Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

B.ED 2nd Semester Suggestion Notes History (1.2.7A) Pedagogy of Social Science

History (1.2.7A) Pedagogy of Social Science (Part - I) B.ED 2nd Semester Suggestion Notes 2023 Subject : History (1.2.7A) Mark - 2 Pedagogy...

History (1.2.7A) Pedagogy of Social Science (Part - I)


B.ED 2nd Semester Suggestion Notes 2023
Subject : History (1.2.7A)
Mark - 2
Pedagogy of Social Science (Part - I)

১. আকৃতিগত মূল্যায়ন কী?
২. মূল্যায়ন ও পরিমাপের দুটি পার্থক্য লিখুন।
৩. সহায়ক উপকরণের উদ্ভাবনা বলতে কী বোঝেন?
৪. ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন কি?
৫. ইতিহাস শিখনে দুটি মূল্যবোধের কারণ উল্লেখ করুন?
৬. উত্তম শিখন নকশার যেকোনো দুটি গুণ উল্লেখ করো?
৭. CAI এর পুরো নাম কী?
৮. ইতিহাস শিক্ষণে বক্তৃতা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা লিখুন।
৯. পারদর্শীতার অভীক্ষার সংজ্ঞা দিন।
১০. প্রকল্প পদ্ধতির একটি উপযুক্ত সংজ্ঞা দিন।
১১. শিখন নক্সার যে কোনো দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করুন।
১২. ইতিহাস বীক্ষণাগার বলতে কী বোঝেন?
১৩. ইতিহাস শিক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য লিখুন।
১৪. সংক্ষেপে ইতিহাসের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক উল্লেখ করুন।
১৫. মিথস্ক্রিয়া পদ্ধতির দুটি সুবিধা উল্লেখ করুন।


১. আকৃতিগত মূল্যায়ন কী?
▻ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় পাঠদান চলাকালীন প্রত্যাশা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি হচ্ছে কিনা তা যে মূল্যায়নের সাহায্যে বিচার করা হয় তাকেই
(Formative Evaluation) গঠনমূলক বা আকৃতিগত মূল্যায়ন বলে।

২. মূল্যায়ন ও পরিমাপের দুটি পার্থক্য লিখুন।
মূল্যায়ন (Evaluation) পরিমাপ (Measurement)
(i) শিক্ষার্থীর সামাজিক, মানসিক, দৈহিক, প্রাক্ষোভিক ও শিক্ষাগত দিক সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়। (i) পরিমাপে যান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীর বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়।
(ii) মূল্যায়নে পরিমাণগত ও গুণগত বৈশিষ্ট্যের উভয়দিকের বিচার করা হয়। (ii) পরিমাপে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কেবলমাত্র পরিমাণগত দিকই বিচার করা হয়।

৩. সহায়ক উপকরণের উদ্ভাবনা বলতে কী বোঝেন?
▻ শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদানে শিক্ষার্থীর পাঠের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যাবলিকে অধিকতর কার্যকরি ও ফলপ্রসূ করা, সেই সাথে শ্রেণিপাঠদানকে সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা সহায়ক উপকরণ। এখানে উপকরণ হলো যেগুলো শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় যেমন - পাঠ্যপুস্তক, বোর্ড, চক, ইত্যাদি। শিক্ষা উপকরণের উদ্ভাবনা ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো পাঠের জন্য উদ্দেশ্য অর্জন।


৪. ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন কি?
▻ মূল্যায়ন শব্দের সাধারণ অর্থ মূল্য আরোপ বা মূল্য বিচার। কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় বা তাদের অর্থপূর্ণ মূল্যমান নির্ধারণ পদ্ধতি হলো মূল্যায়ন। ইতিহাসের পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যৎ শিখনকে আরো বেশি কার্যকর করা। এ ধরনের মূল্যায়নকে শিখনের জন্য মূল্যায়ন বা
Assessment for Learning বলা হয়। পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন হবে তিনটি। প্রথমটি হবে এপ্রিলের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে। দ্বিতীয়টি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। তৃতীয়টি নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। এই মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক হতে পারে।

৫. ইতিহাস শিখনে দুটি মূল্যবোধের কারণ উল্লেখ করুন?
▻ (i) নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ : ইতিহাস হল
Past Politics সুতরাং ইতিহাসের পাঠের মধ্যে দিয়ে নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ লাভ করা যায়। ইতিহাস পাঠের মধ্যে দিয়ে বিশ্বজনীনতাবোধ সৃষ্টি হয় এবং আন্তর্জাতিক চেতনার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। (ii) বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে: ইতিহাসে বহু বিতর্কিত বিষয় থাকে। আর সেই বিতর্কিত বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যাদি যথাযথ বিচার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীকে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়। যা শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল, যুক্তিবাদী বিজ্ঞানধর্মী ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে ও বিচার শক্তির বিকাশ, স্মৃতিশক্তির বিকাশ এবং কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

৬. উত্তম শিখন নকশার যেকোনো দুটি গুণ উল্লেখ করো?
▻ উত্তম শিখন নকশার দুটি গুণ হলো ― (i) উত্তম শিখন নকশা ধারাবাহিকভাবে ও নির্ভরযোগ্যভাবে ডিজিটাল বা শারীরিক পরিকল্পিতভাবে নক্সা যা শিক্ষার্থীদের বিকাশ ও এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করতে সাহায্য করবে এবং জ্ঞান অর্জনের অনুপ্রেরণার দিকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাবে। (ii) শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত শিখন সামর্থ্য অর্জনের জন্য যে সব কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে তার বিবৃতি হলো শিখন নকশা। শিখন নকশা এর ইংরেজি হলো
Learning Design এবং লার্নিং ডিজাইন এমন এক ধরনের কাঠামো যা শেখার অভিজ্ঞতা অর্জন এ সাহায্য করে।

৭. CAI এর পুরো নাম কী?
▻ CAI-এর পুরো কথাটি হল—
Computer Assisted Instruction এর অর্থ হল কম্পিউটার সহযোগী নির্দেশনা। এটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক নির্দেশনামূলক শিখন কৌশল। শিক্ষার্থী নিজের চাহিদামতো সময় নিয়ে এই ধরনের শিখনে অংশ নিতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষাবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুসরণ করে কম্পিউটার শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থী নিজস্ব প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী দ্রুত ফিড্‌ব্যাক পেয়ে থাকে এবং বিষয়বস্তু আয়ত্ত করে।

৮. ইতিহাস শিক্ষণে বক্তৃতা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা লিখুন।
▻ (i) পূর্ব পাঠের পুনরালোচনা প্রসঙ্গে বা নতুন পাঠের সূচনা প্রসঙ্গে। (ii) পরীক্ষা করে দেখানো সম্ভব নয় এমন কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যাদানে। (iii) বহুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শিক্ষাদানের সময়। (iv) শিক্ষা বিষয়ক কোনো নির্দেশনা দানের সময়।

৯. পারদর্শীতার অভীক্ষার সংজ্ঞা দিন।
▻ নির্দিষ্ট সময়ব্যাপী সুনিয়ন্ত্রিত প্রশিক্ষণের প্রভাবে শিক্ষার্থীরা বিশেষ কোনো কর্মসম্পাদনের যে দক্ষতা অর্জন করে তা পরিমাপ করার কৌশলই হল পারদর্শিতার অভীক্ষা। মনোবিদ
JC Munnely বলেছেন The Purpose of achievement test is to measure process in school of achievent test is to measure progress in school up to a particular point in time.” অর্থাৎ শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ের জীবনের কোনো বিশেষ সময়কাল পর্যন্ত তার শিক্ষাগত অগ্রগতির পরিমাপের কৌশলই পারদর্শিতার অভীক্ষা।

১০. প্রকল্প পদ্ধতির একটি উপযুক্ত সংজ্ঞা দিন।
▻ প্রকল্প পদ্ধতি সম্পর্কে
Stevenson বলেন , সমস্যামূলক কাজ যখন স্বাভাবিক পরিবেশে সম্পন্ন হয় তখন তাকে প্রোজেক্ট বলে (It is a problematic act carried to completion in its natural setting) Ballard- এর মতে , বিদ্যালয়ে প্রোজেক্টের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া যায় (Project is a bit of real bit that has been imported into the school) F. Theodore বলেন , প্রোজেক্টে বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে , অন্যথায় বিশৃঙ্খলার কারণ ঘটে (Project aims at bringing unity out of what might otherwise bewilderment)। প্রকল্প পদ্ধতির শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বসম্মত ও গণতন্ত্রসম্মত। এক্ষেত্রে ছাত্ররা পরিকল্পনা করে , নিজেরাই কাজ করবে , পরস্পরের সঙ্গে আলাপ – আলোচনাও করে। আর এখানে শিক্ষার্থীরা নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায়।

১১. শিখন নক্সার যে কোনো দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করুন।
▻ (i) শিখন নকশা পাঠ্যসূচি, শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং পাঠদান প্রক্রিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। (ii) শিক্ষক পাঠ উপস্থাপনের সময় এটিকে গাইড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।শিক্ষণের সময় শিক্ষককে এটি আত্মবিশ্বাস যোগায়।

১২. ইতিহাস বীক্ষণাগার বলতে কী বোঝেন?
▻ ইতিহাস বিক্ষণাগার হলো ইতিহাসের সংগ্রহণ, অনুসন্ধান, এবং বিশ্লেষণের কেন্দ্রস্থান, যা ইতিহাসের তথ্য এবং তথ্যের প্রতিষ্ঠাপনে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস কক্ষ বলতে বোঝায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মধ্যে একটি উপযুক্ত স্থানে অবস্থিত এমন একটি কক্ষ যেখানে ইতিহাস পাঠদানের জন্য প্রাসঙ্গিক ও দরকারি শিক্ষা সহায়ক সামগ্রীক ও উপকরণগুলি সম্বত্বে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এটি এমন একটি কক্ষ যেখানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের প্রয়োজন মতো এবং সময় অনুযায়ী সংরক্ষিত সামগ্রী ও উপকরণগুলিকে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া এই ধরনের কক্ষে যেমন প্রথাগত তাত্ত্বিক বিষয় পাঠ পরিচালনার সম্ভব তেমনি ব্যবহারিক শ্রেণিশিক্ষণ কর্মও সম্পাদিত হতে পারে।

১৩. ইতিহাস শিক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য লিখুন।
▻ (i) বিভিন্ন দেশের উৎপত্তি , ক্রমবিকাশ , বিবর্তন ও উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনুধাবন করে মাতৃভূমির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষার্থীদের ইতিহাসের পঠনপাঠন অপরিহার্য। (ii) অতীতের দরিদ্র ভারতবর্ষ আজ উন্নয়নশীল দেশের সম্মানে এগিয়ে চলেছে। তাই পিছনে পড়ে থাকা শ্রেণির মানুষদেরও অগ্রসরতার আলােকে তুলে আনতে হবে। দুর্বল ও পীড়িত বা বঞ্চিত মানুষদের সাধ্যমতাে সাহায্য ও সহানুভূতি দান এক মানবিক কর্তব্য। ইতিহাস পাঠের দ্বারা শিক্ষার্থীদের এই সামাজিক কর্তব্য পালনে উৎসাহিত করা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

১৪. সংক্ষেপে ইতিহাসের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক উল্লেখ করুন।
▻ ইতিহাসের ও ভূগোল হল মহাবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং তাদের সম্পর্ক অতি নিবিড়। প্রমথ চৌধুরীর মতে, ইতিহাসের ছবি আঁকতে গেলে প্রথমে ভূগোলের জমি করতে হয়। কোন একটি দেশের সীমার মধ্যে কালকে আবদ্ধ করতে না পারলে - সেই কালের পরিচয় দেওয়া যায় না। অসীম আকাশের ভূগোল নেই বা অনন্তকালেরও ইতিহাস নেই। বাস্তবিকপক্ষে ভূগোলের পটভূমিতে ইতিহাসের প্রতিষ্ঠা যথার্থ। ইতিহাস রচনার জন্য কাল চেতনার পাশাপাশি স্থান চেতনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হেরোডোটাস সর্বপ্রথম ইতিহাসের সাথে ভূগোলের নিবিড় সম্পর্কের কথা বলেন।

১৫. মিথস্ক্রিয়া পদ্ধতির দুটি সুবিধা উল্লেখ করুন।
▻ (i) এই পদ্ধতি শিক্ষক এবং ছাত্র শিক্ষকদের যথাযথ প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। (ii) ক্লাসের সামাজিক এবং মানসিক পরিবেশ অনুমান করার জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।



B.ED 2nd Semester Suggestion Notes 2023
Subject : History (1.2.7A)
Mark - 5 & 10
Pedagogy of Social Science (Part - I)

১. ইতিহাস শিক্ষণের মূল্যবোধগুলি সম্পর্কে আলোচনা করুন।
২. শিখন নকশার সংজ্ঞা দিন। শিখন নকশার ধাপগুলি লিখুন।
৩. ইতিহাস শিক্ষণে শিক্ষণ প্রদীপনের গুরুত্ব উল্লেখ করুন।
৪. একটি উত্তম ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকের গুণাবলী লিখুন।
৫. ইতিহাস শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের গুরুত্ব ও উদ্ভাবন সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৬. সমাজবিজ্ঞান (ইতিহাস)-এর বীক্ষণাগার সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৭. প্রতিপাদন-পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কৌশলটি বিশ্লেষণ করুন।
৮. মাধ্যমিক স্তরে ইতিহাস পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করুন।
৯. ইতিহাসের একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি কিভাবে আপনার ছাত্রদের সাথে স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বের ধারণাটি বিকাশ করবেন।
১০. ইতিহাস শিক্ষনে শিখন সহায়ক হিসেবে সময়রেখা মানচিত্রের গুরুত্ব উদাহণসহ আলোচনা করুন?
১১. ইতিহাস শিক্ষণে নির্ণয় ও সংশোধন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন?
১২. প্রকল্প পদ্ধতি কাকে বলে ? এর সুবিধা ও অসুবিধা লিখুন।


১. ইতিহাস শিক্ষণের মূল্যবোধগুলি সম্পর্কে আলোচনা করুন।
▻ ভূমিকা : সমাজের অগ্রসরমান, বিবর্তনধর্মী বিবরণের আলোকে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষণ পরিচালিত হয়। শিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর মধ্যে কাম্য বা কাঙ্ক্ষিত আচরণের বিকাশ সাধন। সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়গুলি শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাম্য আচরণের বিকাশ ঘটলে সেই শিক্ষণ মূল্য সাপেক্ষে বিবেচিত হয়। সমাজবিজ্ঞানে ইতিহাস শিক্ষণের মূল্যবোধগুলি নিম্নরূপ ― ১. সামাজিক মূল্য ২. সাংস্কৃতিক মূল্য ৩. বৌদ্ধিক মূল্য ৪. নৈতিক মূল্য ৫. সৌন্দর্যের মূল্য ৬. ঔদার্যের মূল্য ৭. আধ্যাত্মিক মূল্য ৮. আন্তর্জাতিক মূল্য ৯. প্রশাসনিক মূল্য ১০. মনস্তাত্ত্বিক মূল্য ১১. ব্যবহারিক মূল্য।


১. সামাজিক মূল্য : মানুষ ও সমাজের মিথোস্ক্রিয়া, সমাজবদ্ধ জীব রূপে মানুষের অস্তিত্ব ইত্যাদি আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজ সভ্যতা গঠনের রূপকার হিসেবে মানুষের কর্মকান্ড, মহত্ত্ব উপস্থাপন এবং অপরদিকে শৃঙ্খলাপরায়ণ, সামাজিক আচরণ পালনকারী মানুষের সমাজবোধ গঠনের পশ্চাতে সমাজের দায়বদ্ধতা বর্ণনের দ্বারা শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের অন্যতম ইতিবাচক দিক। ২. সাংস্কৃতিক মূল্য : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বতন্ত্রতার আলোকে বিবিধ দেশের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের লোকাচার, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিক্ষার্থীর সৃজন প্রতিভা বিকশিত হয়। ৩. বৌদ্ধিক মূল্য : সমাজবিজ্ঞান মূলত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণধর্মী বিষয়, বক্তৃতা, আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, সমস্যা সমাধান, প্রতিপাদন ইত্যাদি পদ্ধতি সহযোগে সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়গুলি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীরা নিজের বুদ্ধি, বিচার ক্ষমতা অনুযায়ী সেই সকল তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করায় তাদের বৌদ্ধিক শক্তি বিকশিত হয়। ৪. নৈতিক মূল্য : মূল্যবোধকেন্দ্রিক শিক্ষা (Value Education)-র অন্যতম ভিত্তি হল সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণ। সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত প্রতিটি বিষয়ের একই সুর যথা মানুষের কর্মকাণ্ডের জয়, মানবতাবোধের জয়। সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সততা, নিষ্ঠা ইত্যাদি মানবিক ও নৈতিক গুণগুলি সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চালিত করা সম্ভব। ৫. সৌন্দর্যের মূল্য : সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর নান্দনিক বোধের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। শিক্ষামূলক ভ্রমণ, প্রকল্প পদ্ধতির উপস্থাপন, বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সর্বোপরি সুন্দর জীবনচর্যা বোধের বিকাশ ঘটাতে সমাজবিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম। ৬. ঔদার্যের মূল্য : সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদারতার বীজ বপন করতে সহায়তা করে। মানব মনের প্রসার ঘটাতে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের ভূমিকা অপরিসীম। সামাজিকীকরণ, সামাজিক সৌহার্দ্য, ন্যায়পরায়ণতা, মানবতাবোধ ইত্যাদি গুণাবলী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চালনের জন্য সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণ আবশ্যক। ৭. আধ্যাত্মিক মূল্য : ইতিহাস শিক্ষণের মাধ্যমে বিবিধ ধর্মমত, সুফীবাদ, ভক্তিবাদ, বিবিধ ধর্মগুরুর বাণী ও তাদের জীবন চর্চা, ধর্মীয় সহিষ্কৃতার সুফল, অসহিম্বুতার মারাত্মক পরিণামের কথা শিক্ষার্থীরা জানতে পারে এবং উপলব্ধি করতে পারে। ৮. আন্তর্জাতিক মূল্য : বর্তমানে প্রযুক্তির সম্প্রসারণের ফলে পৃথিবীর সব দেশ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রতিটি দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতার সম্পর্ক ইত্যাদির ধারণা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে এবং শিক্ষার্থীদের বিশ্ব পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠার শিক্ষা প্রদান করে। ৯. প্রশাসনিক মূল্য : সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়গুলি শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা (Management) পরিচালনা, নেতৃত্ব প্রদান ইত্যাদি গুণাবলির বিকাশ ঘটে। ভবিষ্যতে সুনাগরিক হয়ে উঠে নিজ জীব সুচারুভাবে পরিচালনার শিক্ষা, শিক্ষার্থীরা সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের মাধ্যমে লাভ করে। ১০. মনস্তাত্ত্বিক মূল্য : সমাজবিজ্ঞানের চর্চা মনস্তত্ত্বসম্মত। অতীত ঘটনাকে কল্পনাশক্তির সাহায্যে বাস্তবের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করার মানসিক ক্ষমতা ইতিহাস চর্চা বৃদ্ধি করে। কল্পনাশক্তির বিকাশ, স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি, কোনো ঘটনার কার্যকারণ সূত্র ব্যাখ্যা, যুক্তিবোধের বিকাশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইতিহাস শিক্ষণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ১১. ব্যবহারিক মূল্য : সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগে সক্রিয় হয় এবং অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক মূল্য বৃদ্ধি পায়।

উপসংহারঃ ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয় “It is the story as far accurate as it can be of man and his development in society." নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে বর্তমান সমাজের বিবর্তন বুঝতে ইতিহাস পাঠ আবশ্যক। ইতিহাস শিক্ষণ একাধারে সমাজ সংগঠনের রীতিনীতি, সমাজ চেতনা, সামাজিক মূল্যবোধ গঠন ইত্যাদি ইতিবাচক গুণের বিকাশে সহায়ক, তেমনি অপরদিকে শিক্ষার্থীর জীবনের চলার পথে অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর শিক্ষাদানেও সমর্থ। সমাজবদ্ধ মানুষের বিবর্তনের ধারা, সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সমাজের উপাদানগুলির পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি আলোচনা করে সমাজবিজ্ঞান। আজকের শিক্ষার্থী, ভবিষ্যতের সুনাগরিক। তাই তাঁর সামাজিক গুণাবলির বিকাশ, অভিযোজন ও মিথোস্ক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গীর বিকাশ, সামাজিক পরিবর্তন, আধুনিকীকরণ, সম্পর্কিত ধারণার বিকাশের জন্য সমাজবিজ্ঞান শিক্ষণের মূল্য অপরিসীম।

২. শিখন নকশার সংজ্ঞা দিন। শিখন নকশার ধাপগুলি লিখুন।
▻ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞরা শিখন নকশা বা কাঠামো সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। কোনো একটি মতামত এককভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কয়েকটি সংজ্ঞা নীচে দেওয়া হল- 2005 খ্রিস্টাব্দে
Canole and Fill বলেছেন যে, “The Learning Design specifies the teaching and leaming process, along with the conditions under which it occures and the activities performed by the teachers and learners in order to achieve the required learning objectives." Sind-এর মতে, “এটি একটি কার্যকরী পদ্ধতি। শিক্ষকের কার্যকরী মনোভাব, ধারণা, মনন, চিত্তন, শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তাঁর পরিচিতি, ধারণা, শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য, পঠনীয় বা শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে ধারণা ও শিক্ষাদানের উপযুক্ত পদ্ধতি ব্যবহারের দক্ষতাই হল শিখন নকশার বৈশিষ্ট্য " ইত্যাদি।

শিখন নকশার ধাপ/স্তুর : কতকগুলি পর্যায় বা ধাপ অনুসরণ করে শিখন নকশা রচিত হয়। ধাপগুলি নিন্মে আলোচনা করা হলো ―
  1. শিখন পরিস্থিতি সম্বন্ধে ধারণালাভ : শিখন নকশা রচনা করার সর্বপ্রথম ধাপ হল শিখন পরিস্থিতি সম্বন্ধে ধারণা লাভ। এই স্তরে শিক্ষার্থী বয়স, আগ্রহ, রুচি, শিক্ষার্থীর আর্থসামাজিক অবস্থা, কোর্সটি তাত্ত্বিক, ব্যাবহারিক অথবা উভয়ের মিশ্রণ, প্রথাগত বা মুক্ত শিক্ষার কোর্স, শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের শিখন রীতি পছন্দ করে। এসকল বিষয় পর্যালোচনা করে শিখন নকশা রচনা করা হয়।
  2. শিখনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ : শিখন নকশার দ্বিতীয় ধাপ হল শিখনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ। কোনো নির্দিষ্ট পাঠ একক সম্পূর্ণ করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনগত, মনোভাবগত, দক্ষতা সংক্রান্ত কী ধরনের পরিবর্তন ঘটবে এ সকল বিষয় পর্যালোচনা করে শিখন নকশা রচনা করা হয়। নির্মিতিবাদ অনুসারে শিখন হল জ্ঞান নির্মাণের প্রক্রিয়া, জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া নয়। তাই এখানে জ্ঞান নির্মাণের পাশাপাশি চর্বণামূলক চিত্তন (Critical Thinking), সৃজনশীল চিন্তন, ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী চিন্তাভাবনা, সমস্যাসমাধান প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে শিখনের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা হয়।
  3. পূর্ব শিখনের সঙ্গে বর্তমান শিখনের সেতুস্থাপন : এই পর্যায়ে শিক্ষক নির্ধারিত উপএককগুলি শিখনের জন্য কী ধরনের পূর্বজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার, সেটি সুনিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠগ্রহণের উপযোগী পূর্বজ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে কিনা তা যাচাই করবেন। এভাবে শিখন নকশা রচনা করার সময় শিক্ষক পূর্ব শিখন অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন শিখনের মধ্যে সেতু রচনা করবেন।
  4. শিখন পদ্ধতি নির্বাচন : শিখন নকশা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ করা। শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট করে। শিখনের হার যাতে সর্বাধিক হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে শিক্ষার্থীর বয়স, বিষয়বস্তুর প্রকৃতি, শিখনরীতি, শিখনের উদ্দেশ্য, শিখনের মাধ্যম
  5. পূর্ব শিখনের সঙ্গে বর্তমান শিখনের সেতুস্থাপন : এই পর্যায়ে শিক্ষক নির্ধারিত উপএককগুলি শিখনের জন্য কী ধরনের পূর্বজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দরকার, সেটি সুনিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠগ্রহণের উপযোগী পূর্বজ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে কিনা তা যাচাই করবেন। এভাবে শিখন নকশা রচনা করার সময় শিক্ষক পূর্ব শিখন অভিজ্ঞতার সঙ্গে নতুন শিখনের মধ্যে সেতু রচনা করবেন।
  6. শিখন পদ্ধতি নির্বাচন : শিখন নকশা প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ করা। শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট করে। শিখনের হার যাতে সর্বাধিক হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে শিক্ষার্থীর বয়স, বিষয়বস্তুর প্রকৃতি, শিখনরীতি, শিখনের উদ্দেশ্য, শিখনের মাধ্যম (Regular / ODL System) প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক শিক্ষা-পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচন করবেন।
  7. শিখন সম্পদ নির্ধারণ : নির্বাচিত উপএককগুলি শিক্ষার্থীদের সামনে শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার জন্য কী ধরনের শিখন সম্পদ ব্যবহার করা হবে সেটি এই স্তরে সুনির্দিষ্ট করা হয়। কোন ধরনের প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহৃত হবে সেটি স্থির করা হবে। প্রযুক্তিবিদ্যার যথাযথ ব্যবহার এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  8. শিখন সম্পদ নির্ধারণ : নির্বাচিত উপএককগুলি শিক্ষার্থীদের সামনে শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার জন্য কী ধরনের শিখন সম্পদ ব্যবহার করা হবে সেটি এই স্তরে সুনির্দিষ্ট করা হয়। কোন ধরনের প্রযুক্তিবিদ্যা ব্যবহৃত হবে সেটি স্থির করা হবে। প্রযুক্তিবিদ্যার যথাযথ ব্যবহার এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  9. শিক্ষণ ও শিখন কার্যাবলি নির্বাচন : এই স্তরে শিখনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা এমনভাবে শিখন পরিবেশ সৃষ্টি করবেন যাতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে শিখন কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার লক্ষ্যে উপনীত হতে পারে। কর্ম অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ , পরীক্ষণ, সিমুলেশন, গেমিং, রোল প্লেয়িং, প্রত্যক্ষ কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন, সমস্যাসমাধান কার্যাবলি, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা, বিতর্কে অংশগ্রহণ, নাট্যায়ন, দলগত আলোচনা ইত্যাদি সক্রিয় শিখন কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারে। অপরদিকে শিক্ষকও শিক্ষার্থীদের শিখনে উৎসাহ জোগাবেন ও প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। শিক্ষণ প্রক্রিয়ার যত অগ্রগতি ঘটবে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার পরিমাণ কমাবেন। শিক্ষকের কার্যাবলি বলতে মূলত ব্যাখ্যা দেওয়া, প্রশ্ন করা, উদাহরণ দেওয়া, প্রয়োজনে পূর্ণ ব্যাখ্যা, অনুশীলনী করতে দেওয়া এবং তা সংশোধন করা, পাঠের গুরুত্বপূর্ণ অংশের সারসংক্ষেপ করা ইত্যাদি।
  10. মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ : শিখন নকশা রচনার সর্বশেষ ধাপ বা পর্যায় হল উপযুক্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণ করা। কোর্সের প্রকৃতি, শিখন উদ্দেশ্য ও শিক্ষার্থীদের বয়সের কথা বিবেচনা করে মূল্যায়ন পদ্ধতি ও কৌশল নির্বাচন করতে হবে।

৩. ইতিহাস শিক্ষণে শিক্ষণ প্রদীপনের গুরুত্ব উল্লেখ করুন।
▻ আধুনিক শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শ্রেণিকক্ষে অথবা শ্রেণিকক্ষের বাইরেও একটি শিক্ষণমূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে শিক্ষণ প্রদীপনের উপযোগিতা বা গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই। শিক্ষণের মূল উদ্দেশ্যকে যথার্থভাবে সফল করার জন্য আজ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র এই শিক্ষণ প্রদীপনকে ব্যবহার করা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। আগেই উল্লেখ করেছি যে ভারতীয় শিক্ষাকমিশন বা কোঠারি কমিশন (১৯৬৪-৬৬) এই শিক্ষণ প্রদীপন ব্যবহারের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে মন্তব্য করেছেন। ইতিহাস শিক্ষণে শিক্ষণ প্রদীপনের গুরুত্ব গুলি হলো —

(i) শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও মনোযোগের সঞ্চার ঘটানো: শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কালে শিক্ষকের নিকট দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মনোযোগ। মৌখিক ভাবে শিক্ষক প্রশ্নোত্তর আলোচনা, বর্ণনাদান, বক্তৃতা প্রভৃতি ব্যবহার গ্রহণ করলেও সফল হয় না। শ্রেণিকক্ষে কিছু শিক্ষার্থী অন্তত এই আগ্রহ ও মনোযোগ তেমনভাবে দেখায় না। সেক্ষেত্রে শিক্ষক যদি তার পাঠদানের বর্ণনার সময় শিক্ষামূলক কিছু প্রদীপন ব্যবহার করেন তাহলে সহজেই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ যেমন আকৃষ্ট হয় তেমনই তাদের আগ্রহের সঞ্চার হয় এবং তাদের প্রেষণা বৃদ্ধি পায়। 

(ii) জটিল পাঠ্যবিষয়বস্তুকে সহজ করে তোলা : শিক্ষকের কাজ বা দায়িত্ব হল যে-কোনো ধরনের পাঠ্য-বিষয়বস্তু তা সে জটিলই হোক আর সরলই হোক শিক্ষার্থীর নিকট স্বচ্ছন্দে পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার্থীর নিকট সহজবোধ্য করে তোলা। মৌখিক ব্যাখ্যার সময় শুধুমাত্র ভাষার মধ্য অনেক ক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হয় না। কিন্তু শিক্ষণ প্রদীপনের মাধ্যমে সেই উদেশ্য সাধন হয়। যেমন মানুষের শিক্ষায় অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের ভূমিকা জটিল বিষয় হলেও জ্ঞানেন্দ্রিয়ের চিত্র ও রেখাচিত্রের সাহায্যে সহজবোধ্য করে তোলা সম্ভব। নদীর গতিপথকে বোঝাতে চিত্র বা তথ্যচিত্রকে ব্যবহার করা যায়। 

(iii) বিমূর্ত ধারণাকে সহজবোধ্যভাবে মূর্ত করে তোলা : শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্গত এমন বহু বিষয়বস্তু আছে যেগুলি প্রকৃতিতে বিমূর্ত ধরনের, এই বিমূর্ত ধারণাগুলি শিক্ষার্থীদের নিকট সার্থকভাবে তাদের উপলব্ধিতে আনা অনেক সময়েই বেশ কষ্টকর হয় শিক্ষকের পক্ষে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিমূর্ত ধারণাটিকে অবলম্বন করে পরিকল্পিত চার্ট, তথ্যচিত্র ইত্যাদির সাহায্যে মূর্ত করে তোলা যায়। শিক্ষার্থীর ভাবনার জগতে প্রবেশ করা যায়। বিমূর্ত ধারণাটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী তখন সহজেই বিমূর্ত ধারণা গঠনে সক্ষম হয়। 

(iv) পাঠ্যবিষয়ের জ্ঞান, বোধ ও প্রয়োগের বিকাশসাধন : শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে যে জ্ঞান লাভ করে তা শুধুই জ্ঞানের স্তরে থাকে। কিন্তু যখন তা শিক্ষার্থীর উপলব্ধি স্তরে এসে পৌঁছায় তখন তা বোধের উন্মেষ ঘটায়, আবার বোধের প্রকৃত উন্মেষ ঘটলেই শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। এই যে জ্ঞান অর্জন থেকে বোধের উন্মেষ এবং বোধের উন্মেষ থেকে প্রয়োগ করা ক্ষমতার বিকাশ ঘটে, এদের প্রতিটি স্তরে শিক্ষণ প্রদীপন যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। 

(v) কল্পনাশক্তি, বিচারশক্তি ও চিন্তাশক্তির বৃদ্ধি ঘটানো : শিক্ষার্থীকে কোনো বস্তুগত ধারণা দেওয়ার সময় অনেকক্ষেত্রে শিক্ষক প্রকৃত বস্তুটি শিক্ষার্থীকে দেখাবার সুযোগ পান না, তার অভাব মেটাবার জন্য তখন প্রকৃত বস্তুটির অনুরূপ একটি মডেল ব্যবহার করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীকে তার নিজের কল্পনাশক্তি দিয়ে মডেলটি প্রকৃত বস্তুর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হয়। অর্থাৎ নির্জীব মডেলটিতে অনেক সময় সজীব বস্তুর কল্পনা শক্তি আরোপ করে শিক্ষার্থীকে চিন্তাশক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে হয়। আবার, প্রকৃত বস্তু ও বিকল্প মডেলটির মধ্যে তুলনামূলক বিচার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর বিচারশক্তিও বৃদ্ধি পায়। মডেল-এর পরিবর্তে চিত্র, চার্ট প্রভৃতিরও ব্যবহার করা যায়।

(vi) বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অনুবন্ধ ঘটানো : আধুনিক শিক্ষায় কোনো একটি বিষয়কে একক বা বিচ্ছিন্নভাবে দেখা হয় না। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীর শিক্ষণকে সম্পূর্ণতা দিতে পারে না। তাই বিভিন্ন বিষয়গুলির মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে শিক্ষা অনেকখানি সম্পূর্ণতা পায়। যেমন, একটি মাটির বুদ্ধমূর্তি দিয়ে যেমন শিল্পকে ব্যাখ্যা করা যায়, তেমনি তার সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভূগোল, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়গুলির সঙ্গে বুদ্ধমূর্তিটির সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে প্রকৃত পক্ষে বিভিন্ন বিষয়-এর মধ্যে অনুবন্ধ রচিত হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কাঠের তৈরি পুতুল, ব্লক বা আরও অন্য কোনো বস্তু দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অনুবন্ধ রচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উপলব্ধির জগতের উন্নতি সাধন সম্ভব হয়। 

(vii) বাচনভঙ্গি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো: শিক্ষণ প্রদীপন শিক্ষার্থীর বাচনভঙ্গি বা কথা বলার ধরন, ভাষার বিকাশকেও ত্বরান্বিত করে। শিক্ষার্থীর সামনে যদি কোনো চিত্র বা মূর্তি বা কোনো প্রকৃত বস্তুর নমুনা দেখানো যায় তাহলে ওই প্রদীপনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীকে অনেক প্রশ্ন করে শিক্ষক অনেকগুলি উত্তর জানতে পারেন। শিক্ষার্থী এই সমস্ত উত্তর প্রদান করতে গিয়ে যে বাচনভঙ্গির সে আশ্রয় নেয় এবং যে ভাষায় তাকে বর্ণনা বা ব্যাখ্যা দিতে হয়, তাতে শিক্ষক অনায়াসে তার ওই বৈশিষ্ট্য দুটি চিহ্নিত করতে পারেন। এইভাবে ধীরে ধীরে শিক্ষণ প্রদীপন ব্যবহারের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীর ভাষাগত বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া যায়। 

 (viii) জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার সূচনা : শিক্ষণ প্রদীপনগুলির সাহায্যে পাঠদান পদ্ধতির দ্বারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তিকে উদীপ্ত করে মনকে অনেক বেশি যুক্তি নির্ভর করে তোলেন। পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর না করে বস্তুকেন্দ্রিক সম্পর্ক রেখে শিক্ষার্থী পাঠের বিষয়-বস্তুকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে, ফলে শিক্ষা স্বাধীন চিন্তাশক্তির মুক্তি ঘটে। এই শিক্ষাগ্রহণে তার যেমন আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়ে তেমনই শিক্ষাকে জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাবার চেষ্টা করে, শিক্ষার্থীদের নিজেদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলি নিয়ে জ্ঞান,বোধ ও প্রয়োগের বিকাশ সাধন ঘটায়। বাস্তব জীবনে তাদের শিক্ষার যোগসূত্র রচিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষণ প্রদীপন জীবনকেন্দ্রিক শিক্ষার সূচনা করে।

৪. একটি উত্তম ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকের গুণাবলী লিখুন।
▻ শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক অপরিহার্য কিনা, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন প্রায়শই উচ্চারিত হতে শোনা যায়। ফ্রয়েবল, ডিউই, গান্ধী শিক্ষাবিদগণের চিন্তাধারা প্রকৃতপক্ষে এধরনের প্রশ্ন-উত্থাপনে ইন্ধন যুগিয়েছে। চলমান শতকের প্রথমার্ধে এই প্রশ্ন নিয়ে ব্যাপক বিচার-বিশ্লেষণও হয়েছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক বর্জনের পক্ষে তেমন শক্তিশালী মতবাদ গড়ে ওঠেনি। ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় শিক্ষা-উপদেষ্টা পর্যনও এই প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেছে,
“A modem educational system without text books is as difficult to imagine as Hamlet without the Prince of Denmark." ইতিহাসের ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক তো খুবই জরুরি। অধ্যাপক হান্ট বলেছেন, “In school- work in history, the text book remains after the teacher, the learner's chief aid and support." কিন্তু ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন খুব সহজ বিষয় নয়। এর জন্য কতগুলি সুনির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে হয়।

উত্তম ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকের গুণাবলী : প্রথমত : পাঠ্যপুস্তক যেহেতু মূলতঃ রচিত হবে শিক্ষার্থীদের জন্য, সেই হেতু তাদের প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখেই এই পুস্তক রচিত হওয়া উচিত। তাই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নকালে প্রয়োজন শিক্ষার্থীর মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। দ্বিতীয়ত : পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের পক্ষে যথেষ্ট উদ্দীপক হওয়া প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থী যেন ইতিহাসের কার্যকারণ সূত্রটি অনুধাবন করতে পারে, ইতিহাসের চলমানতার মূল সুরটিকে অনুভব করতে পারে। এই অনুধাবন ও অনুভবই শিক্ষার্থীর ভেতর জাগ্রত করে জ্ঞানতৃষ্ণা, আর সেই জ্ঞানতৃষ্ণা তাকে ক্রমশঃ সসত্যানুসন্ধান করে তুলবে। তৃতীয়ত : পাঠ্যপুস্তককে চিত্তাকর্ষক করে তুলতে বিবিধ মানচিত্র, চার্ট, সময়রেখা বৈচিত্র্যপূর্ণ চিত্রাবলি দিয়ে পাঠ্যপুস্তককে সুসজ্জিত করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরের চমকেই শিক্ষার্থী প্রথম আকৃষ্ট হয়। তাছাড়া, এইসব চিত্রাবলি ইতিহাসকে বহুলাংশে জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে। চতুর্থত : পাঠ্যপুস্তুক কখনোই অন্ধ মতাদর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। কোন উদেশ্য দ্বারা প্রনোদিত হয়ে পাঠ্যপুস্তুক রচিত হবেনা। সে ক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তুক পরিণত হবে প্রচারধর্মী পুস্তিকায়। এ সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্কতা রক্ষা করে চলতে হবে। পঞ্চমত : পাঠ্যপুস্তকের রচনাশৈলী যেন শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার সহায়ক হয়। ইতিহাস হলেও বিষয়বস্তু বর্ণনার সাবলীলতা পাঠ্য বিষয়কে অনেক প্রাণবস্তু করে তোলে। কেননা, "History is more than a literature." ষষ্ঠত : চলমানতাই ইতিহাস, তাই ইতিহাসে গবেষণাও নিরবচ্ছিন্ন। তাই আবিষ্কৃত হয় নিত্যনতুন তথ্য। এইসব আবিষ্কৃত তথ্যের স্থান যেন পাঠ্যপুস্তকে থাকে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সপ্তমত : পাঠ্যপুস্তকে প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে বিভিন্ন ধরনের অনুশীলনী সহ পুস্তকের তালিকা, উচ্চমানের বইয়ের তালিকা, সুবিন্যস্ত সূচিপত্র প্রভৃতি সন্নিবেশিত থাকতে হবে। অষ্টমত : ইতিহাসের বিস্তৃত তথ্যের পরিবেশনায় পাঠ্যপুস্তক যেন “Condensed summary of too may facts"-এ পরিণত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যথাসম্ভব বিষয়বস্তুকে সুনির্দিষ্ট এবং মূর্তভাবে প্রকাশ করতে হবে। নবমত : পাঠ্য বই-এর বৈষম্যমূলক কোনো ভাষা, কোনা উদাহরণ থাকবে না। নারী জাতির পক্ষে অবমাননাকর কোনো বিষয় থাকবে না। দশমত : পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তু অবশ্যই বিভক্ত সম্মত অনুসন্ধানের মাধ্যমে তথ্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হবে। একাদশ : কোনো জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের প্রতি যেন নেতিবাচক ও বিতর্কিত পাঠ্য বই এর মাধ্যমে পরিবেশিত না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. ইতিহাস শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের গুরুত্ব ও উদ্ভাবন সম্পর্কে আলোচনা করুন।
▻ আজকের এই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শ্রেণিকক্ষে অথবা শ্রেণিকক্ষের বাইরেও একটি শিক্ষামূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে শিক্ষণ প্রদীপনের উপযোগিতা বা গুরুত্বকে অধিকার করার উপায় নেই। শিক্ষাবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে যেখানে শিক্ষণ প্রদীপন সাধারণভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না, সেখানে শিক্ষণ প্রদীপন উদ্ভাবনে যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। ইতিহাস শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের গুরুত্ব ও উদ্ভাবন সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হল— (i) অর্থনৈতিক গুরুত্ব (ii) শিক্ষাগত ও মনস্তাত্বিক গুরুত্ব (iii) বিনোদনমূলক গুরুত্ব (iv) সামাজিক গুরুত্ব (v) সমাজবৈজ্ঞানিক গুরুত্ব (vi) অনুবন্ধমূলক গুরুত্ব (vii) ব্যবহারিক জ্ঞান মূলক গুরুত্ব (viii) সৃজনমূলক গুরুত্ব (ix) গবেষণামূলক গুরুত্ব (x) সহযোগিতা মূলক গুরুত্ব


(i) অর্থনৈতিক গুরুত্ব : ভারতের গ্রামাঞ্চলগুলি এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের বিদ্যালয়েও অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। এই পরিস্থিতি অতি স্বল্প খরচে বা শূন্য খরচে শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এমন বিদ্যালয়ের অর্থ তহবিলের খরচকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই ধরনের স্বল্প মূল্যে বা শূন্য মূল্যে তাৎক্ষণিক উদ্ভাবিত শিক্ষণ প্রদীপনকে সহজে ব্যবহার করা যায়। 

(ii) শিক্ষাগত ও মনস্তাত্বিক গুরুত্ব : শিক্ষাবিজ্ঞানের অন্তর্গত পাঠ্য বিষয়বস্তুতে এমন কিছু বিষয়বস্তু আছে যেগুলি প্রকৃতিগতভাবে বিমূর্ত ধরনের। এই বিমূর্ত ধারণাগুলি শিক্ষার্থীদের নিকট সার্থকভাবে তাদের উপলব্ধিতে আনা অনেক সময়েই বেশ কষ্টকর হয়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে শিক্ষক বিমূর্ত ধারণাটিকে অবলম্বন করে চার্ট, চিত্র, রেখাচিত্র প্রভৃতি ধারণা গঠনে সক্ষম হয়। সেদিক থেকে বলা যায় শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের শিক্ষাগত ও মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেকখানি।

(iii) বিনোদনমূলক গুরুত্ব : শিক্ষা প্রদীপন তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের দ্বারা শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকের সাথে একসঙ্গে চিত্তবিনোদনের সুযোগ পায়। অবসর সময়ে, এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে যে আনন্দ লাভের সুযোগ শিক্ষার্থীরা পায় তার বিনোদন মূলক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। 

(iv) সামাজিক গুরুত্ব : শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের কার্যটি সম্পন্ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে এবং শিক্ষকের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কার্য সম্পাদন করে। এতে তাদের মধ্যে যে "Wee feeling” বা আমরা মনোভাব যৌথ অস্তিত্বকে সুরক্ষিত করে, সামাজিক সুসম্পর্ক তৈরি হয়, সমাজ জীবনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সুযোগ পায়। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন এর সামাজিক গুরুত্ব যথেষ্ট। 

(v) সমাজ বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব : শিক্ষাবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিক্ষণ প্রদীপন নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সমাজ জীবনের বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করার দরকার হয়। সমাজ সমীক্ষার পর সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যদি চার্ট, রেখাচিত্র, লেখচিত্র। নির্মাণ করতে হয় তাহলে শিক্ষার্থী সমাজ জীবনের বেশ কিছু কার্যকলাপের সঙ্গে পরিচিতিলাভের সুযোগ পায়। সুতরাং শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একটি সমাজ বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব আছে। 

(vi) অনুবন্ধ মূলক গুরুত্ব : বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক আছে, তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে শিক্ষা অনেকখানি সম্পূর্ণতা পায়। শিক্ষাবিজ্ঞানের পাঠ্যবিষয়বস্তুর অন্তর্গত কোনো মহাপুরুষের শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান আলোচনা প্রসঙ্গে যখন কোনো চার্ট, মডেল বা রেখাচিত্র নির্মাণ করা হয়, তখন তার সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়গুলির সঙ্গে চার্টে প্রদর্শিত সংশ্লিষ্ট মহাপুরুষের সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। এতে বিকল্প বিষয়ের মধ্যে অনুবন্ধ রচিত হয়ে যায়। সুতরাং শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন এর অনুবন্ধমূলক গুরুত্বও অনেকখানি। 

(vii) ব্যবহারিক জ্ঞান মূলক গুরুত্ব : পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর না করে বস্তুকেন্দ্রিক এবং বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে শিক্ষার্থী পাঠের বিষয়বস্তুকে ব্যবহারিক কার্য সম্পাদনের দ্বারা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে। ফলে শিক্ষার্থীদের কর্মেন্দ্রিয় ও জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যবহারিক জ্ঞান লাভের সঙ্গে বোধ ও প্রয়োগের বিকাশ সাধন ঘটে। 

(viii) সৃজনমূলক গুরুত্ব : শিক্ষার্থীকে কোনো বস্তুগত ধারণা দেওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রকৃত বস্তুটিকে শিক্ষার্থীকে দেখাবার সুযোগ পান না, তখন তার অভাব মেটাবার জন্য প্রকৃত বস্তুটির অনুরূপ একটি মডেল নির্মাণ অথবা চিত্রাঙ্কন করার চেষ্টা করানো হয়, শিক্ষার্থীকে দিয়ে। শিক্ষার্থী তখন তার সৃজনী ক্ষমতার দ্বারা মডেল প্রস্তুত কিংবা চিত্রাঙ্কন ও রেখাচিত্র অঙ্কনের ব্যবস্থা করে। এইভাবে শিক্ষণ প্রদীপনের তাৎক্ষণিক উদ্ভাবন প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীর সৃজনী ক্ষমতার বিকাশ ঘটে সুতরাং এর সৃজনমূলক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

৬. সমাজবিজ্ঞান ইতিহাস-এর বীক্ষণাগার সম্পর্কে আলোচনা করুন।
▻ ইতিহাস বিক্ষণাগার একটি স্থান বা সংগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত শব্দ হলো। এটি ইতিহাসের বিভিন্ন দক্ষিণান্ত বা সময়কালের তথ্য, ডেটা, তথ্য, প্রামাণ্য, যোগ্যতা, প্রাপ্তি, বা অন্যান্য সাক্ষরী পদক্ষেপের উপরিন্যাস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস বিক্ষণাগারের মাধ্যমে ইতিহাসশাস্ত্রীরা ইতিহাসের বিভিন্ন মৌলিক তথ্য, ডেটা, এবং প্রমাণসমূহ সংগ্রহ করে থাকেন, যা ইতিহাস অনুসন্ধান এবং তত্বাবধানের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই তথ্য এবং প্রমাণসমূহের সাথে একসাথে কাজ করে ইতিহাস বিশ্লেষণ এবং বিশ্লেষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়, যাতে পূর্বের ঘটনার পরিপ্রেক্ষ্য বা তারিখের সাথে নতুন সম্প্রেষণ ও প্রাপ্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রাপ্ত হতে পারে। মানব সমাজের ঐতিহাসিক বিকাশের ওপর সমাজবিজ্ঞান গুরুত্ব প্রদান করে।


ইতিহাসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজতাত্ত্বিক কাঠামো তুলে ধরেন। মানবসমাজে সংঘটিত সব ধরনের ঘটনার বিবরণ ইতিহাসে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকরা সমাজবিজ্ঞানের জনক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে। ইতিহাসে এক বড় অংশ জুড়ে আছে সামাজিক ইতিহাসের কথা। অধ্যাপক অমলেশ ত্রিপাটি বলেছেন যে, "ইতিহাস হল মানববিদ্যার এবং সমাজবিজ্ঞান সমূহের আত্মা"। ইতিহাস থেকে নজির নিয়ে সমাজবিদ্যা তার তত্ত্বগুলি নির্মাণ করে এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তি স্থাপন করে। ইতিহাসের মধ্যে মানব জীবনে সব কর্মকাণ্ডকে স্থান দেওয়া হয়। সমাজবদ্ধ মানুষের অতীতের কাহিনী হল ইতিহাস। মনুষ্য সভ্যতা হলো সঙ্গবদ্ধ জীবনের ফল। সমাজবিজ্ঞান সঙ্গবদ্ধ মানুষের জীবনের কাহিনী নথিভুক্ত করে রাখে, আর ইতিহাস সেই কাহিনীর ভিত্তি স্থাপন করে। সমাজবিদ্যা মানুষের জীবন-যাপন ও ভাবধারাকে প্রভাবিত করার মত যে সমস্ত উপাদান যেমন- ভৌগলিক, জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক দিকগুলির নথিভুক্ত করার পাশাপাশি ব্যাখ্যাও করে।

ইতিহাস যেমন মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক বা ধর্মীয় জীবন-যাপনের ব্যাখ্যা করে তেমনি ভাবে বলা যায়, সমাজবিদ্যার জ্ঞান থাকলে এই ইতিহাসে ভাবধারাকে সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। সমাজবিদ্যার বৈশিষ্ট্য ইতিহাসের অভ্যন্তরে নানা ঘটনার উপযুক্ত বর্ণনা করতে পারে। অন্যদিকে আবার বলা যায় যে, ইতিহাসের আলোকে সমাজবিজ্ঞানের সব শাখার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয়। কোন বিশেষ সময়ের সামাজিক অবস্থান, মানুষের জীবন-যাপন, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ইত্যাদি সঠিক বর্ণনা করতে ইতিহাসের জ্ঞানের বিশেষ জরুরী বলে মনে করা হয়। একথা স্বীকার করা হয় যে, সমকালীন সমাজ ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োজন, অতীত সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা এবং এ তথ্য আমরা ইতিহাস থেকে লাভ করি। সমাজবিদ্যা থেকে আলাদা করে ইতিহাস পাঠ যেমন অসম্পূর্ণ, তেমনি ইতিহাসকে সমাজবিদ্যা থেকে পৃথক করে বর্ণনা করাও অযৌক্তিক। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ইতিহাস বা সমাজ বিদ্যার বিভিন্ন শাখা বর্ণনার জন্য জরুরী একে অপরের জ্ঞানকে যথার্থভাবে ব্যবহার করা হয় ফলে সমাজবিজ্ঞান ইতিহাস-এর বীক্ষণাগারে গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করে।

৭. প্রতিপাদন-পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কৌশলটি বিশ্লেষণ করুন।
প্রতিপাদন পদ্ধতি : শ্রেণী শিক্ষনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও যথার্থ ব্যবহার উপযোগী পদ্ধতি হল প্রতিপাদন পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে শিক্ষক - শিক্ষিকা শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যে স্থিরীকৃত বিষয়বস্তুকে যথার্থ শিক্ষণ প্রদীপনের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজন উপযোগী পরীক্ষা , উদাহরণ ও বাস্তব অবস্থার আলোচনা অনুসারে উপস্থাপন করেন তাকে বলা হয় প্রতিপাদন পদ্ধতি। আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতিতে বক্তৃতা পদ্ধতিকে সরিয়ে এই প্রতিপাদন পদ্ধতিকে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রতিপাদন পদ্ধতির যথার্থ প্রয়োগে শিক্ষার্থী - শিখনকে আদর্শ করে এই পদ্ধতি। তাই বক্তৃতা পদ্ধতি অপেক্ষা শ্রেণিশিক্ষনে প্রতিপাদন পদ্ধতি খুবই যথার্থ এবং ব্যবহার উপযোগী।

১. শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর যুগপৎ অংশগ্রহণ এখানে থাকে। ২. শিক্ষার্থী যেমন শিক্ষকের শিক্ষণ কার্য মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করে তেমনি শিক্ষক - শিক্ষিকাও শিক্ষার্থীর বোধগম্যতার মাত্রাকে পরিমাপ করেন। ৩. শিক্ষণ উপকরণ , প্রদীপন , শিক্ষা ও শিক্ষার্থী পৃথকভাবে পাঠ্য বিষয় সাপেক্ষে ব্যবহার করেন। ৪. শিক্ষণ দ্বারা উপনীত সিদ্ধান্তে / তত্ত্বে যেমন যথার্থ ব্যাখ্যা , উদাহরণ ও যুক্তি শিক্ষক - শিক্ষিকা উপস্থাপন করেন , তেমনি শিক্ষার্থীও যথার্থ যুক্তি , ব্যবহার , উদাহরণ ও বাস্তব ক্ষেত্র অনুযায়ী যথার্থ জ্ঞান লাভ করে। ৫. শ্রেণীকক্ষে এই পদ্ধতিতে পাঠদানের ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একসঙ্গে সক্রিয় থাকে। ৬. সমগ্র শিক্ষাদান কাজে শিক্ষার্থী খুবই আগ্রহী এবং মনোযোগী হয়। সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব জীবনে পাঠের উপযোগিতাও নিজেরা বুঝতে পারে। ৭. পাঠ্য বিষয়কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিক্ষক - শিক্ষিকা শ্রেণীকক্ষে উপস্থাপন করতে পারেন। ৮. শিক্ষার্থীরা সার্বিকভাবে বিষয়জ্ঞান অর্জন করতে পারে। নিজেদের কোনো ভ্রান্ত ধারণাকেও তারা যুক্তি সহকারে বর্জন ও পরিমার্জন করতে পারে। ৯. একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করা যায়।


পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি : বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে পর্যবেক্ষণ করার অনেক কিছু বর্তমান। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে পর্যবেক্ষণ ব্যবহৃত হয়। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব অপরিহার্য। তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত দায়িত্বের পরিচয় দেয় এবং নির্ভুল তথ্যের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করে, যা গবেষণার জন্য অতি জরুরি। ১. কাঠামোগত পর্যবেক্ষণ : সাধারণত কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত পূর্বানুমান যাচাই কিংবা ঘটনার সুশৃঙ্খল বর্ণনা প্রদানের উদ্দেশ্যে কাঠামোগত পর্যবেক্ষণ অধিকাংশ গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। ২. অবকাঠামোগত পর্যবেক্ষণ : এ পর্যবেক্ষণে গবেষণার কোন পর্যায়ের জন্য পূর্বপরিকল্পনা অথবা নিয়ন্ত্রণ থাকে না ফলে কি পর্যবেক্ষণ করা যুক্তিসংগত হবে তা পর্যবেক্ষণের পূর্বে বুঝে উঠা যায় না। ৩. নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ : এ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ কৌশল ব্যবহার করে ঘটনার মধ্যকার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। পর্যবেক্ষক এখানে পূর্বপরিকল্পিত কৌশল ব্যবহার করেন বলে পর্যবেক্ষণের প্রায় সবই কাঠামোবদ্ধ হয়। ৪. অনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ : এ পদ্ধতিতে বাইরের নির্দেশ অথবা প্রভাবমুক্ত থেকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বা বাস্তবিক পরিবেশে বিষয় বা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ৫. অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ : পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক স্বয়ং পর্যবেক্ষণীয় দল বা সম্পদায়ের সাথে যুক্ত হয়ে তথা বসবাস করে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করে তাকে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ বলে। ৬. অংশগ্রহণহীন পর্যবেক্ষণ : যে পর্যবেক্ষণে গবেষক নিজে পর্যবেক্ষণীয় গোষ্ঠী বা সংস্থার আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে না কিন্তু সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী বা সংস্থার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেন তাকে অংশগ্রহণবিহীন পর্যবেক্ষণ বলে।

যাইহোক, উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কোনো সামাজিক ঘটনার গভীরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ গবেষকগণ পর্যবেক্ষণের স্থান, পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণের উল্লিখিত শ্রেণিবিভাগ করেছেন। আর উপর্যুক্ত প্রতিটি পদ্ধতিই কার্যকরী অবদান রাখে।

৮. মাধ্যমিক স্তরে ইতিহাস পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা করুন।
▻ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ইতিহাস একটি অন্যতম পাঠ্য বিষয়। অন্যান্য বিষয়ের ন্যায় ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে বহুবিধ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানলাভ করা যায়। ইতিহাস শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিক্ষাবিদগণ নানা মত প্রকাশ করেন। কোন একটা বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরার পর শিক্ষার্থীর আচরণ ধারার মধ্যে কাঙ্খিত কি পরিবর্তন আমরা প্রত্যাশা করি এটা সর্বদাই পূর্ব নির্ধারিত থাকে। আর এই প্রত্যাশা গুলি হল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য মাধ্যমিক স্তরে ইতিহাস শিক্ষনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো—


মাধ্যমিক স্তরে ইতিহাস পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
(i) সত্যানুসন্ধানে অনুপ্রেরণা লাভ : ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থী সত্যানুসন্ধানে অনুপ্রাণিত হয়। সত্যের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয়, জন্মে নিষ্ঠা, মিথ্যা প্রচার ও অতিরঞ্জনের প্রতি অনাগ্রহ এবং বিরোধিতা সৃষ্টি করাও ইতিহাস শিখনের লক্ষ্য। ইতিহাসের আদর্শই হল তথ্যের উপর নির্ভর করে সত্যের প্রতিষ্ঠা। (ii) জীবনযাপনের প্রস্তুতি : ইতিহাস শিক্ষার্থীদের নাগরিক জীবন নাগরিক সংজ্ঞা নাগরিকদের অধিকার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। (iii) দেশ প্রেম লাভ : দেশপ্রেম গঠনে ইতিহাসের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস পাঠের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বদেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ সৃষ্টি হয়। দেশের অতীত ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা পরায়ণ করে তোলে এবং অন্তরে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হয়। (iii) বর্তমানকে জানা : ইতিহাস পাঠের উদ্দেশ্য হল বর্তমানকে জানা এবং বর্তমানকে বিচার-বিশ্লেষণ করা। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সমস্যা গুলিকে সম্যক রূপে অনুধাবন করা। (iv) মানুষ ও তার সমাজের পরিচয় : ইতিহাস সমগ্র সমাজের প্রতিচ্ছবি। ইতিহাসের মধ্যে একমাত্র সমাজের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রতিফলিত হয়। সমাজের পটভূমিকায় মানুষের হয় পূর্ণবিকাশ। প্রকৃতপক্ষে মানুষ ও তার সমাজের অগ্রগতি হলো ইতিহাসের প্রতিপাদ্য বিষয়। ইতিহাস শিক্ষার্থীগণকে সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলে। (v) সময় চেতনা জাগ্রত করা : ঐতিহাসিক ঘটনা বলে সব সময়ই স্থান ওকালের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে থাকে। কাজেই নানা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর মধ্যে কার্যকারণ সূত্র অনুধাবন করার জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সময়ানুক্রমিতা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিষয়ক জ্ঞান থাকা জরুরী এবং ইতিহাস অধিক সময় চেতনা ও ভৌগোলিক অবস্থানগত ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। (vi) সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন : দেশের জাতীয় সংগীত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি আমাদের পবিত্র সংবিধান ও তার অপরিহার্য মূল্যের কথা ভেবে তার প্রতি যথাচিত সম্মান প্রদর্শন করতে শেখানোও ইতিহাস পাঠের লক্ষ্য। (vii) সুন্দরতর পৃথিবী গড়া : ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহাবস্থান ও সহযোগিতার মূল্য ছাত্রদের কাছে তুলে ধরার ফলে শান্তি ও সহযোগিতার এক অখন্ড জগত গড়ে ওঠার পথ প্রশস্ত হয়, যার ফলে গড়ে ওঠে এক সুন্দরতর পৃথিবী।


৯. ইতিহাসের একজন শিক্ষক হিসেবে আপনি কিভাবে আপনার ছাত্রদের সাথে স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বের ধারণাটি বিকাশ করবেন।
▻ ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্থানীয় ইতিহাস। ভৌগলিকভাবে স্থানীয় প্রেক্ষিতে স্থানীয় ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে গড়ে যে ইতিহাস গঠে ওঠে তাকে “স্থানীয় ইতিহাস” বলে। স্থানীয় ইতিহাস থেকে যা জানা যায় তা জাতীয় ইতিহাসে জানা যায় না। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায় অসংখ্য ছোট ছোট বীর, নারী-পুরুষের আত্মদান, ত্যাগ ও অদম্য মনোবলের কথা। স্থানীয় ইতিহাস থেকেই বিভিন্ন বড় বড় ঘটনাও জানা যায়। স্থানীয় ইতিহাস সম্পর্কীত বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন- সুধীর কুমার মিত্রের ‘হুগলি জেলার ইতিহাস’, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’ ইত্যাদি।


স্থানীয় ইতিহাসের সুত্রপাত : ঊনিশ শতকে ইংল্যান্ডে প্রত্যন্ত এলাকা গুলোর বা শহরের ইতিহাস রচনার মাধ্যমে স্থানীয় ইতিহাস রচনা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াতেও এই ধরনের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়।

স্থানীয় ইতিহাসে বিষয় : এই ধরনের ইতিহাস চর্চার দেশ বা ব্যাপক এলাকার পরিবর্তে ক্ষুদ্র এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই স্থানের ইতিহাস অন্বেষণ করা হয়। এভাবে স্থানীয় ইতিহাস সমন্বয়ে দেশের ইতিহাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থ সামাজিক বিবর্তন, শিল্প –স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি স্থানীয় শাসকের ইতিবৃত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে।

শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের সাথে স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বের ধারণা : স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বের ধারণা বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ যেমন— 1. প্রামাণ্য ইতিহাসে সব জায়গার পরিচিতি থাকে না। গুরুত্ব বেশি না থাকলে বা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা না ঘটলে সেই স্থানের বিবরণ থাকে না। সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাস এই অভাব পূরণ করে। 2. জাতীয় স্তরের ইতিহাস রচনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 3. স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত চালচিত্র তুলে ধরে স্থানীয় ইতিহাসচর্চা। 4. স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে আলোচিত অঞলের রাজনৈতিক উত্থানপতনের দীর্ঘ কাহিনির পরিচয় পাওয়া যায়। 5. স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে সেই স্থানের জনগোষ্ঠীর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। বর্তমানে স্থানীয় ইতিহাসচর্চার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় ইতিহাস হল আসলে স্থানীয় ইতিহাসের সমষ্টি। তাই স্থানীয় ইতিহাসচর্চা জাতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে।

১০. ইতিহাস শিক্ষনে শিখন সহায়ক হিসেবে সময়রেখা মানচিত্রের গুরুত্ব উদাহণসহ আলোচনা করুন?
▻ সময়রেখা এবং মানচিত্র শিক্ষা ইতিহাস শেখানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শেখন সাহায্য দেয় কারণ তা শিক্ষার্থীদেরকে ঐতিহাসিক ঘটনা এবং ভৌগোলিক স্থানগুলি দেখতে এবং সংদর্শন করতে সাহায্য করে। এখানে তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে নিন্মে আলোচনা করা হলো —


সময়রেখার গুরুত্ব : সময়রেখা ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সময়মান কাঠামো সরবরাহ করে, যা ছাত্রছাত্রীদেরকে ঘটনাবলীর ক্রম এবং একে অপরের সাথে সম্পর্ক সম্পর্কে বোঝার সুযোগ দেয়। এটি ঐতিহাসিক চিন্তা দক্ষতা বিকস্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক সংযোগ স্থাপন করতে কর্মক্ষম যেতে। উদাহরণ: আমেরিকান বিপ্লব শেখানোর জন্য চিন্তা করুন। একটি সময়রেখা ছাত্রছাত্রীদের দেখাতে পারে বিপ্লবে পৌঁছানোর সাথে সাথে ঘটনাবলী, যেমন ১৭৬৩ এর প্রজাতন্ত্র, স্ট্যাম্প আইন, এবং বস্টন টি পার্টি, সময়মান ক্রমে দেখাতে পারে। এটি ছাত্রছাত্রীদের ঘটনার এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে যে কারণ-পরিণাম সম্পর্ক দেখায় তা সাহায্য করে।

মানচিত্রের গুরুত্ব : মানচিত্র ছাত্রছাত্রীদেরকে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ভৌগোলিক সংদর্শন বুঝতে এবং কীভাবে ভৌগোলিক অবস্থান ঐতিহাসিক বিকাশকে প্রভাবিত করে তা বোঝতে সাহায্য করে। মানচিত্র সীমানা, আঞ্চলিক পরিসর, বাণিজ্যিক মার্গ, এবং আরও দেখাতে পারে, এতে ঐতিহাসিক ঘটনাবলী আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় হয়। উদাহরণ: যখন রোমান সাম্রাজ্য শেখানো হয়, একটি মানচিত্র সেই প্রশাসনিক পরিসরের পরিস্থিতি, রোম এবংকনস্ট্যানটিনোপলের মতো প্রধান শহরের অবস্থান এবং সময়ের সাথে প্রসারণ দেখাতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা দেখতে পারে যে কীভাবে ভৌগোলিক অবস্থানটি রোমান বিজয়ে এবং সাংস্কৃতিক বিস্তারের ওপর প্রভাব ডালে। সময়রেখা এবং মানচিত্র একত্রিত হলে, এই উপাদানগুলি ঐতিহাসিক ঘটনাবলী এবং ভৌগোলিক অবস্থানের সম্পূর্ণ দর্শন সরবরাহ করে, এক্সেসিবল এবং স্মরণীয় করার জন্য সাহায্য করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা উন্নত করে এবং ছাত্রছাত্রীদের ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক সংযোগের মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

১১. ইতিহাস শিক্ষণে নির্ণয় ও সংশোধন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করুন?
▻ ইতিহাস শিক্ষণে নির্ণয় ও সংশোধন ব্যাখ্যা করার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ—
1. নির্ণয়ের প্রক্রিয়া (Decision-Making Process): নির্ণয়ের প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের সঠিক ও প্রাপ্ত শিক্ষা অর্জনে সাহায্য করে। এটি শিক্ষকের শিক্ষানৈতিক নীতি এবং শিক্ষার্থীদের শেখা প্রক্রিয়ার সাথে সম্প্রেষণ করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর শিক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ স্থাপন করে।

2. শিক্ষকের ভূমিকা
(Role of the Teacher): শিক্ষক নির্ণয় প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি শিক্ষার্থীদের শেখা প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ করে, তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করে, এবং উপযুক্ত মূল্যায়ন প্রদান করে।

3. শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া (Student Feedback): শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষকদের শিক্ষানৈতিক নীতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানায় এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা বা প্রয়োজনীয়তা সূচিত করে।

4. নির্ধারণ করা এবং পর্যবেক্ষণ (Identification and Observation): শিক্ষকের নির্ধারণ করা প্রয়োজন যে শিক্ষার্থীগুলি পর্যবেক্ষণ এবং সাপ্তাহিক মূল্যায়নে প্রকৃত পর্যাপ্ত ধারণা অর্জন করতে পারছে এবং যে শিক্ষার্থীগুলি সাপ্তাহিক মূল্যায়নে সমস্যা অথবা পর্যাপ্ত ধারণা না অর্জন করতে পারছে।

5. সাপ্তাহিক মূল্যায়ন (Weekly Assessment): সাপ্তাহিক মূল্যায়ন শিক্ষার্থীদের প্রগতি সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে এবং তাদের শেখা প্রক্রিয়ার জন্য শুধুমাত্র সাপ্তাহিক আলোচনা এবং সাপ্তাহিক মূল্যায়নের সাথে সম্প্রেষণ সৃষ্টি করে। নির্ণয় এবং সংশোধন শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর সম্প্রেষণের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত পর্যাপ্তি ও শেখা প্রক্রিয়ার সাথে সম্প্রেষণ করে। এই প্রক্রিয়াটি শিক্ষা সম্প্রেষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষানৈতিক নীতি এবং পর্যবেক্ষণের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের শেখা প্রক্রিয়াকে পর্যাপ্ত উন্নত করে।

১২. প্রকল্প পদ্ধতি কাকে বলে ? এর সুবিধা ও অসুবিধা লিখুন।
▻ প্রকল্প পদ্ধতি সম্পর্কে
Stevenson বলেন , সমস্যামূলক কাজ যখন স্বাভাবিক পরিবেশে সম্পন্ন হয় তখন তাকে প্রোজেক্ট বলে (It is a problematic act carried to completion in its natural setting )। Ballard- এর মতে , বিদ্যালয়ে প্রোজেক্টের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া যায় (Project is a bit of real bit that has been imported into the school) F. Theodore বলেন , প্রোজেক্টে বিভিন্ন ধরনের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে , অন্যথায় বিশৃঙ্খলার কারণ ঘটে (Project aims at bringing unity out of what might otherwise bewilderment)

প্রকল্প পদ্ধতির সুবিধা : 1. এই পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক মনস্তত্ত্বসম্মত ও গণতন্ত্রসম্মত। এক্ষেত্রে ছাত্ররা পরিকল্পনা করে , নিজেরাই কাজ করবে , পরস্পরের সঙ্গে আলাপ – আলোচনাও করে। 2. এখানে শিক্ষার্থীরা নিজের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায়। 3. শিক্ষার্থী এখানে কর্মের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে বলে প্রতিটি কাজের যে বিশেষ মর্যাদা আছে তা সে বুঝতে শেখে। 4. কর্মের মাধ্যমে শিক্ষালাভ হওয়ায় তা ভুলে যাবার সম্ভাবনা কম। 5. সহযোগিতার মনোভাব , আত্মপ্রত্যয় , স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা প্রভৃতি মানসিক বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটে। 6. এক্ষেত্রে জোর করে শৃঙ্খলা চাপিয়ে দেওয়া হয় না। কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজেই শৃঙ্খলার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ইত্যাদি।

প্রকল্প পদ্ধতির অসুবিধা : 1. এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই আমাদের মতো গরিব দেশে এই পদ্ধতির প্রয়োগ অসুবিধাজনক। 2. সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রোজেক্ট পরিচালনা সম্ভব। অধিক শিক্ষার্থীদের ( যা আমাদের বিদ্যালয়গুলির বৈশিষ্ট্য ) নিয়ে সার্থকভাবে প্রোজেক্টের রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। 3. প্রায় প্রতিটি প্রোজেক্টই সম্পন্ন হতে সময় লাগে। ফলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যসূচি শেষ করা যায় না। আবার কিছু কিছু পাঠ্যাংশ আছে যাকে প্রোজেক্টে রূপ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রোজেক্ট পদ্ধতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করলে ওই অংশগুলি জানার সুযোগ হয় না। প্রোজেক্টের মাধ্যমে শিক্ষার ধারাবাহিকতা যা জ্ঞানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য তা ঠিক বুঝে উঠতে পারা যায় না। 4. প্রোজেক্ট পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী সবরকমের শিক্ষার সুযোগ পায় না। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষ ধরনের কাজ থাকে যেমন , কেউ করে হিসাবরক্ষার কাজ , কেউ প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে , আবার কেউ উৎপাদিত বস্তু বিক্রি করে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজের কাজের প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। কাজেই প্রোজেক্ট থেকে সে সম্পূর্ণ শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে না এরই মধ্যে যারা চতুর এবং উদ্যোগী তারা অধিকাংশ কাজই সম্পন্ন করে , আর যারা অন্তর্মুখী তারা অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে না বা কাজ করার সুযোগ পায় না। 5. অধিকাংশ প্রোজেক্টেই হাতেকলমে কাজের অংশই বেশি থাকে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনের দিকটি অবহেলিত হয়। 6. প্রোজেক্ট পদ্ধতিকে সার্থক রূপ দিতে হলে শিক্ষককে যথেষ্ট সক্রিয় এবং সচেতন হতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি তাঁর নজর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের ঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তাদের অসুবিধায় সাহায্য করতে হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে অর্থাৎ শিক্ষককে অত্যধিক পরিশ্রম করতে হয়।

Tags : pedagogy of social science teaching history),pedagogy of social science teaching (history),b.ed practicum 2nd semester in bengali,practicum for bed 2nd semester,bed second semester history pedagogy of social science,pedagogy of social science: history 1.2.7a,b.ed 2nd sem pedagogy of social science (part-1) history,pedagogy of social science (part - i ) history,how to make b.ed 2nd sem practicum,b.ed practicum 2nd sem course 1.2.7a

No comments

Hi Welcome ....