ইতিহাস সিলেবাসের ( চ্যাপ্টার : X) সংক্ষিপ্ত আলোচনা ‘সাম্রাজ্যবাদ’ প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত মানব সভ্যতার বা মানব ইতিহাসের একটি বিশেষ...
.png)
ইতিহাস সিলেবাসের (চ্যাপ্টার : X) সংক্ষিপ্ত আলোচনা
‘সাম্রাজ্যবাদ’ প্রাচীনকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত মানব সভ্যতার বা মানব ইতিহাসের একটি বিশেষ প্রাচীন বৈশিষ্ট্য যা সব যুগের সব শ্রেণির মানুষ এই শব্দটির সঙ্গে বিশেষ সুপরিচিত। যা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন পরিস্থিতিতে আকার ধারণ করে। বর্তমান বা আধুনিক সাম্রাজ্যবাদকে বলা হয় ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’। ১৮৭০ খ্রিঃ পর থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়কাল গোটা বিশ্বে বিশেষ করে ইউরোপে দেশগুলি নাটকীয় দ্রুততায় এশিয়া ও আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেইজন্য ১৮৭০-১৯১৪ এই সময়কে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ বলা হয়।উনবিংশ শতাব্দীর শতকের শেষ দিকে নাটকীয় দ্রুততায় ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদের সম্প্রসারণের পেছনে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রভাব কাজ করেছিল। শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ ও উদ্বৃত্ত পণ্য বাজারের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ বিস্তারের প্রয়োজন হয়। এই নতুন সাম্রাজ্যবাদের পেছনে উপনিবেশিক পুঁজি বিনিয়োগ জন্য বাড়তি মূলধনের চাপ। V.I. লেলিনের তাঁর ‘Imperialism, the Highest stage of Capitalism' গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যায় বলা হয় ‘পুঁজিবাদের জঠরেই সাম্রাজ্যবাদের জন্ম হয়।'
স্বদেশের উদ্বৃত্ত মূলধন উপনিবেশ বিনিয়োগ করে পুঁজিপতিরা সেইসব দেশের জনগণের উপর শোষণ চালায়। কিন্তু বিশেষ উপনিবেশিক সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রতিটি পুঁজিবাদী দেশ উপনিবেশ দখলের চেষ্টা করবে বলে অনিবার্যভাবে যুদ্ধ বেঁধে যাবে। বস্তুতপক্ষে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদের জন্য মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ খ্রিঃ আরম্ভ হয়। এই সময় পৃথিবীর এক প্রান্তে আফ্রিকার অবস্থা ভাল নয়, এককথায় অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ। ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে স্পেক, লিভিংস্টোন, স্টানলি প্রমুখ ধর্ম প্রচারক ও অভিযাত্রীদের প্রচেষ্টায় অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ও নানা সম্ভাবনার কথা ইউরোপীয়রা জানতে পারে। শুরু হয় আফ্রিকার উপনিবেশ দখলের লড়াই (Scramble for Africa)।
ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল আফ্রিকাকে ইউরোপীয় দেশ বন্টিত করে নেয়। এরপর জার্মান রাষ্ট্রের প্রাধান্য স্থাপন হয় কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম শাসনকাল থেকে। অটোফন বিসমার্কের নীতি ও আদর্শ পরিত্যাগ করেন তিনি। উইলিয়াম মনে করতেন জার্মান আদৌ ‘পরিতৃপ্ত দেশ’ নয়। এর আরও বিস্তৃতির সম্ভাবনা আছে। সেইজন্য উপনিবেশ বিস্তার নীতি গ্রহণ করে। তিনি ঘোষণা করেন— “Without Germany and the German Empire no important step international matters should be taken even beyond the seas". কাইজারের এই বিশ্বব্যাপী বিস্তার নীতিকে বলা হতো Weltpolitik. ঘটনা পরম্পরা ত্রিচুক্তি (১৮৮২ খ্রিঃ) ও ত্রিশক্তি আঁতাত (১৯০৭ খ্রিঃ) ত্রিশক্তি চুক্তিতে জার্মানী, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী এবং ইতালি চুক্তিটি বিসমার্কের উদ্যোগে ১৮৮২ খ্রিঃ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত ছিল চুক্তিবদ্ধ দেশগুলি কোনো এক বা একাধিক রাষ্ট্র দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে অন্য দুটি রাষ্ট্র আক্রান্ত রাষ্ট্রকে সাহায্য করবে। এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক চুক্তি।
অন্যদিকে ত্রিশক্তি আঁতাত বা ত্ৰিশক্তি মৈত্রী গঠিত হয় ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯১৪-১৮ খ্রিঃ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। কোন বড় ঘটনা বা যুদ্ধ শুধু একটি কারণে হয় না। এর জন্য নানা বিবিধ কারণ ঘাত-প্রতিঘাত মতো বিষয় থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অনেক ঘটনাবহুল কারণ ছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ সমভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে প্রভাবিত করেছিল। অবশেষে ১৯১৯ খ্রিঃ ভার্সাই সন্ধির মধ্যে দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এই সন্ধিতে জার্মানীকে দায়ী করা হয় এবং এর জন্য তার ওপর ৬৬,০০,০০০,০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণেরবিশাল বোঝা চাপানো হয়।
পরবর্তীতে শ্রমবিপ্লব বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে আর একটি যুগান্তকারী ঘটনা রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব। জারতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতা বিদেশীদের হাতে রাশিয়ার পরাজয়, শ্রমিক কৃষকদের অর্থনৈতিক দুর্দশা প্রভৃতি কারণের সমষ্টিগত ফল হিসাবে বলশেভিক বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে ইন্ধন জুগিয়েছিল গোর্কি, টলস্টয়, দস্তভয়েস্কি প্রমুখ মনীষী। বিপ্লবের প্রস্তুতি যখন সম্পূর্ণ তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণ রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রুশবাসী জারের স্বৈরতন্ত্রকে তাদের দুর্গতির একমাত্র কারণ ভেবে বিক্ষোভে ফেটে পড়লে বিপ্লবের চরম মুহূর্তে উপস্থিত হয়। লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল ও শ্রমিক শ্রেণী রাশিয়ায় নবগঠিত সরকার অস্বীকার করে। কৃষক ও শ্রমিকরা বিপ্লবীলাল বাহিনী গঠন করে এই সরকারকে প্রতিরোধ করে অবশেষে ৭ নভেম্বর ১৯১৭ খ্রিঃ লেলিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা চূড়ান্ত জয় লাভ করলে রুশ বিপ্লব সাফল্যমণ্ডিত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জার্মানীতে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের প্রতি জনগণের অসন্তোষের বহিঃ প্রকাশ ঘটে একটি প্রজাতন্ত্রের বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে। কাইজার তখন সপরিবারে হল্যাণ্ডে পালিয়ে যান এবং বিপ্লবীরা জার্মানীকে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে ১৯১৮ খ্রিঃ ঘোষণা করে। বার্লিন সন্নিকটে ভাইমার নামক স্থানে গণপরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা প্রজাতান্ত্রিক জার্মানীর জন্য একটি সংবিধান রচনা করে। এই সরকার পরিচিত হয় 'ভাইমার প্রজাতন্ত্র' নামে। ইতালিতে ফ্যাসিবাদ ও জার্মানীতে ন্যাৎসীবাদের উত্থান হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে উদ্ভব ঘটে। যুদ্ধ পরবর্তী ইতালির আর্থিক দুরবস্থা, শান্তি শৃঙ্খলা অবনতির কারণে ফ্যাসিবাদের উত্থান। বেনিতো মুসোলিনী এই ফ্যাসিবাদের নেতা। ফ্যাসিবাদের স্বৈরাচারী নীতির সঙ্গে জার্মানীর নাৎসীবাদের মিল ছিল অনেক। জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা, জার্মান ভাষাভাষির মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, ভার্সাই সন্ধির শর্তসমূহকে নাকচ করা প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসীরা এক ভয়াবহ শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রসঙ্গত নাৎসীবাদ ও ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।
অতৃপ্ত জাতীয়বাদ, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ এক চরম বহিঃপ্রকাশ হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ও ব্যাপক এবং ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। কোন একটি কারণে এত বড় ঘটনা ঘটে না দীর্ঘদিন নানা ঘটনা এবং পুঞ্জিভূত ক্ষোভ এর বহিঃ প্ৰকাশ। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের ব্যর্থতা জার্মানী অকারণে পোলাণ্ড আক্রমণ আর ভার্সাই সন্ধি চরম অবিচারে বহিঃপ্রকাশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। এত বড় যুদ্ধ গোটা বিশ্ব ইতিহাস অতীত, বর্তমানে কোনদিনেই ঘটেনি ভবিষ্যতে ঘটবে কিনা সময়ই তা বলবে।
১. সেসিল রোডস্ কে?
▸ সেসিল রোডস্ ছিলেন একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী ও প্রশাসক। দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংল্যান্ডের উপনিবেশ স্থাপনে তিনি বড়ো ভূমিকা গ্রহণ করেন। অ্যাঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের মধ্যবর্তী অঞ্চল তিনি জয় করেন এবং স্থানটি তাঁর নামানুসারে ‘রোডেশিয়া’ নামে পরিচিত হয়।
২. আফ্রিকার কোন কোন অঞ্চলে ফ্রান্সের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল?
▸ আফ্রিকার আলজেরিয়া, টিউনিসিয়া, সাহারা, মরক্কো, সেনেগাল, মাদাগাস্কার, আইভরি কোস্ট প্রভৃতি অঞ্চলে ফ্রান্সের উপনিবেশ স্থাপিত হয়। প্রায় ৩৫ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা ও ২৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা তার সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
৩. আফ্রিকায় পোর্তুগাল, জার্মানি ও ইতালির দুটি করে উপনিবেশের নাম লেখো।
▸ আফ্রিকার আঙ্গোলা ও মোজাম্বিক ছিল পোর্তুগালের উপনিবেশ। টোগোল্যান্ড, ক্যামেরুন ছিল জার্মান উপনিবেশ। ইরিত্রিয়া, সোমালিল্যান্ড ও ত্রিপলি ছিল ইতালির উপনিবেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমালিল্যান্ডে উপনিবেশ বিস্তার করতে গিয়ে ইতালি আফ্রিকার একটি স্বাধীন রাজ্য ইথিওপিয়ার (আবিসিনিয়া) সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে এডোয়ার যুদ্ধে ইতালি আবিসিনিয়ার কাছে পরাজিত হয়।
৪. সাম্রাজ্যবাদ বা নব-সাম্রাজ্যবাদ বা নব-উপনিবেশবাদ বলতে কী বোঝো?
▸ উনিশ শতকের শেষদিক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলি নানা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে সাম্রাজ্য বিস্তার অথবা ঐসব অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব স্থাপনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। একে ঐতিহাসিকরা ‘নব-সাম্রাজ্যবাদ' বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ একে নব-উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism) বলেছেন।
৫.‘নব-সাম্রাজ্যবাদের’ নব বা অভিনবত্ব কী ছিল?
▸ আগে সাম্রাজ্যবাদ মূলত ভৌমিক অধিকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু উনিশ শতকের শেষদিক থেকে ইউরোপীয় দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদী স্পৃহার লক্ষ্য শুধু ভূমি দখল নয়, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সেই অঞ্চলের অর্থনীতি, প্রজাশক্তি ইত্যাদি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা। সাম্রাজ্যবাদী শোষণের এই চরিত্র বদলই ‘নব-সাম্রাজ্যবাদের’ অভিনবত্ব।
৬. ‘Drang nach Osten' নীতি বলতে কী বোঝায়?
▸ ‘ড্ৰাঙ্গ নাখ্ অস্টেন’ কথার অর্থ হল ‘পূর্বদিকে অগ্রসর হও’। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম নিম্ন দানিয়ুব উপত্যকা অঞ্চল ও নিকট প্রাচ্যের তুরস্কে প্রভাব বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা করেন, তা ‘ড্রাঙ্গ নাখ্ অস্টেন' নীতি নামে পরিচিত।
৭. কে বলেছিলেন ‘আমাদের ভবিষ্যৎ সমুদ্রে নিহিত আছে’? তিরপিজ কে?
উঃ কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে সদম্ভে বলেছিলেন—‘আমাদের ভবিষ্যৎ সমুদ্রে নিহিত আছে' (Our future lies on the Sea)। অ্যাডমিরাল তিরপিজ ছিলেন কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের নৌ-সেনাপতি।
৮. মরক্কো সংকট কী? কোন সম্মেলনে মরক্কো সংকটের সমাধান হয়?
▸ আফ্রিকার মরক্কোয় ফরাসি প্রভাব প্রতিষ্ঠিত ছিল। মরক্কোয় জার্মান স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম মরক্কোর অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব এবং মুসলিম স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। এর ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয় এটি ‘মরক্কো সংকট' নামে পরিচিত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের আলজেসিরাস সম্মেলনে মরক্কো সংকটের সাময়িক সমাধান হয়।
৯. আগাদির সংকট কী?
▸ মরক্কো থেকে ফরাসি প্রভাব দূর করার জন্য কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর আগাদির বন্দরে ‘প্যান্থার’ নামে একটি যুদ্ধ জাহাজ পাঠান। এর ফলে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। এটি ‘আগাদির সংকট’ (Agadir Crisis) নামে পরিচিত।
১০. E.P বা নয়া অর্থনৈতিক নীতির কয়েকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
▸ E. P - এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল - (১) কৃষকদের উদ্বৃত্ত শস্য অধিগ্রহণের নীতি তিক্ত হয়; (২) কৃষকদের খোলাবাজারে শস্য বিক্রয়ের অধিকার দেওয়া হয়; (৩) কৃষি খামারের বিকাশের জন্য সমবায় প্রথাকে উৎসাহিত করা হয়; (৪) ছোটো শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়; (৫) শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার নীতি পরিত্যক্ত হয় এবং (৬) শিল্পে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়।
১১. সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট দলের মুখপত্রের নাম কী? এর সম্পাদক কে ছিলেন?
▸ সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট দলের (পূর্বতন বলশেভিক দল) মুখপত্র ছিল ‘প্রাভদা’। ‘প্রাভদা’ শব্দের অর্থ ‘সত্য’ (Truth)। এটি প্রথম ১৯১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে এবং এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন ইগোরভ (Egorov)। বলশেভিক বিপ্লবের পর প্রাভদার সম্পাদক হন স্তালিন (প্রকৃত নাম জোসেফ ভিসারিওনোভিচ্ জুগভিলি)। স্তালিন শব্দের অর্থ ‘ইস্পাত’।
১২. চেকা কী?
▸ বলশেভিক দল রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর প্রতিবিপ্লবীদের দমনের জন্য একটি গুপ্ত পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলে। এই পুলিস বাহিনীর নাম ‘চেকা’ (Cheka)। এটি ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে লেনিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৩. সাম্যবাদ-বিরোধী চুক্তি (Anti-Comintern Pact) কী ?
▸১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে জার্মানি ও জাপান সাম্যবাদ-বিরোধী চুক্তি বা Anti-Comintern Pact স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল নিজেদের দেশে কমিউনিজমের প্রসার রোধ করা এবং এ বিষয়ে পরস্পরকে সাহায্য করা। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালি এই সাম্যবাদ-বিরোধী চুক্তিতে যোগদান করে।
১৪.‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি’ (Rome-Berlin - Tokyo Axis) কীভাবে গড়ে ওঠে?
▸১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে ইতালি ও জার্মানির মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিকে মুসোলিনি রোম-বার্লিন Axis অক্ষশক্তি বলে অভিহিত করেন। ঐ বছরের নভেম্বরে জার্মানি ও জাপানের মধ্যে Anti-Comin tern Pact বা সাম্যবাদ-বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালি Anti-Comin tern Pact-এ যোগদান করলে জার্মানি-ইতালি ও জাপানের মধ্যে একটি শক্তিজোট গড়ে ওঠে। এই শক্তিজোট ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি' নামে পরিচিত।
১৫.‘তোষণ নীতি’ (Policy of Appeasement) কী?
▸ তোষণ নীতির প্রথম প্রবক্তা হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্ট্যানলি বল্ডউইন। তবে এটিকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলেন (মে, ১৯৩৭-মে, ১৯৪০)। তাঁরা জার্মানি ও ইতালির কিছু ন্যায়সংগত দাবি মেনে নিয়ে তাদের তোষণ বা তুষ্ট করে ইউরোপে যুদ্ধ এড়াতে ও সাম্যবাদী রাশিয়াকে একঘরে করে রাখতে চেয়েছিলেন। এই নীতি ‘তোষণ নীতি’ নামে পরিচিত।
১৬.কার্জন লাইন (Curzon Line) কী ?
▸সোভিয়েত রাশিয়া ও পোল্যান্ডের মধ্যবর্তী সীমান্ত রেখা ‘কার্জন লাইন' নামে পরিচিত। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জর্জ কার্জনের মধ্যস্থতায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এই সীমান্তরেখা নির্ধারিত হয়।
১৭. ‘ব্লিৎক্রিগ’ (Blitzkreig) বলতে কী বোঝায়?
▸ব্রিৎসক্রিগ শব্দের অর্থ বিদ্যুৎগতিতে সর্বাত্মক আক্রমণ। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করার পর মাত্র একবছরের মধ্যেই জার্মানি পোল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম ও উত্তর ফ্রান্স দখল করে নেয়। জার্মানির এই দ্রুত ও সর্বাত্মক যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ‘ব্লিৎক্রিগ' নামে খ্যাত।
১৮. চার্চিল কবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন?
▸নেভিল চেম্বারলেনের পদত্যাগের পর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে রক্ষণশীল দলের নেতা উইনস্টন চার্চিল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেন।
১৯. ভার্সাই সন্ধির দুটি অর্থনৈতিক শর্তের উল্লেখ করো।
▸ ভার্সাই সন্ধির প্রধান অর্থনৈতিক শর্ত হল (১) যুদ্ধে মিত্রশক্তির ক্ষয়-ক্ষতি পূরণের জন্য জার্মানির ওপর এক বিরাট অঙ্কের ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়; (২) জার্মানির কয়লা-সমৃদ্ধ সার অঞ্চল ১৫ বছরের জন্য ফ্রান্সের অধীনে রাখা হয়।
২০. ভার্সাই সন্ধির দুটি সামরিক শর্তের উল্লেখ করো।
▸ ভার্সাই সন্ধির প্রধান সামরিক শর্তগুলি হল (১) জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও সৈন্যদলে যোগদানের ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়; (২) জার্মানির সৈন্যসংখ্যা ১ লক্ষে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়; (৩) জার্মানির পক্ষে সামরিক বিমানবহর রাখা ও অস্ত্রাদি নির্মাণ নিষিদ্ধ হয় এবং (৪) রাইন নদী তীরবর্তী অঞ্চলে জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২১.‘পোলিশ করিডর' (Polish Corridor) কী?
▸ ভার্সাই সন্ধি অনুসারে জার্মানি নবগঠিত পোল্যান্ডকে সমুদ্রপথে নিষ্ক্রমণের জন্য জার্মানির পশ্চিম প্রাশিয়া ভেতর দিয়ে সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড (২৬০ মাইল × ৪০ মাইল) প্রদান করে এটি ‘পোলিশ করিডর’ নামে পরিচিত।
২২. ভার্সাই সন্ধির যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত শর্ত কী ছিল?
▸ ভার্সাই সন্ধির ২৩১নং ধারায় জার্মানিকে যুদ্ধের জন্য যুদ্ধ-অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় এবং মিত্রপক্ষীয় দেশগুলির ওপর আক্রমণ ও ক্ষতিসাধনের জন্য তার ওপর এক বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া, আন্তর্জাতিক নৈতিকতার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অপরাধ করার জন্য জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ামের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় তবে এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
২৩. ‘তিন সম্রাটের মৈত্রী সংঘ' (Three Emperors' League) বা ‘ড্রেইকাইজার বান্ড’ (Dreikaiser bund) কবে, কাদের মধ্যে ও কী উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
▸জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্কের উদ্যোগে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বার্লিনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা শুরু হয় এবং এরই পরিণতিতে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তিন সম্রাটের মৈত্রী সংঘ’ বা ‘ড্রেইকাইজারবান্ড’ গড়ে ওঠে। এই মৈত্রীর উদ্দেশ্য ছিল (১) সংঘভুক্ত রাষ্ট্রগুলির রাজতন্ত্রের নিরাপত্তা রক্ষা করা, (২) নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে নিকট প্রাচ্য সমস্যার সমাধান করা এবং (৩) সমাজতন্ত্রবাদের প্রসার রোধ করা। ‘তিন সম্রাটের সংঘের’ তিনজন সম্রাট হলেন জার্মানির প্রথম উইলিয়াম, রাশিয়ার জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার ও অস্ট্রিয়ার ফ্রান্সিস জোসেফ।
২৪.‘দ্বিশক্তি মৈত্রী' (Dual Alliance) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তির প্রধান শর্ত কী ছিল?
▸ ‘দ্বি-শক্তি মৈত্রী’ ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির প্রধান শর্ত হল—তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র কর্তৃক আক্রান্ত হলে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া পরস্পরকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে।
২৫. কোন সময়কালকে ‘বিসমার্কের যুগ’ (Age of Bismarck) বলা হয় এবং কেন?
▸ ইউরোপীয় রাজনীতিতে ১৮৭১ থেকে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ‘বিসমার্কের যুগ' নামে পরিচিত। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে বিসমার্ক ১৮৭১ থেকে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপীয় রাজনীতির প্রধান নিয়ন্তা ছিলেন এবং নতুন শক্তিসাম্য ব্যবস্থাকে ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। এইজন্য ঐ সময়কালকে ‘বিসমার্কের যুগ’ বলা হয়।
২৬. 'বুন্দেসরাত্' (Bundesrath) ও 'রাইখৃস্ট্যাগ' (Reichstag) কী ?
▸ জার্মানির দ্বিকক্ষ-বিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষ ছিল ‘বুন্দেসরাত্’। এটি ছিল অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং জার্মানির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। আইনসভার নিম্নকক্ষ ‘রাইখৃস্ট্যাগ' নামে পরিচিত ছিল। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে এর সদস্যরা নির্বাচিত হতেন।
২৭. কে, কেন ঐক্যবদ্ধ জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানকে ‘ভণ্ড সংবিধান' বলে অভিহিত করেছেন?
▸ নতুন সংবিধানে জনগণের প্রনিনিধিদের নিয়ে গঠিত নিম্নকক্ষ রাইস্ট্যাগের থেকে অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত উচ্চকক্ষ বুন্দেসরাত্-এর ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি এবং সংবিধানের লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আড়ালে প্রাশিয়ার একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। তাই ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber) এই সংবিধানকে ‘ভণ্ড সংবিধান' (Sham Constitution) এবং ঐতিহাসিক থিওডর মমসেন (Theodore Mommsen) এই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনকে ‘ছদ্ম সাংবিধানিক স্বৈরাচার' (Pseudo- constitutional absolutism) বলে আখ্যা দিয়েছেন।
২৮. ‘বুয়র যুদ্ধ’ (Boer War) কবে কাদের মধ্যে এবং কেন সংঘটিত হয়? এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল?
▸ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার অরেঞ্জ ও ট্রান্সভালের বুয়রদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের যুদ্ধ হয়। বুয়র যুদ্ধের প্রধান কারণ হল (১) অরেঞ্জ ও ট্রান্সভালে হীরে ও সোনার খনি আবিষ্কৃত হলে ইংরেজরা অঞ্চল দুটি দখলে উদগ্রীব হয় এবং (২) দক্ষিণ আফ্রিকায় অবিচ্ছিন্ন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার জন্য ইংরেজরা উক্ত অঞ্চল দুটি অধিকারের পরিকল্পনা করে। এই যুদ্ধে ইংল্যান্ড জয়লাভ করে এবং বুয়র রাজ্য দুটি অধিকার করে নেয়।
২৯. আফ্রিকায় উপনিবেশ নিয়ে সংঘাতের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করো।
▸ আফ্রিকায় উপনিবেশ নিয়ে সংঘাতের প্রধান ক্ষেত্রগুলি ছিল (১) ফ্যাসোডা নিয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে সংঘাত, (২) বুয়র যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড ও জার্মানির মধ্যে দ্বন্দ্ব, (৩) মরক্কো নিয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে বিরোধ।
৩০. আফ্রিকা ব্যবচ্ছেদের গুরুত্ব কী?
▸ আফ্রিকা ব্যবচ্ছেদের ফলে (১) আফ্রিকার নানা অংশে ইউরোপীয় দেশগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে; (২) আফ্রিকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ইউরোপীয় দেশগুলির হস্তগত হওয়ায় ঐ সব দেশ সমৃদ্ধিশালী হয় এবং (৩) একদা ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশের’ (Dark Continent) অবগুণ্ঠন উন্মোচিত হওয়ায় সেখানে ধীরে ধীরে আধুনিক সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়।
৩১. ঐক্যবদ্ধ জার্মানির কেন্দ্রীয় জাতীয় ব্যাংক-এর নাম কী? এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
▸ ঐক্যবদ্ধ জার্মানির কেন্দ্রীয় জাতীয় ব্যাংকের নাম রাইট্স ব্যাংক (Reichsbank)। এটি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩২.‘কুলটুরক্যাম্ফ' (Kulturkampf) বলতে কী বোঝায়?
▸ জার্মানির রোমান ক্যাথলিকরা ‘সেন্টার' নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলেছিল এবং রাইখৃস্ট্যাগে বেশ কিছু আসন লাভ করেছিল। এদের আনুগত্য ছিল রোমের পোপতন্ত্রের প্রতি। বিসমার্ক এদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতির শত্রু বলে বিবেচনা করেন এবং এদের বিরুদ্ধে ‘মে আইন’ প্রবর্তন করে এদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে বিসমার্কের এই সংগ্রাম ‘কুলটুরক্যাম্ফ' বা সভ্যতার সংগ্রাম নামে পরিচিত। তবে ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে বিসমার্কের দমনমূলক নীতি সফল হয়নি।
৩৩. জার্মান সোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (German Social Democratic Party) কবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের কয়েকজন প্রধান নেতার নাম লেখো।
▸ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে গোথা সম্মেলনে (Gotha Congress) জার্মানির সমাজতন্ত্রী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘জার্মান সোসাল ডেমোক্রেটিক পার্টির’ প্রতিষ্ঠা করে। এই দলের প্রধান নেতারা ছিলেন ফার্দিনান্দ লাসাল, লাইবনেক্ট (Leibnecht) ও বেবেল (A. Babel)।
৩৪. জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে বিসমার্কের (১৮৭১-১৮৯০) বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?
▸ চ্যান্সেলর হিসাবে বিসমার্কের বৈদেশিক নীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল (১) নব-গঠিত জার্মানির নিরাপত্তা রক্ষা করা, (২) ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে নবোদ্ভূত ইউরোপীয় শক্তি সাম্য ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা এবং (৩) আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘বৃহৎ শক্তি’ (Great Power ) হিসাবে জার্মানিকে উপস্থাপিত করা।
৩৫. কোন সময়কালকে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ' (Age of Imperialism) বা নব- সাম্রাজ্যবাদের যুগ বলে অভিহিত করা হয় এবং কেন?
▸ ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরোপীয় দেশগুলি আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এক নগ্ন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তাই ঐ সময়কালকে নিন্দার্থে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ বলা হয়েছে।
৩৬. উনিশ শতকের শেষদিকে সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের প্রধান কারণগুলি কী?
▸ সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের প্রধান কারণগুলি হল ঃ (১) শিল্পবিপ্লবের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে বিপুল মূলধন জমা হয়, তা লগ্নি করার ক্ষেত্র অনুসন্ধান; (২) তৈরি পণ্যের বাজার অনুসন্ধান; (৩) অনগ্রসর দেশগুলির প্রজাশক্তিকে সাম্রাজ্যবাদী দেশের স্বার্থে ব্যবহার করা; (৪) উপনিবেশ বিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা জাহির ও মান- মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং (৫) উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
৩৭. উনিশ শতকের শেষদিকে সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের অর্থনৈতিক কারণ কী ছিল?
▸ (১) শিল্পবিপ্লবের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর পরিমাণ মূলধন জমে যায়। এই মাত্রাতিরিক্ত মূলধন লগ্নির ক্ষেত্র অনুসন্ধান, (২) তৈরি পণ্যের বাজার অনুসন্ধান, (৩) সস্তায় কাঁচামাল ও শ্রমিক সংগ্রহের তাগিদ প্রভৃতির জন্যই পুঁজিপতিরা তাদের দেশের সরকারকে সাম্রাজ্য বিস্তারে বাধ্য করে।
৩৮. Imperialism—A Study (সাম্রাজবাদ—একটি সমীক্ষা) গ্রন্থটি কার লেখা? এর মূল বিষয়বস্তু কী?
অথবা, সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের পশ্চাতে জে. এ. হবসনের ব্যাখ্যাটি কী?
▸ Imperialism – A Study গ্রন্থটি (প্রকাশিত ১৯০২) ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে. এ. হবসনের লেখা। এই গ্রন্থটির প্রধান বিষয়বস্তু হল—পশ্চিমি দেশগুলিতে ধন-বণ্টনের বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর মূলধন জমে যায়। এই মাত্রাতিরিক্ত মূলধনের লগ্নির ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য তারা নিজের দেশের সরকারকে সাম্রাজ্য বিস্তারে বাধ্য করে। হবসনের ভাষায়, ‘বিনিয়োগের অনুসন্ধানে পুঁজির আধিক্যই ছিল সাম্রাজ্যবাদের মূল অর্থনৈতিক শিকড়' (The economic taproot of imperialism was excessive capital, in search of investment)
৩৯. 'ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন' কবে, কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়?
▸ ফরাসি অভিযাত্রী স্ট্যানলির চেষ্টায় কঙ্গোয় বেলজিয়ামের প্রভাব তৈরি হয়। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাসেলস্ সম্মেলনে বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড-এর উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন' গঠিত হয়। আফ্রিকার কঙ্গোয় বেলজিয়ামের উপনিবেশ স্থাপনের স্বীকৃতি ও কঙ্গো উপত্যকার উন্নয়নের জন্য নীতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে এই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল। পরে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ‘কঙ্গো ফ্রি স্টেট’ গঠিত হয়, যদিও বাস্তবে কঙ্গোর ওপর বেলজিয়ামের আধিপত্য থেকেই যায়।
৪০. আফ্রিকা ব্যবচ্ছেদ নিয়ে বার্লিন সম্মেলনে (Berlin Conference, 1885 ) কী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল?
▸ আফ্রিকা নিয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির বার্লিন সম্মেলনে (১৮৮৫) কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় (১) কঙ্গো ফ্রি স্টেট-এর ওপর বেলজিয়ামের কর্তৃত্ব বজায় থাকবে; (২) কঙ্গো ও নাইজার নদী সকল দেশের বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত থাকবে; (৩) কোনো রাষ্ট্র আফ্রিকার নতুন কোনো অঞ্চল দখল করলে তা তার ‘প্রভাবাধীন এলাকা’ (sphere of Influence) বলে চিহ্নিত হবে এবং তা অন্যান্য রাষ্ট্রকে জানিয়ে দিতে হবে; (৪) ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান অ্যাসোসিয়েশন' ভেঙে দেওয়া হবে। এইসব সিদ্ধান্তের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিনা সংঘর্ষে নিজেদের মধ্যে আফ্রিকাকে ভাগ করে নেওয়া।
৪১. নব-সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবে লেনিনের ব্যাখ্যাটি কী?
▸ লেনিন তাঁর Imperialism: The Highest Stage of Capitalism (প্রকাশিত ১৯১৬) গ্রন্থে বলেছেন— পুঁজিবাদের জঠরে সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। পুঁজিবাদীরা উদ্বৃত্ত মূলধন বিনিয়োগ করে আরও মুনাফার উদ্দেশ্যে তারা অনগ্রসর দেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপন করে। তবে উপনিবেশ সীমিত হওয়ায় পুঁজিবাদী দেশগুলির মধ্যে উপনিবেশ দখলের জন্য যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতারই অনিবার্য পরিণতি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
৪২.আফ্রিকায় ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণে খ্রিস্টান মিশনারিদের কী ভূমিকা ছিল?
▸ ধর্মপ্রচার ও মানব কল্যাণের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে খ্রিস্টান স্কটিশ মিশনারি ডেভিড লিভিংস্টোন, ফরাসি মিশনারি স্ট্যানলি ও ল্যাভেজেরি, জার্মান অভিযাত্রী কার্ল পিটার্স প্রমুখ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে নানা তথ্য সরবরাহ করেন। তাদের হাত ধরে এইসব অঞ্চলে আসে ইউরোপীয় বণিককুল। কালক্রমে বাণিজ্যিক অধিকার রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্র তৈরি করে।
৪৩. আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলি কেন ‘কাড়াকাড়ি’ শুরু করেছিল?
▸আফ্রিকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি লোভ, (২) এই অঞ্চলের সামরিক গুরুত্ব, (৩) ‘মরো নীতির’ জন্য আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপীয় দেশগুলির বিস্তৃতির পথ রুদ্ধ হওয়া প্রভৃতি কারণে ইউরোপীয় দেশগুলি আফ্রিকায় সাম্রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হয়।
৪৪. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন কোন অঞ্চল নিয়ে ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল?
▸ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আনাম, কোচিন-চিন, টংকিং ও কাম্বোডিয়ায় ফরাসি উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। এই চারটি রাজ্য নিয়ে তৈরি হয় ‘ফরাসি ইন্দো-চিন’ (১৮৮৭) পরে লাওস এর সঙ্গে যুক্ত হয়।
৪৫. ‘মুক্তদ্বার নীতি’ (Open Door Policy) কী?
▸ চিনা ভূখণ্ডে ইউরোপীয় দেশগুলির উপনিবেশ স্থাপন রোধ করার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন হে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মুক্তদ্বার নীতি’ ঘোষণা করেন। এর দ্বারা চিনের অখণ্ডতা রক্ষার এবং চিনা ভূখণ্ডে যে-কোনো দেশের বণিক বা বণিকগোষ্ঠীকে অবাধে বাণিজ্য করার অধিকারের কথা বলা হয়। আসলে চিনদেশে আমেরিকার বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখাই ছিল ‘মুক্তদ্বার নীতি’ ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য।
৪৬. জেমসন রেড’ কী? 'ক্রুগার টেলিগ্রাম' (Kruger Telegram) কী?
▸ দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রান্সভালে হীরা ও সোনার খনি আবিষ্কৃত হলে ডা. জেমসনের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সভাল অভিযান করেন এই ঘটনা Jameson Raid নামে খ্যাত। কিন্তু জেমসনের অভিযান প্রতিহত হয়। জার্মান সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম এই সাফল্যের জন্য ট্রান্সভালের প্রেসিডেন্ট পল ক্রুগারকে টেলিগ্রাম করে অভিনন্দন জানান এটি ‘ক্রুগার টেলিগ্রাম’ নামে খ্যাত। এই টেলিগ্রাম ইঙ্গ-জার্মান সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে।
৪৭. 'ফ্যাসোডা সংকট' (Fashoda Crisis ) কী?
▸ ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সেনাপতি মার্চান্ড উত্তর নীল উপত্যকায় ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ফ্যাসোডা দখল করে নিলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন হয়ে ওঠে। এই ঘটনা ‘ফ্যাসোডা সংকট’ নামে পরিচিত। শেষপর্যন্ত ফ্রান্স ফ্যাসোডা ত্যাগ করলে সংকটের নিরসন হয়।
৪৮. বুয়র (Boer) কাদের বলা হয়?
▸ দক্ষিণ আফ্রিকার ওলন্দাজ বা ডাচ ঔপনিবেশিকরা স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল। এদের সন্তান-সন্ততিরা ‘বুয়র’ নামে পরিচিত ছিল। এরা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ কলোনি, অরেঞ্জ ও ট্রান্সভালে বসবাস করত।
৪৯. টীকা লেখ— সুয়েজ খাল (Suez Canal)
▸ সুয়েজ খাল মিশরের (Egypt) মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরের সৈয়দ বন্দরের সঙ্গে লোহিত সাগরকে (Red Sea) যুক্ত করেছে। Suez Canal Company-র উদ্যোগে ফরাসি স্থপতি ফার্দিনান্দ ডি লেসেপ্স (Ferdinand de Lesseps)-এর তত্ত্বাবধানে ১০৫ মাইল দীর্ঘ (১৬৯ কিমি) এই খাল খনন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ হয়। সুয়েজ খাল কোম্পানির অনেক শেয়ার ক্রয় করে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ব্রিটেন ঐ কোম্পানির সবচেয়ে বড়ো অংশীদারে পরিণত হয়।
৫০. ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের আগে আফ্রিকার কোন কোন অঞ্চলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল?
▸ ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের আগে আফ্রিকার কেপ কলোনি ও ট্রান্সভালে ইংল্যান্ডের এবং আলজেরিয়ায় ফ্রান্সের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল।
৫১. আফ্রিকার কোন কোন অঞ্চলে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল?
▸কেপ কলোনি, পূর্ব আফ্রিকা, গাম্বিয়া, রোডেশিয়া, নাইজিরিয়া, কেনিয়া, মিশর, সুদান উপত্যকা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংল্যান্ডের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। আফ্রিকার প্রায় ৪২.৫ লক্ষ বর্গমাইল অঞ্চল ও ৬৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা ব্রিটেনের সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।
৫২. ‘চোদ্দ-দফা শর্ত' (Fourteen Points) কী? অথবা, কে, কী উদ্দেশ্যে ‘চোদ্দ-দফা শর্ত' রচনা করেন?
▸ মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি, মার্কিন কংগ্রেসে ‘চোদ্দ-দফা শর্ত’ ঘোষণা করেন। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র রক্ষা এবং ইউরোপের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে তিনি ‘চোদ্দ-দফা শর্ত’ ঘোষণা করেন।
৫৩. উইলসনের ‘চোদ্দ দফা'র (Fourteen Points) কয়েকটি প্রধান ধারার উল্লেখ করো।
▸ উইলসনের ‘চোদ্দ দফা’র কয়েকটি প্রধান ধারা হল (১) কোনো দেশই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রয়োজনের বেশি সামরিক শক্তি রাখবে না এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত অস্ত্র ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম হ্রাস করবে; (২) জাতীয়তার ভিত্তিতে বলকান দেশগুলির পুনর্বিন্যাস করতে হবে; (৩) বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দিতে হবে এবং (৪) সমস্ত রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে ১৪নং শর্ত বা ধারা।
৫৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণগুলি কী ছিল?
▸ জার্মানির পরাজয়ের প্রধান কারণগুলি হল : (১) সামরিক দিক থেকে জার্মান শক্তিজোটের থেকে ইঙ্গ-ফরাসি জোট বেশি শক্তিশালী ছিল; (২) দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালানোর মতো শক্তি ও সম্পদ জার্মানির ছিল না; (৩) জার্মানি একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ে; (৪) আমেরিকার মিত্রপক্ষে যোগদান যুদ্ধের গতিকে মিত্রপক্ষের অনুকূলে নিয়ে আসে এবং (৫) জার্মানি নৌ- শক্তিতে তার প্রতিপক্ষের থেকে দুর্বল ছিল।
৫৫. জার্মানি কবে মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে?
▸ জার্মানি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে।। ইতিমধ্যে জার্মানির সম্রাট কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম সিংহাসন ত্যাগ করে হল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং জার্মানিতে একটি নতুন প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়।
৫৬. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলের উল্লেখ করো।
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল (১) জার্মানি, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও তুরস্কে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পতন; (২) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব এবং বিশ্বের প্রথম কমিউনিস্ট দেশ হিসাবে রাশিয়ার আত্মপ্রকাশ; (৩) ইউরোপ থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি; (৪) ইউরোপে যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব; (৫) ইউরোপের বহু দেশে গণতন্ত্রের প্রসার এবং (৬) বিশ্ব শান্তিরক্ষার স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে জাতিসংঘের ( League of Nations) জন্ম।
৫৭. স্লাইফেন পরিকল্পনা (Schlieffen Plan) কী?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নয় বছর আগে জার্মানির প্রধান সেনাপতি আলফ্রেড স্লাইফেন ফ্রান্স জয় করার একটি পরিকল্পনা রচনা করেন। এতে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গ দখল করে সেখান দিয়ে উত্তর ফ্রান্সে অভিযান চালানোর এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্যারিস দখলের রূপরেখা তৈরি করা হয়। এটি ‘স্লাইফেন পরিকল্পনা’ নামে খ্যাত।
৫৮. জুটল্যান্ডের নৌযুদ্ধ (War of Jutland) ও গ্যালিপোলির যুদ্ধ (Battle or Gallipali) কবে কাদের মধ্যে হয়? এই যুদ্ধের ফল কী হয়েছিল?
▸ জুটল্যান্ডের নৌযুদ্ধ ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে জার্মানি ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সংঘটিতহয়। এই যুদ্ধে জার্মানি জয়লাভ করলেও তার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ভবিষ্যতে সমুদ্রে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে দার্দানেলিস প্রণালীতে তুরস্ক ও মিত্রপক্ষের মধ্যে গ্যালিপোলির যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মিত্রপক্ষ পরাজিত হয়।
৫৯. ‘ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধি' (Treaty of Brest-Litovsk) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়? এর প্রধান গুরুত্ব কী?
▸ ‘ব্রেস্ট-লিটভস্কের সন্ধি’ ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চে জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধির দ্বারা সোভিয়েত রাশিয়া মিত্রপক্ষ ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায়।
৬০. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা কবে এবং কেন যোগদান করে?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মিত্রপক্ষে যোগদান করে। প্রধানত দুটি কারণে আমেরিকা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগ দেয় (১) জার্মানির নির্বিচার আক্রমণে আমেরিকার বাণিজ্য জাহাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হচ্ছিল মার্কিন যাত্রীবাহী জাহাজ লুসিট্যানিয়াকে জার্মানরা ডুবিয়ে দিলে ক্রুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রপক্ষে যোগদান করে) এবং (২) মিত্রপক্ষকে প্রদত্ত বিপুল পরিমাণ আমেরিকান ঋণ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি মিত্রপক্ষের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছিল।
৬১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সৃষ্টির জন্য কি জার্মানিকে এককভাবে দায়ী করা যায়?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানি একা দায়ী ছিল না। আলসাস-লোরেন পুনরুদ্ধারের জন্য ফ্রান্সের উগ্র মনোভাব, গোপন সামরিক চুক্তি গঠন, বলকানে অস্ট্রো-রুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ইউরোপের দুই শিবিরে বিভাজন ইত্যাদি কারণও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সংঘটনে ক্রিয়াশীল ছিল এবং এসবের জন্য অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি বৃহৎ শক্তিগুলিও কোনো না কোনোভাবে দায়ী ছিল। এইজন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে 'a tragdy of miscalclations' ও 'a European Civil War' বলে মন্তব্য করেছেন।
৬২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিবদমান দুটি পক্ষের নাম ও প্রধান দেশগুলির নাম লেখো।
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একদিকে ছিল Central Powers বা কেন্দ্রীয় শক্তি, যার সদস্য ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালি, তুরস্ক (অটোমান), বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশ ইতালি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ত্রিশক্তি মৈত্রী জোট ত্যাগ করে ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের আঁতাত গোষ্ঠীতে যোগ দেয়। অন্যদিকে ছিল Allied Powers বা মিত্রশক্তি—এর সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, সার্বিয়া, বেলজিয়াম, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি।
৬৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণগুলি কী?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণগুলি হল: (১) বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে উগ্র, স্বার্থপর ও সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, (২) ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, (৩) অতৃপ্ত বলকান জাতীয়তাবাদ, (৪) পরস্পর-বিরোধী শক্তিজোট গঠন, (৫) দুই জোটের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতা, (৬) বলকান অঞ্চলে অস্ট্রো- সার্বিয়া ও অস্ট্রো-রুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইত্যাদি।
৬৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ‘বিশ্বযুদ্ধ’ বা ‘সমষ্টিগত যুদ্ধ’ (Total war) বলা হয় কেন?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো এত ব্যাপক, ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী যুদ্ধ এর আগে কখনও সংঘটিত হয়নি। জল-স্থল ও আকাশে এই যুদ্ধ ঘটে এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ কোনো না কোনোভাবে এই যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এইজন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে (১৯১৪-১৮) ‘বিশ্বযুদ্ধ’ বা ‘সমষ্টিগত যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়।
৬৫. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে (বা কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম) দায়ী করা হয় কেন?
▸ (১) কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম কর্তৃক বিশ্ব-রাজনীতিতে জার্মানির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, (২) নৌ-শক্তি বৃদ্ধি ও সামরিক প্রস্তুতি, (৩) বলকানে অস্ট্রিয়ার নীতিকে সমর্থন, (৪) অস্ট্রিয়াকে যুদ্ধে প্ররোচনা দান, (৫) অস্ট্রিয়ার পক্ষ নিয়ে সরাসরি রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা প্রভৃতি কারণে জার্মানিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাধ্যক্ষ ছিলেন মোল্টকে (Moltke)।
৬৬.‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’ (Sarajevo Massacre) কী?
▸ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফ্রান্সিস ফার্দিনান্দ ও তাঁর পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড' (The Black Hand) নামক সন্ত্রাসবাদী সংস্থার সদস্য ন্যাভরিলো প্রিন্সেপ-এর হাতে নিহত হন। এই ঘটনা ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড' নামে পরিচিত। এই ঘটনাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা তাৎক্ষণিক কারণ হিসাবে দেখা দেয়।
৬৭. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাৎক্ষণিক বা প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা তাৎক্ষণিক কারণ ছিল ‘সেরাজেভো হত্যাকাণ্ড’। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ ও তাঁর পত্নী সোফিয়া বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভো শহরে এক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন। অস্ট্রিয়া এই ঘটনার জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে ও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে (২৮ জুলাই, ১৯১৪)। রাশিয়া সার্বিয়ার সমর্থনে এগিয়ে এলে অস্ট্রিয়ার মিত্র জার্মানি ঐ বছরের ১ আগস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে ও ৩ আগস্ট ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফ্রান্সের সমর্থনে ইংল্যান্ড ৪ আগস্ট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এইভাবে অস্ট্রিয়া-সার্বিয়া ‘স্থানীয় যুদ্ধ’ কয়েকদিনের মধ্যেই বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হয়।
৬৮.‘তোষণ নীতি’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য কতখানি দায়ী ছিল?
▸ ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির তোষণ নীতির সুযোগ নিয়ে ইতালি আবিসিনিয়া এবং জার্মানি একে একে রাইন অঞ্চল, অস্ট্রিয়া ও চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করে নেয়। লিগের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে ও ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলোর সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা আরও বৃদ্ধি পায়। তোষণ নীতির জন্যই হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ড আক্রমণ করতে সাহসী হন এবং এরপরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এইজন্য তোষণ নীতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
৬৯. স্পেনের গৃহযুদ্ধ (Spanish Civil War) কীভাবে শুরু হয়?
▸১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের রাজা ত্রয়োদশ আলফাসো পদত্যাগ করলে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র গড়ে ওঠে। প্রজাতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য স্পেনের চরমপন্থী র্যাডিকাল, নৈরাজ্যবাদী, সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিয়ঁ ব্লুম-এর (Leon Blum) নেতৃত্বে একটি গণফ্রন্ট (Popular Front) তৈরি করে এবং ১৯৩৬ সালে গোড়ায় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। অন্যদিকে প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য দক্ষিণপন্থী ও ফ্যালাঞ্জে (Falange) নামে ফ্যাসিস্ত গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে স্পেনীয় মরক্কোর সামরিক প্রধান জেনারেল ফ্রানসিসকো ফ্রাঙ্কো এল কডিলো নামে পরিচিত। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং এক বিশাল বাহিনী নিয়ে স্পেনে প্রবেশ করেন। শুরু হয় প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে ফ্রাঙ্কোর এক রক্তাক্ত ও দীর্ঘ সংগ্রাম। এইভাবে স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রাঙ্কো বিজয়ী হন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন।
৭০. 'For Whom the Bell Tolls' কে, কোন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচনা করেন?
▸ স্পেনের গৃহযুদ্ধে সেই দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে বহু বিদেশি স্বেচ্ছাসেবক যোগদান করেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। স্পেনে তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি রচনা করেন For Whom the Bell Tolls প্রকাশকাল ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ।
৭১. স্পেনের গৃহযুদ্ধে কোন্ কোন্ শক্তি জড়িয়ে পড়েছিল?
▸ স্পেনের ফ্যাসিস্ট নেতা জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে সক্রিয় সাহায্য করে ফ্যাসিস্ট ইতালি ও জার্মানি। পক্ষান্তরে সোভিয়েত রাশিয়া স্পেনের গণতান্ত্রিক ‘পপুলার ফ্রন্ট’ সরকারকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন ও সাহায্য করে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিরপেক্ষ থাকে।
৭২. ত্রিশক্তি আঁতাত গড়ে ওঠার কারণ কী?
▸ উনিশ শতকের শেষ দিকে জার্মানি হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের অভিন্ন শত্রু এবং মধ্য ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো শক্তি। তাই জার্মানির নেতৃত্বে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রীর’ (Triple Alliance) আবির্ভাব ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডকে আতঙ্কিত করেছিল। জার্মান জোটের মোকাবিলা করার জন্য তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে নিয়ে ‘ত্রিশক্তি আঁতাত' গড়ে তোলে।
৭৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপ যে দুটি সামরিক শিবিরে বিভক্ত হয়েছিল, সেই দুটি শিবিরের ও তাদের সদস্যদের নাম লেখো।
▸ একদিকে ছিল ত্রিশক্তি মৈত্রী (Triple Alliance) জোট এবং এর সদস্য ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালি। অন্যদিকে ছিল ‘ত্রিশক্তি আঁতাত' (Triple Entente) গোষ্ঠী এবং এর সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া।
৭৪. ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ (Triple Alliance) ও ত্রিশক্তি আঁতাত (Triple Entente)-এর মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য কী ছিল?
▸ ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ ও ‘ত্রিশক্তি আঁতাতে’র মধ্যে চরিত্রগত প্রধান পার্থক্য হল (১) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল লিখিত চুক্তি, ত্রিশক্তি আঁতাত তা ছিল না; (২) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল আক্রমণাত্মক চুক্তি, কিন্তু ত্রিশক্তি আঁতাত ছিল আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং (৩) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল একটি মধ্য ইউরোপীয় শক্তিজোট, আর ত্রিশক্তি আঁতাত ইউরোপের তিনটি প্রান্তিক শক্তির মধ্যে গড়ে উঠেছিল।
৭৫. ত্রিশক্তি আঁতাত গড়ে ওঠার কারণ কী?
▸ উনিশ শতকের শেষ দিকে জার্মানি হয়ে উঠেছিল ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের অভিন্ন শত্রু এবং মধ্য ইউরোপের সবচেয়ে বড়ো শক্তি। তাই জার্মানির নেতৃত্বে ‘ত্রিশক্তি মৈত্রীর’ (Triple Alliance) আবির্ভাব ফ্রান্স, রাশিয়া ও ইংল্যান্ডকে আতঙ্কিত করেছিল। জার্মান জোটের মোকাবিলা করার জন্য তারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে নিয়ে ‘ত্রিশক্তি আঁতাত' গড়ে তোলে।
৭৬. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপ যে দুটি সামরিক শিবিরে বিভক্ত হয়েছিল, সেই দুটি শিবিরের ও তাদের সদস্যদের নাম লেখো।
▸ একদিকে ছিল ত্রিশক্তি মৈত্রী (Triple Alliance) জোট এবং এর সদস্য ছিল জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ইতালি। অন্যদিকে ছিল ‘ত্রিশক্তি আঁতাত' (Triple Entente) গোষ্ঠী এবং এর সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়া।
৭৭. ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ ( Triple Alliance) ও ত্রিশক্তি আঁতাত (Triple Entente)-এর মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য কী ছিল?
▸ ‘ত্রিশক্তি মৈত্রী’ ও ‘ত্রিশক্তি আঁতাতে’র মধ্যে চরিত্রগত প্রধান পার্থক্য হল (১) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল লিখিত চুক্তি, ত্রিশক্তি আঁতাত তা ছিল না; (২) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল আক্রমণাত্মক চুক্তি, কিন্তু ত্রিশক্তি আঁতাত ছিল আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা এবং (৩) ত্রিশক্তি মৈত্রী ছিল একটি মধ্য ইউরোপীয় শক্তিজোট, আর ত্রিশক্তি আঁতাত ইউরোপের তিনটি প্রান্তিক শক্তির মধ্যে গড়ে উঠেছিল।
৭৮. স্পেনের গৃহযুদ্ধকে ‘ক্ষুদ্র বিশ্বযুদ্ধ’ (Little World War) বলে অভিহিত করা হয় কেন?
▸ স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি, ইতালি ও সোভিয়েত রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স সহ ২৭টি দেশ নিরপেক্ষ থাকার নীতি নিলেও স্পেনের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। এই যুদ্ধ প্রায় তিনবছর ধরে (জুলাই, ১৯৩৬-এপ্রিল, ১৯৩৯) চলে এবং প্রায় ১০ লক্ষ স্পেনবাসী নিহত অথবা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে বৃহৎ শক্তিগুলির ভূমিকা, যুদ্ধের স্থায়িত্ব ও ব্যাপকতার জন্য ঐতিহাসিক ল্যাংসাম (Langsam) স্পেনের গৃহযুদ্ধকে ‘ক্ষুদ্র বিশ্বযুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন।
৭৯. স্পেনের গৃহযুদ্ধকে ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া’ (Stage rehearsal of the Second World War) বলা হয় কেন?
▸ স্পেনের গৃহযুদ্ধে ইতালি ও জার্মানি ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কোকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে। ফলে ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হিটলারের বিমানবাহিনীর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়া স্পেনের গণতান্ত্রিক সরকারকে সাহায্য করে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স নিরপেক্ষ থাকলেও তাদের সহানুভূতি ছিল গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি। এইভাবে দুটি পরস্পরবিরোধী শিবিরের আভাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এইজন্য স্পেনের গৃহযুদ্ধকে ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া’ বলা হয়।
৮০. স্পেনের গৃহযুদ্ধের তাৎপর্য কী ছিল?
▸ স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে (১) স্পেনের প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিলুপ্তি ঘটে ও ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে একটি একনায়কতন্ত্রী সরকারের উদ্ভব হয়; (২) লিগের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে; (৩) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নিরপেক্ষতা নীতি ভ্রান্ত ও ব্যর্থ বলে প্রতিপন্ন হয় এবং (৪) ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়।
৮১. 'আনশ্লস’ (Anschluss) কী?
▸ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চে হিটলার অস্ট্রিয়া দখল করে নেন এবং অস্ট্রিয়াকে জার্মানির সঙ্গে সংযুক্ত করেন। ইতিহাসে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার এই সংযুক্তি ‘আনশ্রুস’ নামে খ্যাত।
৮২. মিউনিখ চুক্তি (Munich Pact) কবে, কারা এবং কেন স্বাক্ষর করেন?
▸ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন, ফরাসি প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের, হিটলার ও মুসোলিনি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির দ্বারা চেকোশ্লোভাকিয়ার জার্মান অধ্যুষিত ‘সুদেতান’ অঞ্চল হিটলারকে হস্তান্তর করা হয় এবং হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়ার বাকি অংশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল। এই চুক্তি ছিল তোষণ নীতির সর্বোত্তম উদাহরণ। তখন চেকোশ্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপতি ছিলেন এডওয়ার্ড বেনেস।
৮৩. মিউনিখ চুক্তির আন্তর্জাতিক তাৎপর্য কী?
▸ (১) মিউনিখ চুক্তি ছিল ‘তোষণ নীতির’ সর্বোত্তম উদাহরণ। এই চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার বিনা বাধায় সমগ্র চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করে নেন; (২) লিগের যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে এবং (৩) মিউনিখ চুক্তি ‘তোষণ নীতি’র ব্যর্থতা প্রমাণ করে এবং ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি এই নীতি পরিত্যাগ করে ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধের নীতি গ্রহণ করে।
৮৪. 'রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি' (Russo-German. Non-aggression Pact) কবে স্বাক্ষরিত হয়? এর প্রধান শর্ত কী ছিল?
▸ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে জার্মানি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ) ও সোভিয়েত রাশিয়া (পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ) ‘অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে ঠিক হয় যে, (১) আগামী দশ বছর জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়া পরস্পরকে আক্রমণ করবে না, (২) শান্তিপূর্ণভাবে পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে নেবে এবং (৩) তৃতীয় কোনো শক্তি কর্তৃক তাদের কেউ আক্রান্ত হলে, কেউই তৃতীয় পক্ষকে সাহায্য করবে না। পশ্চিমি ঐতিহাসিকরা রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিকে ‘অপবিত্ৰ মিত্ৰতা’ (Unholy alliance) বলে অভিহিত করেছেন।
৮৫. ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির গুরুত্ব কী?
▸ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিতে ঠিক হয় যে, আগামী দশ বছর জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়া পরস্পরকে আক্রমণ করবে না। এর ফলে জার্মানি তার পূর্ব সীমান্ত নিরাপদ রেখে পশ্চিম সীমান্তে আক্রমণ চালানোর সুযোগ পায়। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।
৮৬. ইস্পাত চুক্তি (Pact of Steel) কবে, কাদের মধ্যে ও কী উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
▸ ‘ইস্পাত চুক্তি’ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইতালির মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য হল—জার্মানি ও ইতালির জনসাধারণের বাঁচার মতো স্থান ও শান্তি রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। বাস্তবে এটি ছিল পুরোপুরি একটি সামরিক চুক্তি।
৮৭. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণগুলি কী?
▸ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণগুলি হলঃ (১) অপমানজনক ভার্সাই সন্ধির বিরুদ্ধে জার্মানির প্রতিশোধ স্পৃহা, (২) নাৎসি দলের জঙ্গি নীতি, (৩) ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির তোষণ নীতির ব্যর্থতা, (৪) লিগ অফ নেশনস্-এর যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা, (৫) দুই পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটের আবির্ভাব এবং (৬) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণ।
৮৮. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা তাৎক্ষণিক কারণ কী ছিল?
▸ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন। দুদিন পরে ইঙ্গ- ফরাসি শক্তি তোষণ নীতি পরিহার করে পোল্যান্ডের পক্ষে যোগ দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তাই হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা তাৎক্ষণিক কারণ বলে মনে করা হয়।
৮৯. হিটলার কেন পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিলেন?
▸ ভার্সাই সন্ধিতে ডানজিগ বন্দর ও জার্মানির এক সংকীর্ণ ভূখণ্ড, যা ‘পোলিশ করিডর’ নামে পরিচিত, পোল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছিল। বৃহত্তর জার্মানি গঠনের জন্য এই অঞ্চল হিটলারের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া, পূর্ব ইউরোপে জার্মানির সম্প্রসারণবাদী নীতি রূপায়ণের জন্য হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।
৯০. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক A. J. P. Taylor-এর মূল অভিমতটি কী?
▸ ঐতিহাসিক A. J. P. Taylor তাঁর বিখ্যাত The Origins of the Second World War গ্রন্থে অভিমত দিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য হিটলার একা দায়ী ছিলেন না। এই যুদ্ধ কোনো পূর্ব পরিকল্পিত যুদ্ধ নয়, এটি ছিল উভয়পক্ষের কূটনৈতিক ভ্রান্তির পরিণতি।
৯১. র্যাপালো চুক্তি (Treaty of Rapallo) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
▸ র্যাপালো চুক্তি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধিরদ্বারা (১) জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়াকে স্বীকৃতি দেয়; (২) উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং (৩) রাশিয়া জার্মান সেনাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়।
৯২. গুস্তাভ স্ট্রেসম্যান (Gustav Stresemann) কে?
▸ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হলেন গুস্তাভ স্ট্রেসম্যান। উইমার প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে (১৯২৩-২৯) তিনি পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করেন এবং জার্মানির উন্নয়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
৯৩. ক্ষতিপূরণ সমস্যা (Reparation Problem) কী?
▸ ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করা হয় এবং মিত্রপক্ষ ও তার সহযোগী দেশগুলির ক্ষয়ক্ষতির জন্য জার্মানির ওপর ক্ষতিপূরণের বিরাট বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ কমিশন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রদত্ত তার রিপোর্টে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৬,৬০০ মিলিয়ন পাউন্ড নির্ধারণ করে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানির পক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া খুবই কঠিন ছিল। ফলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ, ক্ষতিপূরণ আদায় প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এইভাবে ক্ষতিপূরণ সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৯৪. ডাওয়েজ পরিকল্পনা (Dawes Plan) কী?
▸ জার্মানির অর্থব্যবস্থা স্থিতিশীল করার জন্য এবং ক্ষতিপূরণ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য মার্কিন অর্থনীতিবিদ চার্লস ডাওয়েজ-এর (Charles Dawes) নেতৃত্বে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি (১) জার্মানির জন্য একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থার প্রবর্তন (রাইসমার্ক), (২) একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা, (৩) জার্মানিকে মার্কিন ঋণ প্রদান প্রভৃতির সুপারিশ করে ও (৪) বাৎসরিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের পরিমাণ (৫০ মিলিয়ন পাউন্ড) স্থির করে দেয়। এটি ‘ডাওয়েজ পরিকল্পনা’ নামে খ্যাত।
৯৫. ইয়ং পরিকল্পনা (Young Plan) কী?
▸ ক্ষতিপূরণ সমস্যার সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত সমাধানের উদ্দেশ্যে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ওয়েন ইয়ং-এর নেতৃত্বে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি গঠিত হয়। পরের বছর প্রকাশিত রিপোর্টে এই কমিটি (১) জার্মানি কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ ৫৯টি বার্ষিক কিস্তিতে প্রদান, (২) একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় ও বণ্টন, (৩) জার্মান অর্থনীতির ওপর থেকে মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার, (৪) ক্ষতিপূরণ কমিশনের উচ্ছেদ, (৫) জার্মানি থেকে যাবতীয় মিত্রপক্ষীয় সেনা প্রত্যাহার এবং (৬) জার্মানিকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণদান প্রভৃতি সুপারিশ করে। এটি ‘ইয়ং পরিকল্পনা' নামে খ্যাত।
৯৬.‘হুভার মরাটোরিয়াম' (Hoover Moratorium) কী?
▸ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে জার্মানি ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হয়। এই অবস্থায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি হুভার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এক ঘোষণার দ্বারা এক বছরের জন্য ক্ষতিপূরণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব থেকে জার্মানিকে মুক্তি দেন এটি ‘হুভার মরাটোরিয়াম' নামে পরিচিত।
৯৭. কবে ও কোন বৈঠকে ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধান হয়?
▸ মিত্রশক্তিবর্গ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লুসান (Lausanne) বৈঠকে মিলিত হয়ে ক্ষতিপূরণ সমস্যার সমাধান করে। এই বৈঠকে ঠিক হয় যে (১) ইয়ং পরিকল্পনা বাতিল হবে এবং (২) জার্মানি এককালীন একটি কিস্তিতে মোট ১৫ কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। তা সত্ত্বেও জার্মানি ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় এবং হিটলার ক্ষমতায় এসে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
৯৮. ‘এনেলিং অ্যাক্ট’ (Enabling Act) কী?
▸ নাৎসি দলের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হিটলার ক্ষমতা দখলের কয়েকমাস পরে (মার্চ, ১৯৩৩) ‘এনেলিং অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন পাস করেন। এর দ্বারা সংসদের অনুমোদন ছাড়াই হিটলার শাসন পরিচালনা ও আইন প্রণয়নের অধিকার লাভ করলেন।
৯৯. হিটলার কবে নাৎসি জার্মানির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন?
▸ ১৯৩৪ সালের আগস্ট মাসে জার্মানির রাষ্ট্রপতি হিডেনবার্গ (Paul Von Hindenburg) মারা গেলে হিটলার রাষ্ট্রপতি পদটির গ্রহণ করেন। এইভাবে নাৎসি জার্মানিতে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রীর পদ দুটি একীভূত হয়ে যায় এবং যাবতীয় রাজনৈতিক ক্ষমতা হিটলারের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়।
১০০. কোন বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিককে হিটলার জার্মানি থেকে বিতাড়িত করেন এবং কেন?
▸ বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইনকে (Allbert Einstein) হিটলার জার্মানি থেকে বিতাড়িত করেন। হিটলার ছিলেন প্রচণ্ড ইহুদি-বিদ্বেষী। আইনস্টাইন ইহুদি ছিলেন বলে হিটলার তাঁকে বিতাড়িত করেন এবং আইনস্টাইন আমেরিকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
১০১. হিটলারের ক্ষমতা দখলকে কি ‘বিপ্লব’ বলা যায়?
▸ যদি রাজনৈতিক বিপ্লবের প্রধান লক্ষণ হয় ক্ষমতার সম্পূর্ণ হস্তান্তর, তাহলে হিটলারের ক্ষমতা দখলকে বিপ্লব বলা যায়। কিন্তু নাৎসি রাষ্ট্রে জাতির ফৌজিকরণ, উৎপাদনকে যুদ্ধাভিমুখীকরণ, গণকল্যাণ সাধন না করা, ব্যক্তি স্বাধীনতার বিনাশ, মেধাশক্তির বিনাশ, অ-জার্মানদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচার, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন না হওয়া প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের জন্য হিটলারের ক্ষমতা দখলকে প্রকৃত অর্থে ‘বিপ্লব’ বলা যায় না।
📢 More Updated Soon ....
No comments
Hi Welcome ....