Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

ABTA Madhyamik Test Papers 2023 History Answer Page 99

class 10 abta test paper solve history 2023      ❐ আরো পড়ুনঃ মাধ্যমিক টেস্ট পেপার ইতিহাস উত্তর মাধ্যমিক 2023 বোর্ডের টেস্ট পেপার প্রশ্নোত...

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ টেস্ট পেপার মাধ্যমিক 2023

class 10 abta test paper solve history 2023

     ❐ আরো পড়ুনঃ


মাধ্যমিক 2023 বোর্ডের টেস্ট পেপার প্রশ্নোত্তর

বিভাগ-‘ক’ ১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : ২০✗১=২০
১.১ নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়— 
(ক) ৫ মার্চ 
(খ) ৫ জুলাই 
(গ) ৮ মার্চ 
(ঘ) ৮ জুলাই। 

১.২ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান— 
(ক) স্মৃতিকথা
(খ) সরকারি নথিপত্র 
(গ) সংবাদপত্র 
(ঘ) ব্যক্তিগত পত্র।

১.৩ বামাবোধিনী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন– 
(ক) উমেশচন্দ্র দত্ত 
(খ) শিশিরকুমার ঘোষ 
(গ) সন্তোষকুমার দত্ত 
(ঘ) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। 

১.৪ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে বেমানান নামটি হল— 
(ক) রাজা রামমোহন রায় 
(খ) কালীপ্রসন্ন সিংহ 
(গ) ডেভিড হেয়ার 
(ঘ) ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন। 

১.৫ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বি.এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়— 
(ক) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে। 

১.৬ কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দ) অনুষ্ঠিত হয়— 
(ক) মেদিনীপুরে
(খ) বারাসতে 
(গ) ছোট নাগপুরে 
(ঘ) উত্তরবঙ্গে। 

১.৭ মহম্মদ মহসিন যে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন— 
(ক) পাবনা 
(খ) ফরাজি 
(গ) চুয়াড় 
(ঘ) ওয়াহাবি। 

১.৮ অযোধ্যায় সিপাহী বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন— 
(ক) কুনওয়ার সিং 
(খ) হজরত মহল 
(গ) বাবা রামচন্দ্র 
(ঘ) তাঁতিয়া তোপি।

 ১.৯ ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত— 
(ক) রাধাকান্ত দেব
(খ) উইলিয়াম অ্যাডাম 
(গ) কর্নেল ওলকট 
(ঘ) উইলিয়াম ওয়েডারবান। 

১.১০ ‘বর্তমান ভারত’ প্রথম প্রকাশিত হয়— 
(ক) উদ্বোধন 
(খ) প্রবাসী 
(গ) দেশ 
(ঘ) সোমপ্রকাশ পত্রিকায়। 

১.১১ শিশুশিক্ষা গ্রন্থটি রচনা করেন— 
(ক) রামরাম বসু 
(খ) মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার 
(গ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 
(ঘ) মদনমোহন তর্কালঙ্কার।

১.১২ মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন—
(ক) মেঘনাথ সাহা 
(খ) প্রফুল্লচন্দ্র রায় 
(গ) জগদীশচন্দ্র বসু 
(ঘ) উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। 

১.১৩ একা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন— 
(ক) স্বামী বিদ্যানন্দ 
(খ) মাদারী পাশী 
(গ) বল্লবভাই প্যাটেল 
(ঘ) স্বামী সহজানন্দ। 

১.১৪ তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়— 
(ক) মেদিনীপুর জেলায় 
(খ) বীরভূম জেলায়
(গ) নদীয়া জেলায় 
(ঘ) বর্ধমান জেলায়। 

১.১৫ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়— 
(ক) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে 
(খ) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে 
(গ) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে 
(ঘ) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে। 

১.১৬ আইন অমান্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন— 
(ক) বীণা দাস
(খ) কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় 
(গ) রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন 
(ঘ) কল্পনা চট্টোপাধ্যায়।

১.১৭ কলকাতায় ‘রশিদ আলি দিবস' পালিত হয় — 
(ক) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১১ ফেব্রুয়ারি
(খ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১২ ফেব্রুয়ারি 
(গ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৩ ফেব্রুয়ারি 
(ঘ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারি। 

১.১৮ দলিতদের প্রথম হরিজন আখ্যা দিয়েছিলেন— 
(ক) জ্যোতিরাও ফুলে 
(খ) ডঃ আম্বেদকর 
(গ) শ্রী নারায়ণ গুরু 
(ঘ) গান্ধীজি। 

১.১৯ ভারতের লৌহমানবরূপে পরিচিত ছিলেন— 
(ক) ভগৎ সিং 
(খ) সুভাষচন্দ্র বসু 
(গ) বল্লবভাই প্যাটেল 
(ঘ) জওহরলাল নেহরু। 

১.২০ ‘একাত্তরের ডাইরি’ কী ধরনের গ্রন্থ?
(ক) জীবনস্মৃতি 
(খ) স্মৃতিকথা 
(গ) আত্মজীবনী 
(ঘ) পৌরাণিক।

বিভাগ-‘খ’ ২। যে কোনো ষোলটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপরিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) :
১৬×১=১৬
উপবিভাগ : ২.১ একটি বাক্যে উত্তর দাও: 
(২.১.১) একটি স্থানীয় ইতিহাস গ্রন্থের নাম লেখো। 
উত্তরঃ রাজতরঙ্গিনী (কলহন)।  
(২.১.২) দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর বলা হয় কাকে?
উত্তরঃ বীরসালিঙ্গম পানতুলে।  
(২.১.৩) সিধু কোন বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?
উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের। 
(২.১.৪) কুনরি পাতিদার কাদের বলা হয়?
উত্তরঃ রাজস্থানের কৃষকদের। 

উপবিভাগ : ২.২ ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো : 
(২.২.১) অ্যানাল পত্রিকা গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় ফ্রান্সে।
উত্তরঃ ঠিক
(২.২.২) রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধি দিয়েছিলেন দ্বিতীয় আকবর। 
উত্তরঃ ঠিক
(২.২.৩) জমিদার সভার সভাপতি ছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। 
উত্তরঃ ঠিক
(২.২.৪) গান্ধীজি ডান্ডি অভিযানে মূল স্বেচ্ছাসেবী দলে কোনো নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেননি।
উত্তরঃ ভুল

উপবিভাগ ২.৩ ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও।


উত্তরঃ (২.৩:১) → (৪) | (২.৩.২) →  (১) | (২.৩.৩) →  (২) | (২.৩.৪) → (৩) 

উপবিভাগ : ২.৪ প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত ও নামাঙ্কিত করো : 
(২.৪.১) মুণ্ডা বিদ্রোহের এলাকা। (২.৪.২) মীরাট (২.৪.৩) শ্রীরামপুর (২.৪.৪) জুনাগড়। 
✔ Uploaded Soon Map

উপবিভাগ: ২.৫ নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক বাক্যটি নির্বাচন করো : 
(২.৫.১) বিবৃতি : ইংরেজ কোম্পানি এদেশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেছিল।
 ব্যাখ্যা-১ ভারতীয়দের শিক্ষিত করে তুলতে। 
ব্যাখ্যা-২ ভারতে বসবাসকারী সমস্ত ইউরোপীয়দের শিক্ষিত করে তুলতে। 
ব্যাখ্যা-৩ ভারতে আগত ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করানোর জন্য। 
(২.৫.২) বিবৃতি : হ্নিদুমেলার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল শরীরচর্চা।
 ব্যাখ্যা-১ হিন্দুমেলা ছিল মূলত একটি ব্যায়ামাগার। 
ব্যাখ্যা-২ হিন্দুমেলা ছিল একটি গোপন বিপ্লবী সংস্থা। 
ব্যাখ্যা-৩ হিন্দুমেলা শরীরচর্চার মাধ্যমে দেশবাসীর আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। 
বিবৃতি: (২.৫.৩) এ দেশীয় ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা শেখাবার জন্য হ্যালহেড তার বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থ লেখেন। ব্যাখ্যা-১ বাংলা ভাষা না জানলে ইংরেজ কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়া হত। 
ব্যাখ্যা-২ ইংরেজ কর্মচারীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনুরাগী ছিলেন। 
ব্যাখ্যা-৩ এ দেশে বাণিজ্য ও রাজত্ব চালাবার জন্য ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা আয়ত্ত করা প্রয়োজন ছিল। 
(২.৫.৪) বিবৃতি: ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয়। 
ব্যাখ্যা-১ দলে ব্রাহ্মণদের সংখ্যা ছিল বেশি। 
ব্যাখ্যা-২ এই দল দুবার প্রতিষ্ঠিত হয়। 
ব্যাখ্যা-৩ ইংরেজরা ব্যঙ্গ করে এই ‘দলকে ‘দ্বিজ’ বলে ডাকত।


বিভাগ-‘গ’ ৩। দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
(যে কোনো এগারোটি) : ১১×২=২২
৩.১ কোন কোন বিষয় স্থানলাভের ফলে আধুনিক ইতিহাস চর্চায় বৈচিত্র্য এসেছে?
উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বহু নতুন বিষয়ের আলোচনা যুক্ত হওয়ার ফলে তা যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের এসব নতুন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল নতুন সমাজবিন্যাস, খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পচর্চা, পোশাক-পরিচ্ছদ, যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থা, দৃশ্যশিল্প, স্থাপত্য, স্থানীয় অঞ্চল, শহর, যুদ্ধবিগ্রহ, পরিবেশ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা, নারী প্রভৃতির ইতিহাসচর্চা।

৩.২ কীভাবে স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীকে ইতিহাসের উপাদানরূপে ব্যবহার করা যেতে পারে?
উত্তরঃ বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা আত্মজীবনী ইতিহাসের উপাদান হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হতে পারে–
[1] আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায়। [2] আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন আর্থসামাজিক ঘটনাবলিও ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত হতে পারে। [3] আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

৩.৩ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থে কী ধরনের সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?

উত্তরঃ সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা হুতুম প্যাঁচার নকশা ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে উনিশ শতকের বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর এই গ্রন্থে সেখানে বাংলার সমাজের যেসব চিত্র পাওয়া যায় সেগুলি হল- –
[1] এই গ্রন্থ থেকে তৎকালীন কলকাতা ও তার প্রতিবেশী অঞ্চলের কথ্যভাষার ধরন সম্পর্কে জানা যায়। [2] হঠাৎ ফুলেফেঁপে ধনী হয়ে ওঠা তৎকালীন বাঙালি সম্প্রদায়ের চরিত্র সম্পর্কে এই গ্রন্থ থেকে ধারণা পাওয়া যায়। [3] এই গ্রন্থে সমাজের বিভিন্ন ত্রুটিগুলি উল্লেখ করে তা সংশোধনের প্রয়াস চালানো হয়েছে।

৩.৪ খ্রিস্টান মিশনারীরা শিক্ষাবিস্তারে উৎসাহী ছিলেন কেন?
উত্তরঃ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। তাঁদের উদ্যোগেই ‘ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’ (১৮১৯ খ্রি.), ‘ক্যালকাটা ফিমেল স্কুল’ (১৮২৮ খ্রি.) প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে রবার্ট মে, মিস কুক, মিসেস কুক, মেরি উইলসন, মেরি কার্পেন্টার, অ্যানেট অ্যাক্রোয়েড প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

৩.৫ অরণ্য আইন উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের কতটা ক্ষতি করেছিল বলে তুমি মনে করো।
উত্তরঃ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ‘ভারতীয় অরণ্য আইন' পাস হয়। ব্রিটিশ সরকার ভারতে নতুন শহরের নির্মাণকার্য জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির প্রয়োজনে অরণ্যের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তার ফলে 
[1] ভারতের অরণ্য সম্পদের ওপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করা হয়। [2] সরকার অরণ্যকে সংরক্ষণের আওতায় এনে নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে এবং আদিবাসীদের কাছ থেকে অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

৩.৬ পাগলপন্থী নামে কারা পরিচিত ছিল?
উত্তরঃ উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ফকির করিম শাহ (বা চাঁদ গাজী) ময়মনসিংহ জেলার সুসঙ্গপুর-শেরপুর অঞ্চলে গারোদের মধ্যে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। এই ধর্মের অনুরাগীরা ‘পাগলপন্থী’ নামে পরিচিত।

৩.৭ ভারতসভার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তরঃ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত (১৮৭৬ খ্রি.) এই সভার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি হলো -
(i) দেশে জনমত গঠন করা (ii) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করা (iii) হিন্দু-মুসলমানের মৈত্রীর প্রসার ঘটানো।

৩.৮ আনন্দমঠ উপন্যাস কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল বলে তোমার মনে হয়?
উত্তরঃ ‘আনন্দমঠ' (১৮৮২ খ্রি.) উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারতমাতার দুর্দশার চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে স্বৈরাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। ‘আনন্দমঠ’-এর সন্তানদলের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে দেশমাতাকে মুক্ত করা। ‘আনন্দমঠ’ প্রকাশের পর শীঘ্রই ভারতের বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটি অনূদিত হয়। ফলে ভারতের সর্বত্র জাতীয় চেতনার ঢেউ খেলে যায়।

৩.৯ চার্লস উইলকিনস বিখ্যাত কেন?
উত্তরঃ চার্লস উইলকিন্স ছিলেন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। তিনি সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরের টাইপ বা নকশা তৈরি করেন। এই কারণে তাকে 'বাংলা ছাপাখানার জনক' বা 'বাংলার গুটেনবার্গ' বলে অভিহিত করা হয়।

৩.১০ এদেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন?
উত্তরঃ ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.) ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে (২৯ জুলাই) কলকাতার বৌ-বাজার স্ট্রিটে 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা করেন।

৩.১১ বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয়?

উত্তরঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভয়ানক বন্যায় গুজরাটের বারদৌলি তালুকে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকার সেখানকার কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার ৩০ শতাংশ (পরে কমিয়ে ২২ শতাংশ) বাড়িয়ে দেয়। তাই কৃষকরা খাজনা বন্ধের দাবি তোলে। এ ছাড়া ভূমিরাজস্ব কমানোর দাবিতে বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে।

৩.১২ মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, পি.সি যোশী-সহ মোট ৩৩ জন বামপন্থী শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এক মামলা শুরু করে। এটি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মামলার রায়ে বিভিন্ন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়।

৩.১৩ দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য হল –
[1] নারীশিক্ষার প্রসার সাধন এবং [2] বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা।

৩.১৪ দলিত নামে কারা পরিচিত ছিল?
উত্তরঃ হিন্দু বর্ণব্যবস্থায় জন্ম ও পেশাগত পরিচিতির বিচারে যেসব মানুষ সমাজের নিম্নস্তরে অবস্থান করে এবং বিভিন্ন সময়ে উচ্চবর্ণের দ্বারা সামাজিক বঞ্ছনার শিকার হয়, তারা সাধারণভাবে দলিত নামে পরিচিত।

৩.১৫ কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীর ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করে?
উত্তরঃ কাশ্মীর রাজ্য ভারতভুক্তির দলিলে নানা কারণে স্বাক্ষর করে—
[1] কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। [2] পাক-মদতপুষ্ট হানাদাররা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন এবং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

৩.১৬ নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) কেন স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তরঃ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, উভয় দেশের উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়া, ফিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, অপহৃতা উদ্বাস্তু নারীদের ফিরিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।


বিভাগ-‘ঘ’ ৪। সাত বা আটটি বাক্যে যে কোনো ছটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি করে প্রশ্নের উত্তর দাও) : ৬×৪=২৪
উপবিভাগ: ঘ-১ 
৪.১ সংবাদপত্ররূপে হিন্দু পেট্রিয়টের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত 'হিন্দু প্যাট্রিয়ট' পত্রিকা ছিল ঊনিশ শতকের বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্র। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল। কিন্তু পরে এটি দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। এই পত্রিকায় সমকালীন বাংলার সমাজজীবনের বিভিন্ন চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
❍ হরিশচন্দ্রের সম্পাদনা: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার জনপ্রিয়তা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।  হরিশচন্দ্র আড়াইবছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে পত্রিকাটি পরিচালনা করেন।
❍ পত্রিকার অগ্রগতি: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি চালিয়ে প্রথম চার বছর প্রচুর আর্থিক লোকসানের
শিকার হন। তা সত্ত্বেও তিনি এটিকে একটি আধুনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত করেন।
 শিক্ষিত শ্রেণির সচেতনতা: বাংলার দরিদ্র শ্রেণির ওপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের ঘটনাবলির কথা ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা থেকে কলকাতা-সহ বাংলার সমাজের শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত মানুষ জানতে পারে। এমনকি ইউরোপীয়রাও এই পত্রিকা থেকে দরিদ্রশ্রেণির ওপর তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের কাহিনি জানতে পারে। 
 নারী অধিকার: ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ধারাবাহিক প্রচার চালায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
বিধবাবিবাহের প্রবর্তন করলে হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গড়ে তোলেন। নারীশিক্ষাকে
সমর্থন করে এই পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। 
উপসংহার: সীমাহীন পরিশ্রম, স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুতে মানসিক অবসাদ প্রভৃতির ফলে অল্প বয়সেই তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। তা সত্ত্বেও ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এর কাজ থেকে তিনি কোনোদিন ছুটি নেননি। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাংলার নীলচাষিরা তাদের অভিভাবক হারান। অবশেষে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

৪.২ ঊনিশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্ম সমাজের অবদান কীরূপ ছিল।
উত্তরঃ উনিশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ব্রাহ্মসমাজ বোঝাতে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতবর্ষের ব্রাহ্মসমাজ, সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ, নববিধান ব্রাহ্মসমাজ প্রভৃতিকে বোঝায়। রামমোহনের মৃত্যুর পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব দেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ।
❍ কুসংস্কারের বিরোধিতা : ব্রাহ্মসমাজ ভারতীয় সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কারের ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার যেমন - বিরোধিতা করেছিল, তেমনই মানুষের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
❍ জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা: ব্রাহ্মসমাজ হিন্দুসমাজের জাতিভেদপ্রথা ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা করে। হিন্দুধর্মের নামে নানা প্রচলিত কুপ্রথার প্রতিরোধে ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
❍ নারীকল্যাণের ভূমিকা: ব্রাহ্মসমাজ নারীকল্যাণের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। যেমন— পর্দাপ্রথার বিলুপ্তিসাধন,
বিধবাবিবাহের আইনসিদ্ধকরণ, বহুবিবাহ নিষিদ্ধকরণ, নারীসমাজে শিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি।
❍ জাতীয় সংহতির চেতনা: ব্রাহ্মসমাজ ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয় সংহতির চেতনা প্রসারের ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। উদারপন্থী ধর্মীয় আদর্শ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে ব্রাহ্ণসমাজ জাতীয় সংহতি চেতনার জাগরণ ঘটায়।
উপসংহার: ব্রাহ্মসমাজ বাংলার সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে অনুকরণযোগ্য দৃষ্টান্ত রেখেছিল। এই প্রতিষ্ঠান সমাজসংস্কারের মাধ্যমে এক জাতীয় জাগরণ ঘটাতে চেয়েছিল। পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ মিশন ব্রাহ্মসমাজের কিছু আদর্শ গ্রহণ করে।


উপবিভাগ: ঘ-২ 
৪.৩ মহাবিদ্রোহকে (১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ) কী সামন্তশ্রেণির অভ্যুত্থান বলা যায়?
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ ব্যারাকপুর সেনা ছাউনিতে সিপাহি মঙ্গল পান্ডে যে বিদ্রোহ শুরু করেন তা কিছুকালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের ইতিহাসে এটি ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা স্বরূপ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য দুটি বিতর্ক হল—–[1] কেউ কেউ একে
সামন্তশ্রেণির বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন, [2] আবার কেউ কেউ একে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।
 ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে সামন্তশ্রেণির বিদ্রোহ বলার পক্ষে যুক্তি :
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. সুরেন্দ্রনাথ সেন, রজনীপাম দত্ত প্রমুখ ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহকে সামন্তশ্রেণির বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ড. মজুমদারের মতে, এই বিদ্রোহ ছিল অভিজাততন্ত্র ও সামন্ততন্ত্রের মৃত্যুকালীন আর্তনাদ। এই বিদ্রোহকে সামন্তশ্রেণির বিদ্রোহ বলার পক্ষে যেসব যুক্তি দেওয়া হয় সেগুলি হল—
❍ সামন্তপ্রভুদের ব্যক্তিস্বার্থ: অধ্যাপক সুরেন্দ্রনাথ সেনের মতে,১৮৫৭-র বিদ্রোহে জাতীয় স্তরের পরিকল্পনা গড়ে ওঠেনি।
আসলে হতাশাগ্রস্ত সামন্তপ্রভুরা ক্ষমতার মধুভাণ্ড পাওয়ার লোভে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল মাত্র।
❍ প্রতিক্রিয়াশীল: ১৮৫৭-র বিদ্রোহ ছিল প্রতিক্রিয়াশীল। ভারতে অতিদ্রুত ইংরেজ শাসন বিস্তৃত হলেএদেশের সামন্তপ্রভুরা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিদ্রোহের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেয়। ড. সেনের মতে, এই বিদ্রোহের নেতাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিবিপ্লব।
❍ ভৌমিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আশা: ১৮৫৭-র বিদ্রোহে যেসকল অসামরিক লোকজন অংশগ্রহণ করেন তাদের নেতৃত্ব ছিল জমিদার ও সামন্তপ্রভুদের হাতে। নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাই, কুনওয়ার সিং-সহ অনেক সামন্ত নেতা এই বিদ্রোহে যোগ দেন। আসলে ব্রিটিশদের সরকারি নীতির ফলে সামন্তরা যে চিরাচরিত ক্ষমতা হারান, তা পুনরায় ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যেই তাঁরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।
উপসংহার: ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহে সামন্ততান্ত্রিক উপাদান কিংবা জাতীয়তাবাদী উপাদান নিশ্চয় ছিল। তাই বলে এই বিদ্রোহকে পুরোপুরি সামন্ততান্ত্রিক বা পুরোপুরি জাতীয় বিদ্রোহ বলা যুক্তিযুক্ত নয়। এই বিষয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

৪.৪ ভারতমাতা চিত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ উনিশ শতকের লেখা অর্থাৎ বিভিন্ন রচনা এবং রেখা অর্থাৎ বিভিন্ন আঁকা ছবি ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে বিশেষ অবদান রাখে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ‘ভারতমাতা’ (১৯০৫ খ্রি.) ছবিটি শিক্ষিত ও প্রগতিশীল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
ভারতমাতা চিত্রের ঐতিহাসিক তাৎপর্য :
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুর ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সমান্তরাল সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে
তোলেন। এই উদ্দেশ্যে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের (১৯০৫ খ্রি.) সময় হিন্দুদের ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অনুকরণে তিনি ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি অঙ্কন করেন। অবনীন্দ্রনাথের চতুর্ভুজা ‘ভারতমাতা’র চার হাতে রয়েছে বেদ, ধানের শিষ, জপের মালা ও শ্বেতবস্ত্র। এগুলি মূলত ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এগুলির দ্বারা শিল্পী স্বদেশি আন্দোলনের যুগে দেশবাসীর মনে স্বদেশিয়ানা ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।

অবনীন্দ্রনাথের ‘ভারতমাতা’র হাতে কোনো অস্ত্র নেই। এর দ্বারা অবনীন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশি ভাবনায় সশস্ত্র আন্দোলনকে দূরে রেখেছেন। বিশ শতকের ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে মিছিলের সামনে ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি রাখা হত। নবজাগ্রত ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনই ছিল ‘ভারতমাতা’ অঙ্কনের অনুপ্রেরণা। ‘ভারতমাতা’র চিত্রটির মধ্যে কেউ কেউ হিন্দু স্বাদেশিকতার প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ বাস্তবে হিন্দু স্বাদেশিকতার উগ্র সমর্থক ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। ভগিনী নিবেদিতা ‘ভারতমাতা’ চিত্রটির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন।

উপবিভাগ : ঘ-৩ 
৪.৫ বিজ্ঞান চর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার রাসবিহারী ঘোষ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভূমিকা : 
মৌলিক গবেষণা : কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সক্রিয় সহযোগিতা পেয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার কাজ করার সুযোগ পান। ফলে বিজ্ঞানচর্চার যথেষ্ট মানোন্নয়ন ঘটে। ❍ খ্যাতনামা শিক্ষার্থী: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে পড়াশোনা এবং বিজ্ঞানসাধনা করে বহু শিক্ষার্থী পরবর্তীকালে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই রকম শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ❍ খ্যাতনামা শিক্ষক : সেই যুগের বহু স্বনামধন্য শিক্ষক ও বিজ্ঞানী কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশিরকুমার মিত্র প্রমুখ। তাঁদের পরিশ্রমে এখানে বিশ্বমানের শিক্ষাদানব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে এর যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ❍ শিক্ষকদের উদ্যোগ: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এখানকার শিক্ষক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল্‌স'প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী না থেকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করেন। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন-এ যুক্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উপসংহার: ঔপনিবেশিক আমলে ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ দেশীয় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপস্থিতিতে এবং কৃতী ছাত্রদের সাফল্যে এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

৪.৬ বাংলায় কারিগরী শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অবদান বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে তারকনাথ পালিত (১৮৩১-১৯১৪ খ্রি.) কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
❍ জাতীয় শিক্ষার উদ্যোগ: স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয়
শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একটি অন্যতম উদ্যোগ ছিল বাংলায় স্বদেশি ধাঁচে
কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এই উদ্দেশ্যে আইনজীবী তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই কলকাতায়
বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
❍ সমন্বয় : দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট ও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ একত্রে মিশে যায় এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল নাম গ্রহণ করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা CET
❍ কার্যক্রম: উভয় প্রতিষ্ঠান মিশে যাওয়ার পর কলাবিভাগের পাশাপাশি এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি
প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়। এর ফলে বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক কারিগরি বিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
❍ জার্নাল: কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তারা স্বদেশি আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে যাঁরা জাতীয় শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
উপসংহার: বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় শিক্ষার দ্বারা বাংলার যুবকদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা। বলা বাহুল্য যে, এই প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্যপূরণে সফল হয়েছিল।

উপবিভাগ : ঘ-৪ 
৪.৭ হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?
উত্তরঃ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ ছিল সর্ববৃহৎ দেশীয়রাজ্য। হায়দ্রাবাদের প্রধান শাসক নিজাম নামে পরিচিত ছিলেন।
❍ জনবিন্যাস: ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম ছিলেন ওসমান আলি খান। তবে শাসক মুসলিম হলেও রাজ্যের অন্তত ৮৭ শতাংশ জনগণই ছিল হিন্দু।
❍ ভারত-বিদ্বেষ : ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর হায়দ্রাবাদের ভারত- বিদ্বেষী নিজাম ভারত বা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে নিজ রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করেন। সাম্প্রদায়িক নেতা কাশিম রিজভির নেতৃত্বে 'রাজাকার' নামে হায়দ্রাবাদের দাঙ্গাবাহিনী সীমান্তবর্তী ভারতীয় ভূখণ্ডের হিন্দুদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু করতে থাকে। তখন তারা ভারতের ত্রাণশিবিরগুলিতে আশ্রয় নেয়।
❍ জটিলতা বৃদ্ধি: হায়দ্রাবাদের নিজাম সেখানকার মুসলিমদের ভারতের বিরদ্ধে ‘জেহাদ’ ঘোষণার আহ্বান জানান। হায়দ্রাবাদ পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র এনে এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে।
❍ অপারেশন পোলো: এইরকম জটিল পরিস্থিতিতে ভারত হায়দ্রাবাদকে একটি চরমপত্র পাঠালে নিজাম তা উপেক্ষা করেন। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল জে এন চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে অভিযান শুরু করে (১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে) যা ‘অপারেশন পোলো' নামে পরিচিত।
❍ আত্মসমর্পণ: ভারতীয় আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়ে হায়দ্রাবাদের বাহিনী শীঘ্রই পরাজিত হয় এবং আত্মসমর্পণ করে (১৮ সেপ্টেম্বর)। ফলে হায়দ্রাবাদ ভারতের দখলে আসে।
উপসংহার: ভারতের সামরিক অভিযানে হায়দ্রাবাদের প্রতিরোধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। নিজাম ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। হায়দ্রাবাদ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়।


৪.৮ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন কেন গঠিত হয়?
উত্তরঃ স্বাধীন ভারতে কোন নীতি অনুসারে অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা চিহ্নিত করা উচিত সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্দেশ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’  গঠন করেন।
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের কারণ :
❍ সদস্যবৃন্দ: তিনজন সদস্য নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের সভাপতি ছিলেন বিচারপতি ফজল আলি। কমিশনের অপর দুজন সদস্য ছিলেন কে এম পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুরু।
❍ কমিশনের সুপারিশ: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই
প্রতিবেদনে ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়।
❍ রাজ্য পুনর্গঠন আইন প্রয়োগ: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় আইনসভায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন' পাস হয়। এই আইন অনুসারে ওই বছর ১ নভেম্বর ভাষাভিত্তিক ১৪টি রাজ্য এবং ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
❍ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ১৪টি ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠিত হয়। সেগুলি হল অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, জম্মু ও কাশ্মীর, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, বিহার বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর, মাদ্রাজ ও রাজস্থান এবং যে ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয় সেগুলি হল ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, দিল্লি, লাক্ষাদ্বীপ, মণিপুর ও হিমাচল প্রদেশ।
উপসংহার: রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশে কেন্দ্রীয় সরকার ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠন শুরু করলে দক্ষিণ ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনগুলি থেমে যায়। ফলে ভারতের ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় হয়।

বিভাগ-‘ঙ’ ৫। পনেরো-ষোলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×৮=৮
৫.১ নীল বিদ্রোহ ঘটেছিল কেন? এই বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ ইউরোপে কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রভৃতি দেশের খামার মালিকরা ভারতে নীলের লাভজনক ব্যাবসা করতে আসত। বাংলা ও বিহারে ১৭৮২-৮৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নীলচাষ শুরু হয়। বাংলার নদিয়া, যশোহর, পাবনা, রাজশাহি, ময়মনসিংহ, মালদহ প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণ নীলের চাষ হত। ইউরোপ থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা এদেশে জমি কিনে বা লিজ নিয়ে নীলচাষ করত এবং উৎপাদিত নীল ইউরোপে রপ্তানি করে যথেষ্ট লাভবান হত। এই কারণে নীলকর সাহেবরা বাংলার চাষিদের ওপর প্রচণ্ড অত্যাচার করে তাদের নীল চাষ করার জন্য বাধ্য করত। এই ধরনের চরম অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার নীলচাষিরা ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে
তোলে, যা ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।
❍ নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য : নীলকর সাহেবদের তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বিভিন্ন জেলায় চাষিরা নীল বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন—
❍ শক্তিশালী বিদ্রোহ: অত্যাচারিত নীলচাষিদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে অন্যান্য কৃষকবিদ্রোহের তুলনায় নীল বিদ্রোহ
তীব্র আকার ধারণ করে। তৎকালীন বড়োলাট লর্ড ক্যানিং স্বীকার করেছেন যে, তাঁদের কাছে নীল বিদ্রোহ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহের চেয়েও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে উঠেছিল।
❍ হিন্দু-মুসলিম ঐক্য: হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অত্যাচারিত কৃষকরা নীলকরদের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে। ফলে বিদ্রোহীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্য দেখা যায়।
❍ জমিদারদের যোগদান : বাংলার কৃষকদের সঙ্গে বহু জমিদারও নীলকরদের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহে যোগ দেয়। এইসব জমিদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নড়াইলের রামরতন রায়, সাধুহাটির মথুরানাথ আচার্য, রানাঘাটের শ্রীগোপাল পালচৌধুরী, চণ্ডীপুরের শ্রীহরি রায় প্রমুখ।
❍ সংবাদপত্রে ভূমিকা: নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচার ও শোষণ এবং নীল বিদ্রোহের নানা ঘটনা তৎকালীন
সংবাদপত্রগুলিতে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হত। এসব পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘বামাবোধিনী’, ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সমাচার দর্পণ’ প্রভৃতি।
❍ শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের যোগ : উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে একমাত্র নীল বিদ্রোহই কলকাতা তথা বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমর্থন ও সহযোগিতা পায়।
উপসংহার: বাংলায় নীল বিদ্রোহ এক সামগ্রিক রূপ পরিগ্রহ করেছিল। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্য এই বিদ্রোহকে অনন্যতা দিয়েছে।

৫.২ প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা আলোচনা করো।
উত্তরঃ  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাকে মানুষ ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় বলে মনে করতেন না। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তোলা দরকার। তাঁর শিক্ষাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর প্রকৃতি ভাবনা।
❍ অরণ্য ধ্বংসের বিপদ: রবীন্দ্রনাথ বলেন যে, সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। কিন্তু আজ মানুষ নির্মমভাবে ধন ধ্বংস করে মরুভূমিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন অরণ্যের সংরক্ষণ। ‘অরণ্য দেবতা' প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “অনেক মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে নিজেরাই ক্ষতি ডেকে এনেছে। বায়ুকে নির্মল করার ভার যে গাছের ওপর, যার পত্র ঝরে গিয়ে ভূমিতে উর্বরতা দেয়, তাকেই সে নির্মূল করেছে। বিধাতার যা কিছু কল্যাণের দান, আপনার কল্যাণ, বিস্মৃত হয়ে মানুষ তাকেই ধ্বংস করেছে।”
❍ প্রকৃতির মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা: রবীন্দ্রনাথ বলেন যে, “এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে....।” তিনি শান্তিনিকেতনে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই তাঁর আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবকে জোরদার করে তোলেন।
❍ গ্রামের উন্নয়নের ভাবনা: পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারির দেখাশোনার দায়িত্ব (১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ) পেয়ে রবীন্দ্রনাথ গ্রামে এসে গ্রামবাংলার আসল রূপটি চিনতে পারেন। তাই তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের পথ ছেড়ে গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে পল্লিগ্রামের মঙ্গলের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, গ্রামই ভারতের প্রাণ। গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। শিলাইদহে ‘মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয়’ এবং পতিসরে হাসপাতাল স্থাপন ছাড়াও তিনি গ্রামে তাঁতের কাজ, মৃৎশিল্প প্রভৃতি কুটিরশিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেন। জমিদারির প্রজাদের বিবাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভারও আয়োজন করেন তিনি।
❍ কৃষির উন্নয়ন: রবীন্দ্রনাথ পল্লিগ্রামের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে আদর্শ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করে সেখানে ট্র্যাক্টর, পাম্পসেট ও জৈব সার ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব আনেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন।
❍ সম্প্রীতি ও ভেদাভেদ: রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করা। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে তাঁর কর্মক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান-ব্রাহ্মণ-চন্ডালের ভেদাভেদ দূর করে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন।
❍ অন্যান্য উদ্যোগ: রবীন্দ্রনাথ আধুনিক পঞ্চায়েতের ধাঁচে গ্রামের পরিচালন কাঠামো গড়েছিলেন। তিনি গ্রামে সমবায়সমিতি প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেন এবং স্বল্প সুদে চাষিদের ঋণদানের জন্য পতিসর কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ (১৮৯৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করে ন্যায্য মূল্যে তাদের দ্বারা উৎপাদিত ধান ও পাট কিনে বাজারে বিক্রির দায়িত্ব নেন।
উপসংহার: জীবনস্মৃতি' গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “আমার শিশুকালেই বিশ্বপ্রকৃতির সাথে আমার খুব একটি সহজ ও নিবিড় যোগ ছিল।” প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের এই সহাবস্থান তাঁর শিক্ষাচিন্তায় সর্বদা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।


৫.৩ বিপ্লবী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন এমনই একজন ব্যক্তি যিনি সংসারের মায়াজালে নিজেকে বন্দি না রেখে দেশমাতার উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।
❍ মাস্টারদা সূর্য সেনের  ভূমিকা
সূর্য সেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ পাস করার পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এই সময় তাঁর সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অনুরূপ সেন, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ। তাঁদের নিয়ে সূর্য সেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে সশস্ত্র বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন। রেল শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য সেনের গুপ্তসমিতির সদস্যরা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩ ডিসেম্বর) বেতনের ১৭ হাজার টাকা ছিনতাই করে। প্রায় ২ সপ্তাহ পর গোপন খবর পেয়ে পুলিশ নাগরখানা পাহাড়ে বিপ্লবীদের আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। সূর্য সেন ও অম্বিকা চক্রবর্তী গ্রেফতার হন। অবশ্য পরে তাঁরা মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান।

সূর্য সেনের নেতৃত্বে গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ-সহ ৬৫ জন সশস্ত্র বিপ্লবী চারটি উপদলে বিভক্ত হয়ে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল রাত দশটায় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ করেন ও অস্ত্র লুঠ করেন। বিপ্লবীদের খোঁজে পুলিশ চারদিকে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে, ফলে বিপ্লবী ধরা পড়েন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা শুরু হলে সূর্য সেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত মামলায় সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির আদেশ হয়। অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ-সহ ১২ বিপ্লবীর দ্বীপান্তর হয়। জেলবন্দি সূর্য সেনের ওপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর দাঁত ও হাড় ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি তাঁদের ফাঁসি কার্যকর হয়। তাঁর মৃতদেহ বহু দূরে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

 প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভূমিকা :
আদর্শবোধ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে যারা নিজেদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-৩২ খ্রি.)। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় প্রীতিলতা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংস, পুলিশ লাইন দখল, জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ (১৯৩০ খ্রি.), ধলঘাটের যুদ্ধ (১৯৩২ খ্রি.) প্রভৃতি কর্মসূচিতে অংশ নেন।

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এভাবে দেশমাতার মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিতপ্রাণ প্রীতিলতা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রীতিলতাকে তাঁর মা আদর করে ডাকতেন ‘রানি’ বলে। প্রীতিলতার মৃত্যুর প্রসঙ্গে কল্পনা দত্ত লিখেছেন—“প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন,‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে।” পরিবারের চরম আর্থিক দুর্দশায় ধাত্রীর কাজ করে সংসার চালিয়েও প্রীতিলতার মায়ের এই গর্বটুকু বড়োই বীরত্বপূর্ণ।

Tags : madhyamik abta test paper 2023,abta 2023 class 10 history solve,abta 2023 class 10 history solved,abta 2023 class 10 history,abta test paper 2023 class 10 history solve,abta test paper 2023 class 10 history,madhyamik history abta test paper solve,class 10 abta test paper solve history 2023,

No comments

Hi Welcome ....