B.Ed 4th Semester Assignment | Course Code : VI (1.4.6) Gender, School and Society ১. ক্ষমতায়ন কি? ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিন? What i...
B.Ed 4th Semester Assignment | Course Code : VI (1.4.6) Gender, School and Society
১. ক্ষমতায়ন কি? ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিন?
What is empowerment? Describe the process of empowerment?
২. প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক দের কোন কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার?
The teacher would be alert in which issues of pre-primary education?
৩.সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন?
Write the role of a teacher in social change?
১.ক্ষমতায়ন কি? ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিন?
What is empowerment? Describe the process of empowerment.
▻ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই যে-কোনো সমাজের পুরুষ ও নারীদের শক্তি,নৈপুণ্য, আধিপত্য প্রভৃতির দিকে ভারসাম্য বজায় থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ‘ক্ষমতা’ বা ‘ক্ষমতায়ন’ একদিকে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ ধারণা তেমনি অন্যদিকে এটি মর্যাদাগত ধারণাও। আবার, ক্ষমতায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ব্যক্তি, সমষ্টি, লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণি, বর্ণ নির্বিশেষে পুনর্বিন্যাস ঘটানোর উদ্দেশ্যটি নিহিত থাকে।
❏ ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া (Empowerment Process) :
ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে সমাজতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি নানা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। এই সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য যেমন আছে তেমনি পারস্পরিক সম্পর্কও আছে সেগুলি হলো ― (i) শিক্ষা (ii) অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও স্বাধীনতা (iii) সমাজসংস্কার (iv) মানবাধিকার ও অন্যান্য অধিকার সচেতনতা (v) লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা ইত্যাদি।
(i) শিক্ষা (Education): যে সমস্ত সমাজে মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে এখনও বঞ্চিত, সেই সব সমাজে সমস্ত নারীকুলকে প্রকৃত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পরিসংখ্যান থেকে এ কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, মেয়েরা শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বিদ্যালয়ে যোগদান থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা, পেশা ও প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা সর্বক্ষেত্রেই একই চিত্র। এর দুটি দিক আছে- (১)মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ, বিষয় নির্বাচন, সমাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছোনো, কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণ স্বাধীনতা নেই। (২) নানা প্রতিবন্ধকতা উপরোক্ত ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষার অন্তরায় গ্রাম-শহর, তপশিলি শ্রেণি, নানা জনজাতি, ধর্মীয় সম্প্রদায় এরকম নানা বিভাজনের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বাধা আছে। সেই বাধা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা, মানসিক ইত্যাদি যা হোক, শেষ পর্যন্ত তার দরুন মেয়েদের শিক্ষা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। সুতরাং অবাধ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করাই যথেষ্ট নয়। মেয়েদের শিক্ষার বেলায় ছোটো বড়ো যে সমস্ত অন্তরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেগুলি দূর করাও একটি প্রধান কাজ। সুযোগ সৃষ্টি, বাধা দূর করা এবং প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও সাহায্য এই তিনটি প্রক্রিয়ার জন্য একযোগে ও ব্যাপকভাবে উদ্যোগ নিলে নারীশিক্ষার সমান অগ্রগতি ঘটতে পারে এবং নারী জাতির প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব হতে পারে।
(ii) অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও স্বাধীনতা (Financial Self-reliance and freedom): পুরুষের উপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা দুর্বলতার একটি প্রধান কারণ, এ কথা স্বীকৃত সত্য। আবার আর্থিক বঞ্চনার প্রশ্নটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখনও একই কাজের জন্য পুরুষ ও নারীর মজুরিতে পার্থক্য অনেকটাই। সেদিক থেকে নারীর শ্রমের মূল্য কম। আবার গৃহকাজের মতো যে কাজ অর্থকরী নয় তার সঙ্গে যুক্ত শ্রম সম্পূর্ণ মূল্যহীন। সুতরাং কম মজুরি ও বাধ্যতামূলক গৃহকাজ, এই দুইয়ে মিলে নারীর শ্রমের মূল্য নিতান্তই কম। শ্রমের উপযুক্ত মূল্য প্রদান ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ার একটি প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু আর্থিক স্বনির্ভরতাই যথেষ্ট নয়। নিজের উপার্জিত অর্থের উপর পরিপূর্ণ অধিকার ও তার সদ্ববহারের স্বাধীনতা না থাকলে আর্থিক স্বনির্ভরতা মূল্যহীন। আমাদের দেশেও অসংখ্য মহিলা নানা কাজে কমবেশি অর্থ উপার্জন করেন। তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য পারিবারিক সাচ্ছন্দ্য বিধান। আর্থিক স্বনির্ভরতার পাশাপাশি পরিবারে সাম্য ও যৌথ দায়িত্ববোধের মনোভাব তৈরি করার প্রচেষ্টাও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অপরিহার্য।
(iii) সমাজসংস্কার (Social Reform): সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা, সংস্কার-কুসংস্কার যে পক্ষপাতদুষ্ট সে কথা ইতিপূর্বে বলা হয়েছে। এরকম বহু রীতি ও প্রথা আছে যা নারীর ক্ষমতায়নের বড়ো বাধাস্বরূপ। উদাহরণ হিসেবে বাল্যবিবাহের কথা উল্লেখ করা যায়। সারা পৃথিবীতে যত বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে তার একটা বৃহৎ অংশ আমাদের দেশে ঘটে। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে প্রায় সব কয়টিতেই নাবালিকা কন্যার বিবাহ হয় সাবালক পাত্রের সঙ্গে। অর্থাৎ মেয়েরা একসঙ্গে নিজের শিক্ষা, আত্মবিকাশ ও আত্মসম্মান বোধের পূর্ণতা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। আর্থিক পরনির্ভরতা, মতামতের পরনির্ভরতা, অসম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব বিকাশ, আশু মাতৃত্ব এগুলি বাল্যবিবাহের স্বাভাবিক কল যা ক্ষমতায়নের পরিপন্থী। নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের জন্য সমাজসংস্কারও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। সামাজিক কুপ্রথাগুলির বিরুদ্ধে তীব্র ধারাবাহিক আন্দোলন, প্রয়োজনীয় আইনি তৎপরতা, যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে যথার্থ সচেতনতা তৈরি করা দরকার যা নারীজাতির সম্বন্ধে যে অচলাধ্যাস তা দুর্বল করতে সাহায্য করবে। সমাজে নারী জাতির মূল্য স্বীকৃত হলে তখনই প্রকৃত ক্ষমতায়ন সম্ভব।
(iv) মানবাধিকার ও অন্যান্য অধিকার সচেতনতা (Awareness about Human and other kights) : ভারতীয় সংবিধানে এবং সময়ে নারীজাতির জন্য যে সমস্ত আইনি সুরক্ষা ও সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়েছে, সাধারণ মেয়েরা ছাড়াও অধিকাংশ শিক্ষিত মেয়েরাও সে সম্বন্ধে অজ্ঞ অথবা উদাসীন।নারীবাদী তাত্ত্বিকরা যখন বলেন, একজন পুরুষকে দেখা হয় মানুষ হিসাবে কিন্তু মেয়েরা শুধুই মেয়ে, তখন তাকে অতিশয়োক্তি বলা চলে না। মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন ইত্যাদি সুরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত আছে ঠিকই, কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছোনোর পন্থা ও উদ্যম দুইয়েরই অভাব, একমাত্র সচেতনতা না থাকার কারণে। তা ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আস্থারও অভাব আছে, কারণ এদের সত্যিকারের প্রতিকার করার ক্ষমতা কম।
(v) লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা (Elimination of Gender Discrimination and Inculcation of Democratic Values): উপরোক্ত আলোচনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আরও একটি বিষয় ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে উল্লেখ করা প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া কোনো একতরফা সাময়িক কার্যক্রম মাত্র নয়। ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘকাল যাবৎ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব, যা শেষপর্যন্ত সামাজিক প্রক্রিয়ারই একটি অত্যাবশ্যক অঙ্গে পরিণত হতে পারে। সেই পর্যায়ে পৌঁছোলে তখন আর নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে দেখার দরকার হবে না। এই উদ্দেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রথমে ছোটোবেলা থেকে লিঙ্গনির্দিষ্ট ভূমিকা এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যাতে ওই ভূমিকা দুই লিঙ্গের মধ্যে যথাসম্ভব কম বৈষম্যসূচক হয়। অর্থাৎ মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট কাজ, আচার-আচরণ ইত্যাদি যেন কখনোই এমন না হয় যে তা পুরুষের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা সৃষ্টির কারণ হয়ে ওঠে। ছোটোবেলা থেকেই এই বিষয়টি জানা দরকার যে সকলেই সমান, প্রয়োজনমতো সকলেই সব ভূমিকা পালন করতে হতে পারে।
২. প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক দের কোন কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার?
The teacher would be alert in which issues of pre-primary education?
▻ প্রচলিত শিক্ষক শিক্ষণ ব্যবস্থা অনুযায়ী তিনটি স্তরে শিক্ষক শিক্ষণ হয়ে থাকে। ECCE সম্পর্কিত এবং প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ, তারপর DEIE (Diploma in Elementary Education) এবং BEd (Bachelor of Education) যথাক্রমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য। তিনটি স্তরেই লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের উপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। ECCE (Early Childhood Care and Education) ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য 'শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই ছেলে ও মেয়েদের পারস্পরিক মেলামেশা ও সমতাবোধের সচেতনতা। শিক্ষকরা সচেতন হলে প্রথম থেকেই ছোটোদের মধ্যেও সমতার মনোভাব তৈরি হবে।
১. ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বসার সুযোগ দিতে হবে। ২. ছোটোদের ছড়া, দলগত নাচ এগুলি এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন কোনো বিশেষ লিঙ্গের প্রতি পক্ষপাতিত্ব না দেখানো হয়। ৩. একই ধরনের খেলা, ড্রিল কিংবা শরীরচর্চা ছেলেমেয়েদের জন্য বরাদ্দ থাকা দরকার। ৪. লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দের ব্যবহার সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। নাম পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে, বিশেষভাবে ব্যক্তিনামের ক্ষেত্রে পুরুষ-নাম ও স্ত্রী-নামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হয়। ৫. বৃত্তি বা পেশার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভাজন এড়িয়ে চলতে হবে। সমস্ত পেশাই ছেলে ও মেয়েদের জন্য এরকম ধারণা দিতে হলে সেগুলি সরাসরি উল্লেখ করতে হবে। ৬. উপরোক্ত বিষয়ে ছোটোদের ধারণা দেওয়ার সবচেয়ে ভালো পন্থা ছবির ব্যবহার। ছবির ব্যবহার মেয়েদের প্রচলিত বৈষম্য অনুসারে চিত্রায়িত করার প্রথা পরিবর্তন করতে হবে। ছোটোদের পাঠ্যপুস্তকে ছবি দেওয়ার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েরা গতানুগতিক ভূমিকায় নিয়োজিত অবস্থায় রয়েছে। ৭. রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতির পাঠে লিঙ্গবৈষম্য যথাসম্ভব কমাতে হবে। যেমন - বাংলায় রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি নামগুলি সবই পুরুষবাচক। এগুলি যে আসলে লিঙ্গ পরিচয়হীন কিছু পদের নাম মাত্র সে বিষয়ে সচেতন করার উদ্দেশ্যে, যেসব মহিলা উক্ত পদগুলিতে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁদের বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে। শ্রম বিভাজন পড়াতে গিয়ে তা যেন লিঙ্গ বিভাজনে পরিণত না হয়। ৮. সাহিত্যের ক্ষেত্রে মহিলা কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারদের রচনাও সমান গুরুত্ব সহকারে পড়াতে হবে। ৯. শ্রেণিকক্ষে প্রশ্ন করার সময় এবং উত্তর সম্পর্কিত মতামত দেওয়ার সময় ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে হবে। ১০. সহশিক্ষামূলক শ্রেণিককে নজর রাখতে হবে ছেলে বা মেয়ে কেউই যেন তার লিঙ্গের জন্য হেয় বা অপদস্থ না হয়।
৩.সমাজ পরিবর্তনে শিক্ষকের ভূমিকা লিখুন?
Write the role of teacher in social change
▻ শিক্ষকের ভূমিকা বিদ্যালয়ে, গৃহে, বৃহত্তর সমাজে কী বা কেমন হওয়া উচিত সেই প্রশ্ন অবাস্তব। তার চেয়ে সম্ভাব্য ভূমিকা কী হতে পারে সেই আলোচনা কিছুটা প্রাসঙ্গিক, যদিও তা নির্ধারণ করা সহজ নয়।
প্রথমত, শিক্ষক হিসেবে একজন ব্যক্তির নিজের সম্বন্ধে চিন্তাধারা কী? অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে তিনি তাঁর কোন কোন ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন। তিনি যদি মনে করেন আমার কাজ ক্লাসে পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যথাসম্ভব ভালো বক্তৃতা দেওয়া—তবে বক্তৃতার প্রতি তাঁর মনোযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে মনোযোগ দিয়ে বক্তৃতা শোনার জন্য ধমক দেওয়া ছাড়া তাঁর আর কিছু করার থাকে না। আর কেউ যদি মনে করেন ছাত্রছাত্রীকে নিজে নিজে বোঝার জন্য সুযোগ দেওয়া আগে দরকার, তাহলে দুই শিক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গিতে যে বিরাট পার্থক্য হয় তার জন্য পরিবর্তনের কাণ্ডারি হিসেবে তাঁদের মূল্যমানেরও বিরাট পার্থক্য হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, উপরোক্ত প্রসঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করা দরকার একজন শিক্ষকের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর নিজের বিশ্বাস (Belief) কী? এই জাতীয় বিশ্বাস এতটাই শক্তিশালী যে অনেক সময় শিক্ষকের ভূমিকা সম্বন্ধে তাঁর জ্ঞানকেও তা ছাপিয়ে যায় এবং বিশ্বাস অনুযায়ী ভূমিকা পালনে বাধ্য করে। এই বিশ্বাস নিয়ন্ত্রিত হতে পারে ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা আর ব্যক্তিত্বের ধরন দ্বারা।
তৃতীয়ত, শিক্ষকের নিজের প্রতি আস্থা কতটা। আস্থার বিষয়টির মনোবিজ্ঞানসম্মত ভাষায় আত্মসক্ষমতা (Self efficacy) ও আত্মমর্যাদাবোধ (Self esteem) এই দুটি ধারণার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ শিক্ষক যদি মনে করেন আমি একটি পাঠ্য বিষয় সম্বন্ধে যেটুকু জ্ঞাতব্য আছে সেটুকুই জানাতে পারব তবে তিনি বক্তৃতা দিয়ে কাজ সারতে সচেষ্ট থাকেন। আর যদি কারও মনে হয় আমি বিষয়টির মর্মে প্রবেশ করতে পারব, তখন তাঁর ভূমিকা আমূল পরিবর্তিত হয়ে যাওয়াই সম্ভব।
চতুর্থত, শিক্ষকের ভূমিকা একমাত্রিক নয়। তাঁর বহুমাত্রিক ভূমিকার প্রতিটি সম্বন্ধে সচেতন থেকে তা পালন করতে চাইলে তিনি যথার্থই সমাজ পরিবর্তনের কাণ্ডারি হয়ে উঠতে পারেন। আর একটি মাত্র মাত্রাকে বেছে নিতে চাইলে তা কখনোই সম্ভব নয়। কাজেই পরিবর্তনের ঋত্বিক হিসেবে শিক্ষক কতটা সক্ষম তার বিচার না করে এ কথা আশা করা যায় না যে শিক্ষকের নিষ্ক্রিয় (Passive) প্রভাবে, শুধুমাত্র নিজের আদর্শ ভূমিকা দিয়ে তিনি পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। লিঙ্গবৈষম্য হ্রাস করার পরিপ্রেক্ষিতে উপরোক্ত বিচার্য বিষয়গুলির মূল্য খুবই বেশি।
Course : VIII(B) (1.4.8B) Assignment
Course : VIII (B) অ্যাসাইনমেন্ট
Course Code : (1.4.8B) Knowledge and Curriculum Part -II
১. পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য নিরূপণ করুন।
Make differences between curriculum and syllabus.
২.পাঠক্রম প্রণয়নে মেধাসত্ত্ব বা অভিজাততন্ত্র বিষয়টি আলোচনা করুন।
Discuss the 'meritocracy' and 'elitism' in curriculum devlopment .
১. পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির পার্থক্য নিরূপণ করুন।
Make differences between curriculum and syllabus.
▻ প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচি বলতে একই বিষয়কে বোঝানো হত। কিন্তু আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠক্রম এবং পাঠ্যসূচির মধ্যে কিছু অর্থ ও পরিধিগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নিম্নে সেই পার্থক্যগুলি আলোচনা করা হল—
পাঠক্রম (Curriculum) | পাঠ্যসূচি (Syllabus) |
---|---|
(i) পাঠক্রমের ধারণা বহুবিধ। | (i) পাঠ্যসূচির ধারণা সংকীর্ণ। |
(ii) পাঠক্রমে ইংরেজি syllabus শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। | (ii) পাঠ্যসূচিতে ইংরেজি curriculum শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ থেকে। |
(iii) প্রকৃতিগত দিক থেকে পাঠ্যসূচি হল ‘Descriptive’ | (iii) পাঠক্রম হল ‘Prescriptive' |
(iv) শ্রেণিকক্ষ ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার সমষ্টি পাঠক্রম। | (iv) অপরদিকে পাঠ্যসূচির চর্চা মূলত শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। |
(v) পাঠ্যসূচির সময়কাল পাঠক্রমের থেকে কম হয় এবং সমগ্র কোর্সের জন্য পাঠক্রম তৈরি হয়। | (v) অপরদিকে পাঠসূচি রচিত হয় কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন পৃথক পৃথক সেমিস্টারের জন্য। |
২. পাঠক্রম প্রণয়নে মেধাসত্ত্ব বা অভিজাততন্ত্র বিষয়টি আলোচনা করুন।
Discuss the 'meritocracy' and 'elitism' in curriculum devlopment.
❏ মেধাসত্ত্ব : EANS গুণতন্ত্র একটি সমাজব্যবস্থা যার মাধ্যমে ব্যক্তিগণ নিজ সামর্থ্য ও প্রচেষ্টা অনুযায়ী পুরস্কার অর্জন করে নেয়। এটি হল যোগ্যতা ও গুণ অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা। গুণতন্ত্র হল উৎকর্ষসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ দ্বারা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা। এখানে বৃহত্তর অর্থনীতি ও সমাজের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা ও মূল্যবোধের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে একজনের ভাগ্য তার সামর্থ্য, প্রতিভা ও প্রচেষ্টার উপর ভর করে গড়ে উঠতে পারে। প্রতিভা বা গুণতন্ত্র বা মেধাসত্ত্ব (Meritocracy) ব্যক্তি সাফল্যে উদ্বোধক হিসেবে কাজ করে যা আদতে সমাজের সম্মিলিত অগ্রগমন এবং সম্পদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
সাধারণভাবে মেরিটোক্রেসি কথাটির মধ্যেই এর মূল নিহিত আছে। মানুষের ধী-শক্তি বা মেধাশক্তির ওপর নির্ভর করে যে মতবাদ সৃষ্টি হয়েছে, সেই মতবাদটি ‘মেধাস্বত্ব’ বা মেরিটোক্রেসি নামে পরিচিত। এই মেরিটোক্রেসি শব্দের মধ্যেও ক্ষমতার আভাস পাওয়া যায়। এই মেধাসত্ত্বের দ্বারা বিষয়বস্তু নির্বাচনের পর প্রয়োজন হয় বিন্যাসের ক্ষমতা। সঠিক পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা অর্জনের পর সঠিকভাবে বিষয়বস্তুকে বিন্যস্ত করা সম্ভব। এই বিষয়বস্তু বিন্যস্ত করতে হয় বিষয়ের কাঠিন্যের মান অনুযায়ী। এই মতবাদের মূলকথা হল ব্যক্তির উন্নয়ন। এই উন্নয়নের জন্য যেমন দৈহিক সক্ষমতা প্রয়োজন ঠিক তেমনি মানসিক সক্ষমতাও প্রয়োজন। সমস্ত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেরিটোক্রেসির পরিবর্তন সাধিত হয়। ডারউইনবাদের ওপর মেরিটোক্রেসি বা মেধাসত্ত্ব নির্ভরশীল। যেমন, সিঙ্গাপুরে বিশেষ অনুষ্ঠানের সঙ্গে মেরিটোক্রেসির বাস্তব রূপ আমরা দেখতে পাই। সিঙ্গাপুরে মেরিটোক্রেসি অর্থে যোগ্যতাকে ধরা হয়। এই যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে পাঠক্রম উল্লেখ্য। পাঠক্রমে উচ্চমেধা সৃষ্টির সহায়ক বিষয় সংযোজিত করা হয়।
মেরিটোক্রেসি বা মেধাসত্ত্ব যদি কোনো দেশের পরিচালনার মূল মূল্যবোধ হয় তাহলে সে দেশের সমাজতত্ত্ব বিদ্যায় প্রধান স্থান অধিকার করে মেরিটোক্রেসি বা মেধাসত্ত্ব। সেখানে প্রমাণ করার প্রচেষ্টা থাকে কীভাবে মেরিটোক্রেসি অভিজাততন্ত্রকে প্রভাবিত করে। যেমন সিঙ্গাপুর অভিজাততান্ত্রিক সমাজ, তার কারণ মূলত মেধাসত্ত্ব । পাঠক্রমের মাধ্যমে সেইসব বিষয় শেখানো হয় যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্চ পারদর্শিতার পরিমাপ করা হয়। এই উচ্চ মেধার ব্যক্তি অন্বেষণ মেরিটোক্রেসির প্রধান লক্ষ্য। মেরিটোক্রেসি সম্পৃক্ত পাঠক্রমের অন্যতম লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল মেধা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত সক্ষমতা সমান। এই কারণে বলা যায় যে মেরিটোক্রেসি সম্পৃক্ত পাঠক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা শিক্ষাগত সক্ষমতা এবং নৈতিকতার মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করতে পারি। এর থেকে সহজেই একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারা যায় যে মেরিটোক্রেসি সম্পৃক্ত পাঠক্রম মানুষের নৈতিক গুণাবলি বিকাশের সহায়ক। সত্যিকারের মেধাসত্ত্ব পাঠক্রম একটি আদর্শ নীতিনিষ্ঠ সমাজ তৈরিতে সাহায্য করে। এই সমাজ উদারনৈতিক। এখানে প্রত্যেক ব্যক্তির সমান সুযোগ থাকে। কোনো ব্যক্তি এখানে বিশেষ সুযোগসুবিধা পায় না।
❏ অভিজাততন্ত্র বা এলিটিজম্ : EINF অভিজাততন্ত্র (Elitism) হল একটি বিশ্বাস বা মনোভাব (Belief or attitude) যা ‘Elite' তৈরি করে। 'Elite' হল উচ্চ, উন্নত বংশধারা বিশিষ্ট, মৌলিক গুণ অথবা মর্যাদাসম্পন্ন, উচ্চবুদ্ধি, সম্পদ, বিশেষ প্রশিক্ষণ অথবা অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ একদল মানুষ যাদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব সমাজে অন্যদের অপেক্ষা বেশি; কোন্ বিষয়ে বা ঘটনায় যাদের মতবাদ বেশি প্রাধান্য পায়, সার্বিকভাবে যাদের মত সমাজের গঠনমূলক বিষয়ে কাজে লাগে এবং যাদের অনন্য দক্ষতা, সামর্থ্য অথবা প্রজ্ঞা তাদের দেশ বা সমাজ বা কোনো কাজ পরিচালনায় যথেষ্ট সক্ষম করে তোলে। অভিজাত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রাজকীয় মনোভাব দেখা যায়। এদের মধ্যে সাধারণত কিছু সংলক্ষণ দেখা যায়— (i) বিশ্বাস, (ii) উচ্চাভিলাষ, (iii) উচ্চমেধা, (iv) সম্পদ, (v) বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, (vi) অভিজ্ঞতা।
সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে তুলনায় এই মতবাদে কিছু স্বতন্ত্র সত্ত্বা দেখা যায়। এদের প্রভাবে অন্যান্যরা প্রভাবিত হয়। এই মতবাদ (Views) অতি প্রয়োজনীয় বলে ধরা হয়। বিদ্যালয় পাঠক্রম সংস্কার ও পুনর্গঠন এই মতবাদের প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। সমাজ সংগঠনে এই মতবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এই মতবাদের অন্তর্ভুক্ত। এই মতবাদের দক্ষতা, সংলক্ষণ, জ্ঞান প্রভৃতি সরকার পরিচালনায় বিশেষভাবে সাহায্য করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে “Elitism” বলেত বোঝায় ক্ষমতার মনোনিবেশীকরণ। যেমন আইনজীবী, চিকিৎসক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী প্রমুখ। প্রকারান্তরে বলা চলে যে, যে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে ক্ষমতা থাকে তারাই অভিজাত সম্প্রদায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা চলে, অভিজাততন্ত্র হল সমাজবিজ্ঞান অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশ্লেষণ, যেখানে অভিজাত সম্প্রদার দ্বারা সরাসরি সমাজ প্রভাবিত। যেহেতু অভিজাত সম্প্রদায় রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করে, তাই পাঠক্রমেও এদের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অভিজাতবাদ সামাজিক শ্রেণির সঙ্গে সম্পর্কিত। সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের উচ্চ পর্যায়ভুক্ত শ্রেণি সাধারণত এই “এলিট” পর্যায়ভুক্ত। শিক্ষায় সমসুযোগের কথা স্বীকৃত হলেও আজও আমাদের দেশে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে সব ধরনের শিশুরা শিক্ষার সব কেন্দ্রে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায় না। বিশেষভাবে এলিট বা বিত্তমান শিশুরা Enriched class-room বা সমৃদ্ধ শ্রেণিকক্ষে পড়ার সুযোগ পায় অর্থনৈতিক কারণে। অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের কতিপয় শিশু মেধার বলে এই শিক্ষার সুযোগ পায়। একথা স্বীকার করতেই হবে শুধুমাত্র মেধা ও পরিশ্রমই সাফল্যের চূড়ান্ত মাপকাঠি নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন অন্যান্য সুযোগসুবিধা। এই অন্যান্য সুযোগসুবিধা আলাদা করে পেতে হলে প্রয়োজন অর্থের, প্রয়োজন এলিট সম্প্রদায়ের। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠক্রম গ্রহণে এলিট সম্প্রদায়ের প্রয়োজন আছে।
No comments
Hi Welcome ....