Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

Sahitya Mela Class VIII Bengali Chapter 1 Question Answer | বোঝাপড়া কবিতার হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর

বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর ১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন? উত্তর : জোড়াসাঁকো ঠ...


অষ্টম শ্রেণি বাংলা প্রশ্ন উত্তর


বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর


১.১ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন?
উত্তর : জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘ভারতী’ ও ‘বালক’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।

১.২  ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়?
উত্তর: ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।

২.  নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১‘সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।'—কোনটি সবার চেয়ে শ্রেয়?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। কবি উল্লেখ করেছেন—
‘ভেসে থাকতে পারো যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়।'—
অর্থাৎ অপ্রত্যাশিত আঘাতে বিচলিত না হয়ে, হতাশ না হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করাকেই কবি ‘ভেসে থাকা’ অর্থে প্রকাশ করেছেন। আর সেই কাজটিই সবচেয়ে ভালো এমন দাবি জানিয়েছেন।

২.২‘ঘটনা সামান্য খুবই।'— কোন ঘটনার কথা বলাহয়েছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। কোনোরকম উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ যেখানে থাকে না সেখানেই আচমকা জাহাজডুবির মতো ঘটনা ঘটে যায়।

২.৩ ‘তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।'—উদ্ধৃতিটির নিহিতার্থ স্পষ্ট করো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। পৃথিবীতে শুধু মন্দই নেই, ভালোও আছে। তবে তার জন্য নিজেকে কিছু স্বার্থত্যাগ করতে হবে। নিজের মনের মধ্যে আড়াল তৈরি করে মানুষ। সেই আড়ালকে সরিয়ে ফেলতে হবে নিজের প্রয়াসেই। তবে সব কিছুর জন্য দরকার মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করা আর অন্তর থেকে সব কিছুকে আপন করে নেওয়া। তাহলেই অনেকখানি সুখের অনুভব পাওয়া যাবে বলে কবি মনে করেছেন।

২.৪ 'মরণ এলে হঠাৎ দেখি/মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।'—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। বেঁচে থাকতে আমরা বাঁচার সুখ বুঝতে চাই না—আমরা এমনই অবুঝ; কিন্তু যখনই বিপদে পতিত হই অর্থাৎ জীবনে খুবই সংকটজনক অবস্থায় পতিত হই, তখনই আমরা তার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করতে থাকি। তখন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আকুলতা বেড়ে যায় বহুগুণ। অথচ তার আগে এমন বহুক্ষেত্রে হয় যে আমরা সমঝোতা বা বোঝাপড়া না করেই চলার চেষ্টা করি এবং শেষে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষতও হই। তখন মনে হয় মরণ হলেই বাঁচি। অথচ সত্যি মরণের সামনে যখন উপস্থিত হই তখন বাঁচার জন্য মনপ্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

২.৫ তাহারে বাদ দিয়েও দেখি / বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর —উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন সত্য প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি মানুষের সংসারজীবনের প্রতি মোহ ও আসক্তির স্বরূপ ব্যক্ত করেছেন। আশা-আকাঙ্ক্ষা, মায়ামমতার মোহপাশে ব্যক্তিজীবন আবির্ভূত হয়। সন্তানকে কেন্দ্ৰ করে মায়ের জীবন, পরিবারকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিজীবন আবর্তিত হয়। জীবনের সমস্ত সুখ তখন শুধুমাত্র আপনার জন, প্রিয়জনের জন্যই মনে হতে থাকে। বিশ্বের সুমহান আনন্দ যজ্ঞের শরিক হিসেবে তখনও পর্যন্ত মানুষ নিজেকে ভাবতে পারে না। কিন্তু এমন একান্ত নিবিড় চাওয়ার বন্ধন যেদিন শিথিল হয়, তখন কিন্তু বিশ্বনিখিল এতটুকু কৃপণতা দেখায় না বাঁচার রসদ জুগিয়ে দেওয়ার জন্য। কারোর অনুপস্থিতি জীবনের গতিকে রোধ করতে পারে না। কারণ বিশ্বভুবন জুড়ে জীবনের বাণীই ধ্বনিত হয়ে চলে।

২.৬ কীভাবে মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে হবে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। আমাদের জীবনে ভালোমন্দ বহুরকমের ঘটনা ঘটে থাকে। তাতে মানুষ আঘাতও পায়। কিন্তু কবি বলেছেন—আমাদের কাজ হবে 
মনকে বোঝানো যে, কেউ আমাদের ভালোবাসবে, আবার অনেকেই ভালোবাসবে না। কেউ কেউ আমাদের ফাঁকিও দেবে, আবার আঘাতও খেতে হবে কখনো-কখনো। নিজেকে বিকিয়ে দেবে, আবার কেঁউ আছে যে কানাকড়িও অন্যের জন্য খরচ করবে না। সুখের আশা যেই করতে শুরু করা হবে, তখনই হয়তো নতুন কোনো বিপদ এসে আঘাত হানবে, পাঁজর উঠবে কেঁপে। যেখানে শঙ্কার কোনো সম্ভাবনা নেই, হয়তো সেখানেই ভরাডুবি হতে হবে। এই সকল ঘটনার মধ্য দিয়েই জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখানেই মনকে বোঝাতে হবে যে এসব জীবনেরই অঙ্গ, এগুলিই সত্য এবং বাস্তব এগুলিকে মেনে নিতেই হবে। এভাবেই মনের সাথে বোঝাপড়া করতে হবে।

২.৭ ‘দোহাই তবে কার্যটা /যত শীঘ্র পারো সারো।'- কবি কোন কার্যের কথা বলেছেন, সেই কার্যটি শীঘ্র সারতে হবে কেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। বিধি অর্থাৎ নির্দিষ্ট কিংবা ভবিষৎ যে নির্দেশ তাকে দেয় তা স্বীকার না করে নিজের জীবনকে আরও অসহনীয় করে তোলার যে প্রয়াস, সেই কাজের কথা কবি বলেছেন। ব্যক্তিমানুষ না চাইলেও তার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার কার্যকারণ ব্যক্তিমানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এমন ঘটনাকেই আমরা বিধিলিপি, নিয়তি, ভাগ্য বলে থাকি। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে সেই সত্যকে স্বীকার না করলে জীবনে দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বরং ভবিষৎ কে মেনে নিয়ে মনের ভার হালকা করে নিলে তবেই আগামীর পথে চলতে পারবে জীবন। আর তা না হলে জীবন
ক্লান্ত, স্থবির হয়ে পড়ে। সেই কারণেই কবি উক্ত উক্তিটি করেছেন।

২.৮ কখন আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালানো সম্ভব?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। অন্ধকার ঘরে প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে অন্ধকারকে সরিয়ে আলোকের আগমন ঘটানো হয়। আলোচ্য অংশে ‘আঁধার ঘর' শব্দটি অশান্ত, দুঃখভারাক্রান্ত মনের প্রতীক। প্রদীপ যেমন অন্ধকার ঘরের অন্ধকার দূর করে; তেমনই অশান্ত, দুঃখভারাক্রান্ত মনের ভার লাঘব হয় কান্নার মধ্য দিয়ে। মনোবেদনা অশ্রুভারে নির্গত হয়ে গেলে দমবন্ধকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শূন্য মন তখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। আর তাই কবি বলতে চেয়েছেন শোকাতুর মন কান্নার মধ্য দিয়ে শোককে প্রশমিত করার পর আবার নতুন করে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে প্রত্যাবর্তন করে।

২.৯ 'ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে/কতটুকুন তফাত হলো।'— এই উদ্ধৃতিটির মধ্যে জীবনের চলার ক্ষেত্রে কোন পথের ঠিকানা মেলে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। মানুষে মানুষে তফাত থাকেই কিন্তু তাকে ভুলে যেতে হবে। তবেই জীবনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। আমাদের জীবনে প্রশ্নোক্ত অংশটির গুরুত্ব অসীম। প্রতিদিনের জীবনে কতভাবে একের সঙ্গে অপরের পার্থক্য দেখা যায়, কিন্তু তা নিয়ে পড়ে থাকলে তো জীবন চলে না। জীবনে অগ্রসর হতে আমরা এইসব তফাতকে ভুলে যাই। তফাত থেকেই তৈরি হয় বিভেদ, সেই বিভেদকে তো আমাদের ভুলে যেতেই হবে। সবাইকে মানিয়ে-বুঝিয়ে অর্থাৎ বোঝাপড়া করেই জীবনে বেঁচে থাকি আমরা। প্রশ্নোক্ত অংশটির মধ্যে জীবনে চলার পথের এমন ঠিকানাই খুঁজে পাওয়া যায়৷

২.১০ 'অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি/এলে সুখের বন্দরেতে ‘ঝঞ্ঝা কাটিয়ে আসা’ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। জীবনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে জীবন অগ্রসর হয়। প্রকৃতির বুকে যেমন দুর্যোগ তথা ঝড়-ঝঞ্ঝার দেখা মেলে তেমনি মানবজীবনেও প্রতিবন্ধকতা স্বরূপ ঝঞ্ঝার দেখা পাওয়া যায়। জীবন সংগ্রামময়; ভালোমন্দের দোলাচলতার মধ্য দিয়েই জীবন এগিয়ে চলে। প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা যেমন দুর্যোগ ঘনিয়ে আনে তেমনই দমবন্ধকর আবহাওয়া থেকে মুক্তিও দিয়ে থাকে। মানুষ তেমনই সমস্ত বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম করে জীবনের সুখানুভূতিকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়, বিপদের সম্মুখীন হলেই মানুষ একমাত্র তার দক্ষতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা লাভ করতে পারে। নিস্তরঙ্গ জীবন কোনো মানুষকেই আদর্শ জীবনে উন্নতি করতে পারে না। জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে যাওয়া। প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রমের মধ্যেই একমাত্র সম্ভব যথার্থ জীবনলাভ। উদ্ধৃত উক্তির মধ্য দিয়ে কবি উক্ত বক্তব্যই প্রকাশ করেছেন।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৩.১ ‘ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।'—তুমি কি কবির সঙ্গে একমত? জীবনে চলার পথে নানা বাধাকে তুমি কীভাবে অতিক্রম করতে চাও?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। কবি বলেছেন যে জীবনে ভালোমন্দ যাই আসুক না কেন, সহজেই তাকে স্বীকার করে নিতে হবে, মেনে নিতে হবে—কবির এই অভিমতের সঙ্গে আমিও সম্পূর্ণভাবে সহমত হচ্ছি। কারণ জীবনে চলার পথে সুখের সঙ্গে দুঃখকে যেমন মেনে নিতে হয়, তেমনই ভালোর সঙ্গে মন্দকেও মেনে নিতেই হবে। এই মানসিক বোঝাপড়াতেই জীবনে আনন্দ আসে। জীবনে চলার পথে নানা বাধা আসবেই, সেই বাধা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। আমরা অনেক সময় তাতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, দিশাহারা হই। তবে আমার মনে হয় এভাবে বাধাকে ভয় পেলে চলবে না; ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি, সহনশীলতার সঙ্গে বাধাকে অতিক্রম করতে হবে। মেনে নিতে হবে যে বাধা থাকবেই, নাহলে জীবন তো গতিহীন হয়ে পড়বে। বাধার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে, তাকে অতিক্রম করার চেষ্টায় প্রবৃত্ত হতে হবে, যা সত্য তাকে মেনে নিতেই হবে। এভাবেই জীবনে চলার পথের বাধাকে আমি অতিক্রম করতে চাই।

৩.২ 'মনেরে আজ কহ যে,/ভালো মন্দ যাহাই আসুক / সত্যেরে লও সহজে।'— কবির মতো তুমি কি কখনও মনের সঙ্গে কথা বলো? সত্যকে মেনে নেবার জন্য মনকে তুমি কীভাবে বোঝাবে— একটি পরিস্থিতি কল্পনা করে বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। কবি বলেছেন, মনকে বোঝাতে হবে যে সে যেন সত্যকে মেনে নেয়। হ্যাঁ, কবির মতো আমিও নিজের মনের সঙ্গে অনেক সময়েই কথা বলি। বিশেষ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে, দ্বিধা তৈরি হলে বা প্রতিকূল অবস্থায় পড়লেই আমি আমার মনের সঙ্গে কথা বলে থাকি।

কল্পিত কাহিনি : সামনেই আমার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি সবসময় অঙ্কটা নিয়ে ভয়ে থাকি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ছোটো প্রশ্নের অধিকাংশই আমার অচেনা। ভাবতে ভাবতে কিছুটা সময় কেটে যাবে। তখন মনকে বলব ‘আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।' কিন্তু চতুর্থ অঙ্কটি করতে গিয়েই আমি আটকে যাব। তখন সেটা ছেড়ে পাটিগণিত করতে গিয়ে দেখব—প্রথমটিই আমার অজানা। আমার শরীর দিয়ে তখন ঘাম ঝরতে শুরু করবে, তখন আমি আমার মনের সঙ্গে কথা বলব। মনকে বোঝাব—আমার বন্ধুরা যখন পারবে, আমিও তখন পারব। আমাকে ভালো ফল করতেই হবে। কঠিন প্রশ্ন তো হতেই পারে। সবসময় আমার মনের মতো প্রশ্ন হবে নাকি? মন থেকে এটা মানতেই হবে যে—সহজ যেমন থাকবে, কঠিনও থাকবে। এটা তো পরীক্ষারই অঙ্গ—জীবনের অঙ্গ। মন আমার কথায় সহমত পোষণ করে জানাবে—তুমি পারবে, তুমি মাথা ঠান্ডা করে আবার অঙ্কগুলি দেখো।’ এবার একটু চোখ বন্ধ করে অবস্থাটা একটু বুঝে নেব। তারপর আবার অঙ্কগুলি করতে থাকব। এবার দেখব অঙ্কগুলি সুন্দরভাবে হয়ে যাচ্ছে। শেষপর্যন্ত পরীক্ষাটা খারাপ হবে না। এইভাবে সত্যকে মেনে নিয়ে মনকে বুঝিয়ে প্রতিকূল অবস্থা থেকেও সাফল্য আসবে।

৩.৩‘তেমন করে হাত বাড়ালে/সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।'—‘তেমন করে’ কথাটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। এখানে কবি কী ধরনের সুখের ইঙ্গিত করেছেন—লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ১৩০৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি ‘বোঝাপড়া’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে। ‘তেমন করে’ বলতে বোঝানো হয়েছে মন থেকে। মানুষ অনেক সময় নিজ নিজ অহংবোধে মগ্ন থাকে, ফলে মন খুলে অপরের সঙ্গে মিশতে পারে না। তারা তখন নিজের চারদিকেই অন্ধকারের আড়াল তৈরি করে। তখন তারা জগতের প্রকৃত সুখ থেকে বঞ্চিত থাকে। কিন্তু যদি অহংটাকে সরিয়ে ফেলে মানুষ নিজের চারদিকের আড়াল সরিয়ে সকলের মাঝে এসে দাঁড়ায়, তবেই সে বিশ্বচরাচরের অনেকখানি সুখ উপলব্ধি করতে পারবে। ‘তেমন করে’ অর্থে প্রাণের অন্তঃস্থল থেকে হাত বাড়াতে হবে সকলের কাছে—বিশ্বপ্রকৃতির কাছে। অন্তরে আঁধার রেখে চললে এই সুখ পাওয়া যাবে না। পবিত্র মনে এগিয়ে আসতে হবে। তেমন করে’ বলতে কবি এ কথাই বুঝিয়েছেন।কবি এখানে পার্থিব সম্পদসুখের কথা বলেননি। এখানে তিনি মানসিক সুখের কথা ব্যক্ত করেছেন। সেই সুখে মন শান্ত, উদার হয়।

৪.নীচের প্রশ্নগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্ত দল ও রুদ্ধ দল চিহ্নিত করো: 
বোঝাপড়া, কতকটা, সত্যেরে, পাঁজরগুলো, বিশ্বভুবন, অশ্রুসাগর।
প্রশ্ন দল বিশ্লেষণ মুক্ত দল ও রুদ্ধ দল
বোঝাপড়া বো-ঝা-প-ড়া বো—মুক্ত দল; ঝা—মুক্ত দল; প— মুক্ত দল; ড়া— মুক্ত দল।
কতকটা ক-তক্‌-টা ক— মুক্ত দল; তক্— রুদ্ধ দল; টা— মুক্ত দল।
সত্যেরে সত্-তে-রে সত্ — রুদ্ধ দল; তে— মুক্ত দল; রে— মুক্ত দল।
পাঁজরগুলো পাঁ-জর্-গু-লো পাঁ— মুক্ত দল; জর্রু— রুদ্ধ দল; গু— মুক্ত দল; লো— মুক্ত দল।
বিশ্বভুবন বিশ্-শ-ভু-বন্ বিশ্—রুদ্ধ দল; শ— মুক্ত দল; ভু— মুক্ত দল; বন্- রুদ্ধ দল।
অশ্রুসাগর অশ্-রু-সা-গর্ অশ্— রুদ্ধ দল; রু— মুক্ত দল; সা—মুক্ত দল ; গর্—রুদ্ধ দল।

৫. নীচের প্রতিটি শব্দের তিনটি করে সমার্থক শব্দ লেখো :
মন, জখম, ঝঞ্ঝা, ঝগড়া, সামান্য, শঙ্কা, আকাশ।
প্রদত্ত শব্দ সমার্থক শব্দ
মন — হৃদয়, অন্তর, দিল।
জখম — ক্ষত, আঘাত, আহত।
ঝঞ্ঝা — ঝড়, ঝটিকা, বাত্যা।
ঝগড়া — বিবাদ, দ্বন্দ্ব, কলহ।
সামান্য — অল্প, তুচ্ছ, কিঞিৎ।
শঙ্কা— ভয়, আশঙ্কা, আতঙ্ক।
আকাশ— গগন, অম্বর, শূন্য।

৬. নীচের প্রতিটি শব্দের বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে শব্দজোড় তৈরি করে বাক্যরচনা করো : 
আঁধার, সত্য, দোষ, আকাশ, সুখ।
বিপরীত শব্দ বাক্যরচনা
আঁধার —আলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল আঁধার-আলো।
সত্য—অসত্য সকলেরই সত্য-অসত্য বোঝার ক্ষমতা থাকা দরকার।
দোষ—গুণ প্রত্যেক মানুষেরই দোষ-গুণ থাকে।
আকাশ—পাতাল বসে বসে আকাশপাতাল কী ভাবছ?
সুখ—দুঃখ সুখ-দুঃখ তো জীবনেরই অঙ্গ।


Read More

No comments

Hi Welcome ....