Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

European History MCQ Short Free Mock Test | ইউরোপের ইতিহাস MCQ Question Practice


MCQ Practice Click Here |  ইউরোপের ইতিহাস ফ্রি মকটেস্ট





 হুভার মোরাটোরিয়াম : মোরাটোরিয়াম শব্দের অর্থ হল স্থগিতাদেশ। মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে হার্বাট হুভার জার্মানি ও মিত্রশক্তিবর্গ কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দানের যে নীতির ওপর স্থগিতাদেশ দেন তা ইতিহাসে ‘হুভার মোরাটোরিয়াম’ নামে পরিচিত। মার্কিন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে হুভার জয়ী হয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি হন (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে)। কিন্তু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বজুড়ে আর্থিক মহামন্দার সূচনা ঘটে। মার্কিন কংগ্রেসে (পার্লামেন্টে) একটি চড়াশুল্ক বিল পাস হলেও আর্থিক পরিস্থিতির তেমনি উন্নতি হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে হুভার এই আর্থিক স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেন। 

আসলে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার ভার্সাই ব্যবস্থা অনুযায়ী মিত্রশক্তি জোটকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার করে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডাওয়েস ও ইয়ং পরিকল্পনা মেনে জার্মানিকে ঋণ দিত। জার্মানি সেই ঋণের টাকা মিত্রশক্তি জোটকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পরিশোধ করত। মিত্রশক্তিভুক্ত দেশগুলি আবার সেই অর্থনীতি দ্বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নেওয়া যুদ্ধ-ঋণ পরিশোধ করত। কিন্তু মহামন্দাজনিত কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঋণ দেওয়া বন্ধ করে। জার্মানির ভাইমার রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি হিন্ডেনবার্গ হুভারকে এই সংকট মেটানোর আবেদন করেন। হুভার এক বছরের (৩০ জুন, ১৯৩১ খ্রি.–৩০ জুন, ১৯৩২ খ্রি.) জন্য এই ক্ষতিপূরণ ও মার্কিন ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখেন। দেশে ও বিদেশে এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়ে। পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হুভার রুজভেল্টের কাছে পরাজিত হন। অপরদিকে জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ থেকে মুক্ত করার বিরোধিতা করে ফ্রান্স।

✱ রোম-বার্লিন-টোকিও জোট : হিটলারের নাৎসি জার্মানি, মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট ইটালি এবং জাপান—এই তিন দেশ একজোট হয়ে বিশ্বে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে (৬ নভেম্বর, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে)। তিন দেশের রাজধানীর নামে এই চুক্তির নাম হয় ‘রোম-বার্লিন-টোকিও' অক্ষচুক্তি। এই অক্ষচুক্তির মূল কয়েকটি শর্ত ছিল—এই চুক্তির মেয়াদ হবে দশ বছর, অক্ষচুক্তিভুক্ত এই তিন দেশের কোনো একটি দেশ চতুর্থ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্য দুই দেশ তাকে রক্ষা করবে, চুক্তিবদ্ধ সদস্য রাষ্ট্রগুলি সাম্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই সমঝোতায় যাবে না। বিশ্ব রাজনীতিতে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও’ চুক্তি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ—এই চুক্তি একনায়কতন্ত্রের প্রসার ঘটায়,সাম্যবাদের প্রসার রোধ করে।

✱ ভাইমার প্রজাতন্ত্র : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানিতে তীব্র আর্থিক সংকট দেখা দেয়। জার্মান জাতি এর জন্য জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামকে দায়ী করে। একগণ অভ্যুত্থানের জেরে জার্মানিতে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। কাইজার ভয় পেয়ে হল্যান্ডে পলায়ন করেন। জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডরিক ইবার্ট-এর নেতৃত্বে “সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পাটি’ জার্মানিতে এক অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করেন (১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে)। রাশিয়ার অনুকরণে গড়ে ওঠা এই সরকারের নাম হয় কাউন্সিল অব দ্য পিপ্লস ডেপুটিস। এই সময়ে রাজধানী বার্লিন নিরাপদ না হওয়ার ভাইমার বা ওয়েমার শহরে এই সরকারের কর্মকেন্দ্র গড়ে ওঠা। তাই এই প্রজাতন্ত্রের নাম হয় ভাইমার বা ওয়েমার প্রজাতন্ত্র। 

এই প্রজাতন্ত্রের আমলে এক যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়। নির্বাচনে জেতার পর ফ্রেডরিক ইবার্ট ভাইমার প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বেশকিছু গণতান্ত্রিক সংস্কার চালু করে এক যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করে। এই সংবিধান দ্বারা সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটে সাত বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম করা হয়। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়। জার্মান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নাম হয় রাইখস্ট্যাড (Reichstedet) ও নিম্নকক্ষের নাম হয় রাইখস্ট্যাগ (Reichstag)। বলা হয় এই দুই কক্ষ রাষ্ট্রপতিকে
রাইখস্ট্যাগ (
Reichstag)। বলা হয় এই দুই কক্ষ রাষ্ট্রপতিকে শাসনকার্যে সাহায্য করবে। এই মধ্যে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকার এবং সংকটের মুখোমুখি হয়। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রপক্ষ জার্মানির ওপর অপমানজনক ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি চাপিয়ে দেয়। জার্মান প্রজাতান্ত্রিক সরকার নিরুপায় হয়ে ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্তগুলি মেনে নেয়। এতে জার্মানবাসী ক্ষুদ্ধ হয়। জার্মানির বিভিন্ন স্থানে প্রজাতান্ত্রিক সরকার-বিরোধী আন্দোলন ও ধর্মঘট শুরু হয়। জার্মানিতে দক্ষিণপন্থী দলের বিদ্রোহীরা গ্যাংক্যাপ-এর নেতৃত্বে বার্লিনের দখল নেয়। অপরদিকে বামপন্থী বিদ্রোহীরা ব্যাভেরিয়া দখল করে দেশেরে মধ্যে এই অস্থির জারনীতির কারণে ১৯১৯ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে জার্মানিতে প্রায় একাধিক দলের ১৯টি মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। কিন্তু কোনো সুরাহ হয়নি। এই সুযোগে জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি দল নিজেদের উত্থান ঘটায় ও ক্ষমতা লাভ করে।

✱ সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণ ও ডেভিড থমসন-র ব্যাখ্যা : সাম্রাজ্য বিস্তারের কারণকে ডেভিড থমসন এক সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক ব্যাখ্যার দ্বারা সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। এপ্রসঙ্গে তিনি যে যুক্তিগুলি দেখিয়েছেন সেগুলি হল ফ্রান্স-তুলনামূলকভাবে কম শিল্পোন্নত হলেও ১৮১৫ খ্রিঃ ১৮৭০ খ্রিঃ মধ্যে আলজিরিয়া, সেনেগাল ও ইন্দোচীন সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল। অতএব সাম্রাজ্য বিস্তারের পেছনে ইউরোপীয় জাতিগুলির উগ্র জাতীয়তাবাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব সক্রিয় ছিল। বিকাশশীল দেশগুলির তীব্র জাতীয় আকাঙ্খা, যা একটি রাজনৈতিক উপাদান, সাম্রাজ্য বিস্তারের অন্যতম কারণ। খ্রিস্টান মিশনারীগণ উপনিবেশ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। স্কট, লিভিংস্টোন, স্ট্যানলি প্রমুখ ভূ-পর্যটক সকলেই মিশনারীদের উদ্যোগে আফ্রিকার অভ্যন্তরীণভাগে প্রবেশ করেছিলেন। জাতীয় সরকারগুলি তাদের সহায়তা করেছিল।

উপরোক্ত কারণগুলির সঙ্গে যুক্ত হয় বিশ্বের অনুন্নত জাতিগুলিকে সভ্য করে তোলার জন্য ইউরোপের উন্নত দেশগুলির ‘মহান কর্তব্যের’ ভূমিকা। অনেক ইউরোপীয় চিন্তাবিদ মনে করতেন, এ ব্যাপারে উন্নত দেশগুলির এক নৈতিক দায় আছে। এই কারণে তাঁরা এশিয়া ও আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারকে সমর্থন করেন। সামরিক কারণেও ইউরোপীয় দেশগুলি সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়োজন অনুভব করে। জার্মানির ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যায় আতঙ্কিত স্বপ্ন জনসংখ্যার দেশ ফ্রান্স তার উপনিবেশের অধিবাসীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা করে। ইংল্যান্ড তার বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য পোর্ট সৈয়দ, এভেন, হংকং, সাইপ্রাস প্রভৃতি অঞ্চল নিজের দখলে রাখে।

✱ ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেস একটি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতার তিনি তুরস্ক, গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন। এই ঘোষণাই ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউরোপের আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি মার্শাল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিকল্পনা পেশ করেন তা ‘মার্শাল পরিকল্পনা' নামে পরিচিত।
✱ লোকার্ণো চুক্তি : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউরোপ তথা বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটি অত্যন্ত বড়ো হয়ে ওঠে। ফ্রান্স নিরাপত্তার লক্ষ্যে চেকোশ্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়াসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষর করওে চুক্তিগুলির কার্যকারিতা ও উপযোগিতা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠে। জেনেভা প্রোটোকলের (১৯২৪ খ্রিঃ) ব্যর্থতার পর ফ্রান্স ও জার্মানি উভয়েই উভয়ের শত্রুতায় আতঙ্কিত থাকায় এক মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ হতে সচেষ্ট হয়। এই পরিস্থিতিতে জার্মানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্ট্রেসম্যান এই চুক্তির প্রস্তাব পাঠালে ফ্রান্স তাতে সাড়া দেয়। ফলে যুদ্ধের পরিবেশ মুক্ত হয়ে শান্তির পরিবেশ গড়ে ওঠে। তাই ব্রিটিশ মন্ত্রী চেম্বারলিন বলেছেন— যুদ্ধ ও শান্তির বছরগুলির মধ্যে লোকার্ণো ছিল বিভাজন রেখা ('Locarno was the teal dividing line between the years of war and the years of peace')

✱ চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশ : জার্মানির চুক্তি প্রাস্তাবে রাজি হলেও ফ্রান্স চেয়েছিল যে এই মৈত্রী বিষয়ক আলোচনাতে পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেকোশ্লোভাকিয়া ও ইতালি অংশগ্রহণ করুক। ফ্রান্সের ইচ্ছানুসারে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী লোকার্ণোতে (১৯২৫ খ্রিঃ, অক্টোবর) পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেকোশ্লোভাকিয়া, ব্রিটেন, ইতালি ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিবর্গ মিলিত হন। এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, লোকার্ণোতে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সাতটি চুক্তি : (১) জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের মধ্যে পরস্পর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। (২) জার্মানি আলাদা আলাদাভাবে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং চেকোশ্লোভাকিয়ার সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিমূলক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। (৩) ফ্রান্স, পোল্যান্ডের সঙ্গে একটি ও চেকোশ্লোভাকিয়ার সঙ্গে একটি পারস্পরিক প্রতিশ্রুতিমূলক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই ৭টি চুক্তি মিলিতভাবে লোকার্ণো চুক্তিরূপে পরিচিত।

চুক্তির শর্ত : লোকার্ণো চুক্তির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শর্ত ছিল– (১) জার্মানি, ফ্রান্স ও বেলজিয়াম জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ বাদে অন্য কোনো যুদ্ধে একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে না। (২) জার্মানি ও পোল্যান্ড এবং জার্মানি ও চেকোশ্লোভাকিয়ার মধ্যে কোনো বিবাদ বাঁধলেল আন্তর্জাতিক সালিশের মাধ্যমে তার মীমাংসা করা হবে। (৩) চুক্তি স্বাক্ষরের পর জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ পাবে এবং জাতিসংঘের কাউন্সিলে এক স্থায়ী পদ লাভ করবে।

রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি : জাপান মাঞ্চুরিয়া দখল করার জন্য ইতালি আবিসিনিয়া অধিকারের জন্য এবং জার্মানি রাইন উপত্যকা অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করায় ইউরোপীয় রাষ্ট্রবর্গের কাছে সহানুভূতি হারিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষচুক্তি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত এই তিন দেশ একজোট হয়ে বিশ্বে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রোম-মার্কিন-টোকিও চুক্তিতে (১৯৩৭ খ্রিঃ) আবদ্ধ হয়।

অক্ষচুক্তির শর্ত : ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে বলা হয় – (১) এই চুক্তি দশ বছর কার্যকর থাকবে। (২) অক্ষচুক্তিভুক্ত কোনো একটি দেশ চতুর্থ শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে অন্য দুটি দেশ তাকে সাহায্য করবে। (৩) চুক্তিবদ্ধ দেশগুলি সাম্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই সমঝোতা করবে না।

অক্ষচুক্তির কারণ: রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি ছিল– (১) জার্মানির বন্ধুত্ব : ইতালি আবিসিনিয়া আক্রমণ করলে (১৯৩৫ খ্রিঃ) আবিসিনিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ইতালির ওপর অর্থনৈতিক নিষেক্ষাজ্ঞা আরোপ করে। এইসময়ে একমাত্র জার্মানিই ইতালির সাহায্যে এগিয়ে আসে। ফলে কৃতজ্ঞ ইতালি জার্মানিকে তার বন্ধু বলেই মেনে নেয়। (২) সাম্যবাদ বিরোধী আদর্শ : মুসেলিনি ও হিটলার উভয়ই ছিল প্রচন্ডভাবে সাম্যবাদী-বিরোধী। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ইউরোপের নেতৃত্বে ইউরোপের অভ্যন্তরে সাম্যবাদের বিস্তার এই উভয় শক্তিকে নিজেদের স্বার্থেই কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছিল। পাশাপাশি জাপানেও গোপনে কমউনিস্ট তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে তা রোধের লক্ষ্যে জাপান জার্মানির সঙ্গে অ্যান্টিকমিন্টান চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। (১৯৩৬ খ্রি, ২৫ নভেম্বর)। (৩) ফ্রাঙ্কোর রুশ বিরোধিতা : স্পেনে কমিউনিস্ট-প্রভাবিত প্রজাতান্ত্রিক পপুলার ফ্রন্ট সরকারকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বতোভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে এলে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল ফ্রাঙ্কো সাম্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সাম্যবাদ-বিরোধী ইতালি ও জার্মানি তখন ফ্রাঙ্কোর পাশে দাঁড়ায়। (৪) জার্মানির সমরশক্তি ও সমহানুভূতি : জার্মানির সমরসজ্জা ও বিমানবাহিনীর শক্তি মুসোলিনিকে মুগ্ধ করে। তার ওপর ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকায় ইতালির সম্প্রসারণের ব্যাপারে জার্মানি মুসোলিনিকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। 

অক্ষচুক্তির গুরুত্ব : রোম-বার্লিন-টোকিও চুক্তি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— (১) এই চুক্তি জার্মান সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করেছিল। (২) জার্মানি, ইতালি, জাপানের একনায়কতন্ত্রবাদ সাম্যবাদের প্রসার রোধে থাবা বসিয়েছিল। (৩) এই চুক্তির পরেই ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া পাল্টা একটি শক্তিজোট গঠন করেছিল। ফলে বিশ্ব ফ্যাসিস্ট ও অ-ফ্যাসিস্ট এই দুই শক্তি-শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। (৪) এই চুক্তির সুদূরপ্রসারী ফলস্বরূপ ব্রিটেন ও ফ্রান্স একনায়কতন্ত্র অপেক্ষা সাম্যবাদকে বেশি ভয়ংকর মনে করে তোষণ নীতির আশ্রয় নিয়ে বেশি কিছুদিন নিরপেক্ষ ছিল। মন্তব্য : ইতালি, জার্মানি ও জাপের রাজধানী যথাক্রমে রোম, বার্লিন ও টোকিও— এই তিন নামে সম্পাদিত চুক্তিটি বিশ্বে একনায়কতন্ত্রের এস সর্গব ঘোষণা ছিল। এ. জে. পি. টেলরের মতে— ব্রিটেন ও ফ্রান্স সাম্যবাদ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা তাড়িত হয়ে একনায়কতন্ত্রী ও সাম্যবাদী শক্তির সংঘাতে নিরপেক্ষ মনোভাব গ্রহণ করে, হয়তো তারা কিছুটা একনায়কতন্ত্রের পক্ষই গ্রহণ করেছিল ('They inclined to the neutral in the struggle between fascism and communism or perhsaps even on the Fascist side') 

No comments

Hi Welcome ....