বা পূর্ণ

সময়ের ভিত্তিতে শিক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সমন্বিত শিক্ষার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Integrated Education) : বিশেষ শিক্ষা, সাধারণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ব্যবধান গড়ে তোলে, সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা হল তা অতিক্রম করার একটি প্রয়াস। এই শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

(১) পিতা-মাতার দৃষ্টিভঙ্গি (Parental Perspective) : সমন্বিত শিক্ষা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ প্রদান করবে। ব্যক্তিক্রমী শিশুদের পিতামাতা যত সচেতন হবেন ও এই সুযোগটি গ্রহণ করবেন, ততই সমন্বিত শিক্ষা বাস্তবায়িত হবে। এক্ষেত্রে সচেতন অভিভাবক যদি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসেন তবেই সেই উদ্যোগ কার্যকারী হবে।


(২) শিক্ষকের ভূমিকা (Role of Teacher) : শিশুদের সামগ্রিক জ্ঞান অর্জনে বা পাঠগ্রহণে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সমন্বিত শিক্ষায় সাধারণ শিশুদের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা শ্রেণিতে অংশগ্রহণ করে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী শিশুদের প্রতি শিক্ষকদের যত বেশি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠবে ততই এই শিশুরা মূলধারার শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

(৩) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা (Role of Educational Institutions) : বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমন্বিত শিক্ষার উদ্যোগে এই দায়বদ্ধতা নিয়ে চলে যে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে অর্থাৎ এই শিশুরা শিক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হলে তাদের শ্রেণিকক্ষে স্থান দিতে হবে।

(৪) সহপাঠীদের ভূমিকা (Role of Classmates) : সমন্বিত শিক্ষায় স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাপূর্ণ শিক্ষার্থীরা একত্রে শ্রেণিতে অংশগ্রহণ করে। তাই স্বাভাবিক শিশুদের এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের যদি আন্তরিক ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে সমন্বিত শিক্ষার ধারণাটি বাস্তবে রূপায়িত হয়।


১৫. বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার তাৎপর্য কি।

➲ শিক্ষা মানুষকে বিকশিত হতে সাহায্য করে। একটি শিশুর জন্ম তার পিতা-মাতা, পরিবার ও অন্যান্য সদস্যদের আনন্দ দান করে এবং সবার মনোযোগ ও ভালোবাসার ফলে সে সংসারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠে। সে তার ভূমিকা পালন করতে শেখে, দায়িত্ব নিতে শেখে এবং দৈনন্দিন জীবনের একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে। স্কুল বা বিদ্যালয়ে গিয়ে সে শেখে কীভাবে বন্ধুদের এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করা যায়। শিক্ষা তাকে পেশাগতভাবে উন্নত হতে সাহায্য করে এবং পরবর্তী সময়ে রোজগার করতে এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। যায়। একটি প্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনাগুলি অন্য রকম হয়। তার জন্ম এনে দেয় সংসারের সদস্যদের মধ্যে মনোকষ্ট, হতাশা এবং রাগ। তার জীবনের প্রথম কয়েকটা বছর কেটে যায় নানান ডাক্তার, পীঠস্থান, কবজ, গণনা ইত্যাদির পেছনে মা-বাবার ছোটাছুটি করে অথবা অবহেলা কিংবা অতিমাত্রায় আগলে রাখা অথবা অত্যধিক প্রশ্রয়ের ভেতর দিয়ে। এর ফলে সে অন্য সাধারণ শিশুদের মতো স্বাভাবিক বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। অনেক সময় সাধারণ বৃদ্ধির যে মাইলফলক সেগুলি বিলম্বিত হয় বা ছেড়ে যায়। সে অন্য শিশুদের মতো সাধারণ বিদ্যালয়ে যাওয়ার থেকেও বঞ্চিত হয়। খুব সৌভাগ্য হলে বিশেষ শিক্ষার সুযোগ পায় যেখানে অন্য প্রতিবন্ধী শিশুরা অথবা তাকে বাড়িতেই রেখে দেওয়া হয়। যার ফলে সে যখন প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছোয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ে ও সবার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না এবং নিজেকে কর্মক্ষেত্রে উপযোগী করে তুলতে পারে না। সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার হল, তার প্রতিবন্ধকতার দিকে নজর দিতে গিয়ে শিশুটির ক্ষমতাগুলি অবহেলিত হয়ে যায়। অনেক বিলম্বে যখন শিক্ষা ও প্রতিবিধানের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন তা ফলপ্রসূ হতে পারে না। বিশেষ বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগও সীমিত। সকলের পক্ষে তা সহজলভ্যও নয়। তাই সর্বসমাবিষ্ট শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্যই সুবিধাজনক।


ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুবিধাসমূহ (Advantages in the Personal Area) :

(১) একটি প্রতিবন্ধী শিশুর প্রথম থেকেই মূলধারার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। (২) এই পরিচিতির ফলে সে নিজের মতো করে মানিয়ে নিতে শেখে এবং চারপাশের সকলকেও তার সঙ্গে মানাতে শেখায়। (৩) তার নিজের ক্ষমতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা গড়তে সুবিধে হয়। (৪) নিজেকে অন্য সক্ষমদের সঙ্গে যেহেতু প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাই নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতাকেও বার বার যাচাই করে উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। (৫) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দরুন অক্ষমতার থেকে ক্ষমতা বেশি গুরুত্ব পায়। (৬) একটি শিশুর ইতিবাচক মনোভাব, প্রয়াস, উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে লালন করে তাকে জীবনের নানান পরিস্থিতিতে মানাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সক্ষমদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাও শেখে সমাজে সবার সমান ক্ষমতা থাকে না। সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে ও অক্ষম সহপাঠীদেরকে তাদেরই একজন বলে মেনে নিতে শেখে, এবং নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হয়।

সমাজের ক্ষেত্রে সুবিধাসমূহ ( Societal Advantages) : (১) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে অনেক বেশি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া যায়। (২) এর ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের সামাজিক সম্পদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। (৩) মানুষ যত একে অপরের সঙ্গে মিশবে তত বেশি ভুল ধারণা দূর হবে এবং সচেতনতা বাড়বে। যার ফলে সবাই নতুন করে ভাবতে ও চলতে শিখবে। ফলে সমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে এবং মানসিক বাধা কমতে থাকবে।


১৬. ব্যক্তি ও সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করুন।

ব্যক্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বসমূহ ( Importance in the Personal Area) :

(১) একটি প্রতিবন্ধী শিশুর প্রথম থেকেই মূলধারার সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। (২) এই পরিচিতির ফলে সে নিজের মতো করে মানিয়ে নিতে শেখে এবং চারপাশের সকলকেও তার সঙ্গে মানাতে শেখায়। (৩) তারা নিজের ক্ষমতা ও অক্ষমতা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা গড়তে সুবিধে হয়। নিজেকে অন্য সক্ষমদের সঙ্গে যেহেতু প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাই নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতাকেও বার বার যাচাই করে উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। (৪) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার দরুন অক্ষমতার থেকে ক্ষমতা বেশি গুরুত্ব পায়। (৫) একটি শিশুর ইতিবাচক মনোভাব, প্রয়াস, উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে লালন করে তাকে জীবনের নানান পরিস্থিতিতে মানাতে সাহায্য করে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সক্ষমদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারাও শেখে সমাজে সবার সমান ক্ষমতা থাকে না। সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে ও অক্ষম সহপাঠীদেরকে তাদেরই একজন বলে মেনে নিতে শেখে, তাদের প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা করতে শেখে এবং নিজেরাও উদ্বুদ্ধ হয়।

সমাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বসমূহ (Societal Importance) : (১) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে অনেক বেশি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া যায়। এর ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদের সামাজিক সম্পদ হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। (২)  মানুষ যত একে অপরের সঙ্গে মিশবে তত বেশি ভুল ধারণা দূর হবে এবং সচেতনতা বাড়বে। যার ফলে সবাই নতুন করে ভাবতে ও চলতে শিখবে। ফলে সমাজ অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হবে এবং মানসিক বাধা কমতে থাকবে।


১৭. সমন্বিত শিক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক লিখুন।

➲ সমন্বিত শিক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক হল—

(১) শিক্ষার্থী (The Learner) : অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা সাধারণ মূলস্রোতের শিক্ষা কার্যক্রমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য, ভাষাগত চরিত্র, আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপট, অসমর্থ, বুদ্ধিদীপ্ত সকল শিশুর অন্তর্ভুক্তিতে একত্রে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা। সমন্বিত শিক্ষায় সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অসমর্থ নয় এমন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অক্ষম শিশুদের একত্রে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা।

(২) প্রতিষ্ঠান (The Institution) : সমন্বিত শিক্ষায় পৃথকীকরণের ভেদরেখাকে সূক্ষ্মভাবে জিইয়ে রেখে সাধারণ বিদ্যালয়ের বিশেষ শ্রেণিতে শিক্ষা দিয়ে একই সঙ্গে অক্ষম ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামাজিকভাবে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় সাধারণ বিদ্যালয়ে সাধারণ শ্রেণিতে অসমর্থ শিশুদের প্রথম থেকেই অন্তর্ভুক্ত করে একই সঙ্গে শিক্ষা দেওয়া হয়। কোনো বিভেদরেখা রাখা হয় না।

(৩) শিক্ষক (The Teacher) : শিক্ষকদের অক্ষম শিশুদের পাঠদান, মূল্যায়ন ইত্যাদি সম্বন্ধে পরামর্শ দান করেন এবং প্রয়োজনমতো অক্ষম শিশুকে সমন্বিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক শিক্ষক বিশেষ শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকেন। তিনি বা তাঁরা সাধারণ বিষয় সম্পদকক্ষের (Resource room) সাহায্য নিয়ে পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে শিক্ষা দান করেন। অন্তর্ভুক্তি বিদ্যালয়ে সমস্ত শিক্ষকই সাধারণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পাঠদানে প্রশিক্ষিত হন এবং সমস্ত শিশুর পঠনপাঠনের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন এখানেও সম্পদ কক্ষ থাকে।

(৪) শিক্ষা উপকরণ/শিক্ষণ-শিখন উপকরণ (Teaching aids / Teaching Learning material) : সমন্বিত শিক্ষাদান করা হয় সমন্বিত বিদ্যালয়ে (Integrated School) সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একই শ্রেণিতে অথবা অক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক শ্রেণিতে অথবা একই প্রধান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে একই স্কুল ক্যাম্পাসে কিন্তু পৃথক অট্টালিকাতে। এখানে সম্পদকক্ষ থাকবে। সকল ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারোপযোগী শিক্ষা উপকরণ থাকবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় সমস্ত শিশু একই শ্রেণিতে একই শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে প্রায় একই পদ্ধতি ও পাঠক্রম অনুসরণ করে। ব্যবহৃত শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষণ-শিখন উপকরণ এমনভাবে প্রস্তুত হয় যে, তা সমস্ত শিশুর পক্ষে গ্রহণযোগ্য।

(৫) নীতি/দর্শন (Principle/Philosophy) : পরবর্তীকালে তা রূপান্তরিত হল প্রথম সাধারণ বিদ্যালয়ে বিশেষ শ্রেণিতে (Special Class) শিক্ষাদান বা বিভেদীকরণে (Segregation) পরে সাধারণ শ্রেণিতে বিশেষ শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে (Integration)। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি হল ‘অন্তর্ভুক্তি’ (Inclusion) যা সুস্পষ্ট দার্শনিক ভিত্তিসম্পন্ন আন্দোলন, যার প্রধান লক্ষ্য হল একীভূত সমাজ গড়ে তোলা।

--------------

No comments

Hi Welcome ....