Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

wbssc slst history study notes & free mock test 2023

( Chapter : VII ) T he rise of Extremism in Indian Policies -Anti Partition and Swadeshi Movement-Separate Electorate and the British divid...

chapter wise slst history mcq practice for 2023


(Chapter : VII) The rise of Extremism in Indian Policies -Anti Partition and Swadeshi Movement-Separate Electorate and the British divide and rule Policy. Gandhi and Indian Nationalism – Non-Cooperation, Civil Disobedience, Quit India Movement: Muslim league and the demand for Pakistan-Partition and Independence.

ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থী রাজনীতির বিকাশ- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এবং স্বদেশী আন্দোলন- পৃথক নির্বাচন এবং ব্রিটিশ বিভাজন ও শাসন নীতি-গান্ধীজি এবং ভারতের জাতীয়তাবাদ – অসহযোগ, আইন অমান্য এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন : মুসলিমলীগ ও পাকিস্তানের দাবী-বিভাজন এবং স্বাধীনতা।

SLST History Exam Preparation

◑ কংগ্রেসের চরমপন্থী মতবাদের উদ্ভব : ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে জাতীয় কংগ্রেস স্থাপিত হয়। ১৮৮৫-১৯০৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে নরম পন্থী যুগ বলা হয়। জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী নেতৃবৃন্দ তাদের দীর্ঘ দুই দশক ধরে গৃহীত আবেদন-নিবেদন নীতি বা নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলনের দ্বারা ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য দাবী আদায়ে ব্যর্থ হয়। নরমপন্থী নীতি ব্যর্থতার ফলে ব্রিটিশ সরকার দমন-পীড়ন নীতি একই রকম ভাবে অব্যাহত থাকে। অর্থনৈতিক শোষণ, সম্পদের বহির্গমন প্রভৃতির কারণে ভারতের দারিদ্রতা বেড়ে যেতে থাকল। স্বাধীনতা হীনতায় ব্যথিত ভারতবাসীরা বৈপ্লবিক ভাবধারায় প্রভাবিত হয় এবং বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দের রচনা প্রেরণার সৃষ্টি করে। ফলে কংগ্রেসের নরম পন্থার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে ভারতীয়রা চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়। 

ভারতে নরমপন্থার প্রথিকৃৎ ছিলেন বাংলার অরবিন্দ, বিপিনচন্দ্র, পাঞ্জাবের লালা লাজপৎ রায় এবং মহারাষ্ট্রের বালগঙ্গাধর তিলক প্রমুখরা। কংগ্রেসের বিশিষ্ট নরমপন্থী নেতারা হলেন গোখলে, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরোজ শাহ মেহেতা প্রমুখ। চরমপন্থীরা কংগ্রেসের নরমপন্থী নীতিকে ‘রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি’ বলে বিদ্রুপ করেন। অশ্বিনীকুমার দত্ত কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনকে ‘তিন দিনের তামাশা’ বলে ব্যাঙ্গ করেন। এইরূপ অবস্থায় জাতীয় কংগ্রেসের ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দের সুরাট অধিবেশনে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে বিরোধ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন পদ্ধতির প্রশ্নে নরম পন্থীরাই জয়লাভ করে। সভাপতিত্ব করেন রাসবিহারী ঘোষ। নরমপন্থী ও চরমপন্থীরা ভাগ হয়ে যায়। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে নরমন্থী ও চরমপন্থীর মিলন ঘটে।

◑ বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলন : সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার বাংলার বিপ্লবীদের ঐক্য ভাঙ্গার জন্য ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের জন্য ‘রিজলি কমিশন’ গঠন করে। লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর সিন্ধান্ত কার্যকর করেন, অর্থাৎ বাংলা প্রেসিডেন্সিকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পার্বত্য ত্রিপুরা, আসাম ও মালদহ জেলা নিয়ে গঠিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ, এর রাজধানী হয় ঢাকা। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় বাংলা প্রদেশ, এর রাজধানী হয় কলকাতা। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন বাংলার ‘মুকুটহীন রাজা’ সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিন চন্দ্র পাল, সৈয়দ আমির আলি, আব্দুল্লা রসুল প্রমূখ।

সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বেঙ্গলি’ পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুলাই কৃষ্ণকুমার মিত্র ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে লেখেন ‘বঙ্গের সর্বনাশ’ শিরোনামে। বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করার দিন (১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর) বাংলাদেশে হরতাল পাতিল হয়, রবিঠাকুর ‘রাখিবন্ধন’ পালন করেন এবং বাংলার মাটি- বাংলার গান রচনা করেন ও অখণ্ড প্রতীক হিসাবে কলকাতায় আনন্দমোহন বসুর সভাপতিত্বে ‘ফেডারেশন’ হল স্থাপিত হয়। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের একটি অন্যতম কর্মসূচী ছিল স্বদেশী আন্দোলন। স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান কর্মসূচী ছিল দুটি স্বদেশী দ্রব্যের ব্যবহার ও বিদেশী দ্রব্য বয়কট। ‘বয়কট’ শব্দটি আইরিস। বাংলার সর্বস্তরের মানুষ এই আন্দোলনে শামিল হন। বিলাতি পণ্য বর্জনের সঙ্গে সঙ্গে স্বদেশীর বিস্তার চলতে থাকে। এইসময় প্রফুল্ল চন্দ্ৰ রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল’, ‘নীলরতন সরকার’ জাতীয় সাবান কারখানা’ গড়ে তোলেন। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ’। 

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রদের সরকার বহিষ্কৃত করে। তাদের শিক্ষালাভের জন্য ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ সতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠিত হয়। একই সঙ্গে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ নামে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়, পরবর্তীকালে যা ‘যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে’ রূপান্তরিত হয়। এই সময় বহু দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত ‘ডন সোসাইটি’র ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সাহিত্যিকরা হলেন— রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রনাল রায়, অতুলপ্রসাদ সেন, মুকুন্দ দাস প্রমুখরা। সংবাদপত্রের মধ্যে বেঙ্গলি, সঞ্জীবনী ছাড়াও ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের ‘যুগান্তর’, ইন্ডিয়ান মিরর, সন্ধ্যা, বসুমতী, বঙ্গবাসী, নিউ ইন্ডিয়া প্রভৃতি পত্রিকাগুলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যদিকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিরোধী ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খানের নেতৃত্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ৩১ ডিসেম্বর মুসলিমলীগ স্থাপিত হয়। ১৯১১ খ্রিঃ বঙ্গভঙ্গ রদ করেন রাজা পঞ্চম জর্জের আগমন উপলক্ষ্যে লর্ড হার্ডিঞ্জ। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি হল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। উল্লেখ্য পঞ্চম জর্জের আগমনের সম্মানে বোম্বাই-তে ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’ নির্মিত হয়।

পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা : মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কংগ্রেসের আন্দোলন থেকে মুসলমান সম্প্রদায়কে বিচ্ছিন্ন করা। জাতীয় আন্দোলন দুর্বল করাই ছিল ব্রিটিশদের মূল লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই সাফল্য পেল। ব্রিটিশরা এই সাফল্যকে সুদূর প্রসারী করার জন্য ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন দ্বারা পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা প্রচলন করে। উল্লেখ্য মর্লে ছিলেন ভারত সচীব এবং মিন্টো ছিলেন ভাইসরয়। এই আইনে বলা হয় মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে আইনসভায়। এর ফলে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়।

ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন ও গান্ধীজী : ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজীর প্রবেশের পূর্বে কংগ্রেসের আন্দোলন ছিল প্রধানত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ আন্দোলন থেকে দূরে থাকতেন। গান্ধীজী সর্বপ্রথম সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার আন্দোলনে সামিল করেন। গান্ধীজী ব্যারিস্টারি পাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। গান্ধীজীর রাজনৈতিক গুরু গোপাল কৃষ্ণ গোখলের অনুরোধে গান্ধীজী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজী গুজরাটে সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সর্বভারতীয় রাজনীতির দিকে পা বাড়ান। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে গান্ধীজী তিনটি আঞ্চলিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। এই তিনটি আন্দোলন বা সত্যাগ্রহের প্রথমটি হয়েছিল ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিহারের চম্পারণে তিন কাটিয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অর্থাৎ নীল চাষীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য দ্বিতীয়টি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের খেদা জেলায় রাজস্ব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আর তৃতীয় আন্দোলন ছিল ঐ বছরই আমেদাবাদে সুতাকল শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায়। তিনটি আন্দোলনে গান্ধীজী সফলতা পান।

রাওলাট আইন : বিপ্লবী কার্যকলাপ রোধ করার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিঃ ১৮ মার্চ রাওলাট আইন পাশ হয়। এই আইনে আপিল বা উকিল নিযুক্ত করা যেত না। রাওলাট আইনকে কালাকানুন আখ্যা দিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল সারাভারতে হরতালের ডাক দেন। এটাই নাকি ভারতের প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট। গান্ধীজীর নেতৃত্বে রাওলাট সত্যাগ্রহ আন্দোলনের চুড়ান্ত পরিণতি ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড। ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ঘটে। পাঞ্জাবের শাসনকর্তা ও ডায়ার এর নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালালে বহু বিপ্লবী মারা যান। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে উধম সিং ও ডায়ারকে হত্যা করেন। জুডিথ ব্রাউনের মতে, সর্বভারতীয় নেতৃত্বের পথে রাওলাট সত্যাগ্রহ গান্ধীজীকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন : ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মহারাষ্ট্রের নাগপুরের কংগ্রেস অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের মূলত দুটি দিক ছিল। একটি ছিল ইতিবাচক স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহার করা, চরকায় সুতাকাটা, খাদিবস্ত্র ব্যবহার করা এবং সাম্প্রদায়িকতা দূর করা। অপরটি ছিল নেতিবাচক—সরকারের সহিত অসহযোগিতা, সরকারি খেতাব বর্জন, সরকার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জন, বিলাতীদ্রব্য বর্জন ইত্যাদি। কংগ্রেসের সব নেতাই আন্দোলনে অংশ নেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের অনুপ্রেরণায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু I.C.S থেকে ইস্তফা দিয়ে আন্দোলনে শামিল হন। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল খিলাফত সমস্যার সমাধান, জালিয়ানওয়ালা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং স্বরাজ অর্জন।

অসযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার : গান্ধীজী নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, এই আন্দোলন সম্পূর্ণরূপে অহিংস পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরায় বিক্ষোভরত আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে, নিরস্ত্র জনতা উত্তেজিত হয়ে ২২ জন পুলিশকর্মীকে পুড়িয়ে মারে। অহিংস আন্দোলন সহিংস পথে গেলে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। মতিলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস গান্ধীজীর আন্দোলন প্রত্যাহারের সমালোচনা করেন। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ গান্ধীজীকে গ্রেপ্তার করে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও জওহরলাল নেহরুকে আঠারো মাসের কারাদণ্ড দেন ব্রিটিশরা।

স্বরাজ্য দল : মূলত অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার জনিত কারণে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি ‘স্বরাজ্য দল’ প্রতিষ্ঠা হয়। এই দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস ও সম্পাদক ছিলেন মতিলাল নেহরু। এই দলের প্রকৃত নাম ছিল ‘সারাভারত কংগ্রেস খিলাফত স্বরাজ্য দল'। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে চিত্তরঞ্জন দাসের মৃত্যু হলে স্বরাজ্য দলের প্রভাব দ্রুত কমতে থাকে।

সাইমন কমিশন : ভারতে শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য ব্রিটিশ সরকার সাইমনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের ‘সাইমন কমিশন’ গঠন করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসে। এই কমিশনে কোনো ভারতীয় না থাকায় ভারতীয়রা প্রত্যাখ্যান করে। সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে লালা লাজপত রায় মারাত্মকভাবে জখম হন ও কিছুদিন পর মারা যান।। কংগ্রেস কমিশন বর্জন করে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে একটি সংবিধান কমিটি গঠন করে, যা ইতিহাসে ‘নেহরু রিপোর্ট’ (১৯২৮ খ্রিঃ) নামে পরিচিত। নেহরু রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে নাকি মহম্মদ আলি জিন্নাহ তাঁর ‘চৌদ্দদফা নীতি (১৯২৯ খ্রিঃ) ঘোষণা করেন। ভারতীবাসীর চরম বিরোধীতা সত্ত্বেও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রিপোর্ট পেশ হয় (১৯৩০ খ্রি')। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন চালু করেন।

আইন অমান্য আন্দোলন : ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের লাহোর অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে জওহরলাল নেহরু ৩১ ডিসেম্বর পূর্ণ স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন। সরকার কোন পদক্ষেপ না নিলে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস হিসাবে কংগ্রেস ঘোষণা করে। পূর্ণ স্বরাজ বা স্বাধীনতার দাবি পূরণের উদ্দেশ্যে গান্ধীজী আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব গান্ধীজীর হাতেই অর্পিত হয়েছিল। গান্ধীজী তাঁর 'ইয়ং ইন্ডিয়া' পত্রিকায় সরকারের উদ্দেশ্যে ১১ দফা দাবি পেশ করেন। কিন্তু লর্ড আরউইন আমল দেয়নি। ফলে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ গান্ধীজী ৭৮ জন সঙ্গী নিয়ে সবরমতি আশ্রম থেকে আইন অমান্য আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ডাণ্ডি অভিযান শুরু করেন। ২৪ দিন পর ৬ এপ্রিল গুজরাটের ডাণ্ডি নামক সমুদ্রতটে গান্ধীজী স্বহস্তে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলনে অন্যান্য নেতৃত্বরা হলেন চক্রবর্তী রাজা গোপালচারী, রাজেন্দ্র প্রসাদ, সরোজিনী নাইডু, কমলা নেহরু, খান আব্দুল গফর খান (সীমান্ত গান্ধী) প্রমুখ।

এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার দেশে ভাইসরয় আরউইন ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে গোলটেবিল বৈঠকে আহ্বান করেন। প্রথম গোল টেবিল বৈঠকে কংগ্রেস যোগদান না করায় বৈঠক ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেস যাতে যোগ দেয় সেজন্য ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ গান্ধী আরউইন চুক্তি / দিল্লি চুক্তি হয়। আন্দোলন স্থগিত রেখে গান্ধীজী সরোজিনী নাইডু সহ অনেকে ২য় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেয়। ফলপ্রসু না হওয়ায় কংগ্রেস ৩য় গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেনি। উল্লেখ্য সর্বমোট তিনটি গোলটেবিল বৈঠক লণ্ডনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গান্ধীজী দ্বিতীয় দফায় আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলেও সরকারের কঠোর দমননীতির চাপে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ভারতছাড়ো আন্দোলন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধচলাকালীন ভারতীয়দের সমর্থন লাভের আশায় ক্রিপস মিশন (১৯৪২ খ্রিঃ ২২ মার্চ) ভারতে আসে। মিশনের প্রস্তাবে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ না থাকায় ভারতীরা প্রত্যাখ্যান করে। স্বাধীনতা লাভের জন্য সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প আর পথ নেই। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ‘হরিজন' পত্রিকায় গান্ধীজী ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার পরামর্শ দেন। অবশেষে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট বোম্বাইতে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘ভারতছাড়ো' আন্দোলনের প্রস্তাব পাশ হয়। ৯ আগস্ট ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু করার দিনই গান্ধীজী, সরোজিনী নাইডু সহ বহু কংগ্রেস নেতৃত্বকে সরকার বন্দী করে। কংগ্রেসকে বে-আইনী ঘোষণা করে। এই আন্দোলন সারা ভারতে জয় প্রকাশ নারায়ণ, নরেন্দ্রদেব প্রভৃতির নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়ে। তমলুকে মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে আন্দোলন হয়। সঙ্গে ছিলেন জীবনকৃষ্ণ বেরা, লক্ষ্মীনারাণ দাস, রামেশ্বর বেরা সহ কয়েক হাজার বিপ্লবী জনতা। এই আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে তমলুকে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি মতে এই আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন, কয়েক লক্ষ মানুষ আহত হন। দমন নীতির চাপে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অবসান ঘটে।

ভারত বিভাগ ও স্বাধীনতা : জার্মানী ও জাপানের সহযোগিতায় সুভাষচন্দ্র আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করেন পরাধীন ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য। এদিকে মুসলিমলীগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর অধিবেশনে মুসলমানদের জন্য আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার মেনে নেয়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে A.I.T.U.C- সভাপতি হন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে অস্টিয়ার ভিয়েনাতে ‘অস্টিয়া-ইন্ডিয়া সোসাইটি স্থাপন করেন। জনপ্রিয়তার সুযোগে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরাতে জাতীয় কংগ্রেসের সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ খ্রিঃ গান্ধীজী মনোনীত প্রার্থী পট্টভী সীতারামাইয়াকে ২০৩ ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হন নেতাজী, ত্রিপুরী অধিবেশনে। মতবিরোধ দেখা দিলে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে মে মাসে (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে) ‘ফরোয়ার্ড ব্লক' নামে নতুন দল গঠন করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। আজাদ বাহিনীর সাহায্যে ভারত জয়ের পরিকল্পনা থাকলেও সম্ভব হয়নি। সম্ভবত ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ আগস্ট এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজী মারা যান।

 নৌ-বিদ্রোহ : পরাধীন ভারতবর্ষের সর্বশেষ আন্দোলন ছিল নৌবিদ্রোহ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি বোম্বাই-এ ‘তলোয়ার’ নামক জাহাজে সর্বপ্রথম নৌ বিদ্রোহ শুরু হয়। ৭৮টি জাহাজে ২০টি বন্দরে ২০ হাজার নাবিক ও কর্মী ন্যায্য অধিকারের দাবিতে বিদ্রোহে শামিল হন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কড়াহাতে বিদ্রোহ দমন করেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নৌ-বিদ্রোহকে সমর্থন জানায়নি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত ভারতের বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিকে অগ্রসর হল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই ভারতের স্বাধীনতা আইন পাশ করে। এতে বলা হয় যে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা ডোমিনিয়নে পরিণত হবে অর্থাৎ স্বাধীনতা পাবে। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের অনৈক্যের ফলে ভারতবর্ষ দুটি খণ্ডে খণ্ডিত হল— ভারত ও পাকিস্তান।

স্বাধীন ভারত ও সংবিধান : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা অর্জন করল। দেশকে পরিচালনার জন্য প্রযোজন গণপরিষদ বা সংবিধানসভা। সংবিধানসভার সভাপতি ছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ। এই সভার অধিবেশন শুরু হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর। প্রায় তিন বছর বহু আলোচনার পর সংবিধান গৃহীত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর। কার্যকরী হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি। স্বাধীন সার্বভৌম ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহরু।

(Chapter : VII) Importance Study Notes Questions And Answer

‘নরমপন্থী’ ও ‘চরমপন্থী'দের মধ্যে নীতি ও লক্ষ্যের পার্থক্য কী ছিল ?
▸ (১) নরমপন্থীরা ইউরোপীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি, তাদের সততা ও ন্যায়বিচারের ওপর আস্থাশীল ছিলেন, কিন্তু চরমপন্থীদের রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তি ছিল হিন্দুধর্ম, অতীতের গৌরবময় ইতিহাস ও পূর্ণ স্বাদেশিকতা। (২) নরমপন্থীদের মূল লক্ষ্য ছিল, ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন, কিন্তু চরমপন্থীদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণমুক্ত পূর্ণ ‘স্বরাজ’ বা স্বাধীনতা। (৩) নরমপন্থীরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও আবেদন- নিবেদন নীতিতে আস্থাশীল ছিলেন, কিন্তু চরমপন্থীরা ‘স্বদেশি’, ‘বয়কট’, আত্মশক্তি ও আত্মবিসর্জনের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।

জাতীয় কংগ্রেসের কোন অধিবেশনে ও কবে কংগ্রেস নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায় এবং কেন?
▸ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে জাতীয় কংগ্রেস ‘নরমপন্থী’ ও ‘চরমপন্থী’—এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়। নরমপন্থী নেতা রাসবিহারী ঘোষকে কংগ্রেসের সভাপতি করার এবং ‘বয়কট ও স্বদেশি’ প্রত্যাহারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে চরমপন্থী নেতারা কংগ্রেস ত্যাগ করেন।

চরমপন্থী মতবাদের (Extremism or Militant Nationalism) উদ্ভবের কারণ সম্পর্কে কেম্ব্রিজ ঐতিহাসিকদের প্রধান বক্তব্যটি কী?
চরমপন্থী মতবাদের উদ্ভব সম্পর্কে কেম্ব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকদের (গ্যালাহার, অনিল শীল, গর্ডন জনসন, ওয়াশব্রুক) মূল অভিমত হল— উনিশ শতকের শেষ দশক থেকে বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নানা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল এবং জাতীয় কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই ছিল চরমপন্থী মতবাদের উত্থানের কারণ। নরমপন্থী-চরমপন্থী বিরোধে আদর্শের কোনো স্থান ছিল না। তবে অমলেশ ত্রিপাঠী, সুমিত সরকারের মতো আধুনিক ঐতিহাসিক ও গবেষকরা চরমপন্থার উদ্ভবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বকে অগ্রাহ্য করেছেন।

চরমপন্থী রাজনীতি বা সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উদ্ভবে আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির কী প্রভাব ছিল?
▸ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা ভারতে চরমপন্থী মতবাদের উদ্ভবে অনুপ্রেরণা যোগায় : (১) ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ‘মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা’র পর আধুনিক রাষ্ট্ররূপে জাপানের বিস্ময়কর অগ্রগতি শিক্ষিত ভারতীয়দের আশাবাদী করে তোলে; (২) ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার অনুন্নত দেশ ইথিওপিয়ার (আবিসিনিয়া) কাছে ইতালির পরাজয়; (৩) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয় ইউরোপীয় শক্তিবর্গের অপরাজেয়তার ‘মিথ’কে (myth) ভ্রান্ত প্রমাণ করে; (৪) আয়ারল্যান্ড, মিশর, তুরস্ক, চিন প্রভৃতি দেশের সাধারণ মানুষের মুক্তিসংগ্রামের বাণীও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের উদ্বুদ্ধ করে।

যুগান্তর পত্রিকা কবে, কাদের উদ্যোগে ও কেন প্রকাশিত হয়?
▸ বারীন্দ্রনাথ ঘোষের উদ্যোগে এবং ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যুগান্তর পত্রিকা (সাপ্তাহিক) প্রকাশিত হয়। ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনের আদর্শ ও বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে যুগান্তর পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

যুগান্তর দল কারা কবে ও কোথায় প্রতিষ্ঠা করেন?
▸ অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রমুখের উদ্যোগে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মুরারিপুকুরে যুগান্তর দল গঠিত হয়। সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অস্ত্র তৈরি, বোমা তৈরি, অস্ত্র আমদানি, সরকারি কর্মচারীদের হত্যা প্রভৃতি যুগান্তর দলের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। শহিদ ক্ষুদিরাম ছিলেন যুগান্তর দলের একজন সক্রিয় সদস্য।

শহিদ ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮) স্মরণীয় কেন?
▸ অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য ‘যুগান্তর’ দলের তরুণ বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু মজফ্ফরপুরে যান। তাঁদের বোমার আঘাতে ভুলক্রমে জনৈকা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন। ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন এবং ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট তাঁর ফাঁসি হয়। তরুণ বিপ্লবীর এই নির্ভীক আত্মদান বাংলার তরুণ সমাজকে অত্যাচারী বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উৎসাহিত করে। উল্লেখ্য, ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান নিয়ে লেখা বিখ্যাত জাতীয়তাবাদী সংগীত ‘এবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’-র রচয়িতা ছিলেন বাঁকুড়ার অখ্যাত কবি পীতাম্বর দাস।

‘অভিনব ভারত’ কে, কবে ও কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন?
▸ বিনায়ক দামোদর সাভারকর মহারাষ্ট্রে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মিত্রমেলা’ নামে একটি বিপ্লববাদী সংগঠন গড়ে তোলেন। বিংশ শতকের গোড়ায় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এর নাম পরিবর্তন করে ‘অভিনব ভারত’ রাখা হয়। সভা, সমিতি, প্রচার পুস্তিকা, শরীরচর্চার মাধ্যমে ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার বাণী প্রচার করাই ছিল এই সংস্থার উদ্দেশ্য।

মহারাষ্ট্রের কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্ত সমিতির নাম লেখো।
▸ মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী গুপ্ত সমিতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - (১) 'আর্যবান্ধব সমাজ' এবং (২) ‘অভিনব ভারত' ইত্যাদি।

বিংশ শতকের প্রথম দিকে বাংলাদেশের দুটি বিপ্লববাদী সংগঠনের নাম লেখো।
▸ (১) ব্যারিস্টার পি. মিত্রের (প্রমথনাথ মিত্র) নেতৃত্বাধীন ও ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘অনুশীলন সমিতি’ (প্রতিষ্ঠাতা সতীশচন্দ্র বসু) এবং (২) বারীন্দ্রনাথ ঘোষ ও ভূপেন্দ্ৰনাথ দত্তের নেতৃত্বাধীন ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘যুগান্তর দল’। উল্লেখ্য, ১৯০৬ সালে ‘ঢাকা অনুশীলন সমিতি’ তৈরি হয় এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন পুলিনবিহারী দাস।

'চাপেকার ভ্রাতৃদ্বয়' কারা? তাঁরা কেন বিখ্যাত?
▸ মহারাষ্ট্রের গণেশ দামোদর চাপেকার ও বালকৃষ্ণ চাপেকার ‘চাপেকার ভ্রাতৃদ্বয়’ নামে পরিচিত। প্লেগ রোগীদের ওপর নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে চাপেকার ভাইরা পুণার তৎকালীন প্লেগ কমিশনার মি. র‍্যান্ড ও তাঁর সহকারী মি. আয়ার্স্টকে হত্যা করেন (১৮৯৭)। ধৃত হয়ে তাঁদের প্রাণদণ্ড হয়। দেশের জন্য আত্মবিসর্জন দেওয়ার জন্য তাঁরা স্মরণীয়।

'গণপতি উৎসব’ ও ‘শিবাজি উৎসব' কে, কবে ও কী উদ্দেশ্যে প্রবর্তন করেন?
▸মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে ‘গণপতি উৎসব' এবং ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ‘শিবাজি উৎসব’-এর প্রচলন করেন। মহারাষ্ট্রের প্রাচীন দেবতা গণেশ বা গণপতির পূজাকে একটি সর্বজনীন জাতীয় উৎসবে পরিণত করে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করা ছিল ‘গণপতি উৎসব’-এর উদ্দেশ্য। অন্যদিকে শিবাজির স্বাধীন মারাঠারাষ্ট্র গঠনের কর্মপদ্ধতি ও আদর্শকে সামনে রেখে দেশবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করা এবং ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা ছিল ‘শিবাজি উৎসব’ প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য। 

‘কালি দ্য মাদার’ (Kali, The Mother) ও ‘ভবানী মন্দির’ কারা রচনা করেন?
‘কালি দ্য মাদার’ গ্রন্থের লেখিকা ভগিনী নিবেদিতা এবং ‘ভবানী মন্দির’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন অরবিন্দ ঘোষ।

'দি এক্সট্রিমিস্ট চ্যালেঞ্জ' (The Extremist Challenge) গ্রন্থটি কার রচনা? এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু কী?
দি এক্সট্রিমিস্ট চ্যালেঞ্জ গ্রন্থটির লেখক ড. অমলেশ ত্রিপাঠী। এই গ্রন্থে ভারতে চরমপন্থী রাজনীতির প্রেক্ষাপট, উদ্ভব, বিকাশ ও তার অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বাসুদেব বলবন্ত ফাড় (১৮৪৫-১৮৮৩) বিখ্যাত কেন?
▸ বাসুদেব বলবন্ত ফাড়কে ছিলেন মহারাষ্ট্রের একজন সশস্ত্র বিপ্লববাদী। তিনি উনিশ শতকের সত্তরের দশকে রামোশি ও অন্যান্য উপজাতি শ্রেণির মানুষদের নিয়ে একটি গুপ্ত সমিতি গড়ে তোলেন এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে ইংরেজ শাসন উচ্ছেদের সংকল্প নেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে গ্রেপ্তার করে যাবজ্জীবন দীপান্তর দেওয়া হয়। তাঁকে ‘ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী জাতীয়তাবাদের জনক’ (Father of Indian Armed Rebellion) বলে গণ্য করা হয়।

বিপিনচন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২) কেন বিখ্যাত?
▸ বাংলাদেশে চরমপন্থী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল। তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও অসাধারণ বাগ্মী। দেশে ও বিদেশে তিনি ভারতের মুক্তির সপক্ষে নিরন্তর প্রচার চালান। ‘নিউ ইন্ডিয়া’, ‘স্বরাজ’, ‘হিন্দু রিভিউ’ প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে তিনি জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রচার করেন। তাঁকে ‘স্বাধীনতার সিংহ’ বলা হয়। তাঁর লেখা দুটি গ্রন্থ হল Nationality and Empire ও Indian Nationalism.

অশ্বিনীকুমার দত্ত (১৮৫৬-১৯২৩) কেন স্মরণীয়?
▸ বরিশাল জেলার (বর্তমান বাংলাদেশ) সর্বজনশ্রদ্ধেয় স্কুলশিক্ষক অশ্বিনীকুমার দত্ত ছিলেন চরমপন্থী আন্দোলনের একজন প্রখ্যাত নেতা। সমাজকল্যাণমূলক কাজের মাধমে তিনি অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। জাতীয় কংগ্রেসের বাৎসরিক অধিবেশনকে তিনি ‘তিন দিনের তামাশা’ বলে সমালোচনা করেন। তাঁরই উদ্যোগে বরিশাল জেলা স্বদেশি আন্দোলনের শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়। স্বদেশি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি বরিশালে ‘স্বদেশ বান্ধব সমিতি’ গড়ে তোলেন। স্বদেশি যুগে তাঁকে ‘বরিশালের মুকুটহীন রাজা’ বলে অভিহিত করা হত।

বাল গঙ্গাধর তিলক (১৮৫৬-১৯২০) ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?
▸মহারাষ্ট্রের বালগঙ্গাধর তিলক ছিলেন ভারতীয় চরমপন্থী রাজনীতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ও পথিকৃৎ। ‘স্বরাজ’ বা পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন ছিল তাঁর জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। ভারতীয়দের মধ্যে চরমপন্থী ভাবধারা ও জাতীয়তাবাদের জাগরণের জন্য তিনি ইংরেজি ভাষায় ‘মারাঠা’ (১৮৮১) ও মারাঠি ভাষায় ‘কেশরী’ (১৮৮১) নামে দুটি জাতীয়তাবাদী সংবাদপত্র প্রকাশ করেন এবং শিবাজি ও গণপতি উৎসব প্রবর্তন করেন। জনজাগরণ ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে তাঁর দান অতুলনীয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি লোকান্তরিত হন।

অরবিন্দ ঘোষ (১৮৭২-১৯৫০) ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?
▸ অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন চরমপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শ ও বৈপ্লবিক সংগ্রামের জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। নরমপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম সুসংবদ্ধ আক্রমণ গড়ে তোলেন New Lamps for Old নামে কতকগুলি ধারাবাহিক প্রবন্ধের মাধ্যমে (১৮৯৩- ৯৪, ইন্দুপ্রকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত)। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁরই নির্দেশে ও পরিচালনায় বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লববাদী কার্যকলাপ চলতে থাকে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে আলিপুর বোমা মামলায় তিনি ধৃত হন। তবে মুক্তি লাভের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান এবং পন্ডিচেরিতে অধ্যাত্ম- সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ 'The Life Divine'.

জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?
▸ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কংগ্রেসের সুরাট অধিবেশনে (১) কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব  প্রকাশ্যে এসে পড়ে এবং জাতীয় কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে নরমপন্থী ও চরমপন্থী এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায় এবং (২) জাতীয় কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ে।

'লাল-বাল-পাল’ বলতে কাদের বোঝায়?
▸ভারতের চরমপন্থী আন্দোলনের তিন প্রখ্যাত নেতা পাঞ্জাবের লালা লাজপত রাই (লাল), মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক এবং বাংলার বিপিনচন্দ্র পাল একত্রে ‘লাল- বাল-পাল’ নামে পরিচিত ছিলেন।

লালা লাজপত রাই (১৮৬৪-১৯২৮) স্মরণীয় কেন?
▸ ‘পাঞ্জাব কেশরী’ লালা লাজপত রাই ছিলেন চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়  জাতীয়তাবাদী রচনার জন্য তাঁকে মান্দালয়ে (বর্মা) দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকতে হয়। তাঁর সভাপতিত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ স্থাপিত হয়। পাঞ্জাবে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন পরিচালনার সময় পুলিশের প্রহারে তাঁর মৃত্যু হয় (নভেঃ, ১৯২৮)। তাঁর লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল Unhappy India.

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে কারা ‘চরমপন্থী' (Extremists) নামে পরিচিত ছিলেন? তাঁদের ‘চরমপন্থী' বলে চিহ্নিত করা হয় কেন?
▸ বালগঙ্গাধর তিলক, লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ, অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রমুখ নেতারা ‘চরমপন্থী' নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথম পর্বের নরমপন্থী (Moderates) কংগ্রেস নেতাদের শোচনীয় ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ ওই সব নেতা কংগ্রেসের ‘রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তির’ তীব্র নিন্দা করেন এবং ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে চরমপন্থা অর্থাৎ কঠোর নীতি ও সক্রিয় আন্দোলনের কর্মসূচি অনুসরণের দাবি তোলেন। তাই এঁদের ‘চরমপন্থী’ বলে অভিহিত করা হয়।

জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে ‘চরমপন্থী' গোষ্ঠীর (সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের) আবির্ভাবের কারণ কী?
চরমপন্থী মতাদর্শ বা সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের (Militant Nationalism) উদ্ভবের প্রধান কারণগুলি হল: (১) নরমপন্থী কংগ্রেসি আন্দোলনের দুর্বলতা ও আবেদন- নিবেদন নীতির ব্যর্থতা; (২) ইংরেজ সরকারের সীমাহীন শোষণ, বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা, দেশীয় শিল্পের ধ্বংসসাধন ও জনগণের আর্থিক দুর্গতি; (৩) নব্য হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের প্রভাব; (৪) লর্ড কার্জনের স্বৈরাচারী নীতি এবং (৫) বঙ্গ ব্যবচ্ছেদের পরিকল্পনা।

ভগৎ সিং (১৯০৯-১৯৩১) স্মরণীয় কেন?
▸ পাঞ্জাবের তরুণ বিপ্লবী ভগৎ সিং ছিলেন ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি'র একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি লাহোরের সহকারি পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট জন স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয় (মার্চ, ১৯৩১)। তাঁর আত্মদান দেশের যুবসমাজকে উদ্দীপিত করে তোলে।

বিপ্লবী যতীন দাস (১৯০৪-১৯২৯) স্মরণীয় কেন?
▸ যতীন্দ্রনাথ দাস ছিলেন বাংলার একজন বিখ্যাত বিপ্লবী। পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের বিপ্লববাদীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা’য় (১৯২৯) তিনি গ্রেপ্তার হন। লাহোর জেলে বন্দিদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে তিনি অনশন শুরু করেন এবং একনাগাড়ে ৬৪ দিন অনশন চালিয়ে প্রাণত্যাগ করেন (সেপ্টেম্বর, ১৯২৯)। তাঁর আত্মদান দেশের যুবসমাজ ও বিপ্লববাদীদের অনুপ্রাণিত করে।

‘লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' (১৯২৯) স্মরণীয় কেন?
▸ ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বরে ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি-’র সদস্য ভগৎ সিং ও রাজগুরু পাঞ্জাবের সহকারী পুলিস সুপার জন স্যান্ডার্সকে হত্যা করেন এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত কেন্দ্রীয় আইন-সভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। এই সূত্র ধরে সরকার ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, সুখদেব প্রমুখ বহু বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে ‘লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করে। জেলে বন্দিদের ওপর দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে যতীন দাস ৬৪ দিন অনশন করে প্রাণত্যাগ করেন। বিচারের রায়ে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুর ফাঁসি হয় (১৯৩১)। এঁদের আত্মদান দেশবাসীকে জাতীয় সংগ্রামে শামিল হতে অনুপ্রাণিত করে।

'অলিন্দ যুদ্ধ' (Gun Battle in Verandah) কী?
তরুণ বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বরে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের মূল কেন্দ্র ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ (Writers' Building) অভিযান করেন এবং কারা বিভাগের অধ্যক্ষ সিম্পসনকে হত্যা করেন। তাঁদের সঙ্গে ‘রাইটার্স বিল্ডিং’-এ ব্রিটিশ পুলিশের যে যুদ্ধ হয়, তা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে খ্যাত। ধরা পড়ার অসম্মান থেকে বাঁচবার জন্য বিনয় ও বাদল আত্মহত্যা করেন এবং বিচারে দীনেশের ফাঁসি হয়।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-১৯৩২) কেন বিখ্যাত?
▸ বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এক উল্লেখযোগ্য নাম। 'ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি'র চট্টগ্রাম শাখার সদস্যা এই দুঃসাহসী তরুণী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে সফল নেতৃত্ব দেন। ধরা পড়ার আশঙ্কায় তিনি বিষপান করে শহিদের মৃত্যু বরণ করেন। তিনিই প্রথম মহিলা যিনি সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

বীণা দাস (১৯১১-১৯৮৬) স্মরণীয়া কেন?
▸ বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে বীণা দাস এক স্মরণীয় নাম। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে তিনি গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন। বিচারে তাঁর দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড হয়। পরে তিনি ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন এবং কারাবরণ করেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা কী ছিল?
▸ বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে নারীদের বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ছিল এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। চট্টগ্রামের পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ১৯৩২ সালে শহিদের মৃত্যুবরণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। কুমিল্লার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনকে হত্যা করেন শান্তি ও সুনীতি নামে দুই স্কুল ছাত্রী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন বীণা দাস। ১৯৩৪ সালে দার্জিলিং-এর লেবং-এ বাংলার গভর্নর অ্যান্ডারসনকে হত্যা করতে গিয়ে ধরা পড়েন উজ্জ্বলা নামে এক তরুণী।

বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে সূর্য সেনের (১৮৯৪-১৯৩৪) নাম স্মরণীয় কেন?
▸ বিপ্লবী সূর্য সেন পূর্ববাংলার চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলেন। Indian Republican Army নামে তিনি একটি বিপ্লবী দল তৈরি করেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল দুঃসাহসী তরুণ বিপ্লবী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন এবং জালালাবাদ পাহাড়ে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পরে তিনি ধরা পড়েন এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন বলে বিপ্লবী মহলে তিনি ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদ হিসাবে তিনি আমাদের কাছে স্মরণীয়।

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন' (Chittagong Armoury Raid) ঘটনাটি কবে কার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়? এই ঘটনার গুরুত্ব কী?
বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন' সংঘটিত হয়। সূর্য সেনের সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, নির্মল সেন প্রমুখ। এই ঘটনা (১) তিরিশের দশকের প্রথমদিকে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে নতুন করে উদ্দীপনার সঞ্চার করে এবং (২) এই ঘটনার পর চট্টগ্রামে একটি স্বাধীন বিপ্লবী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

“হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি’ কে কবে কোথায় গঠন করেন?
▸ বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি' দল গড়ে তোলেন। পরে ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখ তরুণ বিপ্লবী এই দল পুনর্গঠিত করে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এর নাম বদলে রাখেন ‘হিন্দুস্তান সোসালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন'।

‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' (Bengal Volunteers) কে, কবে ও কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন?
বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ ও তাঁর সহযোগী সত্যরঞ্জন বসির উদ্যোগে কলকাতায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ (সংক্ষেপে বি.ভি.) নামক বিপ্লবী সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এর শাখা ছিল। সশস্ত্র বিপ্লব ও গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে ইংরেজ বিতাড়ন ছিল এই দলের উদ্দেশ্য। বিখ্যাত বিপ্লবী-ত্রয়ী বিনয়-বাদল-দীনেশ ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য। এই দলের নেতৃত্বেই মেদিনীপুরের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করা হয় ও বিখ্যাত ‘অলিন্দ-যুদ্ধ’ পরিচালিত হয়।

ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থী আন্দোলনের গুরুত্ব কী ছিল?
▸ চরমপন্থী আন্দোলনের প্রধান গুরুত্ব হল : (১) এই আন্দোলন জাতীয় রাজনীতিতে এক নতুন প্রাণ ও গতির সঞ্চার করে ; (২) এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় আন্দোলন কিছুটা গণভিত্তি লাভ করে; (৩) জাতির সাহস, আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং (৪) ‘স্বরাজ’ ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তুলে চরমপন্থী আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করে দেয়।

বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হল কেন?
▸ বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের ব্যর্থতার প্রধান কারণ হল : (১) সরকারি দমননীতি ; (২) বিপ্লবী সমিতিগুলির মধ্যে সংহতি ও যোগাযোগের অভাব; (৩) বিপ্লবী আন্দোলন মূলত বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ ছিল, ভারত জুড়ে তা সম্প্রসারিত হয়নি ; (৪) এই আন্দোলনের গণভিত্তি ছিল দুর্বল—সমাজের বৃহত্তর কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষের সঙ্গে এর যোগ ছিল না এবং (৫) মুসলিম সম্প্রদায় এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল।

‘কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা' (Kakori Conspiracy Case, 1925) কী ?
যুক্তপ্রদেশের (উত্তরপ্রদেশ) বিপ্লবীরা স্বদেশি ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে (আগস্ট) কাকোরি নামক রেল স্টেশনে রেলগাড়ি থেকে সরকারি টাকা লুঠ করার চেষ্টা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইংরেজ সরকার ‘কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা’ রুজু করে এবং বিচারে আশফাকউল্লা, রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশন সিং প্রমুখ বিপ্লবীর ফাঁসি হয়।

প্রথম লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা কী?
▸ বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী এক ব্রিটিশ- বিরোধী সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এ ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায় এবং সরকার বহু বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে ‘লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করে। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য রাসবিহারী ছদ্মবেশে জাপানে চলে যান। বহু বিপ্লবীর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় এবং কয়েকজনের ফাঁসি হয়।

‘বার্লিন কমিটি’ কী?
▸ জার্মানিতে প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবী ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, বরকতুল্লাহ্ প্রমুখ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বার্লিনে 'ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল পার্টি’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন। এটি ‘বার্লিন কমিটি’ নামেই প্রসিদ্ধ জার্মানির সহযোগিতায় অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করে ভারত থেকে ব্রিটিশ বিতাড়নই ছিল বার্লিন কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রথম প্রবাসী অস্থায়ী ভারত সরকার (Provisional Indian Government- in-exile) কবে কোথায় গঠিত হয়? এই সরকারের প্রধান কে ছিলেন?
প্রথম প্ররাসী অস্থায়ী ভারত সরকার ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে কাবুলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ, প্রধানমন্ত্রী বরকতুল্লাহ্ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ওবেদুল্লা।

রেশমি চিঠি ষড়যন্ত্র' (Silk-letter conspiracy) কী?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় বিপ্লবী ওবেদুল্লা মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় মুসলিম সৈন্যদের ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্ররোচিত করার জন্য এক টুকরো সিল্ক কাপড়ের ওপর একটি গোপন পত্র লিখে সেখানকার বিপ্লবীদের কাছে পাঠান। পত্রটি ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ে এবং এর ওপর ভিত্তি করে কয়েকজন মুসলিম বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯১৬ এই ঘটনা ‘রেশমি চিঠি ষড়যন্ত্র' নামে খ্যাত।

রাসবিহারী বসু (১৮৮৫-১৯৪৫) কে?
▸ ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাসে রাসবিহারী বসু হলেন একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি দেশব্যাপী এক ব্রিটিশ-বিরোধী সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি গ্রেপ্তার এড়াবার জন্য পি. এন. ঠাকুর - নামে ছদ্মবেশে জাপানে চলে যান এবং সেখান থেকে নিরলসভাবে বিপ্লবী আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের হাতে বন্দি ভারতীয় সেনাদের সংগঠিত করে ‘আজাদ হিন্দ সংঘ’ বা Indian Independence League গড়ে তোলেন। পরে সুভাষচন্দ্র বসু জাপানে গেলে তিনি সুভাষের হাতে এই সংঘের দায়িত্ব তুলে দেন।

বিনায়ক দামোদর সাভারকর বা বীর সাভারকর (১৮৮৬-১৯৬৬) কে?
▸ বিনায়ক দামোদর সাভারকর ছিলেন মহারাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত বিপ্লবী। তিনি মহারাষ্ট্রে ‘অভিনব ভারত’ (১৯০৪) নামে বৈপ্লবিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। পরে লন্ডনে এসে তিনি ভারতীয় বৈপ্লবিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। বিপ্লবী কার্যকলাপের জন্য তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ভারতে প্রেরিত হন এবং দীর্ঘদিন কুখ্যাত সেলুলার জেলে বন্দি থাকেন। পরবর্তীকালে তিনি ‘হিন্দু মহাসভা’ নামক রাজনৈতিক দলের সভাপতি ছিলেন। তাঁর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল The Indian War of Independence (1809).

মানবেন্দ্রনাথ রায় (১৮৮৭-১৯৫৪) কে?
▸ মানবেন্দ্রনাথ রায়ের প্রকৃত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘যুগান্তর’ দলে যোগদান করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি বিদেশে চলে যান। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠায় তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং কংগ্রেসে যোগদান করেন। পরে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তিনি ‘র‍্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটিক দল’ গঠন করেন। মানবেন্দ্রনাথের দুটি গ্রন্থ হলঃ India in Transition এবং What Do We Want.

বাঘা যতীন’ (১৮৭৯-১৯১৫) স্মরণীয় কেন?
▸ যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা ‘বাঘা যতীন’ ছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক। তিনি যুগান্তর সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জাপান ও জার্মানি থেকে অস্ত্র আমদানি করে বাংলায় বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার বালেশ্বরের কাছে বুড়িবালাম নদীর তীরে এক খণ্ডযুদ্ধে (কোপতিপোদার যুদ্ধ) বাঘা যতীন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নিহত হন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য আত্মবিসর্জন দিয়ে বাঘা যতীন প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন।

ভারতীয় বিপ্লববাদের ইতিহাসে বুড়িবালামের যুদ্ধ’ বা কোপতিপোদার যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
▸ বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা ‘বাঘা যতীন’ ও তাঁর চার সঙ্গী (চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত, নীরেন দাশগুপ্ত ও জ্যোতিষ পাল) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বুড়িবালাম নদীর তীরে ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি ও তাঁর এক সঙ্গী প্রাণ দেন। বাঘা যতীন ও তাঁর সঙ্গীদের এই যুদ্ধ ও আত্মবিসর্জন বাঙালি জাতিকে নতুন চেতনা ও শৌর্যে-বীর্যে উদ্দীপ্ত করে। এই জন্য ‘বুড়িবালামের যুদ্ধ’ বা কোপতিপোদার যুদ্ধ বঙ্গীয় বিপ্লববাদের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা।

মাদাম কামা (১৮৬১-১৯৩৬) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?
▸ মাদাম ভিকাজি রুস্তমজি কামা বা মাদাম কামা ছিলেন একজন ধনী পার্শি মহিলা। বিদেশে ভারতীয় বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। লন্ডন ও প্যারিস থেকে তিনি ভারতীয় বিপ্লবীদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং বৈপ্লবিক কাজ চালানোর জন্য তিনি ভারতে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্র পাঠাতেন। তিনিই প্রথম ভারতের ত্রিবর্ণ-রঞ্জিত পতাকার রূপ তৈরি করেন। তাঁকে ‘ভারতীয় বিপ্লববাদের জননী' (The Mother of Indian Revolution) বলা হয়।

‘গদর পার্টি’ (Ghadar Party) কে, কবে এবং কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করেন?
লালা হরদয়াল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রানসিস্কো শহরে ‘গদর পার্টি’র প্রতিষ্ঠা করেন। ‘গদর’ শব্দের অর্থ বিপ্লব। ‘গদর পার্টি’র প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ- বিরোধী বিদ্রোহ সংঘটিত করা।

'কোমাগাতামারু’ ঘটনাটি কী?
▸‘কোমাগাতামারু’ নামে একটি জাহাজে করে ৩৭২ জন শিখ যাত্রী ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কানাডার ভাঙ্কুভার বন্দরে পৌঁছোলে কানাডা সরকার তাদের অবতরণে বাধা দেয় এবং অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে দিয়ে তারা শেষপর্যন্ত কলকাতায় পৌঁছোয়। ব্রিটিশ সরকার শিখ যাত্রীদের পাঞ্জাবে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা বিদ্রোহ করে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গুলি চালালে ২০ জন শিখ নিহত হন এবং বহু শিখকে বন্দি করা হয়। এই ঘটনা ভারত ও ভারতের বাইরে শিখদের মধ্যে প্রবল ব্রিটিশ- বিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলে।

আলিপুর বোমা মামলা (Alipur Bomb Case, 1908) স্মরণীয় ঘটনা কেন?
▸মজফ্ফরপুরে প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু কর্তৃক মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যার হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে পুলিশ কলকাতার মুরারিপুকুর ও অন্যান্য স্থান থেকে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, হেমচন্দ্র কানুনগো সহ ৪৭ জন বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে ও ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে আলিপুর বোমা মামলা শুরু করে। ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশের দক্ষতায় অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি লাভ করেন, কিন্তু বাকিদের দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড বা দ্বীপান্তর হয়। এই জন্য বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ।

দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলা (Delhi Conspiracy Case, 1914) কী?
▸ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা নিক্ষেপ, পাঞ্জাবের পুলিশ কমিশনারকে হত্যার ষড়যন্ত্র প্রভৃতি ঘটনার সূত্র ধরে ব্যাপক ধর-পাকড় শুরু হয় এবং বিপ্লবী আমিরচাঁদ, অবোধবিহারী, বালমুকুন্দ, বসন্ত বিশ্বাস প্রমুখকে গ্রেপ্তার করে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ‘দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু হয়। বিচারে এঁদের ফাঁসি হয়। এই মামলার আর এক প্রধান অভিযুক্ত রাসবিহারী বসু গ্রেপ্তার এড়িয়ে ছদ্মবেশে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাপানে চলে যান।

📢 More Updated Soon ...

No comments

Hi Welcome ....