ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ : দ্বিতীয় অধ্যায় | class 6 history chapter 2 questions and answers ...
ক্লাস 6 এর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর দ্বিতীয় অধ্যায়
❏ ভেবে দেখাে খুঁজে দেখাে :১। সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করাে :
১.১) আদিম মানুষ প্রথমে (রান্না করা খাবার/পােড়া মাংস/কাচা মাংস ও ফলমূল) খেত।
উত্তরঃ কাঁচা মাংস ও ফলমূল খেত।
১.২) আদিম মানুষের প্রথম হাতিয়ার ছিল (ভোঁতা পাথর/হালকা ছুঁচোলাে পাথর/পাথরের কুঠার)।
উত্তরঃ ভোঁতা পাথর।
১.৩) আদিম মানুষের জীবনে প্রথম জরুরি আবিষ্কার (ধাতু/চাকা/আগুন)।
উত্তরঃ আগুন।
২। 'ক' স্তম্ভের সঙ্গে 'খ' স্তম্ভ মিলিয়ে লেখো :

৩। নিজের ভাষায় ভেবে লেখাে (তিন/চার লাইন) :
৩.১) আদিম মানুষ যাযাবর ছিল কেন?
উত্তরঃ আদিম মানুষ কৃষিকাজ জানত না। আশ্রয়, খাদ্য ও বাসস্থানের খোঁজে তাদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হত। এরা খাদ্য উৎপাদক ছিল না, ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। তাই তারা খাদ্যের জন্য যাযাবর ছিল।
৩.১) আদিম মানুষ যাযাবর ছিল কেন?
উত্তরঃ আদিম মানুষ কৃষিকাজ জানত না। আশ্রয়, খাদ্য ও বাসস্থানের খোঁজে তাদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হত। এরা খাদ্য উৎপাদক ছিল না, ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। তাই তারা খাদ্যের জন্য যাযাবর ছিল।
৩.২) আগুন জ্বালাতে শেখার পর আদিম মানুষের কী কী সুবিধা হয়েছিল?
উত্তরঃ আগুন জ্বালাতে শেখার ফলে আদিম মানুষ মাংস খেতে শুরু করল। এই মাংস ছিল সুস্বাদু এবং সহজে হজম।শারীরিক পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে মানুষের চোয়াল শক্ত হতে শুরু করল। আগুন জ্বালাতে শেখার ফলে মানুষ তীব্র শীতের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারল। বন্যজন্তুদের হাত থেকে তাদের আক্রমণের ভয় দূর হল। গুহার মধ্যে আলাে জ্বালানাের ফলে রাত্রে বসে বসে তারা শিল্পকর্ম শুরু করল। এই শিল্পকর্ম ধীরে ধীরে লিপির রূপ নিল। মানুষের সামনের ধারালাে উঁচু দাঁত ছােটো হয়ে গেল চেহারা বদল হল। শরীরের জোর বাড়ল বুদ্ধিও বাড়ল।
৩.৩) আদিম মানুষ কেন জোট বেঁধেছিল? এর ফলে তার কী লাভ হয়েছিল?
উত্তরঃ প্রথম দিকে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। বন্যজন্তুর আক্রমণে তারা প্রায়ই মারা যেত। শিকার করতে বেরিয়ে তারা নিজেরাই পশুর খাদ্যে পরিণত হয়ে যেত। তাই তারা জোট বাঁধার ফলে মানুষের শিকারের সুবিধা হল। জোট বেঁধে তারা শিকার করলে বড়াে প্রাণী শিকার করতে পারত। অনেক মাংস পাওয়া যেত। জোটবদ্ধ হওয়ায় তারা বিপদে পড়লে তার মােকাবিলা করতে পারত। এভাবে তারা আত্মরক্ষা, সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পেরেছে।
৪. হাতেকলমে করাে :

৪.১) পাশের ছবিটিতে মানুষের প্রতিটি ধাপের মধ্যে কী কী বদল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে?
উত্তরঃ (ক) প্রথমে মানুষ সােজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না। আকৃতি ছিল নর-বানরের মতাে। তার মাথার আকৃতি ছিল ছােটো। সামনের দিকে লম্বাটে মুখ ছিল। (খ) মানুষ কিছুটা সােজা হয়ে দাঁড়াতে শিখেছে, হাত-পায়ের গঠনের পরিবর্তন ঘটেছে। (গ) মানুষ অনেকটা সােজা হয়ে দাড়িয়েছে। লম্বা হয়েছে। হাতের থাবার গঠন বড়াে হয়েছে। দেখা দিয়েছে হাতে-পায়ে পরিবর্তন। (ঘ) মানুষের চলনে পরিবর্তন হয়েছে, আবার গঠনেও পরিবর্তন হয়েছে। (ঙ) আদিম মানুষ আধুনিক মানুষে পরিণত হয়েছে। আধুনিক মানুষের মাথা বড়াে হয়েছে। দেহের গঠন সােজা হয়েছে তার হাঁটার মধ্যে ভারসাম্য এসেছে।

৪.২) পাশের ছবি দুটি থেকে আদিম মানুষের পাথরের হাতিয়ার বানানাের পদ্ধতি বিষয়ে কী জানা যাচ্ছে?
উত্তরঃ (ক) মানুষ প্রথমে হাতিয়ার হিসেবে পাথরের টুকরাে ব্যবহার করল। (খ) তারপর পাথরকে হাতের মুঠির মধ্যে ধরতে পারা শিখে গেল। (গ) অবশেষে পাথরের টুকরােকে পাথরের সঙ্গে ঠুকে মসৃণ করতে শিখল।
২. ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ :
যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন
❏ গুরুত্বপূর্ণ নোটস প্র্যাকটিস :
১. দুধরনের আদিম মানুষ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তরঃ মস্তিষ্কের আকার থেকেই আদিম মানুষের বিভিন্ন ভাগ লক্ষ করা যায়। আদিমতম মানুষ হল হােমাে হাবিলিস। এরা ছিল আনুমানিক ২৬ লক্ষ থেকে ২৭ লক্ষ বছর আগের। এরা দলবদ্ধভাবে থাকত, হাঁটতে পারত। ফলমূল খেত পাশাপাশি এরা কাঁচা মাংসও খেত। এরাই প্রথম পাথরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহর করে, একটা পাথর দিয়ে আরেকটা পাথরকে জোরে আঘাত করে পাথরের অস্ত্র জানাত। হােমাে হাবিলিসের বংশধর ছিল হােমাে ইরেকটাস। এর প্রজাতির মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিল। কর্ণাটকের হুগি উপত্যকা, রাজস্থানের দিওয়ানা ও মহারাষ্ট্রের নেভাসাতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আনুমানিক ২০ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে এই প্রজাতি ছিল। এরা দুপায়ে ভর করে সােজাভাবে দাঁড়াতে পারত। দলবদ্ধভাবে গুহায় থাকত শিকার করতে পারত এবং এরাই প্রথম আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। এরাই বানিয়েছিল স্তরকাটা নুড়ি পাথরের হাতিয়ার। শেষদিকে বানিয়েছিল হাত-কুঠার।
২. এপ-দের সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীর স্থলভাগ ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব অংশেও ঘন জঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলের গাছে থাকত এক ধরনের বড়াে বানর। তাদের লেজ ছিল না। এদের এপ বলা হয়। আবহাওয়ার বদলের কারণে গাছপালা কমে যায়। ফলে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানাে কঠিন হয়ে পড়ে। সহজে ফলমূল পাওয়াও মুশকিল হয়ে গেল। একদল এপ গভীর জঙ্গলের খোঁজে বেরােল আর একদল খাবার খুঁজতে মাটিতে নেমে পড়ল। ধীরে ধীরে ভর দিয়ে দাঁড়াতে শিখল। আনুমানিক ৪০ লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০ লক্ষ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এপরা ছিল। শক্ত বাদাম ও শুকনাে ফল চিবিয়ে খেত, তাই তাদের চোয়াল শক্ত ও সুগঠিত ছিল। এরা গাছের ডাল দিয়ে ঢাক্কা মারত ও পাথর ছুড়তে চেষ্টা করত।
৩. আদিম মানুষ কীভাবে আগুনের ব্যবহার শিখত ও তাতে তাদের কী কী সুবিধা হল?
উত্তরঃ আগুনের ব্যবহার শেখা মানুষের ইতিহাসে খুব জরুরি একটা বিষয়। প্রথমদিকে বনে লাগা আগুন (দাবানল) বা অন্যভাবে জ্বলে ওঠা আগুন তারা দেখত। পরে হয়তাে কোনাে একসময়ে জ্বলন্ত গাছের ডাল এনে গুহার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রাখত। নিভতে দিত না এরপর হঠাৎ একদিন আদিম মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। হয়তাে পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে চকমকি জাতীয় পাথরের ঠোকাঠকিতে হঠাৎ জ্বলে ওঠে আগুন। অথবা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়েছিল তারা। আগুন ব্যবহার করার ফলে বেশ কিছু বদল দেখা দিল। একদিকে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচাত আগুন। পাশাপাশি বিভিন্ন জন্তুর আক্রমণ মােকাবিলা করার জন্য আগুন ব্যবহার শুরু হয়। কাঁচা খাবার বদলে আগুনে ঝলসে মাংস খাওয়া শুরু করল। ঝলসানাে নরম মাংস খাওয়ার ফলে তাদের চোয়াল ও দাঁতের জোর কম লাগত। ধীরে ধীরে তাদের চোয়াল সরু হয়ে এল। সামনের ধারালাে উচু দাঁত ছােটো হয়ে গেল। এভাবে চেহারার নানা পরিবর্তন দেখা দিল।
উত্তরঃ আগুনের ব্যবহার শেখা মানুষের ইতিহাসে খুব জরুরি একটা বিষয়। প্রথমদিকে বনে লাগা আগুন (দাবানল) বা অন্যভাবে জ্বলে ওঠা আগুন তারা দেখত। পরে হয়তাে কোনাে একসময়ে জ্বলন্ত গাছের ডাল এনে গুহার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রাখত। নিভতে দিত না এরপর হঠাৎ একদিন আদিম মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। হয়তাে পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে চকমকি জাতীয় পাথরের ঠোকাঠকিতে হঠাৎ জ্বলে ওঠে আগুন। অথবা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়েছিল তারা। আগুন ব্যবহার করার ফলে বেশ কিছু বদল দেখা দিল। একদিকে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচাত আগুন। পাশাপাশি বিভিন্ন জন্তুর আক্রমণ মােকাবিলা করার জন্য আগুন ব্যবহার শুরু হয়। কাঁচা খাবার বদলে আগুনে ঝলসে মাংস খাওয়া শুরু করল। ঝলসানাে নরম মাংস খাওয়ার ফলে তাদের চোয়াল ও দাঁতের জোর কম লাগত। ধীরে ধীরে তাদের চোয়াল সরু হয়ে এল। সামনের ধারালাে উচু দাঁত ছােটো হয়ে গেল। এভাবে চেহারার নানা পরিবর্তন দেখা দিল।
৪. নতুন পাথরের যুগের মানুষ কীভাবে খাদ্যসংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদক হয়ে উঠল?
উত্তরঃ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখা মানব সমাজের এক বিরাট পদক্ষেপ :
(১) খাদ্যাভাব : আজ থেকে প্রায় এক লক্ষ বছর আগে, প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষের দিকে শুরু হয় তুষারযুগ। প্রচণ্ড শীতে বহু প্রাণী প্রজাতি ক্রমশ লুপ্ত হয় খাদ্যাভাব দেখা দেয়। জনসংখ্যা হ্রাস পায়। সাড়ে বারাে হাজার বছর আগে এই তুষার যুগ শেষ হয় এবং প্রকৃতি অনুকূল হয়। তখন জনসংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় মানুষ খাদ্যের বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান করা শুরু করে। (২) বন্য প্রজাতির ব্যবহার : একেবারে প্রথম দিকে মানুষ জঙ্গল থেকে কন্দ জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় তুলে এনে ঘরের কাছে পুঁতে দিয়ে তার থেকে ফসল পেত এর থেকে চাষের সূত্রপাত। (৩) চাষের অগ্রগতির প্রথম ধাপ : এই পর্যায়ে মানুষ শিখল উদ্ভিদের বীজ বপন করে তার থেকে ফসল পাওয়া। (৪) চাষের অগ্রগতির দ্বিতীয় ধাপ : এই পর্যায়ে মানুষ যে উদ্ভিদগুলির ফলন বেশি বা যার থেকে বেশি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর ফল পাওয়া যায় তার বীজ বপন করতে শুরু করল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাছাই-এর কাজ চলল। এক প্রজাতির সঙ্গে অন্য প্রজাতির মিলন ঘটানাের ফলে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যেরও বদল ঘটল। এইভাবেই নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদক হয়ে উঠল।
পুরােনাে পাথরের যুগ | নতুন পাথরের যুগ |
---|---|
পুরােনাে পাথরের যুগের হাতিয়ার ছিল সংখ্যায় কম ও অনুন্নত। | কিন্তু নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ার ছিল মাজা ঘষা। যেমন—পাথরের কুঠার, কাস্তে, বড়শি, বাটালি প্রভৃতি। |
পুরােনাে পাথরের যুগে মানুষ ফলমূল সংগ্রহ করেত, শিকার করত।
কেবলমাত্র খাদ্য সংগ্রহ করত। |
কিন্তু নতুন পাথরের যুগে মানুষ কৃষিকাজ শেষে এবং খাদ্য উৎপাদন করে। |
পুরােনাে পাথরের যুগে মানুষ যাযাবর ছিল। নির্দিষ্ট কোন বাসস্থান ছিল না পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। | কিন্তু নতুন পাথরের যুগে মানুষ চাষের জমির পাশে বাসস্থান গড়ে তােলে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। |
পুরােনাে পাথরের যুগে মানুষ পশুর ছালও গাছের চামড়ার বস্ত্র পড়ত। | নতুন পাথরের যুগে মানুষ শন, পশম ও তুলাের কাপড় বুনতে শিখল। |
পুরােনাে পাথরের যুগে সমাজে স্পষ্ট কোনাে শ্রম বিভাজন ছিল না। | কিন্তু নতুন পাথরের যুগে কাজের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমবিভাজন তৈরি হয়। সমাজ আগের থেকে আরও জটিল হল। |
৬. উপমহাদেশের পুরােনাে পাথরের যুগ সম্পর্কে লেখাে।
উত্তরঃ ভারতীয় উপমহাদেশের সব থেকে পুরােনাে পাথরের অস্ত্র পাওয়া গেছে
কাশ্মীরের সােয়ান উপত্যকায়। এছাড়াও পটোয়ার মালভূমিতে ও হিমাচল প্রদেশের
শিবালিক পর্বত অঞ্চলেও পুরােনাে পাথরের হাতিয়ার পাওয়া যায়। হাতিয়ারগুলি
বেশিরভাগই হাত-কুঠার ও চপার জাতীয়। হাতিয়ারগুলি বেশিরভাগ ছিল ভারী নুড়ি
পাথরের তৈরি। হােমাে ইরেকটাস প্রজাতির আদিম মানুষ উপমহাদেশের বিভিন্ন
এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। কর্ণাটক, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশে
তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ভারী নিরেট পাথরের হাত-কুঠার ব্যবহার করত যারা
তারা খাবার জোগাড় করত। নিজেদের খাবার তার নিজেরা বানাতে পারত না। পশুপালন
ও তাদের জানা ছিল না। শিকার করে ও ফলমূল জোগাড় করেই তারা পেট ভরাত নানা
জায়গায় ঘুরে দিন কাটাত। যাযাবরের জীবন কাটাত তারা, কিছু সময় থাকার জন্য
তারা বেছে নিত কোনাে প্রাকৃতিক গুহা। তা না পেলে খােলা আকাশের নীচে দিন
কাটাত। দল বেধে পশু শিকার করত। মিলেমিশে খাবার ভাগ করে খেত। প্রচণ্ড ঠান্ডা
থেকে বাঁচতে পশুর চামড়া, গাছের ছাল পরত,আদিম মানুষ তখনও পােশাক তৈরি করতে
শেখেনি।
৭. ভীমবেটকা সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তরঃ উপমহাদেশের কয়েকটি অংশে পুরােনাে অনেক গুহা-বসতির নজির রয়েছে। যেমন, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের সংঘাত, কর্ণাটকের কুর্ণল ও মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকা। মধ্যপ্রদেশের ভুপাল থেকে কিছুটা দূরে বিন্ধ্যপর্বতের গা ঘেঁষে নির্জন জঙ্গল সেখানে ১৯৫৭ সালে, ভীমবেটকায় কিছু গুহার নজির পাওয়া যায়। ওই গুহাগুলিতে পুরাতন পাথরে যুগ থেকে আদিম মানুষেরা থাকতে শুরু করে। গুহার দেওয়ালে তাদের আঁকা ছবি পাওয়া গেছে। প্রায় সবই শিকারের দৃশ্য। নানারকম বন্য পশুর ছবি রয়েছে। তাছাড়া পাখি, মাছ, কাঠবেড়ালির মতাে প্রাণীর ছবিও দেখা যায়। এছাড়া দেখা যায় মানুষ একা অথবা দলবেঁধে শিকার করছে। তাদের কারও কারও মুখে মুখােশ হাতে পায়ে গয়না। অনেক সময়ই মানুষের সঙ্গে কুকুরকে দেখা যায়। ছবিগুলিতে সবুজ ও হলুদ রং-এর ব্যবহার হলেও বেশি সাদা এবং লাল রং দেখা যায়।
৮. উপমহাদেশের মাঝের পাথরের যুগ সম্পর্কে লেখাে।
উত্তরঃ মাঝের পাথরের যুগ ধীরে ধীরে হাতিয়ার বানানাে আরও উন্নত হতে থাকে। এই সময় ছুরিগুলাে আগের থেকে অনেক বেশি ধারালাে ও ছােটো হয়ে গেছিল। তাই সেগুলােকে ছােটো পাথরের হাতিয়ার বলা হয়। ধীরে ধীরে আবহাওয়ার পরিবর্তন হওয়ায় মানুষের থাকার জন্য ভালাে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। মাঝের পাথরের যুগের ছােটো হাতিয়ারগুলি গাছের ডালের সঙ্গে জুড়ে নেওয়ার ফলে হাতিয়ার ধরতেও সুবিধা হয়। উত্তরপ্রদেশের মহাদহা, মধ্যপ্রদেশের আদমগড় প্রভৃতি অঞলে ওই যুগের মানুষের হাতিয়ার পাওয়া যায়। সেই সময় হাড়ের তৈরি ফলাও পাওয়া গেছে। বিভিন্নরকম বন্যপশুর হাড় পাওয়া গেছে। পশুর মাংস ঝলসানাের জন্য আগুনের ব্যবহার করা হত। ভেড়া বা ছাগল জাতীয় কোনাে পশুর হাড় পাওয়া যায়নি। তার থেকে মনে করা হয় আদিম মানুষ তখনও শিকারি ছিল। সরাই নহর রাইয়ের মানুস বনের শস্য এনে জাতায় পিষে নিত। তারা কিন্তু খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারত না। মানুষের সমাধিও কঙ্কাল পাওয়া গেছে মহাদহাতে। সেখানের কঙ্কালগুলি কম বয়সেই মারা গিয়েছিল। নর্মদা উপত্যকায় গবাদি পশু ও কুকুরের হাড় পাওয়া গেছে। গবাদি পশুদের হাড়ে আঘাতের চিহ্ন নেই তাই বলা যায় ওই স্থানে মানুষ পশুপালন করতে শিখেছিল। পশুপালনের ফলে খাবার ও দুধ পওয়া যেত বেশি। পাত্রের জন্য ঝুড়িতে মাটি ঢেলে হাত দিয়ে লেপে মাটির পাত্রগুলি বানানাে হত। চাকার ব্যবহার তখনও হয়নি।
৯. প্রস্তর যুগ গােষ্ঠীবদ্ধ সমাজের গঠন কেমন ছিল?
উত্তরঃ সভ্যতার প্রথম থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাপন করত। নব্য প্রস্তর যুগে জনসংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দল বা গােষ্ঠীগুলাে বড়াে হল এবং আগের চেয়ে বেশি সংগঠিত হল। প্রস্তরযুগের দলবদ্ধ সমাজ ছিল এইরুপ এই যুগের গােষ্ঠী বা দলগুলি অনেক সময় গােত্র বলে অভিহিত করা হয়। মনে করা হত যে গােত্রের সকল সদস্য একই পূর্বপুরুষের বংশধর। এই গােত্রের জীবন ছিল দলবদ্ধ। একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা ছিল সেই যুগের গােত্র জীবনের রীতি। গােত্রের গােষ্ঠীবদ্ধ জীবনের আর একটি বিশেষ দিক ছিল সম্পদের দলগত মালিকানা। গােত্রের সবচেয়ে বয়স্ক, অভিজ্ঞ ও দক্ষ মানুষকে গােত্রের অধিপতি হিসেবে মেনে নেওয়ার রীতি ছিল। ইনি সকলকে কাজ ভাগ করে দিতেন। শিকার করে আনা পশুর মাংস বা উৎপাদিত ফসলের ভাগ কে কতটা পাবে তা ইনিই ঠিক করতেন। ধীরে ধীরে এক এলাকায় বাস করে এমন। অনেকগুলি গােত্র মিলিত হয়ে তৈরি হল কৌম। একটি কৌমের মধ্যেকার সমস্ত গােত্রের দল পতিদের নিয়ে তৈরি হত গােত্র পঞ্চায়েত। বিভিন্ন গােত্রের মধ্যে জমি বা পশু নিয়ে বিবাদ হলে তা গােত্র পঞ্চায়েত বিচার করে তা মিটিয়ে দিত।
১০. প্রস্তর যুগের মানুষের আত্মরক্ষার মাধ্যম কী ছিল?
উত্তরঃ প্রস্তর যুগে দলবদ্ধতাই ছিল মানুষের আত্মরক্ষার প্রথম ও প্রধান উপায়। এছাড়াও, দলবদ্ধ শ্রম ও বুদ্ধি ব্যবহার করে মানুষ আত্মরক্ষার জন্য নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরি করেছিল।
(১) প্রাচীন প্রস্তর যুগের গােড়ার দিকে : এই যুগে গাছের ডাল, ছুড়ে মারবার পাথর, কিছু অপেক্ষাকৃত ধারালাে পাথরের টুকরাে ইত্যাদি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে আগুনের ব্যবহার শেখার পর মানুষ আত্মরক্ষার জন্য আগুনকে ব্যবহার করতে শিখেছিল। (২) প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষের দিকে : এই সময় পাথরের তৈরি বল্লম ও ছুরির ব্যবহার চালু হয়। মানুষ আরও দক্ষতার সঙ্গে আগুনের ব্যবহার শেখে। প্রায় ষাট হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম তির ধনুকের ব্যবহার শেখে।। (৩) মধ্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে হাতিয়ারের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য বাড়ে এবং নানান ধরনের ছুরি, সড়কি ও তির ধনুকের ব্যবহারে মানুষ পটু হয়ে ওঠে। (৪) নব্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে নতুন কোনাে আত্মরক্ষার হাতিয়ার তৈরি না হলেও, আগের যুগের হাতিয়ারগুলিই আরও উন্নত হয়।
১১. কীভাবে নতুন পাথরের যুগে উন্নত সমাজের সৃষ্টি হলাে।
উত্তরঃ নিজের বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে মানুষ বদল ঘটিয়েছে। ধীরে ধীরে আদিম মানুষ সভ্য হয়েছে। নতুন পাথরের যুগে চাষের কাজে ব্যস্ত মানুষের দরকার হল স্থায়ী বসতবাড়ি ও চাষের জমি। চায়ের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির চাহিদা বাড়তে থাকে। যে যার জঙ্গল সাফ করে চাষের জমি বার করে নিতে থাকে। যার যত জমি তার তত ফসল। এভাবে জমির জন্য লড়াই শুরু হল। কিন্তু বিবাদ নিয়ে চলা যায় না। নিজেদের মধ্যে মতের অমিল দেখা গেল। তাই বিবাদ মেটানাের জন্য এল নিয়ম বা নিয়মের শাসন। ধীরে ধীরে সভ্য মানুষের নানা জিনিসের চাহিদা বাড়ল। প্রয়ােজনমতাে সব জিনিস কোনাে একজন মানুষ তৈরি করতে পারে না। তাই প্রথমে জিনিসের বিনিময়ে জিনিস নেওয়া হল। পরে এল সেকালের মুদ্রা। তার ফলে জিনিস কেনাবেচা করা সহজ হল। সেই থেকে মানুষ জোট বাঁধতে শুরু করেছিল। পরে তৈরি করল সমাজ। সমাজে নানা ধরনের মানুষ নানা কাজ নিয়ে থাকত। কাজের বিচারে মানুষের মধ্যে ভাগ সৃষ্টি হল। ক্রমে মানুষ লিখতে শিখল। তার প্রয়ােজনে লিপি বা বর্ণ এল। এইভাবে ধীরে ধীরে নগর ও গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল সভ্যতা।
১২.. প্রস্তর যুগের মানুষের আত্মরক্ষার মাধ্যম কী ছিল?
উত্তরঃ প্রস্তর যুগে দলবদ্ধতাই ছিল মানুষের আত্মরক্ষার প্রথম ও প্রধান উপায়। এছাড়াও, দলবদ্ধ শ্রম ও বুদ্ধি ব্যবহার করে মানুষ আত্মরক্ষার জন্য নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরি করেছিল।
(১) প্রাচীন প্রস্তর যুগের গােড়ার দিকে : এই যুগে গাছের ডাল, ছুড়ে মারবার পাথর, কিছু অপেক্ষাকৃত ধারালাে পাথরের টুকরাে ইত্যাদি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে আগুনের ব্যবহার শেখার পর মানুষ আত্মরক্ষার জন্য আগুনকে ব্যবহার করতে শিখেছিল। (২) প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষের দিকে : এই সময় পাথরের তৈরি বল্লম ও ছুরির ব্যবহার চালু হয়। মানুষ আরও দক্ষতার সঙ্গে আগুনের ব্যবহার শেখে। প্রায় ষাট হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম তির ধনুকের ব্যবহার শেখে।। (৩) মধ্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে হাতিয়ারের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য বাড়ে এবং নানান ধরনের ছুরি, সড়কি ও তির ধনুকের ব্যবহারে মানুষ পটু হয়ে ওঠে। (৪) নব্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে নতুন কোনাে আত্মরক্ষার হাতিয়ার তৈরি না হলেও, আগের যুগের হাতিয়ারগুলিই আরও উন্নত হয়।
উত্তরঃ প্রস্তর যুগে দলবদ্ধতাই ছিল মানুষের আত্মরক্ষার প্রথম ও প্রধান উপায়। এছাড়াও, দলবদ্ধ শ্রম ও বুদ্ধি ব্যবহার করে মানুষ আত্মরক্ষার জন্য নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরি করেছিল।
(১) প্রাচীন প্রস্তর যুগের গােড়ার দিকে : এই যুগে গাছের ডাল, ছুড়ে মারবার পাথর, কিছু অপেক্ষাকৃত ধারালাে পাথরের টুকরাে ইত্যাদি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। তবে আগুনের ব্যবহার শেখার পর মানুষ আত্মরক্ষার জন্য আগুনকে ব্যবহার করতে শিখেছিল। (২) প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষের দিকে : এই সময় পাথরের তৈরি বল্লম ও ছুরির ব্যবহার চালু হয়। মানুষ আরও দক্ষতার সঙ্গে আগুনের ব্যবহার শেখে। প্রায় ষাট হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম তির ধনুকের ব্যবহার শেখে।। (৩) মধ্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে হাতিয়ারের সংখ্যা ও বৈচিত্র্য বাড়ে এবং নানান ধরনের ছুরি, সড়কি ও তির ধনুকের ব্যবহারে মানুষ পটু হয়ে ওঠে। (৪) নব্য প্রস্তর যুগ : এই যুগে নতুন কোনাে আত্মরক্ষার হাতিয়ার তৈরি না হলেও, আগের যুগের হাতিয়ারগুলিই আরও উন্নত হয়।
১৩. কীভাবে নতুন পাথরের যুগে উন্নত সমাজের সৃষ্টি হলাে।
উত্তরঃ নিজের বুদ্ধি আর পরিশ্রমের জোরে মানুষ বদল ঘটিয়েছে। ধীরে ধীরে আদিম মানুষ সভ্য হয়েছে। নতুন পাথরের যুগে চাষের কাজে ব্যস্ত মানুষের দরকার হল স্থায়ী বসতবাড়ি ও চাষের জমি। চায়ের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির
চাহিদা বাড়তে থাকে। যে যার জঙ্গল সাফ করে চাষের জমি বার করে নিতে থাকে। যার যত জমি তার তত ফসল। এভাবে জমির জন্য লড়াই শুরু হল। কিন্তু বিবাদ নিয়ে চলা যায় না। নিজেদের মধ্যে মতের অমিল দেখা গেল। তাই বিবাদ মেটানাের জন্য এল নিয়ম বা নিয়মের শাসন। ধীরে ধীরে সভ্য মানুষের নানা জিনিসের চাহিদা বাড়ল। প্রয়ােজনমতাে সব জিনিস কোনাে একজন মানুষ তৈরি করতে পারে না। তাই প্রথমে জিনিসের বিনিময়ে জিনিস নেওয়া হল। পরে এল সেকালের মুদ্রা। তার ফলে জিনিস কেনাবেচা করা সহজ হল। সেই থেকে মানুষ জোট বাঁধতে শুরু করেছিল। পরে তৈরি করল সমাজ। সমাজে নানা ধরনের মানুষ নানা কাজ নিয়ে থাকত। কাজের বিচারে মানুষের মধ্যে ভাগ সৃষ্টি হল। ক্রমে মানুষ লিখতে শিখল। তার প্রয়ােজনে লিপি বা বর্ণ এল। এইভাবে ধীরে ধীরে নগর ও গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল সভ্যতা।
১. আদিম মানুষের হদিশ কোথায় কোথায় পাওয়া গেছে?
উত্তরঃ পৃথিবীর আদিমতম মানুষ হােমাে হাবিলিস এবং তার প্রাক-মানব পূর্বপুরুষদের। হদিশ পাওয়া গেছে আফ্রিকাতে। হােমাে হ্যাবিলিসের বংশধরদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হােমাে ইরেকটাস প্রজাতি। এরা পৃথিবীর বিভিন্ন কোণে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রজাতির বিভিন্ন গােষ্ঠীর নিদর্শন পাওয়া গেছে এশিয়া এবং ইউরােপের বিভিন্ন জায়গায়।
২. আদি মানবের পৃথক নামকরণগুলি কী কী?
উত্তরঃ এপ থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর আদিমত মানব প্রজাতি হল হােমাে হাবিলিস। এর পরে এসেছে হােমাে ইরেকটাস। এরপর এর একটি গােষ্ঠী ইন্দেনেশিয়ার পিথেকানথ্রপাস ইরেকটাস। আর এক প্রজাতি হল হােমাে হাইডেলবার্গেনসিস এবং সর্বশেষ হল হােমাে স্যাপিয়েন্স।
৩. হােমমা ইরেকটাস কারা?
উত্তরঃ পৃথিবীর আদিমতম মানুষ হােমাে হ্যাবিলিসের বংশধর হল হােমাে ইরেকটাস। এরা দুপায়ে, সােজা হয়ে দাঁড়াতে পারত। ফলে তারা না ঝুঁকে হাঁটতে পারত এরা শিকার করতে পারত ও আগুনের ব্যবহারও শিখেছিল।
৪. আদিমতম মানুষ কেমন ছিল?
উত্তরঃ হােমাে হ্যাবিলিস হল আদিমতম মানুষ তাদের হাত ছিল লম্বা এবং মেরুদণ্ড ছিল বাঁকা ফলে তারা সামনে ঝুঁকে চলত। এরা ফলমূল খেত ও কাঁচা মাংস খেত এরাই প্রথম পাথরকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করত।
৫. পুরােনাে পথরের যুগ বলতে কী বােঝাে?
উত্তরঃ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০ লক্ষ বছর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০ হাজার বছর পর্যন্ত পুরােনাে পাথরের যুগ ছিল। এইসময় মানুষ ভারী পাথরের, এবড়ােখেবড়াে হাতিয়ার ব্যবহার করত। শিকার করে ও বনের ফলমূল জোগাড় করে খেত।
উত্তরঃ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০ লক্ষ বছর থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০ হাজার বছর পর্যন্ত পুরােনাে পাথরের যুগ ছিল। এইসময় মানুষ ভারী পাথরের, এবড়ােখেবড়াে হাতিয়ার ব্যবহার করত। শিকার করে ও বনের ফলমূল জোগাড় করে খেত।
৬. মানুষ কীভাবে আগুনের ব্যবহার শিখেছিল?
উত্তরঃ বনে জ্বলে ওঠা দাবানল থেকে আগুন নিয়ে জ্বালিয়ে রেখে দিত। নিভতে দিত না। এরপর হঠাৎ একদিন আদিম মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছিল। পাথরের হাতিয়ার তৈরি করতে গিয়ে চকমকি জাতীয় পাথরের ঠোকাঠুকিতে হঠাৎ আগুন ওঠে। অথবা কাঠে কাঠ ঘষে আগুন জ্বালিয়ে ছিল।
৭. মাঝের পাথরের যুগ বলতে কী বােঝাে?
উত্তরঃ প্রস্তর যুগকে প্রাচীন, মধ্য ও নব্য এই তিন প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগ বা মাঝের পাথরের যুগ হল পুরােনাে ও নতুন পাথরের এই দুই-যুগের মাঝামাঝি সময়। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১০ হাজার থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৮ হাজার বছর আগে মাঝের পাথরের যুগ ছিল।
৮. মাঝের পাথরের যুগে মানুষের জীবনযাত্রা কীরকম ছিল?
উত্তরঃ এই যুগে মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে ছােটো ছােটো বসতি গড়ে তােলে। হাতিয়ার হিসাবে পাথরের কোণের অংশ ভেঙ্গে ছােটো ছােটো ধারালাে অস্ত্র তৈরি করত। শিকার করত, বনের ফলমূল জোগাড় করত ও পাশাপাশি এরা পশুপালনও শুরু করে।
৯. নতুন পাথরের যুগ বলতে কী বােঝাে?
উত্তরঃ পাথরের যুগের একেবারে শেষ পর্যায়কে বলা হয় নতুন পাথরের যুগ। এই যুগের পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৮ হাজার থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪ হাজার বছর আগের সময় ছিল নতুন পাথরের যুগ।
১০. নতুন পাথরের যুগে মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?
উত্তরঃ মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে একটা অঞলে স্থায়ী বসতি গড়ে তােলে। চাষ করতে শুরু করে এবং চাষের জমির আশপাশে বসত বাড়ি গড়ে তােলে। হাতিয়ার অনেক হালকা ও ধারালাে হয়। পশুপালন বৃদ্ধি পায়। মাটির পাত্র বানানাে শুরু করে।
১১. আদিম মানুষ নব্য প্রস্তর যুগে নতুন যা যা দক্ষতা অর্জন করেছিল, তার যে কোনাে দুটির উল্লেখ করাে।
উত্তরঃ নতুন পাথরের যুগে বা নব্য প্রস্তর যুগে আদিম মানুষ বেশ কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছিল। তার মধ্যে দুটি উল্লেখযােগ্য বিষয় হল—চাষবাস ও পশুপালন।
১২. লুসি কে?
উত্তরঃ আফ্রিকা মহাদেশের ইথিওপিয়ার হাদার নামে একটা জায়গা আছে। সেখানে ১৯৭৪ সালে একট অস্ট্রালােপিথেকসের কঙ্কালের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। কঙ্কালটি প্রায় ৩২ লক্ষ বছর আগের একটি ছােট্ট মেয়ের। কঙ্কালটির নাম দেওয়া হয়েছিল লুসি।
১৩. ভারতীয় উপমহাদেশের কোথায় কোথায় পুরােনাে পাথরের অস্ত্র পাওয়া গেছে।
উত্তরঃ ভারতীয় উপমহাদেশের সব থেকে পুরােনাে পাথরের অস্ত্র পাওয়া গেছে কাশ্মীরের সােয়ান উপত্যকায়। পাকিস্তানের পটোয়ার মালভূমিতে ও হিমাচল প্রদেশের শিবালিক পর্বত অঞলেও পুরােনাে পাথরের হাতিয়ার পাওয়া গেছে।
১৪. আদিম মানুষের জীবন কেমন ছিল?
উত্তরঃ আদিম মানুষের জীবন ছিল বেশ কঠিন ও কষ্টের। দলবেঁধে তারা পশু শিকার করত। মিলেমিশে খাবার ভাগ করে খেত। প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে পশুর চামড়া, গাছের ছাল পরত। হঠাৎ হিংস্র প্রাণীর মুখােমুখি পড়ে গিয়ে প্রাণ হারানাে ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা, চাষ না জানার দরুণ খাদ্য নিরাপত্তার অভাব ছিল।
১৫. মাঝের পাথরের যুগের অস্ত্রগুলাে কীরকম ছিল?
উত্তরঃ মাঝের পাথরের যুগে হাতিয়ারগুলাে অনেক বেশি ধারালাে ও ছােটো হয়। তাই সেগুলােকে ছােটো পাথরের হাতিয়ার বলা হয়। মাঝের পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলি গাছের ডালের সঙ্গে জুড়ে বা গেঁথে নেওয়া হত। ফলে হাতিয়ার ধরতে সুবিধা হত।
১৬. নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ দলবদ্ধভাবে কী কী কাজ করত?
উত্তরঃ নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ হাতিয়ার তৈরি, জমিতে ফসল ফলানাে, পশুপালন, পােশাক তৈরি, বাড়িঘর তৈরি ইত্যাদি অধিকাংশ কাজই দলবদ্ধভাবে করত এবং উৎপন্ন দ্রব্যাদি সকলে মিলেমিশে ভােগ করত।
১৭. ‘চাষবাস’ কথাটি কেন ব্যবহৃত হয়?
উত্তরঃ মানুষ প্রথমে যাযাবর ছিল। ধীরে ধীরে যখন মানুষ কৃষিকাজ শিখল তখন তারা কৃষি অঞলেই স্থায়ী বসতি বানিয়ে থাকতে শুরু করে। চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা বা বাস। তাই চাষবাস কথার মধ্য দিয়ে খেতের পাশে বসতি বানানাের গুরুত্ব বোঝা যায়।
১৮. আগুনের ব্যবহার কীভাবে আদিম মানবের জীবনে পরিবর্তন আনে?
উত্তরঃ আগুনের ব্যবহার আদিম মানবের জীবনে উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন আনে। যেমন, গুহাবাসী আদিম মানব রাত্রে গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে রেখে বন্যজন্তুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে শেখে। এছাড়াও তারা জীবজন্তুর কাঁচামাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে খেতে শেখে।
১৯. হুন্সগি উপত্যকার গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ কর্ণাটকের গুলবর্গা জেলার উত্তর-পশ্চিমে এই উপত্যকায় ইসামপুর গ্রাম অবস্থিত। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে মাটি খুঁড়ে সেখানে পুরােনাে পাথরের যুগের হাতিয়ার পাওয়া গেছে। হাত কুড়ুল, ছােরা, চাঁছুনি জাতীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। অনেকের মতে হুন্সগিতে পাথরের হাতিয়ার তৈরি হত।
২০. অস্ট্রালােপিথেকাস কারা?
উত্তরঃ আনুমানিক ৪০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগে এক ধরনের বড়াে বানর
জঙ্গলে ঘুরে বেড়াত। এদের লেজ ছিল না। এরা দুপায়ে ভর দিয়ে কোনােক্রমে
দাঁড়াতে পারত। শক্ত বাদাম, শুকনাে ফল চিবিয়ে খেত ফলে চোয়াল ছিল শক্ত ও
সুগঠিত। এরপর ধীরে ধীরে আরও উন্নত হয়। এদের অস্ট্রালােপিথেকাস বলা হয়।
২১. বাগােড়ের গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ রাজস্থানের বাগােড়ে আদিম মানুষের বসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাগােড়ের বাসিন্দারা শিকার করেই খাবার জোটাত। বাগােড়ে অনেক পশুর হাড় পাওয়া যায়। সেগুলাে থেকে অনুমান করা যায় গৃহপালিত পশুর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তারা গৃহপালিত পশুর গুরুত্ব বুঝতে পারে।
২২. মানুষ কেন প্রাকৃতিক শক্তিকে পুজো করত?
উত্তরঃ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সামনে আদিম মানুষ ছিল একান্ত অসহায়। তারা কল্পনা করে নিত যে প্রাকৃতিক শক্তিগুলি চেতনা ও অনুভূতি আছে এবং তারা কোনাে কারণে রুষ্ট হলে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়। তাই প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আদিম মানুষ প্রাকৃতিক শক্তিকে পুজো করত।
২৩. হােমা স্যাপিয়েন্স কারা?
উত্তরঃ বুদ্ধিমান মানুষ যারা দল বেঁধে বড়াে পশু শিকার করত। আগুন ব্যবহার করে পশুর মাংস পুড়িয়ে খেত। পশুর চামড়া পরত। ছােট তীক্ষ্ণ ও ধারালাে পাথরের অস্ত্র তৈরি করত। তঁদের হােমাে স্যাপিয়েন্স বল হত। আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজার বছর এরা এসেছিল।
⏏ এক কথায় উত্তর দাও :
১. আদিম মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু কী ছিল?
উত্তরঃ কুকুর।
২. আদিম মানুষের খোঁজ কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তরঃ পূর্ব আফ্রিকাতে।
৩. অস্ট্রালােপিথেকাস আনুমানিক কত বছর আগেকার?
উত্তরঃ আনুমানিক ৪০ লক্ষ থেকে ৩০
লক্ষ বছর আগে।
৪. সবচেয়ে আদিমতম মানুষ প্রজাতি কোনটি?
উত্তরঃ হােমাে হাবিলিস।
৫. হােমাে হাবিলিস-এর বংশধর কারা?
উত্তরঃ হােমাে ইরেকটাস।
৬. মানুষ হাতিয়ার তৈরি করেছিল কেন?
উত্তরঃ আত্মরক্ষা ও খাদ্য
সংগ্রহের জন্য।
৭. আদিম মানুষের প্রথম বাসস্থান কোথায় ছিল?
উত্তরঃ পাহাড়ের গুহায়।
৮. প্রকৃতির ধীর পরিবর্তনের ধারাকে কী বলে?
উত্তরঃ বিবর্তন।
৯. কোথায় কোথায় পুরােনাে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া যায়?
উত্তরঃ আফ্রিকা, চিন,
জাভা।
১০. ট্যারাে-ট্যরাে কথার অর্থ কী?
উত্তরঃ ট্যারাে কথার অর্থ হল
ষাঁড়।
১১. আদিম মানবের প্রথম মাথার খুলিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
উত্তরঃ ১৯২৯
খ্রিস্টাব্দে।
Related Tags : আদিম মানুষ প্রথম কৃষিকাজ শেখে কোন যুগে,আদিম মানুষ যাযাবর ছিল কেন,আদিম মানুষের নানারকম,আগুন জ্বালাতে শেখার পর আদিম মানুষ কি কি সুবিধা হয়েছিল,আদিম মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করত কেন
No comments
Hi Welcome ....