WBUTTEPA B.ED Semester - II EPC-2 Drama and Arts in Education Mark 5 Notes Course-EPC-2 শিক্ষায় নাটক ও চারুকলা (1.2 EPC-2) Drama and Arts ...
WBUTTEPA B.ED Semester - II EPC-2 Drama and Arts in Education Mark 5 Notes
Course-EPC-2 শিক্ষায় নাটক ও চারুকলা
(1.2 EPC-2) Drama and Arts in Education
৫টি অধ্যায় : Course-EPC-2 [B.ED 2nd Semester]
- নাটক ও তার মৌলিক ধারণাসমূহ
- সংগীত (গায়ন এবং বাদন)
- নৃত্যকলা
- চিত্রশিল্প কলা ও অঙ্কন
- সৃজনশীল শিল্প
Course-EPC-2 শিক্ষায় নাটক ও চারুকলা ৫টি অধ্যায়ের মার্ক-৫ নোটস প্রশ্নের সূচিপত্র :
- বি এড পাঠক্রমে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ই.পি.সি.-2-এর যৌক্তিকতা আলোচনা করুন। (Discuss the reasons of EPC-2 as a compulsory paper in BEd curriculam)
- ‘সামাজিক দূরত্ব’ দূরীকরণে পোস্টার নাটকের ভূমিকা আলোচনা করুন। (Discuss the role of Poster drama to remore 'social distance.)
- শিক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পথনাটিকার গুরুত্ব আলোচনা করুন। (Discuss the significance of street-play in Education and Social changes.)
- চরিত্রাভিনয় কাকে বলে? বিদ্যালয় স্তরে এর প্রয়োজনীয়তা কী? (What is role play? What are the necessity of role play in the school stage?)
- ‘পথনাটিকা’-র উদ্দেশ্যগুলি লিখুন। (Write objectives of street play.)
- শিক্ষার্থীদের শিখনে নাটকের প্রভাব উল্লেখ করুন। (Mention effects of drama in student's learning process.)
- লোকসংগীতের সংজ্ঞা দিন। বাউলগানের সম্বন্ধে লিখুন। (Define Folk- song. Write about the Baul-Gan (Baul-song).
- শিক্ষা অনুশীলন ক্ষেত্রে গান ও বাজনার ভূমিকা আলোচনা করুন। (Discuss the role of Gayan and Vadan in Educational practices.) অথবা, বিদ্যালয়ের শিক্ষা-প্রক্রিয়ায় ‘গায়ন’ ও ‘বাদন’ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করুন। (Discuss how can Gayan and Vadan be used in Educational practices at schools.)
- সংগীতে স্বর কাকে বলে? (What is 'swar' in music?)
- বিদ্যালয়ে প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করুন। (Discuss the educational motives of singing prayer songs in school.)
- শিক্ষাক্ষেত্রে নৃত্যনাটিকার একীকরণের গুরুত্ব আলোচনা করুন। (Discuss the importance of 'Nritya Natika' for integration in education.) অথবা, নৃত্যনাটিকার ওপর একটি টীকা লিখুন। (Write a short note on NrityaNatika.)
- ‘বিহু নৃত্য’ সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখুন। (Write in brief about 'Bihu Dance.)
- ভারতের যে-কোনো দুটি লোকনৃত্যের বিবরণ দিন।(Describe any two Folk dance forms of India.)
- ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে লোকনৃত্য কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।(How is folk dance related with the religion and culture of India?)
- বর্জ্য বা কম দামি পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত শিক্ষণ-শিখনের পক্ষে কার্যকারী যে-কোনো একটি মডেল তৈরি করার পদ্ধতি বর্ণনা করুন। (Describe the process of preparing any model useful for teaching-learning out of waste or low-cost materials.)
- ‘ওরলি চিত্র’ বলতে কী বোঝেন? (What is meant by 'Worli painting?)
- চিত্রাঙ্কনে ‘আলো ছায়া’ এবং পরিপ্রেক্ষিতের ভূমিকা আলোচনা করুন(Discuss the role of 'light and shade' and 'perspective' in drawing picture)
- ওয়ারলি চিত্রকলার শৈলী ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।(Explain the style and method of Worli Art.)
- মধুবনি চিত্রের শৈলী ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।(Explain the style and method of Madhubani Art.) অথবা, মধুবনি চিত্রকলার সম্বন্ধে সংক্ষেপে বর্ণনা করুন। (Discuss in brief the Madhubani painting.) অথবা, ‘মধুবনি চিত্রকলা’ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন। (Briefly discuss 'Madhubani painting')
- শিক্ষামূলক চর্চায় অঙ্কন এবং চিত্রণের তাৎপর্য আলোচনা করুন।(Discuss the significance of drawing and painting in educational practices.)
- ‘কোলাজ’-এর কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করুন।(Briefly discuss the collage work.)
- রঙ্গোলি। (Write a short note on 'Rangoli.)অথবা, ‘রঙ্গোলি’ অলংকরণ শিল্পের উপাদান ও পরিধির বর্ণনা করুন। (Mention the materials and techniques of decorative art 'Rangoli )
- কবিতার উপাদানগুলি আলোচনা করুন।(Discuss the components of 'poetry.)
- ‘টেরাকোটা’ কী? ‘রিলিফের কাজ’-এর জন্য মাটি তৈরির প্রক্রিয়াটি আলোচনা করুন।(What is 'Terracotta? Discuss the process of clay making for 'relief works.)
--------------------
Q. ‘সামাজিক দূরত্ব’ দূরীকরণে পোস্টার নাটকের ভূমিকা আলোচনা করুন।
(Discuss the role of Poster drama to remore 'social distance.)
ロ সমাজ ব্যতীত সাহিত্য হয় না, কারণ মানুষ সমাজ-নিরপেক্ষ নয়। সমাজকে সে উপেক্ষা করতে পারে না। পৌরাণিক নাটকে আছে পুরাণের অবাস্তব অলৌকিকতা এবং ভক্তিরসের বন্যা; ঐতিহাসিক নাটকে আছে ইতিহাস বিশ্রুত ব্যক্তিদের ক্রিয়াকলাপ, যা ইতিহাসের ঘেরাটোপকে অস্বীকার করতে পারে না; কাল্পনিক নাটকে কল্পনার লীলাই প্রাধান্য পায় কোথাও তা বাস্তবানুগ, কোথাও বা উদ্ভট, আবার কোথাও বা উন্মাদ গতি-সমন্বিত হয়ে উন্মার্গে বিচরণশীল। যাদের ঘিরে এসব নাটক—তারা কেউ-ই সামাজিক সাধারণ মানুষ নয়।
সামাজিক সাধারণ মানুষের যে জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-ব্যর্থতা, সমাজজীবন ও ব্যক্তিজীবনের পারস্পরিক সমস্যা এবং পারিবারিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে যে নাটক রচিত হয়, তাকেই সাধারণভাবে বলা হয় পোস্টার নাটক। এই নাটকের মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা, বৈষম্য, দীনতা, হিংস্রতা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়। এটি সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। থিয়েটারে মঞ্চের নাটকে সামাজিক রীতি, নীতি, সাম্য নিয়ে অনেকসময় পরোক্ষভাবে বার্তা দেওয়া হয়। পোস্টার নাটকের বিষয়বস্তু ছোটো হলেও চিন্তনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব অপরিসীম। পরিবার পরিকল্পনা, মহাজনের অত্যাচার, চাষিকে শোষণ, দুর্নীতি, ভূণহত্যা, বধূ নির্যাতন, পণপ্রথা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সাধারণত পোস্টার নাটক হয়ে থাকে।
যারা এই নাটকের কুশীলব, তারা অনেক সময়েই সমাজের নীচুতলার লোক তথা দরিদ্র এবং দৃশ্যময় মঞ্চে যাঁদের অবাধ প্রবেশ অধিকার নেই। সবাইকে হাসিয়ে কখনও কাঁদিয়ে তারা নাটকের বার্তা জনসাধারণকে দিয়ে থাকে। জনসাধারণ পরিবর্তে খুশি হয়ে তাদের সাধ্যমতো আর্থিক সাহায্য করে, আবার কখনও বা করতে পারে না। নাটকের এই বার্তা যদি তরুণ হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে তা হলে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে তরুণরা সামাজিক পরিবর্তনের চেষ্টা করবে।
Q. বি এড পাঠক্রমে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ই.পি.সি.-2-এর যৌক্তিকতা আলোচনা করুন।
(Discuss the reasons of EPC-2 as a compulsory paper in BEd curriculam)
ロ বর্তমানে বি.এড পাঠক্রমে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ইপিসি-২ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একাধিক কারণে এই বিষয়টিকে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জ্ঞানমূলক বিকাশসাধন নয়, বরং সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য৷ পাঠক্রমে ইপিসি-2-এর অন্তর্ভুক্তিকরণ এই উদ্দেশ্যকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে। এই বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে যে সকল যুক্তি প্রদান করা যায় তা নিম্নে উপস্থাপিত হল।
- সাংস্কৃতিক বিকাশ : পাঠক্রমের মধ্যে এই বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করার ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনা জাগ্রত হয়। সে নিজের সংস্কৃতিকে যেমন জানতে শেখে তেমনি অপরের সংস্কৃতিকে আপন করতে শেখে। ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে আদর্শ সংস্কৃতিবোধ গড়ে ওঠে এবং সে সংস্কৃতিমনস্ক হয়ে ওঠে।
- সামাজিকতার বিকাশ : পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত নাটক, সংগীত, নৃত্যকলা প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৃহত্তর সমাজবদ্ধ মানুষের সংযোগসাধন ঘটে। এর ফলে তাদের মধ্যে সামাজিকতা বিকশিত হয়, শিক্ষার্থীর সামাজিক পরিধি বিস্তৃত হয়।
- শৃঙ্খলাবোধ গঠন : সংগীত, নাটক, চিত্রশিল্প প্রভৃতি কর্মসম্পাদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একাধিক নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্মগুলি দলগতভাবে সম্পাদন করার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌথভাবে কর্ম সম্পাদনের মানসিকতা সৃষ্টি হয়, পারস্পরিক মেলবন্ধন রচিত হয়।
- আনন্দপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি : পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্নপ্রকার সাংস্কৃতিক কাজে অংশ- গ্রহণের ফলে শিক্ষালয়ের পরিবেশ আনন্দ পূর্ণ হয়ে ওঠে। ফলে পাঠগ্রহণ-এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। আনন্দপূর্ণ পরিবেশে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
- সৃজনশীলতার বিকাশ : এই সকল কর্মে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে সকল সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে তা পরিপূর্ণরূপে প্রস্ফূটিত হয়। নাটক, সংগীত, নৃত্যকলা, চিত্রশিল্প প্রভৃতি সাংস্কৃতিক কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজেকে নতুনভাবে চিনতে শেখে।
- আত্মবিশ্বাস গঠন : একাধিক সাংস্কৃতিক কাজে অংশগ্রহণ এবং সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজেকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে। সে তার অন্তরস্থিত সুপ্ত প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হয়।
- মানসিক প্রশান্তি : এই সকল কর্মে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ বা অবসাদ অনেকটা পরিমাণে হ্রাস পায় এবং মানসিক প্রশান্তি আসে। সংগীত, নৃত্যকলা প্রভৃতি মানুষের মধ্যে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে।
- একঘেয়েমি হ্রাস : শিক্ষালয়ে দৈনন্দিন পঠনপাঠন-কর্মসম্পাদনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একঘেয়েমি সৃষ্টি হতে পারে। তাই নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা প্রভৃতির মাধ্যমে একঘেয়েমি হ্রাস করা যায়। শিক্ষার মধ্যে বৈচিত্র্য আসে, ফলে নতুনভাবে জ্ঞানার্জন করা সহজসাধ্য হয়।
⦿ সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি : এই সকল বিষয়ে অংশগ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা গড়ে ওঠে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ বর্তমানের শিক্ষার্থী যখন ভবিষ্যতে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তখন তারা নিজ বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারবে। উপরোক্ত কারণসমূহের জন্যই বর্তমান পাঠক্রমে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ইপিসি-২ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
Q. শিক্ষা ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পথনাটিকার গুরুত্ব আলোচনা করুন।
(Discuss the significance of street play in Education and Social changes.)
ロ সামাজিক পরিবর্তনের জন্য নাটক একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। থিয়েটারে মঞ্চের নাটকে সামাজিক রীতি, নীতি, সাম্য নিয়ে অনেকসময় পরোক্ষভাবে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু পথনাটিকায় আবৃত্তি, গান ও নৃত্যের মাধ্যমে সরাসরি ও প্রত্যক্ষভাবে সেই বার্তা দেওয়া যায় ৷ পথনাটকের বিষয়বস্তু ছোটো হলেও চিন্তনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব অপরিসীম। পরিবার পরিকল্পনা, মহাজনের অত্যাচার, চাষিকে শোষণ, দুর্নীতি, ভ্ৰূণহত্যা, HIV/AIDS নিয়ে অনেক সময় পথনাটক হয়ে থাকে। নির্বাচনী প্রচারের অঙ্গ হিসেবে কিংবা কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন বা সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হিসেবে পথনাটিকা সরাসরি দর্শকসাধারণকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে এ-জাতীয় নাট্যরূপের কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। শিল্পপ্রকরণের উৎকর্ষ, অভিনয়ের দক্ষতা, নাট্যগুণাবলির সামগ্রিক সার্থকতা এ ধরনের নাটকে প্রত্যাশিত নয়।
সফদার হাসমী সাহেব বলেছিলেন— ভারতে পথনাটক বলতে বোঝায় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নাটক। পৃথিবীর অন্যত্র এই নাটককে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক ন্যায়বিচার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে। শিক্ষা ও সমাজ-পরিবর্তনে পথনাটিকা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিক্ষা ও সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধিতে পথনাটিকা বিশেষভাবে সাহায্য করে। অন্যান্য আঙ্গিকের নাটকের সঙ্গে পথনাটিকার কয়েকটি বিশেষ পার্থক্য বিদ্যামান।
Q ‘পথনাটিকা’-র উদ্দেশ্যগুলি লিখুন।
(Write objectives of street play.)
ロ ‘পথনাটিকা’-র উদ্দেশ্যগুলি হল— (i) পথনাটিকা মূলত প্রচারমূলক ও বক্তব্যপ্রধান। (ii) এ ধরনের নাটিকা বিশেষ সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রাম-শহরের পথে, পার্কে বা যে-কোনো খোলা জায়গায় অভিনীত হয়। (iii) পথনাটিকার আয়োজন করে সাধারণ মানুষের কাছে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য অথবা সামাজিক কোনো সমস্যা বা বিতর্ক সম্পর্কে অভিমত তুলে ধরা (iv) নির্বাচনী প্রচারের অঙ্গ হিসেবে কিংবা কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন বা সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হিসেবে পথনাটিকা সরাসরি দর্শকসাধারণকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে। (v) শিল্পপ্রকরণের উৎকর্ষ, অভিনয়ের ক্ষমতা, নাট্যগুণাবলির সামগ্রিক সার্থকতা এ ধরনের নাটকে প্রত্যাশিত নয়। পথনাটিকা মূলত নাট্যমাধ্যমকে ব্যবহার করে সহজ, মিতব্যয়ী প্রোপাগাণ্ডার উদ্দেশ্যে।
Q. শিক্ষার্থীদের শিখনে নাটকের প্রভাব উল্লেখ করুন।
(Mention effects of drama in student's learning process.)
ロ শিক্ষার্থীদের শিখনে নাটকের প্রভাব—
- নিজেদের জীবনের প্রতিরূপকে প্রত্যক্ষ করে।
- অলৌকিক আনন্দ উপভোগ করে।
- চরিত্রসমূহের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে নিজেদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ সম্ভব হয়।
- ভাবগত বা আদর্শগত মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে।
- বৃহত্তর সমাজ পরিবেশের প্রেক্ষাপটে ঘনিষ্ঠ হতে সাহায্য করে।
- আধুনিক নাটকে পরিবেশের সামগ্রিক রূপ পরিবেশনের ফলে শিল্পীরা যুগসমস্যা সম্বন্ধে সচেতন হয়।
- অন্তরের বস্তুরসকে সাহিত্যের সৌন্দর্যরসে সহজে উত্তীর্ণ করে।
- কুশীলবদের অভিনয়নৈপুণ্যে শিল্পীদের পর্যবেক্ষণদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- সংলাপের দ্বন্দ্বময়তা ও ভঙ্গিমার আঙ্গিকে বাচনিক ও অবাচনিক সংযোগের উন্নতি ঘটে।
- বিষয়োপযোগী নাটক নতুন নতুন ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়।
- ব্যাখ্যাকরণের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- আত্মোপলব্ধিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- চিন্তাভাবনার আদানপ্রদান ও বিভিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে।
Q. চরিত্রাভিনয় কাকে বলে? বিদ্যালয় স্তরে এর প্রয়োজনীয়তা কী?
(What is role play? What are the necessity of role play in the school stage?)
ロ চরিত্রাভিনয় হল কোনো শিক্ষার্থী বিভিন্ন চরিত্রের চরিত্রায়ণ করে। চরিত্রের অভিনয়ে একজন অভিনেতাকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। চরিত্রাভিনয়কে সফল করবার জন্য বা স্পষ্ট করবার জন্য সহঅভিনেতা, অভিনেত্রী থাকতে পারে। সমাজের কোনো ব্যক্তিবিশেষের চরিত্র ও কার্যাবলিকে পরিস্ফুট করবার জন্য শ্রেণির শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীরা অভিনয় করতে পারে, যেমন—কোনো বিজ্ঞানীর চরিত্র ও কার্যাবলি (জগদীশ বোস), মাদার টেরেসার সেবাধর্ম, 1947 সালের 15 আগস্ট মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর জাতির প্রতি ভাষণ, খাদ্য-গবেষক সমীনাথনের কর্মপদ্ধতি, জমিদারের অত্যাচার ইত্যাদি স্বল্প অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানো হয়। এই অভিনয় হল চরিত্রাভিনয়।
⦿ চরিত্রাভিনয়ের প্রয়োজনীয়তা :
(i) কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে বা কোনো বিশেষ সামাজিক শ্রেণি সম্পর্কে শ্রদ্ধার মনোভাব জাগাবার জন্য (বা প্রয়োজনে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য) চরিত্র অভিনয় বিশেষ জরুরি, অন্তত বিদ্যালয়স্তরে। (ii) ব্যক্তির কর্মদক্ষতা (প্রয়োজনে অক্ষমতা, অসহিষ্ণুতা), ভাষাজ্ঞান ইত্যাদি বোঝাবার জন্য চরিত্রা ভিনয়ের প্রয়োজন আছে। (iii) বিজ্ঞানের প্রতি, সমাজের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব জাগাবার জন্য কোনো বিশেষ ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করে, ব্যক্তির চরিত্র বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আচরণের পরিবর্তন ঘটানো যেতে পারে। (iv) শিক্ষক যখন তাঁর মতো করে শ্রেণিতে উপরোক্ত বিষয়ে আলোচনা করেন তখন শিক্ষার্থীরা আবেগের দিক থেকে বাইরে থেকে যায়। কিন্তু তারাই যখন অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে, তখন আবেগগত দিক থেকে চরিত্রের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে (চরিত্রের ভেতরে চলে যায়)।
Q. সংগীতে স্বর কাকে বলে?
(What is 'swar' in music?)
ロ সংগীতে ব্যবহৃত যে সাতস্বরের পরিচয় আমরা এখনও পেয়ে থাকি, আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের সংগীত-রীতি ও পদ্ধতির মধ্যে যোগাযোগ তেমন না-থাকায় তাদের নামগুলিরও পার্থক্য থাকা কিছু অসম্ভব নয়। এই সাতটি স্বরের নাম ছিল—আৰ্চিক, গাথিক, সামিক, স্বরান্তর, ঔড়ব, ষাড়ব, সম্পূর্ণ। এই সাতটি স্বর বৈদিক সংগীতে পাওয়া গেলেও, অনার্যদের সংগীতে স্বরের এই সংখ্যার ব্যবহার কম ছিল। তাদের সংগীত ছিল ‘দেশি-সংগীত’।
আর্যদের সংগীত এই ‘দেশি-সংগীত’ দ্বারা অনেকাংশে সমৃদ্ধ হয়েছিল। আমরা সংগীতে যে সাত স্বরের নাম জানি—সেগুলি হল—সা (ষড়জ), রে (ঋষভ), গা (গান্ধার), মা (মধ্যম), পা (পঞ্চম), ধা (ধৈবত), এবং নি (নিষাদ), —এগুলি হল শুদ্ধ স্বর। আর আছে চটি ‘বিকৃত স্বর’—কোমল রে, কোমল গা, তীব্র মা, কোমল ধা, এবং কোমল নি। ভারতীয় সংগীতে 7টি শুদ্ধ ও চটি বিকৃত স্বর নিয়ে মোট 12টি স্বরের দ্বারাই সংগীতের রচনা হয়। তাহলে জানা গেল স্বর প্রধানত 2 প্রকার—শুদ্ধ ও বিকৃত। এইবার জেনে নেওয়া যাক, ‘স্বর’ কাকে বলে—অর্থাৎ ‘স্বর’ বলতে সংগীতে কী বোঝানো হয়?
এককথায় ‘স্বর’ বলতে বোঝায়—সংগীতে ব্যবহৃত উপযুক্ত শ্রুতি। অর্থাৎ নানাপ্রকার কম্পাঙ্ক-বিশিষ্ট বিভিন্নরকম ধ্বনি, যা সুমধুর ও শ্রবণযোগ্য, তা-ই সংগীত সৃষ্টির প্রযুক্ত ‘স্বর’। স্বরের রঞ্জকতা শক্তি থাকবে, যা শুনে শ্রোতার হৃদয় প্রসন্ন হবে। স্বর 2 প্রকার: শুদ্ধ (প্রাকৃত) ও বিকৃত। শুদ্ধ স্বর 2 প্রকার—চল স্বর (রে, গা মা, ধা, নি) ও অচল স্বর (সা, পা)। বিকৃত স্বর 2 প্রকার—কোমল স্বর (রে, গা, ধা, নি) ও তীব্র স্বর (মা)।
Q. বিদ্যালয়ে প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করুন।
(Discuss the educational motives of singing prayer songs in school.)
ロ বিদ্যালয়ে প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার উদ্দেশ্যগুলি হল—
- সৃজনশীল মনোভাব : শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীল মনোভাব তৈরি করে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা কার্যকারিতাসম্পন্ন নতুন নতুন কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
- চিন্তার বিকাশ : প্রার্থনা সংগীতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিন্তনশক্তির বিকাশসাধন ঘটে।
- শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি : এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে নতুন বিষয় শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
- মনঃসংযোগ বৃদ্ধি : শিক্ষার্থীদের পঠনে মনঃসংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রার্থনা সংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
- সদর্থক চিন্তাভাবনা : শিক্ষার্থীদের মধ্যে সদর্থক চিন্তাভাবনা গড়ে তোলার পেছনে প্রার্থনা সংগীত কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
- মনের চাঞ্চল্য দূর : প্রার্থনা সংগীত গাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠন আরম্ভ হওয়ার আগে তাদের মানসিক চঞ্চলতাকে অনেকাংশেই দূর করা যায়।
Q. শিক্ষা অনুশীলন ক্ষেত্রে গান ও বাজনার ভূমিকা আলোচনা করুন।
(Discuss the role of Gayan and Vadan in Educational practices.)
অথবা, বিদ্যালয়ের শিক্ষা-প্রক্রিয়ায় ‘গায়ন’ ও ‘বাদন’ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করুন।
(Discuss how can Gayan and Vadan be used in Educational practices at schools.)
ロ সংগীত একটি প্রাথমিক রূপকলাবিদ্যা। যে-কোনো শিক্ষাই মানুষকে প্রণালীবদ্ধ করে এবং এর মধ্যে সংগীত-শিক্ষার একটু বিশেষত্ব আছে। এটি সংগীতকলার বিশেষত্ব। খাদ্য-জল-বায়ুর আবশ্যকতা মানে জীবন ধারণের আবশ্যকতা। বিজ্ঞান এর ধারক-সহায়ক। আর কলার জীবনের জীবনত্ব—রূপে-রসে-গন্ধে ফুটে ওঠে। এই রূপ-রস-ভঙ্গির ভেতর তাল-সুরের জগতের সন্ধানই সংগীতের উপজীব্য। এই জগতে সবই আছে, আছে ঘুমন্ত কিছু পত্রচূর্ণ, আর আছে একটি পদ্মের ফুটে-ওঠা, পাখির কাকলি,আবার কাঁকর, জল, শূন্যতা। বিচিত্র এই বিচ্ছিন্ন জগতে একটি ঐক্যবোধ খোঁজার অর্থ হল সুরের দিশা পাওয়া। এই সুরের দিশায় মানুষ নামে এক জীব হল আপন হতে আপন-হারা।
হাত-পা-চোখ-নাক ইত্যাদি দেহের বন্ধন হতে সে পেল মুক্তি, নাচ-গান-বাদ্যের মাধ্যমে। এই সূর্যের আলো আর একটু ভালো লাগল—প্রকৃতি সম্বন্ধে সে হল সচেতন। আমাদের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম, স্বার্থের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদির মধ্যে অনুক্ষণ নিমজ্জনে জীবনের যে কল্যাণরূপ ফুটে ওঠে না—সেই অসম্পূর্ণ জীবনকে সম্পূর্ণ করতেই সংগীত-শিক্ষা। সংগীতের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গী ও শত্রুরূপী বিবিধ ভাব ও প্রবৃত্তিকে একটি উন্নয়নের নির্দিষ্ট দিকে পরিচালন করতে পারি। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, এই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে বেঁচে থাকতে থাকতে মানুষ কিছু নিয়ম তৈরি করে নেয়। কিন্তু সেই নিয়মই হয়ে দাঁড়ায় মানুষের শত্রু ও একঘেয়েমির উৎস। সংগীতের নিয়ম কিন্তু স্বচ্ছ নিয়ম—এই নিয়মে আনন্দেই মুক্তি কিংবা অবতরণ। তাই এখানে নিয়মেও স্বেচ্ছা-বিচরণের পথ উন্মুক্ত। নিয়মকে ভালোবেসে মানুষ এখানে নিজেরই নিয়মবদ্ধ জীবনের পথ সহজ করে নেয়। আধুনিক এই বিশৃঙ্খল জীবনে (বিশেষত তরুণ সমাজে) তাই সংগীত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
এ ছাড়া সংগীত একটি আদিম কলাবিদ্যা। এর মাধ্যমে মানুষের যুগ-পরম্পরায় বিধৃত ভাবসমূহ উপলব্ধি করা সম্ভব। বিভিন্ন লোকসংগীতে বিভিন্ন সভ্যতার বিশেষত্ব ফুটে ওঠে। সেইগুলি অনুধাবনও বর্তমান সভ্যতার এগিয়ে চলবার পথের একটি পাথেয়। সুরেলা সুমিষ্ট ধ্বনি বা নাদ মানুষের অস্থির চিত্তকে সংযত এবং সমাহিত করতে সক্ষম। মানুষ শোকে, দুঃখে, আনন্দে, উৎসবে সংগীতকেই সাথী করে নিয়েছে। নিঃসঙ্গ ও বিক্ষিপ্ত মনকে সংযত করে পরমার্থের পায়ে সমর্পণ করবার জন্য সংগীতকে আমরা অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় বলে গণ্য করতে পারি। সংগীতের মহৎ গুণ এই যে, তা মনের গ্লানি, নিরাশা ইত্যাদি দূর করে এনে দেয় ভক্তি-আশা-উদ্দীপনা।
সুস্থ সমর্থ সামাজিক জীবনের প্রতিবন্ধকতা, মানুষের মনের কুটিলতা, হিংসা, দ্বেষ, ক্রোধ, পরশ্রীকাতরতা প্রভৃতি ক্রিয়াশীল ক্লেদাক্ত আবর্জনারূপ মানসিকতা দূর করে সংগীত আমাদের চির আনন্দময় এক নতুন আধ্যাত্মিক জীবনের গভীরে প্রবেশ করায়। আমাদের এক শক্তিময় রূপকেই অনুভব করি সংগীতের মাধ্যমে। সংগীতের রূপকলা সংহত এবং সম্পূর্ণ। তাই শিক্ষার্থীদের সামাজিক সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের মাধ্যম এই সংগীত। দেশ-কাল নির্বিশেষে সমস্ত সমাজের মানুষই অন্তহীনভাবে এই সংগীতসাগরে নিমজ্জিত রয়েছে এবং থাকবে।
Q. লোকসংগীতের সংজ্ঞা দিন। বাউলগানের সম্বন্ধে লিখুন।
(Define Folk- song. Write about the Baul-Gan (Baul-song).
ロ নগরের রূঢ় বাস্তব এবং যান্ত্রিক সভ্যতার বহু দূরে প্রকৃতির অকৃপণ শ্যামলিমার মধ্যে বেড়ে-ওঠা সহজ, সরল, অনাড়ম্বর মানুষগুলির ভেতর থেকে যে স্বতঃস্ফূর্ত বিরহ, আনন্দ, সুখ ও দুঃখের সংগীত নিঃসৃত হয়েছে, সেটাই লোকসংগীত নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এই সংগীত দেশ, কাল ও পাত্র ভেদে আমাদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয়। লোকসংগীত (Folk song)-কে আমরা আঞ্চলিক সংগীত বলে অভিহিত করে থাকি। পুজো-পার্বণ, নানাবিধ লোকাচার এবং মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদিতে এই সংগীতের ব্যাপ্তি বহুল পরিমাণে দেখা যায়। সাধারণত দেশ-স্থান-কাল, আচার এবং ভাষার ওপর ভিত্তি করে এই সংগীত রচিত হয়ে থাকে।
বাউল একটি সম্প্রদায়। মানবধর্মই এই সম্প্রদায়ের মূল কথা। মানুষের দেহকেই ভগবানের দেউল বলে মনে করা হয় এবং দেশ-দেশান্তরে এই সম্প্রদায়ের লোকেরা গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান। বাউল গানের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক। সাধারণভাবে এ-গানের অর্থ এক-প্রকার কিন্তু গভীরে এর অর্থ ভিন্নরূপ, মূলত পরমার্থ বিষয়ক। তাঁদের পোশাক-পরিচ্ছদও স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ, একতারা হাতে এবং পায়ে ঘুঙুর বেঁধে নৃত্যের তালে তালে এ-গান পরিবেশিত হয়। অধিকন্তু আনন্দলহরী, মন্দিরা এই গানের সহযোগী বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
Q. ভারতের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে লোকনৃত্য কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
(How is folk dance related with the religion and culture of India?)
ロ সৃষ্টির প্রথম প্রভাত থেকেই আদিম জীবনে প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে বিশ্বছন্দের চাঞ্চল্যে, জীবনছন্দের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে কখনও শিকারের উন্মাদনা জাগাতে, কখনও বা অপদেবতাকে তুষ্ট করতে উৎপাবনপূর্ণ সহজ আনন্দে মানুষ দলগতভাবে রচনা করেছে নৃত্যছন্দ। শ্বাপদসংকুল আরণ্যক পরিবেশে প্রথম পর্যায়ে নৃত্যভঙ্গি ছিল হিংস্র, আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষার উৎপাবনে পূর্ণ। সমতলভূমিতে নেমে এসে সেই মানুষ যখন ঘর বাঁধল, শিখল চাষ-আবাদ, তখন সংঘবদ্ধ হল, সমাজবদ্ধ হল। নৃত্যছন্দের কায়িক ও আন্তর রূপেরও এল পরিবর্তন; নতুন সামাজিক পরিবেশে জীবনচর্চার অঙ্গরূপে মধুর, বলিষ্ঠ ও সরল ভঙ্গিতে এল লোকনৃত্য।
লোকনৃত্য এই সংহত সমাজের সৃষ্টি। অনেকে আদিম নৃত্য (Folk Dance)-কে একই পর্যায়ে ফেলেন। কিন্তু এই ধারণা ভ্রান্ত। আদিম সমাজ থেকে উন্নত ও সভ্য সমাজ অর্থাৎ যে সমাজে বিশেষ গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত আচার আচরণ, সংস্কার, অনুষ্ঠান, রীতিনীতি ও জীবন অভিব্যক্তি বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, লোকনৃত্য সেই সংহত, উন্নত সমাজের সৃষ্টি। লোকনৃত্য সামগ্রিক সমাজের সৃষ্টি। কারণ সংহত সমাজের সকল সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসব-ই দলগতভাবে পালন করা হয়। সুতরাং সাধারণভাবে লোকনৃত্যকে “collec- tive creation of the folk” এই সংজ্ঞা দেওয়া হয়। যদিও সাধারণভাবে লোকনৃত্যে ব্যক্তিপ্রতিভা অস্বীকৃত, তবুও অনেকে বলেন এটি ব্যক্তিচেতনার কোনো স্বাক্ষর বহন
করে না—এ কথা সর্বাংশে ঠিক নয়। ব্যক্তিচেতনা সম্প্রদায়গত সৃষ্টির মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। উন্নত সভ্য সমাজে রূপান্তরিত ও সমৃদ্ধ হলেও এর স্বতঃস্ফূর্ততা ও সৌন্দর্য দলগত অনুষ্ঠানে গোষ্ঠীজীবনের কেন্দ্রগত ভাবটিকে অক্ষুণ্ন রাখে।
প্রত্যেক জাতি ও গোষ্ঠীজীবনের মধ্যে দেখা যায় যে, স্মরণাতীত কাল থেকেই পুরুষানুক্রমে তাদের মধ্যে লোকনৃত্যের বিভিন্ন ধারা চলে আসছে । ঠিক কোন্ সময় এগুলির উৎপত্তি বা কারা এর স্রষ্টা, সঠিকভাবে তা নির্ণয় করার কোনো উপায় নেই। এগুলি যুগযুগ সংশ্লিষ্ট জনসমষ্টির যৌথ উত্তরাধিকাররূপে প্রবহমান এবং সমাজের সমবেত সৃষ্টিরূপে বিবেচিত। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন আঙ্গিক ও রূপকর্মে সমৃদ্ধ হয়ে এই সকল লোকনৃত্যের অনেক ধারাই নবপল্লবে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। লোকনৃত্যের মধ্যে ধর্মীয় ধারণা, কাব্যময় কল্পনা, অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাসের মূলে আদিম মানুষদের ইচ্ছাপূরণের আকাঙ্ক্ষা, ব্যাবহারিক প্রয়োজন প্রভৃতির ভূমিকা স্পষ্টরূপে প্রতিফলিত। একথা সত্য যে, বিভিন্ন দেশের মানবগোষ্ঠী সমাজবিকাশের প্রক্রিয়ার অনুরূপ স্তরগুলির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয় বলেই লোকনৃত্যে এখনও আদিমযুগে প্রচলিত প্রথা ও সংস্কারের অবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে, উপজাতিদের লোকনৃত্যের মধ্যে এই লক্ষণ অত্যন্ত স্পষ্ট।
লোকনৃত্যের মধ্যে পুরোনো যুগের অবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়, একথা সত্য; কিন্তু এ শুধুমাত্র পুরোনোর প্রতিচ্ছবি নয়। চলমান জীবনের ছন্দে সমসাময়িক সমাজজীবন ও ইতিহাসের প্রবাহ লোকমানসের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট হয়ে লোকনৃত্যে শিল্পায়িত হয়েছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে বিভিন্ন লোকনৃত্যের পুনরুজ্জীবনের কিছু প্রয়াস সূচিত হলেও এ বিষয়ে অধ্যয়ন, গবেষণা ও তত্ত্বগত বিশ্লেষণের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। কারণ লোকনৃত্যের ধারা শুধুমাত্র স্মৃতিচারণ বা সংগ্রহশালার বিষয় নয়; এই শিল্পকলা অতীতেও যেমন সমাজজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্ত করেছে, তেমনই উপযুক্ত অনুশীলনে ও লালনে সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনার ভূমিকাও গ্রহণ করতে সক্ষম।
Q. ভারতের যে-কোনো দুটি লোকনৃত্যের বিবরণ দিন।
(Describe any two Folk dance forms of India.)
ロ ভারতের দুটি অন্যতম লোকনৃত্য হল— ভাঙড়া, ভাভাই।
- ভাঙড়া নৃত্য (Bhangada Dance) : ভাঙড়া হল পঞ্জাবের মাঝহা (majha) অঞ্চলের একটি নৃত্য। ভাঙড়া শব্দটি পঞ্জাবি নৃত্য ‘ভাগা’ (bagaa) থেকে উৎপন্ন। এই নৃত্যটি মাঝহা অঞ্চলের। সেখান থেকে শিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা, শেখপুর, গুজরাট (বর্তমানে পঞ্জাব প্রদেশের পাকিস্তানে অবস্থিত) প্রভৃতি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এই নৃত্য পঞ্জাবিদের বৈশাখী উৎসবে বিশেষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। শস্য উৎপন্নের সময়, বিশেষত, গম উৎপাদনের সময় এই বৈশাখী উৎসব উদযাপিত হয়। এই নৃত্যে সাধারণত পুরুষ ও নারী উভয়ই অংশগ্রহণ করে। পুরুষেরা কুর্তা, পাগড়ি ও সিল্কের কাপড় পরেন ও নারীরা ঘাঘরা, দোপাট্টা, সালোয়ার-কামিজ পরে নৃত্য করেন। অনেকে মিলে ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি বাজাতে থাকেন। এই নৃত্যে সাধারণত উচ্চৈঃস্বরে সংগীত পরিবেশিত হয় ও পুরুষেরা উদ্দাম নৃত্যে আপ্লুত হয়।
- ভাভাই নৃত্য (Bhavai Dance) : ভাভাই হল রাজস্থানের একটি লোকনৃত্য। এই নৃত্যের সময় স্ত্রী-পুরুষ-নৃত্যশিল্পীরা মাটির পাত্রের ওপর অথবা পিতলের পাত্রের ওপর এক পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে ঘুরপাক খেতে থাকে এবং একটি পিতলের থালার ওপর কাচনির্মিত দ্রব্য হাতে নিয়ে নৃত্যটি নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রধানত পুরুষেরা হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেন, অপরদিকে নারীরা ওই তালে সঙ্গ দিয়ে নাচ করতে থাকেন। হারমোনিয়াম ছাড়াও ঢোল, পাখোয়াজ, সারেঙ্গি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হয়।
Q.‘বিহু নৃত্য’ সম্বন্ধে সংক্ষেপে লিখুন।
(Write in brief about 'Bihu Dance.)
ロ অসম ও মণিপুরে লোকনৃত্যের অসংখ্য বৈচিত্র্য দেখা যায়। অসমের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও প্রচলিত লোকনৃত্য বিহু। বিহু উৎসবে সমাজের সব স্তরের লোকেরাই অংশ গ্রহণ করে। একত্রিশে চৈত্র অর্থাৎ বছরের শেষ দিনে বিহু উৎসবের সূচনা হয় এবং প্রায় একমাস ধরে এই উৎসব চলে। বিহু নৃত্যের দুটি অংশ—বিহু ও হুচারী। বিহু নৃত্য শ্যামল প্রান্তরে বৃক্ষছায়ায় অনুষ্ঠিত হয়। ঢোল, গাগনা, বাঁশি, শিঙা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ও গানের সহাযোগে বিহু অনুষ্ঠিত হয়। ছেলেমেয়েরা তাকা (চেরা বাঁশের দ্বারা প্রস্তুত দ্বারা সমবেতভাবে তালরক্ষা করে। বিভিন্ন ভঙ্গিতে চক্রাকারে এই নৃত্যের স্বতঃস্ফূর্ততা সাবলীল ছন্দমাধুর্য রচনা করে।
হুচারী অংশ গ্রামের সম্ভ্রান্ত অধিবাসীদের বাড়ির সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এই অংশে কেবলমাত্র যুবক সম্প্রদায় অংশ গ্রহণ করে। প্রথম অংশে ভক্তিমূলক গানের (হুচারী কীর্তন) মাধ্যমে শুভ নববর্ষের জন্যে দেবতার আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। তারপরে বিহুগীতি অনুষ্ঠিত হয়। বিচিত্র মানবগোষ্ঠী অধ্যুষিত অসম প্রদেশের মতো জাতিবৈচিত্র্য ভারতের অন্য কোনো প্রদেশে দেখা যায় না। সেজন্যে বিভিন্ন ধর্ম, উপজাতির সংস্কার প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে বহু বিচিত্র লোকসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। লুসাই, জয়ন্তিয়া, খাসিয়া, মিরি, সারদুকপেন, কাচেরী, আরব প্রভৃতি পার্বত্য ও সমতলবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে লোকনৃত্যের ধারায় সাধারণভাবে বিহু নৃত্যের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
Q. শিক্ষাক্ষেত্রে নৃত্যনাটিকার একীকরণের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
(Discuss the importance of 'Nritya Natika' for integration in education.)
অথবা, নৃত্যনাটিকার ওপর একটি টীকা লিখুন।
(Write a short note on NrityaNatika.)
ロ নৃত্যনাটিকা বলতে সাধারণত নির্বাক নৃত্যকেই বোঝায়। এই নাটকে ব্যাকগ্রাউন্ডে যন্ত্রসংগীত পরিবেশিত হয়, মঞ্চে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিমায় নৃত্যশিল্পী গানের ভাব প্রকাশ করে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গতিভঙ্গির চলনের মাধ্যমে যে অভিনয় অনুষ্ঠিত হয়, তাকেই নৃত্যনাট্য বলে। এই অভিনয় চার প্রকার—আঙ্গিক, বাচিক, সাত্ত্বিক ও আহার্য। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গতিভঙ্গির যে চলন, তাকে আঙ্গিক অভিনয়ও বলে। এই অভিনয়ের উৎস যজুর্বেদ, ভাব স্থায়ী। কাব্য, নাটক ও সাহিত্যের ভাষা নিয়ে ভাবের মাধ্যমে যে অভিনয়, তাকে বাচিক অভিনয় বলে। এই অভিনয়ের উৎস ঋগ্বেদ, ভাব সঞঞ্চারী। নাটকের চরিত্রানুযায়ী পরিবেশ সৃষ্টিতে চরিত্র অলংকরণের অঙ্গসজ্জা, বসনভূষণ, মঞ্চসজ্জা প্রভৃতির মাধ্যমে যে অভিনয়, তাকে আহার্য অভিনয় বলে। এর উৎস সামবেদ, ভাব বিপাস্থায়ী।
মনের বিভিন্ন অভিব্যক্তি ও মানসিকতাকে ভাবের সাহায্যে প্রকাশের নাম সাত্ত্বিক অভিনয়। এই অভিনয়ের উৎস অথর্ববেদ, ভাব অস্থায়ী। মনে রাখতে হবে, নৃত্যনাটিকায় অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ ও উপাঙ্গসমূহের মাধ্যমে অভিনয় হয়। শির, হস্তদয়, বক্ষ, কটি, পার্শ্বদ্বয় ও পদদ্বয়—এই ছয়টি প্রধান অঙ্গ। কেউ কেউ গ্রীবাকেও অঙ্গ বলে গণ্য করেন। স্কন্ধদ্বয়, বাহুদ্বয়, পৃষ্ঠ, উদর, ঊরুদ্বয়, জঙ্ঘাদ্বয়—এই ছয়টি প্রত্যঙ্গ। নাট্যশাস্ত্রের মতে, নেত্র, ভূ, নাসা, অধর, কপোল ও চিবুক—এই ছয়টি উপাঙ্গ। অভিনয়-দর্পণের মতে—নেত্র, ভূ, অক্ষিপুট, অক্ষিতারা, গণ্ডদ্বয়, নাসিকা, গণ্ডস্থি, অধর, দন্তপক্তি, জিহ্বা, চিবুক, মুখ। মনে রাখতে হবে, অঙ্গগুলির চলনেই প্রত্যক্ষ উপাঙ্গগুলি চালিত হয়।
আঙ্গিক অভিনয় আবার নাট্যশাস্ত্রের মতে তিন প্রকার—(i) মুখজ, (ii) চেষ্টাকৃত ও (iii) শারীর। মুখজ অভিনয় বলতে শির, চক্ষু প্রভৃতির বিভিন্ন সঞ্চালন ও প্রয়োগ বোঝায়। চেষ্টাকৃত অভিনয় বিভাগে হস্তাভিনয় প্রধান। আর বক্ষদেশ, উদর, পার্শ্ব, কটি, ঊরু, জঙ্ঘা প্রভৃতির সঞ্চালন ও প্রয়োগের মাধ্যমে শারীর অভিনয়। প্রতীকধর্মী অঙ্গাভিনয় ভারতীয় নৃত্যকলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই নৃত্যনাটিকার মাধ্যমে শিখনে নতুন ধারণার বিকাশ, মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ, পর্যবেক্ষণ-দক্ষতা ও নান্দনিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়।
Q. চিত্রাঙ্কনে ‘আলো ছায়া’ এবং পরিপ্রেক্ষিতের ভূমিকা আলোচনা করুন।
(Discuss the role of 'light and shade' and 'perspective' in drawing picture)
ロ ইতালীয় ভাষায় আলো-ছায়াকে বলা হয় কিয়ারোসক্যুরে (Chiarosceero)। কিয়ারোসক্যুরো রেনেসাঁস যুগে সর্বাপেক্ষা সুন্দরভাবে চিত্রশিল্পে প্রযুক্ত হয়েছিল। রেনেসাঁ যুগের শিল্পীরা চেয়েছিলেন যেমনভাবে জগৎকে দেখছেন সেভাবেই ছবিতে আঁকতে। তাঁরা লক্ষ করেছিলেন, বস্তুর ওপর আলো পড়লে বস্তুর উত্তল অংশে আলো সর্বাপেক্ষা বেশি পড়ে ও সেই অংশটি উজ্জ্বল ও চকচকে দেখায় এবং অবতল অংশে আলো কম পৌছোয় বলে সেই অংশটি গাঢ় রঙের লাগে। শিল্পীরা ছবি আঁকতে গিয়ে রং ও আলোর এই চরিত্রটি কাজে লাগিয়েছিলেন। তাঁরা আলোকসূত্র রেখেছিলেন একদিকে।
ফলে বস্তুর ওপর আলো একধার দিয়ে পড়ার জন্য অন্য ধারটি আলোহীন ছায়াছন্ন দেখাত। এর ফলে বস্তুর গড়নটি পরিপূর্ণভাবে ফুটে উঠত। একটি লাল রঙের বলের একদিকে আলো পড়লে অপর পার্শ্বের গোলাকার দিকে ছায়া পড়বে। ফলে যে অংশটিতে আলো পড়েছে বলের সেই অংশটির লাল রং ফ্যাকাসে ও সাদাটে লাগবে এবং ছায়াময় অংশটিতে লাল রং গাঢ় ও কালচে লাগবে। এইভাবে রেনেসাঁ শিল্পীরা বস্তুর গায়ের রঙের সঙ্গে সাদা মিশিয়ে রংকে হালকা করে বস্তুর উত্তলতা বোঝাতেন ও রঙের সঙ্গে কালো মিশিয়ে রংকে গাঢ় করে বস্তুর অবতল বোঝাতেন। রঙের সঙ্গে সাদা মেশানোকে বলে টিন্টিং (Tinting) ও কালো মেশানোকে বলে শেডিং (Shading)। লিওনার্দো এই আলো ও ছায়ার বৈপরীত্য যাতে কাটাকাটা না লাগে তার জন্য আলো ও ছায়াময় অংশের প্রান্ত ঝাপসা ও নরম করে দিতেন, যাকে বলা হয় stumato.
রেনেসাঁ যুগে শিল্পীরা নিয়ন্ত্রিত আলো-ছায়া ব্যবহার করতেন। ব্যারোক যুগের শিল্পীরা ড্রামাটিক স্পট লাইট ও গাঢ় ছায়া ব্যবহার করেছিলেন, যা রেমব্রান্টের ছবিতে দেখতে পাই। ইম্প্রেশানিস্ট (Impressionist) ছবিতে রঙের ওপর আলোর ক্ষণস্থায়ী ধরতে চেয়েছিলেন এবং ছায়াকে আলোর অনুপস্থিতি জ্ঞান করে সেখানে বস্তুর রঙের কপ্লিমেন্টারি রং ব্যবহার করেছিলেন। নিকটের ও দূরের বস্তু বা তলের মধ্যে সমন্বয় নির্ণয় করে চিত্রে রূপায়িত করাকে বলা হয় পরিপ্রেক্ষিত। পরিপ্রেক্ষিতের সাধারণ অর্থ হল প্রকৃতিতে বিভিন্ন বস্তুসমূহের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে যে আনুপাতিক দূরত্ব, গভীরতা, নৈকট্য বর্তমান তা নির্ণয় করা। পরিপ্রেক্ষিতকে শিল্পীর উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে দেখলে দুটি রীতিতে ভাগ করা যায়। নির্দিষ্ট আবহাওয়ায় কোনো স্থান থেকে কিছু দেখলে তা তার কিছুটা স্বাভাবিক, কিছুটা আংশিক দেখা যায়, অর্থাৎ সম্পূর্ণ দেখা যায় না, একে বলে প্রত্যক্ষজ পরিপ্রেক্ষিত। এক নজরে বস্তুকে যতটা দেখা যায়, ততটা এখানে আঁকা হয়।
পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও দূরত্বের ওপর নির্ভর করে শিল্পী সেইমতো তার রূপ অঙ্কন করেন। প্রত্যক্ষ রীতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, রৈখিক (লিনিয়ার) ও বায়বীয় (এরিয়াল) পরিপ্রেক্ষিত। একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে দেখলে দূরত্বের জন্য বস্তুকে ক্রমশ ছোটো দেখায়, একে রৈখিক পরিপ্রেক্ষিত বলে। অন্যদিকে, যেমন রেলগাড়ির দুই লাইন দূরে যেতে যেতে ক্রমশ পরস্পর কাছে সরে আসে, দূরের কোনও জিনিস দেখলে তখন সেই জিনিস ঝাপসা দেখায়। কারণ দূরত্বের সঙ্গে বর্ণ-গভীরতা সাধারণত হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের ওপর নির্ভর করে বস্তুর রং ও বর্ণ-গভীরতা। ছবি অঙ্কনের ক্ষেত্রে শিল্পী এই বৈশিষ্ট্যকে চিত্রে প্রয়োগ করেন। একে বলে বায়বীয় (এরিয়াল) পরিপ্রেক্ষিত।
বস্তুর আকৃতিকে জানতে গেলে তাকে বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন বায়ুপ্রবাহে দেখতে হয় এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার তথ্যগুলিকে মেলাতে হয়। এর ওপর নির্ভর করে যে পরিপ্রেক্ষিত গড়ে ওঠে, তাকে ধারণা প্রসূত কাল্পনিক পরিপ্রেক্ষিত রীতি বলে। শিশুরা ছবি অঙ্কনের সময় এই পরিপ্রেক্ষিতকে অনুসরণ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইতালিতে ব্রুনেলশ্চি এই পরিপ্রেক্ষিত বিদ্যার ধারণা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে পউলোউচ্চিলো, এবং পিয়ারো ফ্রানসেসকা পরিপ্রেক্ষিত বিদ্যার প্রকৃত রহস্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। চিত্রকলার ভিত্তি হল পরিপ্রেক্ষিত। পরিপ্রেক্ষিত জ্ঞানের ওপর চিত্রের সার্থকতা নির্ভর করে। একই আয়তন, একই রঙের একাধিক বস্তুর মধ্যে যেটি সবচেয়ে দূরে থাকবে সেটিই সবচেয়ে ছোটো এবং সবচেয়ে ফিকে রঙের দেখাবে। সমান গভীর একাধিক ছায়ার মধ্যে যেটি চোখের সবচেয়ে কাছে থাকবে সেটি সবচেয়ে অগভীর দেখাবে।
Q. ‘ওরলি চিত্র’ বলতে কী বোঝেন?
(What is meant by 'Worli painting?)
ロ মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় নাসিক ও ধুলে অঞ্চলে ওয়ারলি উপজাতিদের বাস। এছাড়া গোয়া, দমন, দিউতে এদের দেখা মেলে। ‘ওয়ারলি’ শব্দটি এসেছে ‘ওয়ারল’ থেকে; যার অর্থ জমির একটি টুকরো বা ক্ষেত্র। ওয়ারলি আদিবাসীরা নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি পালন করে। যদিও বর্তমানে তার মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সাধারণত বাড়ির দেয়ালের ওপর বা আঙিনায় বাড়ির মহিলারা চালের গুঁড়ো জলে মিশিয়ে সাদা তরল রং তৈরি করে ছবি আঁকেন। সরু বাঁশের কাঠি, নরম বাহারু গাছের ডাল, খড়ের কাঠিকে তাঁরা তুলি হিসেবে ব্যবহার করেন। সাধারণত বাড়ির আঙিনা বা দেয়াল গোবরমাটি দিয়ে মসৃণ করে লেপে তার ওপর ছবি আঁকা হলেও কখনো- কখনো স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কালচে লাল রঙের মাটি বা গেরিমাটির ওপর সাদা রং আরও সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।
ওয়ারলি আদিবাসীরা মনে করেন, এই চিত্র রচনার মধ্যে একটি শুভ মাঙ্গলিক ক্ষমতা আছে, যা অশুভ শক্তিকে বিতাড়ন করে। ঐতিহ্যবাহী ওয়ারলি চিত্রের কেন্দ্রে একটি চতুষ্কোণ ক্ষেত্র অঙ্কিত হয়, যাকে দেবচক বলা হয়। ‘চক’ শব্দটির অর্থ চৌকো। দেবচকের মধ্যে অঙ্কিত হয় ভূমিদেবী পালঘাট। তার সঙ্গে আঁকা হয় চাঁদ, সূর্য, চিরুনি, সিঁড়ি, তোরপা (বীন জাতীয় বাদ্যযন্ত্র, যা ওয়ারলি আদিবাসীরা বানায় ও বাজায়) ও জঙ্গলি (তারের বাদ্যযন্ত্র), এছাড়াও দেবচকে আঁকা হয় অশ্বারোহী এক দেবতা, যাঁর পাঁচটি মাথা।
ওয়ারলি চিত্রের মূল ইউনিটগুলি হল গোলাকার, ত্রিভুজাকার ও চতুষ্কোণ। গোলাকার চন্দ্র ও সূর্যের প্রতীক; ত্রিভুজাকার পাহাড়ের ও গাছের আকৃতির প্রতীক, চৌকো ভূমি- ক্ষেত্রের প্রতীক। ওয়ারলি দেয়ালচিত্রের বিশেষ হলমার্ক হল দুটি ত্রিভুজের সাহায্যে অবয়ব অঙ্কন। দুটি উলটানো ত্রিভুজের মাধ্যমে মানুষের অবয়বের দেহকাণ্ড, একটি সরল বৃত্তের সাহায্যে মস্তক ও সরু সরু লতানে রেখার সাহায্যে হাত-পা আঁকা হয়। অত্যন্ত সরল জ্যামিতিক আকার দিয়ে দেহাবয়ব নির্মিত হলেও ওয়ারলি শিল্পীরা তার মধ্যেই বিভিন্ন ভঙ্গিমা অঙ্কন করেছেন। একইভাবে সরল জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে ওয়ারলি শিল্পীরা পশু, পাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত্র অঙ্কন করেছেন।
Q. বর্জ্য বা কম দামি পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত শিক্ষণ-শিখনের পক্ষে কার্যকারী যে-কোনো একটি মডেল তৈরি করার পদ্ধতি বর্ণনা করুন।
(Describe the process of preparing any model useful for teaching-learning out of waste or low-cost materials.)
ロ মানবসভ্যতার বিভিন্ন যুগে আমরা দেখেছি, শিখনবস্তু সমাজজীবনে একটি আত্ম বশ্যকীয় অঙ্গ। শিল্পের কদর মানবসমাজের সভ্য অথবা অসভ্য সকলেই করেছে অর্থাৎ কি সভ্য, কি অর্ধসভ্য, কি অসভ্য সকল শ্রেণির মধ্যে শিল্পের সবিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। শিল্প যে একটি সমগ্র জাতির পরিচয় বহন করে একথা আমরা মেনে নিতে পারি। শিল্পের কর্মবিধি এবং প্রয়োজনবাদ এই বক্তব্যের সঙ্গে শিল্পের আদর্শ এবং উদ্দেশ্য এই দুটি বিষয় জড়িত। শিল্পের মাধ্যমে সুন্দর বস্তু সৃষ্টি হয়। এই বিশ্বপ্রকৃতিতে সৌন্দর্য চতুর্দিকে ছড়ানো রয়েছে।
যার শিল্পীর চোখ রয়েছে, তিনিই এই সৌন্দর্যকে দেখতে পারেন, অনুভব করতে পারেন। আমাদের চারপাশে বহু এমন বস্তু রয়েছে যাদের সৌন্দর্যতা আমরা দেখতে পাই না বা অনুভব করতে পারি না। যেমন কাগজ, মাছের আঁশ, ডিমের ট্রে, ডিমের খোলা, পুরোনো কাপড় প্রভৃতি। কাগজ যখন আমাদের সামনে পড়ে থাকে তখন খুবই তুচ্ছ বস্তু হিসেবে আমরা তার প্রতি আগ্রহ দেখাই না। কিন্তু যখন সেই কাগজ দিয়ে কোলাজ, পেনদানি প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়, তখন তার গুরুত্ব ও সৌন্দর্য আমরা বুঝতে পারি। অর্থাৎ যে সমস্ত বস্তু আমাদের কোনো ব্যাবহারিক কাজে লাগে না তাকে আমরা ফেলে না দিয়ে পুনরায় সেই উপকরণ দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করতে পারি। ফেলে দেওয়া বস্তু দিয়ে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক প্রভাব পড়ে। যেমন, তারা যে-কোনো উপকরণ দিয়ে পুতুল সৃষ্টি করতে শেখে। তাদের সৃজনাত্মক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তারা বুঝতে পারে, কোনো বস্তুই ফেলে দেবার নয়, তাই তাদের সমস্ত ফেলে দেওয়া বস্তুর প্রতি মমত্ববোধ ও আগ্রহ দেখা যায়। এর মাধ্যমে পরিবেশ ও সমাজের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। একটি মডেল (ওয়েস্ট বক্স) তৈরি করার পদ্ধতি—
প্রয়োজনীয় কাঁচামাল :
i. 14” × 12” মাপের কার্ডবোর্ড 4টি;
ii. 10” × 10” মাপের কার্ডবোর্ড 1টি;
iii. ফেভিকল;
iv. কাপড়ের ফালি (2” চওড়া) ৪ ফুট;
v. প্রিন্টেড মার্বেল পেপার 16" × 12" মাপের 4টি এবং 11” × 11” মাপের 1টি;
vi. কয়েকটি বড়ো স্টোন চিপ্।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম : (i) স্কেল; (ii) পেনসিল; (iii) কাঁচি।
প্রস্তুতিপদ্ধতি :
- Step-1: প্রথমে 14” × 12" মাপের কার্ডবোর্ডগুলিকে নীচের ছবির মতো 14" x 10” মাপের করে কেটে নিতে হবে। ADE ও BCE অংশ কেটে বাদ দিতে হবে।
- Step-2 : এরপর 14” × 10” মাপের কার্ডবোর্ডগুলি নীচের ছবির মতো করে সাজিয়ে ধারগুলি কাপড়ের ফালিতে ফেভিকল মাখিয়ে বা কাগজের ফালিতে ফেভিকল মাখিয়ে বা পেপার টেপ দিয়ে জুড়ে দিতে হবে।
- Step-3 : এরপর একটি 10” × 10” কার্ডবোর্ডের ওপর কাঠামোটি বসিয়ে আগের মতো আবার কিনারাগুলি জুড়ে দিতে হবে।
- Step-4: এরপর ওয়েস্ট বক্সটির বাইরের দিকগুলি প্রিন্টেড মার্বেল পেপার বা প্রিন্টেড গ্লসি পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- Step-5: ওয়েস্ট বক্সটি যাতে সহজে উলটে না যায় তাই তলদেশটি ভারী করার জন্য ভেতরে কয়েকটি স্টোন চিপ্স রেখে দিলেই ওয়েস্ট বক্স ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে।
Q. শিক্ষামূলক চর্চায় অঙ্কন এবং চিত্রণের তাৎপর্য আলোচনা করুন।
(Discuss the significance of drawing and painting in educational practices.)ロ শিক্ষামূলক চর্চায় অঙ্কন এবং চিত্রণের তাৎপর্য সংশয়াতীতভাবে অনস্বীকার্য।
- বৌদ্ধিক বিকাশের সহায়ক : শিক্ষামূলক চর্চায় অঙ্কন এবং চিত্রণ-শিক্ষার্থীর সঠিক বৌদ্ধিক বিকাশের সহায়ক। অঙ্কনচর্চা বা অনুশীলনের মাধ্যমে, যেমন— চিত্তনক্ষমতা, পর্যবেক্ষণক্ষমতা, কল্পনাশক্তি, সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গঠনের ক্ষমতার উন্নয়নের দ্বারা সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।
- আত্মবিশ্বাস গঠনের সহায়ক : অঙ্কনচর্চার পদ্ধতি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত কাজ, সযত্ন পর্যবেক্ষণ এবং স্বাধীন চিন্তনক্ষমতার উন্নয়ন ঘটিয়ে শিক্ষার্থীকে তার আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
- মনোবিজ্ঞানসম্মত উন্নতি : সব দিক থেকে অঙ্কনচর্চা এবং চিত্রণ হল মনোবিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এই শিখন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে স্থান পায় শিক্ষার্থী। এই কাজে শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ পায়। ফলে তারা নিজেদের মতো করে ভাবনা ও চিন্তনের মাধ্যমে নতুন নতুন চিত্রকল্প আবিষ্কারের প্রেরণা পায়। অনুসন্ধান বা আবিষ্কারের আনন্দ শিশুদের জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে এবং পাঠ্যবিষয় বস্তুর অনুসরণে যথেষ্ট সাহায্য করে।
- আগ্রহ ও প্রেষণা সঞ্চার : চিত্রাঙ্কণচর্চায় শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নিজস্ব ক্ষমতা, চাহিদা, রুচি ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে চিত্র অঙ্কনের উৎসাহ ও প্রেরণা পায়। উপস্থাপিত চিত্রকলা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে, আগ্রহ বৃদ্ধি করে এবং সর্বোপরি প্রেষণা সঞ্চার করে।
- ইতিবাচক মনোভাব গঠনের সহায়ক : অঙ্কন ও চিত্রকলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে। জীবনমুখী চিত্রকলায় ব্যক্তি ও সমাজজীবনের তাৎপর্য উপলব্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়।
- প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ সহায়ক : চিত্রকলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিখন সঞ্চালনের দ্বারা এই পর্যবেক্ষণক্ষমতা প্রকৃত পর্যবেক্ষণের চেতনাকে জাগ্রত করে তোলে।
- অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তির সহায়ক : প্রদর্শিত চিত্রকলায় বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটানো যায়, ফলে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতালাভে অসম্পূর্ণতা দূর হয় এবং শিক্ষার্থীদের ধারণার গঠন স্থায়ী হয়।
- নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টির সহায়ক : অঙ্কন ও চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শিত স্থান-কাল-পাত্র শিক্ষার্থীদের মনে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারের দ্বারা পুরোনো মূল্যবোধগুলির পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন মূল্যবোধ গঠনে সহায়তা করে।
Q. মধুবনি চিত্রের শৈলী ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
(Explain the style and method of Madhubani Art.)অথবা, মধুবনি চিত্রকলার সম্বন্ধে সংক্ষেপে বর্ণনা করুন।
(Discuss in brief the Madhubani painting.)অথবা, ‘মধুবনি চিত্রকলা’ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
(Briefly discuss 'Madhubani painting')ロ মহাকাব্যের রাজা জনকের রাজ্য মিথিলা বর্তমান নেপালে ও বিহারের উত্তর প্রান্তসীমা জুড়ে অবস্থিত ছিল। মিথিলার একটি গ্রাম মধুবনে যে বিশেষ ধরনের চিত্র গড়ে উঠেছিল, তা মধুবনি চিত্র নামে পরিচিত। মধুবনি গ্রামের মহিলারা গ্রামের বাড়ির দেয়ালে বিশেষ উৎসব, বিবাহ, নতুন শিশুর আগমন উপলক্ষ্যে ছবি আঁকেন। বিশেষত, মধুবন গ্রামে বিবাহকে উপলক্ষ্য করে মহিলারা যে চিত্র অঙ্কন করেন, তা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। লোকশ্রুতি অনুসারে, মহারাজা জনক তাঁর প্রিয়তমা কন্যা সীতার বিবাহের আগে তাঁর রাজ্যবাসীদের অদেশ করেন যে, সীতার বিবাহের জন্য সারা রাজ্য যেন সুন্দর চিত্র দ্বারা সুশোভিত করা হয়। সেই থেকে মধুবন চিত্রকলার জন্ম। মধুবনি চিত্রকলাকে অনেকে ‘মিথিলা চিত্রকলা’ও বলেন।
মধুবনি চিত্রকলা মূলত অঙ্কন করেন ব্রাহ্মণ, কায়স্থ প্রভৃতি উচ্চবংশীয় মহিলারা। মধুবনি চিত্রের বিষয় হল রাম-সীতা, রাধা-কৃষ্ণ, কৃষ্ণ, চন্দ্র, সূর্য ও অন্যান্য দেবদেবীরা মিথিলা অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী বিবাহের বাসরঘরটিতে পদ্মফুল, বাঁশগাছ, মাছ, পাখি, মিলনরত সাপ প্রভৃতি মোটিফ অঙ্কন করে সুসজ্জিত করা হয়। এই মোটিফগুলি মূলত প্রজনন ও উর্বরা শক্তির প্রতীক। এই ঘরটিকে স্থানীয় ভাষায় ‘কোহবার ঘর’ বলা হয়। এই সুসজ্জিত কোহবার ঘরে নববিবাহিত বর ও কনে তিনরাত্রি মিলন-বিরহিতভাবে বাস করে ও চতুর্থরাতে মিলিত হয়।
মধুবনি চিত্রকলা সম্পূর্ণরূপে গ্রামীণ ও লোকশিল্প-নির্ভর। লোকশিল্পের বলিষ্ঠতা, সাবলীলতা ও সারল্য মধুবনি শিল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। গোবর দিয়ে দেয়াল নিকিয়ে নেওয়ার পর দেয়ালের ওপর আঁকা হয়। নীলগাছ থেকে নীল রং, চালের গুঁড়ো থেকে সাদা রং, ভুষোকালি থেকে কালো রং, শিমপাতা থেকে সবুজ রং, হলুদ থেকে হলদে রং তৈরি করে নেওয়া হয়। সাধারণত মধুবনি চিত্রকলায় পাঁচটি ধরন দেখতে পাওয়া যায়—ভরনি, কাচনি, তান্ত্রিক, নেপালি, গোবর। প্রথম তিনটি ধরন (ভরনি, কাচনি, তান্ত্রিক) কেবলমাত্র উচ্চবংশীয় ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ দ্বারাই অঙ্কিত হয়। এঁরা কেবলমাত্র দেবদেবীর ছবি আঁকেন।
শেষোক্ত ধরনদুটি নিম্নবর্ণের মহিলারা অঙ্কন করেন, যেখানে দেবদেবী ছাড়াও তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার দৃশ্যাবলি স্থান পেয়েছে। মধুবনি চিত্রকলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ডবল কন্ট্যুর রেখা। এই দুই সমান্তরাল রেখার মধ্যবর্তী অংশটি আবার কুচি কুচি কোনাচে রেখা দ্বারা ভরাট করা হয়েছে। এই বিশেষ ধরনের ডবল কন্ট্যুর রেখা মধুবনি চিত্রকলা ছাড়া আর অন্য কোনো চিত্রকলায় দেখা যায় না। 1934 খ্রিস্টাব্দের আগে বহির্জগতের কাছে মধুবনি চিত্রকলা অপরিচিত ছিল। 1934 খ্রিস্টাব্দে ভারত-নেপাল সীমান্তে একটি ভয়ংকর ভূমিকম্পের ফলে এই অঞ্চলটি বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মধুবনি জেলায় সেইসময় উইলিয়াম আর্চার ব্রিটিশ কলোনিয়াল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাটি পরিদর্শন করতে এসে মধুবনি চিত্রকলার সন্ধান পান।
তিনি এই দেয়ালচিত্রগুলি দেখে অভিভূত হয়ে যান ও কতকগুলি ছবি তোলেন। এই ছবিগুলি মধুবনী চিত্রের সর্বাপেক্ষা পুরোনো আলোকচিত্র। 1949 খ্রিস্টাব্দে তিনি মধুবনি চিত্রকলা সম্বন্ধে ‘মার্গ’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লেখেন—যার মাধ্যমে মধুবনি চিত্রকলাকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেন। তিনি মধুবনি চিত্রকলার সঙ্গে আধুনিক পাশ্চাত্য চিত্রকর মিরো, পিকাসো, মাতিস প্রভৃতির চিত্রকলার সাদৃশ্য খুঁজে পান। 1966 থেকে 1968 খ্রিস্টাব্দ অবধি এই অঞ্চলটিতে বৃষ্টির অভাবে তীব্র খরা দেখা যায়। এই অঞ্চলের কৃষি-অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তখন ভারতীয় হ্যান্ডিক্রাফ্ট বোর্ডের অধিকর্তা পুপুল জয়কার বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই)-র একজন শিল্পী শ্রী ভাস্কর কুলকার্নিকে মিথিলায় পাঠান, যাতে মধুবনির মহিলারা দেয়ালে যে ছবি আঁকেন তা কাগজে এঁকে বিক্রি করতে পারেন। এইভাবে পুপুল জয়কারের প্রচেষ্টায় মধুবনে মধুবনি চিত্রকলার এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। 1975 খ্রিস্টাব্দে মধুবনির কাছে জিৎওয়ারপুর গ্রামের জগদম্বা দেবী পদ্মশ্রী পুরস্কার পান। 1981 খ্রিস্টাব্দে সীতাদেবী ও 1990 খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাদেবী পদ্মশ্রী পুরস্কার লাভ করেন। এইভাবে মিথিলার প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের দ্বারা অঙ্কিত দেয়ালচিত্র সারা জগৎবাসীর কাছে সমাদৃত হয়ে ওঠে।
Q. ওয়ারলি চিত্রকলার শৈলী ও পদ্ধতি ব্যাখ্যা করুন।
(Explain the style and method of Worli Art.)ロ মহারাষ্ট্রে পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় নাসিক ও ধুলে অঞ্চলে এই ওয়ারলি উপজাতিদের বাস। এছাড়া গোয়া, দমন, দিউতে এদের দেখা মেলে। ওয়ারলি শব্দটি এসেছে ওয়ারল থেকে; যার অর্থ জমির একটি টুকরো বা ক্ষেত্র। ওয়ারলি আদিবাসীরা নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি পালন করে। যদিও বর্তমানে তার মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। সাধারণত বাড়ির দেয়ালের ওপর বা আঙিনায় বাড়ির মহিলারা চালের গুঁড়ো জলে মিশিয়ে সাদা তরল রং তৈরি করে ছবি আঁকেন। সরু বাঁশের কাঠি, নরম বাহারু গাছের ডাল, খড়ের কাঠিকে তাঁরা তুলি হিসেবে ব্যবহার করেন। সাধারণত বাড়ির আঙিনা বা দেয়াল গোবরমাটি দিয়ে মসৃণ করে লেপে তার ওপর ছবি আঁকা হলেও কখনো- কখনো স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কালচে লাল রঙের মাটি বা গেরিমাটির ওপর সাদা রং আরও সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। ওয়ারলি আদিবাসীরা মনে করেন এই চিত্র রচনার মধ্যে একটি শুভ মাঙ্গলিক ক্ষমতা আছে, যা অশুভ শক্তিকে বিতাড়ন করে।
ঐতিহ্যবাহী ওয়ারলি চিত্রের কেন্দ্রে একটি চতুষ্কোণ ক্ষেত্র অঙ্কিত হয়, যাকে দেবচক বলা হয়। ‘চক’ শব্দটির অর্থ চৌকো। দেবচকের মধ্যে অঙ্কিত হয় ভূমিদেবী পালঘাট। তার সঙ্গে আঁকা হয় চাঁদ, সূর্য, চিরুনি, সিঁড়ি, তোরপা (বীন জাতীয় বাদ্যযন্ত্র, যা ওয়ারলি আদিবাসীরা বানায় ও বাজায়) ও জঙ্গলি (তারের বাদ্যযন্ত্র), এছাড়াও দেবচকে আঁকা হয় অশ্বারোহী এক দেবতা, যাঁর পাঁচটি মাথা। বিবাহ উপলক্ষ্যে ওয়ারলি আদিবাসীরা বাড়ির দেয়ালে আঁকেন ‘লগ্নচক’। বাড়ির মহিলারা বর ও কনেকে স্বাগত জানানোর জন্য যে ছবি আঁকেন তাতে ফুটে ওঠে বর, কনে ও বরের বোন ঘোড়ার ওপর বসে। তাদের ঘিরে নাচ-গান হচ্ছে, বাদ্যযন্ত্র বাজছে। লগ্নচকের চিত্রে ফুটে ওঠে বিবাহের আনন্দদায়ক উৎসবমুখর পরিবেশ। কেবলমাত্র কনের বাড়িতে আঁকা হয় ‘কন্ন’ নামক টক, যা কৌমার্যের প্রতীক। বিবাহ ও কৌমার্যের সঙ্গে সম্পর্কিত চিহ্নগুলি এখানে অঙ্কিত হয়। অবয়বগুলিকে লাল, হলুদ ও কমলা দিয়ে রঞ্জিত করা হয়।
ধান ঝাড়াই করে নতুন চাল ঘরে উঠলে সেই নতুন চাল পেষাই করে মিহি-গুঁড়ো করে তার সঙ্গে জল মিশিয়ে একটি থকথকে মিশ্রণ তৈরি করা হয়। বাড়ির নারীরা গৃহের বহির্দেয়ালে, চাল রাখার পাত্রে, রুটি রাখার ঝুড়িতে, মরাইতে, রান্নাঘরের দেয়ালে ওই চালের গুঁড়োর মিশ্রণে হাতের মুঠি ডুবিয়ে ছাপ দেন। অনেকখানি ক্ষেত্র জুড়ে তাঁরা সারি সারি মুঠির ছাপ দেন, যেন এই বহুসংখ্যক মুঠির ছাপ তাঁদের গৃহে সমৃদ্ধি বজায় রাখবে। প্রতিটি মুঠি যেন মুঠিভরতি শস্যের প্রতীক। অনেকগুলি মুঠি অনেক শস্য তথা সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে। ঐতিহাসিকরা ওয়ারলি চিত্রের সঙ্গে ভারতীয় প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রের শৈলীগত সাদৃশ্য খুঁজে পান। নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন ওয়ারলিরা মূলত ছিলেন শিকারি।
তাই তাঁদের ছবির বিষয়ও ছিল শিকার ও প্রকৃতি। ক্রমশ তাঁরা কৃষিকাজ শুরু করলে কৃষিনির্ভর সমাজই ওয়ারলির চিত্রে প্রতিফলিত হতে থাকে। ওয়ারলি দেয়ালচিত্রে তাঁদের দৈনন্দিন জীবন যাপন, ঘর-গৃহস্থালি, নৃত্যগীত, উৎসব, দেবদেবী, ধর্মীয় আচার সবই স্থান পেয়েছে। তাই ওয়ারলি আদিবাসীদের জীবনযাপন রীতি যেমন বদলেছে, তেমনি তাঁদের চিত্রের ধরনটিও বদলেছে, যেমন— -পূর্বেকার শিকারি জীবনের পশুর দল এখন আর অঙ্কিত হয় না। তার বদলে ধান বা অন্যান্য শস্যক্ষেত্র স্থান পায় ছবিতে। বর্তমানে কৃষি ও গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রাণীগুলি, যেমন—গোরু, বলদ, সাপ, ময়ূর, বাঁদর, পাখি, ইঁদুর প্রভৃতি অঙ্কিত হয় ওয়ারলি দেয়ালে। ওয়ারলি আদিবাসী সমাজেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তারই ফলস্বরূপ শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় দেয়ালের ওপর চিত্রিত হয় সাইকেল-চালানো আদিবাসী যুবক বা শহুরে আধুনিক যানবাহন।
ওয়ারলি চিত্রের মূল ইউনিটগুলি হল গোলাকার, ত্রিভুজাকার ও চতুষ্কোণ। গোলাকার চন্দ্র ও সূর্যের প্রতীক; ত্রিভুজাকার পাহাড়ের ও গাছের আকৃতির প্রতীক, চৌকো ভূমিক্ষেত্রের প্রতীক। ওয়ারলি দেয়ালচিত্রের বিশেষ হলমার্ক হল দুটি ত্রিভুজের সাহায্যে অবয়ব অঙ্কন। দুটি উলটানো ত্রিভুজের মাধ্যমে মানুষের অবয়বের দেহকাণ্ড, একটি সরল বৃত্তের সাহায্যে মস্তক ও সরু সরু লতানে রেখার সাহায্যে হাত-পা আঁকা হয়। অত্যন্ত সরল জ্যামিতিক আকার দিয়ে দেহাবয়ব নির্মিত হলেও ওয়ারলি শিল্পীরা তার মধ্যেই বিভিন্ন ভঙ্গিমা অঙ্কন করেছেন। একইভাবে সরল জ্যামিতিক আকারের সাহায্যে ওয়ারলি শিল্পীরা পশু, পাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি, শস্যক্ষেত্র অঙ্কন করেছেন। ওয়ারলি চিত্রের লৌকিক সরলতার জন্য ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত সহজে ওয়ারলি চিত্র অনুসরণ করে বিভিন্ন বস্তু অঙ্কন করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা বয়সানুসারে কোন বস্তুর ওপর ওয়ারলি চিত্র অঙ্কন করবে তা বেছে নিতে পারে।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মাটির ফুলদানির ওপর নৃত্যরত ওয়ারলি ফিগার আঁকতে পারে; ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মাটির সরার উত্তল অংশের ওপর ওয়ারলি ছবি আঁকতে পারে; সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ওয়ারলি ছবি দিয়ে সুদৃশ্য কার্ড ও খাম বানাতে পারে; অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ওয়ারলি ছবি এঁকে ক্যালেন্ডার বানাতে পারে; নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ওয়ারলি চিত্রকলা তাদের পোশাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে; দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মিলিতভাবে তাদের বিদ্যালয়ের প্রাচীর ওয়ারলি চিত্রকলা দিয়ে সুশোভিত করতে পারে, যেভাবে ওয়ারলি আদিবাসীরা তাদের গৃহের দেয়াল ওয়ারলি চিত্র দ্বারা মনোহর করে তোলে। এইভাবে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন জিনিসের ওপর ওয়ারলি চিত্রকলা অঙ্কন করে তাদের প্রিয়জনদের উপহার দিতে পারে। এতে তার নিজেরও শিল্পসৌন্দর্য বোধ বিকশিত হবে এবং ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হবে। এছাড়া প্রিয়জনেরাও একটি হাতে-নির্মিত উপহারসামগ্রী পেয়ে অত্যন্ত প্রীত হবে।
Q. ‘কোলাজ’-এর কাজ সংক্ষেপে আলোচনা করুন।
(Briefly discuss the collage work.)ロ কোলাজ একটি শিল্প উৎপাদন কৌশল; ফেলে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় সাধারণ জিনিস, কাগজ, বোর্ড বা ক্যানভাস-এর ওপর আঠা দিয়ে সেঁটে একটি চিত্ররূপ সৃষ্টি করাকে কোলাজ বলে। চিন দেশে 200 খ্রিস্টাব্দে কাগজ আবিষ্কারের সময় থেকে প্রথম কোলাজ প্রযুক্তিগতভাবে ব্যবহার করা শুরু হয়। দশম শতকে জাপানে কবিতার মধ্যে কোলাজের ব্যবহার ছিল। ফরাসি শব্দ coller থেকে কোলাজ আহরিত। বিংশ শতকের শুরুতে কোলাজ আধুনিক শিল্পের একটি স্বতন্ত্র অংশ হয়ে ওঠে। পাবলো পিকাসো এবং জর্জ ব্রাক উভয়ের চিত্রে বর্ণপ্রলেপের সঙ্গে ছাপা কার্ডের টুকরো, ছাপা কাগজের টুকরো, চট ছেঁড়া, বেতের বুনুনি, ছাপা নকশা ইত্যাদি চিত্রাঙ্কনের সঙ্গে সম্পর্কহীন জিনিস সেটে দিতেন। পিকাসোর
আঁকা বেতের বুনুনিসহ স্থির চিত্রটিকে কোলাজের সূচনা ধরা হয়।
প্রথার জড়ত্ব ভেঙে শিল্প রচনায় যে-কোনো জিনিসের ব্যবহারযোগ্যতা কোলাজের সাহায্যে সিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন রকমের কোলাজের কাজ হয়। যেমন- paper collage, wood collage, Decoupage, Photomontage, Digital collage প্রভৃতি।
- Paper Collage : বিভিন্ন আকার, আকৃতি, রঙের কাগজ ব্যবহার করে যখন একটি চিত্ররূপ সৃষ্টি হয়, তাকে paper collage বলে। এখানে শিল্প উৎপাদন কৌশল-এর প্রধান মাধ্যম কাগজ। কাগজ-কোলাজ প্রসঙ্গে শিল্পী শাকিলার নাম উল্লেখযোগ্য।
- Wood collage : বিভিন্ন আকার ও আকৃতির কাঠের টুকরো, অন্য কোনো মানানসই উপকরণ আঠা দিয়ে সেঁটে কাঠের ওপর চিত্ররূপ সৃষ্টি করা হয়, তাকে wood collage বলে। শিল্পী Kurt Sckewitters, 1920 সালে wood collage-এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। Wood collage নীতি পরিষ্কারভাবে অন্তত ছবি হিসেবে স্থাপন করা হয়, তাঁর আঁকা ‘Merz Picture with candle' ছবিটিতে।
- Decoupage : কোনো বস্তুর সৌন্দর্যের জন্য তার ওপর রঙিন চক্চকে কাগজ, সুন্দর ডিজাইনের ছবির কাটা কাটা অংশ আঠা দিয়ে লাগিয়ে কোলাজ সৃষ্টি করাকে Decoupage বলে।
- Photomontage : ফটোগ্রাফ বা ফটোগ্রাফের অংশ থেকে তৈরি কোলাজকে photomontage বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য ফটোগ্রাফ কেটে এর অংশগুলি দিয়ে একটি যৌগিক আলোকচিত্রের মাধ্যমে কোলাজ সৃষ্টি হয়।
কোলাজের পদ্ধতি : (i) প্রথমে কোন্ ছবি করব, সেটা চিন্তা করে Layout করে নিতে হবে। (ii) ছবির ওপর নির্ভর করে surface-টা নির্বাচন করতে হবে। Surface হিসেবে সমতলক্ষেত্র অর্থাৎ কাগজ, বোর্ড, ক্যানভাস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। (iii) Surface অনুযায়ী আত্মঠা নির্বাচন করতে হবে, যেমন—ক্যানভাসের ওপর ফেভিকল, কাগজের ওপর gum লাগাতে হবে। আঠার মান উন্নত হওয়া দরকার। (iv) এবার কোন্ উপকরণের কোলাজ করব তা ঠিক করতে হবে। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় রঙিন কাগজ, ম্যাগাজিনের কাগজ, খবরের কাগজ, ট্রেসিং পেপার, কার্বন পেপার, বালি, কাঠ, কাঠের গুঁড়ো, দড়ি, খড়, গাছের ছাল, গমের কাঠি, কাঠের ছিলকা, মাছের আঁশ প্রভৃতি। কিন্তু এমন বস্তু ব্যবহার করব যেটা পচনশীল নয় এবং যা ছবি নষ্ট করবে না। (v) Surface-এর ওপর অঙ্কন করতে হবে এবং সেই ছবি অনুযায়ী বস্তুর অংশগুলি আঠা দিয়ে অর্থপূর্ণভাবে সেটে দিতে হবে। ঠিক করে না লাগালে ছবি সুন্দর হয়ে ফুটে উঠবে না। (vi) সম্পূর্ণ Background-এ কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। (vii) কোলাজকে সুন্দর করার জন্য প্রয়োজন হলে কালি বা রং ব্যবহার করা যেতে পারে। (viii) কোলাজ হয়ে যাবার পর তা সঠিক পদ্ধতিতে ঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
Q. রঙ্গোলি। (Write a short note on 'Rangoli.)
অথবা, ‘রঙ্গোলি’ অলংকরণ শিল্পের উপাদান ও পরিধির বর্ণনা করুন।
(Mention the materials and techniques of decorative art 'Rangoli )ロ মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে মাটির ওপর অঙ্কিত শুভ নকশাকে রঙ্গোলি বলা হয়। রঙ্গোলি শব্দটির সংস্কৃত শব্দ রঙ্গভালি থেকে এসেছে, যার অর্থ রং দিয়ে অঙ্কিত লতা। ‘আভালি’ শব্দটির মানে লতাগুল্ম। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, রঙ্গোলি সমৃদ্ধি ও শ্রীর দেবীকে আহ্বান করে। অঞ্চলভেদে রঙ্গোলির নাম, উপাদান এবং নকশা বদলে যায়। রঙ্গোলিকে অসমে ও বাংলায় আলপনা, বিহারে অরিপন, ছত্তিশগড়ে চৌকপূর্ণ, রাজস্থানে মণ্ডন, হিমাচল প্রদেশ ও হরিয়ানায় লিখনুয়া, কেরলে কোলাম বা কালাম, গুজরাটে সাথিয়া, উত্তরপ্রদেশে সোমাকাখনা, আলমোড়ায় আপনা নামে পরিচিত।
আলপনার উৎস এখনও অমীমাংসিত। তবে দেখা গেছে মাটির ওপর অঙ্কিত এই শুভ নকশাগুলির আঞ্চলিক নামের কিছু শব্দ প্রাক্ আর্যযুগীয়। ‘আলপনা’ শব্দটির মূল সংস্কৃত শব্দ হল আলিম্পন, যার অর্থ প্রলেপ দেওয়া। কিন্তু সম্ভবত আলপনা শব্দটি এসেছে একটি অনার্য শব্দ ‘আইলপনা’ থেকে। ‘আইল’ শব্দটির অর্থ বাঁধ বা গণ্ডি। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, আলপনা যে সংস্কৃতজাত শব্দ তা ঠিক নয়, বরং আলপনার সংস্কৃতি আরও পুরোনো। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী আলপনার রেখা যাদুক্ষমতাসম্পন্ন, যা গৃহ বা গ্রামকে গণ্ডির মতো রক্ষা করে। আবার রাজস্থানে মণ্ডন শব্দটির অর্থ অলংকরণ। বেশিরভাগ পণ্ডিতরাই মনে করেন, রঙ্গোলি প্রাক্ আর্য সংস্কৃতি, যা মহেন-জো-দারো সীলের নকশায় পাওয়া যায়। পুপুল জয়কার-এর মতে, সীলের নকশাগুলির জ্যামিতিক রূপের সঙ্গে মণ্ডনের জ্যামিতিক রূপগুলির মিল আছে। হরপ্পা সভ্যতায় যে চিত্রিত পাত্রগুলি পাওয়া যায় তার সঙ্গেও বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলে অঙ্কিত রঙ্গোলির মিল পাওয়া যায়।
বাংলার আলপনায় অঙ্কিত বেশ কিছু মোটিফ, যেমন—মাছ, সাপ, শঙ্খ, বিছা, নবগ্রহ, সিন্ধুসভ্যতায় প্রাপ্ত পাত্রগুলির গায়ে অঙ্কিত মোটিফগুলির সাদৃশ্যযুক্ত। এছাড়া সিন্ধু মৃৎপাত্রের গায়ে বৈচিত্র্যময় জ্যামিতিক নকশা দেখা যায়। যেমন—দাবার ছক, অনুভূমিক সমান্তরাল পটি, ত্রিভুজ, চৌকো, বৃত্ত, স্বস্তিক, ডেউ। রাজস্থানের মণ্ডনশিল্পে এই জ্যামিতিক মোটিফগুলি পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের নকশাগুলিকে দুটি মূল ভাগে ভাগ করা যায়। আকৃতিপ্রধান ও বল্লরীপ্রধান। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও ভারতের দক্ষিণ অংশের রঙ্গোলি আকৃতিপ্রধান বা জ্যামিতিক রূপবিশিষ্ট এবং বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা অঞ্চলের রঙ্গোলি প্রভৃতি বল্লরীপ্রধান, যেখানে প্রাকৃতিক বস্তুগুলির রূপ দেখা যায়।
বিভিন্ন স্থানের রঙ্গোলি : আপাতদৃষ্টিতে মাটির ওপর অঙ্কিত এই নকশাগুলির উদ্দেশ্য অলংকরণ ও সৌন্দর্যবর্ধন হলেও লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এগুলি শুভ, পবিত্র ও অশুভ প্রতিরোধকারী। সাধারণত বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠান, যেমন—বিবাহ, অন্নপ্রাশন, নামকরণ, উপকরণ এবং কিছু পূজায় যেমন লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতী পূজা, মকরসংক্রান্তি, দীপাবলি, গণেশ পূজায় রঙ্গোলি অঙ্কনের প্রচলন আছে। তবে মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও দক্ষিণ ভারতে মহিলারা প্রাত্যহিক ভাবে রঙ্গোলি অঙ্কন করেন। প্রতিদিন সকালবেলা গৃহপ্রাঙ্গণের সামনের অংশটি ধুয়ে চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। গুজরাটে সাধারণত স্বস্তিক চিহ্নটি আঁকা হয়। মহারাষ্ট্রে বাড়ির মহিলারা অস্তুত তুলসীবেদির চারপাশে ও খাবার জায়গায় রঙ্গোলি আঁকবেই।
তামিলনাড়ুতে কোলাম আঁকার মূল ইউনিট হল বিশেষ ছকে সাজানো বিন্দু। একে পুল্লি বলা হয়। এই পুল্লিগুলিকে যুক্ত করে বা চারপাশ ঘিরে যে রেখা আঁকা হয় তাকে তামিলভাষায় সিন্ধু বলা হয়। কোলামে আঁকা নকশাগুলি জ্যামিতিক ও অ্যাবস্ট্রাক্ট। কখনো-কখনো কোলামে ফুটে ওঠে চন্দ্র, সূর্য ও তারা। তাছাড়া ফুল, পাখি, সাপ, মাছও আঁকা হয়। গৃহপ্রাঙ্গণের সম্মুখে আলপনা চালের গুঁড়ো দিয়ে অঙ্কিত হওয়ার কারণে তা পৃথিবীর কীটসকল ও পাখি দ্বারা ভক্ষিত হয়। এইভাবে প্রাণীকুলের সঙ্গে যুক্ত মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রঙ্গোলিতে আঁকা মোটিফগুলি প্রতীকী ব্যঞ্জনাযুক্ত, যা বিশেষ অর্থ বহন করে। তাই বিশেষ বিশেষ পূজা বা অনুষ্ঠানে বিশেষ নকশার রঙ্গোলি আঁকা হয়। রঙ্গোলির এই নকশাগুলি প্রবাহিত হয় পরিবারের এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে, এইভাবে সময়ের সঙ্গে বয়ে চলে রঙ্গোলির ঐতিহ্য।
Q. কবিতার উপাদানগুলি আলোচনা করুন।
(Discuss the components of 'poetry.)ロ কবিতায় সাধারণত পাঁচ ধরনের উপাদান দেখতে পাওয়া যায়, যথা—1. অর্থ, 2. ছন্দ, 3. বিষয়, 4. আবেগ ও 5. শব্দ। নীচে উপাদানগুলি আলোচনা করা হল— 1. অর্থ : কবিতার অর্থ বলতে গভীর অর্থকে বোঝানো হয়। যেমন—‘খাম্বাজ’ কবিতায় “তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে, তুমি ধন্য ধন্য হে।” এর মধ্যে এক গভীর অর্থ রয়েছে। 2. ছন্দ : যে-কোনো কবিতার একটি নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে। বিভিন্ন কবিরা তাঁদের লেখায় বিভিন্ন ছন্দের ব্যবহার করে আসছেন। যেমন— মাইকেল মধুসূদন দত্ত অমিত্রাক্ষর ছন্দে লিখতেন। 3. বিষয় : কবিতার বিষয় বাছা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষ। কারণ সাধারণ বিষয়ও কবিতার গুণে অসাধারণত্ব লাভ করে। 4. আগে : কবিতা লিখতে হলে আবেগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের ভেতরের আবেগ থেকেই কবিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। 5. শব্দ : কবিতার প্রত্যেকটি শব্দ নিজের নিজের ভূমিকা পালন করে। তাই শব্দ বাছা বা চয়নের ক্ষেত্রে সাবধানী হওয়া প্রয়োজন।
Q. ‘টেরাকোটা’ কী? ‘রিলিফের কাজ’-এর জন্য মাটি তৈরির প্রক্রিয়াটি আলোচনা করুন।
(What is 'Terracotta? Discuss the process of clay making for 'relief works.)
ロ আগুনের তাপে লাল করে পুড়িয়ে যে বিবর্ণ লালচে-বাদামি রংয়ের মাটি তৈরি হয়, সেই মাটিকেই পোড়ামাটি বা টেরাকোটা বলা হয়। এই মাটির সাহায্যে রং করে নানারকমের সৌন্দর্যবর্ধক অলঙ্কার ও পুতুল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
রিলিফের কাজ : ভারতের ভূপ্রকৃতি—অর্থাৎ উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল, গাঙ্গেয় সমভূমি, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, উপকূলের সমভূমি—এইসব অঞ্চল পড়াতে গিয়ে ভূগোলের মাস্টারমশাই মাটির রিলিফ মডেলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। মাটিতে রিলিফের কাজ শুরু করা যাক। আগে নকশা এঁকে নিতে হবে। যেমন, মেয়ে-পুতুলের নকশা। খানিকটা তৈরি-মাটি নিয়ে কাঠের পাটার ওপর 1 ফুট লম্বা, 9 ইঞ্চি চওড়া আর 2.5 ইঞ্চি পুরু একটা টালি তৈরি করা হল। এই সমতল টালির ওপর রিলিফের কাজ হবে। এই টালির ওপর পুতুলের নকশাটা ট্রেস করা হল অথবা বাঁশের ছুরির সরু মুখ দিয়ে আঁকা হল। এবার একটা বড়ো আলুর মাপের তৈরি-মাটি নেওয়া হল। হাতের তালুতে রেখে সেটাকে লম্বাভাবে পাকিয়ে চমচমের আকারে আনা হল। এবার আঙুল দিয়ে টিপে টিপে পুতুলের বিভিন্ন অংশ—মাথা, মুখ, শরীর, হাত—একে একে নকশার ওপর বসানো হল।
এরপর পুতুলের দুই পাশে ফুল-পাতার নকশাও মাটি চেপে চেপে বসানো হল। তারপর বাঁশের ছুরির সাহায্যে চোখ, নাক, কান, ঠোঁট, শাড়ির পাড়, কাপড়ের বেড় ইত্যাদি কেটে কেটে বসানো হল। মাটিটাকে আস্তে আস্তে টালির সঙ্গে ঢাল করে মিলিয়ে দেওয়া হল। পাতার ডাঁটা, ফুলের পাপড়ি ওইরকম ছুরি দিয়ে দাগ কেটে তৈরি করা।
--------------
❐ আরো পড়ুনঃ Mark - 2 Notes
No comments
Hi Welcome ....