class 6 bengali text book question answer Hello Dear Students : ● চিত্রগ্রীব ● আশীর্বাদ ● এক ভূতুড়ে কান্ড ● বাঘ ● বঙ্গ আমার জননী আমার ●...
Hello Dear Students : ● চিত্রগ্রীব ● আশীর্বাদ ● এক ভূতুড়ে কান্ড ● বাঘ ● বঙ্গ আমার জননী আমার ● শহীদ যতীন্দ্রনাথ । ক্লাস সিক্স এর প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা তোমাদের বাংলা বইয়ের ছয়টি চ্যাপ্টার একসঙ্গে হাতে কলমে প্রশ্নোত্তর গুলোর সমাধান এখানে করে দেওয়া রয়েছে। টেবিল চার্ট অনুযায়ী, তোমরা চাইলে প্রতিটি চ্যাপটার এ ক্লিক করে ডাইরেক্ট উত্তর দেখতে পারো। তোমাদের হেল্প হলে অবশ্যই সুন্দর একটা কমেন্ট করে মতামত জানাতে পারো যার ফলে পরবর্তীতে তোমাদের অন্যান্য বইয়ের আরো প্রশ্নোত্তর গুলোর সমাধান দিতে পারি।
❒ Table Of Content Click Here :
❐ আরো পড়ুনঃ
❐ চিত্রগ্রীব গল্পের বিষয়বস্তু :
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি কেউ ককুর ভালোবাসি, কেউ বিড়াল ভালোবাসি, কেউ গোরু ভালোবাসি, কেউ অ্যাকো রিয়ামে মাছ ভালোবাসি, কেউ টিয়া-তোতা-ময়না ভালোবাসি আবার কেউ পায়রা ভালোবাসি। লেখকের ‘করী’ নামে একটি হাতি বন্ধু ছিল। আর এক বন্ধু ছিল চিত্রগ্রীব নামে পায়রা। চিত্রগ্রীবের বাবা গেরোবাজ বিয়ে করেছিল এক সুন্দরীকে। সেই সুন্দরী একদিন ডিম পাড়ল। চিত্রগ্রীবের বাবা শত চেষ্টা করেও তা দিয়ে ডিম ফুটিয়ে পৃথিবীতে ছানার জন্ম দিতে পারল না। চিত্রগ্রীবের মা ঠিক সময়ে ঠিক ঠিক স্থানে ডিমে ঠোকরমেরে ছানার জন্ম দিল। মানুষের মতোই চিত্রগ্রীবের বাবা-মা বাচ্চাকে আগলে রাখে নিজেদের ডানায়। জন্মের দ্বিতীয় দিন থেকেই তারা ছানাটির আপনা-আপনি দুই ঠোঁট ফাঁক হয়ে যাওয়া মুখে ভুট্টা বীজের দুধ ঢেলে দিত। হপ্তা তিনেক বয়সে চিত্রগ্রীব একটা পিঁপড়ে মেরে ফেলার পর অনুতাপে আর কোনোদিন আর ওই কাজ করেনি। হপ্তা পাঁচেক বয়স থেকে চিত্রগ্রীব খোপ থেকে বেরিয়ে সামনে রাখা জলের মালসা থেকে জল খেতে আরম্ভ করে।
লেখক একদিন চিত্রগ্রীবের বাবাকে চেপ্টে ধরে তার চোখ দুটি পরীক্ষা করে দেখে বুঝলেন তার চোখে রয়েছে ঘুড়ির কাগজের মতো ফিনফিনে পর্দা। ফলে সে আঁধির মধ্যে উড়েও অন্ধ হয় না কিংবা সোজা সূর্যের পানে এগিয়ে গেলেও এতটুকু অসুবিধা হয় না। চিত্রগ্রীবের দু-হপ্তা বয়সের পর থেকে তার মা-বাবা তার ওড়া শেখানোর চেষ্টায় লেগে গেল। লেখক নিজেও চিত্রগ্রীবকে কয়েকদিন তাঁর কবজির ওপর বসিয়ে হাত ওপর-নীচ করে দোলাতে লাগলেন। খানিকটা ওড়া শিখে গেল চিত্রগ্রীব। এরপর জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হতেই চিত্রগ্রীবের বাবা একদিন ছেলেটা বেজায় ছুঁড়ে বুঝে প্রায় রেগেমেগেই ছেলের মুখোমুখি গিয়ে হাজির হল। তখন বেলা প্রায় তিনটে। ছাতের পাকা পাঁচিলের ওপর রোদ পোহাচ্ছিল চিত্রগ্রীব। তার বাবা বক্-বক্-কম করে ছেলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। একালের ছেলেও পিছিয়ে যেতে যেতে পাঁচিলের শেষপ্রান্তে এমন জায়গায় হাজির হল যে ছেলে পা ফসকে পড়ে গেল গড়িয়ে। আধফুট পড়তে না পড়তেই সে তার ডানা মেলে উড়তে শুরু করল। তার মা নীচে স্নান করতে করতে ছেলেকে উড়তে দেখে আনন্দে তক্ষুনি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে ছেলের সঙ্গে প্রায় মিনিট দশেক চক্রাকারে ঘুরে উড়ে এলো। ছাদে পৌঁছে চিত্রগ্রীবের মা যেন বিশাল স্বস্তি লাভ করে আরাম করে ডানা গুটিয়ে বসল। আর চিত্রগ্রীব তখন হঠাৎ শীতের দিনের কনকনে ঠান্ডা জলে পড়ে গিয়ে আবার উঠে আসা অবস্থার মতো কাঁপতে লাগল। চিত্রগ্রীবের বাবা এবার তৃপ্তি ভরে স্নান করতে লাগল। ছেলের উড়ে বেড়ানোর শিক্ষা এখন সম্পূর্ণ।
চিত্রগ্রীব
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ ধনগোপাল মুখোপাধ্যায়ের কোন বইয়ের চিত্ররূপ তুমি পড়লে?
উত্তর : ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে লেখা Gay Neck ( চিত্রগ্রীব) বইটির চিত্ররূপ পড়লাম।
১.২ তাঁর লেখা অন্য আর একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : Kari : The Elephant.
২. ‘চিত্ৰগ্ৰীব’ নামক ছবিতে গল্পটি পড়ে চিত্রগ্রীবের বাবা ও মায়ের আচরণ তোমার কেমন লাগল কয়েকটি বাক্যে লেখো। বাবা-মায়ের সাহচর্যে চিত্রগ্রীব যেমন উড়তে শিখেছে, ঠিক তেমন কোন শিক্ষা তুমি প্রথম বাবা-মায়ের সাহচর্যে শিখেছ—মনে করে লেখো।
উত্তর : চিত্রগ্রীবের বাবা-মাকে আমার বাবা-মায়ের মতোই মনে হল। মানুষের মতো চিত্রগ্রীবের বাবা-মা তাকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরত। মানুষের বাবা-মা যেমন সারাক্ষণ তার সন্তানকে নজরে রাখে তেমনি তারাও চোখে চোখে রাখত তাদের বাচ্চাকে। একটি মানবশিশুকে তার বাবা-মা যেমন হাতে করে খাইয়ে দেয় তেমনি চিত্রগ্রীবের বাবা-মাও তাকে খাইয়ে দিত। চিত্রগ্রীবের ঠোঁট দুটো যেন আপনাআপনি ফাঁক হয়ে যেত আর তার বাবা কিংবা মা তাদের নিজেদের ঠোঁট পুরে ঢেলে দিত ভুট্টার দুধ। তা ছাড়া চিত্রগ্রীবের বাবা যেভাবে তাকে প্রথমে উড়তে শেখাল তা সত্যই বড়ো বিস্ময়কর। তার মা-ও পরে আবার ছেলের সঙ্গে মিনিট দশেক আকাশে চক্রাকারে উড়ে এলো। তাদের এই শিক্ষা আমাদের মা-বাবার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমি যখন এইটুকু ছিলাম তখন আমার মা প্রথম হাতে পেনসিল ধরিয়ে লিখতে শিখিয়েছিলেন। ঘটনাটা আমার খুব মনে আছে। এরপর আমার বাবা আমাকে যেভাবে সাইকেল চালানো ধরে ধরে শিখিয়েছেন তাও জীবনে কোনো দিন আমি ভুলব না।
৩. তোমরা ‘চিত্রগ্রীব’ নামের পায়রাটির উড়তে শেখার কথা জানলে। তুমি কখনও টিয়া বা চন্দনার মতো এমন কোনো পাখি দেখেছ যারা কথা বলতে পারে? যদি এই ধরনের কোনো পাখির সঙ্গে তোমার ভাব হয়, তাহলে তুমি তার সঙ্গে কী কথা বলবে? তোমাদের সেই কাল্পনিক সংলাপটি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর : হ্যাঁ, আমাদের বাড়িতে একটি টিয়া আছে। আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলেই সে খাঁচার ভিতর থেকে বলত, ‘ওমা খোকা এসেছে, ওমা খোকা এসেছে’। আর মাসির বাড়িতেও একটা ময়না দেখেছি। তার পা শেকল দিয়ে বাঁধা। সে মাঝে মাঝে নিজে নিজেই বলে ‘জয় রাধে’ ‘জয় রাধে’ ‘জয় রাধে’। যদি এই ধরনের কোনো পাখির সঙ্গে আমার ভাব হয় তাহলে আমাদের পরিকল্পিত কথোপকথন এরূপ হতে পারে।
- টিয়া—খোকা তোমার নাম কী?
- আমি—আমার নাম ভোলানাথ। বাঃ তুমি তো খুব ভালো কথা বলতে পারো।
- টিয়া—পারি তো। আমার মাসি আমাকে শিখিয়েছে।
- আমি—তোমার মা কোথায়?
- টিয়া—আমি যখন খুব ছোটো ছিলাম আর মায়ের সঙ্গে গাছের ডালে বসেছিলাম তখন মাসি আমাকে ধরে এনেছে। তখন আমি একটু একটু উড়তে শিখেছি।
- আমি—তুমি কীভাবে খেতে শিখলে?
- টিয়া—আমার মা আমাকে শিখিয়েছে। প্রথমে আমি কেমন করে খেতে হয় জানতাম না। গাছের পাকা ফল ঠোঁটে
- করে নিয়ে এসে আমার মুখে ভরে দিত। তুমি কেমন করে খেতে শিখেছ?
- আমি—আমার মা আমাকে কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিত। তারপর নিজের হাতে কেমন করে খেতে হয় তা শিখে নিলাম। তুমি উড়তে শিখলে কীভাবে?
- টিয়া—আমি প্রথমে দুই পায়ে লাফ দিয়ে দিয়ে গাছের ডালে এগোতাম। তারপর আমার মা একদিন একটা ডাল থেকে অন্য ডালে কীভাবে লাফ দিতে হয় শিখিয়ে দিল। প্রথমে ভয় পাচ্ছিলাম। তারপর টলমল করতে করতে আমি লাফ দিতে শিখে নিলাম। তখন থেকে আমি একটু করে উড়তেও শিখে গেলাম। তুমি কীভাবে হাঁটতে শিখলে?
- আমি—আমি প্রথমে দেয়াল ধরে ধরে দাঁড়াতাম। তখন আমার মা দুই হাত ধরে ‘চলি চলি পা পা, সোনা হাঁটে দেখে যা’ বলতে বলতে হঠাৎ হাত ছেড়ে দিত। আমি থপ্ করে বসে পড়তাম। মা আবার হাসতে হাসতে ওইরকম হাত ধরে হাঁটা শিখিয়ে দিত আমাকে। আমি পড়ে যেতাম। আবার উঠতাম। আর হাঁটতাম।
- টিয়া—তোমার মা খুব ভালো। তুমি আমার বন্ধু।
- আমি—তোমার মাও তো খুব ভালো। তুমিও আমার বন্ধু। রোজ তুমি আর আমি গল্প করব।
- টিয়া—ঠিক বন্ধু ঠিক।
৪. ‘চিত্রগ্রীব’ যেমন একটি ছবিতে গল্প ঠিক এই রকমের একটি ছবিতে গল্প বন্ধুরা মিলে ‘কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি’ বা ‘সেনাপতি শংকর' রচনাংশটি অবলম্বনে তৈরি করে দেখতে পারো।
উত্তর : নিজে করো।
❒ আশীর্বাদ গল্পটির বিষয়বস্তু:
ভীষণ বর্ষায় বান ডেকেছে। দেশ জুড়ে থই থই জল। একটা পিঁপড়ে ডুবুডুবু একটা ঘাসের পাতার নীচে আশ্রয় নিয়েছিল। বৃষ্টি আরও বাড়তে থাকলে ঘাসের কথায় সে ঘাসের পাতার শিরা কামড়ে ধরে কোনোরকমে ঝুলে থেকে প্রাণ বাঁচাল। তার ঝুলে থাকা দেখে ঘাস দুঃখ করে বলল, তোমরা তো ভাই তবু সাঁতার জানো, হেঁটে যাও, দৌড়েও চলো। আমরা যে তাও পারি না। বৃষ্টি একটু ধরলে পিঁপড়ে বলল সে হাঁটতে বা দৌড়োতে পারলেও কোনো কাড়ে লাগে না। ডানায় রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভাগ্যিস ঘাসের পাতা ছিল তাই বেঁচে গেল। ঘাস তবু বলল, তোমরা হাঁটো চলো, কত কাজ করো। পিঁপড়ে বলল সারাদিন আমরা মাটি খাই, গর্তে থাকি। তোমরা পৃথিবীর বুকে হাসো ফুল ফোটাও। মাটি আমাদের পৃথিবী তোমাদের।
পিঁপড়ে বলল পৃথিবী সবারই। আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো। তাড়াতাড়ি আবার পাতার শিরা কামড়ে ধরল পিঁপড়ে। বৃষ্টি থামল। বৃষ্টি পিঁপড়েকে বলল, তুমি ভাই খুব ভীতু। পাতা ভাই কোনো দিন ভয় পায় না। শত অত্যাচারের পরেও একদিন পাতা আবার সবুজ হয়ে ওঠে। এরপর খলখল করে হেসে জল বলল, বর্ষায় আমি যে ঘাসকে ডুবিয়ে কাদায় লুটিয়ে দিয়ে
তলিয়ে দিয়ে যাই তাকেই আবার শরতে দেখি কাশবন হয়ে হাসছে। এরপর একটু হাওয়া দিল। ঘাসের পাতা আবার ডুবুডুবু হলে ভয় পেয়ে পিঁপড়ে বলল, হায় এ জল কি কোনোদিন শুকোবে। পাতা তাকে সাহস দিয়ে বলল, ভাই চিন্তা কোরো না। বাদল নিশ্চয় যাবেই, শরৎ আসবেই। পৃথিবী তোমার হবে। চোখে জল নিয়ে পিঁপড়ে দেখল মেঘের ফাঁকে সূর্য হাসছে। পৃথিবী আবার সবার হল।
আশীর্বাদ
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারকে সবচেয়ে বেশি কী আকর্ষণ করত?
উত্তর : দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত রূপকথা, উপকথা আর লোককথার গল্প।
১.২ তিনি শিশুসাহিত্যের কোন পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছিলেন?
উত্তর : তিনি ভুবনেশ্বরী পুরস্কারে পদক পেয়ে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ বন্যায় প্রকৃতির রূপ কেমন হয়?
উত্তর : বন্যায় দেশ জলে থইথই করে। ঘাসের মাথা কোনো রকমে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রাণী যে যার মতো প্রাণ বাঁচাতে যেখানে-সেখানে আশ্রয় নেয়।
২.২ পিঁপড়ে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল?
উত্তর : পিঁপড়ে আশ্রয় নিয়েছিল একটি ঘাসের পাতার নীচে।
২.৩ বৃষ্টির সময়ে গাছের পাতা কাঁপছিল কেন?
উত্তর : বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতে ঘাসের পাতা কাঁপছিল।
২.৪ পিঁপড়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কী করল ?
উত্তর : পিঁপড়ে নিজেকে বাঁচাতে ঘাসের পাতার শিরা কামড়ে রইল।
২.৫ পিঁপড়ে কখন ‘বাপ! বাঁচলেম' বলে উঠল?
উত্তর : বৃষ্টি একটু ধরলে ঘাসের পাতা সোজা হলে পিঁপড়ে কামড় ছেড়ে আর নিশ্বাস ছেড়ে বলল—‘বাপ! বাঁচলেম!’
২.৬ জল কেমন শব্দে হেসে উঠেছিল?
উত্তর : জল খলখল শব্দে হেসে উঠেছিল।
২.৭ ‘বুক ভেঙে নিশ্বাস পড়ল পিঁপড়ের।'—কেন এমন হল?
উত্তর : পিঁপড়ে থাকে গর্তে। বৃষ্টির জলে, বন্যায় তার গর্ত গেছে ডুবে, তার থাকার জায়গা নেই। কতদিন সে আর এভাবে পাতার আশ্রয়ে বেঁচে থাকবে। তাই তার দীর্ঘ নিশ্বাস পড়ল।
২.৮ শরতের আশীর্বাদ তোমাদেরও উপরে ঝরুক।'—কে এমনটি কামনা করেছিল?
উত্তর : ঘাসের পাতা এমনটি কামনা করেছিল।
৩. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া চিহ্নিত করে লেখো :
৩.১ বর্ষা খুব নেমেছে।
উত্তর : নেমেছে (সমাপিকা ক্রিয়া)।
৩.২ ভাই, জোরে আঁকড়ে ধরো।
উত্তর : আঁকড়ে (অসমাপিকা ক্রিয়া)। ধরো (সমাপিকা ক্রিয়া)।
৩.৩ এক ঢোঁক জল খেয়ে পিঁপড়ে আর কিছু বলতে পারল না।
উত্তর : খেয়ে (অসমাপিকা ক্রিয়া)। বলতে (অসমাপিকা ক্রিয়া)। পারল না (সমাপিকা ক্রিয়া)।
৩.৪ বৃষ্টির ফোঁটার ঘায়ে পাতাটা বোধ হয় এলিয়ে পড়বে জলে।
উত্তর : ঘায়ে (অসমাপিকা ক্রিয়া)। এলিয়ে (অসমাপিকা ক্রিয়া)। পড়বে (সমাপিকা ক্রিয়া)।
৩.৫ শিউরে পাতা বললে—ভাই, তেমন কথা বোলো না।'
উত্তর : বললে (সমাপিকা ক্রিয়া)। বোলো না (সমাপিকা ক্রিয়া)।
৪. সকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া চিহ্নিত করো :
৪.১ সারা দিন রাত খাটি।
উত্তর : খাটি (সকর্মক)। সারা দিন রাত (কর্ম)।
৪.২ আমরা যাই, আসি, দেখি।
উত্তর : যাই, আসি, দেখি (অকর্মক)।
৪.৩ ঘাসের পাতাটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উত্তর : দাঁড়িয়েছে (সকর্মক)। সোজা হয়ে (কর্ম)।
৪.৪ এ জল কী করে পার হব?
উত্তর : পার হব (সকর্মক)। জল (কর্ম)।
৪.৫ পৃথিবী তোমার হবে।
উত্তরঃ হবে (সকর্মক)। পৃথিবী (কর্ম)।
৫. সন্ধি বিচ্ছেদ করো : নিশ্বাস, বৃষ্টি, নিশ্চয়, আশীর্বাদ।
উত্তর : নিশ্বাস—নিঃ + শ্বাস। বৃষ্টি—বৃষ্ + তি। নিশ্চয় —নিঃ + চয়। আশীর্বাদ— আশীঃ + বাদ।
৬. নীচের শব্দগুলি থেকে উপসর্গ পৃথক করো এবং তা দিয়ে দুটি নতুন শব্দ তৈরি করো :
বিদেশ, দুর্ভাগ্য, অনাবৃষ্টি, সুদিন, নির্ণয়।
উত্তর : বিদেশ = বি + দেশ। নতুন শব্দ—বিজ্ঞান, বিরল। দুর্ভাগ্য = দুর্ + ভাগ্য। নতুন শব্দ—দুর্যোগ, দুর্দিন। অনাবৃষ্টি = অনা + বৃষ্টি। নতুন শব্দ -অনাবিষ্কৃত, অনাড়ম্বর। সুদিন = সু + দিন। নতুন শব্দ—সুযোগ, সুলভ। নির্ভয় = নিঃ + ভয়। নতুন শব্দ—নিশ্চিন্ত ,নিরাকার। ওপরের শব্দগুলির উপসর্গ হল যথাক্রমে— বি, দুর্, অনা, সু, নি।
৭. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে রূপান্তরিত করে লেখো :
আশ্রয়, শরীর, শরৎ, মুখ, ফুল।
উত্তর : আশ্রয়—আশ্রিত। শরীর—শারীরিক। শরৎ—পারদীয়া। মুখ—মৌখিক। ফুল—ফুলেল।
৮. ‘চোখ’ শব্দটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে পৃথক বাক্যরচনা করো।
উত্তর : চোখ—(দৃষ্টি) কখন যে চোরটা চোখ এড়িয়ে টাকাটা নিয়ে গেল টের পেলাম না।
চোখ—(চরম বিস্ময়) তিন লাখ টাকা চোট গেছে শুনে বিপুবাবুর চোখ কপালে উঠল।
৯. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিষের অংশ ভাগ করে দেখাও:
৯.১ আমরা সাঁতার জানি।
উত্তর : আমরা (উদ্দেশ্য) সাঁতার জানি (বিধেয়)।
৯.২ বর্ষাতেও পিঁপড়ের মুখ শুকিয়ে গেল।
উত্তরঃ পিঁপড়ের মুখ (উদ্দেশ্য) বর্ষাতেও শুকিয়ে গেল (বিধেয়)।
৯.৩ শেষে আবার সেই গর্তেই চুকিপিয়ে।
উত্তরঃ (আমি) (উহ্য-উদ্দেশ্য) শেষে আবার সেই গর্তেই ঢুকিগিয়ে (বিধেয়)।
৯.৪ খলখল্ করে হেসে উঠল জল।
উত্তর : খদখল করে হেসে উঠল (বিধেয়) জল (উদ্দেশ্য)।
৯.৫ পৃথিবী সবারই হোক।
উত্তর : পৃথিবী (উদ্দেশ্য) সবারই হোক (বিধেয়)।
১০. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও :
১০.১ আমরা সাঁতার জানি। আমরা হাঁটতে জানি। ('এবং' দিয়ে বাক্য দুটিকে যুক্ত করো।)
উত্তর : আমরা সাঁতার এবং হাঁটতে জানি।
১০.২ তোমরা পৃথিবীর উপর হাসো, ফুলটুল ফুটাও। (দুটি বাক্য ভেঙে লেখো।)
উত্তর : (১) তোমরা পৃথিবীর ওপর হাসো। (২) তোমরা পৃথিবীর ওপর ফুলটুল ফুটাও।
১০.৩ বর্ষা খুব নেমেছে। নীচেও ডেকেছে যান। (যখন-তখন' দিয়ে বাক্য দুটিকে যুক্ত করো।)
উত্তর : বর্ষা যখন খুব নেমেছে নীচেও তখন ডেকেছে বান।
১০.৪ আমরা নড়তেও পারি নে। কোনোরকমে শুঁড়-ছুঁড় বাড়াই। ('কিন্তু' অব্যয়টি দিয়ে বাক্য দুটিকে যুক্ত করো।)
উত্তর : আমরা নড়তে পারিনে কিন্তু কোনোরকমে শুঁড়-টুড় বাড়াই।
১০.৫ এক টোক জল খেল এবং পিঁপড়ে কিছু বলতে পারলে না। ('এবং' অব্যয়টি তুলে দিয়ে বাক্যদুটিকে একটি বাক্যে লেখো।)
উত্তর : এক ঢোঁক জল খেয়ে পিঁপড়ে কিছু বলতে পারল না।
১১. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও:
১১.১ পাঠ্যাংশে কোন কোন্ ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে? প্রতি ক্ষেত্রে একটি করে উদাহরণ পাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর : পাঠ্যাংশে গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শরৎ ঋতুর প্রসঙ্গ এসেছে।
গ্রীষ্মের উদাহরণ—রোদ্দুরে পুড়ে বন্ধুর দল ধুলো হয়ে আছে।
বর্ষার উদাহরণ—বর্ষা খুব নেমেছে।
শরৎতের উদাহরণ—শরৎতে চেয়ে দেখি, তারাই কাশবন হয়ে হাসছে।
১১.২ পাতা গাছের কী প্রয়োজনে লাগে?
উত্তর : পাতা গাছের খাদ্য রান্না করে। অর্থাৎ, সূর্যালোক থেকে পাতা সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে গাছের খাদ্য তৈরি করে। পাতাকে তাই বলা হয় গাছের রান্নাঘর।
১১.৩ পিঁপড়ের বাসস্থান সম্পর্কে অনধিক তিনটি বাক্য লেখো।
উত্তর : পিঁপড়ে থাকে মাটিতে গর্তে। কোনো কোনো পিঁপড়ে গাছের কোটরেও বাসা বাঁধে। পিঁপড়ে শীতকাল পড়লেই তার গর্তের বাসা থেকে আর বেরোয় না।
১১.৪ বৃষ্টি পাতাকে কোন পরিচয়ে পরিচায়িত করেছে?
উত্তর : বৃষ্টি বলেছিল, পাতা বন্ধুকে আমি কোনোদিন ভয় পেতে দেখিনি। রোদ্দুরে পুড়েও পাতা বন্ধুরা ধুলো হয় আছে। যেই ডাক দিই, ধুলো ভেড়ে সারা দেহে সবুজ হয়ে ওঠে সবুজ পাতা।
১১.৫ সবার কথা শুনে পিঁপড়ে কী ভাবল?
উত্তর : সবার কথা শুনে পিঁপড়ে ভাবল, হায়, আমি চিরদিন পিঁপড়ে হয়েই রইলেম! তবু ছিলেম গর্তে, ছিলে ডাঙায়। বন্যার জলে ভেসে ভাবল, এ জল কী শুকুবে কোনোদিন?
১১.৬ প্রকৃতির বুকে শরতের আশীর্বাদ কীভাবে ঝরে পড়ে?
উত্তর : মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের চোখ হাসছে। প্রকৃতির বুকে শরতে আকাশ নির্মল হয়, গাছপাতা নিশ্চিত্ত জীবনযাপন করে। শস্যক্ষেত্র সবুজ শস্যপূর্ণ হতে থাকে। পৃথিবী সবারই হোক।
১২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১২.১ বৃষ্টির সময় তোমার চারপাশের প্রকৃতি কেমন রূপ নেয় সে সম্পর্কে কয়েকটি বাক্য লেখো।
উত্তর : বৃষ্টির সময় আমার ঘরের চারপাশে জল জমে ওঠে। প্রচুর জল ঢালু পথে গড়িয়ে চলে। পুকুরের জলে বৃষ্টি পড়া দেখতে বড্ড ভালো লাগে আমার। মাঝে মাঝে পুকুরের দু-একটা মাছ আনন্দে লাফ দেয়। কই, মাগুর মাছ ডাঙায় উঠে আসে। অন্য জলাশয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। আমাদের বাড়ির সামনেই বিস্তীর্ণ মাঠ। মাঠে মাঠে খুব জল জমে গেলে সবুজ ধানের শিখাগুলো একটু করে দেখা যায়। বড়ো বড়ো গাছগুলো বৃষ্টির জলে ভিঙে যেন আনন্দে একটু একটু মাথা দুলিয়ে বৃষ্টির গানে তাল দিতে থাকে। ব্যাংগুলো কোঁ কোঁ করে কে কত ডাকতে পারে তার প্রতিযোগিতা চালিয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে চাষিরা চাষ করে। কোনো কোনো ছোটো নালা দিয়ে প্রবল বেগে জল বয়ে চলে। গাছে গাছে কাকগুলো ভিজে কাদা নীরব বসে থাকে। বৃষ্টির এই দৃশ্য দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।
১২.২ পিঁপড়ে গাছের পাতায় আশ্রয় নিয়েছিল কেন?
উত্তর : তখন খুব বর্ষা নেমেছে। নীচেও ডেকেছে বান। জলে দেশ থইথই করছে। সুতরাং পিঁপড়ে যে গর্তে বাস করে তাও জলে ভরে গেছে। পিঁপড়ে বাধ্য হয়ে তাই ঘাসের পাতার নীচে আশ্রয় নিয়েছে।
১২.৩ পাতা কেন পিঁপড়েকে তার শরীর কামড়ে ধরতে বলেছিল?
উত্তর : পাতার ছিল উদার হৃদয়ের চরিত্র। প্রবল বর্ষণে ঘাসের পাতা নুয়ে পড়ছিল। তার কাছে আশ্রয় নেওয়া পিঁপড়েটা যেন জলে ভেসে না যায় তাই সে পিঁপড়কে তার শরীর কামড়ে ধরতে বলেছিল।
১২.৪ পাতা কী বলে পিঁপড়েকে প্রবোধ দিতে চেয়েছিল? ‘কাজে আসে না কোনোটাই’—এখানে তার কোন কাজে না আসার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : বৃষ্টিতে চারদিক জল থইথই করছে। পিঁপড়েটা একটা ঘাসের পাতার নীচে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির ফোঁটার ঘায়ে পাতাটা বোধহয় এলিয়ে পড়বে জলে। আর একটুকুতেই পিঁপড়েটা অসীম জলে ভেসে যাবার পরিস্থিতি হয়েছে। পাতা তখন পিঁপড়েকে প্রবোধ দিয়ে বলল—'ভাই জোরে আঁকড়ে ধরো। কামড়ে ধরো আমাকে, আমার লাগবে না। ভয় পেয়ো না, তোমরা তো সাঁতার জানো, হাঁটতে পারো, দৌড়েও চলো, তোমাদের আর ভয় কী?' এখানে পিঁপড়ের কাজ অন্য কারও উপকারে না লাগার কথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, সে সব কিছু পারলেও বিপদের দিনে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না।
১২.৫ 'তাই আজ বেঁচে গেলাম।'—বক্তার 'আজ' বেঁচে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর : পিঁপড়ে তার দুঃখের কথা বলেছে পাতাকে। আমরা সাঁতার জানি, হাঁটতে জানি, দৌড়োতেও খুব পারি। দুত্তোর কাজে আসে না কোনোটাই। আজ প্রবল বর্ষায় পিঁপড়ের ভেসে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো গতি ছিল না। কিন্তু ঘাসের পাতা ছিল বলে সে যাত্রা সে তার আশ্রয় লাভ করে বেঁচে গেল। তাই পিঁপড়ে ‘আজ’ শব্দটি উচ্চারণ করেছে।
১২.৬ পিঁপড়ে আর পাতা কীভাবে নিজেদের কষ্টের কথা গল্পে বলেছে তা একটি অনুচ্ছেদে লেখো।
উত্তর : পিঁপড়ে গর্তে তার বাসা বেঁধে থাকে। মাটির নীচ থেকে সে বাইরে বেরোয় খাদ্যের সন্ধানে। সে খুব ক্ষুদ্র প্রাণী। বড়ো কোনো প্রাণীর পায়ের তলায় চাপা পড়লে সে নিজেকে বাঁচাতে পারে না। হঠাৎ জোরে বৃষ্টি নামলেও সে সবসময় নিজেকে বাঁচাতে পারে না। এক-এক সময় এমনই বৃষ্টি নামে যে মাঠঘাট জল থইথই করে। তখন সে হেঁটে কোথাও পালাতে পারে না। দৌড়োতেও পারে না। সাঁতার জানলেও দারুণ বৃষ্টির ফোঁটায় সে কোথায় যে ভেসে যায় তার ঠিকানা থাকে না। তার নিজের বাসায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। গাছেরও প্রাণ আছে। সে নড়তে চড়তে পারে না। তাকে রোদ্দুরে পুড়তে হয়। আবার প্রবল বৃষ্টিতে জল থইথই করলে ডুবে যেতে হয়। অনেকসময় কয়েক দিন সম্পূর্ণ ডুবে থেকে থেকে মরে যেতে হয়।
১২.৭ পিঁপড়ের সঙ্গে গাছের কথাবার্তা নিয়ে সংলাপ তৈরি করো। শ্রেণিকক্ষে অভিনয়ের আয়োজন করো।
উত্তর : শ্রেণিকক্ষে অভিনয়ের উপযোগী পিঁপড়ে ও পাতার সংলাপ।
- পিঁপড়ে—ওরে বাপ! এ যে দেখছি ভয়ংকর বর্ষা। ডুবে মরব বোধহয়। কোথায় যাই। চারদিকে যে জল থইথই করছে। ওহো সামনেই একটা ঘাসের পাতা মাথা তুলে আছে। সাঁতরে এখুনি ওর তলায় আশ্রয় নিই। ওঃ! যদিও পাতার নীচে আশ্রয় নিলাম তো বৃষ্টির ফোঁটায় ঘাসের পাতাটাই কাঁপছে। হেলে পড়ছে। পাতাটা বোধহয় এলিয়ে পড়বে এবার জলে।
- পাতা—আহা রে! পিঁপড়েটা অসীম জলে ভেসে যাবে-যাবে হয়েছে। ও ভাই পিঁপড়ে! তুমি জোরে আঁকড়ে ধরো
- আমাকে। কামড়ে ধরো। আমাকে লাগবে না। ভয় পেয়ো না, তোমরা তো সাঁতার জানো, হেঁটে, দৌড়েও চলো, তোমাদের আবার ভয় কী?
- পিঁপড়ে—পাতা ভাই, আমি তোমার শিরা কামড়ে ধরছি। ডুবে গেছি আধ গলা জলে। দাঁড়াও ভাই তোমার সঙ্গে ভালো করে পরে কথা বলছি। ওঃ! এক ঢোক জলও আমার পেটে ঢুকে গেল। কথা আর বলতে পারছি না। এবার নির্ঘাৎ ডুবে যাব। জল আমার গলা পর্যন্ত এসে গেছে। তোমার শিরায় দাঁত বসিয়ে চোখ বুজে ঝুলে থাকি। এরপর যা আছে ভাগ্যে তাই হবে।
- পাতা—(হেসে) ভাই ভাগ্যে তুমি জিমনাস্টিকস জানতে। আমরা নড়তেও পারিনে কোনো রকমে শুঁড়টুড় বাড়াই। তুমি তবু তো ঝুলতে পারো। আমরা তো চলতেই জানলেম না, তা ঝুলব কোথায় গিয়ে?
- পিঁপড়ে—(একটু থেমে), বাপ বাঁচলেম! বৃষ্টি একটু ধরল। হ্যাঁ ভাই পাতা, তুমি ঠিকই বলেছিলে। আমরা সাঁতার জানি, হাঁটতে জানি, দৌড়োতেও পারি খুব। দুত্তোর! কাজে আসে না কোনোটাই। ডাঙার রোদ্দুরের দিনে পুড়ে মরি, বর্ষায় তুমি ছিলে তাই আজ বেঁচে গেলাম।
১২.৮ ‘মাটি সবারই’—পাতার এই কথার মধ্যে দিয়ে কোন সত্য ফুটে উঠেছে?
উত্তর : পাতা বলেছে, থইথই যে জল, মাটি না থাকলে চলত কার ওপর দিয়ে? পাতার এই কথার মাধ্যমেও মাটি যে সবারই তা অনেকখানি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে যেখানেই জল দেখি তা মাটির ওপ ভরে আছে। পুকুর ডোবা নদী নালা সরোবর এমনকি বিশাল সমুদ্রও তার বিপুল জলরাশি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাটির ওপরে। জল ছাড়া আমরা যতসব প্রাণী দেখি, কীটাণুকীট দেখি, পশুপাখি দেখি সবাই রয়েছে এই মাটিকে আশ্রয় করে। কোটি কোটি সবুজ গাছপালা বেঁচে আছে মাটির ওপর দাঁড়িয়েই। গাছ বেঁচে আছে মাটির রস পান করে। সুতরাং মাটি যে সবারই, পাতার এই কথা মর্মে মর্মে সত্য।
১২.৯ মেঘের আড়াল থেকে বৃষ্টি কোন কথা শুনতে পেয়েছিল? তা শুনে বৃষ্টি পিঁপড়েকে কী বলল?
উত্তর : পিঁপড়ে দুঃখ করে পাতাকে বলেছিল, তারা দিনরাত খাটে খায় আর গর্তে থাকে। এই কাজের কোনো দাম নেই। পাতা পৃথিবীর বুকে ফুল ফোটায়। পৃথিবীর বুকে পাতা হাসে। পিঁপড়ে থাকে গর্তে। মাটি হল পিঁপড়ের। পৃথিবীটা হল পাতার। তার কথার উত্তরে পাতা তাকে বলল, মাটি সকলের, থইথই যে জল সেও মাটি না থাকলে চলত কোথা দিয়ে। জলের কথা শুনে পাতা শিউরে উঠে বলল, ‘হায়! এ জল কী করে পার হব?’ বলতে বলতে আবার ঝমঝম করে বৃষ্টি এলো। নিজেকে বাঁচাতে পিঁপড়ে আবার কামড়ে ধরল পাতা। মেঘের আড়াল থেকে বৃষ্টি এই কথাগুলি শুনতে পেয়েছিল। ওই কথাগুলি শুনে বৃষ্টি পিঁপড়েকে বলল, ‘ভাই মেঘের আড়াল থেকে শুনেছিলাম তোমাদের কথা। পিঁপড়ে ভাই, তোমার বড্ড ভয়। কিন্তু ওই পাতাগুলিকে কোনোদিন আমি ভয় পেতে দেখিনি। আমরা দেশ-বিদেশে ঘুরেফিরে এসেও দেখি রোদ্দুরে পুড়ে বন্ধুর দল ধুলো হয়ে আছে। কিন্তু যখনই ডাক দিই তখনই ধুলো ভেড়ে সারা দেহ জুড়ে চিরদিনই সবুজ হয়ে ওঠে সবুজ পাতা। সবুজ বন্ধুর হাত ধরে আমি আনন্দে গান গেয়ে উঠি।
১২.১০ শরৎ ঋতুর প্রকৃতি কেমন সে বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
শরৎকাল :
বাংলাদেশের বুকে মোট ছয়টি ঋতু। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। সেই হিসেবে শরৎ হল তৃতীয় ঋতু। বর্ষাকালের ভরা বৃষ্টি আর মানুষের দুর্ভোগ দুটোই প্রায় শেষ হয়ে যায় শরৎকালের শুরুতে। ভাদ্র-আশ্বিন এই দুই মাস হল শরৎকাল। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি নাগাদ গ্রামের মাঠে মাঠে দেখা যায় শুধু রাশি রাশি সবুজ ধান গাছের রোদ ঝলসানো হাসি। আকাশে মেঘ প্রায় থাকে না বললেই চলে। ঝকঝকে নীল আকাশ দেখা যায়। সকালবেলায় শিশির পড়ে ঘাসের ডগায় রোদ ঝিকমিক করে। শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শালুক আর শাপলা ফুলের মেলা দেখা যায় পুকুরে ডোবায় নালায়। পদ্মফুল তার শতদল বিকশিত করে হাসতে থাকে। মাঠে মাঠে সাদা কাশবন হাওয়ার ঢেউ খেলতে থাকে। এই দৃশ্য প্রত্যেকের মনে এনে দেয় অপূর্ব আনন্দ।
১২.১১ পাতা, বৃষ্টি, জল, ঘাসের পাতা কে কীভাবে পিঁপড়ের মনে সাহস জুগিয়েছিল তা আলোচনা করো।
উত্তর : পাতা—পিঁপড়েকে সান্ত্বনা দিয়ে পাতা বলেছিল, ভয় পেয়ো না ভাই, তোমরা সাঁতার জানো, হেঁটে, দৌড়েও চলো। তোমাদের কীসের ভয়? ভয় পেয়ো না বন্ধু। ভেবো না একটুও। বাদল চলে যাবে। চলে যাবে নিশ্চয় বানের এই জমা জল। শরৎ আসবে, আসবেই। আসছে শরৎ।
বৃষ্টি—পিঁপড়েকে সান্ত্বনা দিতে বৃষ্টি বলল, পিঁপড়ে ভাই তোমার ভয় ভীষণ। কিন্তু ওই পাতা বন্ধু কোনো কালেও ভয় পায় না। রোদ্দুরে পোড়ে, ধুলোর সঙ্গে মিশে যায়। কিন্তু যখন আমরা ডাক দিই ধুলোয় পাতা বন্ধু আবার উঠে পড়ে। সবুজে সবুজে ভরিয়ে দেয় চারদিক। তাই, তুমিও মিছিমিছি ভয় পেয়ো না। তোমার যা কাজ তুমি তাই করো।
জল—শেষে পিঁপড়েকে সান্ত্বনা দিল জল। সে সরাসরি পিঁপড়েকে না সান্ত্বনা দিলেও পিঁপড়েকে শুনিয়েই গাছের প্রশংসা করে বলল, বর্ষায় যে গাছকে আমি ডুবিয়ে, কাদায় লুটিয়ে তলিয়ে দিয়ে ছুটে বেড়াই, শরতে আবার চেয়ে দেখি, তারাই মাঠে মাঠে কাশবন হয়ে হাসছে। এভাবে একে একে ঘাসের পাতা, বৃষ্টি এবং জল পিঁপড়েকে সাহস জুগিয়েছিল।
❒ এক ভূতুড়ে কাণ্ড গল্পটির বিষয়বস্তু:
‘এক ভূতুড়ে কাণ্ড’ গল্পটিতে মনে হয় যেন সত্যি সত্যি লেখক ভূত বিষয়ক একটি ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ‘ভূত’ শব্দটি প্রত্যেকের কাছেই পরিচিত। ভূত শব্দটি শুনলে কারও মনে যে ভীতির একটু-আধটু সঞ্চার হয় না তা মোটেই নয়। লেখক একবার রাঁচির সরকারি রাস্তায় অন্যের সাইকেল নিয়ে হুন্ডুর দিকে বিকেলে বারো মাইলের পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। দু’দিকে ঘন জঙ্গল। মাইল পাঁচেক গিয়েই সাইকেলের টায়ার ফেঁসে গেল। আরও সাত মাইল কীভাবে যাওয়া যাবে ভাবতে ভাবতে সন্ধ্যার অন্ধকার নামল। লেখক কুঁড়ে ভীষণ। হাঁটতে পারেন না। কিন্তু ক্রমশ ভয় বাড়তে লাগল, জনশূন্য বসতিশূন্য ঘন জঙ্গলের দিয়ে রাস্তা। বন থেকে বাঘ যে-কোনো মুহূর্তে হালুম শব্দে ঘাড়ে পড়তে পারে। লেখক ভূত মানেন না। কিন্তু যদি সত্যই ভূত দেখা দেয় তাহলে তার মুখোমুখি হওয়া লেখকের পক্ষে সম্ভব নয়। বুক দুরুদুরু করছিল। রাতের অন্ধকারে লাইট জ্বালিয়ে একটা লরি রাঁচির পথে এগিয়ে আসতে দেখেও লেখক তাকে দাঁড় করাতে পারলেন না।
এরপর ভীষণ ধীর গতিতে আসা একটা ছোট্ট বেবি অস্টিন মোটরগাড়িকে আলে জ্বালিয়ে আসতে দেখলেন। সেও দাঁড়াচ্ছে না দেখে লেখক তাড়াতাড়ি নিজেই জোর করে দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ভিতরে ঢুকে আরাম করে বসে গেলেন। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভারকে কিছু বলতে চেয়ে সেদিকে তাকিয়েই যেন মুহূর্তে বরফের ঠান্ডায় জমে গেলেন। গাড়ির ড্রাইভার নেই, ইঞ্জিন চলছে না, অথচ গাড়ি চলছে। বাইরে বাঘ আক্রমণ করতে পারে, এখানেও ভূত! দুই চোখ বন্ধ করে লেখক ঘণ্টা চারেক কাটিয়ে দিলেন। গাড়িটা একটা লেভেল ক্রসিং-এ ট্রেনের দুরন্ত শব্দ শুনে লেখক তৎক্ষণাৎ নেমে পড়লেন। অস্টিন গাড়িটাও থেমে গেল। ট্রেন চলে গেল। অস্টিন গাড়ির পিছন থেকে চশমাপরা এক ভদ্রলোক এসে লেখককে অনুরোধ করলেন তাঁর গাড়িটা একটু ঠেলে দেবার জন্য।
এক ভূতুড়ে কান্ড
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ শিবরাম চক্রবর্তীর পোশাকি নাম কী?
উত্তর : শিবরাম চক্রবর্তীর পোশাকি নাম চঞ্চল।
১.২ তাঁর লেখা দুটি বিখ্যাত বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর দুটি বিখ্যাত বই হল বাড়ি থেকে পালিয়ে, হর্ষবর্ধন ও গোবর্ধন।
২. নীচের বাক্যগুলি কী ধরনের (সরল/যৌগিক/জটিল) তা নির্দেশ করো:
২.১ ভূত বলে কিছু আছে?
উত্তর : সরল বাক্য।
২.২ যেখানে সন্ধে হয় সেইখানেই সাইকেলের টায়ার ফাঁসে।
উত্তর : জটিল বাক্য।
২.৩ একটা পরস্মৈপদী সাইকেল হাতে পেয়ে হুড়ুর দিকে পাড়ি জমিয়েছিলাম কিন্তু মাইল সাতেক না যেতে যেতেই তার একটা টায়ার ফেঁসে গেল।
উত্তর : যৌগিক বাক্য।
২.৪ আমার টর্চবাতিটা জ্বালিয়ে নিয়ে প্রাণপণে ঘোরাতে লাগলাম।
উত্তর : সরল বাক্য।
২.৫ যেখানটায় ড্রাইভার থাকবার কথা সেখানে কেউ নেই।
উত্তর : জটিল বাক্য।
৩. নীচের বাক্যগুলিতে কী কী অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে লেখো :
৩.১ সাইকেল ঘাড়ে করে যেতে হলেই হয়েছে!
উত্তর : করে (অনুসর্গ)।
৩.২ কয়েক মিনিট বাদে সেখান থেকে নামলাম।
উত্তর : থেকে (অনুসর্গ)।
৩.৩ তার চেয়ে বাঘের পেটের মধ্যে দিয়ে স্বর্গে যাওয়া ঢের শর্টকাট।
উত্তর : চেয়ে, মধ্যে, দিয়ে (অনুসর্গ)।
৩.৪ আপনা থেকেই আমার মুখ দিয়েই বেরিয়ে গেল।
উত্তর : থেকেই, দিয়েই (অনুসর্গ)।
৪. নীচের বাক্যগুলিকে কর্তাখণ্ড ও ক্রিয়াখণ্ডে ভাগ করো :
৪.১ আসতে আসতে গাড়িটা আমার সামনে এসে পড়ল।
উত্তর : গাড়িটা (কর্তাখণ্ড) আসতে আসতে আমার সামনে এসে পড়ল (ক্রিয়াখণ্ড)।
৪.২ দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঢুকে পড়লাম ভিতরে।
উত্তর : আমি (কর্তা উহ্য) দরজার হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে ঢুকে পড়লাম (ক্রিয়াখণ্ড) ভিতরে।
৪.৩ চিরদিনই আমি আশাবাদী।
উত্তর : আমি (কর্তাখণ্ড) চিরদিনই আশাবাদী (ক্রিয়াখণ্ড)।
৪.৪ এগিয়ে এসে বললেন ভদ্রলোক।
উত্তর : এগিয়ে এসে বললেন (ক্রিয়াখণ্ড) ভদ্রলোক (কর্তাখণ্ড)।
৫. নীচের বাক্যগুলির মধ্যে থেকে সন্ধিবদ্ধ শব্দ বেছে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
৫.১ কিন্তু গাড়িটার থামবার কোনো লক্ষণ নেই।
উত্তর : কিন্তু = কিম্ + তু
৫.২ আমার পাশ কাটিয়ে যাবার দুর্লক্ষণ দেখে আমি মরিয়া হয়ে উঠলাম।
উত্তর : দুর্লক্ষণ = দুঃ + লক্ষণ।
৫.৩ শেষ পর্যন্ত আস্তে আস্তে আসছিল গাড়িটা।
উত্তর : পর্যন্ত = পরি + অন্ত।
৫.৪ কাল সকালে উদ্ধার করা যাবে।
উত্তর : উদ্ধার = উৎ + হার।
৬. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৬.১ ‘সাইকেল ঘাড়ে করে যেতে হলেই হয়েছে’! — লেখকের গন্তব্য কোথায়? সাইকেল ঘাড়ে করে যাওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
উত্তর : লেখকের গন্তব্য হল রাঁচির হুড়ু। লেখক হুড়ু যাওয়ার জন্য অন্যের একটি সাইকেল নিয়ে রাঁচির প্রশস্ত একটি সরকারি রাস্তায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে অর্থাৎ মাইল সাতেক যাওয়ার পর সাইকেলের টায়ার ফেটে গেল। রাস্তাটা ছিল জনহীন। আরও মাইল পাঁচেক যেতে পারলে গাঁয়ের মতো একটা পাওয়া যায়। সুতরাং এতটা রাস্তা সাইকেল ঘাড়ে করে নিয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই—এটাই ভাবতে লাগলেন লেখক।
৬.২ ‘যেখানে বাঘের ভয় সেইখানেই সন্ধে হয়'—প্রবাদটির মর্মার্থ কী? একই ভাব বোঝাতে তুমি আরেকটি প্রবাদ উল্লেখ করো।
উত্তর : প্রবাদটির মর্মার্থ হল, যেখানে স্বাভাবিক কারণে ভয় পাওয়ার কথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠিক সেইখানেই এমন আটকে যেতে হয় যে বুক দুরুদুরু হওয়ার উপক্রম ঘটে। একই ভাব বোঝাতে আর একটি প্রবাদ বাক্য হল ‘যেখানে ব্যথা আছে সেখানেই বেশি করে চোট লাগে।'
৬.৩ ‘চিরদিনই আমি আশাবাদী’—এই আশাবাদের গুণে লেখক কীভাবে পুরস্কৃত হলেন?
উত্তর : সাইকেলে হুডু যাওয়ার পথে লেখকের সাইকেলের চাকার টায়ার ফেটে যায়। রাস্তার ওপর সেই স্থান ছিল জনবিরল। রাস্তার ধারে লোকবসতি আছে প্রায় আরও মাইল পাঁচেক এগিয়ে। সুতরাং লেখক প্রথমটায় মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি আশাবাদী। কিছুক্ষণ পরে একটি লরি এগিয়ে আসতে দেখেন তিনি। লরিটি অবশ্য দাঁড়ায় না। তাতেও লেখক আশা ছাড়েন না। আরও কিছুক্ষণ পরে তিনি একটি বেবি অস্টিন গাড়ি পেয়ে গেলেন এবং তাতে একপ্রকার বলপূর্বক উঠেও পড়লেন। দারুণ বিপদের সময় এই সুযোগ পাওয়াটাই তাঁর আশাবাদী হওয়ার পুরস্কার।
৭. নীচের প্রশ্নগুলি নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৭.১ ‘অনর্থক কেবল টর্চটাকে আর নিজেকে টর্চার করা’—কোন্ ঘটনা প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির অবতারণা? 'টর্চ' আর 'টর্চার' শব্দের প্রয়োগে যে শব্দ নিয়ে খেলা তৈরি হয়েছে, গল্প থেকে খুঁজে এমন কয়েকটি উদাহরণ দাও। তুমি নিজে এ জাতীয় কয়েকটি বাক্য লেখো।
উত্তর : হুড্ডু যাওয়ার পথে লেখক রাঁচির সরকারি চওড়া রাস্তায় সাইকেলের টায়ার ফেটে গেলে খুব সমস্যায় পড়ে যান। তখন সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়েছে। কীভাবে হুড়ু পৌঁছোবেন এই দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছিল তাঁকে। ভাবতে ভাবতে রাঁচির দিকে যাওয়া একটি লরিকে পেয়ে গেলেন তিনি। লরিটিকে দাঁড় করানোর জন্য তিনি তাঁর হাতের টর্চ লাইটটা বারবার নেড়ে চলেছিলেন। কিন্তু ড্রাইভার লরিটি দাঁড় করায়নি। সে কয়েক মুহূর্ত পরে সামনের মোড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এতক্ষণ টর্চ নিয়ে লেখক যে হাত ঘোরাচ্ছিলেন তা ব্যর্থ হয়ে গেল। তাই লেখক আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘অনর্থক টর্চটাকে আর নিজেকে টর্চার করা। গল্পে বর্ণিত এ জাতীয় কয়েকটি বাক্য হল –
(১) ভূতদের রূপ গুণে আমার কোনো মোহ নেই। তা ছাড়া আমার হার্ট খুব উইক। আর শুনেছি যে ওরা ভারি উইকেড।
(২) তবে ভূত কিনা ঠিক জানি না, কিন্তু অদ্ভুত একটা কিছু একবার আমি দেখেছিলাম।
(৩) এই ঝাপসা আলো আর কুয়াশার মধ্যে সাইকেল টেনে পাক্কা সাত মাইলের ধাক্কা।
(৪) রাঁচির রাজপথ না হলেও সেটা বেশ দরাজ পথ।
৭.২ গল্প অনুসরণে সেই নির্জন বনপথে লেখকের রোমাঞ্ঝকর অভিজ্ঞতার কথা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর : লেখক একবার হুড়ু যাচ্ছিলেন। অন্যের একটি সাইকেল নিয়ে। রাঁচির সেই সরকারি রাস্তাটা ছিল জনহীন। প্রশস্ত রাস্তা বারো মাইল যেতে হবে। মাইল সাতেক পথ গিয়েই তাঁর সাইকেলের টায়ার ফেটে গেল। লেখককে এগিয়ে যেতে হবে আরও মাইল পাঁচেক। কাছাকাছি সাইকেল সারানোর কোনো দোকান তো দূরের কথা সেই রাস্তার ধারে কোনো জনবসতির চিহ্ন মাত্র নেই। হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় সহসা পেলেন না লেখক। কিন্তু তিনি চিরকালই অলস প্রকৃতির। তবে তিনি আশাবাদী। আশায় বুক বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অন্ধকার নেমে এলো। গাঢ় হল অন্ধকার। ভয় বাড়ল। জঙ্গলের দেশ। বাঘ থাকতে পারে। সৌভাগ্যবশত লেখক একটা লরিকে আসতে দেখলেন। লরিটি মাঝামাঝি গতিবেগ নিয়ে আসছিল। লেখক তাঁর হাতের টর্চ নিয়ে অনেকবার হাত নেড়ে লরিটিকে থামানোর জন্য ড্রাইভারকে ইঙ্গিত করলেন। কিন্তু লরিটি চলে গেল। ভয় বেড়ে গেল লেখকের। গা ছমছম করতে লাগল। আকাশের চতুর্থী চাঁদটাও ডুবে গেল।
যে-কোনো মুহূর্তে বাঘের হালুম শব্দ শোনা যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে যা হোক বেবি অস্টিন নামে একটা মোটরগাড়িকে খুব ধীর গতিতে আসতে দেখলেন। লেখক ‘এই’ জোরে শব্দটি উচ্চারণ করে সেই গাড়িটাকেও দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু গাড়িটা কোনো সাড়া না দিয়ে সেইরকম ধীর গতিতেই এগিয়ে চলতে লাগল। লেখক এবার আত্মরক্ষার জন্য কোনোরকমে গাড়ির দরজা খুলে অন্ধকারের মধ্যে গাড়ির ভিতরে বসে গেলেন। গাড়ি চলছে নীরবে ধীর গতিতে। মানুষ হেঁটে যাওয়ার মতো গতি নিয়ে। তবুও আশা আছে নিশ্চিন্তে রাত হলেও লেখক তাঁর গন্তব্যস্থানে পৌঁছোতে পারবেন। তিনি তাই ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য ন বলতে গেলেন, ‘আমায় লালপুরার মোড়টা নামিয়ে দেবেন, তাহলেই হবে, ডাক্তার যদুগোপালের বাড়ির -এই পর্যন্ত বলেই লেখকের কণ্ঠস্বর মুহূর্তে শুকনো কাঠ হয়ে গেল। কারণ গাড়ির ভিতর তিনি কোনো ড্রাইভারকে দেখতে পেলেন না। গাড়ি তবু এগিয়ে চলছে নিঃশব্দে। লেখকের চোখ দুটি ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম হল। তখন ছিল।
তাছাড়া নেমেই বা তিনি আবার করবেন কী। বাঘেও তো চিবিয়ে খেতে পারে। সুতরাং কাঠ হয়ে বসেই শীতের রাত। তা সত্ত্বেও তিনি মুহূর্তে ঘেমে উঠলেন। কিন্তু কোনো উপায় নেই। হাত-পা তাঁর অবশ হয়ে গেছে রইলেন গাড়ির মধ্যে। ঘণ্টা দুয়েক পর গাড়িটা একটা লেভেল ক্রসিং-এর মুখে পৌঁছে গেল। এমন সময় লেখকের হুঁশ হল একটা রেলগাড়ির হুশহুশ শব্দ। গাড়িটা এভাবে নীরবে এগিয়ে চললে নির্ঘাৎ সাক্ষাৎ যমদূত তাকে মুহূর্তে নিয়ে যাবে। লেখক মুহূর্ত মাত্র বিলম্ব না করে গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে মেটির গাড়িটাও থেমে গেল। আর চোখের নিমেষে দুরন্ত ট্রেনটাও ঝাঁ ঝাঁ গর্জন করে বেরিয়ে গেল। এই সময়ের মধ্যে লেখকের যেন কোনো সংবিত ছিল না। হুঁশ ফিরলেই তাঁর চোখে পড়ল পিছন থেকে আসা চোখে চশমা লাগানো। এক ভদ্রলোকের ওপর। তিনি বললেন, দয়া করে আমার গাড়িটা একটু যদি ঠেলে দ্যান। ট্রেন লাইনটা পেরিয়েই আমার বাড়ি। ওই দেখা যাচ্ছে আর এক মিনিটের রাস্তা।
৭.৩ ‘বাঘের দৃষ্টিভঙ্গি ওরকম উদার হতে পারে না।'—কোন্ উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে? লেখকের কাছে সেই ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ কতটা উদারতা নিয়ে এসেছিল, তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : বাঘ হিংস্র প্রাণী। মাংস ছাড়া বাঘের পেট ভরে না। সুতরাং বাঘের হৃদয়ে উদারতা বা দয়া থাকবে এটা চিন্তা করাই বোকামি। লেখক ব্যঙ্গ করে তাই বাঘের এই উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছেন। লেখক গভীর জঙ্গলের রাস্তায় জনমানবহীন অন্ধকারে আটকে পড়ে বাঘের কথা ভেবে প্রথমেই ভয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিলেন। বাঘ কী তাঁকে দয়া করে এমন একলা পেয়ে ছেড়ে দেবে? কিন্তু লেখকের সৌভাগ্য যে তাঁকে বাঘের মুখে পড়তে হয়নি।
৭.৪ ‘এই হয়ত সশরীরে রাঁচি ফেরার শেষ সুযোগ।' কোন সুযোগের কথা বলা হয়েছে? লেখক কীভাবে সেই সুযোগকে কাজে লাগালেন?
উত্তর : হুড়ু যাওয়ার আগে রাঁচির বড়ো রাস্তায় সাইকেলের চাকার টায়ার ফেঁসে যাওয়ায় লেখক ভীতিজনক এক কঠিন সংকটে পড়ে গেলেন। জনহীন রাস্তা। কাছাকাছি কোনো জনবসতি নেই। ডানদিকে বাঁদিকে ঘন বন। বাঘ থাকার সম্ভাবনা খুবই। শীতের রাত। কুয়াশা জমছে। যে-কোনো মুহূর্তে 'হালুম' শব্দে বাঘ ঘাড়ে ঝাঁপ দিতে পারে। তাই ভয়ে তিনি অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। এমন সময় যদিও তিনি রাঁচি যাওয়ার দিকে একটি লরি আসতে দেখলেন তাও সে না দাঁড়িয়ে চলে গেল। সৌভাগ্যবশত এরপর খুব ধীর গতিতে তিনি একটি বেবি অস্টিন মোটরগাড়িকে কুয়াশা ভেদ করে আসতে দেখলেন। লেখক বুঝলেন এই তাঁর সশরীরে রাঁচি ফেরার শেষ সুযোগ। কিন্তু সে এতই আস্তে চলছিল যে মানুষও তার থেকে বেশি জোরে হাঁটতে পারে। সেই মোটরগাড়ি সামনে আসতেই লেখক ‘এই’ শব্দে জোরে হাঁক দিয়ে তাকে থামাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু সেই গাড়ি যেমন চলছিল নিঃশব্দে তেমনই এগিয়ে চলল। লেখক বুঝলেন তাঁকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে হবে। সুযোগ কাজে লাগাতে হবে এবং সশরীরে রাঁচিতে পৌঁছোতে হবে। সুতরাং তিনি কোনো রকমে সেই আস্তে এগিয়ে চলা গাড়ির গেট খুলে ভিতরে ঢুকে বসে গেলেন।
৭.৫ ‘আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম'।—লেখক কেন তার কথা অসমাপ্ত রেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন?
উত্তর : ‘আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকলাম'—লেখকের এই হাঁ করে তাকিয়ে থাকার কারণ ভয়ংকর। অর্থাৎ, লেখক চতুর্দিকে জঙ্গল ভরা রাস্তায় দুর্ভাগ্যবশত সন্ধ্যার অন্ধকারে আটকে পড়েছিলেন। সন্ধ্যা থেকেই তিনি বাঘের পেটে পড়বেন এই ভয়ে সেঁটিয়ে যাচ্ছিলেন। সৌভাগ্যবশত শেষ পর্যন্ত একটি বেবি অস্টিন মোটরগাড়ি দেখতে পেলেন। গাড়িটি খুব ধীর গতিতে আসতে দেখে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন। গাড়িটি থামল না। লেখক দেখলেন গাড়িটি এত ধীরে চলছে যে তাতে যে কেউ অনায়াসে চলন্ত অবস্থাতেই ঢুকে পড়তে পারে। তিনি বাঘের মুখ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তখনই কারও কোনো অনুমতির তোয়াক্কা না করে গাড়ির দরজা খুলে আরাম করে বসে হবে। ডাক্তার যদুগোপালের বাড়ির এই বলেই লেখকের কথা অসমাপ্ত রয়ে গেল। কারণ, পড়লেন তারপর ড্রাইভারকে লক্ষ করে বলতে গেলেন—আমায় লালপুরার মোড়টায় নামিয়ে দেবেন, তাহলেই লেখক দেখলেন যেখানটায় ড্রাইভার থাকার কথা সেখানে কেউ নেই। একদম ফাঁকা। এই দেখেই জিভ তাঁর টাকরায় আটকে গিয়েছিল। এ যে ভূত ছাড়া আর কিছু নয় এই ভেবেই তাঁর বাক্শক্তি হারিয়ে গেল। তিনি হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন।
৭.৬ ‘বে-ড্রাইভার গাড়ি যেমন চলছিল তেমনি চলতে লাগল’—‘বে-ড্রাইভার গাড়ি’ চলার প্রকৃত কারণটি কীভাবে গল্পে উন্মোচিত হল?
উত্তর : বে-ড্রাইভার গাড়িটিতে বসে লেখক কঠিন আতঙ্কে ঘণ্টা দুয়েক কাটিয়ে দিলেন। এক সময় গাড়িটি একটা লেভেল ক্রসিংয়ের মুখে পৌঁছোল। ক্রসিংয়ের গেট পেরিয়ে যখন প্রায় লাইনের সম্মুখে এসে পড়ল তখন লেখকের হুঁশ এসে গেল। হুঁশ হুশ শব্দে তেড়ে আসছিল ট্রেন। অদূরে তার ইঞ্জিনের আলো দেখা দিয়েছে। সুতরাং লেখক তাঁর চলন্ত গাড়ি থেকে মুহূর্তে কোনো ক্রমে নেমে পড়লেন। তিনি নামতেই মোটরগাড়িটাও থেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সামনে দিয়ে রেলগাড়িটাও গর্জন করতে করতে বেরিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পরে লেখক সম্বিত ফিরে পেলেন। তারপরেই তাঁর চোখে পড়ল এক চশমাপরা লোক বেরিয়ে এলো মোটরগাড়ির পিছন থেকে। তাঁকে সবিনয়ে বললেন, ‘দয়া করে যদি আমার গাড়িটা একটু ঠেলে দ্যান মশাই। আট মাইল দূর থেকে বিকল গাড়িটা একাই ঠেলতে ঠেলতে এনেছি! লাইনটা পেরিয়েই আমার বাড়ি, একটু গেলেই। ওই যে, দেখা যাচ্ছে’—আর এক মিনিটের রাস্তা। গল্পে উদ্ধৃত এই কথাগুলি থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে গাড়িটি ‘বে-ড্রাইভার’ চলছিল।
৭.৭ ‘এবারও আমার আলস্যই জয়ী হলো শেষটায়।'—গল্প অনুসরণে লেখকের উৎকণ্ঠা, আলস্য ও কর্মতৎপরতার
দৃষ্টান্ত দাও।
উত্তর : লেখকের উৎকণ্ঠা—হুডু যাওয়ার পথে জনাকীর্ণ রাস্তার সাইকেলের টায়ার ফেঁসে যাওয়ায় লেখক তখন থেকেই ভীষণ উৎকণ্ঠায় পড়ে গেলেন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা এসে গেল। পিছনের রাস্তা সাত মাইল, সামনের রাস্তা পাঁচ মাইল। লেখক কীভাবে কোন্দিকে যাবেন তা ভাবতে ভাবতেই তাঁর এত সময় চলে গেল। সন্ধ্যার পর থেকেই প্রতি মুহূর্ত তিনি এমন উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন, এই বুঝি হালুম শব্দে বাঘ তাঁর সামনে লাফ দিয়ে পড়ল। লেখকের আলস্য লেখক নিজেই বলেছেন, 'আলস্যের সঙ্গে আমি কোনোদিনই পারি না। চেষ্টা করলে হয়তো বা কায়ক্লেশে পারা যায়, কিন্তু পেরে লাভ?’ লেখকের কর্মতৎপরতা—রাঁচির দিকে এগিয়ে যাওয়া লরিটিকে দাঁড় করানোর জন্য লেখক হাতের টর্চ নিয়ে অনেক কসরত করেছেন। পরবর্তী পর্বে বেবি অস্টিন গাড়িটির কাছেও কোনো সদর্থক সাড়া না পেয়ে তিনি তাড়াতাড়ি নিজেই গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে বসে গেলেন। তারপর যখন লেভেল ক্রসিংয়ের মুখে মোটরগাড়িটি এসে পড়ল তখন দ্রুত গতিতে আসা ট্রেনের সামনে পড়ার আশঙ্কায় মুহূর্তের মধ্যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
৭.৮ শেষ পর্যন্ত লেখক সেই ‘বেবি অস্টিন’ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন কেন? এরপরে তিনি কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন?
উত্তর : লেখক বেবি অস্টিন মোটরে কোনোরকমে দুরুদুরু বক্ষে বসে যখন একটা লেভেল ক্রসিংয়ের সম্মুখে এসে পড়লেন তখন বুঝতে পারলেন হুশ হুশ শব্দে ট্রেন ছুটে আসছে। মুহূর্তে প্রাণটা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। তাই তিনি বেবি অস্টিন থেকে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে এলেন। তিনি বেরিয়ে আসতেই গাড়িটিও থেমে গেল। আর মুহূর্তে ট্রেনটিও
গর্জন করে বেরিয়ে গেল। এরপর তিনি যে পরিস্থিতিতে পড়লেন তাতে গাড়িটি বিনা ড্রাইভারে চলার কারণ তাঁর কাছে উদ্ঘাটিত হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পরে লেখক সম্বিত ফিরে পেতেই দেখলেন চশমাপরা লোক বেরিয়ে এলো মোটরগাড়ির পিছন থেকে। লোকটা লেখককে বললেন, ‘দয়া করে যদি আমার গাড়িটা একটু ঠেলে দ্যান মশাই'। গাড়িটি আট মাইল
আগেই বিকল হয়েছিল। লোকটি অর্থাৎ ড্রাইভার নিজেই গাড়িটি এতদূর টেনে নিয়ে এসেছেন। তাই ইঞ্জিনও চলেনি।
৮. তোমার কোনো গা-ছমছমে অভিজ্ঞতার কথা বন্ধুর কাছে একটি চিঠিতে লেখো।
হরিহরপুর, বালিচক
পশ্চিম মেদিনীপুর
১৬.৮.২০২২
প্রিয় নির্মল,
আশাকরি তুই ও তোদের বাড়ির সকলে খুব ভালো আছিস। আজ তোকে আমি আমার জীবনের এক বেশ গা-ছমছমে সত্য ঘটনা জানিয়ে চিঠি দিচ্ছি। মাস খানেক আগে আমার দাদামশায়ের শরীর খারাপ বলে মা আমাকে মামার বাড়ি পঠিয়েছিল। সকালের ট্রেনে গিয়েছি। ট্রেনে নেমে খানিকটা গ্রামের বুকে হেঁটে যেতে হয়। যথারীতি দাদামশাইকে একটু ভালো দেখে বাড়ি ফেরার সময় ওই গ্রামের পথের পাশে এক ময়দানে ফুটবল খেলা দেখেছি। এই করে বিকেল গড়িয়ে গেছে। যখন ট্রেন থেকে নামলাম তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত একটু হয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে আমাদেরও গ্রামের পথে প্রায় আধমাইল হাঁটতে হয়। বর্ষাকাল, অন্ধকার। মেঠো রাস্তা। রাস্তায় সামান্য কাদা। বেসামাল হলে আছাড় খেতে পারি। হাতের মোবাইলটা বেজে উঠল। ধরলাম। রং নাম্বার। এরপর আবার রিং হলো। আবার রং নাম্বার হল। এইভাবে তিন বারও হল। তিনটি আলাদা নাম্বার। এদিকে বর্ষার জল পেয়ে জমির ধারে ব্যাংগুলো সমানে কোঁ কোঁ করে যাচ্ছে। আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম।
সামনেই শ্মশান। তিন দিন আগে কেদার বুড়ো মারা গেছে। এখনও হয়তো তার চিতার কালো কাঠ পড়ে আছে।
হঠাৎ পিছনে কারও শব্দ মনে হল। মোবাইলে আলো জ্বালিয়ে দেখি একটা কালো কুকুর। আর ঠিক তারপরেই মুখ ফিরিয়ে জোরে ধাক্কা লাগল একজনের সঙ্গে। আঁক্ করে আমিও পড়ে গেলাম। সেও পড়ে গেল একটা বিচ্ছিরি শব্দ করে। আমার তখন ভয়ে গা থরথর করছে। মোবাইল ছিটকে পড়েছে হাত থেকে। আমি খুব ভীতু নই, কিন্তু গপ্পো শুনতে শুনতে আর পড়তে পড়তে কার না ভয় জাগে বল্? কয়েক মুহূর্ত পরে শুনতে পেলাম অপর পক্ষের নাকি সুরে গোনানি। বাঁবাঁৱেঁ গেঁছিরেঁ। আমি উঠেই অন্ধকারে কোনোরকমে টলমল দৌড়োতে শুরু করলাম। একটু পরেই আবার যার মুখোমুখি পড়লাম সে হল হারাণ মাঝি। হাতে তার টর্চের আলো। সে বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করল অন্ধকারে এমন দৌড়োচ্ছিস কেন? কী উত্তর দেব আমি? আমার উত্তরের আর অপেক্ষা না করে সে আবার প্রশ্ন করল, আমাদের খাঁদি বুড়িকে দেখলি? খাঁদি বুড়ি হল হারান বুড়োর বউ। ওরা জেলে। দুদিন অন্তর বুড়ো বুড়িতে ঝগড়া লাগে। আবার ভাব হয়। ছোটোবেলা থেকেই বুড়ির খাঁদা নাক। নাকিসুরে কথা বলে। আমি কয়েক মুহূর্ত পরে ধাতস্থ হয়ে বললাম, তোমার বুড়ির সঙ্গেই আমার ধাক্কা লেগেছে। চলো নিয়ে যাচ্ছি। হারানের টর্চের আলোয় খানিকটা ফিরে এসে দেখি বুড়িটা সারা গায়ে কাদা মেখে বীভৎস মূর্তিতে সবেমাত্র গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। তার দুর্বল শরীর। সামনেই পড়ে আছে আমার মোবাইলটা। হারাণ বউয়ের হাত ধরে বলল, কেমন ধাক্কা লেগেছে রে খাঁদি? নাকিসুরে খাঁদি বলল, কেঁদার কুঁড়োটা ভূঁত হঁয়ে ধাক্কা মেরে দিয়েছে।' আমার জীবনের এই ঘটনা আমি কোনোদিন ভুলব না। তুই চিঠি দিস। ভালোবাসা নিস।
ইতি—নির্মল চক্রবর্তীগোঁসাইগঞ্জ, পশ্চিম মেদিনীপুরতোর একান্তইবরুণ
❒ বাঘ কবিতাটির বিষয়বস্তু :
বাঘ একটি স্থলজ চতুষ্পদ প্রাণী। পাখি একটি অণ্ডজ দুই-পা বিশিষ্ট উডুক্কু প্রাণী। বাঘের পক্ষে পাখি ধরা অসম্ভব। কারণ, ধরতে গেলেই সে উড়ে যায়। আবার, জলজ প্রাণী হিসেবে জলে নেমে কাঁকড়া ধরাও তার পক্ষে অসম্ভব। ফলে ছোটো বাঘের পক্ষে খাদ্যের অভাবে বেঁচে থাকা অসম্ভব। সেই কারণে পাখিরালয় থেকে কীভাবে একটি ছোটো হলুদ বাঘের সজনেখালিতে বাঘের আলয়ে আসা সম্ভব হয়েছিল, সেই নিয়ে ‘বাঘ’ কবিতাটি অত্যন্ত রসসমৃদ্ধ হয়েছে। লেখিকা নবনীতা দেবসেন বাঘ নিয়ে কবিতাটি লিখেছেন। বাঘটির দেহের রং হলুদ। তার বাবা-মা এবং সে নিজে পাখিদের আস্তানায় থাকে। সেখানে সবাই পাখি। অন্য কোনো জন্তু যেমন ছাগল, ভেড়া, গোরু নেই। তার মনে খুবই রাগ। কারণ সেখানে কোনো জন্তুই থাকতে পারে না। বাঘছানা পাখি ধরতে পারে না। খিদে পেলে খাবার কিছুই নেই। কাঁকড়া ধরতে গেলেও সে দাঁড়া দিয়ে চিমটে ধরে। ছোট্ট বাঘের হলুদ বাবা এই দেখে তার বড়ো নখ দিয়ে কাঁকড়ার দাঁড়া কেটে দেয়। খিদেয় তখন কাদায় মাছ ধরতে গেলে বাঘ জননী ভোঁদড় নয় বলে তাকে বারণ করে। শেষে ছানার দুঃখে তার বাবা-মা দুজনেই পাখি দের আস্তানা ছেড়ে সজনেখালিতে ব্যাঘ্রকল্পে বাস করতে চলে যায়।
বাঘ
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ নবনীতা দেবসেনের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম কী?
উত্তর : নবনীতা দেবসেনের প্রথম প্রকাশিত বইয়ের নাম ‘প্ৰথম প্ৰত্যয়’।
১.২ তাঁর লেখা একটি ভ্রমণকাহিনির নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা একটি ভ্রমণকাহিনির নাম ‘ট্রাকবাহনে ম্যাকমোহনে'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ পাখিরালয়ের বাসায় কী পাওয়া যেত না?
উত্তর : পাখিরালয়ের বাসায় ছাগল, ভেড়া, হরিণ পাওয়া যেত না।
২.২ ছোট্ট বাঘ তার খিদে মেটানোর জন্য প্রথমে কী ধরতে গিয়েছিল?
উত্তর : ছোট্ট বাঘ তার খিদে মেটানোর জন্য প্রথমে পাখি ধরতে গিয়েছিল।
২.৩ ছোট্ট বাঘের বাবা-মা বাসা বদলে কোথায় গিয়েছিল?
উত্তর : ছোট্ট বাঘের বাবা-মা বাসা বদলে সজনেখোলায় গিয়েছিল।
২.৪ সুন্দরবনের বাঘ কী নামে পরিচিত?
উত্তর : সুন্দরবনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার' নামে পরিচিত।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষেপে উত্তর দাও :
৩.১ ‘ভদ্র বাঘে হেথায় বাঁধে ডেরা’—বাঘছানার এমন মনে হয়েছিল কেন?
উত্তর : শিক্ষিত বাঘ বলতে ভদ্র শব্দটি বোঝানো হয়েছে। তারা কখনোই পাখিরালয়ে থাকে না। কারণ তারা জানে পাখিরালয়ে শুধু পাখি থাকে। সেখানে খাদ্যাভাব থেকেই যায়। তাই বাঘছানার মনে হচ্ছে ‘ভদ্র বাঘে’ কখনও পাখিরালয়ে ডেরা বাঁধে না।
৩.২ ছোট্ট বাঘ পাখির ছানা ধরতে পারেনি কেন?
উত্তর : ছোট্ট হলুদ বাঘ যতই পাখির ছানা ধরার চেষ্টা কুরক না কেন পাখির ছানা সর্বদাই উড়ে যায়। যেহেতু বাঘ উড়তে পারে না তাই তার পক্ষে পাখি ধরা অসম্ভব।
৩.৩ বাঘের ছানা গর্তে থাবা দিয়েই কেঁদে উঠেছিল কেন?
উত্তর : খিদের জ্বালায় বাঘছানা যখন পাখি ধরতে না পেরে কাঁকড়া ধরতে যায়, তখন গর্তের জলে যে কাঁকড়া ছিল সেখানে তার ছোট্ট থাবা বসাতেই সেই কাঁকড়া তার দাঁড়া দিয়ে বাঘের পায়ে চিমটে ধরে। বাঘের ছানা তখন কেঁদে ওঠে।
৩.৪ বাঘছানাকে বাবা কীভাবে কাঁকড়ার হাত থেকে রক্ষা করল ?
উত্তর : বাঘছানার কান্না শুনে বাঘের হলুদ বাবা কাঁকড়া ছাড়াতে যায়। সে তখন তার বড়ো নখের থাবার এক থাবড়ায় কাঁকড়ার দাঁড়া কেটে দেয়। সেইভাবে তার বাবা কাঁকড়ার হাত থেকে বাঘছানাকে রক্ষা করে।
৩.৫ বাঘজননী লজ্জা পেয়েছিল কেন?
উত্তর : বাঘছানা খিদের জ্বালায় কোন্টা খাদ্য কোন্টা অখাদ্য না জেনেই চারামাছ ধরতে যায়, ওগুলো ভোঁদড় খেতে পারে। বাঘ পারে না। বাঘজননী এটা দেখে বলে বাঘে মাছ খায় না। এই কারণেই বাঘজননী লজ্জা পেয়েছিল।
৪. উদাহরণ দেখে নীচের ছকটি পূরণ করো :
উত্তর : ব্যাঘ্র > বাঘ। মৎস্য > মাছ। বৎস > বাছা।
৫. সন্ধি করো :
উত্তর : পাখির + আলয় = পাখিরালয় । কাঁদ্ +ন = কান্না
৬. সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থ লেখো :
- বন— অরণ্য।
- বোন—ভগিনী।
- পাড়ে—নদীর তীরে।
- পারে—কাজে সমর্থ হওয়া।
- বাড়ি—ঘর, গৃহ।
- বারি— বৃষ্টির জল।
৭. নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য ও কোনটি বিশেষণ খুঁজে বার করে আলাদা দুটি স্তম্ভে লেখো। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো :
মন, শরীর, সব্বোনেশে, ভদ্র, এক, পেট, রাগ।
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
মন | মানসিক |
শরীর | শরীর |
একক | এক |
ভদ্রতা | ভদ্র |
সব্বোনাশ | সব্বোনেশে |
পেট | পেটুক |
রাগ | রাগী |
৮. নিম্নরেখ পদগুলির বিভক্তি অংশ আলাদা করে দেখাও :
৮.১ ভদ্র বাঘে হেথায় বাঁধে ডেরা।
উত্তর : কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৮.২ পাখির সঙ্গে পেরে উঠবে নাকি?
উত্তর : সম্বন্ধ পদের ‘র’ বিভক্তি।
৮.৩ ছোট্ট বাঘের মস্ত হলুদ বাবা।
উত্তর : সম্বন্ধ ‘এর’ বিভক্তি।
৯. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ ভাগ করে দেখাও :
৯.১ তার মনে মনে জমেছে কেবল রাগ।
উত্তর : তার (উদ্দেশ্য)। মনে মনে জমেছে কেবল রাগ (বিধেয়) ।
৯.২ বাঘছানা কি ধরতে পারে পাখি?
উত্তর : বাঘছানা (উদ্দেশ্য)। কি ধরতে পারে পাখি? (বিধেয়) ।
৯.৩ লালঠেঙো সব কাঁকড়া বেড়ায় হেঁটে।
উত্তর : লালঠেঙো সব কাঁকড়া (উদ্দেশ্য)। বেড়ায় হেঁটে (বিধেয়)।
১০. নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
১০.১ কবিতাটিতে দেখলাম কাঁকড়ার দাঁড়া থাকে, তোমার দেখা আর যে প্রাণীর ছাড়া আছে তার সম্পর্কে দু-একটি বাক্য লেখো।
উত্তর : কাঁকড়ার দাঁড়া থাকে। আমার দেখা প্রাণীদের মধ্যে পিপীলিকার পা গুলি দাঁড়ার কাজ করে। এখানে দু-একটি
বাক্যে পিপীলিকা সম্বন্ধে বলা হল পিপীলিকা—পিপীলিকা ছোট্ট পতঙ্গ বিশেষ। এরা সবসময় দলবদ্ধ ভাবে থাকে। গ্রীষ্মকালে এরা বেশি পরিশ্রম করে শীতকালের খাবার সংগ্রহ করে রাখে। শীতকালে এরা মাটির নীচের বসবাস করে। এরা সাধারণত মরা পোকা-মাকড় খায়। এ ছাড়া বিস্কুট, চিনি ইত্যাদি খাবারের অংশ এরা মুখ করে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যায়। তবে এই সব কাজ এরা দলবদ্ধ ভাবে করে।
১০.২ ছোট্ট বাঘ ও তার বাবা মা পাখিরালয়ে খাবারের অভাব থাকার ফলেখানি চলে গিয়েছিল। সারা পৃথিবীতেই আজ মানুষ বন কেটে ফেলায়, নির্বিচারে প্রাণীদের মেরে ফেলায় শুধু বাঘ নয় সমস্ত প্রাণীদেরই খাবারের অভাব তৈরি হচ্ছে। কীভাবে এগুলো বন্ধ করে সমস্ত প্রাণীদের ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, এ সম্পর্কে তোমার মতামত জানিয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো।
উত্তর : আমরা জানি যে, মানুষ নিশ্বাসের সময় যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে গাছপালা তা শোধন করে অক্সিজেন দিয়ে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এই গাছপালাকে আমরা বর্তমানে অবহেলা করছি। প্রয়োজনে অরণ্য কেটে ফেলছি কিন্তু অরণ্য সৃজন করছি না। ভূমিখণ্ডের তুলনায় ৩৩ শতাংশ উদ্ভিদ থাকা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ১৯ শতাংশেরও কম উদ্ভিদ রয়েছে। ফলে প্রয়োজন মতো বৃষ্টিপাত হচ্ছে না এবং প্রাণীদেরও খাবারে অভাব দেখা দিচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানে আমাদের প্রত্যেকের এই মুহূর্তে উচিত বৃক্ষরোপণ, সেই সঙ্গে বৃক্ষ সংরক্ষণ করা, যাতে প্রাণীদের ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
❒ বঙ্গ আমার! জননী আমার! কবিতাটির বিষয়বস্তু :
কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বঙ্গসাহিত্যে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। কবির প্রতিটি রচনায় দেশমাতৃকার প্রতি সুগভীর আকর্ষণ আমরা লক্ষ করে থাকি। আলোচ্য কবিতায় মাতৃভূমিকে সরাসরি ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার!' সম্বোধনের মধ্যে আমরা মাতৃভূমির প্রতি কবির অন্তরের টানই উপলব্ধি করি। সমস্ত কবিতাটিতে মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর অনুভূতি সহজ ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে। পরাধীন মাতৃভূমিকে উদ্দেশ্য করে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কবিতাটি রচনা করেছেন। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বন্দিনী মাতৃভূমির দুর্দশায় কবি হৃদয় ব্যথিত হয়েছে এবং কবি দেশমাতার মুক্তি কামনা করে নিজের জীবন মাতৃভূমির চরণে সমর্পণ করতে সদা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন। পরাধীন মাতৃভূমির শুষ্ক নয়ন, রুক্ষ কেশ, ধুলায় আসন, মলিন বস্ত্র দেখে কবির মন দুঃখ বেদনায় বিষাদময়।
তবে কবি মনে করেন, এই পরাধীনতা ক্ষণিকের যন্ত্রণা। তিরিশ কোটি বঙ্গ সন্তানের মুখে যখন উচ্চৈঃস্বরে ‘আমার দেশ’ ধ্বনি উচ্চারিত হয় তখনই দেশমাতার মধ্যে স্বাধীন সত্তার রূপটি ফুটে ওঠে। এই বঙ্গমায়ের কোলেই জন্মগ্রহণ করেছেন গৌতম বুদ্ধ, যাঁর মহিমা সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। মহান রাজা অশোক এই বঙ্গমায়েরই সন্তান, যাঁর কীর্তি গান্ধার থেকে শুরু হয়ে জলধি পর্যন্ত বিস্তৃত। কবি এই বঙ্গজননীর কীর্তিমান সন্তানদের পূর্ব গৌরবের সমস্ত কথা স্মরণ করেছেন। একদা এই বঙ্গসন্তানরা শ্রীলঙ্কা জয় করেছিল, বঙ্গসেনা নৌবাহিনী গঠন করে সমুদ্রপথে ভারত ভ্রমণ করেছিল, তারা তিব্বত, নেপাল, চিন ইত্যাদি বহু দেশে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল। আজ তাদেরই বঙ্গমাতার এই অবমাননা, দুর্দশা কবির কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছে। বঙ্গজননীর সম্মান নির্মমভাবে দমন করার জন্য চক্রান্তের অবধি নেই। কবি মনে করেছেন দেশমাতৃকার এই অবমাননা, লাঞ্ছনা, দারিদ্রতা ঘুচে যাবেই। দেশমাতৃকাকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালাবে তাঁরই সন্তানরা, ঘুচে যাবে এই পরাধীনতার শৃঙ্খল, তারা লুণ্ঠন করে আনবে উজ্জ্বল স্বাধীনতাকে। বঙ্গমাতাকে এই ভয়ংকর অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখাবে এই বঙ্গেরই সন্তানরা।
বঙ্গ আমার জননী আমার
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম আলেখ্য, ত্রিবেণী।
১.২ কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর কী ছিল?
উত্তর : কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কবিতার মূল সুর স্বদেশপ্রেম।
২. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্য রূপান্তরিত করো :
বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|
মলিনতা | মলিন |
মাধুর্য | মধুর |
আসন | |
দৈন্য | দীন |
প্ৰণয় | প্ৰণত |
৩. নীচের কতকগুলি উপসর্গযুক্ত শব্দ দেওয়া হল। শব্দগুলি থেকে উপসর্গ আলাদা করে দেখাও :
উপনিবেশ— উপ + নিবেশ।
অশোক—অ + শোক।
আলোক— অ + লোক।
প্ৰণত—প্র + ণত।
৪. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ ভাগ করে দেখাও :
৪.১ কেন গো মা তোর মলিন বেশ?
৪.২ অশোক যাঁহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হতে জলধি শেষ।
৪.৩ একদা যাহার বিজয় সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়।
৪.৪ ন্যায়ের বিধান দিল রঘুমণি।
৪.৫ নবীন গরিমা ভাতিবে আবার ললাটে তোর।
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|
৪.১ কেন গো মা তোর | মলিন বেশ? |
৪.২ অশোক | যাঁহার কীর্তি ছাইল গান্ধার হতে জলধি শেষ। |
৪.৩ যাহার বিজয় সেনানী | একদা হেলায় লঙ্কা করিল জয়। |
৪.৪ রঘুমণি | ন্যায়ের বিধান দিল। |
৪.৫ তোর নবীন গরিমা | ভাতিবে আবার ললাটে। |
৫. নীচের বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দগুলি নির্দেশমতো লেখো :
(উদাহরণ : মা + নিমিত্ত + একবচন = মায়ের জন্য)
৫.১ আমি + সম্বন্ধপদ + বহুবচন = আমাদের
৫.২ আমি + কর্তৃকারক + বহুবচন = আমরা
৫.৩ তুই + সম্বন্ধপদ + একবচন = তোর
৫.৪ যিনি + সম্বন্ধপদ + একবচন = যাঁর
৬. একইরকম অর্থযুক্ত শব্দ কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :
গৌরব, সুর, মুক্তি, নতুন, জলধি।
উত্তর : গৌরব—কীর্তি, সুর—তান, মুক্তি— মোক্ষ, নতুন — নবীন, জলধি—সাগর।
৭। নিম্নলিখিত প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিটি স্থান সম্পর্কে দু-চারটি বাক্য লেখো :
বুদ্ধ, রঘুমণি, নিমাই, চণ্ডীদাস
- বুদ্ধ—খ্রিস্টপূর্ব শতাব্দীতে কপিলাবস্তুর নিকট লুম্বিনী উদ্যানে গৌতমের জন্ম হয়। নেপালের তরাই অঞ্চলে কপিলাবস্তুর শাক্য জাতির নায়ক শুদ্ধোধন ছিলেন গৌতমের পিতা এবং মাতা ছিলেন মায়াদেবী। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ। প্রকৃত জ্ঞান লাভ করার উদ্দেশ্যে মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে গৌতম সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি বহু শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন এবং নানা তীর্থস্থান দর্শন করেন। তিনি নৈরঞ্জনা নদীর জলে স্নান করে বর্তমান বুদ্ধগয়ার এক বিরাট অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে ধ্যান করতে বসলেন। নব্বই দিন পর এখানেই তিনি পরম ‘বোধি’ অৰ্থাৎ দিবজ্ঞান লাভ করেন এবং তখন থেকেই তাঁর নাম ‘বুদ্ধ’ অর্থাৎ জ্ঞানী। দিব্য জ্ঞান লাভ করার পর তিনি সারনাথে প্রথম বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন এবং মানুষকে মুক্তির পথ দেখান। অবশেষে আশি বছর বয়সে গোরক্ষপুর জেলার অন্তর্গত কুশীনগরে তিনি দেহত্যাগ করেন।
- রঘুমণি—ন্যায় শিরোমণি রঘুনন্দনকে বোঝানো হয়েছে। গঙ্গাবক্ষে শ্রীচৈতন্যদেবকে তিনি নিজকৃত ন্যায়শাস্ত্র শুনিয়েছিলেন। শ্রীচৈতন্যদেব নিজের লেখা ন্যায়শাস্ত্র গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে ভক্ত রঘুমণিকে কৃপা করেছিলেন। সেই থেকেই রঘুমণির লেখা ন্যায়শাস্ত্র জগতে বিখ্যাত হয়।
- নিমাই—বাংলার জাতীয় জীবনে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব এক যুগান্তকারী ঐতিহাসিক ঘটনা। ছেলেবেলার নাম নিমাই। নদিয়া জেলার নবদ্বীপ অঞ্চলে এঁর জন্ম। পিতা জগন্নাথ মিশ্র, মাতা শচীদেবী। বাঙালির সমাজজীবন ও ধর্মদর্শনের ওপর তাঁর প্রভাব খুবই ব্যাপক ও সুদূরবিস্তারী। এই মহাপুরুষ বৈষুবীয় প্রেমধর্মের আদর্শ প্রচার করেন। চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষুব মূলকথা রাগানুগ ভক্তি এবং ভক্ত ভগবানের সঙ্গে মধুর প্রেমের সম্পর্ক। তাই চৈতন্যের ধর্ম প্রেম ও ভক্তির বিশিষ্ট এক দর্শন।
- চণ্ডীদাস—চৈতন্যপূর্ব যুগে চণ্ডীদাস একজন শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। বাংলাভাষায় তিনি প্রথম পদাবলি সাহিত্য রচনা করেন। বৈষুব পদাবলি সাহিত্যে এখনও চণ্ডীদাসের স্থান অতি উচ্চ। অল্প কথায়, সহজ ভাষায় বৈষুবীয় প্রেমের নিগূঢ় ভাবকে তিনি অপূর্ব কাব্যসংগীতে ফুটিয়ে তুলেছেন। জনশ্রুতি অনুসারে তিনি বীরভূম জেলার নান্নুর গ্রামে বাস করতেন। জাতিতে ব্রাহ্মণ এবং চণ্ডীর উপাসক হয়েও তিনি সহজমার্গের সাধনায় ব্রতী হন। তিনি রামী নামের জনৈকা রজক কন্যাকে সাধনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন। রজকিনি রামীর কথা কোনো পদে পাওয়া যায়।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৮.১ কবি দেশকে কী কী নামে সম্বোধন করেছেন?
উত্তর : কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় দেশকে মা, বঙ্গ, জননী, ধাত্রী ইত্যাদি নামে সম্বোধন করেছেন।
৮.২ ‘কেন গো মা তোর মলিন বেশ’—‘মা’ বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? তাকে ‘মা’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : ‘মা’ বলতে এখানে মাতৃভূমি ভারতকে কবি বুঝিয়েছেন। কবির ভাষায় ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার!’ বঙ্গভূমি অর্থাৎ নিজের জন্মভূমি কবির কাছে মা। গর্ভধারিণী মায়ের থেকে জন্মভূমি মা তাঁর কাছে কোনো অংশে ছোটো নন।
৮.৩ ‘মা’-এর বেশ মলিন বেশ ও কেশ রুক্ষ কেন?
উত্তর : বিদেশে শক্তির অধীনে ভারতমাতা আবদ্ধ। সেইকারণে পরাধীনতার শৃঙ্খলে জর্জরিত মাতৃভূমির বেশ মলিন, কেশ রুক্ষ বলে কবি বর্ণনা করেছেন।
৮.৪. অশোক কোথায় কোথায় তাঁর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন?
উত্তর : ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অশোক মগধের সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিছুকাল পরে তিনি কলিঙ্গ রাজ্য জয় করেন কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ও কষ্ট দেখে তাঁর হৃদয় করুণায় বিগলিত হয় এবং রাজ্য জয় নীতি ছেড়ে অহিংসা ও মৈত্রীর দ্বারা মানুষের হৃদয় জয় করার আদর্শ গ্রহণ করেন। সম্রাট অশোক এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন এবং ভগবান বুদ্ধের বাণী তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁরই অক্লান্ত চেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম বিশ্বধর্মে পরিণত হয়েছিল। তিনি শুধু নিজের রাজ্যই নয়, ভারতের সর্বত্র এবং ভারতের বাইরে ব্রয়দেশ, পশ্চিম এশিয়া, মিশর, গ্রিস প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।
তাঁর পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সঙ্ঘমিত্রাকে তিনি সিংহলে বুদ্ধের বাণী প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন। ধর্ম ও সদাচারের আদর্শ প্রচারে এবং প্রজাহিতৈষণা ও মানবকল্যাণের মহৎ দৃষ্টান্তে অশোকের রাজত্বকাল মহিমায় প্রদীপ্ত। বিপুল সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন সংযমী। দেশে ও বিদেশে বুদ্ধের বাণী প্রচারের প্রচেষ্টা এবং উদারতা, সহিষ্ণুতা তাঁর ধর্মনীতিকে মহিমান্বিত করেছে।
৮.৫ ‘অর্ধ-জগৎ ভক্তি-প্ৰণত চরণে যাঁর’—‘অর্ধ-জগৎ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কার চরণে তা প্রণত হয়েছে।
উত্তর : ‘জগৎ’ শব্দটির অর্থ বিশ্ব। ‘অর্ধ-জগৎ’ বলতে কবি এখানে সিংহল, কাম্বোডিয়া, নেপাল, চিন প্রভৃতি দেশ
ও সেখানকার অধিবাসীকে বুঝিয়েছেন। ভগবান বুদ্ধের চরণে তারা প্রণত হয়েছে।
৮.৬ ‘যুদ্ধ করিল প্রতাপাদিত্য'—প্রতাপাদিত্য কে ছিলেন? তিনি কাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন?
উত্তর : বারোভূঁইয়ার অন্যতম প্রসিদ্ধ ভুঁইয়া ছিলেন প্রতাপাদিত্য। তাঁর পিতা ছিলেন বিক্রমাদিত্য রায়। যশোহরের সুন্দরবন অঞ্চলে এখনকার বাংলাদেশ তাঁর রাজ্য ছিল। তিনি অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ছিলেন। প্রতাপাদিত্য মুঘল সম্রাটকে রাজকর দিতে অস্বীকার করলে সম্রাট আকবরের আদেশে বাংলার সুবাদার তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসেন। প্রতাপাদিত্য মুঘল সৈন্যদের পরাস্ত করেন। পরে আকবর পুত্র জাহাঙ্গীর প্রতাপাদিত্যকে দমন করার জন্য সেনাপতি মানসিংহকে পাঠান। যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজিত ও বন্দি হন। বন্দি অবস্থায় দিল্লির পথে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
৮.৭ ‘ধন্য আমরা’—‘আমরা’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? আমরা কখন নিজেদের ধন্য মনে করতে পারি?
উত্তর : ‘আমরা’ বলতে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বঙ্গদেশের তথা ভারতবর্ষের সন্তানদের বুঝিয়েছেন। বঙ্গদেশ কবির মাতৃভূমি, প্রত্যেক মানুষের কাছে নিজের মাতৃভূমি শ্রেষ্ঠ। বঙ্গদেশ প্রাচীন ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ এই বঙ্গদেশে একদিকে যেমন অশোক, প্রতাপাদিত্য জন্মগ্রহণ করেছেন, অপরদিকে চণ্ডীদাস, নিমাই-এর মতো ভক্তরা এদেশে জন্মগ্রহণ করছেন। তাই কবি বঙ্গদেশে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
৮.৮ নবীন গরিমা কীভাবে ললাটে ফুটে উঠবে?
উত্তর : কবির কাছে ভারতবর্ষ মাতৃস্বরূপা। সৌন্দর্য, স্নেহ, মমতায় ভারত হল অতুলনীয়। এমন মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, ধনসম্পদ ও শস্যসম্ভার পৃথিবীর আর কোনো দেশে দেখা যায় না। ভারতের অতীত ছিল গৌরবময়। বর্তমানে কবির সময়ে, ভারতমাতা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তাই তাঁর রূপ মলিন হয়েছে। কবির ধারণা ভারতমাতার বীর সন্তানদের সহায়তায় শীঘ্রই স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশমাতার নবীন গরিমা ললাটে ফুটে উঠবে।
৮.৯ আমরা কীভাবে বঙ্গজননীর দুঃখ, দৈন্য, লজ্জা দূর করতে পারি?
উত্তর : বঙ্গজননী প্রাচীন ঐতিহ্য পরিপূর্ণা হয়েও বর্তমানে পরাধীন। তাই তাঁর অসহায় দৈন্য রূপ প্রকাশিত হয়েছে যা দেখে কবি আন্তরিকভাবে ব্যথিত। পরাধীন ভারতবর্ষের অবমাননা ভারতের সন্তানরা মেনে নিতে পারেনি। তারা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। প্রয়োজনে কেউ কেউ প্রাণও বিসর্জন দিয়েছে। ভারতের এই পরাধীনতা সব ভারবতবাসীর কাছে লজ্জাজনক। তাই ভারতের সন্তান অর্থাৎ ভারতবাসী ভারতের পরাধীনতার কালিমা দূর করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
৯.১ ‘যদিও মা তোর দিব্য আলোকে ঘিরে আছে আজ বাঁধার ঘোর'—কবির কেন মনে হয়েছে যে বঙ্গ জননীকে আঁধার ঘিরে আছে?
উত্তর : ভারতবর্ষ ব্রিটেনের অধীনস্থ থাকায় এই দেশ পরাধীন। কবি কল্পনা করেছেন, পরাধীন দেশমাতা মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। এই জ্বালা থেকে দেশমাতা ভারতবর্ষ মুক্তি চায়। ভারতবাসী দেশমাতার মুক্তির জন্য প্রাণপণে লড়াই করছে। দেশমাতার সন্তানেরা দেশমাতার মলিন বেশ, রুক্ষ কেশ সহ্য করতে পারছে না। পরাধীনতার শৃঙ্খলের আবদ্ধ মায়ের দুর্দশা দেখে কবির মনে হয়েছে, দেশমাতার সৌন্দর্যের দিব্য আলোক আজ অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়েছে।
৯.২ এই বঙ্গভূমি তোমার কাছে কেন প্রিয় সে সম্পর্কে জানিয়ে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো।
১৯/৪ বি, বিডন স্ট্রিট
কলকাতা-৭০০০০৬
4.5.2022
প্রিয় অনিল,
বঙ্গভূমি আমার কাছে কেন প্রিয় এ সম্বন্ধে তুমি জানতে চেয়েছে। এই বঙ্গভূমি আমাদের মাতৃভূমি। প্রত্যেক মানুষের কাছে মাতৃভূমি জন্মদায়িনী মায়ের চেয়ে কোনো অংশে কম প্রিয় হতে পারে না। এই বঙ্গভূমি প্রাচীন ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। এদেশে অনেকে জ্ঞানী-গুণী মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে, যাঁদের কীর্তিতে দেশ গৌরবান্বিত। এদেশের উন্নতি শুনলে যেমন আমরা আনন্দ পাই, আবার দুঃখজনক ঘটনার কথা শুনলেও সমানভাবে ব্যথিত হই। তবে দেশের বাইরে গিয়ে কিছুদিন থেকে আমি পরিষ্কার অনুভব করেছি যে, বঙ্গভূমি আমার কাছে কতখানি প্রিয়। এই বঙ্গভূমি আমার গর্ব আমার প্রেরণা। বঙ্গভূমি সম্পর্কে নিজের মতামত জানাতে পেরে আমি আজ খুব গর্ব অনুভব করছি। তুমি আমার ভালোবাসা জানবে। চিঠি পড়ে উত্তর দেবে।
ইতি— তোমার বন্ধু সন্দীপ
অনিল রায়
বঙ্কিমচন্দ্র অ্যাভিনিউ
বি-জোন, দুর্গাপুর—৫, পশ্চিম বর্ধমান
৯.৩ চিন, জাপান, তিব্বতে বাঙালি সত্যি কি কোনোদিন উপনিবেশ তৈরি করেছিল? শিক্ষক/শিক্ষিকার কাছ থেকে এ বিষয়ে জেনে নিয়ে লেখো।
উত্তর : সাম্রাজ্যবাদ ও রাষ্ট্রীয় ঐক্যের যুগে রাজনৈতিক ঐক্য বিস্তারের প্রেক্ষিতে রাজারা পাশের দেশগুলো যথা চিন, জাপান এবং তিব্বতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছায় সেখানে বিভিন্ন সভা ও সমিতির মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, অবশ্য সাময়িক উপনিবেশ গঠন করেছিল। অশোকের আমলে যেমন চিন ও তিব্বতের সঙ্গে ঐক্য স্থাপন করতে দেখা যায় তেমন পণ্ডিত শীলভদ্রের সময়ে তিব্বতের সঙ্গেও এইপ্রকার ধর্মবিজয় ও শিক্ষার প্রসার লক্ষ করা যায়। অতীশ দীপংকর এই কারণে তিব্বতে গিয়েছিলেন মূলত ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মকে প্রসারিত করতেই চিন, জাপান ও তিব্বতে বাঙালি সংস্কৃতির ধারা গড়ে উঠেছিল এবং সেইকারণে উপনিবেশ সাময়িক ভাবে গড়ে উঠেছিল।
৯.৪ পরাধীন ভারতের মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এই কবিতায় দেশের প্রতি যে ভাবাবেগ প্রকাশিত হয়েছে তা তোমার নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : কবি দেশমাতাকে মা, দেবী, জননী, ধাত্রী বলে সম্বোধন করেছেন। ভারতমাতার বেশ মলিন, কেশ রুক্ষ, তাঁর আসন আজ ধূলায় লুণ্ঠিত। ভারতবর্ষ আজ বিদেশি শক্তির হাতে পদানত। পরাধীনতার গ্লানিতে সে আজ জর্জরিত কিন্তু প্রাচীন ভারতবর্ষের ছিল এক মহান ঐতিহ্য। বুদ্ধ, চৈতন্য, অশোকের মতো মহাপুরুষ এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন। ভারতবর্ষের সন্তানেরা একদিন চিন, জাপানে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই ঐতিহ্য নেই। এই দেশেই চৈতন্য, রঘুমণি, চণ্ডীদাস, জয়দেব, শান্ত রক্ষিত জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গদেশের সন্তান প্রতাপাদিত্য মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হন। যে দেশে বীর, মহাপুরুষেরা জন্মেছেন, সেইদেশে জন্মগ্রহণ করে কবি ধন্য।
❒ শহিদ যতীন্দ্রনাথ দাশ বিষয়বস্তু :
মহৎ কারণে মৃত্যু অথবা স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গকারী ব্যক্তিকে আমরা শহিদ বলে থাকি। যতীন্দ্রনাথ দাশ এই রকমই একজন মহান বিপ্লবী, যিনি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে পরাধীন দেশমাতার পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের কাছে শহিদ হয়ে আছেন। কিশোর বয়স থেকেই যতীন দাশ বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। বহুবার তিনি কারাবরণ করেন। রবীন, কালীবাবু ইত্যাদি বিভিন্ন ছদ্মনামে তিনি বহুবার ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কার্যসিদ্ধি করেন। একসময় স্বদেশি বিপ্লবীদের ওপর ব্রিটিশ সরকারের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যতীন দাশ জেল সুপারের বিরুদ্ধে অনশন শুরু করেন। অবশেষে গোয়েন্দা বিভাগের DIG- এর হস্তক্ষেপে একুশ দিনের দিন অনশন ভঙ্গ করেন। পুনরায় ১৯২৯ সালে মাতৃভূমির শৃঙ্খল মোচনের উদ্দেশ্যে যতীন দাশ অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে অনশন শুরু করেছিলেন। তবে নিজের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে তা স্তব্ধ হয়। সম্পূর্ণ আখ্যানাংশটিতে যতীন দাশের বিপ্লবী ক্রিয়াকর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বর্ণিত হয়েছে।
শহীদ যতীন্দ্রনাথ
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর:
১.১ আশিসকুমার মুখোপাধ্যায় কোন খেলার ধারাভাষ্যকার ছিলেন?
উত্তর : আশিসকুমার মুখোপাধ্যায় ফুটবল খেলার ধারাভাষ্যকার ছিলেন।
১.২ তাঁর লেখা একটি ভ্রমণকাহিনির নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা একট ভ্রমণকাহিনির নাম 'ইতিহাসের পাতা থেকে'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ যতীন দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর : যতীন দাশ কলকাতার শিকদার বাগান অঞ্চলে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২.২ যতীন দাশের পিতার নাম কী ছিল?
উত্তর : যতীন দাশের পিতার নাম বঙ্কিমবিহারী দাশ।
২.৩ যতীন দাশের পিতা কোথায় চাকরি করতেন?
উত্তর : যতীন দাশের পিতা কলকাতা কর্পোরেশনে চাকরি করতেন।
২.৪ যতীন দাশের ছদ্মনাম কী ছিল?
উত্তর : প্রথমে যতীন দাশের ছদ্মনাম ছিল রবীন, পরে একটু সিনিয়র হলে তাঁর দ্বিতীয় ছদ্মনাম হল কালীবাবু।
২.৫ হিন্দ নওজোয়ান সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর : ভগৎ সিং হিন্দ নওজোয়ান সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
২.৬ মি. প্যাট্রি কে ছিলেন?
উত্তর : ১৯২৯ সালে বিট্রিশ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন মি. প্যাট্টি।
২.৭ লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের কোন জেলে বদলি করা হয়?
উত্তর : লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের লাহোর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়।
২.৮ কারা যতীনের জামিনের প্রস্তাব ঘৃণাভরে অগ্রাহ্য করেন?
উত্তর : পিতা বঙ্কিমবিহারী দাশ ও ছোটো ভাই কিরণচন্দ্র ঘৃণাভরে যতীনের জামিনের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করেছিলেন।
৩. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণ ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :
বিশেষ্য = বিশেষণ
অংশ = আংশিক
ইতিহাস = ঐতিহাসিক
জীবন = জৈবিক
পিতা = পৈত্রিক
জাতি = জাতীয়
উত্তীর্ণ = উত্তরণ
আক্রমণ = আক্রান্ত
ভোজ্য = ভোজন
সন্দেহ = সন্দেহপ্রবণ
মেয়াদ = মেয়াদি
৪. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
পর্যন্ত—পরি + অন্ত
কিন্তু—কিম্ + তু
প্রত্যক্ষ—প্রতি + অক্ষ
সিদ্ধান্ত—সিদ্ধ + অন্ত
যতীন্দ্ৰ —যতি + ইন্দ্ৰ
ব্যগ্র—বি + অগ্র
৫. নীচে কতকগুলি শব্দ দেওয়া হল। শব্দগুলির সঙ্গে উপসর্গ যুক্ত করে নতুন শব্দ তৈরি করো :
জীবন—আ + জীবন
শেষ—অ + শেষ
বেশ—প্র + বেশ
পথ—বে + পথ
ঠিক—স + ঠিক
দারুণ—নি + দারুণ
উপায়—নিরু + পায়
জ্ঞান—অ + জ্ঞান
করণীয়—অ + করণীয়
৬. নীচে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাল, তারিখ দিয়ে দেওয়া হলো। ঘটনাগুলি গল্প থেকে খুঁজে লেখো :
২৭ অক্টোবর ১৯০৪; ৮ এপ্রিল ১৯২৯; ২৫ জুন ১৯২৯; ১১ আগস্ট ১৯২৯; ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯।
- ২৭ অক্টোবর ১৯০৪ : যতীন দাশের জন্মদিন।
- ৮ এপ্রিল ১৯২৯: দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে সভ্যদের আসনের পাশেই হঠাৎ একটি শক্তিশালী বোমা ফাটান ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত।
- ২৫ জুন ১৯২৯: যতীন ও তাঁর ১৫ জন সহযোদ্ধাকে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়।
- ১১ অগস্ট ১৯২৯: বড়োলাট আরউইন এক বিশেষ জরুরি ঘোষণায় অনশনকারীদের দাবিদাওয়া সব মেনে নিলেন এবং প্রত্যেক প্রদেশে জেল অনুসন্ধান কমিটি স্থাপনেরও প্রতিশ্রুতি দিলেন।
- ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯: ঠিক দুপুরে ১টা ১৫ মিনিটে অমর বিপ্লবী যতীন দাশ চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন।
৭. নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক ও পুরণবাচক শব্দ বেছে লেখো :
৭.১ তাঁরা সম মিলিয়ে দশ ভাইবোন ছিলেন।
উত্তর : সংখ্যাবাচক।
৭.২ যতীন ভবানীপুরের মিত্র ইন্সটিউটিশন থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্তীণ হন।
উত্তর : পূরণবাচক।
৭.৩ বিচারে তাঁর ছয় মাসের জেল হয়।
উত্তর : সংখ্যাবাচক।
৭.৪ তাঁর দ্বিতীয় ছদ্মনাম হয় 'কালীবাবু'।
উত্তর : পূরণবাচক।
৮. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় ভাগ করে খাও :
৮.১ কিশোর বিপ্লবী হিসেবেই যতীন্দ্রনাথ দাশের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
৮.২ ছেলেবেলা থেকেই তিনি একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে।
৮.৩ শুরু হয় অগ্নিযুগের এক অবিস্মরণীয় রক্তে রাঙা অধ্যায়।
৮.৪ শেষ পর্যন্ত এল শেষের সেই ভয়ংকর দিনটা।
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
---|---|
৮.১ কিশোর বিপ্লবী হিসেবেই যতীন্দ্রনাথ দাশের | নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। |
৮.২ ছেলেবেলা থেকেই তিনি | একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে। |
৮.৩ অগ্নিযুগের | এক অবিস্মরণীয় রক্তে রাঙা অধ্যায়। |
৮.৪ শেষ পর্যন্ত শেষের | সেই ভয়ংকর দিনটা। |
৯. নীচের বাক্যগুলির মধ্যে যেসব বিভক্তিযুক্ত শব্দ এবং অনুসর্গ আছে তা খুঁজে লেখো :
৯.১ জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মতপার্থক্যের জন্য ভগৎ সিং, ভগবতী চরণ শুক্লা এবং আরও কয়েকজন কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করেন।
উত্তর : কংগ্রেসের, পার্থক্যের—এর বিভক্তি।। সঙ্গে—অনুসর্গ।
৯.২ ছেলেবেলা থেকে তিনি একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে।
উত্তর : থেকে—অনুসর্গ। স্বপ্ন—কর্মে শূন্য বিভক্তি।
৯.৩ সাতটি দিন নিরুপদ্রবে কেটে গেল।
উত্তর : নিরুপদ্রবে—করণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।
১.৪ শরীর সবদিক থেকেই ভেঙে পড়ছে।
উত্তর : থেকেই—অনুসর্গ।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১ যতীন দাশের পিতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্থায়ী চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন কেন? এর ফল কী হয়েছিল?
উত্তর : যতীন দাশের পিতা বঙ্কিমবিহারী দাশ স্বদেশি আন্দোলনের সময় ইংরেজের গোলামি করবেন নাজেনে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্থায়ী চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ফলে একটা স্টেশনারি দোকান খুলতে হয়েছিল।
১০.২ তোমার মতো মহান বিপ্লবীর জন্যও একটা কাজ আমায় অবশ্যই করতে হবে’—কে কাকে একথা বলেছিলেন?
উত্তর : তোমার মতো মহান বিপ্লবীর জন্যও একটা কাজ আমায় অবশ্যই করতে হবে’—বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাশ পাঞ্জাবের ‘নওজোয়ান সভা' নামে একটি বিপ্লবী দলের প্রতিষ্ঠাতা ভগৎ সিংকে উদ্দেশ্য করে উক্তিটি করেছিলেন।
১০.৩ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে কী ঘটেছিল?
উত্তর : বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে সভ্যদের আসনের পাশে একটি শক্তিশালী বোমা ফাটিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ বিচারে এই দুজন বিপ্লবী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
১০.৪ ১৪ জুন ১৯২৯ যতীন দাশকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়?
উত্তর : বিপ্লবী ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে সভ্যদের আসনের পাশে একটি শক্তিশালী বোমা ফাটিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ বিচারে এই দুজন বিপ্লবী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই ঘটনার পিছনে ভারতব্যাপী বিশাল কোনো পরিকল্পনা আছে মনে করে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মি. প্যাট্রি তদন্ত শুরু করলে ত্রিশ জনের একটি তালিকা নথিভুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে প্রধান ও অন্যতম ছিলেন যতীন দাশ। কালবিলম্ব না করে ১৪ জুন ১৯২৯ সালে প্রকাশ্য রাজপথ থেকে যতীন দাশকে গ্রেফতার করা হয়।
১০.৫ ১৯২৯ সালের ১৩ জুলাই অনশন শুরু হয় কেন?
উত্তর : বিপ্লবীদের ওপর অমানুষিক পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৩ জুলাই রবিবার ১৯২৯ সালে থেকে ১৬ জন বিপ্লবী অনশন শুরু করেন।
১০.৬ অনশন করার আগে যতীন তাঁর সহযোদ্ধাদের কী অঙ্গীকার করান? তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না কেন?
উত্তর : ১৯২৯ সালের ১৩ জুলাই অনশন করার পূর্বে যতীন দাশ তাঁর সহযোদ্ধাদের অঙ্গীকার করিয়ে নেন যে তাঁদের দাবিগুলির যথাযথ মীমাংসা হয়ে গেলে তাঁরা অবশ্যই অনশন ভঙ্গ করবেন। যতীন দাশ অনশন ভঙ্গ করবেন না। তিনি মনে করেন তাঁর পক্ষে এই অনশনই হবে মাতৃভূমির শৃঙ্খলমোচনের এক অভাবনীয় সুযোগ।
১০.৭ জেলে অনশনের সময় যতীন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেন?
উত্তর : ১৯২৯ সালে জেলে অনশন করার সময় অষ্টম দিনে ভোরবেলা জেলা-সুপার, জেল-ডাক্তার, আটজন হৃষ্টপুষ্ট পাঠানকে নিয়ে যতীন দাশের সেলে ঢুকে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ডাক্তার একটা সরু নল যতীন দাশের নাকের মধ্যে ঢুকিয়ে দুধ ঢালতে থাকলে তিনি জোরে জোরে কাশতে শুরু করেন। এরপর দুধের নলটি খাদ্যনালী থেকে সরে শ্বাসনালীতে ঢুকে যায়। সামান্য দুধ ফুসফুসে চলে গেলে যতীন দাশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
১০.৮ জেলে যতীন দাশের পাশে শ্লেট পেন্সিল রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তর : যতীন দাশ দিনের পর দিন জেলের মধ্যে অনশনে থেকে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিল না। লিখে বোঝানোর জন্য তাঁর পাশে একটি নতুন শ্লেট ও পেন্সিল রাখা হয়েছিল।
১০.৯ কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়েছিল কেন?
উত্তর : ১৯২৯ সালের ১৩ জুলাই যতীন দাশ জেলে বন্দী থাকাকালীন অনশন শুরু করেন। ওই ঐতিহাসিক অনশনের ৫৩ দিনে যতীন দাশের সঙ্গিন অবস্থা দেখে বড়োলাট লর্ড আরউইন বিশেষ ক্ষমতাবলে ছোটো ভাই কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনিয়েছিলেন দাদা যতীন দাশের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে।
১০.১০ যতীন দাশের সহযোদ্ধারা পথ অবরোধ করে শুয়েছিলেন কেন?
উত্তর : জেলের বন্দিদশায় যতীন দাশের একটানা অনশনের ৫০তম দিনে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের টনক নড়ল। তখন পক্ষাঘাতে যতীন দাশের সমস্ত শরীর গ্রাস করেছে। ৫৫তম দিনে জামিনে যতীন দাশকে মুক্ত করা হয়। ডাক্তার ও জেল সুপার অ্যাম্বুলেন্স ও সশস্ত্র পুলিশবাহিনী জেলে প্রবেশ করলে যতীন দাশের সহযোদ্ধারা পথ অবরোধ করে মহান বিপ্লবীর চারপাশে শুয়ে পড়েন যাতে জীবনের শেষ মুহূর্তে অনশন ভঙ্গ না হয়।
১১. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
১১.১ যতীন দাশের মতো ভারতের অন্য কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবনকথা জানা থাকলে খাতায় লেখো।
উত্তর : যতীন দাশের মতো ভারতের অন্য স্বাধীনতার সংগ্রামী হলেন প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দার। তিনি ১৯১১ খ্রিঃ চট্টগ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জগদ্বন্ধু ছিলেন জেলাশাসকের কার্যালয়ের প্রধান করণিক। মা প্রতিভাময়ী দেবী। প্রীতিলতা খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। সেই সময়কার বাংলার সন্ত্রাসবাদী বিপ্লব প্রীতিলতাকেও উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল। গোপনে তিনি বিপ্লবী সাহিত্য পড়াশুনা করতে শুরু করেন। এই তেজস্বিনী নারী ছোটোবেলা থেকেই দেশমাতার চরণে আত্মনিবেদনের সংকল্প গ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বোর্ড থেকে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভরতি হন। ছাত্রী অবস্থাতেই প্রীতিলতা লীলা নাগের ‘দিপালী সংঘ’-এর সদস্য হয়েছিলেন। কল্যাণ দাসের ‘ছাত্রী সংঘ'-এরও তিনি অন্যতম কর্মী ছিলেন। 'ছাত্রী সংঘ' তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত করেছিল। চট্টগ্রামের যুগান্তর পার্টির নেতা নির্মল সেন তাকে মুষ্টি যুদ্ধের কসরত এবং রাইফেল, রিভলভার চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। প্রীতিলতা ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের নীতিনিষ্ঠায় বিশ্বাসী। বিপ্লবের কাজে প্রীতির ব্যস্ততা পড়াশোনায় অসুবিধার সৃষ্টি করে। কিন্তু ডিস্টিংশন সহ স্নাতক উপাধি তিনি সহজেই অর্জন করেন।
সেই সময়েই বিপ্লবী শহিদ রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের কার্যধারা ও আদর্শ তাঁকে এতই রোমাঞ্চিত করেছিল যে, তিনি ভবিষ্যতে শহিদ হওয়ার শপথ গ্রহণ করেন। নন্দনকানন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হয়ে তিনি ছাত্রছাত্রীদের মনে বিপ্লবের বীজ বপন করেছিলেন। ১৯৩২ খ্রিঃ ধলঘাটের ঘটনা সন্ত্রাসবাদের দৃঢ় বাস্তবের সঙ্গে তাঁকে মুখোমুখি করিয়ে দেয়। সংগ্রামীদের সাধারণ জীবনচর্চায় কোনো গৌরব নেই। সে কারণেই মাস্টারদা সূর্য সেন ও প্রীতিলতা কোনো বিপ্লবাত্মক অভিযানে অংশগ্রহণ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। যে-কোনো সময়ে তাঁর গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা ছিল। এই অবস্থায় মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে তিনি আত্মগোপন করেন।
তিন মাস পরে মাস্টারদা প্রীতিলতাকে এক দুঃসাহসিক অভিযানের নেতৃত্বে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। এই অভিযানটি ছিল পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাবটির ওপর আক্রমণ। প্রীতিলতার বাহিনীতে মোট আটজন সদস্য ছিলেন। ১৯৩২ খ্রি. ১৪ সেপ্টেম্বর রাতের অন্ধকারে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তদানীন্তন ব্রিটিশ-বিরোধী ঘৃণা দেশবাসীর মনে এতই দানা বেঁধেছিল যে অভিযানকারীরা যে-কোনো শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করার সংকল্প গ্রহণ করেন। ক্লাবের সামরিক প্রহরাকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করে প্রীতির বাহিনী ক্লাবে প্রবেশ করে। উৎসবের আনন্দে গভীর রাত্রে সবাই যখন নাচগানে মশগুল তখন হঠাৎ গুলি ও বোমা বিস্ফেরণের শব্দে সবাই চমকে ওঠে। একের পর এক শ্বেতাঙ্গের শরীর ভুলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে। অভিযান সমাপ্ত করে বিজয়িনী প্রীতি শহিদ হওয়ার ইচ্ছায়, সঙ্গে আনা তীব্র বিষের বড়ি মুখে ফেলে আত্মহত্যা করেন। প্রীতিলতা ছিলেন সেই যুগের বিপ্লবী চেতনার সার্থক প্রতিমূর্তি। দেশমাতৃকার চরণে নিবেদিত এই মহান বিপ্লবী নারীকে শত কোটি প্রণাম।
১১.২ যতীন দাশের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাংলার এক বিশিষ্ট কবি তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবির পরিচয় লিখে তাঁর অন্য কোনো কবিতা তোমার ভালো লাগে কিনা এবং কেন ভালো লাগে সে সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : যতীন দাশের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাংলার এক বিশিষ্ট কবি হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন। সেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় সকলেরই জানা। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ভারতীয় মনীষী এবং বিশ্ববিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রি. ৭ মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্কুল শিক্ষা তাঁর শেষ না হলেও বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে জ্ঞানার্জনের কোনো ত্রুটি ঘটেনি। বাল্যকাল থেকেই তাঁর কবিত্বশক্তির প্রকাশ ঘটে। ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি ‘বনফুল’, ‘ভানুসিংহের পদাবলী’, ‘রুদ্রচণ্ড’, ‘শৈশব সঙ্গীত, ‘কবিকাহিনী প্রভৃতি রচনা করেন। তাঁর প্রথম গদ্য প্রবন্ধ ‘ভূবনেমোহিনী প্রতিভা’। ১৯০৫ খ্রি. বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব থেকে দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক ঝড় উঠেছিল তার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। এই উপলক্ষে তিনি ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গীতটি রচনা করেন।
১৯০৫ খ্রি. বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তিনি রাখিবন্ধন উৎসব চালু করেন। ১৯১৯ খ্রি. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সরকার প্রদত্ত ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থ লিখে তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন (১৯১৩ খ্রি.)। শেষ বয়সে তিনি ‘পুনশ্চ’, ‘শেষ সপ্তক’, ‘শ্যামলী’ প্রভৃতি রচনা গদ্যছন্দে লেখেন। কাব্য, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটোগল্প, উপন্যাস প্রত্যেক বিভাগেই তাঁর অবদান অজস্র। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, দার্শনিক, নাট্য প্রযোজক, সাহিত্যিক, সুরকার ও স্বদেশ প্রেমিক। ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ রচিত গান থেকেই গাওয়া হয়। ১৯৪১ খ্রি. ৭ আগস্ট এই বিশ্ববরেণ্য কবি দেহত্যাগ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্য কবিতার মধ্যে একটির নাম ‘একজন লোক’। কবিতাটি আমার ভালো লাগে এই কারণে যে, একজন সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচয় কবি দিয়েছেন এবং শহরের মানুষের সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছেন।
একজন লোকে বলতে কবি এখানে এক গ্রামের মানুষের সঙ্গে এক শহরের মানুষের পরিচয় দেখিয়েছেন। প্রতীক হিসেবে এক আধবুড়া হিন্দুস্থানী ও নিজেকে হাজির করেছেন। দুজনের পরস্পরের কাছে পরিচয় শুধু একজন লোক হিসেবে। এ ছাড়া আর কোনো পরিচয় কারোরই জানা নেই। শহরের লোক জানে না গ্রামের লোকটির নাম কাজ, তার দুঃখ-বেদনা আর গ্রামের লোকের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যেও শহরের লোকে থাকে না। প্রত্যেকেই প্রত্যেককে জানে শুধু একজন লোক বলে।
Tags: class 6 bangla kobita,class six bangla sukh,class six bangla book,class six bangla golpo,class six bangla guide,class 6 bangla nirmiti,wb tet 2022 bangla class,class six bangla asmani,class 6 bangla 1st paper,bangla,class 6 final exam bangla,bangla suggestion class 6,class six bangla question,class 6 bangla kobita bagh,class vi bangla vordupure
No comments
Hi Welcome ....