B.ED 4 th Semester Assignment Course-XI ( 1.4.11 ) Health and Physical Education Q. Balancec Diet? ১. ভূমিকা : বেঁচে থাকার জন...
Course-XI (1.4.11) Health and Physical Education
১. ভূমিকা :
বেঁচে থাকার জন্য মানব শরীরে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা আসে খাদ্য থেকে। খাদ্য বা খাদ্যাভ্যাস
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সুস্থতা ও স্বাস্থ্যপ্রদ শরীর
পরিমিত আহার ও পর্যাপ্ত শারীরিক সঞ্চালনের সামঞ্জস্যতা থেকে তৈরি হয়। খাদ্যবিশেষে
খাবারের গুণ পরিবর্তিত হয়। সব খাবারে একই গুণাগুণ থাকে না। তাই দেহের উপযোগী এবং সঠিক
গুণসম্পন্ন খাবার নির্ধারণ করা উচিত কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের উদ্যাম জীবনযাত্রায়
খাদ্যাভাসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে ইচ্ছের ওপর দিয়ে থাকি। ফলে দেহের উপযোগিতা
এবং খাবারের মাত্রা বজায় না রেখে সম্মুখে থাকা খাবার ইচ্ছে- মতো খেয়ে ফেলি। বিভিন্ন
রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাটে, হোটেলে দ্রুত এবং কম সময়ের মধ্যে যে খাবার পাওয়া যায় সেটার ওপর বিশেষ গুরুত্ব
প্রদান করি। খাবারকে বেশি মুখরোচক ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্যই এগুলির মাত্রা অধিকতর
হয়ে যায়। এই সমস্ত খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ধরনের খাবার
গ্রহণ দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করলে মারাত্মক মারণরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. সুষম খাদ্য (Balancec
Diet) : যে
খাদ্যের মধ্যে খাদ্যের ৬টি উপাদান- কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ
ও জল এই ছটি খাদ্য উপাদান সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকে এবং যে খাদ্য গ্রহণ করলে ব্যাক্তির
সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে, তাকে সুষম খাদ্য বলে। রাস্তার ধারে এবং অনেক স্থানে কিছু খাদ্যবস্তু
আছে যা সহজেই খুব কম সময়ে তৈরি করে দ্রুত পরিবেশন করা হয় এগুলো সুষম খাদ্য নয়। এবং
খাদ্য বস্তুগুলির অভ্যন্তরে পুষ্টিগুণ খুব কম মাত্রায় থাকে যার ফলে এগুলিকেই সাধারণত
ফাস্টফুড বলা হয়, কয়েকটি ফাস্ট ফুড-এর উদাহরণ হল- চাউমিন, রোল, পকোড়া, সান্ডউইচ,
চিকেন বারগার, আইসক্রিম প্রভৃতি। এই ধরনের খাবারগুলিতে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চর্বি,
কোলেস্টেরল, ক্যালোরি, সোডিয়াম প্রভৃতি থাকে। ফাস্টফুডের ফলে একজন ব্যক্তির মধ্যে
যে সমস্ত অসুস্থতা ও অপসংগতি লক্ষ করা যায় সেগুলি হল-
(i) স্থূলতা :
স্থূলতা হল বর্তমান সময়ে একটি বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা। আমরা জানি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির
ফলে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম দিনের পর দিন কমে আসছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়
যে পরিমাণ খাবার আমরা গ্রহণ করি তা থেকে প্রাপ্ত শক্তির সমস্তটা দেহ মধ্যে খরচ হয়
না। এই স্থূলতা অনেক সময় অন্যান্য রোগের সঞ্চারের জন্য দায়ী হয়। যথা—
হৃদরোগ,
উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি।
(ii) ডায়াবেটিস : কিছু ফাস্টফুড খাবারের মধ্যে অত্যাধিক পরিমাণে শর্করা
থাকে। এই প্রকৃতির খাবার যদি দৈনন্দিনভাবে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় তাহলে আমাদের
শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রার তারতম্য ঘটাতে পারে ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।ডায়াবেটিস-এর
মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বা সচেতনতাহীন জীবনযাপন করা হয় তাহলে বৃক্কের
সমস্যা, স্নায়ু বিকল, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে।
(iii) অথেরোস্ক্লেরোসিস : ফাস্টফুড জাতীয় খাদ্যের মধ্যে প্রচুর
পরিমাণে কোলেস্টেরল এবং লবণ থাকে যা হৃৎস্বাস্থ্যের মধ্যে সমস্যা তৈরি করে। গবেষণা
প্রমাণ দিয়েছে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম প্রবেশের ফলে রক্তচাপের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব
পড়ে।
(iv) পেপটিক আলসার : পেপটিক আলসারকে আবার PUD (Peptic Ulser Disease)
বলা হয়ে থাকে। এটি একটি সাধারণ আলসার যা গ্যাসট্রোইন্টেসটাইনাল ট্রাকে ক্ষতিকর প্রভাব
ফেলে। এটা খুব যন্ত্রণাদায়ক ও অস্বাভাবিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এই রোগ সাধারণত ফাস্টফুড
খাবার নেওয়ার জন্যই হয়ে থাকে। যেমন, পিজ্জা, চিপস্ ইত্যাদি।
(v) শ্বসনতন্ত্রজনিত সমস্যা : অত্যাধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে মানুষ স্থূলতার স্বীকার হয়। স্থূলতার ফলে শ্বসনতন্ত্রজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় যেমন— asthma, shortness of breath প্রভৃতি। বিশেষ করে দৌড়ানো বা হাঁটার সময় শ্বাসকষ্ট লক্ষ করা যায়।
৩. সুষম খাদ্যে জলের ভূমিকা : জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না তাই
জলের অপর নাম হল জীবন। সমগ্র মানবদেহের 60% থেকে 70% হল জল। পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান
আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যাবলির ভারসাম্য রক্ষা করে। একজন স্বাভাবিক বয়স্ক ব্যক্তির
দেহে প্রতিদিন 4 থেকে 5 লিটার জলের প্রয়োজন হয়। জলের কয়েকটি গুণাবলি হল-
(i) দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। (ii) জল সারাদেহে রক্ত সংবহনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। (iii) দেহে খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে। (iv) শরীরের অস্থির স্বাস্থ্য বজায় রাখে। (v) জল খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। (vi) শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বস্তু বহিঃষ্করণে সাহায্য করে।(vii) জল শরীরের অভ্যন্তরে কোশ কলার স্বাস্থ্য ধরে রাখে।
সুতরাং বিশুদ্ধ পানীয় জল মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একটি বিশেষ উপাদান। ভারতবর্ষ একটি জনবহুল দেশ। এখানে প্রচুর সংখ্যক মানুষ গ্রাম্য এলাকাতেও বসবাস করেন। সমগ্র ভারতবর্ষের প্রায় 50% গ্রাম্য এলাকার মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব রয়েছে। দশম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পর্যন্ত প্রায় 1,105 বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবকে পূরণ করার জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই অভাব সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। পানীয় জল জীবাণুযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর হলে যে সমস্ত অসুস্থতা লক্ষ করা যায় তার কয়েকটি হল— আর্সেনিক প্রদাহ, ডেন্টাল ফ্লুরোসিস, জিয়ারডিয়াসিস, ক্রিপটোস্পরিডিওসিস, কঙ্কাল ফ্লুরোসিস, ডাইরিয়া, বমি, পেটের যন্ত্রণা প্রভৃতি।
পানীয় জলকে সুস্থ রাখতে ও এই সুস্থ জলের
সুবিধা উপভোগ করার জন্য প্রথম পদক্ষেপই হল জল সচেতনতা। প্রয়োজনমতো জলের ব্যবহার করতে
হবে। জল অপচয় বন্ধ করতে হবে। পানীয় জল ব্যবহারের পূর্বে যে পাত্রে ধারণ করে রাখা
হয় তার সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। জল সংগ্রহ সময়েও সচেতন থাকা প্রয়োজন। পানীয় জলের
থেকে অবশ্যই জলের পরীক্ষা করে নিয়ে যদি দেখা যায় সেখানকার জল পানের উপযোগী তবেই পান
করা যাবে। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে সক্রিয় সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে এসে সরকারের প্রচেষ্টার
সঙ্গে সংঘবদ্ধ হলে তবেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
৪. উপসংহার : শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, তাপ উৎপাদন করার জন্য ও নিজেদের কর্মক্ষম রাখতে সুষম খাবারের বিকল্প নেই। শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। এগুলো খাবারের তালিকায় সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকলে আমরা নিরাপদ। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কার্বোহাইড্রেট বা চর্বির মত কিছু উপাদান খাবার থেকে বাদ চলে গেলে দৈনিক কাজ করার সময় শক্তির অভাব কমে যাবে অন্য দিকে, এই স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন যদি না গ্রহন করা হয় ভিটামিন এবং খনিজ বস্তু , তাহলে এগুলির ঘাটতি তৈরি হবে, যার ফলে অনাক্রম্যতা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং শারীরিক ক্রিয়া আরও অসচ্ছল হয়ে পড়বে।
No comments
Hi Welcome ....