Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

ইউরোপের ইতিহাস | জাতি সংঘ ও রাষ্ট্রপুঞ্জ

  ইউরোপের ইতিহাস | জাতি সংঘ ও রাষ্ট্রপুঞ্জ (স্টাডি নোটস) ফ্রি এমসিকিউ প্রশ্নোত্তর ( League of Nations & United Nations of Organizations ...

 
European history mcq in bengali

ইউরোপের ইতিহাস | জাতি সংঘ ও রাষ্ট্রপুঞ্জ (স্টাডি নোটস) ফ্রি এমসিকিউ প্রশ্নোত্তর

(League of Nations & United Nations of Organizations)

❐ আরো পড়ুনঃ 

✱ লিগের প্রথম সভা ও কার্যালয়
(League First Session) : লিগের কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক ১৯২০-এর ১০ জানুয়ারি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২০-এর নভেম্বরে লিগের প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে স্থানান্তরিত হয়।

লিগের সরকারি ভাষা (Communication Language ) : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সরকারি ভাষা হয় ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফ্রেঞ্চ। লিগের মূল চারটি সংস্থা হল – (১) সাধারণ সভা, (২) নিরাপত্তা পরিষদ, (৩) আন্তর্জাতিক বিচারালয় ও (৪) সচিবালয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থাও লিগের একটি উপশাখা ছিল।

✱ লিগের সচিবালয় (League Secretariate) : জেনেভাতে এর স্থায়ী সচিবালয় ছিল এবং এই সচিবালয়ের একজন স্থায়ী সচিব ছিলেন। লিগের প্রথম সচিব হলেন স্যার জেমস এরিক ডুমন্ট।

✱ সাধারণ সভা (League's General Assembly) : সাধারণ সভাতে লিগের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র থেকে তিনজন করে প্রতিনিধিত্ব করত কিন্তু তাদের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই একটি মাত্র ভোট দিতে পারত। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে লিগের অধিবেশন জেনিভাতে আহ্বান করা হত। এই সমস্ত অধিবেশন লিগে নতুন সদস্য দেশের অন্তর্ভুক্তি, লিগ কাউন্সিলের অস্থায়ী সদস্যের জন্য নির্বাচন, ও আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতিদের নির্বাচিত করত। এখানের লিগের বার্ষিক বাজেট পেশ হত।

✱ লিগ কাউন্সিল : লিগ কাউন্সিল অনেকটা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের মতো কাজ করত। লিগ কাউন্সিল যখন স্থাপিত হয় তখন লিগের মাত্র চারজন স্থায়ী ও চারজন অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছিল। লিগের প্রথম স্থায়ী চারজন সদস্য রাষ্ট্ররা হল – গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও জাপান। আর যে-প্রথম চারটি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছিল তারা হল – বেলজিয়াম, স্পেন, ব্রাজিল ও গ্রিস। অস্থায়ী সদস্যরা তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। এই স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে আটজন সদস্য রাষ্ট্রের ছটি রাষ্ট্রই ছিল ইউরোপের, তাই লিগকে একটি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান বলা যেতেই পারে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে লিগের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে ৬ হয় এবং ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এই সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে ৯ হয়। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে লোকার্ন চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিকে লিগ কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য করে নেওয়া হয়। এরপর সোভিয়েত রাশিয়াকেও লিগের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র করে নেওয়া হয়। অন্যদিকে, অস্থায়ী সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়ে ৯ থেকে ১১-তে দাঁড়ায়। তবে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের উদ্যোগে লিগের উদ্ভব হলেও আমেরিকার অনুপস্থিতি লিগকে প্রথম থেকেই দুর্বল করে রেখেছিল। আবার বিংশ শতকের চারের দশকে জার্মানি ও জাপান লিগ ত্যাগ করলে লিগ আরো দুর্বল হয়। সাধারণভাবে বছরে পাঁচবার লিগের অধিবেশন বসত। প্রয়োজনে লিগের অধিবেশন বৃদ্ধি করা যেত। লিগের সর্বমোট ১০৭টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ১০৭টি অধিবেশন ১৯২০-১৯৩৯-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

✱ আন্তর্জাতিক বিচারালয় (I.C.J) : লিগ কাউন্সিল এবং লিগ সভা মিলে এর নিয়ম-কানুন তৈরি করেছিল। সংস্থাটির বিচারকরা কাউন্সিল ও সভার দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিল। বিশ্বের যে-কোনও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে এখানে আলোচনা ও বিচার হত। এছাড়া কাউন্সিল বা সভার পরামর্শদাতা ছিল এই সংস্থাটি। এই বিচারালয় সকল দেশের জন্য খোলা ছিল।

✱ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (I.L.O) : ভার্সাই চুক্তির ১৩ নং অধ্যায় অনুসারে এটি স্থাপিত হয়েছিল। লিগের সমস্ত সদস্য এরও সদস্য ছিল। সংস্থাটির বার্ষিক ব্যয়বরাদ্দ অ্যাসেম্বলি বা সাধারণ সভা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। যদিও এটি একটি স্বশাসিত সংস্থা ছিল। এবং এর নিজস্ব সচিবালয় ছিল এবং একটি পরিচালন সংস্থা ছিল। লিগের সংবিধান থেকে এর সংবিধান পৃথক ছিল। এলবার্ট টমাস ছিলেন এর প্রথম পরিচালক।

✱ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাফল্য : দিনে আট ঘণ্টা ও সপ্তাহে আটচল্লিশ ঘণ্টা কাজ, কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অধিকার রক্ষা, শিশুশ্রম সংক্রান্ত বিষয় এবং সমুদ্রে জাহাজকর্মীদের দুর্ঘটনা হলে সেই দুর্ঘটনায় যাতে জাহাজের মালিক শ্রমিকের পরিবারের দিকে দৃষ্টিপাত করে সেই বিষয়েও নজর দিয়েছিল। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এটি জাতিসংঘের শাখা হিসেবে কাজ করতে শুরু করে।

✱ লিগের স্বাস্থ্য সংস্থা (W.H.O) : এই সংস্থাটির আবার ৩টি শাখা ছিল। এই সংস্থাটি সারা বিশ্বজুড়ে কুষ্ঠ, ম্যালেরিয়া, পীতজ্বর প্রভৃতির প্রতিরোধের জন্য কাজ করেছিল এবং এই সংস্থাটি পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের এক মহামারির প্রতিরোধে যথেষ্ট ভালো ব্যবস্থা নিয়েছিল।

✱ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিক সংস্থা : ফ্রান্সের দার্শনিক হেনরি বার্জসন্ ছিলেন এই সংস্থার প্রথম সম্পাদক। এই সংস্থাটি নানা ধরনের আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল। যেমন - আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সংযোগ, গ্রন্থপ্রকাশন সংক্রান্ত সহযোগিতা ও প্রত্নতাত্ত্বিক সহযোগিতা ইত্যাদি। লিগের একটি স্থায়ী আফিং সংক্রান্ত সংস্থা ছিল যারা আন্তর্জাতিক স্তরে আফিং উৎপাদন ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখত। লিগের ‘দাস কমিশন’ বিশ্বে দাস ব্যবসা বন্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। লিগ ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ইথিওপিয়াকে দাসব্যবস্থা বন্ধ করতে বলেন। এই ত্রুটি নিশ্চিত হবার পর তাকে লিগের সদস্য করেছিল।

✱ লিগের সদস্য : লিগের ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অধিবেশনে সদস্য ছিল ৪২। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছোয় এবং লিগের সদস্য সংখ্যা হয় ৬০। সোভিয়েত রাশিয়া ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্যপদ পেলেও ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্যপদ ত্যাগ করে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে মিশর লিগের শেষ সদস্য হিসেবে উক্ত সংস্থায় যোগদান করেছিল। কোস্টারিকা ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্যপদ পেলেও ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্যপদ ত্যাগ করে। ব্রাজিল লিগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাষ্ট্র ছিল। সে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে লিগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে প্রথম সদস্যপদ ত্যাগ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে (১৯৩৯)-এর সদস্যসংখ্যা হ্রাস পেয়ে হয় ৪৬।
✱ লিগের ম্যানডেট ক্ষমতা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর জার্মানির আফ্রিকা ও প্রশান্তমহাসাগরীয় উপনিবেশগুলি এবং অটোমান সাম্রাজ্যের অ-তুর্কী প্রদেশগুলিকে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা হয়। উক্ত ম্যানডেট ব্যবস্থাকে ম্যানডেট ব্যবস্থা বলা হয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আমেরিকা, ইতালি, জাপান ইত্যাদি দশটি দেশকে উক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। লিগ তার কার্যকালের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করলেও, বৃহৎশক্তি বর্গের স্বার্থ যেখানে জড়িত ছিল সেখানে লিগের ভূমিকা ছিল প্রায় দর্শকের ন্যায়। জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ, ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণ বা জার্মানির আগ্রাসনে লিগ ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ফলে লিগ পতনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এমনকি লিগ যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তেমন পোক্ত করতে পারেনি।

 জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে বিশ্বশক্তি প্রতিষ্ঠা করা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে-কোনও সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের চোদ্দো দফা নীতির ওপর ভিত্তি করে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু যে সদিচ্ছা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, কুড়ি বছরের মধ্যে সেই জাতিসংঘ পতনের কোলে ঢলে পড়ে। তাই রুমানিয়ার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ টিটু-লেসু মন্তব্য করেছেন—“জাতিসংঘের ব্যর্থতার জন্য লিগের চুক্তিপত্র দায়ী নয়, দায়ী মানুষই”। জাতিসংঘের পতনের কারণগুলি হল –

(১) বৃহৎশক্তি আমেরিকার অনুপস্থিতির জন্য জাতিসংঘ জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষমতাল্পতার কবলে পড়ে। (২) প্রথম থেকে যেমন রাশিয়া লিগকে সুনজরে দেখেনি তেমনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি এর সদস্য পদ পেলেও পরে তা ত্যাগ করে। ফলে লিগ আরো দুর্বল হয়। (৩) লিগ কখনোই বৃহৎ শক্তির স্বার্থের বাইরে ভাবনাচিন্তা করতে পারেনি। ফলে লিগ কখনোই সব রাষ্ট্রের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে পারেনি। (৪) লিগের দুই বৃহৎ শক্তি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স-এর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব লিগের শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল। (৫) লিগের নিজস্ব সেনাবাহিনী না থাকায় লিগের অবস্থা অনেকটা অসহায় বৃদ্ধার মতো হয়েছিল। 
(৬) ১৯৩২-১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা লিগকে পঙ্গু করেছিল। (৭) জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ, ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের ব্যবস্থা নিতে না-পারা। (৮) মিত্রপক্ষের তোষণ নীতি।  (৯) বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে একনায়কতন্ত্রী শক্তির উত্থান লিগের সাংবিধানিক ত্রুটির জন্য লিগের অসহায় অবস্থা প্রকট হতে  থাকে।
১৯৩৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে লিগ কোমায় চলে যায়। পরিশেষে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির মাধ্যমে লিগের পথ চলার অবসান হয়। এ প্রসঙ্গে ল্যাংসাম বলেছেন - “আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় লিগের ব্যর্থতার জন্য শুধুমাত্র লিগকেই দায়ী করা যায় না, এর জন্য দায়ী ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলিও।”

✱ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও তার সনদ গঠনতন্ত্র  : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর হত্যালীলা, ক্ষয়ক্ষতি প্রভৃতির সম্মুখীন হয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রনায়কেরা উপলব্ধি করেছিল যে, যুদ্ধ কখনো মানুষের জীবনে শেষ কথা হতে পারে না। তাই উড্রো উইলসনের চোদ্দো দফা নীতির ওপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা হয় জাতিসংঘ। কিন্তু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাতিসংঘ কোমায় চলে যায়। গণতন্ত্র প্রিয় ইউরোপীয় রাষ্ট্রনায়করা একদিকে যেমন ফ্যাসিবাদী, ন্যাৎসীবাদী শক্তির মোকাবিলা করতে থাকে তেমনি যুদ্ধ চলাকালীন যাতে পুনরায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা যায় সেই উদ্যোগও গ্রহণ করতে থাকে। এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি দেশের রাষ্ট্রনায়করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তী সময়ে লন্ডন - (১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ), ওয়াশিংটন (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ), মস্কো (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ), তেহেরান (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ), ডাম্বারটন ওকস (১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ), ইয়াল্টা (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ), সানফ্রানসিস্কো (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ) প্রভৃতি সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে অক্টোবর একান্নটি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের জন্ম হয়। এই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা United Nations শব্দটি প্রখ্যাত ইংরেজ কবি বায়রনের ‘চাইল্ড হেরল্ড পিলগ্রিমেজ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মাত্র কুড়ি বছর স্থায়ী হলেও জাতিপুঞ্জ কিন্তু এখনও তার অভিষ্ট লক্ষ্যে সাবলীল ভাবে এগিয়ে চলেছে। এর সদর দফতর নিউইয়র্কে অবস্থিত।

✱ প্রতিষ্ঠার পটভূমি : জাতিপুঞ্জ নামক এই আন্তর্জাতিক সংগঠনটি একদিনে হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেক সম্মেলন ও আলোচনার ফলশ্রুতি হল এই জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এবং এর প্রথম উদ্যোগ শুরু হয়েছিল লন্ডনে এক ঘোষণার মাধ্যমে। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে ইংল্যাণ্ড, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রনায়কেরা ভবিষ্যতে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এর পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল আটলান্টিক সনদ ঘোষণা। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯-১২ আগস্ট ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট একটি সনদে সাক্ষর করেন। এই সনদটি উত্তর আটলান্টিকের নিউফাউল্যান্ড-এর কাছে ‘প্রিন্স অফ ওয়েলস’ জাহাজে স্বাক্ষরিত হয়েছিল বলে এটিকে ‘আটলান্টিক সনদ’ বলে।
এই সনদের আটটি মূল নীতির অনেকগুলিই রাষ্ট্রসংঘের দলিলে স্থান পেয়েছিল। এরপর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিশ্বের ছাব্বিশটি দেশ ওই ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করে। যা ‘রাষ্ট্রসংঘের সনদ' নামে পরিচিত। এই সনদে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়। ওয়াশিংটন সম্মেলনে এই ঘোষণাটি করা হয়েছিল। এরপর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে মস্কো সম্মেলনঅনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে তেহেরান সম্মেলন, এরপর ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগস্ট থেকে ৯ অক্টোবর আমেরিকার ওয়াশিংটনের পার্শ্ববর্তী ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪-১১ই ফেব্রুয়ারি জার্মানির ইয়াল্টা সম্মেলনে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম স্থির করা হয়। অবশেষে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন ৫১টি দেশের প্রায় তিনশো প্রতিনিধি ও দেড় হাজার বিশেষজ্ঞ সনদের ১৯টি অধ্যায় ও ১১১টি অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করে। অবশেষে ২৪শে অক্টোবর ওই একান্নটি দেশের প্রতিনিধিরা সনদে স্বাক্ষর করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতিপুঞ্জের জন্ম হয় ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ দিবস (United Nations Day) হিসেবে পালন করা হয় এইভাবে শুরু হয় রাষ্ট্রসংঘের পথ চলা।

✱ জাতিপুঞ্জ গঠনের উদ্দেশ্য : মূলত চারটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। প্রথমতঃ সারা বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও বিশ্বে যাতে যুদ্ধের কোনও রূপ সম্ভাবনা সৃষ্টি না-হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া। দ্বিতীয়ত : বিশ্বের প্রতিটি জাতির ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের মানব অধিকারকে রক্ষা করা। তৃতীয়ত : বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়া ও ছোটো বড়ো সকল সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতায় হস্তক্ষেপ না করা। চতুর্থত : প্রতিটি রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক যাতে গড়ে ওঠে তার জন্য যথাযথ না পদক্ষেপ নেওয়া।

✱ নীতিসমূহ : রাষ্ট্রসংঘের সনদটি একটি প্রস্তাবনা। যা ১৯টি অধ্যায় ও ১১১টি ধারা সমন্বিত। রাষ্ট্রসংঘের সনদে সাতটি মূলনীতির কথা বলা আছে এগুলি হল— (১) জাতিপুঞ্জের ছোটো বড়ো সমস্ত সদস্যরাষ্ট্রের মর্যাদা সমান। (২) জাতিপুঞ্জের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র জাতিপুঞ্জের নিয়মকানুন অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে এবং যথাযথ ভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। (৩) জাতিপুঞ্জ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কখনোই কোনও রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। (৪) জাতিপুঞ্জের সদস্য নয় এমন দেশগুলিও যাতে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে জাতিপুঞ্জের সনদ মেনে চলে সেদিকে নজর রাখা হবে।
(৫) জাতিপুঞ্জের সদস্যরাষ্ট্র জাতিপুঞ্জকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। (৬) কোনো সদস্যরাষ্ট্রই একে অন্যের রাষ্ট্রীয় সীমানা লঙ্ঘন করবে না। অর্থাৎ এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সীমানা দখল করবে না। (৭) সদস্যরাষ্ট্রগুলির মধ্যে কোনও বিরোধ থেকে থাকলে তার শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
✱ জাতিপুঞ্জের শাখা :  
  • সাধারণ সভা 
  • নিরাপত্তা পরিষদ 
  • সচিবের দফতর 
  • আন্তর্জাতিক বিচারালয় 
  • অছিপরিষদ 
  • অর্থনৈতিক সামাজিক পরিষদ

— জাতিসংঘ 
(১) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন বসে।
(২) মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের চোদ্দো দফা নীতির ওপর ভিত্তি করেই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। (৩) লীগের প্রধান কার্যালয় ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহর। (৪) লীগের তিনটি সরকারি ভাষা ছিল। সেগুলি হল ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ ও ইংরেজি। (৫) লীগের প্রথম সচিব ছিলেন স্যার এরিক ডুমন্ট। (৬) লীগের কার্যকালের মধ্যে লীগের তিনজন সচিব ছিলেন। (৭) লীগের সাধারণ সভাতে তিনটি করে সদস্যরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্ব করত। (৮) প্রত্যেক বছর সেপ্টেম্বর মাসে লীগের সভা আহ্বান করা হত। (৯) চারজন স্থায়ী ও চারজন অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে লীগ কাউন্সিল গঠিত ছিল। (১০) লীগের চারটি স্থায়ী সদস্য ছিল – ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান। (১১) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া লীগের স্থায়ী সদস্য পদ পায়। (১২) বছরে ৫ বার লীগের অধিবেশন বসত। (১৩) লীগের অন্যান্য সহযোগী সংস্থা হল – আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা, ম্যানডেট সংস্থা, উদ্বাস্তু সংস্থা ইত্যাদি উল্লেখ্য। (১৪) আমেরিকা কোনও দিনই লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি। (১৫) ১৯৪৬ সালের ২৯শে এপ্রিল লীগের আনুষ্ঠানিক বিরতি হয়।

✱ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসংঘ :
(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। (২) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ নামটির ইংরেজি হল United Nations Organisation এই শব্দটি ইংরেজ কবি বাইরনের 'চাইল্ড হেরল্ড পিলগ্রিমেজ' থেকে নেওয়া। (৩) জাতিপুঞ্জের সদর দফতর নিউইয়র্কে অবস্থিত। (৪) ১৯৪৫-এর ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিক ভাবে রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই প্রতি বছর ২৪শে অক্টোবর জাতিপুঞ্জ দিবস পালিত হয়। (৫) বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা, আন্তঃরাষ্ট্র পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষ্য নিয়ে জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা হয়। (৬) UNO-এর ৬টি শাখা। পাঁচটি সংস্থা নিউইয়র্কে অবস্থিত হলেও আন্তর্জাতিক বিচারালয় নেদারল্যাণ্ডে হেগ শহরে অবস্থিত। (৭) UNO-এর প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে সাধারণ সভা গঠিত। (৮) প্রতি বছর সাধারণ সভার কাজ পরিচালনার জন্য একজন করে সভাপতি ও ১৭ জন সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়। (৯) সাধারণ সভাকে বিশ্বের আলোচনা সভাও বলা যায়। (১০) ৫টি স্থায়ী ও ৬টি অস্থায়ী সদস্য নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যের সংখ্যা যথাক্রমে ৫ ও ১০। (১১) নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য হল আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চিন। এদের একত্রে পঞ্চপ্রধান বলে। এদের ভেটো (VETO) ক্ষমতা আছে। (১২) নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের একমাত্র ভেটো ক্ষমতা আছে। (১৩) প্রথমে ১৮টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ গঠন হলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৫৪। বছরে দুবার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। (১৪) WHO, UNESCO ইত্যাদি সংস্থা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অঙ্গ। (১৫) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ১৫ জন বিচারপতির প্রত্যেকেই ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। (১৬) রাষ্ট্রসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী ট্রিগভি লি। (১৭) রাষ্ট্রসংঘের বর্তমান মহাসচিব পর্তুগালের নাগরিক আন্তেরিও গুটারেস, তিনি নবম মহাসচিব।
✱ কোটজেবিউ : কোটজেবিউ নামে এক রক্ষণশীল ঐতিহাসিক ও নাট্যকার ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্ল লুউইগ স্যান্ড নামে এক জার্মান ছাত্রের হাতে নিহত হন। শোনা যায় এই রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী রুশ জারের কাছে থেকে পয়সা নিয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করতেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর মেটারনিক অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রমথ ফ্রান্সিস ও প্রাশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়ামকে জার্মানিতে দমনমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা বোঝান। এরপরেই প্রবর্তিত কার্লম্বাড ডিক্রি।

✱ জাতি-রাষ্ট্র : স্পেনে কাস্তিলের রানি ইসাবেল্লা ও অ্যারাগনের রাজা ফার্দিনান্দের নেতৃত্বে জাতিরাষ্ট্র গঠিত হয়। ইংল্যান্ডে সপ্তম হেনরি এবং ফ্রান্সে দ্বাদশ লুইও জাতি-রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসেন।

No comments

Hi Welcome ....