Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

class 6 bangla kumore pokar basabari question answer hate kolome

     ❐ আরো পড়ুনঃ ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা সূচিপত্র  Class 6 Bangla Kumore Pokar Basabari Question Answer | Class 6 Bangla Sahityamela ❐ কুমােরে-...


Class 6 Bangla Kumore Pokar Basabari Question Answer | Class 6 Bangla Sahityamela


❐ কুমােরে-পােকার বাসাবাড়ি বিষয়বস্তু :
পোকাগুলোর গায়ের রং মিশ-মিশে কালো। কেবল শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলদে। এদের নাম কুমোরে পোকা। এরা আমাদের দেশের ঘরের আনাচে-কানাচে বা দেয়ালের গায়ে ভিজে মাটি দিয়ে লম্বাটে ও এবড়ো-খেবড়ো ধরনের ঘর বানায়। ডিম পাড়ার সময় হলে এরা বাসা তৈরি করার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয়। দু-চারদিন আশপাশে উড়ে উড়ে ঘর তৈরির স্থান নির্বাচন করে নেয়। তারপর কাছাকাছি অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ অথবা দেড়-দুশো গজ দূর হলেও পুকুর-ডোবা-নালা ইত্যাদির পাশ থেকে ভিজে মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। মাটি সংগ্রহের সময় ভিজে মাটির ওপর বসে এবং ল্যাজ নাচাতে নাচাতে এদিক-ওদিক ঘুরে ফিরে দেখে।

উপযুক্ত মাটি সংগ্রহের সময় তীক্ষ্ণ স্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। তারপর চোয়ালের সাহায্যে মটরদানার মতো ছোট্ট একটা মাটির ঢেলা তুলে নিয়ে আসে। দেয়ালের গায়ে সেই মাটির ডেলাটিকে অর্ধচক্রাকারে চেপে বসাতে বসাতে
তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুন গুন শব্দ করে। সওয়া এক ইঞ্চির মতো লম্বা গাঁথুনি একটা কুঠুরি নির্মাণ হয়ে গেলে তার মধ্যে এক ধরনের ছোট্ট মাকড়সা ধরে এনে সেই কুঠুরির ভিতরে খাদ্য হিসেবে ভরে দেয়। তারপর তার মধ্যে একটি মাত্র ডিম পেড়ে মুখ বন্ধ করে দিয়ে তারই গা ঘেঁষে নতুন কুঠুরি নির্মাণ করে। এরকম গা ঘেষে চার-পাঁচটি কুঠুরি নির্মাণ হয়ে গেলে যেখানে খুশি কুমোরে-পোকা উড়ে পালায়। বাচ্চার জন্য খাদ্য ও বাসস্থান তৈরি করে দিয়েই সে খালাস।

:  Direct Table Of Content  :
1. কুমােরে-পােকার বাসাবাড়ি

কুমােরে-পােকার বাসাবাড়ি 

 কুমোরে পোকার বাসা বাড়ি গদ্যাংশের প্রশ্ন উত্তর
   ✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১.১. গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় কী ধরনের লেখালিখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন?
উত্তর : জীবজগতের খুঁটিনাটি তথ্য সহজভাব ও নরম ভাষায় লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১.২. তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখ। 
উত্তর : তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম ‘বাংলার কীটপতঙ্গ'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
২.১. কুমোরে পোকার চেহারাটি কেমন?
উত্তর : কালো রঙের লিকলিকে একপ্রকার পোকা। গায়ের রং আগাগোড়া মিশমিশে কালো কেবল শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলদে।
২.২. কুমোরে-পোকা কী দিয়ে বাসা বানায়?
উত্তর : ভিজে মাটি দিয়ে কুমোরে-পোকা বাসা বানায়।
২.৩. কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে—তা কীভাবে বোঝা যায়? 
উত্তর : যখন কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধে তখনই তার তীক্ষ্ণ একটানা গুনগুন শব্দ শোনা যায়। 
২.৪. মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা কী করে?
উত্তর : মাকড়সা দেখলেই ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। কিন্তু কামড়ে ধরলেও একেবারে মেরে ফেলে না। শরীরে হুল ফুটিয়ে একরকম বিষ ঢেলে দেয়।

৩। নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলি বিশেষ্য করো :
  • লম্বাটে—লম্বা। 
  • স্থান—স্থানীয়। 
  • নির্বাচিত—নির্বাচন। 
  • নির্মাণ—নির্মিত। 
  • সতি—সঞ্চয়।
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে অনুসর্গ খুঁজে বের করো :
৪.১. বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে হয়।
উত্তর : জন্য।
৪.২. সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয়। 
উত্তর : থেকে।
৪.৩. সেই স্থানে কাদামাটি চাপা দিয়ে দেখেছি।
উত্তর : দিয়ে।
৫. উপযুক্ত প্রতিশব্দ পাঠ থেকে খুঁজে লেখো :
উত্তর : নির্মাণ—তৈরি। উপযোগী—উপযুক্ত। ভর্তি—মুখ বন্ধ। সন্ধান — খোঁজ। ক্ষান্ত — নিরস্ত।
৬. তুমি প্রতিদিন পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাকড়সা প্রভৃতি কীটপতঙ্গ তোমার চারপাশে দেখতে পাও। তাদের মধ্যে কোনো একটিকে পর্যবেক্ষণ করো, আর তার চেহারা, স্বভাব, বাসা বানানোর কৌশল ইত্যাদি খাতায় লেখো।
কীট/পতঙ্গের নাম মাকড়সা।
কোথায় দেখেছ ঘরের কোণে।
চেহারা/গায়ের রং কড়ে ছোলার মতো। গায়ের রং কালচে বা ছাইভাব থাকে।
কীভাবে চলে কাঁকড়ার মতো আটটি পা ফেলে হাঁটে।
কী খায় অতি ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ ধরে খায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিজের বাসায় সারাক্ষণ চুপ করে বসে থাকে।
বাসাটি দেখতে কেমন মাছ ধরার ছড়ানো গোল জালের মতো।
কীভাবে বানায় নিজের শরীরের পিছন দিয়ে সুতোর মতো এক ধরনের লালা বের করে ঘরের দুই কোণের দেয়ালের মাঝামাঝি জালের মতো বাসা বানায়।

৭. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
যথেষ্ট, পূর্বোক্ত, জলাশয়, পরীক্ষা, চক্রাকার, নিরস্ত্র
  • যথেষ্ট = যথা + ইষ্ট
  • পূর্বোক্ত = পূর্ব + উক্ত
  • জলাশয় = জল + আশয়
  • পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা
  • চক্রাকার = চক্র + আকার
  • নিরস্ত্র = নিঃ + অস্ত্র

৮. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
৮.১. কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন?
উত্তর : দেয়ালের গায়ে অর্ধচক্রাকারে বসানো লম্বাটে বাসা ভিতরটা ফাঁপা, দু-দিকে মুখবন্ধ করা।
৮.২. কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর প্রস্তুতি কীভাবে নেয়?
উত্তর :  ডিম পাড়ার সময় হলেই এরা বাসা তৈরি করার জন্য দু-চারদিন উড়ে উড়ে উপযুক্ত স্থান খোঁজে। স্থানটি পুনঃপুন দেখে নেয়। দু-চারবার এভাবে দেখে নিয়ে যতটা সম্ভব নিকটবর্তী স্থানে কাদামাটি সন্ধান করতে বের হয়। কাদামাটির সন্ধান পেয়ে গেলেই বাসা নির্মাণের জন্য সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তাটি চিনে নেয়।
৮.৩. কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটি নিজের ভাষায় লেখো। 
উত্তর : কুমোরে-পোকা প্রথমে বাসা বানানোর উপযুক্ত স্থান নির্বাচিত করে। তারপর বাসা তৈরির জন্য মাটি সংগ্রহ করার সময় উড়ে গিয়ে ভিজে মাটির ওপর বসে এবং ল্যাজ নাচাতে নাচাতে এদিক-ওদিক ঘুরে ফিরে দেখে। উপযুক্ত মনে হলেই সেখান থেকে ভিজে মাটি তুলে নিয়ে চোয়ালের সাহায্যে খুব ছোট্ট একটা ডেলা মাটি মটরদানার মতো গোল করে মুখে নিয়ে উড়ে যায়। মাটি খুঁড়ে তোলার সময় অতি তীক্ষ্ণ স্বরে একটানা গুনগুন শব্দ তৈরি করে। মুখ দিয়ে চেপে চেপে নরম মাটির ডেলাটিকে দেয়ালের গায়ে অর্ধচক্রাকারে বসিয়ে দেয়। মাটির ডেলাটিকে লম্বা করে চেপে বসানোর সময়ও তীক্ষ্ণ স্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। কোনো অদৃশ্য স্থানে বাসা বাঁধার সময়ও ওই গুনগুন শব্দ শুনেই বুঝতে পারা যায় যে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে।

৮.৪. ‘এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে।'—কোন অসুবিধাগুলির কথা এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর : প্রথমে বাসা নির্মাণের উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতেই কুমোরে-পোকার তিন-চারদিন সময় লেগে যায়। তারপর বাসা নির্মাণের জন্য যতটা সম্ভব কাছাকাছি অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ ব্যবধান থেকে মাটি সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকে। আবার অত কাছাকাছি বাসা নির্মাণের উপযোগী মাটি না পেলে সময় সময় দেড়-দুশো গজ দূর থেকেও মাটি সংগ্রহ করে। এরপর কোনো কারণে ওই বাসাটি নষ্ট হয়ে গেলে আবার কোনো জলাশয়ের পাড়ে উড়ে গিয়ে সেখান থেকে ভিজা মাটি সংগ্রহ করে পূর্বের জায়গায় নতুন করে বাসা তৈরি করে। এভাবে যতবারই তার নির্মীয়মান বাসা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে নষ্ট হয়ে যায় ততবারই সে পুকুর বা নালা, ডোবা যত দূরেই থাকুক না কেন, সেখান থেকেই ভিজে মাটি এনে বাসা তৈরি করে। এসব ঘটনা দেখে বোঝা যায় যে, কুমোরে-পোকা তার স্থান নির্বাচন হয়ে গেলে এবং বাসা তৈরি করতে করতে কোনো কারণবশত বাসাটি নষ্ট হয়ে গেলে তার বাসা সম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে।

৮.৫. কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো। শিকারকে সে কীভাবে সংগ্রহ করে?
উত্তর : কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য হল তার বাচ্চাদের খাদ্য জোগান দেওয়া। আমাদের দেশে যেসব খুদে খুদে মাকড়সা বাসা বাঁধতে জানে না, যারা ঘুরে ঘুরে শিকার ধরে খায় তাদের দেখতে পেলেই কুমোরে-পোকা ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। কিন্তু কামড়ে ধরলেও একেবারে তাকে মেরে ফেলে না। শরীরে হুল ঢুকিয়ে একরকম বিষ ঢেলে দেয়। অনেকসময় শিকারের শরীরে পাঁচ-সাতবার হুল ঢুকিয়ে দেয়। এর ফলে মাকড়সাটার মৃত্যু হয় না বটে, কিন্তু একেবারে অসাড়ভাবে পড়ে থাকে। অসাড়ভাবে পড়ে থাকা ওই মাকড়সাকে মুখে করে নবনির্মিত কুঠুরির মধ্যে উপস্থিত হয়।

৮.৬. বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।'—কখন কুমোরে-পোকা তার বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না?
উত্তর : নবনির্মিত কুঠুরির মধ্যে কুমোরে-পোকা তার শিকার করা মাকড়সা নিয়ে এসে চিত করে রেখে তার উদর দেশের এক পাশে লম্বাটে ধরনের একটি ডিম পাড়ে। তারপর সারাদিন আবার অনেক খুঁজে দশ-পনেরোটা মাকড়সা সংগ্রহ করে সেই কুঠুরির মধ্যে ভরে দেয়। তারপর দু-তিন ডেলা মাটি এনে কুঠুরির মুখ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। তারপর দুএকদিনের মধ্যেই পূর্বোক্ত কুঠুরির গায়ে আর একটা কুঠুরি তৈরি করে। সেই কুঠুরিতেও মাকড়সা সম্পূর্ণ ভরে দিয়ে তাতে ডিম পেড়ে মুখ বন্ধ করার পর তৃতীয় কুঠুরি নির্মাণ শুরু করে দেয়। এভাবে একটি বাসার মধ্যে সে চার-পাঁচটি কুঠুরি তৈরি করে ফেলে। কুমোরে-পোকার ডিম পাড়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সে তার ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি চলে যায়। বাসার আর কোনো খোঁজখবর করে না। এই ঘটনায় বোঝা যায় যে কুমোরে-পোকা প্রথমত তার ডিম ফুটে বেরোনো বাচ্চাদের জন্য আগে ভাগেই খাবার সংগ্রহ করে রেখে দেয়। তারপর কুঠুরির মুখ এমনভাবে বন্ধ করে দেয় যে তাতে তার ডিমগুলির বা ডিম ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলির আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা থাকে না কিংবা তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যেরও অভাব ঘটে না।

আমার ময়ূর 

❐ আমার ময়ূর বিষয়বস্তু :
লেখিকা প্রিয়ম্বদা দেবী পাখিদের খুব ভালোবাসেন। মানুষের থেকে পাখি অনেক স্বাধীনতা ভোগ করে। প্রকৃতির রাজ্যে তারা ইচ্ছামতো যেখানে-সেখানে যেতে পারে। খাঁচায় ভরে রাখলে তাদের কষ্ট হয়। তাই লেখিকা একবার একটি ময়ূর পুষে ছিলেন। প্রথমে ময়ূরটি ছোট্ট কচি ছিল। মনে হত মুরগিছানা। ক্রমে ময়ূরটি সুন্দর হয়ে উঠল। তার মাথার চূড়া দেখা দিল। অপরূপ ল্যাজ দেখা দিল। প্রথমে গায়ের রং মাটির মতো, শুকনো ঘাসের মতো মনে হল। তারপর একসময় তার সর্বাঙ্গে রঙের লীলা ছুটল, চূড়ায় দেখা দিল সোনালি সবুজের ছটা। তাকে সন্তানের মতো লেখিকা নিজের হাতে খাইয়ে দিতেন। চিংড়ি মাছ আর মোটা ভাত খেতেই সে বেশি ভালোবাসত। ভারি দুষ্টু আর মিষ্টি তার নয়ন ভোলানো রূপ, ধরনধারণ, গতিভঙ্গি সবই মনোমুগ্ধকর। সারাক্ষণ সে লেখিকার সঙ্গে সঙ্গে আঁচলধরা ছোট্ট শিশুর মতো ঘুরে বেড়াত। ভাঁড়ার ঘরে যেত, রান্নাঘরে ঢুকত। আহ্লাদ পেয়ে পেয়ে সে লেখিকার আদুরে ছেলের মতো হয়ে উঠল। তার দিকে লক্ষ না দিলে সে আঁচল ধরে টানত।

লেখিকা লিখতে বসলে তাঁর চৌকির হাতায় এসে বসত। তবু তার দিকে চেয়ে না দেখলে তাঁর হাতে সে ঠোকর দিত, তাঁর এলোচুলের গুচ্ছ ধরে টানত। ছোটোবেলায় সে ঝুড়ি চাপা হয়ে থাকত। বড়ো হয়ে সে সন্ধের আগে ছাদের সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে ছাদের পাশে প্রকাণ্ড একটা দেবদারু গাছের ডালে গিয়ে রাত কাটাত। ভোর হলে আনন্দে উড়ে উড়ে নীচে নেমে আসত। সে ছিল স্বাধীন। লেখিকার ছিল একটি কেনারি, একজোড়া চিনে টিয়া আর একটি মস্ত বড়ো তার সুন্দর ময়না। তারা ছিল খাঁচায়। বড়ো ময়নাটা বন্দেমাতরম্ বলতে পারত। একদিন ময়ূরটা তার খাঁচা খুলে দিল। ময়নাটা
আকাশে উড়ে গেল। অনেকসময় ময়ূরটা নিজেও আর ঘরে থাকতে চাইত না। প্রতিবেশীদের বাড়ি পালিয়ে যেত। তাকে মালি খুঁজে আনত। একদিন ভোরে ময়ূরটা নিজেও পালিয়ে গেল। অনেক বেলায় অপরিচিত একজন তাকে কোলে করে দিয়ে গেল। তাঁর হারানো সন্তান ফিরে পেয়ে লেখিকা আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু খুব বুঝেছিলেন, পাখির আনন্দ আকাশে ঘুরে বেড়ানো। সে স্বাধীন প্রাণী। তাকে গৃহবন্দি করে রাখা উচিত নয়।

 ❐ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
(ক) ময়ূরের গায়ের রং ছোটোবেলায় ছিল (আকাশে/শুকনো ঘাসের/কলাপাতার) মতো।
উত্তর : শুকনো ঘাসের
(খ) মাথার চুড়াটি বেড়ে উঠে (সোনালি/বেগুনি/হলুদে) সবুজে ভরে উঠল।
উত্তর : সোনালি
(গ) ময়নার খাঁচার দরজা খুলে দিয়েছিল (দাসীরা/ময়ূর/ছেলেরা)।
উত্তর : ময়ূর
(ঘ) ময়ূর যখন ছোটো ছিল তখন তাকে ঢেকে রাখত (ছোটোঝুড়ি/বড়োঝুড়ি/জাল) দিয়ে।
উত্তর :  বড়োঝুড়ি।
 

চিঠি কবিতা জসীমউদ্দীন

❐ চিঠি কবিতা বিষয়বস্তু : চিঠি কবিতা জসীমউদ্দীন প্রশ্ন উত্তর
কবি লাল মোরগের ভোর-জাগানো সুর-ভরা চিঠি পেলেন।মোরগের পাখার গায়ে শিশু-উষার রঙিন করা রঙিন হাসি মাখানো। কবি চিঠি পেলেন ঝিকিমিকি বালুচরের চখাচখির, ঢেউ-ডাগানো বর্ষার এবং গাং শালিকদের কাছ থেকে, কিচির-মিচির করা বাবুইপাখির বাসা থেকে। বর্ষাকালের ফসলের ক্ষেতের কোড়াকুড়ির কাছ থেকে, গুরুগুরু মেঘের কাঁদনের মাঝে দেয়ার মেঘের ডাক থেকে, আছাড় খাওয়া উদাস বাতাসের কাছ থেকে। এদের সঙ্গে সঙ্গে কবি পেয়ে গেলেন শীতের রোদের মতো মিষ্টি চিঠি খোকা ভাইয়ের কাছ থেকে। সুনীল আকাশে উড়ে বেড়ানো ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের দিকে তাকিয়ে একান্তে কবি খোকা ভাইয়ের রঙিন হাতের চিঠি নিয়ে ভাবতে লাগলেন। তাঁর হৃদয়ে যেন খুশির নূপুর ঝুমুর-ঝামুর বেজেই চলেছে।


class 6 bengali chithi question answer

✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১.১. কবি জসীমউদ্দিনকে বাংলা কাব্যজগতে কোন অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে?
উত্তর : ‘পল্লি কবি’ অভিধায় অভিহিত করা হয়েছে।
১.২. তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : নক্সীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট।
২. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
২.১. কবি কার কার থেকে চিঠি পেয়েছেন?
উত্তর : মোরগ, চখাচখি, গাঙ্গশালিক, বাবুই, কোড়াকুড়ি, মেঘ, দেয়া, খোকা-ভাই প্রভৃতির কাছ থেকে।
২.২. লাল মোরগের পাঠানো চিঠিটি কেমন?
ত্তর :  ভোর-জাগানোর সুর-ভরা চিঠি।
২.৩. চখাচখি কেমন চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর : ভোরের সূর্য উঠলে নদীর বালুচরে যে আলো ঝিকিমিকি করে তা জানিয়ে চিঠি লিখেছে চখাচখি।
২.৪. গাঙ্গশালিক তার চিঠিতে কী বলেছে?
উত্তর : গাঙ্গ হল ছোটো নদী। তার পাড়ে থাকে প্রচুর শালিক। তারা মাঝে মাঝে শিকার ধরা নিয়ে মারামারি করে। তাই তাদের বিচার করার জন্য কবিকে তাদের মোড়ল হওয়ার জন্য তারা চিঠি লিখেছে।
২.৫. বাবুই পাখির বাসার থেকে আসা চিঠিটি কেমন?
উত্তর : বাবুই পাখির চিঠি ছিল কিচিরমিচির সুরে ভরা।
২.৬. কোড়াকুড়ীর পাঠানো চিঠিটির বর্ণনা দাও।
উত্তর : বাংলাদেশে বর্ষাকালের প্রধান ফসল হল ধান। সেই ধানের খেতে বর্ষার জল ঢুকেছে। ধানগাছের পাতা তখন শুধু সবুজে সবুজে সমগ্র প্রকৃতিকে ভরিয়ে তুলেছে। বর্ষার জলধারায় ধানের সেই সবুজ পাতাগুলি আসর জমিয়ে নাচানাচি করছে।
২.৭. কার চিঠি পাওয়ায় কবির মনে হয়েছে নিখিল বিশ্ব তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছে?
উত্তর : খোকা-ভাইয়ের চিঠি পাওয়ায় কবির মনে হয়েছে নিখিল বিশ্ব তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছে। তাই কবি দেখছেন দূর আকাশের সুনীল পাতায়ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল উড়ে চলেছে। অর্থাৎ, তারাই খোকা-ভাইয়ের চিঠি কবিকে পৌঁছে দিয়েছে।
২.৮. এই কবিতায় কোন ঋতুর প্রসঙ্গ রয়েছে?
উত্তর : এই কবিতায় এসেছে মূলত বর্ষা ঋতুর প্রসঙ্গ। কিন্তু খোকা ভাই-এর চিঠি পড়ে কবির মনে হয়েছে যেন চিঠিটি তাঁকে শীতের রোদের মিঠে আমেজ দিয়েছে।
২.৯. কবিতায় অন্য ঋতুর পটভূমি সত্ত্বেও খোকাভাই-এর চিঠির লেখনখানি 'শীতের ভোরের রোদের মতো’ মিঠে মনে হওয়ার তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : চিঠি প্রায় সকলকেই কমবেশি লিখতে হয়। পড়তে হয়। নানান জনের চিঠির আস্বাদ নানান রকম। প্রথম থেকে কবিতাটিতে কবি শুধু বর্ষাকালের প্রাকৃতিক রূপের বর্ণনা দিয়েছেন। বর্ষার বৈচিত্র্যময় রূপ নিশ্চয়ই আনন্দ দেয় সকলকেই। কিন্তু বর্ষা মানুষকে প্রায় গৃহবন্দি করে রাখে বলে মাঝে মাঝে বিরক্ত হতে হয়। তাই কবি খোকাভাইয়ের চিঠিতে শীতকালীন রোদের মিঠে আমেজ অনুভব করেছেন।
২.১০. ‘খুশির নূপুর ঝুমুর ঝামুর বাজছে আমার নিরালাতে'—পঙ্ক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : যখন একটানা বৃষ্টি পড়ে তখন তার সুর বড়ো অপূর্ব মনে হয়। নর্তকী যেমন নাচলে তার পায়ের নূপুর এক অপূর্ব লহরী তোলে তেমনি বর্ষায় বৃষ্টি পতনের সুর আমাদের মনে আনন্দের অপূর্ব অনুভূতি এনে দেয়। মনে হয় হৃদয়তন্ত্রীতে অহর্নিশি যেন কেউ ঝুমুর ঝামুর নূপুর বাজিয়ে চলেছে। বর্ষা বড়ো বৈচিত্র্যময়ী। এই বৃষ্টি এই রোদ্দুর। কখনও বা রোদ আর বৃষ্টির খেলা চলে। তারই মাঝে প্রকৃতির বুকে নিরালায় কবি যখন বসে থাকেন তখন তাঁর কানে ধ্বনিত হয় বর্ষার বারি বর্ষণের খুশির নূপুরের ঝুমুর ঝামুর ধ্বনি।

৩. কবিতা থেকে এমন তিনটি শব্দ খুঁজে বের করো যা কোনো ধ্বনির অনুকরণে তৈরি। একটি উদাহরণ দেওয়া হল।
 যেমন—কল কল।
উত্তর : কিচিরমিচির, গুরুগুরু, ঝুমুর-ঝামুর।
৪. শব্দঝুড়ি থেকে ঠিক শব্দ নিয়ে শূন্যস্থানে বসাও :
শব্দঝুড়ি : স্রোতে, রঙ্গিন, কাঁদন, গাঙ।
রঙ্গিন  রঙিন
গঙ্গা গাঙ
স্রোতে  সোঁতে
ক্রন্দন  কাঁদন
৫. ‘ঢেউ-এ ঢেউ-এ’ এখানে ‘ঢেউ-এ’ শব্দটি পরপর দু-বার ব্যবহার হওয়ায় অর্থ দাঁড়িয়েছে, ‘অজস্র ঢেউ-এ’। অর্থাৎ, একই শব্দ পরপর দু-বার ব্যবহারে বহুবচনের ভাব তৈরি হয়েছে। এই কবিতাটি থেকে আরও তিনটি অংশ উদ্ধৃত করো যেখানে এমন ঘটেছে।
উত্তর : ‘ঝাঁকে ঝাঁকে’, ‘ঝুমুর ঝামুর’, ‘কিচির মিচির’ ইত্যাদি শব্দগুলি থেকে বহুবচনের ভাব তৈরি হয়েছে।
৬. ‘গানের পাড়ের মোড়ল'— শব্দবন্ধটিতে পরপর দু-বার'-এর’ সম্বন্ধ বিভক্তিটি এসেছে। কবিতা থেকে এমন আরও শব্দবন্ধ খুঁজে বের করো যেখানে পরপর দু-বার ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি প্রয়োগে সম্বন্দ্বপদ তোর হয়েছে।
উত্তর :  মোরগের ভোর-জাগানোর সুর-ভরা, চখাচখির বালুচরের ঝিকিমিকি, পাখির বাসার থেকে,কোড়াকুড়ি, বর্ষাকালের, বর্ষাকালের ফসল-ক্ষেতে, শীতের ভোরের রোদের মতো ইত্যাদি শব্দগুলিতে সম্বন্ধপদ তৈরি হয়েছে।
৭. ‘কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া’—পদক্রম অনুসারে নীচের বাক্যগুলিকে আবার লেখো :
৭.১. লিখে গেছে গানশালিকে গানের পাড়ের মোড়ল হ'তে।
উত্তর : গানশালিকে (কর্তা) গানের পাড়ের মোড়ল (কর্ম) হতে লিখে গেছে (ক্রিয়া)।
৭.২. ইহার সাথে পেলুম আজি খোকা ভাই-এর একটি চিঠি।
উত্তর : (আমি—উহ্য কর্তা) ইহার সাথে আজি খোকা ভাই-এর একটি চিঠি (কর্ম) পেলুম (ক্রিয়া)।
৭.৩. সবুজপাতার আসরগুলি নাচছে জল-ধারায় মেতে।
উত্তর : সবুজপাতার আসরগুলি (কর্তা) জল-ধারায় (কর্ম) নাচছে মেতে (ক্রিয়া)।
৭.৪. উদাস বাতাস আছড়ে বলে কে যেন বা চাইছে কাকে।
উত্তর : উদাস বাতাস (কর্তা) কে যেন বা চাইছে কাকে (কর্ম) আছড়ে বলে (ক্রিয়া)।
৭.৫. শীতের ভোরের রোদের মতো লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর : লেখনখানি (কর্তা) শীতের ভোরের রোদের মতো মিঠি (কর্ম) লাগছে (ক্রিয়া)।
৮. নীচের বাক্যগুলিকে ভেঙে দুটি বাক্যে পরিণত করো :
৮.১. চিঠি পেলুম লাল মোরগের ভোর-জাগানোর সুর-ভরা।
উত্তর :  চিঠি পেলুম। লাল মোরগের ভোর জাগানোর সুর-ভরা (চিঠি)।
৮.২. সবুজপাতার আসরগুলি নাচছে জল-ধারায় মেতে।
উত্তর : সবুজপাতার আসরগুলি নাচছে। জল-ধারায় মেতে (তারা নাচছে)।
৮.৩. শীতের ভোরের রোদের মতো লেখনখানি লাগছে মিঠি।
উত্তর : শীতের ভোরের রোদ মিঠি। (সেইরকম) লেখনখানি লাগছে মিঠি।
৮.৪. আকাশ জুড়ে মেঘের কাঁদন গুরুগুরু দেয়ার ডাকে।
উত্তর : আকাশ জুড়ে মেঘের কাঁদন (শোনা যাচ্ছে)। গুরুগুরু দেয়ার ডাকে (মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে)।
৮.৫. লিখে গেছে গানশালিকে গানের পাড়ের মোড়ল হ’তে।
উত্তর :  লিখে গেছে গানশালিকে। গানের পাড়ের মোড়ল হতে (লিখে গেছে)।


৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১. কবি প্রকৃতির কোন কোন প্রতিনিধির কাছ থেকে কেমন সমস্ত চিঠি পেয়েছিলেন, বিশদে লেখো।
উত্তর : কবি লাল মোরগের ভোর-জাগানোর সুর-ভরা চিঠি পেয়েছেন। মোরগের লাল পাখনায় ছিল ভোরের রঙিন কিরণ। বালুচরের ঝিকিমিকি আলোয় চখাচখির দেওয়া চিঠি পেয়েছেন। গানশালিক তাঁকে গানের পাড়ের মোড়ল হওয়ার জন্য চিঠি লিখেছে। বাবুইপাখির বাসার থেকে কিচিরমিচির শব্দের চিঠি পেয়েছেন কবি। বর্ষাকালের ফসলের খেত থেকে কোড়াকুড়ির চিঠি পেয়েছে। এরপর কবি এমন একটি চিঠি পেলেন যাতে তিনি পেলেন শীতকালীন রোদের মিষ্টি আমেজ। সেই চিঠিটি লিখেছে তাঁর খোকা ভাই।

৯.২. খোকা ভাই-এর চিঠিটির প্রসঙ্গে কবি যে সমস্ত উপমা ও তুলনাবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তাদের ব্যবহারের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : খোকাভাই-এর চিঠিতে কবি শীতের ভোরের রোদের মিষ্টি আমেজ অনুভব করেছেন। এখানে কবি খোকাভাইয়ের চিঠির উপমা দিচ্ছেন শীতের ভোরের রোদের মিষ্টতার সঙ্গে। সুনীল আকাশে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঊড়ে বেড়াচ্ছে নানারকম ভঙ্গিতে। ঝাঁকে ঝাঁকে তারা কখনো ঘুরপাক খাচ্ছে উড়ে উড়ে, আবার কখনও ওপর দিকে উঠে নীচে নামছে, আবার নীচ থেকে ওপরে উঠছে। মাটিতে যেমন শিশু গড়াগড়ি খায় পাখিগুলিও তেমনি  উড়ে উড়ে ছড়ানো গড়ানো খেলা খেলে চলেছে। শীতের ভোরের রোদের মিঠে আমেজ যেমন পাওয়া যায় তেমনি খোকাভাইয়ের চিঠিতেও তাই মিষ্টতা অনুভব করলেন। তার মধ্যে তিনি নিরালায় বসে যেন নূপুরের ঝুমুরঝামুর শব্দ শুনে খুশিতে ভরে উঠলেন।

৯.৩. তোমার প্রিয় বন্ধুকে তোমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ঘটনাটি জানিয়ে একটি চিঠি লেখো।
জগদীশপুর,
ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর
১২/৬/২০২২
প্রিয় পরেশ,

আশা করি ভালো আছিস। তোর চিঠি অনেকদিন পাইনি। আজ একটা মস্ত খুশির খবর তোকে না জানিয়ে থাকতে পারলাম না। তুই ভালো করেই জানিস বাবার থেকে আমি মাকে বেশি ভয় করি। যা হোক গত রবিবার হঠাৎ সকালে দাদুর শরীর খারাপ শুনে মা গেলেন তাঁকে দেখতে। আর বাবা তো রবিবারেও তাঁর ব্যাবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি বাড়িতে নেই। বাড়িতে আমি, দিদি আর ছোটো ভাই টোটন। বেলা এগারোটা নাগাদ হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। আমি টোটনকে বললাম চল্‌ ভাই আজ বৃষ্টিতে ভিজব। সে যেন তৈরি হয়েই ছিল। তার কোমরে ছিল গার্ডার লাগানো প্যান্ট। বয়স তার আট লজ্জা তার কম। সে ফট্ করে কোমর থেকে প্যান্টটাকে নামিয়ে দিল। আমি ভাইয়ের হাত ধরে উঠোনে নামলাম। পাড়ার আরও তিনটি ছেলেমেয়ে আগে থেকেই বৃষ্টিতে ধেই ধেই করে নেচে নেচে ভিজছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম আমরা দুটি ভাই। দোতলার বারান্দা থেকে আমার চোদ্দো বছরের দিদি চ্যাঁচাতে লাগল, মা আসুক, তোদের ঠ্যাঙানি হবে রে! কিন্তু কে কার কথা শোনে! বৃষ্টি ভেজার যে সে কী আনন্দ তা যে না বুঝেছে সে কিছুই জানল না। প্রায় আধ ঘণ্টা পর বৃষ্টি থামল। আমরা ঘরে ঢুকলাম। দিদি আমাদের কলঘরে ঢুকিয়ে আবার স্নান করিয়ে দিল। এমন আনন্দ আমি কোনোদিন ভুলব না। তুই চিঠি লিখিস।

তোর একান্তই—বরুণ
শ্রী পরেশ সরকার
বেলিয়াঘাটা, কলকাতা-১০


মরশুমের দিনে সুভাষ মুখোপাধ্যায়


❐ মরশুমের দিনে বিষয়বস্তু :
‘মরশুম’ শব্দটি ফারসি বা পারসিক ভাষা থেকে বাংলায় মিশে গেছে। এই শব্দটি অনেকসময় ‘মৌসম’ রূপেও উচ্চারিত হয়। বাংলায় এই শব্দটির অর্থ হল ঋতু। দূরের শহরে কী গঞ্জে যাওয়ার বাস ছাড়বে ছোট্ট মফল শহর থেকে। যাত্রীদের মাল বাসের কন্ডাক্টর আর ক্লিনার ধরাধরি করে ছাদে তুলছে। ছোট্ট এই শহরে গ্রাম-গঞ্জ থেকে লোকেরা এসেছিল কারও কোর্টে বা সরকারি সেরেস্তায় কাজ ছিল। কারও ছিল হাসপাতালে ভরতি রোগী। কেউ এসেছিল তার দোকানের মালপত্র কিনতে। বাস ছাড়তে দেরি আছে। যাত্রীরা ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুর ঘুর করছে। বাসের ড্রাইভার চা খাচ্ছে। তার দিকে লক্ষ রেখে যাত্রীরা গরমের দিনে গায়ে হাওয়া লাগায়। শীতের দিনে রোদ লাগায়। বাসে বেশি ভিড় হয় মাঠ থেকে ফসল উঠলে। তখন গ্রামের মানুষদের হাতে পয়সা আসে। গ্রাম অধ্যুষিত বাংলার মানুষদের পালাপার্বণ, আনন্দ-উৎসব, শিক্ষা-সংস্কৃতি নির্ভর করে এই চাষবাসের ওপরেই।

বাস চলেছে আগুনের মতো তপ্ত হয়ে ওঠা কুচকুচে কালো পিচ রাস্তায়। বাসের ভিতর থেকে সেই রাস্তাকে সোজাসুজি দূর পর্যন্ত দেখলে মনে হয় মরীচিকার মতো। অর্থাৎ, তেতে ওঠা কালো পিচে গ্রীষ্মের দুপুরের রোদ পড়ে দূর থেকে জল চিকচিক করছে মনে হয়। শরৎকালের বাসে বসে গ্রামের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে চললে দেখা যায় চতুর্দিকে সোনালি ধানের বন্যা। ধানকাটার পর মাঠের দৃশ্য। মাঠে মাঠে জেগে ওঠা আলগুলো মনে হয় হাঁড়পাজরের মতো। আকাশের রং তামাটে। হাওয়ায় বয়ে চলে আগুনের হলকা। কোথাও একবিন্দু জল নেই। জলের জন্য গ্রামের বউ-ঝিরা ব্রত পালন করে। কুলো, জলের ঘট নিয়ে বাড়ি বাড়ি গান গায়। চাল-তেল-সিঁদুর বা দু-চারটে পয়সা আর পানসুপারি পায়। তা দিয়ে তারা মাঠে গিয়ে গান গেয়ে পুরো করে একে বলে মেঘারানির কুলো প্রথা। কোথাও চাষির ঘরের বউগুলি করে ‘ক্ষেত্রব্রত’। একসময় বৃষ্টি নামে। গ্রীষ্ম চলে যায়। বর্ষা নামে। চাষ শুরু হয়। মাঠে ফসল ফলে। হঠাৎ আবার বন্যায় যাতে ফসল না নষ্ট হয়ে যায় তাই চাষির মেয়েরা ভাদুলি ব্রত পালন করে।

মরশুমের দিনে সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

✐ হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর :
১.১. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘পদাতিক'।
১.২. তাঁর লেখা একটি গদ্যের বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : তাঁর লেখা একটি গদ্যের বইয়ের নাম 'ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১. ধান শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর : ধান শব্দটি এসেছে ধান্য থেকে। কিন্তু আমাদের পাঠ্যাংশের ‘মরশুমের দিনে’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে ‘ধান বলতে ধন'। অর্থাৎ, ধন থেকে ধান।
২.২. ‘অগ্রহায়ণ’ বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর : ‘অগ্রহায়ণ’ বলতে বোঝায় বছরের গোড়া।
২.৩. এদেশের সমস্ত পালাপার্বণ, আনন্দ-উৎসব— এসবের মূলে কী রয়েছে?
উত্তর : এদেশের সমস্ত পালাপার্বণ, আনন্দ-উৎসব—এসবের মূলে রয়েছে চাষাবাদ।
২.৪. বসুধারা ব্রত কোন ঋতুতে হয়?
উত্তর : গ্রীষ্ম ঋতুতে বসুধারা ব্রত হয়।
২.৫. মেঘকে নামাবার জন্য মেয়েরা দল বেঁধে ছড়া করে তাকে কী কী নামে ডাকে?
উত্তর : মেঘারানি, কালা মেঘা, ধলা মেঘা ইত্যাদি।
৩. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :
মফস্বল, বৎসর, খর, ব্রত, বিস্তর, পর্বত, ঝড়।
উত্তর : মফস্বল—মাফস্সলিক। বৎসর — বাৎসরিক। খর—খরা (বিশেষ্য)। ব্রত—ব্রাত্য। বিস্তর—বিস্তারিত। পর্বত—পার্বত্য। ঝড়—ঝোড়ো।
৪. নীচের বাক্যগুলি গঠনগতভাবে কোনটি কী ধরনের লেখো (সরল/ যৌগিক/জটিল) :
৪.১ গ্রামের যাত্রীরা নেমে নেমে যাবে মাঝরাস্তায়।
উত্তর : সরল বাক্য।
৪.২ যেখানে ঘাসের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না, হঠাৎ চোখে পড়বে সেখানে যেন কে সবুজ জাজিম পেতে রেখেছে।
উত্তর : জটিল বাক্য।
৪.৩ আয়বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দেব মেপে।
ত্তর : যৌগিক বাক্য।
৪.৪ খড় কিংবা টিনের চাল।
উত্তর : সরল বাক্য।
৫. নীচের বাক্যগুলি থেকে শব্দবিভক্তি ও অনুসর্গ খুঁজে নিয়ে লেখো :
৫.১. কেউ এসেছিল দোকানের জন্য মাল তুলতে।
উত্তর : কেউ (শূন্য বিভক্তি) এসেছিল (‘এছিল’ বিভক্তি) দোকানের (এর বিভক্তি) জন্য (অনুসর্গ) মাল (শূন্য বিভক্তি) তুলতে (তে বিভক্তি)।
৫.২. বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে অন্য সমস্ত আওয়াজ ডুবে যায়।
উত্তর : বৃষ্টির (‘র’ বিভক্তি) ঝমঝম (শূন্য বিভক্তি) শব্দে (এ বিভক্তি) অন্য (অনুসর্গ) সমস্ত (শূন্য বিভক্তি) আওয়াজ (শূন্য বিভক্তি) ডুবে (এ বিভক্তি) যায় (য় বিভক্তি)।
৫.৩. সন্ধে নাগাদ উলু দিয়ে ব্রত শেষ হয়।
উত্তরঃ সন্ধে (শূন্য বিভক্তি) নাগাদ (অনুসর্গ) উলু (শূন্য বিভক্তি) দিন(অনুসর্গ) ব্রত (শূন্য বিভক্তি) শেষ (শূন্য বিভক্তি) হয়।
৫.৪. ছেলেরা হই হই করে ছোটে আমবাগানে।
উত্তর : ছেলেরা (এরা বিভক্তি) হই হই (শূন্য বিভক্তি) করে (অনুসর্গ) ছোটে (এ বিভক্তি) আমবাগানে (এ বিভক্তি)।
৬. পাঠ থেকে নিম্নলিখিত শব্দগুলির সমার্থক শব্দ খুঁজে লেখো :
অম্বর, ধরা, মৃত্তিকা, প্রান্তর, তটিনী।
উত্তর : অম্বর—আকাশ। ধরা—বসু। মৃত্তিকা—মাটি। প্রান্তর— মাঠ। তটিনী—নদী।

. নীচের সমোচ্চারিত/প্রায়-সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থ লেখো :
  • ধোয়া — ধৌত করা।
  • ধোঁয়া — ধূম্ৰ।
  • জলে— জলের মধ্যে।
  • জ্বলে — আগুন জ্বলে।
  • বাধা — প্রতিরোধ।
  • বাঁধা — আবদ্ধ।
  • গায়ে — দেহে, শরীরে।
  • গাঁয়ে — গ্রামে।
  • ঝরে — ঝিরঝির করে পড়ে।
  • ঝড়ে — ঝড়ের দাপটে।
৮. শুদ্ধ বানানটিতে — '√ ' চিহ্ন দাও :
৮.১. মুহুর্ত/মূহুর্ত/মুহূর্ত
৮.২. অগ্রহায়ন / অগ্রহায়ন/ অগ্রহায়ণ
৮.৩. বিলক্ষণ/বিলক্ষন/বিলখ্যন
৮.৪. মরিচিকা/মরীচিকা/ মরীচীকা 
উত্তর : মুহূর্ত, অগ্রহায়ণ, বিলক্ষণ, মরীচিকা।
৯. বেলা, ডাল, সারা, চাল এই শব্দগুলিকে দুটি পৃথক অর্থে ব্যবহার করে দুটি করে বাক্য লেখো।
উত্তর : বেলা—(সময়) গ্রীষ্মের দুপুরবেলা মানেই এক ভয়ংকর অগ্নিময় মুহূর্ত।
বেলা—(বেলফুল) গ্রীষ্মকালে বেলা আর মল্লিকার দাম খুব সস্তা হয়।
ডাল—(শস্যদানা) মুগ, মসুর আর মটর ডাল তিনটিই বিশেষ উপকারী।
ডাল—(শাখা) আম গাছের ডাল ভেঙে পূজাপার্বণে ব্যবহার করা হয়।
সারা—(সম্পূর্ণ) তোমার কাজ এখনও সারা হয়নি?
সারা—(সমস্ত) এখন সারা দেশেই দুর্নীতির আখড়া চলছে।
চাল—(খাদ্যশস্য) ঘরে শুধু চাল থাকলে নুন দিয়েই ভাত খাওয়া হয়ে যাবে।
চাল – (চালচলন) ছেলেটার চালচলন দেখে ভালো মনে হচ্ছে না।

১০. টীকা লেখো : মরীচিকা, বসুধারা, ব্রত, মেঘরানির কুলো, ভাদুলি।
  • মরীচিকা—সূর্যকিরণে জলভ্রম। মরুভূমি হল বালুকাময় বিশাল প্রান্তর। যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু বালি আর বালি। এখানে বালি ছাড়া অন্য কোনো বস্তু বা প্রাণী বা উদ্ভিদ নেই। নেই কোথাও একবিন্দু জল। এই মরুভূমির দেশে অকস্মাৎ কোনো তৃষ্ণার্ত হরিণ যখন জলের আশায় ছুটে যায় তখন সে দেখে মরুভূমিতে জলরাশি। অর্থাৎ, দুপুরের রোদে বালুকারাশি এমনই চিকচিক করে যে দূর থেকে মনে হয় জলের তরঙ্গ চিকচিক করছে। কিন্তু তৃষ্ণার্ত হরিণ ওই দৃশ্য দেখে যতই সামনের দিকে ছুটে চলে ততই সে হাহাকারময় বালুকার প্রান্তরে প্রবেশ করে। বালুকার এই চিকচিক করা ভ্রান্ত জলের দৃশ্যকেই বলা হয় মরীচিকা।
  • বসুধারা—পৃথিবীর অন্য একটি নাম। হিন্দুশাস্ত্র মতে, বসু আটটি। যথা—ভব, ধ্রুব, সোম, বিষু, অনল, অনিল, প্রত্যূষ, প্রভব। এখানে বসু অর্থে পৃথিবীকেই বোঝানো হয়েছে। আর ধারা অর্থে ক্রমাগত জলের পতন বা বৃষ্টির পতন বোঝানো হয়েছে। বসুধারা হল পৃথিবীতে ক্রমাগত বৃষ্টিধারার পতন।
  • ব্রত—অভিধান অনুসারে ব্রত শব্দের অর্থ হল মেয়েলি প্রার্থনা। ধনসম্পদ বা অন্য যে-কোনো কামনায় নিয়মিত পুণ্যকর্মের অনুষ্ঠান। একে আবার পাপক্ষয়কারী অনুষ্ঠানও বলা হত।
  • মেঘারানির কুলো—মেঘ শব্দে আকাশে ভেসে ওঠা জলবাহী বাষ্পরাশিকেই বোঝায়। প্রবল গ্রীষ্ম শেষ হয়ে গেলেও যখন বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় না তখন গ্রামবাংলার কোনো কোনো অঞ্চলের মেয়েরা কুলো, জল, ঘট ইত্যাদি নিয়ে দলে দলে পাড়ায় বেরিয়ে পড়ে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে গান গায়। গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা পায় তেল-চাল-সিঁদুর কিংবা দু-চারটে পয়সা আর পানসুপারি। তারা তখন দল বেঁধে সুর করে মেঘরানির নামে গান করে বৃষ্টির দেবীকে আহ্বান করে। একেই বলে মেঘরানির কুলো।
  • ভাদুলি—ভাদ্র মাসকে গ্রামবিশেষে ভাদু বলে। আবার, ভাদুলি শব্দে গ্রামবাংলার অঞ্চলবিশেষে ধান্যকে বলা হয়। বাংলার কোনো কোনো অঞ্চলে মেয়েরা ভাদুলি ব্রত করে। অর্থাৎ, ভাদ্র মাসে মাঠে মাঠে দেখা দেয় সবুজ ধানের শিখা (ভাদুই)। সেই সময় হঠাৎ প্রবল বর্ষণে বন্যা দেখা দিলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। এই আশঙ্কায় আগে থেকেই ভাদ্রমাসে ভাদ্র দেবতার নাম করে মেয়েরা যে ব্রত পালন করে তাকেই বলে ভাদুলি বা ভাদুলি ব্রত।
. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১.১. বাস-ডিপোয় অপেক্ষমান যাত্রীদের ছবি কীভাবে পাঠ্যাংশে ধরা পড়েছে?
উত্তর : ছোটো মফস্সল শহরের বাস ডিপোয় বাস ছাড়তে দেরি আছে। অপেক্ষমান যাত্রীদের মালপত্র বাসের কন্ডাক্টর আর ক্লিনার ধরাধরি করে ছাদে তুলে দিচ্ছে। যাত্রীরা যে যার নিজের সিটে হাতের জিনিস রেখে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। সামনের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে ড্রাইভার। যাত্রীরা ড্রাইভারের গতিবিধি লক্ষ রেখে গরমের সময় গায়ে হাওয়া লাগায় আবার শীতের দিনে রোদ পোহায়।

১১.২. ‘গ্রামের সঙ্গে শহরের যে এখনও নাড়ির টান'—এই নাড়ির টানের প্রসঙ্গ রচনাংশে কীভাবে এসেছে?
উত্তর : গ্রাম বাংলা যে ধানের দেশ। এখানকার গ্রাম্য মানুষদের প্রধান সম্পদ হল ধান। যখন ধান ফলে তখন চাষির ঘরে আনন্দ-কোলাহল দেখা দেয়। চাষিরা তখন হাতে টাকাপয়সা পেয়ে ঘরের বাইরে বেরোয়। গ্রাম ছেড়ে শহরে যায়। গ্রামে প্রধান যানবাহন হল বাস। কেউ বাসে চেপে যায় মেয়ে দেখতে, অন্য জায়গায় মেলা দেখতে, কেউ শহরে যায় দরকারি জিনিস কিনতে, কেউ যায় সিনেমা দেখতে, কেউ যায় মামলার তদ্বির তদারক করতে। এইভাবেই বোঝা যায় যে, গ্রামের সঙ্গে শহরের এখনও নাড়ির টান আছে।

১১.৩. ‘ধানের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু বৃষ্টি'—বৃষ্টির সময়ে ধানক্ষেতের ছবিটি কেমন? অন্য যে যে সময়ে ধান চাষ হয়ে থাকে তা লেখো।
উত্তর : বর্ষাকালের বৃষ্টি ক্রমাগত চলতে শুরু হলে চাষির মনে দেখা দেয় আনন্দ। হোগলার তৈরি মাথালে দিয়ে মাথাটি ঢেকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই গামছা পরে চাষিরা বেরিয়ে পড়ে মাঠের কাজে। ধান রোয়া, আল বাঁধার কাজ তাড়াতাড়ি তাদের শেষ করতে হবে। ধান ছাড়া কোনো কোনো চাষি আবার পাটের জমিতেও কাজ করে। দিনে দিনে জমিতে ধানগাছ হু হু করে বেড়ে ওঠে। চাষিরা মাঝে মাঝে ধানের জমি নিড়িয়ে দেয়। কিছুদিনের মধ্যে ফুরিয়ে যায় তাদের মাঠের কাজ। তারা অপেক্ষা করে থাকে কবে ফসল ফলবে মাঠে। আজকাল বর্ষাকালের ধান অগ্রহায়ণ-পৌষে কেটে নেওয়ার পর চাষিরা আধুনিক প্রথায় মাঘ মাসের মধ্যেই নতুন করে ধান রোয়ার কাজ শেষ করে নেয়। এই ধান পাকে চৈত্রের শেষ বা বৈশাখের শুরুতে।

১১.৪. আগে বছর আরম্ভ হত অগ্রহায়ণে' – এর সম্ভাব্য কারণ কী?
উত্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখিত ‘মরশুমের দিনে’ পাঠ্যাংশের বিবরণ থেকে জানা যায় যে ‘হায়ন' শব্দের অর্থ বছর।
অগ্রহায়ণ মানে বছরের গোড়া। আবার ‘হায়ন’ কথার অন্য এক মানে হয় ‘ফসল’। তাই আগে বছর আরম্ভ হত অগ্রহায়ণে।

১১.৫. ‘এদেশের যত পালা-পার্বণ, উৎসব-আনন্দ, সব কিছুরই মূলে রয়েছে চাষবাস।'—বাংলার উৎসব—খাদ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে চাষবাস কতটা জড়িত বলে তুমি মনে করো?
উত্তর : বাংলা বলতে প্রধানত গ্রাম-বাংলাকেই বোঝায়। কৃষিপ্রধান বাংলাকেই বোঝায়। ধানের দেশ বলতে বাংলাকেই
বোঝায়। বাংলার উৎসব, পালাপার্বণ, আর সংস্কৃতির সৃষ্টি গ্রাম থেকেই। যে-কোনো উৎসব আর পালাপার্বণ বা সংস্কৃতির মূলে রয়েছে মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা। গ্রামের মানুষের হাতে টাকাপয়সার স্বাচ্ছন্দ্য আসে তাদের চাষবাস থেকেই। তাই চাষবাসের ফলেই গ্রামবাংলার মানুষের যাবতীয় কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে চলে।

১১.৬. ‘শহর ছাড়ালেই দু-পাশে দেখা যাবে’—শহরের চিত্রটি কেমন? তা ছাড়িয়ে গেলে কোন দৃশ্য দেখা যাবে?
উত্তর : শহরটি ছোটোখাটো। এখানে কোর্ট অর্থাৎ আদালত আছে। হাসপাতাল আছে। বেশ কিছু দোকান আছে যেখান থেকে গ্রামের মানুষ তাদের মূল্যবান সামগ্রী কেনাকাটা করে, যেগুলি গ্রামে পাওয়া যায় না। শহর ছাড়ালেই দু-পাশে দেখা যাবে মাথার ওপর দরাজ আকাশ। বাস-রাস্তার দু-ধারে বটপাকুড় শালসেগুনের গাছ। সেইসব গাছের ডালে দৃষ্টি মাঝে মাঝে আটকে যাবে। কালো কুচকচে বাঁধানো রাস্তা। মাঝে মাঝে বাঁক নিয়ে সোজা সামনে চলে গেছে। রাস্তার ধারে ধারে গাছপালা। মাঝে মাঝে বাসরাস্তার ধারে ধারে লোকালয়। বড়ো গ্রাম হলে ইটের দালান দেখা যাবে। নইলে মাটির বাড়ি। খড় কিংবা টিনের চাল। লোকালয় পার হলেই আবার আদিগন্ত মাঠ। একেক ঋতুতে তার একেকরকম চেহারা।

১১.৭. ‘এই রাস্তার ওপরই এক ভারি মজার দৃশ্য দেখা যায়’ — মজার দৃশ্যটি কেমন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : গরমকালে এক বিচিত্র পরিবেশ লক্ষ করা যায়। দুপুরের দিকেই চারদিক শুনশান। মাথার ওপর সূর্যদেব রয়েছেন। চারদিকে গরমহাওয়া বইতে থাকে। সব কিছু যেন আগুনের মতো তেতে থাকে। মনে হয়, দূরে যেন জল চিকচিক করছে। আর সেই জলে উলটো হয়ে পড়েছে দু-পাশের গাছের ছায়া।

১১.৮. ব্রতের ভিতর দিয়ে মনে পড়ে যায় সেই আপনজনদের কথা, যারা দূরে আছে'—শিক্ষক/শিক্ষিকার সাহায্য নিয়ে এমনই কিছু ‘ব্রত’র ছড়া খাতায় সংগ্রহ করো।
উত্তর : গ্রামবাংলার কিছু ব্রতের ছড়া নীচে উল্লেখ করা হল।
১) ‘মায়ে ঝিয়ে বর্ত্ত করে,
যার যার বর সেই সেই মাগে।
২) হয়ে মোর ব্রতদাস, মোর পূজা পরকাশ,
মরত ভুবনে গিয়ো কর।'
৩) ‘হিয়ার ভিতরে থুইতে নহে পরতীত
হারান হারান হেনসদা করে চিত।'

.৯. বিভিন্ন ঋতুবিষয়ক প্রচলিত ছড়া আর ছবি সাজিয়ে নিজেরা লিখে বিদ্যালয়ে একটি দেয়াল পত্রিকা তৈরি করো।
দেয়াল পত্রিকা - বর্ষা বিষয়ক ছড়া
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এল বান
শিবঠাকুরের বিয়ে হবে
তিন কন্যে দান।
এক কন্যে রাঁধেন বাড়েন
এক কন্যে খান
আর এক কন্যে গোঁসা করে
বাপের বাড়ি যান।

১১.১০. ‘ধান কাটার পর একেবারে আলাদা দৃশ্য—এই দৃশ্যে কোন ঋতুর ছবি ফুটে উঠেছে? সেই ঋতু সম্পর্কে কয়েকটি বাক্যে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর : লেখক বর্ণিত প্রবন্ধে মাঠে মাঠে ধান কাটার পরের দৃশ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই দৃশ্য সাধারণত গ্রীষ্মকালেই দেখা যায়। লেখক বলেছেন ‘নদী পুকুর খাল বিল শুকিয়ে যায়।’ ‘—আগুনের হলকা দেয়।' 
গ্রীষ্মকাল
আমাদের দেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে বলা হয় গ্রীষ্মকাল। কিন্তু মূলত গ্রীষ্মের শুরু হয় চৈত্র মাস থেকেই। এই সময় থেকেই সূর্যের উত্তাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। শুরু হয় দুঃসহ গরম। মাঠ-ঘাট নদীনালার জল শুকনো হয়ে যায়। কোনো কোনো চাষের মাঠ ফুটিফাটা হয়ে যায়। সামান্য বেলা বাড়লেই রাস্তাঘাট প্রচণ্ড তপ্ত হয়ে ওঠে। রোদের দিকে তাকানো যায় না। আকাশের রং দেখায় তামার হাঁড়ির মতো। মাঝে মাঝে ঘূর্ণি হাওয়ায় গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ধুলো উড়ে উড়ে সামনের দৃষ্টিকে অন্ধকার করে দেয়। কাঁধে লাঙল আর হালবলদ নিয়ে মাঠে যাওয়া কৃষক একটু বেলা বাড়লেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। পুকুর ডোবা কিংবা নদীনালার ধারে কোথাও একটা খাসের ডগা দেখা যায় না। পথিক গাছের ছায়া খুঁজে খুঁজে পথ হাঁটে। পিপাসার জল সর্বত্র পাওয়া যায় না। রাস্তার কুকুর কোনো জলাশয়ে সামান্য জলকাদা দেখলে তার মধ্যে শরীরের শেষভাগ ডুবিয়ে বসে থাকে। তবে এই সময়ে আম, কাঁঠাল, খেজুর, লিচু, তাল ইত্যাদি রসালো ফল পাওয়া যায়। গ্রীষ্ম আমাদের কাছে যন্ত্রণাদায়ক হলেও গ্রীষ্ম যে বর্ষাকে আহ্বান জানায় এটাই আমাদের কাছে বিরাট সান্ত্বনা।


Tags ;  কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি,,কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি,class 6,কুমোরে পোকার বাসা,কুমোরে পোকার বাসা বাড়ি,class 6 bangla,class 6 bengali,কুমোর পোকার বাসাবাড়ি গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য,কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য,class 6 pothon setu bengali or bangla,class 6 কুমোরে পোকা বাসাবাড়ি,

No comments

Hi Welcome ....