Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

ইতিহাস ক্লাস ৬ প্রশ্ন উত্তর সমাধান পৃষ্ঠা ৭৭

  ❍ আরো পড়ুন:  ☞   উচ্চমাধ্যমিক ২০২৩ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন ❍ আরো পড়ুন:  ☞  পাতাবাহার ক্লাস ৩ প্রশ্ন উত্তর সমাধান ...

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশ : প্রশ্ন উত্তর সমাধান
 


ক্লাস ৬ ইতিহাস অধ্যায়ঃ ৫ প্রশ্ন উত্তর সমাধান পৃষ্ঠা  ৭৭

৫. খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ভারতীয় উপমহাদেশ : রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং ধর্মের বিবর্তন - উত্তর ভারত

১। সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করাে :
১.১) মহাজনপদগুলি গড়ে উঠেছিল—(খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে/খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতকে/খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ সহস্রাব্দে)।
উত্তরঃ মহাজনপদগুলি গড়ে উঠেছিল খ্রিঃপূঃ ষষ্ঠ শতকে।
১.২) গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন—(লিচ্ছবি/হর্যঙ্ক /শাক্য) বংশে। 
উত্তরঃ গৌতম বুদ্ধ জন্মেছিলেন শাক্য বংশে।
১.৩)  পাশ্বনাথ ছিলেন—(মগধের রাজা/বজ্জিদের প্রধান/জৈন তীর্থংকর)।
উত্তরঃ পার্শ্বনাথ ছিলেন জৈন তীর্থংকর।
১.৪) আর্যসত্য-বৌদ্ধ/জৈন/আজীবিক) ধর্মের অংশ।
উত্তরঃ আর্যসত্য বৌদ্ধধর্মের অংশ।

 ২। 'ক'-স্তম্ভের সঙ্গে 'খ'-স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো : উত্তরঃ

ক - স্তম্ভ খ - স্তম্ভ
মগধের রাজধানী রাজগৃহ
মহাকাশ্যপ প্রথম বৌদ্ধ সংগীতি
দ্বাদশ অঙ্গ জৈন ধর্ম
হীনযান-মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম

৩। নিজের ভাষায় ভেবে লেখাে (তিন/চার) লাইন :
৩.১) মগধ ও বৃজি মহাজনপদদুটির মধ্যে কী কী পার্থক্য তােমার চোখে পড়ে?
উত্তরঃ মগধ ছিল একটি রাজতান্ত্রিক মহাজনপদ। আর বৃজি ছিল একটি গণরাজ্য। মগধে ছিল রাজাদের নেতৃত্ব। আর বৃজিতে ছিল অরাজতান্ত্রিক শাসন। মগধ রাজ্য নদী ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা ছিল। বৃজি যেহেতু একটি গণরাজ্য তাই ওই গণরাজ্যগুলিতে একেকটি উপজাতি বাস করত।

৩.২) কী কী কারণে মগধ শেষ পর্যন্ত বাকি মহাজনপদগুলির থেকে শক্তিশালী হল? সেই কারণগুলির মধ্যে কোনটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে তােমার মনে হয়?
উত্তরঃ কারণগুলি হল—(১) মগধ ছিল নদী ও পাহাড় দিয়ে ঘেরা। ফলে বাইরের আক্রমণ থেকে মগধ রেহাই পেত। (২) চাষবাস ভালাে হত। (৩) গভীর বনভূমি থাকায় কাঠ ও হাতি পাওয়া যেত। (৪) মগধে অনেকগুলি তামা ও লােহার খনি ছিল। (৫) জলপথ ও স্থলপথে বাণিজ্য চলত। আমার মনে হয়, মগধ শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সেখানে কৃষিকাজ ও বাণিজ্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে।

৩.৩) সমাজের কোন কোন অংশের মানুষ নব্যধর্ম আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন? কেন করেছিলেন?
উত্তরঃ ব্রাম্মণ ধর্মের ও বেদের বিরােধিতা করে সাধারণ মানুষ ব্রাম্মণদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল এবং নব্যধর্ম আন্দোলনকে সমর্থন করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ ভারতীয় উপমহাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। লােহার লাঙল ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের প্রধান জীবিকা হয়ে ওঠে কৃষি ব্যবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে সেই সময় কিছু নগর গড়ে উঠলে অধিকাংশ মানুষ ধনী ব্যবসায়ী ও কারিগরের ব্রাম্মণ ধর্ম প্রবর্তিত যজ্ঞ, পশুবলি ইত্যাদির বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়ে ওঠে। তা ছাড়া ব্রাম্মণদের মধ্যে ধর্মের নামে আড়ম্বর ও অনুষ্ঠান সর্বস্বও ছিল প্রবল। এদিকে লােহার তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা ব্রাম্মণদের সমান ক্ষমতার দাবি করে। তার ফলে। ব্রাম্মণ্যবিরােধী মানুষজন নতুন ধর্মের আশ্রয় খোঁজে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই ক্রমে ক্রমে কঠোর ব্রাম্মণ্যধর্মের বিরােধিতা করতে নতুন ধর্মকে অর্থাৎ নব্যধর্মকে সমর্থন জানাতে থাকে।

৩.৪) জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে কী কী মিল ও অমিল তােমার চোখে পড়ে?
উত্তরঃ বর্ধমান মহাবীরের সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের ধর্মের মধ্যে কয়েকটি মিল ছিল। তারা দুজনেই ক্ষত্রিয় পরিবারের মানুষ ছিলেন। ব্রাম্মণ ধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের বিরােধিতাও করেছিলেন তারা দুজনেই। সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য ধর্ম প্রচার করেছিলেন সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। প্রাকৃত ভাষা ও সাহিত্য উন্নত হয়েছিল জৈনধর্মের হাত ধরে। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের ভাষা ছিল পালি। নতুন তৈরি হওয়া ধর্মমতগুলির মধ্যে জৈনধর্ম ছিল অন্যতম প্রধান। এই ধর্মের প্রধান প্রচারককে বলা হত তীর্থংকর। জৈনধর্ম অনুযায়ী মােট চব্বিশজন তীর্থংকর ছিলেন। গৌতম বুদ্ধের প্রথম নাম ছিল সিদ্ধার্থ। নেপালের কপিলাবস্তু শাক্য বংশে সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। মহাবীরের মতােই সিদ্ধার্থ ক্ষত্রিয় ছিলেন। বুদ্ধের প্রচারিত ধর্মকে বলা হয় বৌদ্ধধর্ম। গৌতম বুদ্ধের শিষ্য ছিলেন পাঁচ জন।

৪. হাতে কলমে করো :
৪.১) ও ৪.২) নিজে করো 🖉

  ❍ আরো পড়ুন: ☟☟
❍ এই অধ্যায়ঃ থেকে প্রশ্ন উত্তর প্র্যাকটিস সেট  

❐ শূন্যস্থান পূরণ করো :
১. গৌতমবুদ্ধের মৃত্যুর পর_____বৌদ্ধদের প্রথম সভা হয়েছিল।
ত্তরঃ রাজগৃহে
২. পিটক কথার মানে হল_____।
ত্তরঃ ঝুড়ি
৩. ______বৌদ্ধসংঘের ও তার প্রধান শিষ্যদের উপদেশগুলির সংকলন।
উত্তরঃ বিনয়পিটকে
৪. _______রাজগৃহে সভা ডেকেছিলেন।
উত্তরঃ মহাকাশ্যপ
৫. জৈন ও বৌদ্ধ দুই ধর্মেই____বলে একটি ধারণা আছে।
উত্তরঃ ত্রিরত্ন
৬. মহাবীর কঠোর_____উপর জোর দিয়েছিলেন। 
উত্তরঃ তপস্যার
৭. বুদ্ধ ______কথা বলেছিলেন। 
উত্তরঃ মধ্যপন্থার
৮. জাতকের গল্পগুলি_____ভাষায় বলা ও লেখা হত। 
উত্তরঃ পালি
৯. সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান ও সৎ____উপরে জৈন্যরা জোর দিতেন। 
উত্তরঃ আচরণের
১০. সামেত শিখর, জৈনদের পবিত্রতম____
। 
উত্তরঃ তীর্থক্ষেত্র
১১. গয়া থেকে গৌতমবুদ্ধ______কাছে সারনাথে যান। 
ত্তরঃ বারাণসীর
১২. বুদ্ধদেবের প্রথম ধর্মপ্রচার_____প্রবর্তন নামে পরিচিত। 
উত্তরঃ ধর্মচক্র
১৩. বুদ্ধদেবেহর দেহত্যাগকে বলা হয়______
। 
উত্তরঃ মহাপরিণির্বাণ
১৪. বুদ্ধদেবের গৃহত্যাগকে বলা হয়______

উত্তরঃ মহাভিনিষ্ক্রমণ
১৫. বৌদ্ধদের দুটি সম্প্রদায় হল____ও ____

ত্তরঃ হীনযান, মহাযান
১৬. বৌদ্ধধর্মের প্রধান লক্ষ্য ছিল_____
লাভ করা।
ত্তরঃ নির্বাণ
১৭. জৈনধর্মের মূল ভিত্তি হল______

উত্তরঃ পঞ্চমহাব্রত
১৮. মহাবীর প্রাণ ত্যাগ করেন_____নগরে।
উত্তরঃ পাবা
১৯. বুদ্ধ কথার অর্থ হল_____
উত্তরঃ জ্ঞানী
২০. চতুর্যাম প্রবর্তন করেন_____।
উত্তরঃ পার্শ্বনাথ
২১. বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক হলেন____।
ত্তরঃ বুদ্ধদেব
২২. প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর হলেন_______।
ত্তরঃ ঋষভনাথ
২৩. জৈনধর্মের প্রবর্তক হলেন_______।
ত্তরঃ মহাবীর
২৪. জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল______।
ত্তরঃ দ্বাদশ অঙ্গ
২৫. জৈনদের দুটি সম্প্রদায় হল____ও____।
ত্তরঃ দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর
২৬. ২৩তম জৈন তীর্থঙ্কর হলেন______
ত্তরঃ পার্শ্বনাথ
২৭. ত্রিপিটক_____ ভাষায় রচিত।
ত্তরঃ পালি

❐ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর:
১. জনপদ কথার অর্থ কী?
ত্তরঃ প্রাচীন ভারতে গ্রামের থেকে বড়ো অঞ্চলকে জন বলা হত। সেই জনকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছিল ছোটো রাজ্য। এইভাবে জন শব্দ থেকেই জনপদ কথাটি এসেছে। সাধারণত জনগণ সেখানে বাস করত তাকে বলা হত জনপদ।

২. মহাজনপদ কী?
ত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক নাগাদ একেকটা জনপদের ক্ষমতা বাড়তে থাকে। সেখানকার শাসকরা যুদ্ধ করে নিজেদের রাজ্যের সীমানা বাড়াতে থাকেন। ছোটো ছোটো জনপদগুলির কয়েকটি পরিণত হয় বড়ো রাজ্যে। এই বড়ো রাজ্যগুলিই মহাজনপদ বলে পরিচিত।

৩. ষোড়শ মহাজনপদ কী?
ত্তরঃ  খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৈদিক যুগের শেষের দিকে সমগ্র উত্তর ভারতে ষোলোটি আঞ্চলিক রাজ্যের উদ্ভব হয় যা ষোড়শ মহাজন পদ নামে পরিচিত। মহাজন শব্দের অর্থ হল বৃহৎ রাজ্য।

৪. ষোড়শ মহাজনপদের ষোলোটি রাজ্যের উল্লেখ করো।
ত্তরঃ ষোড়শ মহাজনপদের রাজ্যগুলি হল— কাশী, কোশল, কুরু, কম্বোজ, গান্ধার, অবন্তী, অঙ্গ, অম্মক, মগধ, মল্ল বা মালব, মৎস্য, বৃজি, বৎস, চেদী, শূরসেন ও পাঞ্চাল।

৫. গঙ্গা-যমুনা উপত্যকাকে ভিত্তি করেই বেশিরভাগ মহাজনপদ গড়ে উঠেছিল কেন?
ত্তরঃ বিরাট গঙ্গা উপত্যকা ছিল একটি সমতল অঞ্চল। ফলে রাজ্য জয়ের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বাধা ছিল না। যথেষ্ট বৃষ্টি হওয়ার ফলে পলিমাটির জমি ছিল উর্বর, চাষ হত খুবই ভালো। পাশাপাশি গভীর বনও ছিল। বনে কাঠ থেকে হাতি সবই পাওয়া যেত। নদীপথে যাতায়াতেরও সুবিধা থাকায় ওই অঞ্চলের মহাজনপদগুলি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।

৬. রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখো।
ত্তরঃ যে সব মহাজনপদে রাজা শাসন করত সেই মহাজনপদগুলিকে বলা হত রাজতান্ত্রিক রাজ্য। রাজতান্ত্রিক রাজ্যগুলিকে শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে উপরে ছিল রাজা। রাজা বিশেষ কোনো বংশের সদস্য ছিলেন। সেই বংশই বছরের পর বছর রাজত্ব করত। শাসনের কাজে রাজাকে সাহায্য করত একটি সভা। তার সদস্যরা রাজাকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিত।

৭. মগধ কোথায় অবস্থিত ছিল?
ত্তরঃ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের আগে মগধ ছিল দক্ষিণ বিহারের একটি সমান্য এলাকা কিন্তু দক্ষ রাজাদের নেতৃত্বে মগধ আস্তে আস্তে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে ওঠে। মগধ বলতে এখনকার বিহারের পাটনা ও গয়া জেলাকে বোঝাত। মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ। পরে পাটলিপুত্র রাজধানী হয়।

৮. অরাজতান্ত্রিক বা গণরাজ্য বলতে কী বোঝো?
ত্তরঃ অরাজতান্ত্রিক অর্থাৎ রাজার শাসন যেখানে চলে না সেগুলিকে গণরাজ্যও বলা হয়। সাধারণভাবে গণরাজ্যগুলিতে একটি উপজাতি বাস করত তারা নিজেরা শাসন করত।

৯. বজ্জিদের উন্নতির সাতটি নিয়ম কী ছিল?
ত্তরঃ বজ্জিদের উন্নতির সাতটি নিয়ম ছিল – (১) সভা করে রাজ্য চালানো, (২) সবাই মিলে একজোট হয়ে কাজ করা, (৩) নিজেদের আইনের অনুসারে চলা, (৪) বয়স্ক মানুষদের কথা শোনা ও তাদের সম্মান করা, (৫) নারীদের সম্মান করা, (৬) সমস্ত দেবতার মন্দিরগুলির যত্ন নেওয়া, (৭) গাছপালা ও পশু পাখিদের অত্যাচার না করা।

১০. মগধের অভ্যুত্থানের প্রধান কারণ কী ছিল ?
ত্তরঃ মগধে অনেক লোহা ও তামার খনি ছিল। ফলে মগধের রাজারা সহজেই লোহার অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এছাড়া মগধের ঘন বনগুলিতে অনেক হাতি পাওয়া যেত সেই হাতিগুলি মগধের রাজারা যুদ্ধে ব্যবহার করত। ফলে যুদ্ধে জয়লাভ অনেক বেশি সুবিধাজনক ছিল।

১১. নব্যধর্ম আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
ত্তরঃ ব্রাম্মণ্য ধর্মের যজ্ঞ-আড়ম্বর ও অনুষ্ঠানের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ মানুষ ব্রাম্মণ্য ধর্মের বদলে নতুন সহজ সরল ধর্মের খোঁজ শুরু হয়। জৈনধর্ম ও বৌদ্ধধর্ম ব্রাম্মণ্য ধর্মের ও বেদের বিরোধিতা করে ধর্ম সম্পর্কে অনেক নতুন কথা বলেছিলেন এইসব ধর্মপ্রচারকরা। নতুন ধর্মমত গ্রহণ ও ব্রাম্মণ্য ধর্ম বর্জনই নব্যধর্ম আন্দোলন নামে পরিচিত।

১২. চার্বাক কারা?
ত্তরঃ জৈন ও বৌদ্ধদের আগে ব্রাম্মণ্যধর্মের বিরোধিতা করেছিলেন একটি গোষ্ঠী যা চার্বাক নামে পরিচিত। এঁরা কেউই বেদকে চূড়ান্ত বলে মানতেন না। চার্বাকরা বর্ণাশ্রম প্রথা, স্বর্গের ধারণা মানতেন না। যজ্ঞে পশুবলির বিরোধী ছিলেন চার্বাকরা।

১৩. জৈনধর্মের প্রধান প্রচারককে কী বলা হত? জৈনধর্মের শেষ দুই প্রচারক কারা ছিলেন?
ত্তরঃ জৈনধর্মের প্রধান প্রচারককে তীর্থঙ্কর বলা হত। জৈন ধর্মের শেষ দুই প্রচারক অর্থাৎ তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ এবং মহাবীর।

১৪. পঞ্চমহাব্রত কী?
ত্তরঃ জৈনধর্মের চারটি মূলনীতি অবশ্যই মেনে চলতে হত। সেগুলি হল— (১) কোনো প্রাণী হত্যা না করা, (২) মিথ্যা কথা না বলা, (৩) অন্যের জিনিস ছিনিয়ে না নেওয়া, (৪) নিজের জন্য কোনো সম্পত্তি না করা। মহাবীর এর সঙ্গে ব্রহ্মচর্য নীতিও মেনে চলতে বলেন। এই পাঁচটি নীতিকে একসঙ্গে পঞ্চমহাব্রত বলা হয়।

১৫. জৈনধর্ম কোথায় কোথায় প্রচারিত হয়?
ত্তরঃ জৈনধর্ম মগধ, বিদেহ, কোশল ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। মৌর্যযুগে জৈনদের প্রভাব বাড়তে থাকে। জানা যায় যে, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শেষ জীবনে জৈন হয়ে যায়। পরে ওড়িশা থেকে মথুরা পর্যন্ত জৈন ধর্ম ছড়িয়ে পড়ে।

১৬. দ্বাদশ অঙ্গ কী?
ত্তরঃ জৈনধর্মের মূল উপদেশগুলিকে বারোটি ভাগে সাজানো হয়েছিল। এই ভাগগুলিকে অঙ্গ বলা হয়। সংখ্যায় বারোটি বলে অঙ্গগুলিকে একসঙ্গে বলা হয় দ্বাদশ অঙ্গ।

১৭. দিগম্বর কাকে বলে?
ত্তরঃ মৌর্য শাসনের শেষদিকে দুর্ভিক্ষ হওয়ায় জৈন সন্ন্যাসী উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে দাক্ষিণাত্যে চলে যান। দাক্ষিণাত্যে চলে যাওয়া জৈন সন্ন্যাসীদের নেতা ছিলেন ভদ্রবাহু। তিনি বর্ধমান মহাবীরের পথকেই কঠোরভাবে মেনে চলতেন। মহাবীরের মতোই ভদ্রবাহু ও তাঁর অনুগমীরা কোনো পোশাক পরতেন না। এর জন্যেই তাঁদের দিগম্বর বলা হয়।

১৮. ধর্মচক্র প্রবর্তন বলতে কী বোঝো?
ত্তরঃ গয়া থেকে গৌতম বুদ্ধ বারাণসীর কাছে সারনাথে যান। সেখানে পাঁচজন সঙ্গীর মধ্যে তাঁর উপদেশ প্রথম প্রচার করেন । এই পাঁচজনই তাঁর প্রথম পাঁচ শিষ্য হয়েছিলেন। তাঁদের কাছে তিনি মানুষের জীবনে দুঃখের কারণগুলি ব্যাখ্যা করেন। পরবর্তী সময়ে ওই ঘটনাকে ধর্মচক্র প্রবর্তন বলা হয়েছে।

১৯. অষ্টাঙ্গিক মার্গ কাকে বলে?
ত্তরঃ দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য গৌতমবুদ্ধ আটটি উপায়ের কথা বলেন। সৎ বাক্য, সৎ কার্য, সৎ জীবন, সৎ চেষ্টা, সৎ চিন্তা, সৎ চেতনা, সৎ সংকল্প, সৎ দৃষ্টি বা সম্যক সমাধি। এই আটটি পথ বা মার্গকে বলা হয় অষ্টাঙ্গিক মার্গ।

২০. বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের দুটি সাদৃশ্য উল্লেখ করো।
ত্তরঃ বৌদ্ধ ও জৈনধর্মের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য দেখা যায়। যথা : (১) প্রায় একই সময়ে (খ্রি. পূ. ষষ্ঠ শতকে) উভয় ধর্মমতের উদ্ভব হয়েছিল, (২) উভয় ধর্মই ছিল প্রতিবাদী, ব্রাম্মণ্য প্রাধান্য ও জাতিভেদ প্রথার বিরোধী।

২১. বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের দুটি বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।
ত্তরঃ বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করা যায়। যথা : (১) বৌদ্ধধর্মে জড় পদার্থের মধ্যে জীবনের অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু জৈনধর্মের মধ্যে স্বীকার করা হয়। (২) বৌদ্ধধর্মে সংঘ অপরিহার্য কিন্তু জৈনধর্মে সংঘের প্রভাব ছিল না।

২২. বৌদ্ধ ধর্মসংগীতি গুলির গুরুত্ব কী ছিল?
ত্তরঃ বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে বৌদ্ধসংগীতিগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ধর্মসংগীতি অনেকটা ধর্মসম্মেলনের মতো। সেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সমবেত হতেন বৌদ্ধধর্মের নানা বিষয় আলোচনা হত। সংগীতিগুলিতে নানা বিবাদের প্রসঙ্গও উঠত। চারটি বৌদ্ধসংগীতির কথা জানা যায়। গৌতমবুদ্ধের মৃত্যুর পরে পরেই প্রথম বৌদ্ধসংগীতি হয়েছিল।
 
২৩. তিনটি পিটক সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
ত্তরঃ সুত্তপিটক হল গৌতমবুদ্ধ ও তাঁর প্রধান শিষ্যদের উপদেশগুলির সংকলন। বিনয় পিটকে বৌদ্ধসংঘের ও বৌদ্ধধসন্ন্যাসীদের আচার আচরণের নিয়মগুলি আছে। অভিধৰ্ম্মপিটকে গৌতমবুদ্ধের মূল কয়েকটি উপদেশের আলোচনা আছে এগুলি সবই পালি ভাষায় লেখা।

২৪. মহাযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
ত্তরঃ জীবনযাপন ও ধর্মীয় আচরণ বিষয়ে বৌদ্ধসংঘে মতবিরোধ তৈরি হয়। বেশ কিছু সন্ন্যাসী আমিষ খাবার খেতে থাকেন। দামি ভালো পোশাক পরতে থাকেন সোনা-রুপো দান হিসাবে নিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে কিছু সন্ন্যাসী প্রায় পারিবারিক জীবনযাপন শুরু করেন। সংঘেরর নিয়মনীতি শিথিল হতে থাকে এর ফলে বৌদ্ধ ধর্মে একটি দল তৈরি হয় যার নাম মহাযান।

২৫. জৈনধর্মে ত্রিরত্ন বলতে কী বোঝো?
ত্তরঃ জৈনধর্মে তিনটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। সেগুলির একেক টিকে ত্রিরত্ন বলে। সংখ্যায় তিনটি তাই তা একসঙ্গে ত্রিরত্ন বলে। সৎ বিশ্বাস, সৎ জ্ঞান ও সৎ আচরণের উপরে জৈনরা জোর দিতেন। এই তিনটিকে একসঙ্গে জৈনধর্মে ত্রিরত্ন বলা হয়।

২৬. বৌদ্ধধর্মে ত্রিরত্ন বলতে কী বোঝো?
ত্তরঃ বৌদ্ধধর্মে গৌতমবুদ্ধ প্রধান ব্যক্তি। তাঁর প্রচার করা ধর্মই বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের দায়িত্ব বৌদ্ধ সংঘের এই তিন মিলে হয় বুদ্ধ-ধর্ম-সংঘ। এই তিনটি বৌদ্ধধর্মের ত্রিরত্ন।

২৭. বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম নগরে প্রচার করার কারণ কী?
ত্তরঃ মহাবীর ও বুদ্ধ দুজনেই ধর্ম প্রচারের জন্য নগরগুলিতে বেশি যেতেন। নগরে নানা রকমের মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া যায়। তুলনায় গ্রামে জনগণের বেশিরভাগই ছিল কৃষক। আবার ব্রাহ্মণ্য ধর্মে নগরে যাওয়া বা থাকা পাপ বলে ধরা হত। তাই জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম সেই সময়ের নগরগুলোতেই বেশি ছড়িয়ে পড়েছিল।

২৮. বৈশ্যরা ব্রাহ্মণদের উপর ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ কী?
ত্তরঃ বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রযাত্রা অনেকক্ষেত্রেই প্রয়োজন হত। অথচ সমুদ্রযাত্রাকে পাপ হিসাবে দেখত ব্রাহ্মণরা। ব্যাবসা চালাতে গেলে পয়সার লেনদেন ও সুদে টাকা খাটানোর দরকার পড়ত। কিন্তু সুদ নেওয়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মে নিন্দার বিষয় ছিল তাই বৈশ্যরা ব্রাহ্মণদের উপর ক্ষুব্ধ হয়।

২৯. আজীবিক কারা ছিল?
ত্তরঃ  জৈন ও বৌদ্ধদের আগেও ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরোধিতা করেছিলেন আজীবিক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী তৈরি করেন মংখ্যলিপুত্র গোসাল। আজীবিকরা বেদ ও কোনো দেবতায় বিশ্বাস করতেন না। তাঁরা মানতেন না যে মানুষ ভালো কাজ করলেই ভালো ফল পাবে। এঁদের কোনো ধর্মগ্রন্থ ছিল না। তাঁরা মৌর্যসম্রাট বিন্দুসার ও অশোকের থেকেও সহায়তা পান।




Download File

No comments

Hi Welcome ....