Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

B.ED 2nd Semester Assignment Course - IX (1.2.9) 1st Half | Types of Tests : Written Test, Oral Test, NRT, CRT, Summative Test, Formative Test, Diagnostic Test

❐  আরো পড়ুনঃ   Course - IX (1.2.9) 1st Half Assignment  Q. Types of Tests : Written Test, Oral Test, NRT, CRT, Summative Test, Formative Tes...

Assessment for Learning

❐ আরো পড়ুনঃ

Q. Types of Tests : Written Test, Oral Test, NRT, CRT, Summative Test, Formative Test, Diagnostic Test. 

[১] লিখিত অভীক্ষা (Written Test): লিখিত অভীক্ষা হল সেই ধরনের অভীক্ষা যেখানে শিক্ষার্থীরা লিখিত ভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়। এখানে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কিছু প্রশ্ন নির্বাচন করা হয় এবং শিক্ষার্থীরা ওইসব প্রশ্নের উত্তর লিখিত ভাবে উপস্থাপন করে। এরপর উত্তরপত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে শিক্ষার্থীর বিষয়গত জ্ঞান,লিখন দক্ষতা, শিখন ফলশ্রুতির অ্যাসেসমেন্ট করা হয়। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় সাধারণত লিখিত অভীক্ষার সাহায্যে অ্যাসেসমেন্টের প্রাধান্য দেওয়া হয়।কারণ, শিক্ষার্থীর জ্ঞানের মান,কোনো সদস্যকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, বহুবিধ ঘটনাকে বা বিষয়কে মনে রেখে যথাযথ প্রকাশের ক্ষমতা যাচাই করতে এই লিখিত অভীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে মনে করা হয়। এই অভীক্ষা আদর্শায়িত হতে পারে, আবার শিক্ষক/শিক্ষিকা নির্মিতও হতে পারে। লিখিত অভীক্ষা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন : শিক্ষাগত পারদর্শিতা অভীক্ষা,বুদ্ধি অভীক্ষা, প্রবণতা মাপার অভীক্ষা,পর্ব ভিত্তিক অভীক্ষা,একক অভীক্ষা, ব্যক্তিত্ব পরিমাপের অভীক্ষা প্রভৃতি।


লিখিত অভীক্ষার প্রকারভেদ : প্রশ্নপত্র রচনা ও উত্তরদানের রীতি ও বৈশিষ্ট্য বিচারে লিখিত পরীক্ষাকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা ― (1) রচনাধর্মী পরীক্ষা। (2) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী পরীক্ষা। (3) নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা।

(1) রচনাধর্মী পরীক্ষা : যে সমস্ত প্রশ্ন পরীক্ষার্থীকে উত্তরের উপাদান নির্বাচনে, উপাদান গুলির সুবিন্যাসে এবং সেগুলির লিখিত উপস্থাপনে সাধারণত স্বাধীনতা দেয় তাদের বলা হয় রচনাধর্মী পরীক্ষা। অধ্যাপক Gilbert Sax তাঁর 'Principles Of Educational and Psychological Measurement and Evaluation (1989) গ্ৰন্থে রচনাধর্মী অভীক্ষা সম্পর্কে বলেছেন - "Essay test is a test containing questions requiring the student to respond in writing Essay tests emphasize recall rather than recognition of correct alternative. It may require relatively brief responses or extended responses." এই রচনাধর্মী প্রশ্নকে সাধারণত একক পদ বিশিষ্ট অভীক্ষা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এখানে একটি অভীক্ষা পদের মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থীদের যুক্তিসম্মত চিন্তন ক্ষমতা,ভাষাজ্ঞান, সুসংহত বক্তব্য উপস্থাপন ক্ষমতা ও রচনা শৈলীর মতো বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়।

রচনাধর্মী পরীক্ষার প্রকারভেদ : রচনাধর্মী পরীক্ষাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ― (i) বিস্তৃত উত্তরধর্মী পরীক্ষা (ii) নিয়ন্ত্রিত উত্তরধর্মী পরীক্ষা।  (i) বিস্তৃত উত্তরধর্মী পরীক্ষা : উপযুক্ত ভাষা ও শব্দ প্রয়োগ করে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ঘটনায় বিবরণ,কারন ব্যাখ্যা,চিহ্নিত চিত্র সহযোগে পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা উল্লেখ করতে হয়। উদাহরণ - থার্মোফ্লাস্কের চিহ্নিত চিত্রসহ কার্যপ্রনালী লেখ? চিত্রসহ অক্সিজেন গ্যাস প্রস্তুতির পরীক্ষাগার পদ্ধতিটি লেখ? মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি লেখ? (ii) নিয়ন্ত্রিত উত্তরধর্মী পরীক্ষা : এখানে উপযুক্ত নির্দেশের দ্বারা প্রশ্নের উত্তরকে অপেক্ষাকৃত ছোটো করে লিখতে বলা হয়। উদাহরণ - তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল সংক্রান্ত জুলের সূত্র তিনটি লেখ। প্রতিসরনের সূত্র দুটি লেখ। হুগলি নদীর ধারে কী কী প্রধান শিল্প আছে।


রচনাধর্মী পরীক্ষার সুবিধা : (i) অভিক্ষার্থীর দক্ষতার বিবিধ দিকের মূল্যায়ন : রচনাধর্মী অভীক্ষার সাহায্যে শিক্ষার্থীর যুক্তিসম্মত চিন্তন ক্ষমতা ও বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতার মূল্যায়ন করা যায়। এর সাহায্যে বিষয়গত জ্ঞানের পাশাপাশি অপসারী চিন্তনের ক্ষমতা,জ্ঞানের সামান্যীকরণ ও অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষমতা পরিমাপ করা যায়। শিক্ষার্থীর সুসংহত বক্তব্য উপস্থাপন ক্ষমতা, ভাষার দক্ষতা ও রচনাশৈলীর মূল্যায়ন করা সম্ভব।  (ii) অভীক্ষার্থীদের বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা : রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরদানের সময় অভীক্ষার্থীরা স্বাধীনচিন্তা প্রসূত মতামত পেছনের সুযোগ পায়। স্বাধীনভাবে বক্তব্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষার দক্ষতা ও যুক্তি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতার উন্নতি সাধন সম্ভব হয়। (iii) অভীক্ষা গঠনের সুবিধা : রচনাধর্মী অভীক্ষাপত্র প্রস্তুত করা ও শিক্ষার্থীদের উপর প্রয়োগ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও রচনাধর্মী প্রশ্নের সংখ্যা কম হলে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখেও অভীক্ষা নেওয়া সম্ভব।  (iv) অভীক্ষাপত্র প্রস্তুতিতে সময় ও অর্থের ব্যয় কম : রচনাধর্মী অভীক্ষাপত্র অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ও কম অর্থব্যয়ে প্রস্তুত করা সম্ভব। (v) উন্নত পাঠাভ্যাস গঠন : শিক্ষার্থীদের মধ্যে উন্নত পাঠাভ্যাস গঠিত হয়। যেমন - কোনো বক্তব্যের ভাব সম্প্রসারণ, বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ,কোনো ঘটনা সম্পর্কে সুনিশ্চিত যুক্তিপূর্ণ মতামত গঠনের অভ্যাস তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুমানের ভিত্তিতে উত্তরদানের প্রবণতা তৈরি হয় না। শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয়বস্তু থেকে ব্যাপক ধারণা গঠন,কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য গঠনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।  (vi) শিখন পদ্ধতির বিচারকরন : রচনাধর্মী অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষন শিখন প্রক্রিয়ার গুণগত মান বিচার করা যায়।  (vii) অংশগত নম্বর দান : এই অভীক্ষার উত্তরে অংশগত নম্বর দানের ব্যবস্থা থাকায় স্কোর একেবারের শূন্য হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।

রচনাধর্মী পরীক্ষার অসুবিধা : (i) বিষয় বস্তুগত যথার্থতা কম : কোনো নির্দিষ্ট অধ্যায়ের সমস্ত অংশ জুড়ে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই খুঁটিয়ে পড়ার প্রবণতা কম দেখা যায়।  (ii) পরীক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাব : কোনো পরীক্ষার্থী শুরুর দিকের উত্তরদানে ভালো নম্বর পেলে সাধারণত দেখা যায় পরীক্ষক তাকে পরবর্তী অপেক্ষাকৃত কম ভালো উত্তর দানে মার্জনা করে ভালো নম্বর দেন। পরীক্ষক সাধারণত নম্বর দানের সময় শিক্ষার্থীদের পরিচিতির দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি যে সমস্ত শিক্ষার্থীকে ভালো চোখে দেখেন তাদের অপেক্ষাকৃত বেশি নম্বর দেন। অনেক সময় দেখা যায় যে, কোনো পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর তার পূর্ববর্তী পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের দ্বারা প্রভাবিত হয়।  কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষক পরীক্ষার্থীর রচনাশৈলী ও উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর গুনগত মান অপেক্ষা তার হাতের লেখাকে বেশি গুরুত্ব দেন। কোনো পরীক্ষক উদারভাবে আবার কোনো পরীক্ষক কঠোরভাবে উত্তরপত্র দেখেন ফলে তুলনামূলক মূল্যায়ন নির্ভরযোগ্য হয় না এবং পরীক্ষকের ব্যক্তিগত মেজাজ নম্বর দানেও  প্রভাব ফেলে।  (iii) পূর্বনির্ধারিত স্কোরিং নির্দেশনার অভাব : রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরে কোন অংশে কতটা নম্বর দিতে হবে সে সম্পর্কে পূর্বনির্ধারিত নির্দেশনা না থাকায় বিভিন্ন পরীক্ষকের নম্বর দান বিভিন্ন হয়।  (iv) উত্তরদাতা ও মূল্যায়নের সময় সাপেক্ষ :  এই ধরনের অভীক্ষায় উত্তর দানে প্রচুর সময় লাগে এবং প্রচুর লিখতে হয় বলে পরীক্ষার্থীরা বিরক্তি বোধ করে। অভীক্ষাপত্রের যথাযথ মূল্যায়নে অনেক সময় লাগে বলে এই ধরনের অভিক্ষা গ্ৰহনে পরীক্ষকদের আগ্রহ কম দেখা যায়। (vi) উত্তর দানের দ্রুততার প্রভাব : অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পরীক্ষার্থীর লেখার গতি পরীক্ষার ফলকে প্রভাবিত করে,উত্তর জমা সত্ত্বেও সীমিত সময়ের মধ্যে উত্তর লিখে শেষ করতে না পারায় প্রাপ্ত স্কোর কম হয়।

(2) সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী পরীক্ষা : সংক্ষিপ্ত উত্তরযুক্ত অভীক্ষার প্রশ্ন রচনা ও উত্তরের মূল্যায়ন সম্পর্কিত মূল নীতি গুলি রচনাত্মক অভীক্ষার মতো একই রকম। কিন্তু শুধুমাত্র অল্প কয়েকটি বিষয় স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সংক্ষিপ্ত উত্তর কতটা সংক্ষিপ্ত তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে যেমন - ১০০-১৫০ টি শব্দ,৩-৪টি বাক্য ইত্যাদি। সংক্ষিপ্ত উত্তর বিশিষ্ট অভীক্ষার একটি প্রশ্নে যথাসম্ভব একটি ধারনা বা একটি ক্ষুদ্র বিষয় অংশকে ভিত্তি করতে হবে। নির্ধারিত দৈর্ঘ্যের চেয়ে অতিরিক্ত বড়ো উত্তর লিখলে যদি শক্তি দেওয়া হয় তবে প্রশ্নের উল্লেখ করতে হবে। যদি উত্তর প্রশ্নপত্রেই লিখতে হয় তবে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু স্থান বরাদ্দ করতে হবে এবং কোনো বিষয়কে সংক্ষিপ্ত  কিন্তু সম্পূর্ণ আকারে প্রকাশ করার দক্ষতাকে যথাযথ শূন্য দিতে হবে।

(3) নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা : যে সব অভীক্ষাপদ বা প্রশ্নের শিক্ষার্থী এবং পরীহ্মক উভয়েরই ব্যক্তিগত প্রভাব আসার সম্ভাবনা থাকে না, তাদের বলা হয় বস্তুধর্মী বা নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষা। অধ্যাপক Lou. M. Carey (1988) বলেছেন যে,"Objective test items require students to work or select a correct or best answer, these items are called objective, because they can be scored more objectively than any other types of items used to measure students’ performance." পরীক্ষার্থীদের কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ প্রয়োগ করে বা কতকগুলি ধারনা নির্বাচন করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।


নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় প্রকারভেদ : নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরনের উপর ভিত্তি করে নানা ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

  1. শ্রেনিকরণ জাতীয
  2. সম্পর্ক স্থাপন জাতীয়
  3. সম্পূর্ণ করণ জাতীয়
  4. স্তরের/মিথ্যা নির্ণয় জাতীয়
  5. পূনর্বিন্যাস জাতীয়
  6. স্মৃতি মন্থন জাতীয়
  7. বহু নির্বাচনী জাতীয
  8. উপমান জাতীয়

নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় সুবিধা : (i) বিষয় বস্তুগত যথার্থতা বেশি : অভীক্ষার অন্তর্গত বিষয়বস্তুর প্রায় সমগ্ৰ অংশ জুড়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাওয়া যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্যসূচির সমগ্ৰ অংশ খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করা সম্ভব হয়। (ii) পরীক্ষকের ব্যক্তিগত প্রভাবমুক্ত : এই ধরনের অভীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়নে পরীক্ষকের যাবতীয় প্রভাব,যেমন - Question to Question carry effect, Halo Effect, Examinee to Examinee effect ইত্যাদি থাকে না। মূল্যায়নের জন্য নির্দিষ্ট পূর্ব নির্ধারিত স্কোরিং নির্দেশনা ব্যবহৃত হয়। এখানে অভীক্ষা পদগুলির উত্তর দান নিয়ন্ত্রিত হওয়ার এবং উত্তরের বিভিন্নতা না থাকায় পরীক্ষকের ব্যক্তিগত খেয়াল ও মেজাজ মূল্যায়নে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।  (iii) শিক্ষার্থীর কাছে গ্ৰহনযোগ্যতা বেশি : এই ধরনের অভীক্ষার খুব কম সময়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর লিখে ভালো স্কোর করার সুযোগ থাকার শিক্ষার্থীরা এই ধরনের অভীক্ষা দিতে বেশি আগ্রহী হয়। এই ধরনের অভীক্ষার মূল্যায়নে পরীক্ষকের ব্যক্তিগত মত, অভিরুচি, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ইত্যাদির প্রভাব না থাকায় শিক্ষার্থীরা এই মূল্যায়নের প্রতি আস্থাশীল।  (iv) মূল্যায়ন কম সময় সাপেক্ষ : রচনাধর্মী অভীক্ষার মূল্যায়নে যে সময় লাগে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে এই অভীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা যায়। তাই শিক্ষকেরা এই ধরনের অভীক্ষা গ্রহণে বেশি আগ্রহী হন।  (vi) সংশোধন মূলক শিখনে সহায়ক : শিক্ষকের নির্দেশনার শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদের সাথে উত্তরপত্র বিনিময় করে নিজেরা মূল্যায়ন করলে নিজেদের ত্রুটিগুলি ও বিষয়গত দুর্বলতার স্থানগুলি নিজেরাই চিহ্নিত করতে পারে এবং কোন কোন বিষয় আরও ভালো ভাবে পড়া উচিৎ তা বুঝতে পারে। (vii) মুখস্থ বিদ্যার পরিপন্থী : এই ধরনের অভীক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে না বুঝে মুখস্থ বিদ্যা দ্বারা পাঠ্য বিষয়বস্তু অধিগত করার উৎসাহ দেয় না। বরং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও চিন্তণের দ্বারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুপ্রেরণা দেয়।  (viii) নির্ভরযোগ্য : একই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র বিভিন্ন পরীক্ষকের দ্বারা মূল্যায়ন করলে একই ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই ধরনের অভীক্ষা গ্রহণ করে নির্ভরযোগ্যতার সাথে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ও ব্যক্তিগত পার্থক্য নির্ণয় করা যায়।  (ix) আদর্শায়িত করা সম্ভব : সমবয়সী একদল শিক্ষার্থীর উপর প্রয়োগ করে এই অভীক্ষা এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্ৰগতি ও মান তুলনা করা সম্ভব।


নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অসুবিধা : (i) জটিল শিখন প্রক্রিয়ার পরিপন্থী : এই ধরনের অভীক্ষা জ্ঞানের সামান্যীকরন,ভাব প্রকাশের ক্ষমতা, সুসংহত বক্তব্য উপস্থাপন,ব্যাখ্যাকরণ,সংক্ষিপ্ত করণ ইত্যাদি দহ্মতা পরিমাপে সহায়ক নয়। (ii) অনুমানের প্রভাবযুক্ত : অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,অভীক্ষার্থী সঠিক উত্তর না জানা সত্ত্বেও অনুমানের ভিত্তিতে উত্তরদান করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ঠিক হয়ে যায় ফলে শিক্ষার্থীর দুর্বলতার স্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। (iii) ব্যয় বহুল ও পরিশ্রম সাধ্য : এই ধরনের অভীক্ষাপত্র প্রস্তুত খুবই শ্রমসাধ্য এবং এতে অপেক্ষাকৃত বেশি অর্থ ও সময়ের ব্যয় হয়।(iv) অসদু উপায় অবলম্বনের সুযোগ : নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার উত্তর খুবই সংক্ষিপ্ত হওয়ার অভীক্ষার্থীর অসদু উপায় অবলম্বনের সুযোগ পায়।

✱ লিখিত অভীক্ষার সুবিধা : (i) লিখিত অভীক্ষা হল একটি নির্ভরযোগ্য এবং স্থিতিশীল এটি বৈধ ধরনের মূল্যায়ন প্রদান করে। (ii) লিখিত অভীক্ষা মাধ্যমে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায়,রচনাধর্মী পরীক্ষা এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরযুক্ত অভীক্ষার বিষয়বস্তু এবং শেখার অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে পরিকল্পনা করা হয়। (iii) লিখিত অভীক্ষার প্রাপ্ত প্রশ্নের উত্তর গুলি নিখুঁত,যথার্থ এবং নির্ভরযোগ্যতা স্কিম এবং স্কোরিং সাহায্যে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। (iv) লিখিত অভীক্ষা নির্মানে এবং ব্যবহারিক পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। (vi) লিখিত অভীক্ষা সময় এবং স্থান ভেদে একাধিক শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন সহজেই করা যায়। (vii) লিখিত অভীক্ষার উত্তর গুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য বইএর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়। (viii) এটি পরিমাপ করা সম্ভব। (ix) এই অভীক্ষাটি আদর্শায়িত হতে পারে আবার শিক্ষক/শিক্ষিকা দ্বারা নির্মিত হতে পারে। (x) এটি শিক্ষক/শিক্ষিকার একটি নির্দেশমূলক প্রোগ্রামের পরিকল্পনা করতে এবং নির্দেশনা করতে সাহায্য করে। (xi) লিখিত অভীক্ষার সাহায্যে প্রশ্নপত্র এবং উত্তর বই সংশোধিত করা যায়।

✱ লিখিত অভীক্ষার অসুবিধা : (i) লিখিত অভীক্ষার ক্ষেত্রে কিছু নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মূল্যায়ন করা যায় না। (ii) লিখিত অভীক্ষার প্রশ্নের উত্তরের গুনমান মূল্যায়ন করা কঠিন বিষয়। (iii) লিখিত অভীক্ষার শিক্ষার্থীর ভূল শব্দের বা হাতের লেখার অস্পষ্টতা জন্য পরীক্ষক সঠিক ভাবে দেখতে পারেন না। (iv) লিখিত অভীক্ষার শিক্ষক বা শিক্ষিকার মধ্যে তাদের ব্যক্তিগত মেজাজ এবং স্বজন প্রীতি লক্ষ্য করা যায়। (vi) লিখিত অভীক্ষার বিষয়গত নির্ভরযোগ্যতার কম হয়। (vii) লিখিত অভীক্ষার প্রস্তুতি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার,তাই এটিকে মূল্যায়নের ধারাবাহিক অংশ ব্যহত হয়। (viii) লিখিত অভীক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। (ix) লিখিত অভীক্ষার সমগ্ৰ বিষয়ের জ্ঞান পরিমাপ করার সুযোগ থাকে না। (x) লিখিত অভীক্ষার বিষয়বস্তুর বিন্যাস, প্রকাশ ভঙ্গির ইত্যাদি পরিমাপ করতে পারা যায় না। (xi) লিখিত অভীক্ষার ক্ষেত্রে সময়ের মধ্যে উত্তর লিখতে না পারায় প্রাপ্ত স্কোরিং কম হয়।

[২] মৌখিক অভীক্ষা (Oral Test) : ভাষাজ্ঞান, উচ্চারণ কিংবা সাধারণ জ্ঞানের অ্যাসেসমেন্টের জন্য যে কৌশল ব্যবহার করা হয়,তাকে বলা হয় মৌখিক অভীক্ষার। সাধারণত নিন্মশ্রেনিতে শিশুরা লিখবার হ্মমতা আয়ও করতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে মৌখিক অভীক্ষা গ্ৰহন করা হয়ে থাকে তার শিক্ষাগত পারদর্শিতার অ্যাসেসমেন্টের জন্য। আবার কোনো কোনো সময় উচ্চশ্রেনির মৌখিক অভীক্ষা গ্ৰহন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্মৃতি শক্তি ও জ্ঞানের পরিমাপ করা হয়। মৌখিক অভীক্ষার প্রশ্ন এবং উত্তর সবই মৌখিক ভাবে হয়। শিক্ষার্থীর পঠন ক্ষমতা, উচ্চারণে নির্ভূলতা,সপ্রতিভা, গুছিয়ে বলার সামর্থ্য, জ্ঞানের গভীরতা প্রভৃতির অ্যাসেসমেন্ট করা হয় এই ধরনের কৌশলের সাহায্যে।


মৌখিক অভীক্ষার সুবিধা : (i) মৌখিক অভীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজন মতো প্রশ্ন করার সুযোগ থাকার সহজেই বাচনভঙ্গি, বোঝানোর ক্ষমতা,জ্ঞানের গভীরতা, গুছিয়ে বলার ক্ষমতা,স্মৃতি শক্তি অ্যাসেসমেন্ট করা যায়। (ii) যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের লেখার ক্ষমতা নেই অথচ তাদের শিহ্মাগত পারদর্শিতার পরিমাপের প্রয়োজন সেই সব ক্ষেত্রে অ্যাসেসমেন্টের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার সুবিধাজনক। (iii) মৌখিক অভীক্ষার সাহায্যে পঠন প্রক্রিয়ার কৌশল যাচাই করা যায়। (iv) এই অভীক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব হয়। (vi) মৌখিক অভীক্ষা শিক্ষক বা শিক্ষিকার শিক্ষার্থীর মূল্যায়নে সহায়তা করে। (vii) মৌখিক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিষয়ের প্রতি ধারনা গুলিকে সংহত ও সংগঠিত করে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পাচ্ছে কী না তা পরীক্ষক নির্ধারন করতে পারে। (viii) মৌখিক অভীক্ষা পদ্ধতিতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়াকে সহজেই শিক্ষক পরিমাপ করতে পারেন। (ix) মৌখিক অভীক্ষা হল লিখিত অভীক্ষার পরিপূরক। (x) নির্দিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত অবস্থান জানার জন্য এই পদ্ধতি সুবিধাজনক।

 ❏ মৌখিক অভীক্ষার অসুবিধা : (i) মৌখিক অভীক্ষার প্রাপ্ত উত্তরের গভীরতা বিচারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ । (ii) মৌখিক অভীক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত বৈষম্যের জন্য সকল শিক্ষার্থী সমান ভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না। (iii) অনেক সময় সংকোচ ও শৈথিল্য শিক্ষার্থীর ভাব প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। (iv) পরীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রের মৌখিক পরীক্ষা কম কার্যকর। (vi) বিষয়বস্তু বিন্যাসের নির্ভরযোগ্যতা ও ঘাটতির অভাব সংক্রান্ত ক্রটি এক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। (vii) মৌখিক অভীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পঠনের প্রতি ক্ষমতার সম্পূর্ণ চিত্র প্রদান করে না। (viii) মৌখিক অভীক্ষার বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া প্রশ্নগুলির আলাদা হয়,যার তুলনা করা কঠিন বিষয়। (ix) মৌখিক অভীক্ষার পরিকল্পনা অভাব দেখা যায়। (x) মৌখিক অভীক্ষার অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ বিষয়, শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সময় একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা করা যেতে পারে। 

[৩] আদর্শ মানভিত্তিক অভীক্ষা NRT (Norm Referenced Test) : অভীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরগুলিকে তাৎপর্য পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করার একটি উপায় হল কোনো বিশেষ শিক্ষার্থীর নম্বরকে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে বা দলের সঙ্গে তুলনা করা। প্রকৃতপক্ষে এটি হল একটি প্রতিযোগিতামূলক মূল্যায়নের কৌশল, যেখানে কোনো শিক্ষার্থীর পারদর্শিতাকে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার সঙ্গে তুলনা করে কোনো দলে শিক্ষার্থীর আপেক্ষিক অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষ শিক্ষার্থীটি পাঠ্যবিষয়বস্তুর ওপর কতখানি পারদর্শিতা অর্জন করতে পেরেছে বা পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার পারদর্শিতা কতখানি অর্জিত হয়েছে তার বিচার করা হয় না। দলের একটি নম্বরকে (যেমন মিন) নর্ম বা সাধারণ মান ধরে তুলনা করা হয়। নর্ম বলতে বোঝায় কোনো একজন শিক্ষার্থীর দলের মধ্যে তার তুলনামূলক অবস্থান। এই নর্ম হিসেবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতাংশ সারি (Percentage Rank বা PR) বা আদর্শ স্কোরকে (Standard score) নর্ম ধরা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে Gronlund (1985) বলেছেন—“NRT are constructed with a view to determine the serial position of an individual in his group so as to help expression of that position in descriptive languages like high, low or average"

সুতরাং NRT-এর প্রধান উদ্দেশ্যই হল কোনো পূর্ব নির্ধারিত নীতি বা নিয়ম ব্যবহার না করে কোনো শিক্ষার্থীর অবস্থানকে তার দলের মধ্যে নির্দিষ্ট চিহ্নিতকরণ। কিন্তু এই চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে যে নর্ম (norm) ব্যবহার করা হয়, তা স্থির করা হয় বিভিন্নভাবে কখনও দলের সমস্ত শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের মিনের ভিত্তিতে অভীক্ষার্থীর PR-কে বা আদর্শ স্কোরকে ভিত্তি করে কখনও কোনো পূর্ণমানকে। প্রকৃতপক্ষে এই নির্দিষ্ট নর্ম (norm) স্থির করা বেশ জটিল এবং ব্যাপক প্রক্রিয়া বিশেষ। এই ধরনের মূল্যায়নের ফলাফলকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের দলে নিজেদের অবস্থান বা rank, যেমন: প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ইত্যাদি চিহ্নিত করা হয় অথবা তাদের গ্রেড বা স্তর নির্দেশ করা হয়। আঞ্চলিক অথবা জাতীয় স্তরে শিক্ষার্থীদের এইভাবে পারদর্শিতাকে দেখানো হয়। বিভিন্ন কোর্সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অথবা কর্মক্ষেত্রের পদোন্নতিতে এই ধরনের মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকে। আমাদের শ্রেণিকক্ষের সমস্তরকম পরীক্ষা, সব রকমের public examination এবং আদর্শায়িত অভীক্ষাগুলি নর্ম রেফারেন্স মূল্যায়নের কাজে ব্যবহৃত হয়। যখন কোনো শ্রেণিতে প্রশ্ন করা হয় কে সবচেয়ে ভালো ছাত্র? কে প্রথম হয়েছে? কে সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে? তখন সেই প্রশ্নের উত্তরগুলি দিতে গিয়ে নর্ম-ভিত্তিক মূল্যায়ন করা হয় এবং আমরা ব্যক্তির পারদর্শিতাকে দলের অন্যান্যদের পারদর্শিতার ভিত্তিতে তুলনা করি।


[৪] কৃতিত্বভিত্তিক অভীক্ষা CRT (Criterion Referenced Test) : Popham এবং Husek (1969)-এর মতে কৃতিত্বভিত্তিক অভীক্ষার সংজ্ঞাটি হল— “A CRT is one that is used to determine the level of success of learner” অর্থাৎ, কৃতিত্বভিত্তিক অভীক্ষা হল এমন একটি অভীক্ষা যা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের সাফল্যের স্তরটি নির্ধারণ করা হয়। এই ক্ষেত্রে একটি পূর্ব নির্ধারিত মানদণ্ড (Criteria) থাকে। যার সাপেক্ষে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার পরিমাপ করা হয়। নির্দেশনামূলক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে কোন্-কোন্‌গুলি শিক্ষার্থীর পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি সেগুলি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে CRT কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করে।

এই ধরনের অভীক্ষার উপযোগিতামূলক দিকগুলি হল : (i) নির্দেশনামূলক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে কোন কোন গুলি শিক্ষার্থীর পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি সেগুলি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে CRT গুলি কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। শিক্ষক তখন সেই উদ্দেশ্যগুলি অর্জন করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। (ii) পাঠ্য-বিষয়বস্তুর উপস্থাপন তথ্য শিক্ষণপদ্ধতি ও কৌশল-এর প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন করার সুযোগ ঘটে এই অভীক্ষার সাহায্যে। শিক্ষণপ্রদীপন ব্যবহারেও শিক্ষক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। (iii) শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক অগ্রগতির পরিচায়ক রিপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে CRT অত্যন্ত উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। (iv) শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণিতে অন্যান্যদের সাপেক্ষে মেধার অবস্থানগত পরিচয়ও প্রদান করার ক্ষেত্রে আলোকপাত করে।

[৫] সংকলনধর্মী বা প্রান্তিক মূল্যায়ন (Summative Evaluation Test) : কোনো কর্মসূচি বা কোনো প্রকল্পের শেষে শিক্ষণ উদ্দেশাগুলি কতখানি চরিতার্থ হয়েছে  এবং শিক্ষার্থীরা কতখানি পারদর্শিতা অর্জন করেছে সে সম্পর্কিত তথ্য যে মূল্যায়নের  সাহায্যে সংগ্রহ করা হয় তাকেই সংকলনধর্মী বা প্রান্তিক মূল্যায়ন বলে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ N. E. Gronlund (1985) ছাড়াও অনান্যরা সংকলনধর্মী মূল্যায়নের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।

 ❏ সংকলনধর্মী মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য : (i) সংকলনধর্মী মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয় কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গৃহীত নির্দেশনামূলক কর্মসূচির সার্থক রূপদানের জন্য। (ii) সংকলনধর্মী মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয় কোনো একটি সেমিস্টার (৬ মাস অন্তর) বা শিক্ষাবর্ষের শেষে। (iii) কাঙ্ক্ষিত আচরণগত উদ্দেশ্যগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা সংঘটিত হয়েছে এবং শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া কতটা ফলপ্রসু হয়েছে তা সংকলনধর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে বিচার করা সম্ভব। (iv) সংকলনধর্মী মূল্যায়ন শিক্ষার্থী এবং কোনো কর্মসূচির সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে শিক্ষককে feedback প্রদান করে। (vi) কোনো একটি কর্মসূচি বা প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে নাকি, সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংকলনধর্মী মূল্যায়ন সহায়তা করে। (vii) এই মূল্যায়ন শিক্ষাব্যবস্থার বিশ্লেষণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে। (viii) এই মূল্যায়নের কৌশলগুলি নির্ভরযোগ্য, যথার্থ এবং সর্বজনগ্রাহ্য। (ix) এই মূল্যায়নের উদ্দেশাগুলি ব্যাপক।

[৬] গঠনমূলক বা পাঠ চলাকালীন মূল্যায়ন (Formative Evaluation Test) : শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় পাঠদান চলাকালীন প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি হচ্ছে কিনা তা  যে মূল্যায়নের সাহায্যে বিচার করা হয় তাকেই গঠনমূলক বা পাঠ চলাকালীন মূল্যায়ন বলে। 


গঠনধর্মী মূল্যায়নের বৈশিষ্ট্য : (i) কোনো একটি শিক্ষাবর্ষব্যাপী এই মূল্যায়ন পরিচালনা করা হয়। (ii) এই মূল্যায়ন পাঠদান চলাকালীন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে অবহিত করে। (iii) শিক্ষার্থীর ভুল ও দুর্বলতাগুলি চিহ্নিতকরণে সহায়তা করে। (iv) সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনার কাজে সহায়তা করে। (vi) যে-কোনো কর্মসম্পাদনের প্রাথমিক পর্যায়ে গঠনমূলক মূল্যায়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। (vii) শিক্ষা প্রক্রিয়ার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে এই মূল্যায়ন গুরত্ব আরোপ করে। (viii) এই মূল্যায়ন যে-কোনো সাফল্য ও ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করে। (ix) এর পরিধি সংকীর্ণ। (x) চলতি শিক্ষার্থীদের (running or current students) জন্য এই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। (xi) মূল্যায়নকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলিকে খোঁজার চেষ্টা করে এই গঠনমূলক মূল্যায়ন।

[৭] নির্ণায়কধর্মী অভিক্ষা (Diagnostic test) : সাধারণত কোনো বিষয় বা পদ্ধতি শিক্ষার্থী শিখেছে কিনা এবং কতটা শিখেছে তা যে অভীক্ষার দ্বারা পরিমাপ ও মূল্যায়ন করা হয় তা হল পারদর্শিতার অভীক্ষা। তা গঠনমূলক ও সংকলনধর্মী দু-ধরনের মূল্যায়নেই করা হয়। কিন্তু কখনো-কখনো শিক্ষার্থীর এই ধারণা গঠনের মধ্যে ভ্রান্তি বা ভুল থেকে যায়। যে যৌক্তিক মানসিকতায় ধারণা গঠিত হওয়ার কথা তা না হয়ে অন্য প্রক্রিয়ার গঠিত হয়। ফলে শিক্ষার্থীর ধারণা গঠন বা নির্মিতির ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ সূক্ষ্ম বা স্থূল ত্রুটি থেকে যায় যা ধরা এবং দূর করা শিক্ষকের একান্ত জরুরি একটি কাজ। যার ফলে শিক্ষককে পারদর্শিতার অভীক্ষা থেকে ভিন্নধর্মী প্রশ্ন গঠনের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সাধারণভাবে, নির্ণায়ক অভীক্ষা গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষককে অনেক বেশি সচেতন হতে হয় কারণ এই মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর ধারণা গঠনের ত্রুটি নির্ণয় করতে পারবে। ফলে অভীক্ষার প্রতিটি উপাদান বা Item-এর মধ্যে ভাষার দক্ষতা বজায় রেখে প্রশ্ন গঠন করতে হবে। যেমন ধরুন একটি নবম শ্রেণির (IX) শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হল— শক্তি কী এবং বিভিন্ন প্রকার শক্তির উদাহরণ দাও। এই প্রশ্নের উত্তর যথাযথ পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীর শক্তি সম্পর্কে ধারণা আছে বলে মনে করা হবে। কিন্তু পরক্ষণেই যদি তিনটি প্রশ্ন করা হয়—আলোক কী? শব্দ কী ও তাপ কী? তাহলে তিনটির ক্ষেত্রেই সম্ভাব্য উত্তর ‘শক্তি’। অর্থাৎ আলোক = শব্দ = তাপ। এটিই সত্য। শিক্ষার্থী এখানে উত্তর দিতে একটু দ্বিধা করবে বা ধন্দে পড়বে অর্থাৎ, আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি ও তাপ শক্তির ভিন্নতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীর সঠিক ধারণা গঠিত হয়নি। এ ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব।

এই ধরনের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক ধারণা গঠনে যে ত্রুটিগুলি রয়ে যায় তা নির্ণয়ের জন্য অভীক্ষা গঠন করতে হলে ধারণা ধরে ধরে অভীক্ষা উপাদান (Item) তৈরি করে যে অভীক্ষা গঠন করা হবে, তাকেই নিৰ্ণায়ক অভীক্ষা বা দুর্বলতা নিৰ্ণায়ক অভীক্ষা বলা হবে। এছাড়াও একথা অবশ্যম্ভাবীভাবেই বলা যায় নির্ণায়ক দুর্বলতা এই ত্রুটির পরিমাণ এবং কেন এই ত্রুটি তা নির্ণয় করতে সাহায্য করবে। তবে এই ধরনের অভীক্ষা গঠনে যথেষ্ট দক্ষতা চাই এবং এই অভীক্ষার আদর্শায়নে যথেষ্ট যত্ন নিতে হবে। সুতরাং নির্ণায়ক অভীক্ষাকে সংজ্ঞায়িত করলে বলা যায়— যে অভীক্ষা কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা বিষয়ের ধারণা গঠনে, বিশ্লেষণে, শনাক্তকরণে বা প্রকৃতি নির্ধারণে এবং তার দুর্বলতার গভীরতা নিরূপণে সাহায্য করে বা করে থাকে সেই ধরনের অভীক্ষাকে নিৰ্ণায়ক অভীক্ষা বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের নির্ণায়ক অভীক্ষা শিক্ষার্থীর না জানা, না বোঝা বা বিভিন্ন প্রকার অসুবিধাকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা, যেমন— পঠন (Reading), নীরব বা সরব পাঠ, শব্দ বিশ্লেষণ (Word Analysis), শব্দের অর্থবোধ (Word-Comprehension), গণিতের মৌলিক ধারণা ও ক্রিয়া ইত্যাদির সম্পর্কিত যে ত্রুটি থাকে তার ভিত্তিতেই নির্ণায়ক অভীক্ষা প্রস্তুত করা হয়। যেমন ডুরেলের পঠন অসুবিধা নিৰ্ণায়ক অভীক্ষা (Durrel Analysis of Reading Difficulty), বাসওয়েল ও জনের পাটিগণিতের নির্ণায়ক অভীক্ষা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। শুধু নম্বর দেখে শিক্ষার্থীর শিখনের দুর্বলতা ধরা যায় না। দুর্বলতা নির্ণয় করতে গেলে শিক্ষার্থীর উত্তরের ভঙ্গি (Style) দেখতে হবে, গঠনধর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে তার ত্রুটি ও কারণ চিহ্নিত করতে হবে। Schonel-এর পাটিগণিতে দুর্বলতা নির্ণয়ের দু-একটা পদ উল্লেখ করা হচ্ছে : 2+1=? 1+2=? 4+1= ? 1+4=? 8+1=? 1+8=? ইত্যাদি শিক্ষার্থীর বড়ো সংখ্যার সঙ্গে ছোটো সংখ্যা বা ছোটো সংখ্যার সঙ্গে বড়ো সংখ্যা যোগ করতে ভুল করে কিনা তা এই অভীক্ষার সাহায্যে দেখা হয়।

No comments

Hi Welcome ....