ছেলেবেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর | পঞ্চম শ্রেণী বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্ন-উওর ছেলেবেলা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাঠ মানে ছুট—কার্তিক ...
ছেলেবেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর | পঞ্চম শ্রেণী বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্ন-উওর
- ছেলেবেলা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- মাঠ মানে ছুট—কার্তিক ঘোষ
- পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে
❐ আরো পড়ুনঃ Class V
❏ ছেলেবেলা গদ্যাংশের বিষয়বস্তু :
ছোট্ট রবি বাড়ির তিনতলার ওপরের ছাদকেই প্রধান ছুটির দেশ মনে করতেন। কবির পিতা কেমন ভাবে তেতালার ঘরে ভোরবেলা ধ্যানে বসতেন তাও জানিয়েছেন। চিলেকোঠার আড়ালে কবি সেই সব দেখতেন। কবির পিতা যখন পাহাড়-পর্বতে মাঝেমধ্যে যেতেন, তখন কবি তিন তলায় উঠতেন এবং সেখান থেকে নীল আকাশ, সবুজ পৃথিবী, নানা ধরনের বাড়ি দেখতেন। দুপুরবেলা তিনতলার ঘরে রেলিঙে খড়খড়ির ফাঁকে ছিটকিনি খুলে সোফায় বসতেন। সামনের গলি দিয়ে চুড়িওয়ালা হেঁকে যেত। তার ডাক বাড়ির মধ্যে ভেসে আসত। বাড়ির দাসী তাকে ভিতরে ডেকে নিয়ে আসত। সে বউদের চুড়ি পরাত। কবি দেখতেন কীভাবে জল ধরে রাখা হচ্ছে। বিকালে সেই জলে গা ধুতেন। জল ধরার কাজটিকে বাংলাদেশের শিশু লিভিংস্টনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নীচের দেউড়ির ঘণ্টায় যখন চারটে বাজত তখন চৌকিদার খোঁজ লাগাত তাঁকে ধরে আনতে। দিনের আলো ফিকে হয়ে গেলে কবি দেখতেন পুকুরের পাতিহাঁসগুলো উঠে গিয়েছে। পুকুর ঘাটে হাওয়া খাওয়ার জন্য লোকজন আসছে। পুকুরের জলে বটগাছের ছায়া পড়েছে। ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিয়ে সইস যাত্রীদের নেওয়ার জন্য হাঁক দিচ্ছে।
❏ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে বাক্যটি আবার লেখো :
১.১ ‘চিলেকোঠা’ হল (কাঠের ঘর/তেতালার ঘর/ছাদের ওপরে সিঁড়ির ঘর/বসবার ঘর)।
উত্তর : ‘চিলেকোঠা’ হল ছাদের ওপরে সিঁড়ির ঘর।
১.২ ভারতবর্ষের বিখ্যাত মরুভূমিটি হল (গোবি/সাহারা/থর)।
উত্তর : ভারতবর্ষের বিখ্যাত মরুভূমিটি হল থর।
১.৩ লিভিংস্টন ছিলেন (ইতালি/জার্মানি/ইংল্যান্ড/স্কটল্যান্ড) দেশের মানুষ।
উত্তর : লিভিংস্টন ছিলেন ইংল্যান্ড দেশের মানুষ।
১.৪ জুড়িগাড়ি হল (ঘোড়ায় টানা/হাতিতে টানা/যন্ত্রচালিত/গরুতে টানা) গাড়ি।
উত্তর : জুড়িগাড়ি হল ঘোড়ায় টানা গাড়ি।
২. ‘ক’ স্তম্ভের ‘খ’ মিলিয়ে লেখো :
৩. কোনটি বেমানান খুঁজে নিয়ে লেখো :
৩.১ পুকুরের পাতিহাঁস, ঘাটে লোকজনের আনাগোনা, অর্ধেক পুকুর জোড়া বট গাছের ছায়া, জুড়িগাড়ির সইস।
উত্তর : জুড়িগাড়ির সইস।
৩.২ তেতালা ঘর, সাত সমুদ্দুর, সেকেন্ড ক্লাস, পিল্পেগাড়ি।
উত্তর : সাত সমুদ্দুর।
৩.৩ চুড়িওয়ালা, ফেরিওয়ালা, সইস, বালক সন্ন্যাসী।
উত্তর : বালক সন্ন্যাসী।
৩.৪ পিলপেগাড়ি, জুড়িগাড়ি, রিক্শা, গাড়িবারান্দা।
উত্তর : গাড়িবারান্দা।
৩.৫ চিল, রোদ্দুর, দুপুর, লোকবসতি।
উত্তর : লোকবসতি।
৪. তোমার পাঠ্যাংশে রয়েছে এমন পাঁচটা ইংরেজি শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো :
উত্তর : সোফা, সেকেন্ড, ক্লাস, ওয়েসিস, লিভিংস্টন।
৫. ‘চুড়িওয়ালা’ (চুড়ি + ওয়ালা), ‘ফেরিওয়ালা’ (ফেরি + ওয়ালা) এরকম শব্দের শেষে ‘ওয়ালা’ যোগ করে পাঁচটি নতুন শব্দ তৈরি করো।
- ছাতা + ওয়ালা = ছাতাওয়ালা।
- বাসন + ওয়ালা = বাসনওয়ালা।
- মুটে + ওয়ালা = মুটেওয়ালা।
- বাড়ি + ওয়ালা = বাড়িওয়ালা।
- সবজি + ওয়ালা = সবজিওয়ালা।
৬. শূন্যস্থান পূরণ করো :
৬.১ রাঙা হয়ে আসত রোদ্দুর, চিল ডেকে যেত আকাশে।
৬.২ আমার জীবনে বাইরের খোলা ছাদ ছিল প্রধান ছুটির দেশ।
৬.৩ লুকিয়ে-ঢোকা নাবার ঘর তাকে যেন বাংলাদেশের শিশু লিভিংস্টোন এইমাত্র খুঁজে বের করল।
৬.৪ এই ছাদের মরুভূমিতে তখন একটা ওয়েসিস দেখা দিয়েছিল।
৬.৫ নীচের দেউড়ির ঘণ্টায় বাজল চারটে।
৭. বিশেষ্য ও বিশেষণ আলাদা করে লেখো :
বেলোয়ারি, চুড়ি, মাদুর, ঝাঁকড়া, বিবাগি, গড়ন, দামি, নীল, গরম, ঘোলা, পুকুর, লোকজন।
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
চুড়ি, নীল, পুকুর, মাদুর, গড়ন, লোকজন | বেলোয়ারি, বিবাগি, গরম, ঝাঁকড়া, দামি, ঘোলা, |
৮. ক্রিয়ার নীচে দাগ দাও :
৮.১ হঠাৎ তাদের হাঁক পৌঁছত।
৮.২ সেইখানে অত্যন্ত একলা হয়ে বসতুম।
৮.৩ হাত গলিয়ে ঘরের ছিটকিনি দিতুম খুলে।
৮.৪ ধারাজল পড়ত সকল গায়ে।
৮.৫ পুকুর থেকে পাতিহাঁসগুলো উঠে গিয়েছে।
৯. বাক্যরচনা করো : প্রধান, দেশ, বালিশ, মরুভূমি, ধুলো।
- প্রধান—ভারতে কৃষিজদ্রব্যের মধ্যে ধান প্রধান।
- দেশ—ভারতবর্ষ একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ।
- বালিশ—সকলের শোওয়ার সময় বালিশ প্রয়োজন হয়।
- মরুভূমি—উটকে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়।
- ধুলো—রাজপথে যানবাহন গেলে খুব ধুলো ওড়ে।
১০. ‘গ্রহণ’ শব্দটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে পৃথক বাক্যরচনা করো।
- গ্রহণ—(কোনো কিছু নেওয়া)—পারিবারিক উৎসবে গৃহকর্তা দান হিসেবে উপঢৌকন গ্রহণ করেন।
- গ্রহণ—(গ্রাস করা)—চন্দ্রগ্রহণের অর্থ চন্দ্রকে রাহু গ্রাস করে না বরং পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র একই সরলরেখায় আসে।
১১. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
আড়াল, চুপ, আনন্দ, গলি, ফিকে।
উত্তর : আড়াল—প্রকাশ্য। চুপ—মুখর। আনন্দ—নিরানন্দ । গলি—রাজপথ। ফিকে—স্বচ্ছ।
১২. অর্থ লেখো :
মূর্তি, পিল্পেগাড়ি, বিবাগি, নাগাল, দেউড়ি
উত্তর : মূর্তি—বিগ্রহ। পিল্পেগাড়ি—হাতিতে টানা গাড়ি। বিবাগি— —সংসার ত্যাগী। নাগাল—হস্তগত। দেউড়ি—সদর দরজা।
১৩. প্রতিশব্দ লেখো : পৃথিবী, পাহাড়, আকাশ, জল, গাছ।
- পৃথিবী—ধরণি, পৃথ্বী, ভুবন, বসুমতী, ধরিত্রী, দেশ।
- আকাশ—গগন, নভঃ, অম্বর, অভ্র, নীলিমা, অন্তরীক্ষ।
- গাছ—বৃক্ষ, তরু, পাদপ, দ্রুম, শাখী, বিটপী, অটবী।
- পাহাড়—গিরি, শৈল, অচল, অদ্রি, ভুধর।
- জল—বারি, সলিল, নীর, অপ, উদক।
১৪. দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো :
১৪.১ আমার পিতা যখন বাড়ি থাকতেন তাঁর জায়গা ছিল তেতলার ঘরে।
উত্তর : আমার পিতা মাঝে মধ্যে বাড়ি থাকতেন। তখন তাঁর জায়গা ছিল তেতলার ঘরে।
১৪.২ আমি লুকিয়ে ছাদে উঠতুম প্রায়ই দুপুর বেলায়।
উত্তর : আমি লুকিয়ে ছাদে উঠতুম। আমি ছাদে উঠতুম দুপুর বেলায়।
১৪.৩ হঠাৎ তাদের হাঁক পৌঁছোেত, যেখানে বালিশের ওপর খোলা চুল এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকত বাড়ির বউ।
উত্তর : হঠাৎ তাদের হাঁক পৌঁছোত বাড়ির বউ-এর কাছে। বাড়ির বউ তখন বালিশের ওপর খোলাচুল এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকত।
১৪.৪ বিছানার একখানা চাদর নিয়ে গা মুছে সহজ মানুষ হয়ে বসতুম।
উত্তর : বিছানার একখানা চাদর নিয়ে আমি গা মুছতাম। গা মুছে সহজ মানুষ হয়ে বসতুম।
১৪.৫ গরম বাতাস হু হু করে ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে।
উত্তর : গরম বাতাস হু হু করে ছুটে যাচ্ছে। বাতাস ধুলো উড়িয়ে যাচ্ছে।
১৫.১ কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের বাড়িটি কী নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত?
উত্তর : কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের বাড়িটি ‘জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি’ নামে পরিচিত।
১৫.২ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটোদের জন্য লিখেছেন এমন দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটোদের জন্য লিখেছেন ‘সহজপাঠ’, ‘শিশু ভোলানাথ’।
১৫.৩ ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন দুটি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন?
উত্তর : ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত দুটি পত্রিকার নাম হল ‘ভারতী’ এবং ‘বালক’। এই দুটি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন।
১৬. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১৬.১ বালক রবীন্দ্রনাথের প্রধান ছুটির দেশ কী ছিল?
উত্তর : বালক রবীন্দ্রনাথের প্রধান ছুটির দেশ ছিল তেতলার বাইরের খোলা ছাদ।
১৬.২ তাঁর বাড়ির নীচতলায় বারান্দায় বসে রেলিঙের ফাঁক দিয়ে কী কী দেখা যেত?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ বাড়ির নীচতলার বারান্দায় বসে রেলিঙের ফাঁক দিয়ে রাস্তার লোক চলাচল দেখতেন। ছাদের ওপর
থেকে পিল্পেগাড়ি পেরিয়ে যাওয়া দেখতেন।
১৬.৩ পাঠ্যাংশে ‘ওয়েসিস’-এর প্রসঙ্গ কীভাবে রয়েছে?
উত্তর : ‘ওয়েসিস’ শব্দের অর্থ মরূদ্যান। কবি ছাদটাকে মরুভূমি মনে করেছেন। কলের ধারাজল বসাতে ছাদেতে যে
জলাধার রাখা হয়েছিল সেটাকেই কবি ওয়েসিস বা মরূদ্যান মনে করেছেন।
১৬.৪ পাঠ্যাংশে রবীন্দ্রনাথের পিতার সম্পর্কে কী জানতে পারো?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের পিতা তেতলার ঘরে থাকতেন। মাঝেমধ্যে তিনি অনেক দিনের জন্য পাহাড়ে-পর্বতে চলে যেতেন চিলেকোঠার আড়াল দিয়ে রবীন্দ্রনাথ দেখতেন ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে তাঁর পিতা সাদা পাথরের মূর্তির মতো ছাদে চুপ করে বসে আছেন। কোলে দুটি হাত জোড়-করা। তিনি তখন ধ্যানে বসতেন।
১৬.৫ পিতার কলঘরের প্রতি ছোট্ট রবির আকর্ষণের কথা কীভাবে জানা গেল?
উত্তর : পিতার কলঘরের প্রতি ছোট্ট রবিঠাকুরের আকর্ষণ ছিল। তিনি বিকেলবেলায় ওই কলের ধারাজলে গা-ধুয়ে নিতেন। বিছানার একটা চাদর দিয়ে গা মুছে সহজ মানুষ হয়ে বসতেন।
১৬.৬ ছুটি শেষের দিকে এসে পৌঁছলে রবির মনের ভাব কেমন হতো?
উত্তর : ছুটির দিনটা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন যেন রবির মনে হত যে সোমবার থেকেই আবার কাজের তাড়া আসবে। দেউড়ির ঘণ্টা বাজলেই ছুটতে হবে।
১৬.৭ পাঠ্যাংশে কাকে, কেন বাংলাদেশের ‘শিশু লিভিংস্টন’ বলা হয়েছে?
উত্তর : ছোট্ট রবি লুকিয়ে যখন ছাদ থেকে নাবার ঘরে আসতেন, তখন তাকে বাংলাদেশের শিশু লিভিংস্টন মনে হত ইংল্যান্ড দেশের পাশেই ছোটো একটা দেশ স্কটল্যান্ডের লোক ছিলেন ডেভিড লিভিংস্টন। তিনিই প্রথম দক্ষিণ ও মধ্য আফ্রিকার অনেকটা অংশে অভিযান করেছেন। নীলনদের উৎসস্থল টাঙ্গানিকা হ্রদ আর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত অবধি
পৌঁছোনোর কৃতিত্ব তাঁরই। জাম্বেসি ও কঙ্গো নদীপথ ধরে তাঁর অভিযান পৃথিবীর অভিযাত্রার ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।
১৬.৮ তুমি যখন আরও ছোটো ছিলে তখন তোমার দিন কীভাবে কাটত, তোমার চারপাশের প্রকৃতি কেমন ছিল তা লেখো।
উত্তর : আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতে শুরু করি। মা নিজেই স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন।
সকালে স্কুল বসত। স্কুল থেকে ফিরে স্নান সেরে আহারাদি করে দুপুরে স্কুলের দেওয়া কাজগুলো সারতাম। বিকেল
চারটে বাজলে সামনের মাঠে গিয়ে প্রকৃতির কোলে একটু ছোটাছুটি করতাম, ক্রিকেট খেলতাম। সন্ধে হলেই বাড়িতে
হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসতাম। বাবা এসে পড়াতেন। রাত নটায় খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমোতে যেতাম। এরই মাঝে সময়
হলে টিভি দেখতাম।
❏ মাঠ মানে ছুট কবি পরিচিতি:
কবি কার্তিক ঘোষ ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার প্রতাপনগর অঞ্চলে কবির
ছেলেবেলা অতিবাহিত হয়। কিশোর বয়স থেকেই তিনি সাহিত্য অনুরাগী মানুষ। পরবর্তীকালে তিনি একজন বিখ্যাত
কবি ও ছড়াকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কবি রচিত উল্লেখযোগ্য বই ‘একটা মেয়ে একা’, ‘হাত ঝুমঝুম পা ঝুমঝুম', ‘আমার বন্ধু গাছ’, ‘দলমা পাহাড়ের দুলকি’, ‘এ কলকাতা সে কলকাতা’, ‘জুঁইফুলের রুমাল’ প্রভৃতি। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কল্পবিজ্ঞান’, ‘সেরা রূপকথার গল্প’, ‘সেরা কিশোর অ্যাডভেঞ্চার’ প্রভৃতি। তিনি ১৯৭৬-এ ‘টুম্পুর জন্য’ লেখাটির জন্য ‘সংসদ’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি শিশুসাহিত্য জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়াওপেয়েছেন ‘তেপান্তর’ ও ‘সুনির্মল স্মৃতি পুরস্কার' ইত্যাদি।
❏ মাঠ মানে ছুট বিষয়বস্তু :
মাঠ মানে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা বা প্রান্তর। কিশোর ছেলেমেয়েদের কাছে মাঠের গুরুত্ব যথেষ্ট। মাঠে নানান
ধরনের ক্রিয়াকর্ম হয়ে থাকে। যেমন—খেলাধুলা, যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলা, ঘুরে বেড়ানো, নাটক, উৎসব,
মেলা ইত্যাদি। এই প্রতিটি ক্রিয়াকর্মের মধ্যেই মানুষের অগাধ আনন্দ, হল্লা, খুশি লুকিয়ে থাকে। মাঠ হল কিশোর
ছেলেমেয়েদের কাছে সবুজ প্রাণের শাশ্বত একটি প্রদীপ।
মাঠ আমাদের মুক্ত জীবনের আনন্দ দান করে। ছুট মানে এই বিশাল মাঠ বা প্রান্তরে ছুটে চলা। লক্ষ্য একটাই, সেটা
হল আর পাঁচজনের থেকে এগিয়ে চলা। জীবনের যে-কোনো প্রতিযোগিতা মূলক কাজে এগিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে
সঠিক লক্ষ্যে উপস্থিত হওয়া অর্থে এই ছুট কথাটি কবি ব্যক্ত করছেন। ছুট শব্দটির মধ্য দিয়ে কবি সাহসের সঙ্গে
লড়াই করে বেঁচে থাকার আনন্দকে বুঝিয়েছেন।
মাঠ মানে ছুট কবিতার প্রশ্ন উত্তর
❏ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. শূন্যস্থানে কবিতা থেকে ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে বসাও :
১.১ ‘মাঠ’ মানে শুধুই মজা নয়।
মজা
ছুটি
হল্লা
হাসি
খুশি
‘মাঠ’ মানে আসলে ‘মাঠ’ মানে আসলে খুশির অগাধ লুটোপুটি।
১.২ ‘ছুট’ মানে শুধুই সাহস নয়।
ঢেউ
ভাঙা
খাঁচা
‘ছুট’ মনে আসলে ছোট্ট পাখির আগল ভাঙা খাঁচা।
২. নিজের ভাষায় লেখো :
২.১ ‘মাঠ’ কথাটা শুনে তোমার চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে তা লেখো।
উত্তর : ‘মাঠ’ কথাটা শুনে আমার চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে তা হল মাঠ সবুজের সমারোহ। অগাধ খুশি ও আনন্দের জায়গা এই মাঠ। অস্তগামী সূর্যের আলোর প্রলেপ দেওয়া একটি প্রান্তর।
২.২ ‘মাঠ’ এবং ‘শৈশব’-এর এক অদ্ভুত যোগ আছে—তোমার বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলগুলো কীভাবে মাঠে খেলে বা গল্প করে কাটে, তার বর্ণনা দাও।
উত্তর : আমরা প্রতিদিন বিদ্যালয় ছুটির পর গ্রামের খেলার মাঠে ফুটবল খেলতে যাই। এই মাঠের সঙ্গে শৈশব কালের
একটা অদ্ভুত যোগ রয়েছে, যা আমরা মাঠে খেলতে এসে বুঝতে পারি। কোনো কারণে একদিন আমাদের খেলা বন্ধ
থাকলে সেদিন মন খুবই খারাপ হয়। কোনো কাজে উৎসাহ পাই না। এই খেলার মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ আমরা
লাভ করি। মাঠ হল তাই সবুজ প্রাণের শাশ্বত একটি প্রদীপ।
৩. বাক্যরচনা করো : ছুটি, বাঁশি, বাজনা, ছুটন্ত, দীপ।
- ছুটি—আগামীকাল বিদ্যালয় ছুটি থাকবে।
- বাঁশি—রাখাল বালক বাঁশি বাজিয়ে মাঠে গোরু চরায়।
- বাজনা—শিশুটি বাজনার সঙ্গে সঙ্গে নাচছে।
- ছুটন্ত—ছুটন্ত ট্রেনে ওঠা উচিত নয়।
- দীপ—সন্ধ্যাবেলা মা ঠাকুরঘরে দীপ দেবেন।
৪. ক্রিয়াটি বেছে নিয়ে আলাদা করে লেখো :
৪.১ মাঠে শিশুরা অগাধ খুশিতে লুটোপুটি খায়।
উত্তর : লুটোপুটি খায়।
৪.২ ছুট মানে বুঝতে গেলে ছুটতে হবে।
উত্তর : ছুটতে হবে।
৪.৩ আর কিছু বলব না।
উত্তর : বলব।
৪.৪ ছুটি সাত সমুদ্দুরের ঢেউকে ডেকে আনে।
উত্তর : ডেকে আনে।
৪.৫ জীবনে আমি শুধু এগিয়ে যাব।
উত্তর : এগিয়ে যাব।
৫. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
ছুট, হাসি, দিন, শাশ্বত, আশা।
উত্তর : ছুট—থামা। হাসি-কান্না। দিন-রাত। শাশ্বত—ক্ষণস্থায়ী। আশা-নিরাশা।
৬. অর্থ লেখো :
অর্থই, হল্লা, নিকেল, আগল, পোক্ত।
উত্তর : অর্থই—যেন তল নেই এমন গভীর। হল্লা—চ্যাঁচামেচি। নিকেল—ধাতুর প্রলেপ। আগল— দরজার খিল। পোক্ত—মজবুত।
৭. সমার্থক শব্দ লেখো :
দিন, পা, সমুদ্র, ঘুম, শক্ত।
উত্তর : দিন—দিবস, দিবা। পা—চরণ, পদ। সমুদ্র—অর্ণব, সিন্ধু। ঘুম—নিদ্রা, সুপ্তি। শক্ত—কঠিন, বলবান।
৮. বিশেষ্য ও বিশেষণ আলাদা করে লেখো :
হারানো বাঁশি, শাশ্বত দীপ, পোক্ত ভাষা, ভাঙা খাঁচা, সবুজ সমুদ্দুর।
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
বাঁশি,ভাষা, সমুদ্দুর,খাঁচা,দীপ | হারানো,পোক্ত, সবুজ, শাশ্বত ,ভাঙা |
৯. কোনটি বেমানান তার নীচে দাগ দাও :
৯.১ মাঠ, ছুট, মজা, লুটোপুটি, বাড়ি।
৯.২ ছুটি, হাসি, বাঁশি, নাচ, পড়া।
৯.৩ আশা, বাঁচা, ছোটো, মজা, ঘুম।
৯.৪ পাখি, মাঠ, আকাশ, গাছ, সমুদ্র।
৯.৫ মজা, খুশি, হল্লা, নাচা, ভাঙা।
১০. বর্ণগুলিকে সাজিয়ে শব্দ তৈরি করো :
- পু টো টি লু—লুটোপুটি।
- ট ন্ত ফু— ফুটন্ত।
- আ ল গ—আগল।
- দ্দু স মু র—সমুদ্দুর।
- ত শ্ব শা—শাশ্বত।
১১. এলোমেলো শব্দগুলিকে সাজিয়ে বাক্য গঠন করো :
১১.১ কী মানে পাখির ছোট্ট ভাঙা আগল খাঁচা ছুট।
উত্তর : ছুট মানে কী ছোট্ট পাখির আগল ভাঙা খাঁচা!
১১.২ আর বলব না কিছু ছুটেই কী দেখো ছুট মানে।
উত্তর : ছুট মানে কী ছুটেই দেখো—আর কিছু বলব না।
১১.৩ শাশ্বত দীপ এক তো মাঠ মানে সবুজ প্রাণের।
উত্তর : মাঠ মানে তো সবুজ প্রাণের শাশ্বত এক দীপ।
১১.৪ ঘুম তাড়ানো মন হারানো বাঁশি কী মাঠ মানে।
উত্তর : মাঠ মানে কী ঘুম তাড়ানো মন হারানো বাঁশি!
১১.৫ ছুটি মানে কী মজাই শুধু মাঠ মানে মাঠ কী।
উত্তর : মাঠ মানে কী মজাই শুধু মাঠ মানে কী ছুটি...
১২. একই অর্থের অন্য শব্দ পাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :
আনন্দ, গড়াগড়ি খাওয়া, চিৎকার-চেঁচামেচি, বংশী, চিরদিনের, বাঁধন, পিঞ্জর
উত্তর : আনন্দ—মজা, গড়াগড়ি খাওয়া—লুটোপুটি, চিৎকার-চেঁচামেচি—হল্লা। বংশী—বাঁশি। চিরদিনের—শাশ্বত। বাঁধন—বাঁধা। পিঞ্জর—খাঁচা।
১৩. এককথায় প্রকাশ করো :
১৩.১ যা ছুটে চলেছে—
উত্তর : ছুটন্ত।
১৩.২ যা ফুটছে—
উত্তর : ফুটন্ত।
১৩.৩ যে ঘুমিয়ে আছে—
উত্তর : ঘুমন্ত।
১৩.৪ যে নেচে চলেছে-
উত্তর ঃ নাচনা।
১৪. শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও :
দীপ/দ্বীপ, ভাষা/ভাসা, দীন/দিন
দীপ—প্রদীপ
দ্বীপ—জলবেষ্টিত এলাকা। ভাসা—ভেসে থাকা।
দীন—দরিদ্র।
দিন—দিবস।
১৫. একই শব্দকে দু-বার বাক্যে ব্যবহার করে দেখাও,তাদের অর্থ একবার ব্যবহার করলে যা বোঝায় কীভাবে বদলে গেল :
ঘুম, খুশি, ভাঙা, সোনা, সবুজ।
ঘুম—ঘুম থেকে উঠে আমরা পড়তে বসি।
অলস ব্যক্তির সবসময় ঘুম ঘুম থাকে।
খুশি—নুতন জামা পড়ে মেয়েটি আজ খুব খুশি।
কখনোই খুশি খুশি ভাবে তুমি থাকতে পারবে না।
ভাঙা—ভাঙা খেলনাগুলি এবার ফেলে দাও।
ভাঙা ভাঙা সুরে আমরা গান শুনব না।
সোনা —দিন দিন সোনার দাম বেড়েই চলেছে।
শীতের সকালে সূর্যের উত্তাপ বাড়লে তা আমাদের কাছে সোনামাখা রোদ্দুর মনে হয়।
সবুজ—গাছের পাতা সবুজ।
সবুজ সবুজ মাঠ প্রাণের শাশ্বত একটি প্রদীপ।
১৬.১ কবি কার্তিক ঘোষের লেখা দুটি ছড়ার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : কবি কার্তিক ঘোষের লেখা দুটি ছড়ার বইয়ের নাম ‘একটা মেয়ে একা’, ‘আমার বন্ধু গাছ।
১৬.২ তাঁর সম্পাদিত দুটি বইয়ের নাম করো।
উত্তর : তাঁর সম্পাদিত দুটি বইয়ের নাম ‘শ্রেষ্ঠ কিশোর কল্পবিজ্ঞান’, ‘সেরা রূপকথার গল্প'।
১৬.৩ কোন বইয়ের জন্য তিনি ‘সংসদ' পুরস্কারে সম্মানিত হন?
উত্তর : ‘টুম্পুর জন্য' বইয়ের তিনি ‘সংসদ’ পুরস্কারে সম্মানিত হন।
১৭. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১৭.১ কবি খুশির অবাধ লুটোপুটি কোথায় খুঁজে পান?
উত্তর : কবি খুশির অবাধ লুটোপুটি খুঁজে পান নীল আকাশের নীচে খোলা মাঠে।
১৭.২ কোথায় গেলে কবি তাধিন তাধিন শব্দ শুনতে পান?
উত্তর : মাঠে গেলে কবি ছোটো শিশুর নূপুর পরা পায়ে তাধিন তাধিন শব্দ শুনতে পান।
১৭.৩ ছুট মানে কী বুঝতে গেলে কী করতে হবে?
উত্তর : ছুট মানে কী বুঝতে গেলে খোলা মাঠে গিয়ে নিজেকে ছুটতে হবে।
১৭.৪ ‘নিকেল করা’ বিকেলের আলো কবি কোথায় দেখতে পান?
উত্তর : ‘নিকেল করা’ বিকেলের আলো কবি দেখতে পান খোলা আকাশের নীচে মাঠে দাঁড়িয়ে।
১৭.৫ পাখির খাঁচার আগল ভাঙলে পাখি কী করে?
উত্তর : পাখির খাঁচার আগল ভাঙলে পাখি খোলা আকাশে স্বাধীনভাবে ছুটে বেড়ায়।
১৭.৬ কবির কাছে মাঠ বলতে যা বোঝায় তা যে-কোনো তিনটি ভাবনা কবিতা থেকে বুঝে নিয়ে লেখো।
উত্তর : কবির ভাবনায় (ক) মাঠ বলতে বোঝায় নীল আকাশের নীচে শুধুই মজা। মাঠ মানে ছুটি। (খ) মাঠ মানে কেবলমাত্র চিৎকার চেঁচামেচি আর হাসি। (গ) মাঠ মানে ছেলেমেয়েদের শৈশব জীবনে চিরন্তন সবুজ প্রাণের প্রদীপ।
১৭.৭ ছুট অর্থে কবি যা যা বলেছেন তা (তিন-চারটি বাক্যে) লেখো।
উত্তর : কবির ভাবনায় ছুট মানে বেঁচে থাকার জন্য সাহসের সঙ্গে ছুটে চলা। যেমন একটা ছোটো পাখি ভাঙা খাঁচা থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে নিজের খেয়ালখুশি মতো আকাশে উড়ে বেড়ায়। ছুটে চলার মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকার আনন্দ মানুষ অনুভব করে। ছুটে চলাাার মধ্য দিয়েই মানুষ মুক্ত জীবনের রসদ আহরণ করে। ছুটে চলার মধ্য দিয়ে মানুষ জীবনে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ লাভ করে।
১৭.৮ ‘মাঠ’ আর ‘ছুট’ তোমার কাছে কী অর্থ নিয়ে ধরা দেয় তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : মাঠ হল মুক্তির আনন্দ। শাশ্বত সবুজ প্রাণের আনন্দ স্থল হল মাঠ। মাঠ হল সবুজের সমারোহ যা আমাদের
চোখে শান্তি এনে দেয়। মাঠে গেলে আমরা মুক্ত জীবনের স্বাদ খুঁজে পাই। অপরদিকে ছুট অর্থ ছুটে চলা। জীবন মানেই ছুটে সকলের চেয়ে এগিয়ে চলা। জীবনের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে চলাই হল ছুট। এই ছুটে চলার মধ্য দিয়ে আমরা বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পাই।
১৭.৯ তোমার দৃষ্টিতে আদর্শ মাঠটির চেহারা কেমন, তা একটি ছবি এঁকে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : ছবিটি নিজেরা এঁকে দেখাও।
পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে
❏ পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে বিষয়বস্তু :
হিমালয়ের পাদদেশে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে অবস্থিত তরাই অঞ্চলটি সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। তিস্তা, তোর্সা, রঙ্গিত
ইত্যাদি নদী এই অঞ্চলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। ওই নদীগুলির পাশাপাশি মেচ, রাভা, গারো, লেপচা, টোটো ইত্যাদি এ রাজ্যের আদিম নানা জাতির বাস এখানে। এদের নিজস্ব ভাষায় রয়েছে বহু গল্প ও গান। নাচ ও গানের মধ্যে এরা এদের নানান উৎসব-পার্বণ অনুষ্ঠানকে সুন্দরভাবে তুলে ধরে। সেইরকম একটি গানের মুলভাব হল—নতুন বছরের, নতুন জলে মাছ ধরতে যাবে তারা, জলের প্লাবনে নদীর দু কুল প্লাবিত, কুরুয়া পাখি কেঁদে ফিরছে, বকেরা উড়ছে, মাছরাঙা মাছের সন্ধানে ঘুরছে চারদিক। বৃষ্টি কেমন করে আসে সে বিষয়ে লেপচারা একটি সুন্দর গল্প প্রচার করে। একবার খরার সময় বৃষ্টি না হওয়ার দরুন মানুষ, পশু আর গাছপালার মৃত্যু ঘটল। সব জন্তুরাই ভাবতে লাগল কীভাবে বৃষ্টি হবে।
এর মধ্যে ব্যাং ভাবল সে ভগবানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, তাদের প্রতি তিনি কেন অবহেলা করছেন এরপর ব্যাং একদিন সকালেই যাত্রা শুরু করল। পথে মৌমাছি, মোরগ, বাঘ এদের সঙ্গে দেখা হল ব্যাঙের তারাও সকলে ব্যাঙের সঙ্গে ভগবানের কাছে যেতে সম্মত হল। অবশেষে দীর্ঘ যাত্রার পর ভগবানের প্রাসাদে পৌঁছে তারা দেখল সেখানে দেবতারা সবাই নানান ভোজ ও আনন্দে ব্যস্ত। তখন রাগে উত্তেজিত হয়ে ভগবানের রক্ষীদের মুখে মৌমাছি হুল ফোটাল, বাঘ ভয় দেখাল, মোরগও ঝাপটা মারতে থাকল। ভগবান তাঁর মন্ত্রীদের তিরস্কার করতে লাগলেন। এভাবে ব্যাং জয়ী হয়ে আনন্দে পুকুরে ফিরে গেল। তখন থেকেই ব্যাং ডাকলে বৃষ্টি হয়।
পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে প্রশ্ন উত্তর
❏ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১. নিজের ভাষায় লেখো :
১.১ পশ্চিমবঙ্গের যে-কোনো একটি পাহাড়ের নাম লেখো।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গের যে-কোনো একটি পাহাড়ের নাম পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা।
১.২ পাহাড়ের কথা বললেই কোন ছবি তোমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে?
উত্তর : পাহাড়ের কথা বললেই দার্জিলিঙের ছবি আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
১.৩ বর্ষায় মাছ ধরা নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা কিংবা মাছ ধরা নিয়ে তোমার পড়া একটি গল্প বা ছড়া লেখো।
উত্তর : বর্ষায় পুকুরে, নদীতে প্রায় সব জায়গাতেই জল খুব বেড়ে যায়। আমার বাবা মাছ ধরতে ভালোবাসেন। এরকমই
একটি বর্ষার দিনে আমি আমার বাড়ির সামনে যে পুকুর আছে তাতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। মাছ ধরার বড়শি বা
ছিপ এবং মাছের টোপ বা খাবার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। ছোটো বড়ো বেশ কয়েকটা মাছও ধরেছিলাম। ছাতা নিয়ে
বর্ষাকালে মাছ ধরার আনন্দটা সত্যিই খুব সুন্দর।
১.৪ বর্ষায় প্রকৃতির রূপ কেমন হয়? তোমার পাঠ্য বইতে বর্ষা নিয়ে আর কোন্ কোন্ লেখা রয়েছে?
উত্তর : বর্ষায় প্রকৃতি এক নতুনরূপে সেজে ওঠে। গ্রীষ্মের দাবদাহের পর বর্ষার নতুন জল পেয়ে গাছপালা, প্রকৃতি যেন
নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। এইসময় আকাশ বেশির ভাগ সময় কালো মেঘে ঢাকা থাকে। নদী, পুকুর, রাস্তাঘাট জলে
পরিপূর্ণ হয়ে যায়। গ্রামের রাস্তাঘাট কাদায় ভরে যায় ফলে যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়। আমাদের পাঠ্য বইতে বর্ষা নিয়ে—‘ঋড়’, ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ লেখা রয়েছে।
২. বাক্য মেলাও :

৩. প্রদত্ত সূত্র অনুসারে গানটি থেকে গল্প তৈরি করো :
নতুন বছরের নতুন জলে আনন্দ করে সকলে মাছ ধরতে যেতে চাইছে। বর্ষার এই সুন্দর প্রকৃতিতে নদীর দুকূল
জলে ছাপিয়ে গেছে। মাঠ ঘাট, কত পাখি, যেমন কুরুয়া, বক, মাছরাঙা তারা কেউ খাবার পাচ্ছে না। একদিকে মাছ
না পাওয়া গেলে তারা অন্যদিকে খাবারে সন্ধানে যাচ্ছে।
৪. কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে তুমি খুব হৈচৈ আনন্দ করেছ আর মজা পেয়েছ। কী কী করলে সেই দিন তা
দিনলিপির আকারে খাতায় লেখো :
দিনলিপি
তারিখ : ২০ মে ২০২১
আজ আমাদের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছেলেমেয়েরা বকখালিতে বনভোজনে গিয়েছিলাম। সকাল ৮টায় একটি
বড়ো বাসে চড়ে আমরা রওনা হলাম। বাসের মধ্যে রান্নার সরঞ্জাম, মাইক, শতরঞ্জি সবই রাখা হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষিকা
এবং ছাত্রছাত্রী মিলে আমরা সংখ্যায় ছিলাম প্রায় ৫০ জন। আমাদের সঙ্গে ২ জন পাচক ছিল। বকখালিতে কত পশু
পাখি দেখেছি। বোটে চড়েছি। নাচ-গান করেছি। সমুদ্র সৈকতে খেলাধুলা করেছি। আমাদের কয়েকজন তরকারি কেটে
দিয়েছে। রান্নার শেষে শতরঞি পেতে সবাই খেতে বসি। মাছ, মাংস, তরকারি দারুণ স্বাদ হয়েছে। কত গাছগাছালি, কত বাহারি ফুলের বাগান। খুব আনন্দ উপভোগ ও শিক্ষালাভ করেছি। আগামী দিনে আবার আমরা একসঙ্গে বনভোজনে
যাওয়ার ইচ্ছা রাখি।
৫. মূল লেখাটা অন্য ভাষায়, কিন্তু নিজের ভাষায় তুমি পড়েছ আর দারুণ লেগেছে, এমন দুটি লেখার নাম করো :
উত্তর : এডোয়ার্ড লিয়ারের লিমেরিক, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শকুন্তলা।
৬. একটি বৃষ্টির দিনের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো :
প্রিয় অনিন্দিতা,
তারিখ : ১২ জুন, ২০২১
আশাকরি ভালো আছিস। অনেকদিন তোর কোনো চিঠি পাইনি। গতকাল আমাদের এখানে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।
বেশ কয়েকদিন বাদে বৃষ্টি হওয়ার জন্য খুব ভালো লাগছিল। আমি গতকাল স্কুলে যাইনি। সারাদিন বাড়িতেই ছিলাম।
বাড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতে বেশ লাগছিল। বাড়ির সামনে বেশ কিছুটা জল জমেছিল, আমি তাতে কয়েকখানা কাগজের
নৌকা তৈরি করে ছেড়েছিলাম। মা খিচুড়ি আর মাছ ভাজা করেছিলেন। তোর কথা খুব মনে পড়ছিল। যা হোক গতকাল
বেশ আনন্দেই দিনটা কেটেছে। সময় পেলে আমাদের বাড়ি আসিস। ভালো থাকিস। তুই আমার ভালোবাসা নিস, বড়োদের আমার প্রণাম জানাস।
ইতি
রুম্পা
অনিন্দিতা ঘোষ
গ্রাম : গোপীপুর
পোঃ আতুহাট
জেলা : পূর্ব বর্ধমান
৭. এমন একটি ছবি আঁকো, যার মধ্যে কবিতার এই জিনিসগুলো থাকবে :
নদীর কূল, জল থৈথৈ মাঠ, বকের সারি, মাছরাঙা, ছেলেমেয়ের দল।
৮. কথায় বলে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি'। সেই বাঙালির পরিচয় গানটিতে কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর : কথায় বলে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। সেই বাঙালির পরিচয় আমরা গানটির মধ্যেও পেয়ে থাকি। বর্ষার সময়
নদীর দুকূল জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিটি বাঙালিই প্রায় মাছ ধরতে বা বাজার থেকে মাছ কিনতে ভালোবাসে। তাই
বর্ষার নতুন জলে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য তারা ব্যস্ত হয়ে হয়ে পড়ে। খিচুড়ির সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা দারুণ লাগে।
৮.১ বৃষ্টি কীভাবে প্রকৃতিকে বাঁচায়?
উত্তর : বৃষ্টি প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলে। গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। এই বর্ষার জলে গাছপালা যেন নতুন প্রাণ
ফিরে পায়। সমস্ত ধুলো ময়লা বৃষ্টির নতুন জলে ধুয়ে প্রকৃতি এক নবরূপ ধারণ করে।
৮.২ ‘খরা’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : খরা বলতে বোঝায় অনাবৃষ্টি। এই অনাবৃষ্টির ফলে মাঠ-ঘাট সব শুকিয়ে যায়। চাষের জমি জলের অভাবে ফেটে
চৌচির হয়ে যায়। মানুষ, পশু, গাছপালা এদের প্রত্যেকেরই বেঁচে থাকা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে।
৮.৩ অনাবৃষ্টির ফলে গল্পে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালার অবস্থা কেমন হয়েছিল?
উত্তর : অনাবৃষ্টির ফলে গল্পে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা সবই প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
৮.৪ ভগবানের প্রাসাদে পৌঁছে ব্যাং কী দেখল ?
উত্তর : ব্যাং দেখল সেখানে সকলে নানান ভোজ ও আনন্দ উৎসবে ব্যস্ত। সেখানে স্ত্রী ও মন্ত্রীরাও বেশ মহানন্দে রয়েছে।
৮.৫ প্রাসাদের দৃশ্য দেখে ব্যাং রাগে উত্তেজিত হয়ে পড়ল কেন?
উত্তরঃ প্রাসাদের সবাই খুব আনন্দে রয়েছে এই দৃশ্য দেখে ব্যাং খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ল। কারণ তারা পৃথিবীতে খরার প্রকোপে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ভগবান তাদের জন্য কোনো চিন্তাভাবনা করছেন না। তারা নানান ভোজ ও আনন্দ করছেন।
৮.৬ ভগবান ও তার রক্ষীরা মৌমাছি, বাঘ, মোরগের হাতে কীভাবে নাকাল হলো?
উত্তর : রক্ষীদের ওপর রেগে গিয়ে মৌমাছিরা হুল ফোটাতে লাগল, বাঘ তাদের খেয়ে নেবে বলে ভয় দেখাল, মোরগ
তার ডানা দিয়ে ঝাপটা দিতে লাগল।
৮.৭ শিক্ষক/শিক্ষিকার সাহায্যে ‘বৃষ্টি’ নিয়ে প্রচলিত দুটি ছড়া ও দুটি গল্প সংগ্রহ করো।
ছড়া ১ →
রাত দিন ঝঝম্
কি সাজে সেজেছ রানি!
আননে বিজলী হাসি,
আঁচলে কেতকী-ছটা,
শিখী নাচে, ভেকে গায়,
বসুধা আনন্দ ভরে
ডুবেছে রবির ছবি-
আকাশ গলিয়া পড়ে
উথলিছে গঙ্গা, পদ্মা,
মরণে রয়েছে ছেয়ে
রাতদিন ঝম ঝম
দেখেছি অনেকতর
রাতদিন টুপ টুপ
এ কি সাজ অপরূপ!
গলায় কদম-হার,
এ আবার কি বাহার!
মেঘে গুরু গরজন,
কত করে আয়োজন!
মডুবেছে চাঁদিমা তারা,
তরল রজত ধারা!
পরাণে ধরে না সুখ,
তোমারি স্নেহের মুখ,
রাতদিন টুপ টুপ,
দেখিনি তো এত রূপ!
ছড়া ২ →
সকাল থেকেই বৃষ্টির পালা শুরু,
আকাশ-হারানো আঁধার-জড়ানো দিন
আজকেই, যেন শ্রাবণ করেছেন পণ,
শোধ করে দেবে বৈশাখী সব ঋণ,
রিমঝিম ঝরে অঝোরে অন্ধ ধারা,
ঘনবর্ষণে আপাত-আত্মহারা
পৃথিবীতে যেন দিন নেই, রাত নেই,
স্তম্ভিত কালো মেঘ-মায়ালোকে লীন।
- গল্প ১ → অসুস্থ মায়ের পথ্যের জন্য রাধারানি বনফুলের মালা গেঁথে সেটি মাহেশের রথের মেলায় বিক্রি করতে গিয়েছিল। কিন্তু মেলায় অসম্ভব বৃষ্টি হওয়ার জন্য রাধারানির মালা কেউ কেনেনি। অন্ধকারে রাত্রে কাদার মধ্যে বাড়ি ফেরার পথে রাধারানির সঙ্গে এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। ব্যক্তিটি একদিকে যেমন ছিলেন দয়ালু অন্যদিকে তেমনই উপকারী। তিনি রাধারানির সমস্ত দুঃখের কথা শুনেছিলেন এবং রাধারানিকে শুধুমাত্র যে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন তা নয়, নিজের প্রয়োজন না থাকলেও কেবলমাত্র রাধারানির উপকার করার জন্য তার কাছ থেকে বনফুলের মালাটিও কিনেছিলেন।
- গল্প ২ → আষাঢ় মাস এসেছে। বৃষ্টির কণাগুলিকে আলাদাভাবে দেখলে মনে হয় অতি ছোটো। এই একফোঁটা জলকণায় একটি জুঁই ফুলও ভিজবে না এবং একটি মল্লিকা ফুলের হৃদয়ও ভরবে না। কিন্তু অনেকগুলি জলকণা একসঙ্গে হয়ে যখন পৃথিবীতে নামে তখন পৃথিবী ভাসিয়ে দিতে পারে। একটি বৃষ্টিবিন্দু যদি একা পৃথিবীতে নামে তাহলে সূর্যের তাপে মাঝপথেই শুকিয়ে যাবে। কিন্তু অসংখ্য জলকণা যখন একসঙ্গে পৃথিবীর বুকে নামবে তখন পৃথিবীকে ভাসিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ, ঐক্যই বল এবং যে একা সে ছোটো ও শক্তিহীন হয়ে পড়ে।
• টোটোদের দুটি গানের তরজমা বইতে দেওয়া হয়েছে। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্কের কথা এই দুটি গানে
ফুটে উঠেছে। সূর্য আর চাঁদের আলো অবাধে মানুষের ওপর ঝরে পড়ুক—এই কামনা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই গানদুটি।
উত্তর : বিষয়বস্তু : (এক) দিনের শেষে অন্ধকারে আকাশ চাঁদের আলোয় আলোকিত। কালো মেঘ এসে চাঁদকে যেন
আড়াল না করে। জ্যোৎস্নাভরা রাত্রি সত্যিই সুন্দর। (দুই) রাতের অন্ধকার শেষ হয়ে ভোরবেলা সূর্যের আলোয় চারদিক
প্রকাশিত হয়েছে। এখন সব জায়গায় যাওয়া যাবে ও দেখা যাবে। আমাদের কর্মময় জীবন শুরু হচ্ছে।
Tags : class 5 bangla,ছেলেবেলা class 5,ছেলেবেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,class 5 bengali,,class 5 chelebela,class 5,ছেলেবেলা,রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা,class 5 chelebela question answer,chelebela class 5,ছেলেবেলা - class 5,class 5 bengali chele bela,bengali class 5,patabahar class 5,wbbse class 5 bengali,ছেলেবেলা রবীন্দ্রনাথ, মাঠ মানে ছুট,মাঠ মানে ছুট কবিতা,মাঠ মানে ছুট কার্তিক ঘোষ,class 5 bengali মাঠ মানে ছুট,মাঠ মানে ছুট প্রশ্ন উত্তর,math mane chut class 5,class 5 bangla,class 5 bengali,class 5,মাঠ মানে ছুট কবিতার সারমর্ম,মাঠ মানে ছুট কবিতার বিষয়বস্তু,পঞ্চম শ্রেণী বাংলা মাঠ মানে ছুট,class 5 bangla question answer,class 5 math mane chut,মাঠ মানে ছোট কবিতা,class 5 bengali mat mane chut, পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে,class 5 bangla,,class 5,paharia borsar sure class 5,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে,পাহাড়িরা বর্ষার সুরে,class 5 bengali,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে গান,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে গল্প,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে প্রশ্ন-উওর,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে,পাহাড়িয়া বর্ষার সুরে শেখার সেতু প্রশ্নোত্তর
No comments
Hi Welcome ....