Madhyamik ABTA Test Paper History Question Solved মাধ্যমিক টেস্ট পেপার ইতিহাস প্রশ্নোত্তর পৃষ্টা - ৫০ স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা এবার যারা ...
Madhyamik ABTA Test Paper History Question Solved
মাধ্যমিক টেস্ট পেপার ইতিহাস প্রশ্নোত্তর পৃষ্টা - ৫০স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা এবার যারা ২০২২-২০২৩ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে চলেছ তাদের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো। এখানে এবিটিএ মাধ্যমিক টেস্ট পেপার ইতিহাস পৃষ্ঠা ৫০ থেকে ৫৩ পর্যন্ত যতগুলো প্রশ্ন আছে তার উত্তর সমাধান আলোচনা করা হয়েছে আশা করি তোমাদের অনেকর হেল্প হবে। তোমাদের উত্তরগুলো লেখা হয়ে গেলে এই পোস্টটি নিচে তোমরা কমেন্ট করতে পারো। তোমাদের সুবিধার্থে বাকি ইতিহাসের আরো পৃষ্ঠার উত্তর গুলো এই ওয়েবসাইটে খুব তাড়াতাড়ি আপলোড করা হবে। এবিটিএ মাধ্যমিক টেস্ট পেপারটি solved করলে তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার সময় প্রচুর প্রশ্ন কমন পাবেই । কেননা ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড এর অনকে ভালো ভালো স্যারেরা এই বইটির প্রশ্ন গুলো খুব নিখুঁদ ভাবে আলোচনার মাধ্যমেই তৈরি করেছেন, যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন গুলোকে ভালো ভাবে দেখে বুঝে নিয়মিত বাড়িতে প্র্যাকটিস করে।
ABTA Madhyamik Test Paper History Question Answer
বিভাগ-‘ক’ ১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো :
২০×১=২০
১.৩ ‘বামাবোধিনী' পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন —
(ক) উমেশচন্দ্র দত্ত
(খ) গিরিশচন্দ্র ঘোষ
(গ) হরিশচন্দ্র মুখার্জি
(ঘ) কালীপ্রসন্ন সিংহ।
১.৪ ‘তত্ত্ববোধিনী সভা' প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) রামমোহন রায়
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) কেশবচন্দ্র সেন
(ঘ) বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।
১.৫ সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয় কোন গভর্নর জেনারেলের সময়?
(ক) ওয়ারেন হেস্টিংস
(খ) লর্ড কর্ণওয়ালিশ
(গ) উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক
(ঘ) লর্ড ডালহৌসি।
১.৬ ভারতে প্রথম অরণ্য আইন পাশ হয় —
(ক) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে।
১.৭ কাকে ‘বিদ্রোহীদের রাজা’ বলে সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় চিহ্নিত করা হয়?
(ক) ঈশানচন্দ্র রায়
(খ) শম্ভুনাথ পাল
(গ) অনুপ নারায়ণ
(ঘ) কৃপানাথ।
১.৮ ১৮৫৭-র বিদ্রোহের সময় মুঘল সম্রাট ছিলেন —
(ক) ফারুকসিয়র
(খ) দ্বিতীয় শাহ আলম
(গ) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ
(ঘ) জান্দাহার শাহ।
১.৯ হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) রাধাকান্ত দেব
(খ) রামমোহন রায়
(গ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) নবগোপাল মিত্র।
১.১০ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেন —
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১.১১ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) প্রফুল্লচন্দ্র রায়
(খ) জগদীশচন্দ্র বসু
(গ) নীলরতন সরকার
(ঘ) মহেন্দ্রলাল সরকার।
১.১২ ‘ইতিহাসমালা’ রচনা করেন—
(ক) ডেভিড হেয়ার
(খ) উইলিয়াম কেরি
(গ) আলেকজান্ডার ডাফ
(ঘ) উইলিয়াম জোনস।
১.১৩ কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় —
(ক) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।
১.১৪ আল্লুরি সীতারাম রাজু কোন আন্দোলনের সাথে জড়িত —
(ক) রুম্পা বিদ্রোহ
(খ) একা আন্দোলন
(গ) বকস্ত আন্দোলন
(ঘ) তানা ভগত আন্দোলন।
১.১৫ ‘হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) মুজফ্ফর আহমদ
(খ) মানবেন্দ্রনাথ রায়
(গ) এস এ ডাঙ্গে
(ঘ) ভগৎ সিং।
১.১৬ বীরাষ্টমী ব্রত সূচনা করেন —
(ক) সরোজিনী নাইডু
(খ) সরলাদেবী চৌধুরানী
(গ) অ্যানি বেশান্ত
(ঘ) কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়।
১.১৭ ধারাসানা লবণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন —
(ক) বাসন্ত দেবী
(খ) কল্পনা দত্ত
(গ) সরোজিনী নাইডু
(ঘ) লীলা নাগ।
১.১৮ সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) বি আর আম্বেদকর
(খ) জ্যোতিরাও ফুলে
(গ) রামস্বামী নায়কর
(ঘ) শ্রী নারায়ণ গুরু।
১.১৯ ‘মার্জিনাল ম্যান’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন —
(ক) বিপন চন্দ্র
(খ) হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
(গ) জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত
(ঘ) প্রফুল্ল চক্রবর্তী।
১.২০ ভারতের সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্যটি ছিল—
(ক) কাশ্মীর
(খ) হায়দ্রাবাদ
(গ) জুনাগড়
(ঘ) ত্রিবাঙ্কুর।
বিভাগ-‘খ’ ২। নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও
বিভাগ-‘গ’ ৩। দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৩.৯ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?
উপবিভাগ-ঘ.৩
বিভাগ-‘ঙ’৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ১×৮=৮
৫.১ উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্ম সমাজগুলির কিরূপ ভূমিকা ছিল?
২০×১=২০
১.১ ‘সাইলেন্ট স্প্রিং' গ্রন্থের রচয়িতা হলেন —
(ক) রামচন্দ্র গুহ
(খ) মাধব গ্যাডগিল
(গ) রাচেল কারসন
(ঘ) রিচার্ড গ্রোভ।
(ক) রামচন্দ্র গুহ
(খ) মাধব গ্যাডগিল
(গ) রাচেল কারসন
(ঘ) রিচার্ড গ্রোভ।
১.২ ভারতে ফুটবল খেলা প্রবর্তন করেন —
(ক) ফরাসিরা
(খ) ইংরেজরা
(গ) ওলন্দাজরা
(ঘ) পর্তুগীজরা।
(ক) ফরাসিরা
(খ) ইংরেজরা
(গ) ওলন্দাজরা
(ঘ) পর্তুগীজরা।
১.৩ ‘বামাবোধিনী' পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন —
(ক) উমেশচন্দ্র দত্ত
(খ) গিরিশচন্দ্র ঘোষ
(গ) হরিশচন্দ্র মুখার্জি
(ঘ) কালীপ্রসন্ন সিংহ।
১.৪ ‘তত্ত্ববোধিনী সভা' প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) রামমোহন রায়
(খ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) কেশবচন্দ্র সেন
(ঘ) বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী।
১.৫ সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয় কোন গভর্নর জেনারেলের সময়?
(ক) ওয়ারেন হেস্টিংস
(খ) লর্ড কর্ণওয়ালিশ
(গ) উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক
(ঘ) লর্ড ডালহৌসি।
১.৬ ভারতে প্রথম অরণ্য আইন পাশ হয় —
(ক) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে।
১.৭ কাকে ‘বিদ্রোহীদের রাজা’ বলে সমসাময়িক পত্রপত্রিকায় চিহ্নিত করা হয়?
(ক) ঈশানচন্দ্র রায়
(খ) শম্ভুনাথ পাল
(গ) অনুপ নারায়ণ
(ঘ) কৃপানাথ।
১.৮ ১৮৫৭-র বিদ্রোহের সময় মুঘল সম্রাট ছিলেন —
(ক) ফারুকসিয়র
(খ) দ্বিতীয় শাহ আলম
(গ) দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ
(ঘ) জান্দাহার শাহ।
১.৯ হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) রাধাকান্ত দেব
(খ) রামমোহন রায়
(গ) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) নবগোপাল মিত্র।
১.১০ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেন —
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১.১১ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) প্রফুল্লচন্দ্র রায়
(খ) জগদীশচন্দ্র বসু
(গ) নীলরতন সরকার
(ঘ) মহেন্দ্রলাল সরকার।
১.১২ ‘ইতিহাসমালা’ রচনা করেন—
(ক) ডেভিড হেয়ার
(খ) উইলিয়াম কেরি
(গ) আলেকজান্ডার ডাফ
(ঘ) উইলিয়াম জোনস।
১.১৩ কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয় —
(ক) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে।
১.১৪ আল্লুরি সীতারাম রাজু কোন আন্দোলনের সাথে জড়িত —
(ক) রুম্পা বিদ্রোহ
(খ) একা আন্দোলন
(গ) বকস্ত আন্দোলন
(ঘ) তানা ভগত আন্দোলন।
১.১৫ ‘হিন্দুস্থান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) মুজফ্ফর আহমদ
(খ) মানবেন্দ্রনাথ রায়
(গ) এস এ ডাঙ্গে
(ঘ) ভগৎ সিং।
১.১৬ বীরাষ্টমী ব্রত সূচনা করেন —
(ক) সরোজিনী নাইডু
(খ) সরলাদেবী চৌধুরানী
(গ) অ্যানি বেশান্ত
(ঘ) কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়।
১.১৭ ধারাসানা লবণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন —
(ক) বাসন্ত দেবী
(খ) কল্পনা দত্ত
(গ) সরোজিনী নাইডু
(ঘ) লীলা নাগ।
১.১৮ সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন —
(ক) বি আর আম্বেদকর
(খ) জ্যোতিরাও ফুলে
(গ) রামস্বামী নায়কর
(ঘ) শ্রী নারায়ণ গুরু।
১.১৯ ‘মার্জিনাল ম্যান’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন —
(ক) বিপন চন্দ্র
(খ) হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
(গ) জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত
(ঘ) প্রফুল্ল চক্রবর্তী।
১.২০ ভারতের সবচেয়ে বড়ো দেশীয় রাজ্যটি ছিল—
(ক) কাশ্মীর
(খ) হায়দ্রাবাদ
(গ) জুনাগড়
(ঘ) ত্রিবাঙ্কুর।
বিভাগ-‘খ’ ২। নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও
(প্রতিটি উপরিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি করে মোট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১৬×১=১৬
উপবিভাগ-২:১ একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১.১ বাংলায় প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র কোনটি?
উপবিভাগ-২:১ একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১.১ বাংলায় প্রথম প্রকাশিত সংবাদপত্র কোনটি?
উত্তরঃ সমাচার দর্পন।
২.১.২ এশিয়াটিক সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ উইলিয়াম জোন্স।
২.১.৩ সুই মুণ্ডা কোন বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?
উত্তরঃ কোল বিদ্রোহের।
২.১.৪ ভাষার ভিত্তিতে প্রথম পুনর্গঠিত রাজ্য কোনটি?
উত্তরঃ অন্ধ্রপ্রদেশ।
উপবিভাগ-২.২ ঠিক না ভুল নির্ণয় করো :
২.২.১ সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে প্রথম উল্লেখ করেন বিনায়ক দামোদর সাভারকার।
উত্তরঃ অন্ধ্রপ্রদেশ।
উপবিভাগ-২.২ ঠিক না ভুল নির্ণয় করো :
২.২.১ সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে প্রথম উল্লেখ করেন বিনায়ক দামোদর সাভারকার।
উত্তরঃ ঠিক।
২.২.২ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউ পরবর্তীতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
উত্তরঃ ঠিক।
২.২.৩ বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ।
উত্তরঃ ভুল।
২.২.৪ ১৯৪৬-র ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালিত হয়।
২.২.৪ ১৯৪৬-র ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালিত হয়।
উত্তরঃ ঠিক।
উপবিভাগ-২.৩ ‘ক’ স্তম্ভের সাথে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও :

উত্তরঃ ২.৩.১ — ৩ |২.৩.২ — ১ |২.৩.৩ — ৪ |২.৩.৪ — ২
উপবিভাগ-২.৩ ‘ক’ স্তম্ভের সাথে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও :

উত্তরঃ ২.৩.১ — ৩ |২.৩.২ — ১ |২.৩.৩ — ৪ |২.৩.৪ — ২
উপবিভাগ-২.৪ প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত ও নামাঙ্কিত করো।
২.৪.১ চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা। ২.৪.২ সাঁওতাল বিদ্রোহের এলাকা। ২.৪.৩ সিপাহি বিদ্রোহের কেন্দ্র কানপুর। ২.৪.৪ দেশীয় রাজ হায়দ্রাবাদ।
📥 Map Download
উপবিভাগ-২.৫ নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো:
২.৫.১ বিবৃতি-ঊনিশ শতক ছিল বাংলার ইতিহাসে নবজাগরণের যুগ।
২.৪.১ চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা। ২.৪.২ সাঁওতাল বিদ্রোহের এলাকা। ২.৪.৩ সিপাহি বিদ্রোহের কেন্দ্র কানপুর। ২.৪.৪ দেশীয় রাজ হায়দ্রাবাদ।
📥 Map Download
উপবিভাগ-২.৫ নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো:
২.৫.১ বিবৃতি-ঊনিশ শতক ছিল বাংলার ইতিহাসে নবজাগরণের যুগ।
ব্যাখ্যা-১ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হয়।
ব্যাখ্যা-২ ভারতে পাশ্চাত্য আদর্শে উদ্বুদ্ধ নব্য প্রজন্মের উন্মেষ ঘটে।
ব্যাখ্যা-৩ সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিল্প, বিজ্ঞানে জোয়ার আসে।
২.৫.২ বিবৃতি- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে (১৯০৫) কৃষকরা তেমন সক্রিয় ছিল না।
ব্যাখ্যা-১ ব্রিটিশদের অত্যাচারের ভয়ে তারা অংশ নেয়নি।
ব্যাখ্যা-২ আন্দোলনের কোনো কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি ছিল না।
ব্যাখ্যা-৩ সামাজিক ভেদাভেদের জন্য তারা আন্দোলনে সামিল হয়নি।
২.৫.৩ বিবৃতি- কার্লাইল সার্কুলার জারি করা হয়েছিল।
ব্যাখ্যা-১ শিক্ষক আন্দোলন দমন করতে।
ব্যাখ্যা-২ ব্যবসায়ীদের আন্দোলন বন্ধ করতে।
ব্যাখ্যা-৩ ছাত্রদেরকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে।
২.৫.৪ বিবৃতি- বিশ শতকে দলিত শ্রেণি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠে।
ব্যাখ্যা-১ দলিতদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটে।
ব্যাখ্যা-২ দলিতরা তাদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার লাভকে গুরুত্ব দেয়।
ব্যাখ্যা-৩ দলিতরা ভোটাধিকার লাভ করে।
বিভাগ-‘গ’ ৩। দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(যে কোনো ১১টি) : ১১×২=২২
৩.১ সামাজিক ইতিহাস কী?
৩.১ সামাজিক ইতিহাস কী?
উত্তরঃ ইতিহাসের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সামাজিক ইতিহাস। আগে সামাজিক ইতিহাস শুধু রাজা-মহারাজা, অভিজাতবর্গ ও উচ্চবর্গের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানকালে এই আলোচনার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে এবং সমাজের সাধারণ, নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক মানুষের আলোচনাও এতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে সামাজিক ইতিহাস ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’-রূপে পরিচিত হয়েছে।
৩.২ আধুনিক ইতিহাসের উপাদান হিসাবে আত্মজীবনীর গুরুত্ব কোথায়?
উত্তরঃ নিজের জীবন ও সেই সংক্রান্ত ঘটনাগুলো যখন কোন ব্যক্তি নিজে লিপিবদ্ধ করেন তখন সেই লিপিবদ্ধ কাহিনীকেই আত্মজীবনী বলা হয়। বিভিন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের লেখা আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়। সে রচনা গুলির মধ্যে অন্যতম হলো - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতি, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ছেড়ে আসা গ্রাম প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানার ক্ষেত্রে আত্মজীবনী ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
৩.৩ উডের ডেসপ্যাচ কী?
উত্তরঃ লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠক্রম ও গঠনরীতিতে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। এই পরিস্থিতির্তে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা-বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এটি উডের ডেসপ্যাচ বা উডের নির্দেশনামা নামে পরিচিত।
৩.৪ নব্যবঙ্গ আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ছিল?
উত্তরঃ (i) নববঙ্গ আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক এবং শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই নব্যবঙ্গের আদর্শ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। (ii) নব বঙ্গ আন্দোলনের নেতারা প্রচলিত ব্যবস্থার সমালোচনা করলেও কোন বিকল্প সমাজ ব্যবস্থার কথা প্রকাশ করেননি । এদের কোনো গঠনমূলক কর্মসূচি ছিল না তাই এরা জনসমর্থনও পাননি।
৩.৫ ‘পাইক’ কাদের বলা হতো?
উত্তরঃ জমিদার বা ভূস্বামীর শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আধাসামরিক কর্মীদের পাইক বলা হয়। 1817 খ্রিস্টাব্দে পাইক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। পাইক বিদ্রোহের নেতার নাম - বিদ্যাধর মহাপাত্র।
৩.৬ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ কেন ব্যর্থ হল?
উত্তরঃ সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ (১৭৬৩-১৮০০ খ্রি.) ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলি ছিল—[i] এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে অনেকেই বাংলার বাইরে থেকে এসেছিলেন। তাই বাংলায় তাদের জনভিত্তি ছিল দুর্বল। [ii] এই বিদ্রোহ শুরু থেকেই ক্ষুদ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।
৩.৭ ‘সভা-সমিতির’ যুগ কাকে বলে?
উত্তরঃ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার, জাতীয়তাবাদের উন্মেষ প্রভৃতির ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এজন্য এই সময়কালকে ‘সভাসমিতির যুগ’ বলা হয়। ড. অনিল শীল ঊনবিংশ শতককে ‘সভাসমিতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
৩.৮ কখন, কেন হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ পণ্ডিত রাজনারায়ণ বসুর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে এবং তাঁর সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র (১৮৪০-৯৪ খ্রি.)
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতায় হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠা করেন। ‘হিন্দুমেলা’ প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণ হলো যে -
[i] সাধারণ মানুষের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবগাথা ছড়িয়ে দেওয়া, [ii] দেশীয় ভাষা চর্চা করা, [iii] জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া, দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা জাগিয়ে তোলা প্রভৃতি।
৩.৯ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল-(i) এই প্রকাশনীতে কম খরচে বেশি বই ছাপা হত। (ii) এই ছাপায় হ্যান্ডমেড পেপারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় ফলে স্বদেশি কারিগরির মুনশিয়ানা ফুটে ওঠে। এ ছাড়া পুঁথি, পাঁচালি এবং অনুবাদ সাহিত্যের প্রকাশনার প্রসার ঘটে।
৩.১০ চার্লস উইলকিন্স কে ছিলেন?
উত্তরঃ চার্লস উইলকিন্স ছিলেন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। তিনি সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরের টাইপ বা নকশা তৈরি করেন। এই কারণে তাকে 'বাংলা ছাপাখানার জনক' বা 'বাংলার গুটেনবার্গ' বলে অভিহিত করা হয়।
৩.১১ ‘একা আন্দোলন’ কেন শুরু হয়?
উত্তরঃ মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্তপ্রদেশে একা আন্দোলন হয়েছিল। কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, কর আদায়ে সীমাহীন অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় একা আন্দোলন সংঘটিত শুরু হয়। একা আন্দোলনে যোগদানকারী কৃষকরা শপথ গ্রহণ করে যে তারা নথিভুক্ত করের বেশি অর্থ প্রদান করবে না।
৩.১২ ‘মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, পি সি যোশী-সহ মোট ৩৩ জন বামপন্থী শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এক মামলা শুরু করে। এটি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মামলার রায়ে বিভিন্ন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়।
৩.১৩ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা রদ করার জন্য কার্লাইল সার্কুলার, লায়ন সার্কুলার প্রভৃতি জারি করে। এর প্রতিবাদী প্রচেষ্টারূপে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩.১৪ কবে; কার নেতৃত্বে ঝাঁসি রানী ব্রিগেড তৈরি হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৩ সালে সিঙ্গাপুরে গঠিত হয় ঝাঁসির রানি বাহিনী।সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ঝাঁসি রেজিমেন্ট গঠিত হয়। সেই সময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতীয় নারীদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন নেতৃত্বে সমস্ত বয়সের মেয়েদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই বাহিনী।
৩.১৫ জুনাগড় রাজ্যটি কিভাবে ভারত ভুক্ত হয়।
উত্তরঃ হিন্দু-অধ্যুষিত জুনাগড়ের মুসলিম নবাব পাকিস্তানে যোগ দিতে চাইলে সেখানে তীব্র প্রজাবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সেখানকার নবাব পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং ভারতীয় সেনা জুনাগড়ে প্রবেশ করে। গণভোটের (১৯৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে জুনাগড় ভারতের অন্তর্ভুক্ত (১৯৪৯ খ্রি.) হয়।
৩.১৬ নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (১৯৫০) কেন স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তরঃ দেশভাগের পর পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাঝে সমস্যা দেখা দেয় এবং ভারত-পাকিস্তান দ্বিতীয় যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। লিয়াকত আলি তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সাথে লিয়াকত-নেহেরু চুক্তি করেন। ভারত ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য ১৯৫০ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তিটি সাক্ষরিত হয়েছিল দিল্লিতে।
বিভাগ-‘ঘ’ ৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে): ৬×৪=২৪
উপবিভাগ-ঘ. ১
৪.১ ইতিহাসের উপাদান হিসাবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে ভারতে সংবাদপত্রের প্রকাশ শুরু হয়। আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল সমসাময়িক বিভিন্ন সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র।
[1] বিভিন্ন সংবাদপত্র: যেসব সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র রূপে স্বীকৃত ঐতিহাসিক উপাদান যেমন ‘বেঙ্গল গেজেট’, ‘দিগদর্শন', ‘সমাচার দর্পণ’, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ‘সম্বাদ প্রভাকর’, ‘বঙ্গদর্শন’, ‘সোমপ্রকাশ’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘সঞ্জীবনী', ‘সন্ধ্যা’, ‘কেশ্বরী’, ‘মারাঠী' প্রভৃতি।
[2] রাজনীতি: ব্রিটিশ শাসনকালে প্রকাশিত সাময়িকপত্র সংবাদপত্রগুলিতে সমসাময়িক বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাবলি, যেমন—ব্রিটিশদের শাসননীতি, ভারতীয়দের মনোভাব প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব তথ্য আধুনিক ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার সময় যথেষ্ট সহায়তা করতে পারে।
[3] সমাজ: সমকালীন ভারতীয় সংবাদপত্রগুলিতে উচ্চবিত্ত থেকে সাধারণ মানুষের সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনার খবরাখবর নিয়মিত ছাপা হত। এসব তথ্যাদি থেকে ব্রিটিশ-ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে নানা ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়।
[4] শোষণ : আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ব্রিটিশ শোষণ ও অত্যাচারের নানা ঘটনাবলি সমসাময়িক সংবাদপত্রগুলিতে
নিয়মিত ছাপা হত। এসব তথ্যাদি শোষণ ও অত্যাচারের ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
[5] অসন্তোষ : ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ- অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা বিভিন্ন বিদ্রোহ-আন্দোলন শুরু করে। এসব খবর নিয়মিত সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হত। এসব খবরের তথ্যাদি আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় খুবই সাহায্য করে।
[6] জনমতের প্রতিফলন: বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কী তা সমকালীন সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত হয়। ফলে সংবাদপত্রগুলিতে সমকালীন সাধারণ মানুষের মতামতেরও প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়।
উপসংহার: সার্বিক ও সাম্প্রতিক তথ্যে সমৃদ্ধ সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলি সমকালীন সময়ের প্রতিদিনকার তথ্য সরবরাহ করে থাকে। তাই আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে এগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
৪.২ পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তরঃ উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩ খ্রি.) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে।
উপবিভাগ-ঘ.২
[1] বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
[2] সরকারকে পত্র: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে রামমোহন ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড আমহার্স্টকে দেওয়া পত্রে দাবি জানান যে, এই অর্থ আধুনিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের জন্য ব্যয় করা হোক।
[3] পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে প্রচার: রামমোহন পাশ্চাত্য গণিত, দর্শন, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শিক্ষার সপক্ষে প্রচার চালান। তিনি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
[4] বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা: শিক্ষার্থীদের মন থেকে নানা কুসংস্কার ও মূর্তিপূজা দূর করে পাশ্চাত্য সমাজবিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার: পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে রামমোহন রায় শুধুমাত্র নিজের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নিয়েই থেমে থাকেননি; ডেভিড হেয়ার, আলেকজান্ডার ডাফ-সহ অন্যদের সহায়তা করতেও এগিয়ে আসেন।
৪.৩ সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫) কারণগুলি সংক্ষেপে বিবৃত করো।
উত্তরঃ ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল উপজাতি ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার মহাজনদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন—
৪.৪ ১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল?
[1] রাজস্ব আরোপ: আদিবাসী সাঁওতালরা অরণ্য অঞ্চলের পতিত জমি উদ্ধার করে চাষবাস করে সেই জমিকে উর্বর করে তোলে। ব্রিটিশ শাসনকালে সরকার-নিযুক্ত জমিদাররা সেই জমির ওপর উচ্চহারে রাজস্ব চাপালে সাঁওতাল কৃষকরা জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
[2] অন্যান্য কর : ভূমিরাজস্ব ছাড়াও সরকার, জমিদার প্রমুখ সাঁওতালদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে দরিদ্র সাঁওতালদের দুর্দশা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
[3] মহাজনদের শোষণ : সাঁওতালরা নগদে ভূমিরাজস্ব ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে গিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হত। পরবর্তীকালে ঋণের দায়ে তার জমি, ফসল, বলদ কেড়ে নেওয়া হত।
[4] ব্যবসায়ীদের প্রতারণা : বহিরাগত ব্যবসায়ীরা কেনারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার সময় এবং বেচারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যগুলি সাঁওতালদের কাছে বিক্রির সময় ঠকাত।
[5] রেলপথ নির্মাণ : সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতাল শ্রমিকদের নিয়োগ করে তাদের খুব কম মজুরি দেওয়া হত। তা ছাড়া রেলের ঠিকাদার ও ইংরেজ কর্মচারীরা সাঁওতাল পরিবারগুলির ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত।
[6] সাঁওতাল আইন বাতিল : সরকার সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচারপদ্ধতি বাতিল করে সাঁওতাল এলাকায় ইংরেজদের জটিল আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে।
[7] খ্রিস্টধর্ম প্রচার : খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মকে অবজ্ঞা করত এবং সুকৌশলে সাঁওতালদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত।
[৪] নীলচাষ : নীলকর সাহেবরা সাঁওতাল কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নীলচাষে বাধ্য করত।
উপসংহার: নানা দিক থেকে শোষণ ও নিপীড়নের ফলে একসময় সাঁওতালদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর তারা সিধু, কানু অন্যান্যদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।
উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে এবং এই শিক্ষা গ্রহণ করে একদল শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান ঘটে। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রতি এই শ্রেণির মনোভার সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল-
[1] ব্রিটিশ শাসনের ওপর আস্থা: শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তদের একটি বড়ো অংশ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের ওপর অগাধ আস্থা রাখত। তারা ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহেরও বিরোধী ছিল।
[2] সিপাহিদের সাফল্যে অবিশ্বাস: বিদ্রোহের মাধ্যমে ইংরেজদের বিতাড়নের পর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কি না এই বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সন্দিহান ছিল। তাই তারা ১৮৫৭-এর বিদ্রোহকে সমর্থন করেনি।
[3] খ্যাতনামা বাঙালিদের অভিমত: [i] হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় বিদ্রোহীদের নৃশংস, বর্বর এবং নরহত্যাকারী দস্যু বলে অভিহিত করেন। [ii] রাজনারায়ণ বসু ১৮৫৭-এর বিদ্রোহকে ‘নৈরাজ্যবাদী’ এবং নানা সাহেব, আজিমউল্লার মতো বিদ্রোহী নেতাদের ‘অন্যায়কারী দানব’ বলে অভিহিত করেন। [iii] সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, এই বিদ্রোহে জনগণের সমর্থন ছিল না।
[4] বাংলায় বিদ্রোহের দুর্বলতা: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত তীব্র হলেও শিক্ষিত বাঙালি
সমাজের সমর্থনের অভাবে এই বিদ্রোহ বাংলায় খুব একটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।
[5] পরিণাম: শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিরা প্রথমদিকে বিদ্রোহকে সমর্থন না করলেও বিদ্রোহ দমনে সরকার যে নিষ্ঠুর দমননীতির আশ্রয় নেয় তা শিক্ষিতদের চোখ খুলে দেয়। তারা উপলব্ধি করে যে, ব্রিটিশ শাসন কখনও ভারতীয়দের কল্যাণ করবে না। এই চেতনা পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে।
উপসংহারঃ সব শিক্ষিত বাঙালিই মহাবিদ্রোহের বিরুদ্ধে ছিল এবং ইংরেজদের সমর্থন বা সহযোগিতা করেছিল—এ কথা বলা ভুল হবে এই যুগে বিদ্যাসাগরের মতো কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্র অবশ্যই ছিল।
উপবিভাগ-ঘ.৩
৪.৫ বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির অবদান উল্লেখ করো।
উত্তরঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫ খ্রি.) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে ঊনবিংশ শতকে নিম্নমানের মুদ্রণশিল্পের ব্যাপক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হন।
[1] ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠা: উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিদেশ থেকে আধুনিক উন্নত মুদ্রণযন্ত্র এনে কলকাতার
শিবনারায়ণ দাস লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স। এখানে তিনি মুদ্রণের কাজে উন্নতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালান।
[2] হাফটোন ব্লক তৈরি : উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানায় কাঠের পরিবর্তে তামা ও দস্তার পাতে অক্ষর বা ছবি খোদাই করে মুদ্রণের প্রয়োজনীয় ব্লক তৈরি করেন। তিনি অন্ধকার ঘরে বসে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ লক্ষ করে হাফটোন ব্লক তৈরির সূত্র উদ্ভাবন করেন। এর ফলে মুদ্রণশিল্প অনেক উন্নত হয়।
[3] ছবির ব্যবহার : উপেন্দ্রকিশোর বইয়ের প্রচ্ছদ ও বইয়ের ভেতরে লেখার সঙ্গে বিভিন্ন ছবির মুদ্রণ উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এই বিষয়ে তিনি ষাট ডিগ্রি স্ক্রিন, ডায়াফ্রাম পদ্ধতি, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র, ডায়োটাইপ, রিপ্রিন্ট প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে রংবেরঙের নানা ছবি মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন।
[4] স্টুডিয়ো স্থাপন : উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানার সঙ্গে ছবি আঁকার একটি স্টুডিয়ো খোলেন। এখানে তিনি আধুনিক
ফোটোগ্রাফি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এর ফলে সাদাকালো ছবি প্রচলনের যুগে তিনি ছোটোদের জন্য রংবেরঙের বিভিন্ন বই প্রকাশ করতে সক্ষম হন। তিনি আধুনিক ফোটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠান (১৯১১ খ্রি.)।
[5] প্রকাশনা: বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার পর মুদ্রণশিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়ে উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানা থেকে ছোটোদের জন্য নিজের লেখা রঙিন বই একের পর এক প্রকাশ করতে থাকেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সেকালের কথা’, ‘টুনটুনির বই’, ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রভৃতি।
উপসংহার: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক বাংলার মুদ্রণশিল্পের আধুনিকীকরণের বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন এবং 'ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স', কোম্পানি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর উদ্যোগগুলি বাংলার মুদ্রণশিল্পকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
৪.৬ বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের কিরূপ অবদান ছিল?
উত্তরঃ ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় যাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এম. ডি ডিগ্রিধারী মহেন্দ্রলাল অ্যালোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার এই দুই পদ্ধতিতেই দক্ষতা অর্জন করেন। ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে—
[1] যুক্তিবাদের প্রসার : পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেন। তিনি মনে করতেন যে, মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার বিকাশ হলেই, সমাজ কুসংস্কারমুক্ত হবে।
[2] আই এ সি এস-এর প্রতিষ্ঠা: দেশীয় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল সরকার বিশিষ্ট বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার উইজিন লাঁতোর সহায়তায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (সংক্ষেপে IACS) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠান যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়।
[3] পরিচালন সমিতি: মহেন্দ্রলাল সরকার আমৃত্যু ‘আই এ সি এস’-এর সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সদস্যপদ অলংকৃত করেন। স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তি এর অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
[4] অধিকর্তা নিয়োগ: ‘আই এ সি এস’-কে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সঞ্চালনার উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্যারীমোহন
মুখোপাধ্যায়কে অধিকর্তা পদে নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ড. নীলরতন সরকার, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ
খ্যাতনামা ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পদে নিযুক্ত হন।
[5] গবেষণা: এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা, অধ্যয়ন এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতার সুব্যবস্থা করা হয়। উক্ত গবেষণা ও বক্তৃতা প্রদানের কাজে মহেন্দ্রলাল দেশবিদেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের এখানে শামিল করেন।
[7] বিজ্ঞানী ও আবিষ্কার : ড. মহেন্দ্রলাল সরকার আই এ সি এস-এ সমকালীন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের যুক্ত করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনিলাল বোস, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, মেঘনাদ সাহা, কে. এস. কৃষ্ণাণ প্রমুখ। এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেই বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন তাঁর বিখ্যাত ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভ করেন।
উপসংহার: আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের IACS বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞানচর্চাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমনের নোবেল পুরস্কার লাভ প্রভৃতি এই প্রতিষ্ঠানকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যান। সমাজসংস্কারের কাজেও মহেন্দ্রলালের অসামান্য অবদান রয়েছে।
উপবিভাগ-ঘ.৪
৪.৭ টীকা লেখো: দলিত প্রসঙ্গে গান্ধী-আম্বেদকর বিতর্ক।
উত্তরঃ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি মহাত্মা গান্ধি এবং দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর। দলিতদের অধিকার নিয়ে বৈঠকে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ ও বিতর্ক দেখা দেয়।
[1] মতভেদের কেন্দ্রবিন্দু: গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতভেদের মূল বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের হাত থেকে দলিতদের
অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আদায়। এই অধিকার আম্বেদকর যেভাবে বা যতটা চাইছিলেন তার সঙ্গে গান্ধিজি
একমত ছিলেন না।
[2] আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি: আম্বেদকর লক্ষ করেছিলেন যে, দলিতরা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায়
তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে এবং এজন্য তারা নির্বাচনে নিজেদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিকে জেতাতে ব্যর্থ হয়। তাই আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচন, তথা রাজনৈতিক অধিকার দাবি করেন।
[3] পৃথক নির্বাচনে গান্ধিজির আপত্তি: গান্ধিজি দাবি করেন যে, দলিতরা সংখ্যালঘু নয়, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তিনি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেন।
[4] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: এই অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির
উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি.) ঘোষণার মাধ্যমে দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেন। আম্বেদকর তা সমর্থন করেন।
[5] গান্ধিজির অনশন: গান্ধিজি মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন।
উপসংহার: দলিতদের অধিকারের প্রশ্নে গান্ধিজির উদ্যোগকে আম্বেদকর পর্যাপ্ত নয় মনে করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনশনে গান্ধিজির প্রাণসংশয় দেখা দিলে আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন।
৪.৮ কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী হন।
[1] জটিলতা: কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করলে পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে, ফলে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ।
[2] পাক হানা : পাক মদতপুষ্ট হানাদারবাহিনী ও পাক সেনাদল কাশ্মীরে প্রবেশ করে (২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ খ্রি.) সেখানে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সহায়তা প্রার্থনা করে।
[3] ভারতভুক্তির দলিল স্বাক্ষর: কাশ্মীরের সামরিক সহায়তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার জানিয়ে দেয় যে,
মহারাজা ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে। এদিকে পাকবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন
স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করেন।
[4] ভারতের অভিযান: হরি সিং ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করার পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে দ্রুত কাশ্মীরের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এই বাহিনীর সহায়তায় ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।
উপসংহার: পাকিস্তান মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের ‘রক্ত ও লৌহ’ নীতি ও কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং-এর উদ্যোগের ফলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মীর না পাওয়ার হতাশা থেকে পাকিস্তান আজও ভারতে বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভাগ-‘ঙ’৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ১×৮=৮
৫.১ উনিশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্ম সমাজগুলির কিরূপ ভূমিকা ছিল?
উত্তরঃ উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্বসমাজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ব্রাহ্মসমাজ বোঝাতে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতবর্ষের ব্রাহ্লসমাজ, সাধারণ ব্রাহ্ণসমাজ, নববিধান ব্রাহ্ণসমাজ প্রভৃতিকে বোঝায়। রাজা রামমোহন রায় কলকাতায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ণসভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ব্রাহ্মসমাজ। রামমোহনের মৃত্যুর পরবর্তীকালে ব্রাহ্ণসমাজের নেতৃত্ব দেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ।
[1] কুসংস্কারের বিরোধিতা ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসার: ব্রাহ্মসমাজ ভারতীয় সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কারের
যেমন বিরোধিতা করেছিল, তেমনই মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
[2] জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা: ব্রাহ্মসমাজ হিন্দুসমাজের জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করে। হিন্দুধর্মের নামে নানা প্রচলিত কুপ্রথার প্রতিরোধে ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
[3] নারীকল্যাণের ভূমিকা: ব্রাহ্বসমাজ নারীকল্যাণের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। যেমন—পর্দাপ্রথার বিলুপ্তিসাধন,
বিধবাবিবাহের আইনসিদ্ধকরণ, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, নারীসমাজে শিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি।
[4] জাতীয় সংহতির চেতনা: ব্রাহ্মসমার্জ ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয় সংহতির চেতনা প্রসারের ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। উদারপন্থী ধর্মীয় আদর্শ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে ব্রাহ্মসমাজ জাতীয় সংহতি চেতনার জাগরণ ঘটায়।
[5] সমাজসেবা: ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল সমাজসেবা ও জনহিতকর কাজের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠা, যেমন—দুর্ভিক্ষের সময় কেশবচন্দ্র সেন একদল বাঙালি, তরুণকে নিয়ে ত্রাণের এক দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন।
উপসংহার: ব্রাহ্মসমাজ বাংলার সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে অনুকরণযোগ্য দৃষ্টান্ত রেখেছিল। এই প্রতিষ্ঠান সমাজসংস্কারের মাধ্যমে এক জাতীয় জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিল। পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মিশন ব্রাহ্মসমাজের কিছু আদর্শ গ্রহণ করে।
৫.২ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা ও শান্তিনিকেতন ভাবনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ শান্তিনিকেতন ছিল বর্তমান বীরভূম জেলার বোলপুরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি গ্রাম। আগে এই স্থানের নাম ছিল
৫.৩ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন (১৯০৫) ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
ভুবনডাঙ্গা। এই স্থান কলকাতার ঠাকুরবাড়ির বিখ্যাত মানুষের পদার্পণে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তা ও শ্রীনিকেতন ভাবনা :
[1] আশ্রমের নামকরণ : রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে ভুবনডাঙ্গায় ১৮৬১
খ্রিস্টাব্দে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই স্থানের নতুন নামকরণ করেন শান্তিনিকেতন'।
[2] ব্রম্হবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রম্হবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই
স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি সুবিস্তৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের ও অন্যান্য আশ্রমিকদের বসবাসের জন্য সুন্দর সুন্দর ভবন নির্মাণ করেন।
[3] বিশ্বভারতীর পরিকল্পনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি আদর্শ শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে
শান্তিনিকেতনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন যার নাম হয় ‘বিশ্বভারতী’।
[4] বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: অবশেষে তিনি বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের সন্নিকটে শান্তিনিকেতনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে রত্নবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পল্লিসংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এট উদ্দেশ্যে তিনি ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিলোমিটার
দূরে সুরুল গ্রামে একটি কুঠিবাড়ি কিনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে পল্লি সংগঠনের কাজ শুরু করেন। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল—
[1] পল্লি সংগঠন: গ্রামীণ মানুষকে পল্লিজীবনের নানাদিক সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই ছিল কবির উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন লেনার্ড এলমহার্স্ট। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে যে ‘শিক্ষাসত্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটিই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীনিকেতনে স্থাপিত হয়। এখানে ‘শিক্ষাসত্র’ বিদ্যালয়টিকে শান্তিনিকেতনের ‘পাঠভবন’-এর আদলে স্থাপন করা হয়েছিল।
[2] কৃষির উন্নয়ন: গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষিকাজ। তাই রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে কৃষির উন্নতির উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘পল্লিশিক্ষাসদন' নামে এখানে একটি কৃষি মহাবিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। সঙ্গে গ্রামীণ শিল্পোৎপাদন ও গো-পালন চলতে থাকে।
[3] স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার: শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি
করা। গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শ্রীনিকেতনকে মডেল হিসেবে বেছে নেওয়া
হয়। এই উদ্দেশ্যে এখানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
[4] শিক্ষার প্রসার: শিক্ষার প্রসার ঘটানো ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগকে সকল স্তরের জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘লোক-শিক্ষা সংসদ’ স্থাপন করা হয়।
উপসংহার: শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন উভয়ই ছিল গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের সাধের দুই গ্রামেই তাঁর স্বপ্ন ডানা মেলতে পেরেছিল। বর্তমানে এই দুটি স্থান রবীন্দ্র ঐতিহ্যের পীঠস্থান হিসেবে পরিগণিত হয়।
উত্তরঃ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ করলে বাংলা তথা ভারতে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনে নারীরাও বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেন।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা :
[1] বিলিতি পণ্য বর্জন: বহু নারী বিলিতি পণ্য যেমন বিলিতি শাড়ি, কাচের চুড়ি, লবণ, ওষুধপত্র প্রভৃতির ব্যবহার বন্ধ করে
দেন এবং দেশীয় মোটা কাপড়ের ব্যবহার শুরু করেন। গৃহকোণ ছেড়ে বেরিয়ে তাঁরা মিছিল-মিটিং ও পিকেটিং-এ অংশ নেন। এই প্রসঙ্গে কবি মুকুন্দ দাস গান লেখেন “ফেলে দাও রেশমি চুড়ি”।
[2] স্বদেশি পণ্যের প্রচার: স্বদেশি পণ্যের প্রচারে বিভিন্ন নারী এগিয়ে আসেন এবং প্রচারকার্য চালান। এই সময় সরলাদেবী চৌধুরানি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ স্থাপন করেন।
[3] জাতীয় শিক্ষা: বহু ছাত্রী ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তারা দেশীয় নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ভরতি হয়।
[4] তারন্ধন: ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে বাংলার নারীরা ঘরে
ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন।
[5] আন্দোলনে নেতৃত্ব: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী মুরশিদাবাদের গিরিজা সুন্দরী, ফরিদপুরের সৌদামিনী দেবী, বরিশালের সরোজিনী দেবী ও মনোরমা বসু, ঢাকার ব্রাহ্ণময়ী সেন, বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী, খুলনার লাবণ্যপ্রভা দত্ত প্রমুখ নারী স্থানীয়ভাবে এবং সরলাদেবী চৌধুরানি, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী বসু, সুবালা আচার্য, নির্মলা সরকার প্রমুখ নারী জাতীয় স্তরে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা :
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট বোম্বাই শহরে কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। গান্ধিজি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন যে, ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ এবং ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া দেশবাসী সন্তুষ্ট হবে না। তিনি বলেন, “আমরা করব বা মরব।”—“করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে”।
[1] নারীদের সক্রিয় যোগদান: আন্দোলন ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় স্তরের প্রায় সব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে
সর্বস্তরের ভারতবাসীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য নারীও সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে শামিল হয়।
[2] জাতীয় স্তরে আন্দোলন: জাতীয় স্তরে সুচেতা কৃপালনী, নন্দিতা কৃপালনী ও অরুণা আসফ আলি নারীদের সংগঠিত করে এই আন্দোলনে শামিল করেন। অরুণা আসফ আলির নেতৃত্বে বোম্বাইয়ে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে।
[3] বাংলায় আন্দোলন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলার নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ গৌরবজনক ছিল। মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত নারীরা ভগিনী সেনা গঠন করে। কৃষক পরিবারের ৭৩ বছর বয়স্কা বৃদ্ধা গান্ধিবাদী মাতঙ্গিনী হাজরা মেদিনীপুরের তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গান্ধিবুড়ি নামে পরিচিত হন। এ ছাড়া রানি চন্দ, এলা দত্ত, সুনীতা সেন, লাবণ্যপ্রভা দত্ত, মায়া ঘোষ প্রমুখ বঙ্গনারী ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন।
উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে। আন্দোলনে নারীদের যোগদান প্রসঙ্গে গান্ধিজি মন্তব্য করেছেন যে, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লেখার সময় নারীদের বীরত্বের কথা সর্বাধিক স্থান দখল করবে।”
◾ PDF Details :
❐ Question Year - 2017/2018/2019
❐ Size - 3 MB
❐ Page Quality - Full HD
❐ Total Page PDF - 6
No comments
Hi Welcome ....