WBBSE Class 6 Bengali Chapter Faki Hate Kolome Uttar ● ফাঁকি ● উজ্বল এক ঝাঁক পায়রা আরো পড়ুনঃ ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর ❐ ফাঁকি গল্...
WBBSE Class 6 Bengali Chapter Faki Hate Kolome Uttar
● ফাঁকি
● উজ্বল এক ঝাঁক পায়রা
❐ ফাঁকি গল্পটির বিষয়বস্তু :
নামকরণ কোনো রচনার চিহ্ন শুধু নয়। নামকরণ হল বিষয়টির গভীরে প্রবেশের চাবিকাঠি। সাহিত্যের ক্ষেত্রে তাই নামকরণের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রসিদ্ধ ওডিয়া ঔপন্যাসিক রাজকিশোর পট্টনায়কের লেখা ‘ফাঁকি’ গল্পটি কিছুটা
রূপকধর্মী বলা যায়। গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে ‘মৃত্যু’ একটি ফাঁকি। যার জন্ম আছে তার মৃত্যুও আছে।
এই পৃথিবীতে যাদের দেহে প্রাণ আছে তারা একদিন নিষ্প্রাণ হবেই অর্থাৎ মৃত্যু তাকে গ্রাস করবেই। মৃত্যু নামক
বন্ধুর হাত ধরে সে চিরতরে ফাঁকি দিয়ে পালাবে। প্রিয়জনেরা চিরকাল তার কথা ভেবে কষ্ট পাবে। ‘ফাঁকি’ গল্পটি
একটি আমগাছকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আমগাছটিকে চারা অবস্থায় লাগানো হল। তাকে যত্ন দেওয়ার ফলে সে
বড়ো হল। ফল দিল। গাছটি আশেপাশের লোকেদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠল। এমনকি বহুদূরের লোকজনও
রাজকিশোর পট্টনায়ক সেই আমগাছটির একটি সুস্পষ্ট পরিচয় পেয়ে গেল। গাছটি এমনই বিখ্যাত হয়ে উঠল যে তার মৃত্যুতে দৈনিক খবরের কাগজে দুঃখ প্রকাশ করা হল। আমগাছটির আকস্মিক মৃত্যু অর্থাৎ ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা অসংখ্য মানুষকে ব্যথিত করে গেল।
নতুন জমি কেনা হয়েছে রাস্তার ধারে। ছেলের ইচ্ছা রাস্তার ধারেই বাড়ি বানানো হোক। বাবা বলেন, পাথরের মতো শুকনো মাটিতে বাড়ি না বানিয়ে ভাগলপুর থেকে আনানো ল্যাংড়া আমের কলমচারা লাগাবেন। হাতখানেক উঁচু আমগাছের কলমি চারা আনা হল। ছেলে বলল, বাবা এই গাছ বড়ো হলে ডালপালা পাঁচিল ছাড়িয়ে রাস্তায় যাবে। রাস্তার ছেলেরা গাছের জন্য কোঁদল করবে। বাবা ছেলের কথা শুনলেন না। ছেলে রাগ করে ঘরে ঢুকে মাকে নিয়ে এলো। একদিকে মা ও ছেলে অন্য দিকে বাবা মিলিয়ে সামান্য তর্ক হল। মা-ছেলে অভিমান করে ঘরে ঢুকে গেল। ঝগড়া মিটিয়ে শেষমেষ পাঁচিল থেকে দুই হাত ভিতরের দিকে কঞ্চির বেড়ার মধ্যে আমগাছ লাগানো হল। গাছটি বড়ো হল। এবার থেকে ওই আমগাছটি গোপাল বাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে গেল নানা জনের কাছে। গাছটি নদীর ধারের গরম হাওয়ায় তার সবুজ বুক দিয়ে আটকে রাখে। গোপালবাবুর বন্ধুরা এসে ওই আমগাছের তলায় বসে গল্প করে, গল্প লেখে। গাছের পাতা পূজা, বিয়েবাড়ি, পালাপার্বণে লোকজনকে দেওয়া হয়। আম গাছে বকুল দেখা দিল। গাছে সারি সারি পিঁপড়ে লেগে গেল। গোপালবাবু ডিডিটি দিয়ে পিঁপড়ে তাড়ালেন। আম বড়ো হল না-মিষ্টি না-টক আম। দু-চারটি করে আত্মীয়স্বজনদের দেওয়া হল।
যুদ্ধের সময় সরকারিলোক আমগাছের গোড়া পর্যন্ত ট্রেঞ্চ খুঁড়ল। হেলে পড়ল আমগাছটা। আমগাছটির বয়স বাড়ল। গাছটিতে কাক বাসা বাঁধে,পেঁচা বসে, বর্ষাকালে বেনেবউ বসে। কাঠবেড়ালি গাছের ডালে ডালে খেলা করে। বাচ্চারা গাছের ডালে দোলনা টানায়। দোলনা যাতে না পড়ে যায়, তাই গাছের ডালে ঝোেমর করে মোটা প্যাচ আটা হল। একদিন ঝড় বৃষ্টি হল রাতে। সকালে দেখা গেল গাছটি উলটে পড়েছে। গোপালবাবুর মা খুব আফশোস করে ছেলেকে বলতে লাগলেন কিরে গোপাল, ওষুধ দিয়ে পিঁপড়ে মারছিলি না? পিঁপড়ে থাকলে উই লাগত না গাছে। এত বড়ো গাছটাকে উইয়ে খেয়ে ফেললে। গাছটির মৃত্যুসংবাদ প্রকাশিত হল। বাড়ির মানুষগুলোকে ফাঁকি দিয়ে চিরতরে গেল বন্ধু-গাছটি।
✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
বাংলা বইয়ের পৃষ্ঠা - ৭৪/৭৫
১.১ রাজকিশোর পট্টনায়ক কোন ভাষার লেখক?
উত্তর : ওডিয়া ভাষার লেখক।
১.২ তাঁর লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা দুটি গল্পের বইয়ের নাম ঝড়াঘর, পথর ঢিমা।
২. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
সন্দেহ, আষ্টেক, প্রত্যেক, সম্পূর্ণ, নিরপরাধ, দুর্বল।
উত্তর : সন্দেহ—সম্ + দেহ। আষ্টেক—অষ্ট + এক। প্রত্যেক—প্রতি + এক। সম্পূর্ণ—সম্ + পূর্ণ। নিরপরাধ—নিঃ + অপরাধ। দুর্বল—দুঃ + বল।
৩. প্রতিশব্দ লিখে তা দিয়ে বাক্যরচনা করো :
বাড়ি, ছেলে, রাস্তা, পাথর, গাছ, বন্ধু, নদী।
✹ বাড়ি—(গৃহ) নববর্ষের দিনেই রবিবাবু গৃহপ্রবেশ করলেন।
✹ ছেলে—(পুত্র) রাজা দশরথের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।
✹ রাস্তা—(পথ) কলকাতা থেকে মুম্বাই বিমানে প্রায় তিন ঘণ্টার পথ।
✹ পাথর—(পাষাণ) স্বামী গৌতম ঋষির অভিশাপে অহল্যা পাষাণ হয়েছিলেন।
✹ গাছ—(বৃক্ষ) বোটানিকাল গার্ডেনে প্রকাণ্ড একটি বট বৃক্ষ আছে।
✹ বন্ধু—(মিত্র) বানরদের রাজা সুগ্রীব ছিলেন শ্রীরামচন্দ্রের পরম মিত্র।
✹ নদী—(স্রোতস্বিনী) গোমুখ থেকে গঙ্গা প্রবল স্রোতস্বিনী হয়ে নিত্য বয়ে চলেছে।
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া বেছে নিয়ে লেখো :
৪.১ এটুকু জমি খালি রাখা যাক।
উত্তর : রাখা (অসমাপিকা), যাক (সমাপিকা)।
৪.২ আগে গাছ লাগাব।
উত্তর : লাগাব (সমাপিকা)।
৪.৩ কোঁদল লাগবে, বাইরের কোঁদল এসে ঘরে ঢুকবে।
উত্তর : লাগবে (সমাপিকা), এসে (অসমাপিকা), ঢুকবে (সমাপিকা)।
৪.৪ মায়ে-পোয়ে ঘরের ভিতরে চলে গেল, বিশেষ আলোচনার জন্য।
উত্তর : চলে (অসমাপিকা), গেল (সমাপিকা), আলোচনার (অসমাপিকা)।
৪.৫ সকালে গোপাল আর গোপালের মা উঠে প্রথমেই গেল আমগাছ দেখতে, গাছ নেতিয়ে পড়েনি তো?
উত্তর : উঠে (অসমাপিকা), গেল (সমাপিকা), দেখতে (অসমাপিকা), নেতিয়ে (অসমাপিকা), পড়েনি (সমাপিকা)।
৫. সকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া চিহ্নিত করো :
৫.১ বাবা আমগাছ নিয়ে পাঁচিলের কাছে লাগাচ্ছেন।
উত্তর : লাগাচ্ছেন (সকর্মক) কর্ম (আম গাছ)।
৫.২ খুব হয়েছে, মা আর ছেলের একই রকম বুদ্ধি।
উত্তর : হয়েছে (সকর্মক) কৰ্ম (বুদ্ধি)।
৫.৩ আপন চেষ্টাতেই গাছটি বেড়েছে।
উত্তর : বেড়েছে (সকর্মক) গাছটি (কর্ম)।
৫.৪ জল দেওয়া হলো।
উত্তর : দেওয়া হলো (সকর্মক) কর্ম (জল)।
৬. গল্প থেকে বেছে নিয়ে পাঁচটি অনুসর্গ লেখো। সেই অনুসর্গগুলি যোগে স্বাধীন বাক্য রচনা করো।
✹ থেকে—বাগবাজার থেকে শ্যামবাজার হেঁটে যাওয়া যায়।
✹ জন্য—আমার জন্য তুমি আর কত কষ্ট সহ্য করবে?
✹ করে—তিনি রিক্সা করে তিন কিলোমিটার গিয়েছেন।
✹ দিয়ে—তোমাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
✹ বরাবর— এই রাস্তা বরাবর মিছিলটি এগিয়ে যাবে।
✹ মধ্যে—এইটুকু ঘরের মধ্যে প্রায় গোটা দশেক লোক বাস করে।
✹ উপরে—সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
৭. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো।
জাহাজ, গাছ, পোষ, ঝড়, পশ্চিম।
উত্তর : জাহাজ—জাহাজি। গাছ—গেছো। পোষ—পোষিত। ঝড়—ঝোড়ো। পশ্চিম—পশ্চিমি।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো :
৮.১ কটক কোন নদীর তীরে অবস্থিত? ওডিশার আরও একটি নদীর নাম লেখো।
উত্তর : কটক মহানদীর তীরে অবস্থিত। ওডিশার আরও একটি নদীর নাম বৈতরণী। এ ছাড়া আরও একটি বিখ্যাত নদী হল ব্রাহ্মণী।
৮.২ গোপালের বাবা প্রথমে কেন বাগানে ফুলগাছ লাগাতে চাননি?
উত্তর : গোপালের বাবা যেখানে জমি কিনলেন সেখানকার মাটি বেলে মাটি। জল দেবারও সুবিধা নেই। ফুল গাছ লাগালে গাছে জল দেওয়া চাই। এইসব ভেবে গোপালের বাবা ফুলগাছ লাগাতে চাননি।
৮.৩ আমগাছে কেন ঠেকো দিতে হয়েছিল?
উত্তর : যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে বোমা পড়ার ভয়ে সরকারের লোক ট্রেঞ্চ খুঁড়েছিল আম গাছটির পর্যন্ত। সেদিন থেকে আম গাছটি হেলে পড়েছিল। তাই হেলে পড়া আম গাছকে একটা পেয়ারা গাছের দো-ফেঁকা শক্ত ডাল দিয়ে ঠেকো দেওয়া হয়েছিল।
৮.৪ গাছটিকে উইয়ে খেয়ে ফেলল কীভাবে?
উত্তর: গাছটিতে প্রথমে খুব পিঁপড়ে ওঠা-নামা করছিল। তা দেখে গোপালের খুব রাগ হল। সে গাছটিকে য করতে গিয়ে পিঁপড়ে তাড়ানোর জন্য গাছে ডিডিটি পাউডার স্প্রে করল। পিঁপড়েগুলো আর গাছে উঠল না। এরপর সুযোগ পেয়ে উই লেগে গেল গাছে। তারা গাছের কাণ্ডটাকে খেয়ে খেয়ে ভিতরটা ফোঁপরা করে দিল। পিঁপড়ে থাকলে গাছে আর উই লাগতে সাহস পেত না।
৮.৫ গল্প অনুসারে কটকের খবরের কাগজে আম গাছটিকে নিয়ে কী সংবাদ বেরিয়েছিল?
উত্তর : গাছটিকে নিয়ে খবরের কাগজে নিম্নোক্ত সংবাদ বেরিয়েছিল— ‘কটকে অর্ধরাত্রে ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি। শহরের ভিতরে পুরীঘাটে আমগাছ উপড়ে পড়েছে।'
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১ ‘এটুকু জমি খালি রাখা যাক’— প্রস্তাবটি কে দিয়েছিলেন? কেন তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
উত্তর : প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন গোপালের বাবা। ওইটুকু জমিতে গাছপালা কিছু লাগানোর জন্য তিনি এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ তিনি বুঝেছিলেন তাঁর কেনা নতুন জমিটির অবস্থান স্থানীয় কাঠজোড়ি নদীটির প্রায় পাশেই। সুতরাং নদীর ধারের গরম বাতাস এদিকে ধেয়ে এলে গাছ তার সবুজ পাতার বুক দিয়ে ঠেকাতে পারবে। নদীর দিক থেকে ছুটে আসা গরম বালির ঝাপটাও আপন দেহ দিয়ে আম গাছটি আটকাতে পারবে।
৯.২ ‘গোপাল মুখ তুলে সন্দিগ্ধভাবে বাবার মুখের দিকে তাকাল।'—তার এই সন্দেহের কারণ কী?
উত্তর : গোপালের বাবার ইচ্ছে ছিল, ভাগলপুর থেকে আনা একটা ল্যাংড়া আম গাছের কলমি (বড়ো গাছ থেকে কলম করা) চারা ওই জমিতে লাগাবেন। তা শুনে গোপালের মনে সন্দেহ জাগল যে, বাবা যে কলম তৈরি করেছিলেন তা প্রকৃতই ল্যাংড়া আম গাছের কিনা। তা ছাড়া আম গাছ ওইটুকু মাটিতে ভালো হবে কিনা ইত্যাদি নিয়ে দুর্ভাবনাও ছিল।
৯.৩ ‘তুই করবি বাগান।'—বাবা কেন এমন মন্তব্য করেন?
উত্তর : গোপালের ইচ্ছে ওইটুকু জমিতে ফুলের বাগান করবে। কিন্তু বাবা জানতেন গোপাল বাগান করলে তার ঠিকমতো যত্নআত্তি করতে পারবে না। ফুলের বাগান করতে গেলে তাতে মালির মতো নিয়মিত জল দিতে হবে। জমিতে আগাছা পরিষ্কার করে নিড়ানি দিতে হবে। গোপাল এসব কাজ নিয়মিত করতে পারবে না। কারণ গোপাল এই বয়স পর্যন্ত নিজের হাতে জল তুলে চানটুকুও করতে পারে না।
৯.৪ ‘গাছটাকে আর দু-হাত ভিতরে লাগালে কত ভালো হতো।'—কোন গাছ? কেন বক্তার এমন মনে হয়েছে?
উত্তর : গোপালের বাবার ভাগলপুর থেকে আনানো ল্যাংড়া আমের কলমি চারার কথা বলা হয়েছে। গাছটি পাঁচিলের ধারে বাবা লাগাতে চেয়েছিলেন। গোপাল প্রথমেই আপত্তি করেছিল। কারণ সে স্পষ্ট বলেছিল, পাঁচিলের ধারে গাছটি লাগালে বড়ো হয়ে গাছের ডালপালা পাঁচিল ডিঙিয়ে বাইরে চলে যাবে। রাস্তার ছেলেরা উৎপাত করবে। গাছের জন্য কোঁদল লাগবে। বাইরের কোঁদল এসে ঘরে ঢুকবে। এরপর সামান্য বাগ্বিতণ্ডা করে গোপালের বাবা যখন গোপাল ও তার মায়ের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গাছটাকে পাঁচিল থেকে দু-হাত ভিতরের দিকে সরিয়ে লাগালেন। তখনও গোপালের মনে সন্দেহ ছিল যে বড়ো হয়ে গাছটার ডালপালা পাঁচিল ডিঙিয়ে বাইরে চলে যেতে পারে।
৯.৫ আমগাছটি কীভাবে গোপালবাবুর বাড়ির নিশানা হয়ে উঠেছিল?
উত্তর : অপরিচিত মানুষের কাছে নিজের বাড়ির ঠিকানা বোঝাতে গেলে মোটামুটি একটা নিশানা বা চিহ্ন বলে দিতে হয়। সেই চিহ্ন খোঁজ করে আগন্তুক ব্যক্তি সহজে বাড়িটিতে পৌঁছে যেতে পারেন। গোপালবাবুর বাড়িটি কোথায় তা বোঝাতে গেলে বলতে হবে—কাঠজোড়ি নদীর ধার বরাবর পুরীঘাট পুলিশের ফাঁড়ির পশ্চিমে যেখানে পাঁচিলের মধ্যে আম গাছ দেখা যায় সেইখানে তাঁর বাড়ি। গোপালবাবু এভাবে গাছটিকে নিশানা করে তাঁর পরিচিত জনের কাছে বলতেন।
৯.৬ গাছটি কীভাবে তাদের সাহায্য করেছিল বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : আম গাছটি নদীর ধারের গরম বাতাস তার সবুজ পাতার বুক দিয়ে ঠেকিয়েছিল। কাঠজোড়ি নদীর দিক থেকে ছুটে আসা গরম বালির ঝাপটা আপন দেহ দিয়ে আটকেছিল। আম গাছটি তার ছায়ার তলায় গোপালবাবুর বন্ধুদের বসিয়ে যত খুশি বই লিখতে সাহায্য করেছিল। গাছটি প্রতি বছর কমবেশি অমূল্য আম দিয়েও বাড়ির সকলকে খুশি করেছিল। পূজাপার্বণে ঘরের বাইরের সকলকে আমপাতা দিয়ে সাহায্য করেছিল।
৯.৭ আম গাছটিকে ঘিরে বাড়ির সকলের অনুভূতির প্রকাশ গল্পে কীভাবে লক্ষ করা যায়?
উত্তর : আম গাছটি গোপালবাবুর বাবার কাছে প্রায় পুত্রের মতো। কারণ তিনি শখ করে গাছটিকে এনে তাঁর নতুন
কেনা জমিতে লাগিয়েছেন। গোপালবাবু ও তাঁর মা প্রথম প্রথম আম গাছটি প্রকৃতই ল্যাংড়া আম কিনা তা নিয়ে খুব সন্দিগ্ধ ছিলেন। তারপর গাছটিতে যখন আম ফলল তা তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই খুব মূল্যবান মনে হল। গোপালবাবু এবার গাছটির প্রতি স্নেহপরবশ হয়ে পড়লেন। তিনি গাছটির প্রতি রোজই লক্ষ রাখতে লাগলেন। সাধ্যমতো যত্ন করতে লাগলেন। ধীরে
ধীরে এক সময় গোপালবাবুর মা-ও গাছটিকে ভালোবেসে ফেললেন। তাই গাছটি উপড়ে পড়ে যেতে দুঃখ করে ছেলেকে
বলেছিলেন কীরে গোপাল, ওষুধ দিয়ে পিঁপড়ে মারছিলি না এতবড় গাছটাকে উইয়ে খেয়ে ফেলল।
৯.৮ ‘সেই দিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুবদিকে। '—কোন দিনের কথা বলা হয়েছে? গাছটি হেলে পড়ার কারণ কী?
উত্তর : সেই দিন বলতে যুদ্ধের সময় আম গাছের ওপর দিয়ে বোমা পড়ার ভয় গেছে। যুদ্ধের সময় উড়োজাহাজ থেকে যদি বোমা পড়ে তবে তার হাত থেকে বাঁচবার জন্য সরকারের লোক ট্রেঞ্চ খুঁড়ে রেখে গেছে একেবারে আম গাছের গোড়া পর্যন্ত। সেইদিন থেকে গাছ হেলে পড়েছে পুব দিকে।
৯.৯ 'ঠিক বন্ধুর মতই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে।'—গাছটি কীভাবে গোপালের বন্ধু হয়ে উঠেছিল? কোন সব কথা সে লুকিয়ে রেখেছিল?
উত্তর : গাছটি সকলের থেকে নানা অত্যাচার চুপ করে সহ্য করেছে। পূজাপার্বণ, বিবাহ বাড়িতে গাছটি থেকে পাতা ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। আম ডাল কেটে নিয়েছে। আগুন লাগানে পিঁপড়েগুলো এসে গাছটাকে কামড়ে খেয়েছে, বাসা বেঁধেছে, পাখি বাসা বেঁধেছে। গাছের আম বিলি করা হয়েছে আত্মীয়স্বজনদের কাছে। ফলে গাছটি একদিন পরিবারের একজন সদস্যে পরিণত হয়েছে। ধীরে ধীরে গাছটি একদিন গোপালের বন্ধু হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের ভয়ে সরকারি লোকেদের ট্রেঞ খোঁড়ার পর গাছটা কমজোরি হয়েছে। ফলে গাছটা পাঁচিলের ধারে রাস্তার দিকে হেলে পড়ায় রাস্তার লোকের অসুবিধা হবে বলে গোপাল মাকে না জানিয়ে গোপনে তার সরু সরু কয়েকটা ডালও কেটে দিয়েছে। তবু গাছটার কত মায়া। তার পাতার আড়ালে সব ক্ষতচিহ্ন সে লুকিয়ে ফেলে। ঠিক বন্ধুর মতোই গাছ সব কথা লুকিয়ে রেখেছে। গোপাল গিয়ে হাত বুলিয়ে দেয় গাছের গায়ে।
৯.১০ বিভিন্ন ঋতুতে আমগাছটার যে ছবি গল্পে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর : মূলত তিনটি ঋতুতে গাছটির অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। যেমন—গ্রীষ্ম ঋতু,বর্ষা ঋতু, শীত ঋতু। গ্রীষ্মকালে নদীর ধারের গরম বাতাস সে তার সবুজ পাতায় ঠেকিয়েছে। কাঠজোড়ি নদী থেকে ছুটে আসা গরম বালির ঝাপটা আপন দেহ দিয়ে আটকেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় গাছের সমস্ত পাতা ভিজে গেছে। কত ঝড় বৃষ্টি গেছে, প্রতি বছর কত ফুল, কুঁড়ি ও পাতা ভরে পড়েছে। শীতকালে গাছটি উদ্বেগ নিয়ে কুয়াশা সহ্য করেছে। কুয়াশায় কিছু বোল ঝরে গেছে। বাতাসে মটরদানার মতো বোল ছিঁড়ে পড়েছে।
৯.১১ গাছটি কীভাবে পরিবারের সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল?
উত্তর : গাছটি প্রথম আঘাত খেয়েছে যুদ্ধের সময় যখন ট্রেঞ খোঁড়া হয়। তখনই সে তার শেকড় ছিঁড়ে একদিকে হেলে পড়েছে। গাছের শরীর মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়েছে। এতেও সে নিজেকে প্রাণপণ চেষ্টায় সোজা করে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এক কথায় যখন ভিতরে ভিতরে সকলের ছায়ার আড়ালে উইপোকা আম গাছটাকে কুরে কুরে ফোঁপড়া করে দিল তখন তার যেন মেরুদণ্ড ভেঙে গেল। সে একদিন রাতে প্রবল ঝড় বৃষ্টির আঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। সকলকে সে ফাঁকি দিয়ে চিরতরে চলে গেল।
❐ উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা কবিতাটির বিষয়বস্তু :
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের লেখা কবিতাটি চৈত্র মাসের দুপুরের ঝলমলে রৌদ্রে উড়ে বেড়ানো এক ঝাঁক পায়রাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। কিন্তু মূলত কবির হৃদয়ে উথলে উঠেছে প্রেমের বিরহ বেদনা। চৈত্র মাস মানেই বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যের হিসেবে বসন্তকাল। এই সময় সাধারণত প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার মনে দোলা দেয় সুগভীর ভালোবাসার জোয়ার। কিন্তু চৈত্রের রৌদ্রের এতই প্রখরতা যে দুপুর থেকেই সাধারণত কেউ বেরোতে সাহস পায় না। বসন্ত সমীরণে প্রত্যেকের মন হয় উদাসীন। কবি তাঁর প্রেমিকাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন এই সময়ের কথা। সূর্যের উজ্জ্বল রোদে একঝাঁক পায়রা চঞ্চল পাখনায় উড়ে বেড়াচ্ছে। নিঃসীম আকাশ ঘন নীল। গ্রহ তারা যদি নীল শূন্যে থাকে থাকুক। অসীম আকাশের এই যে বারো মাসই উদাসীন প্রশান্ত মন্থর অবকাশ তাতে নিরন্তর অশান্ত দৃষ্টি অর্থাৎ গ্রহ তারা সকলেই খেলা করে চলেছে।
মহাকাল রূপ আকাশের নীচে যা কিছু ঘটছে সবই প্রেমের লীলা। কবি চৈত্রের রৌদ্রতপ্ত উড়ন্ত পায়রাগুলির দিকে তাকিয়ে তাঁর প্রেয়সীর উদ্দেশ্যে বলছেন, শ্বেতবর্ণ, পিঙ্গলবর্ণ এবং কৃষ্ণবর্ণের পায়রাগুলি উদ্দাম উল্লাসে উড়ে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে। তাদের পরস্পরের মধ্যে রয়েছে সুগভীর প্রেমের অনুরাগ। অথচ সেই উল্লাসে শুধু কবি ও তাঁর প্রেয়সী একসঙ্গে মিলিত হতে পারছেন না। তিনি এটাও আক্ষেপ করে বলছেন যে, তাঁরা দুজনেই শুধু যে এই বসন্তের মৃদুমন্দ সমীরণের দিনে মিলিত হতে পারছেন না তাই নয়, কবি তাঁদের দুজনের মতো অন্য কোনো প্রেমিক যুগলকেও দেখতে পাচ্ছেন না।
❐ প্রাকটিস সেট প্রশ্নোত্তর :
এককথায় উত্তর দাও :
(ক) গ্রহ তারাদের কোথায় থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : নীলশূন্যে।
(খ) কোন কোন পায়রাগুলি আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে?
উত্তর : শ্বেত, পিঙ্গল, কৃষ্ণ পায়রাগুলি।
(গ) কবিতায় কটি রঙের পায়রার উল্লেখ আছে?
উত্তর : তিনটি রঙের।
(ঘ) পায়রাদের কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর : কম্পিত শত শত উড়ন্ত পাপড়ির সঙ্গে।
(ঙ) দুপুরের ঝলমলে জীবন্ত রৌদ্রে কারা ওড়ে?
উত্তর : শুধু এক ঝাঁক পায়রা ওড়ে।
No comments
Hi Welcome ....