Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

B.A 2nd Semester History Notes Mark-5 in Bengali Version | Gour Banga University

 

History Of India 6th Century BC-Post Maurya | B.A 2nd Semester History Notes Question And Answer


৫ মার্কের ইতিহাস নোটস প্রশ্নের সূচিপত্র :
  1. বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য অশোকের গৃহীত ব্যবস্থা কি ছিল?
  2. দ্বিতীয় অশোক।
  3. নাগার্জুন
  4. অগ্রহার কি?
  5. কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কি ছিল?
  6. মধ্যপন্থা কি?
  7. শকাব্দ বলতে কি বুঝ?
  8. গান্ধার শিল্প রীতি ও মথুরা শিল্প রীতি বলতে কি বুঝ?
  9. সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত সীল গুলির বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
  10. বৰ্ণ প্ৰথা কি?
  11. মিলিন্দ পনহো কি?
  12. ভারতকে কে নৃতত্বের যাদুঘর বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন?
  13. বৃজিগণ রাজ্য সম্পর্কে একটি টীকা লেখ?
  14. অশোকের ধর্ম বিজয় বলতে তুমি কি বোঝ?
  15. রুদ্রদামন সম্পর্কে কি জান?
  16. কুষাণ যুগের ইতিহাসের প্রধান উপাদান গুলি কি কি?
  17. বৌদ্ধ ধর্মে হীনযান ও মহাযান মতের মধ্যে মূল পার্থক্য গুলি কি ছিল?
  18. কণিষ্কের রাজ্য সীমা সম্পর্কে কি জান?
  19. পুষ্যমিত্র গুঙ্গের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে কি জান?
  20. মৌর্য যুগের ইতিহাস রচনার মূল উপাদানগুলি কি কি?
  21. কৌটিল্য বা চাণক্য সম্পর্কে একটি টীকা লিখ?
  22. মৌর্য সাম্রাজ্য ‘রাজুক’দের কর্তব্য কি ছিল?
  23. দণ্ডসমতা ও ব্যবহার সমতা কি?
  24. মৌর্য শাসন ব্যবস্থার রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান উৎসগুলি কি ছিল?
  25. মৌর্য আমলে পৌর শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কি ছিল?
  26. অশোকের লেখগুলির শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর। এগুলিতে কি ভাষা ও লিপি ব্যবহৃত হয়েছে?
  27. শুঙ্গ যুগে কোন ব্যাকরণবিদের আবির্ভাব হয়? তাঁর কাছ থেকে আমরা কি জানতে পারি?
  28. ইন্দোব্যাকট্রিয়ান কারা? তাদের মধ্যে বিখ্যাত শাসকের নাম কি?
  29. হোলিওডরাস কে? তিনি কোন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন?
  30. গণ্ডোফারনিস কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে কি জান?
  31. চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতী কে আহ্বান করেছিলেন? এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য কি?
  32. কুষাণ যুগে বিকশিত চারটি শিল্পরীতি সম্বন্ধে কি জান?
  33. টীকা: কলিঙ্গ রাজ খারবেল।
  34. মেগাস্থিনিস কে ছিলেন? ভারত সম্পর্কে তাঁর মূখ্য পর্ববেক্ষণ কি ছিল?
  35. এলাহাবাদ প্রশস্তির ঐতিহাসিক মূল্য বিচার করো।
  36. গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির উপর একটি টিকা লিখ?
  37. হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের মূল উপাদানগুলি কি কি?
  38. প্রাচীন ভারতের কোন সময়কে রাজপুত যুগ বলা হয়?
  39. সংক্ষিপ্ত টিকা লিখ : আর্যভট্ট ও শুশ্রুত সংহিতা।
  40. ত্রিশক্তি সংগ্রাম বলতে কি বুঝ?
  41. চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে? তাঁর রাজত্বকালের মূল ঐতিহাসিক উপাদানগুলি কি?
  42. পল্লব বংশের চারজন গুরুত্বপূর্ণ শাসকের নামোল্লেখ করো।
  43. শশাংক কে? তাঁর কৃতিত্ব কি?
  44. গুপ্তদের উত্থানের পূর্বে উত্তর ভারতের প্রধান রাজ্যের নামোল্লেখ করো।
  45. রামগুপ্ত সম্পর্কে কি জান?
  46. মাৎসন্যায় বলতে কি বুঝ?
  47. পল্লব স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
Q1. বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য অশোকের গৃহীত ব্যবস্থা কি ছিল?
উঃ কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক বৌদ্ধগুরু উপগুপ্তের নিকট বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য তিনি কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন—(১) ধর্মমহামাত্র, স্ত্রী ধর্মমহামাত্র, রাজুক, যুত প্রভৃতি কর্মচারী নিয়োগ; (২) সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ও বিহারযাত্রার পরিবর্তে ধর্মযাত্রা নীতির প্রয়োগ; (৩) প্রতিবেশী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বিদেশে যেমন চীন, তিব্বত, সিংহল
প্রভৃতি দেশে ধর্ম প্রচারের ব্যবস্তা করা; (৪) রাজধানী পাটলিপুত্রে তৃতীয় বৌদ্ধ সংগীতি আয়োজন করে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনার ব্যবস্থা করা।

Q2. দ্বিতীয় অশোক?
উঃ ইতিহাসে কুষাণ সম্রাট কণিঙ্ককে ‘দ্বিতীয় অশোক’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে। তাঁর রাজত্বকালে তাঁর কার্যকলাপ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যবলী বৌদ্ধধর্মের প্রতি তাঁর অনুরাগ প্রভৃতি বিবেচনা করে ঐতিহাসিকগণ তাঁকে মৌর্য সম্রাট অশোকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অশোকের মতন তিনিও ভারতে বৌদ্ধধর্মের প্রচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ভারতের বাইরে চিন, জাপান, মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৌদ্ধ প্রচারে সচেষ্ট হন। বৌদ্ধধর্মের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিতর্কের পর্যালোচনার জন্য তাঁর শাসনকালে কাশ্মীর বা জলন্ধরে চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতি বা মহাসম্মেলন আহুত হয়।
Q3. নাগার্জুন
উঃ মৌর্য পরবর্তী যুগের একজন বিশিষ্ট দার্শনিক ছিলেন নাগার্জুন। তিনি দক্ষিণ ভারতের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তবে পরে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি মহাযান বৌদ্ধধর্মের মূল তত্ত্বগুলি রচনা করেন। বৌদ্ধ ধর্ম শাস্ত্র রচনায় তাঁর কৃতিত্ব সর্বজন স্বীকৃত। ‘মাধ্যমিক সুত্র’ নামক দার্শনিক তত্ত্ব গ্রন্থ তাঁরই রচনা। ‘শত সাহস্রিকা’, ‘প্রজ্ঞা পারমিতা’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি রচনা করে তিনি তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর রাখেন।

Q4. অগ্রহার কি?
উঃ গুপ্তযুগে ভূমিদান ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল অগ্রহার ব্যবস্থা। গুপ্তযুগের বিভিন্ন তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে সে যুগে ব্রাহ্মণ বা মন্দিরকে বা বৌদ্ধবিহারকে জমি দান করার রীতি ছিল। এই দান রীতিকে বলা হত অগ্রহার ভূমিদান, এর ফলে প্রাপক স্থায়ী ভাবে জমি লাভ করত। তবে জমিগুলিতে রাজস্বের হার কি ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। অপরদিকে কালক্রমে ঐ সকল জমির উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়, কারণ আইনত গ্রহীতার মৃত্যুর পর রাজা সেই জমি ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকারী হলেও অগ্রহার জমি গ্রহীতার পরিবার বংশানুক্রমিক ভাবে সেই জমি ভোগ করত। এর ফলে পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্যে আঞ্চলিকতা দেখা দেয়।

Q5. কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কি ছিল?
উঃ মৌর্যযুগের শাসন ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সূত্র কৌটিল্য বা চানক্য রচিত ‘অর্থশাস্ত্র'। মৌর্যযুগের রাজস্ব ব্যবস্থা, রাজকর্তব্য, সমাজ ব্যবস্থা, গুপ্তচর ব্যবস্থা এমনকি নারীদের সম্পর্কেও বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে এই গ্রন্থে। আধুনিক গবেষণায় ‘অর্থশাস্ত্র’ একজনের রচনা নয় বলে মন্তব্য করা হলেও গ্রন্থটি যে প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পৰ্কীয় একখানি মূল্যবান গ্রন্থ সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

Q6.মধ্যপন্থা কি?
উঃ বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ মানুষের আসক্তি বিনাশের জন্য আটটি পথের কথা বলেছেন যা ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গ’ নামে পরিচিত। এই অষ্টাঙ্গিক মার্গ হলো মধ্যপন্থা বা ‘মঝঝিম পন্থা’। তাঁর মতে হিন্দুদের যাগযজ্ঞ উৎসব অনুষ্ঠান ও জৈনদের চরম কৃচ্ছ্র সাধন কোনটির দ্বারাই দুঃখের হাত থেকে মানুষের পরিত্রান সম্ভব নয়। সাংসারিক মানুষের নির্বান লাভের জন্য বুদ্ধদেব ‘মধ্যপন্থা’ অনুসরণের কথা বলেন।

Q7. শকাব্দ বলতে কি বুঝ?
উঃ কণিষ্ক তাঁর রাজ্য আহোরণ উপলক্ষ্যে একনি নতুন অব্দের প্রচলন করেন। টম্যাস র‍্যাপসন, বতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ঐতিহাসিকগণ বলেন ৭৮ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসন আহোরণ করে কণিষ্ক নতুন অব্দের প্রবর্তন করেন। তবে এই নামকরণ নিয়ে অনেকের মধ্যে মতভেদ আছে। কারণ কণিষ্ক শক ছিলেন না। উল্লেখ করা যায় অব্দটি প্রথমে শকাব্দ নামে প্রচলিত
ছিল না। প্রকৃত পক্ষে পশ্চিম ভারতের শক ক্ষত্রপরা কুষাণ দের সাথে আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে শব্দটি ব্যবহার করেন। তাই খ্রীষ্টীয় পঞ্চম শতক থেকে বিভিন্ন লিপিতে শকাব্দ কথাটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

Q8. গান্ধার শিল্প রীতি ও মথুরা শিল্প রীতি বলতে কি বুঝ?
উঃ মৌর্য পরবর্তী যুগে বিশেষ করে কুষাণদের পৃষ্ঠ পোষকতায় স্থাপত্য ও ভাষ্কর্য শিল্পের অভূত পূর্ব বিকাশ ঘটে। গান্ধার শিল্প রীতিতে ভারতের গ্রীক ও রোমান শিল্পরীতির সংমিশ্রনে নতুন শিল্প রীতির বিকাশ ঘটে। এই রীতির বিশেষ বৈশিষ্ট্যই ছিল যে মানুষের যথার্থ প্রতিকৃতি নির্মাণ করার কৌশল। মথুরা শিল্পরীতিতে বেলে পাথরের উপর খোদাই করে প্রতিকৃতি নির্মাণের কাজ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

Q9. সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত সীল গুলির বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
উঃ সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত সীল গুলি এই যুগের বৈশিষ্ট্য জনার এক উল্লেখযোগ্য উপাদান। পোড়ামাটি, তামা ও ব্রোঞ্জ নির্মিত বহু সীল মোহর আবিষ্কৃত হয়েছে। ঠিক কি কারণে এগুলি ব্যবহৃত হতো তা দিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। তাঁদের অনুমান প্রধানতঃ ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যই এগুলি তৈরী হয়েছিল। সীলে প্রদত্ত প্রাণী ও জলযানের ছবি দেখে ধারণা
করা হয় সিন্ধুর অধিবাসীরা ঐ সব প্রাণী ও জলযানের সাথে পরিচিত ছিল।
Q10. বর্ণ প্রথা কি?
উঃ বৈদিক সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল বর্ণপ্রথা। আর্যদের ভারতে বসতিস্থাপনের পর গুণ, কর্মের বিভিন্নতা অনুসারে আর্য সমাজে নতুন শ্রেণী বিন্যাস যা বর্ণ প্রথা নামে পরিচিত,দেখা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আর্য সমাজ চারভাগে বিভক্ত হয়। যারা যাগ-যজ্ঞ, পূজা, বিদ্যাচর্চা করতেন তারা ছিলেন ব্রাহ্মণ। দেশ ও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন ক্ষত্রিয়গণ, বৈশারা করতেন ব্যবসাবাণিজ্য ও পশুপালন এবং অনার্য শুদ্ররা ছিল অপর তিন বর্ণের অধীন ও সেবক।

Q11. মিলিন্দ পনহো কি?
উঃ বৌদ্ধ পণ্ডিত নাগসেন রচিত একটি গ্রন্থ ‘মিলেন্দপনহো। বাত্নিক রাজ মিনান্দার বৌদ্ধধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভিক্ষু নাগসেনের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। মিনান্দার নাগসেনকে কতগুলি প্রশ্ন করেছিলেন এবং নাগসেন সেগুলির উত্তর দেন। প্রশ্ন-উত্তরের পর্বটি বইয়ের আকার নেয়। বইটি পলি ভাষায় রচিত। মিলিন্দ পানহো কথাটির অর্থ ‘মিলিন্দের প্রশ্ন’, মিনান্দারের অন্যতম নাম ছিল মিলিন্দ।

Q12. ভারতকে কে নৃতত্ত্বের যাদুঘর বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন?
উঃ  প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতকে “নৃতত্ত্বের যাদুঘর” বলেছেন। আবহমান কাল ধরে ভারতের বুকে বহু জাতি গোষ্ঠীর আগমন ঘটেছে। দ্রাবিড় জাতি ভারতে গড়ে তোলে এক উন্নত সভ্যতা। পরবর্তীতে ঘটেছে আর্য, পারসিক, গ্রীক, শক, কুষাণ, হুণ, তুর্কি, আফগান, মোঘল - আরো পড়ে এসেছে পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, দিনেমার, ফরাসী, ইংরেজ প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতি। এর ফলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির আদান প্রদান এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারতে গড়ে উঠেছে ভারতীয় মহাজাতি—যা “মহামানবের সাগরতীর”।

Q13. বৃজিগণ রাজ্য সম্পর্কে একটি টীকা লেখ?
উঃ বর্তমান উত্তর বিহারের মজঃফর পুরের নিকটবর্তী অঞ্চলে গঙ্গানদীর উত্তরে বৃজি বা বজ্জিগণ রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। ষোড়শ মহাজন পদগুলির মধ্যে একমাত্র এটিই ছিল গণতন্ত্র সম্মত শক্তিশালী রাষ্ট্র। আটটি উপজাতী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে বৃজিগণ রাজ্যটি গঠিত ছিল। এই আটটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল লিচ্ছবি, জ্ঞাতক, বাজ্জি, বিদেহ প্রভৃতি। বৈশালী ছিল এই
রাজ্যের রাজধানী, মগধের সঙ্গে এই রাজ্যের নিরন্তর সংগ্রাম চলত।

Q14. অশোকের ধর্ম বিজয় বলতে তুমি কি বোঝ?
উঃ কলঙ্গি যুদ্ধের পৈশাচিক দৃশ্য অশোকের মনে এক বিরাট পরিবর্তন সূচিত করে। তাঁর আভ্যন্তরীন ও পররাষ্ট্র নীতিতেও এই পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছিল। কলিঙ্গ প্রস্তর লিপিতে তিনি প্রতিবেশী রাজ্যের শাসকদের অভয় দান করেন যে তিনি আর সামরিক বিজয় করবেন না। তিনি দিগ্বিজয় নীতি পরিত্যাগ করে ধর্মবিজয় নীতি গ্রহণ করে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মিত্রতা অর্জনে তৎপর হন।

Q15. রুদ্রদামন সম্পর্কে কি জান?
উঃ কর্দমক বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা রুদ্রদমন ১৩০ খ্রীঃ- ১৫০ খ্রীঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি ছিলেন চষ্টনের পৌত্র। জুনাগড় লিপি থেকে তাঁর কীর্তি কাহিনী জানা যায়। আন্ধাউ লেখ থেকে ও তাঁর সম্পর্কে জানা যায়। সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী শক অধিকৃত সে সকল অঞ্চল দখন করেছিলেন তিনি সেগুলি পুনরুদ্ধার করেন। এরপর তিনি ‘মহক্ষত্রপ’
উপাধি ধারণ করেন। মালাবার, কাথিয়াবার, উত্তর-কংকন, গুজরাট, মাড়বার, সিন্ধু উপত্যকা তাঁর সাম্রাজ্যভূক্তছিল। সাতবাহন বংশের সাথে পরবর্তীতে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী শাসক। তিনি সুদর্শন হ্রদের সংস্কার সাধন করেন।

Q16. কুষাণ যুগের ইতিহাসের প্রধান উপাদান গুলি কি কি?
উঃ কুষাণ যুগের ইতিহাস রচনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপাদান চৈনিক ঐতিহাসিকদের রচনা। পান-কু রচিত ‘প্রথম হান বংশের ইতিহাস' যা-তোয়ান-লিন রচিত বিশ্বকোষ, কলহনের রাজতরঙ্গিনী, অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরতি’ নাগার্জুনের ‘মধ্যমিকা সূত্র’ এছাড়াও জাস্টিন, স্ট্র্যাবো প্রমুখদের রচনা ইত্যাদি সাহিত্য উপাদান থেকে কুষাণযুগের ইতিহাস জানা যায়। কুষাণ যুগের মুদ্রা, ব্রাহ্মী ও খরোষ্টী লিপিতে উৎকীর্ণ কিছু শিলালিপি ও কুষাণ যুগের ইতিহাস রচনার উল্লেখযোগ্য উপাদান।

Q17. বৌদ্ধ ধর্মে হীনযান ও মহাযান মতের মধ্যে মূল পার্থক্য গুলি কি ছিল?
উঃ বুদ্ধের পরিনির্মাণের একশত বছরের মধ্যে বৌদ্ধদের মধ্যে বহু সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘হীনযান’ ও ‘মহায়ান’ হীনযান মতাবলম্বীরা নিজের নির্বাণ লাভ ও অহিংসার জন্য সাধনা করাকে পরম ব্রত বলে মনে করে, কিন্তু মহাযান মতাবলম্বীরা সাধনা করাকে পরমব্রত মনে করেন না। হীনযানরা বুদ্ধের নিরাকার উপাসনায় বিশ্বাসী, অপর দিকে মহাযানরা বুদ্ধদেব ও বোধিসত্ত্বের এবং মূর্তি পূজা পালন করেন। মনে করা হয় বুদ্ধের বাণী সহজ ও সরল করে তোলার জন্যই মহাযান মরবাদের উন্মেষ।
Q18. কণিষ্কের রাজ্য সীমা সম্পর্কে কি জান?
উঃ বিভিন্ন উপাদান থেকে কণিষ্কের রাজ্য সীমা সম্পর্কে জানা যায়। ভারতে কণিষ্কের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে সাঁচী এবং পূর্বে বারানসী থেকে পশ্চিমে সিন্ধু নদ পর্যন্ত। বাংলা এবং বিহারে তাঁর মুদ্রা পাওয়া গেলেও স্থান দুটি তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। বহির্ভারতে কাশগড়, খোটান,
ইয়ারকন্দ, কাবুল, কান্দাহার, বালুচিস্তান, ব্যাকট্রিয়া প্রভৃতি অঞ্চল তাঁর সাম্রাজ্যের অধিনস্থ ছিল। পেশোবার বা পুরুষপুর ছিল তাঁর রাজধানী।

Q19.পুষ্যমিত্র শুঙ্গের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে কি জান?
উঃ পুষ্যমিত্র শুঙ্গের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। বৌদ্ধ গ্রন্থ ‘দিব্যবদান’ ও তারা নাথের গ্রন্থে তাঁকে চরম বৌদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষী বলা হয়েছে। কিন্তু ডঃ হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী এই মত স্বীকার করেন না যে পৃষ্য মিত্র শৃঙ্গ প্রচুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করেন ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের হত্যা করেন। তিনি আরো বলেন শুঙ্গ রাজত্বকালে ভারতের বৌদ্ধ নিদর্শন গুলি নির্মিত হয়েছিল। অনুমান করা যায় পুষ্যমিত্র ঙ্গ হিন্দু ব্রাহ্মণ্যধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ঠিকই, তবে তিনি কখনই পরধর্ম বিদ্বেষী ছিলেন না।

Q20.মৌর্য যুগের ইতিহাস রচনার মূল উপাদানগুলি কি কি?
উঃ মৌর্য বংশ প্রাচীন ভারতে এক বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল এবং শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে এ যুগে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। মৌর্য যুগের ইতিহাসের প্রধান সূত্র হলো চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় আগত গ্রীক রাষ্ট্রদূত মেগাস্থিনিস রচিত ‘ইণ্ডিকা’, কৌটিল্য রচিত 'অর্থশাস্ত্র’ বিশখাদত্তের ‘মুদ্ররাক্ষস’ বৌদ্ধগ্রন্থ ‘দিব্যবদান’ জ্যাস্টিন, ষ্টাবো, গ্লিনির রচনা প্রভৃতি। এছাড়াও অশোকের বিভিন্ন শিলালিপি এবং প্রথম রূদ্রদমনের গিরনার শিলালিপি প্রভৃতি।

Q21. কৌটিলা বা চাণক্য সম্পর্কে একটি টীকা লিখ।
উঃ চানক্য বা কৌটিল্য ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান পরামর্শদাতা। বালক চন্দ্রগুপ্তের মধ্যে মহৎ হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখে চাণক্য তাঁকে তক্ষশীলায় সামরিক বিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ে পারদর্শী করে তোলেন। এরপর নন্দরাজ ধননন্দের কাছে অপমানিত হওয়ার প্রতিশোধে গ্রহণ চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত অগ্রসর হন ও ধননন্দকে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠা করেন মৌর্য বংশের শাসন। চাণক্যই ‘অর্থশাস্ত্রের’ রচয়িতা বলে মনে করা হয়। এ বই থেকে মৌর্যযুগের রাজনৈতিক,
সামাজিক ইতিহাস জানা যায়।

Q22. মৌর্য সাম্রাজ্য রাজক দের কর্তব্য কি ছিল?
উঃ অশোক তাঁর তৃতীয় শিলালিপিতে ঘৃত, রাজুক, প্রাদেশিক এই তিন শ্রেণীর কর্মচারীর কথা বলেছেন। প্রাথমিক পর্বে রাজুকরা জমি জরিপ করত। তারা ছিল জমি জরিপ বিভাগের জেলাস্তরের কর্মচারী। পরে অশোক রাজুকদের ক্ষমতা বাড়িয়ে জনপদের সর্বময় কর্ত্রার পদে উন্নীত করেন। রাজুকরা জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও অন্যান্য বিরোধের মীমাংসা করত। চতুর্থ স্তম্ভ লিপিতে অশোক বলেছেন তিনি রাজুকদের শত সহস্র লোকের দায়িত্ব পালনের কাজ দিয়েছেন। বস্তুত পক্ষে রাজুকরা ছিল মৌর্য শাসন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড।

Q23. দণ্ডসমতা ও ব্যবহার সমতা কি?
উঃ মৌর্য সম্রাট মহামতি অশোক সমগ্র সাম্রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক ঐক্য আনার জন্য ‘দণ্ডসমতা’ ও ‘ব্যবহার সমতা’ নীতি প্রয়োগ করেন। চতুর্থ মূখ্য স্তম্ভ শাসনে অশোক বলেছিলেন ব্যবহার সমতা অর্থাৎ সম অপরাধের জন্য সকলের ক্ষেত্রে একই ধরনের দণ্ড দানের ব্যবস্থা থাকবে। ব্রাহ্মণদের বিশেষ অধিকার খর্ব করার জন্যই অশোক এই নীতি প্রয়োগ করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মন্তব্য করেছেন। অবশ্য ডঃ রোমিলা থাপার এই মত সমৰ্থন করেন না।

Q24.মৌর্য শাসন ব্যবস্থার রাজস্ব সংগ্রহের প্রধান উৎসগুলি কি ছিল?
উঃ মৌর্য রাজস্বের মূল উৎস ছিল ভূমিরাজস্ব। ‘বলি’ ও ‘ভাগ’ নামে দুধরনের ভূমি রাজস্ব প্রচলিত ছিল। উৎপন্ন শষ্যের এক চতুর্থাংশ রাজস্ব দিতে হতো। এছাড়াও ব্যবসা-বানিজ্য থেকে নানা ভাবে কর আদায় করা হতো। মেগাস্থিনিসের মতে / ভাগ ছিল বানিজ্যশুল্ক। জলকর, নগরগুলি থেকে শিল্পকর, বসতবাড়ির উপর কর আদায় করা হতো। অর্থশাস্ত্রে অতিরিক্ত
কর আদায়ের কথাও বলা হয়েছে। খনি, বন, মাছের ভেরি, গণিকা, এমনকি জরুরী অবস্থায় বিশেষ কর প্রচলিত ছিল।
Q25. মৌর্য আমলে পৌর শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কি ছিল?
উঃ মেগাস্থিনিসের ‘ইণ্ডিকা’ গ্রন্থ থেকে মৌর্য যুগের পৌর শাসন ব্যবস্থার বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়। পাটলিপুত্র নগর শাসনের জন্য ত্রিশ জন সদস্য নিয়ে ছয়টি সমিতি ছিল। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ জন। একটি দল একেকটি দায়িত্ব পালন করত। যেমন শিল্পের তত্বাবধান, বিদেশী আগন্তুকদের তত্ত্বাবধান, জন্ম মৃত্যুর হিসাব রক্ষা, ব্যবসা-বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ, বিক্রয় কর আদায় প্রভৃতি। 'অর্থশাস্ত্রে’ ও নগর শাসন সম্পর্কে বলা হয়েছে। বনগার্ড লেভিন মন্তব্য করেছেন মৌর্যযুগে উত্তর ভারতের অন্য নগরীতেও পৌরশাসন প্রচলিত ছিল।

Q26. অশোকের লেখগুলির শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর। এগুলিতে কি ভাষা ও লিপি ব্যবহৃত হয়েছে?
উঃ অশোকের লেখ গুলি পাওয়া গেছে পর্বতগাত্রে, স্তম্ভের উপরে কিংবা গুহার ভেতরে। এগুলি বিভিন্ন সময়ে আবিস্কৃত হয়েছে। অশোকের লেখগুলি প্রধান ও গৌন প্রস্তর মাল। এই দুই ভাগে বিভক্ত। প্রধান লেখগুলিতে বিস্তৃত বর্ণনা আছে, গৌন গুলিতে সংক্ষিপ্ত আকারে। মনে করা হয় পারস্য সম্রাট দারায়ুসের অনুকরণে অশোক তাঁর লেখ গুলি রচনা করেন।
অশোকের শিলালিপিগুলি বেশিরভাগ প্রাকৃত ভাষায় ব্রাহ্ম লিপিতে রচিত। এছাড়া অরমাইক বা খরোষ্টি লিপি ও পালি ভাষায় রচিত লিপিরও নিদর্শন আছে।

Q27. শুঙ্গ যুগে কোন ব্যাকরণবিদের আবির্ভাব হয়? তাঁর কাছ থেকে আমরা কি জানতে পারি।
উঃ বিখ্যাত ব্যাকরণবিদ্ পতঞ্জলির আবির্ভাব হয়েছিল শুঙ্গদের শাসনকালে। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম ‘মহাভাষ্য’। শুঙ্গ রাজবংশের ইতিহাসের অমূল্য উপাদান এই গ্রন্থটি। পুষ্যমিত্র শুঙ্গের জীবদ্দশায় গ্রীকরা ভারত আক্রমণ করে সকেত (অযোধ্যা) ও মধ্যমিকা (চিতোরের কাছে) পর্যন্ত যে অগ্রসর হয়েছিল তার প্রমাণ মেলে পতঞ্জলির বিবরণ থেকে। শুঙ্গযুগে সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য বিকাশের সাক্ষ্যবহন করে ‘মহাভাষ্য' গ্রন্থটি।

Q28. ইন্দোব্যাকট্রিয়ান কারা? তাদের মধ্যে বিখ্যাত শাসকের নাম কি?
উঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের ভাঙ্গনের যুগে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতে বৈদেশিক জাতি বিশেষত হিন্দুকুশের অপরপার ব্যাকট্রিয়া হতে দেশ থেকে আসেন। গ্রীক শাসক সেলুকাস প্রতিষ্ঠিত ‘বাহ্লীক’ প্রদেশ থেকে ভারতে চলে আসে। এরা ইতিহাসে ইন্দোগ্রীক নামে পরিচিত। ইন্দোগ্রীক রাজাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিলেন মিনান্দার বা মিলিন্দ। ডঃ
ভি.সি. সরকার এর মতে তিনি সম্ভবত খ্রীষ্টপূর্ব ১১৫-৯০ অব্দের মধ্যে রাজত্ব করেছিলেন।

Q29. হোলিওডরাস কে? তিনি কোন ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন?
উঃ বিদিশার (বেসনগর) শুঙ্গ রাজা কাশীপুত্র ভাগভদ্রের শিলালেখ থেকে জানা যার হেলিওডোরস ছিলেন সর্বশেষ ইন্দোগ্রীক রাজা এন্টিয়ালকিভাস এর দূত। তিনি কাশীপুত্রের রাজত্বের ১৪ বছরে তাঁর দরবারে আসেন। হেলিওডোরাস ভাগবদ্ ধর্মগ্রহণ করেন। এই ঘটনা থেকে ইন্দো-গ্রীকদের উপর ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায়। হেলিওডোরাস ভগবান বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের একটি স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন।

Q30. গণ্ডোফারনিস কে ছিলেন? তাঁর সম্পর্কে কি জান?
উঃ খ্ৰীষ্টীয় প্রথম শতকে পহ্লব বা পার্থিয়রা উত্তর ভারতের বিশাল অংশ দখল করেন। ভারতীয় পহ্লব রাজাদের মধ্যে গণ্ডোফার্নিস ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। ইন্দো-গ্রীক রাজা হরেসেইসকে তিনি পরাজিত করে তিনি কাবুলকে গ্রীক শাসন মুক্ত করেন। তিনি রাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। খেত-ই-বাছি শিলালিপি থেকে জানা যায় তিনি গান্ধার অঞ্চল জয় করেন। পাঞ্জাব অঞ্চলেও তাঁর মুদ্রা পাওয়া যায়। কিংবদন্তী শুঙ্গের মতে খ্রীষ্টীয় সাধু সেন্ট টমাস গণ্ডোফারনিস ও তাঁর পরিবারকে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরেই ভারতে পহ্লব রাজ্য ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়।

Q31. চতুর্থ বৌদ্ধ সংগীতী কে আহ্বান করেছিলেন? এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য কি?
উঃ কুষাণ রাজ কণিষ্ক চতুর্থ বা শেষ বৌদ্ধ সংগীতী আহ্বান করেছিলেন কাশ্মীর বা জলন্ধরে। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য দুরকরে সর্বসম্মত আচার পদ্ধতি গ্রহণ করা ছিল এই সংগীতির লক্ষ্য। পণ্ডিত বসুমিত্র ও অশ্বঘোষ এই সংগীতী পরিচালন করেন। এখানে ত্রিপিটক গুলির জটিল অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনা হয় ও অসংখ্য টিকা প্রস্তুত করা হয়। এগুলি ‘মহাভিভাস্য' নামে পরিচিত। চতুর্থ বোদ্ধ সংগীতিকে মহান মতবাদ গৃহীত হয়।

Q32. কুষাণ যুগে বিকশিত চারটি শিল্পরীতি সম্বন্ধে কি জান?
উ: কুষাণ যুগে চারটি স্থানে চারটি শিল্পরীতি আত্মপ্রকাশ করেছিল যথা- মথুরা, সরনাথ, অমরাবতী এবং গান্ধার শিল্পরীতি। মথুরা শিল্পরীতিতে বেলে পাথরের উপর খোদাই করে কাজের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। সারনাথের শিল্প রীতির বৈশিষ্ট্য ছিল পাহাড় ও গুহার ভাষ্কর্য রীতি। স্তূপ শিল্পরীতি ছিল অমরাবতী শিল্পরীতির বৈশিষ্ট্য এবং গান্ধার শিল্পরীতিতে গ্রীক ও
রোমান রীতির মিশ্রণ ঘটেছিল।

Q33. টীকা লিখ : কলিঙ্গ রাজ খারবেল?
উঃ প্রাচীন কালেই উড়িষ্যাই কলিঙ্গ নামে এক স্বাধীন রাজ্য ছিল। মৌর্য সম্রাট অশোক কলিঙ্গকে যুদ্ধে পরাস্ত করলেও এর শক্তি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয় নি। অশোকের মৃত্যুর পর খারবেল নামে এক পরাক্রমশালী রাজা কলিঙ্গ রাজার শক্তি পুনরুদ্ধার করেন। ভুবনেশ্বরের তিন মাইল দুরে উদয়গিড়ি পাহাড়ে উৎকীর্ণ ‘হাতিগুম্ফা শিলালিপি’ থেকে খারবেলের সম্পর্কে জানা
যায়! তিনি ছিলেন চেত বংশীয় তৃতীয় নরপতি। বাহুযুদ্ধে জয়লাভ করে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে রাজ্য বিস্তার করেন। খারবেল ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী।
Q34. মেগাস্থিনিস কে ছিলেন? ভারত সম্পর্কে তাঁর মুখ্য পর্যবেক্ষণ কি ছিল?
উঃ সিরিয়ার অধিপতি সেলুকাস এর দূত হিসেবে মেগাস্থিনিস চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় আসেন। তিনি তাঁর ‘ইণ্ডিকা’ গ্রন্থে মৌর্য শাসন ব্যবস্থা ও ভারতের সমাজজীবন সম্পর্কে এক মনোজ্ঞ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। মূল গ্রন্থখানির অস্তিত্ব নেই, তবে ডিওডোরাস, জাস্টিন, ষ্ট্রাবো প্রমূখ গ্রীক ও রোমান লেখকগণ ইণ্ডিকার উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। তাঁর রচনায় পাটলীপুত্র নগরীর পৌর শাসন ব্যবস্থা, সামরিক বিভাগ, সামাজিক শ্রেণী প্রভৃতি সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া
যায়। তবে তিনি ভারতের লিখিত আইন নেই, ভারতীয়রা লিখতে জানত না, এদেশে দাস প্রথা ছিল না কিংবা ভারতীয়রা ‘সপ্তজাতি’তে বিভক্ত ছিল প্রভৃতি বলে যে মন্তব্য করেছেন তার সত্যতা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

Q35. এলাহাবাদ প্রশস্তির ঐতিহাসিক মূল্য বিচার করো।
উঃ সমুদ্র গুপ্তের সভাকবি হরিসেন রচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি গুপ্ত ইতিহাসের এক অমূল্য উপাদান। লিপিটি অশোকের একটি স্তম্ভের গায়ে খোদাই করা আছে। এই প্রশস্তিটি সংস্কৃত ভাষায় আংশিক গদ্যে ও আংশিক পদ্যে রচিত। এটি থেকে হরিসেনের অসাধারণ কাব্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। লিপিটি সম্পূর্ণ পাওয়া যায় নি। প্রথম দিকে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লিপিটি এখন এলাহাবাদ দূর্গে রক্ষিত আছে। এটি থেকে সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যজয়, শিক্ষা, রাজ্যশাসন প্রভৃতি সম্পর্কে অমূল্য তথ্য পাওয়া যায়। এতে কোন তারিখ নেই। তবে সম্ভবত সমুদ্রগুপ্তের দাক্ষিনাত্য বিজয়ের পর এটি রচিত হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। কৌশাম্বি এই লিপির মৃদু সমালোচনা করে বলেছেন এর ছত্রে ছত্রে সমুদ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যবাদী দত্ত ছড়িয়ে আছে।

Q36. গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির উপর একটি টিকা লিখ?
উঃ গুপ্ত যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ছিল প্রাচীন ভারতের বিস্ময়কর পর্ব। চিকিৎসাশাস্ত্র, ধাতুবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, গণিত, জ্যোতিবিদ্যা প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে এ যুগে অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে! পৃথিবী যে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে তা প্রথম বলেন বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট। তিনি আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি আবিষ্কার করেন। তিনিই সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
প্রদান করেন। জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির এ যুগেই আবির্ভূত হন। তিনি ‘পঞ্চসিন্ধান্তিকা' গ্রন্থটি রচনা করেন! ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ব্যবহার ও ০ (শূন্য) গুপ্তযুগেই ভারতে আবিস্কৃত হয়। ধাতুবিদ্যা সম্পর্কেও এ যুগে যথেষ্ট সমৃদ্ধ জ্ঞান ছিল। চিকিৎসাবিদ্ ধনত্বরী ও বাগভট্ট এ যুগেই তাদের চিকিৎসাশাস্ত্র গ্রন্থগুলি রচনা করেন। অনেকে মনে করেন বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক
সুশ্রূত এই যুগেরই মানুষ ছিলেন।

Q37. হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের মূল উপাদানগুলি কি কি?
উঃ হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের ইতিহাসের মূল উপাদানগুলি হলো (i) বানভট্টের ‘হর্ষচরিত’ ও ‘কাদম্বরী গ্রন্থ’, (ii) চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ রচিত ‘সি-ইউ-কাউ, বা ভারত ভ্রমণ কথা, (iii) নালন্দার শীলবান্স খেরা তাম্রশাসন, মধুবনী তাম্রপট, সোনপৎ তাম্রপট প্রভৃতি (iv) চালুক্য রাজ দ্বিতীয় পুলকেশী ‘আইহোল শিলালিপি’ প্রভৃতি। হর্ষবর্ধন রচিত ‘নাগানন্দ’, ‘প্রিয়দর্শিকা’, ‘রত্নাবলী’ প্রভৃতি গ্রন্থ থেকেও হর্যবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়।

Q38. প্রাচীন ভারতের কোন সময়কে রাজপুত যুগ বলা হয়?
উঃ ৬৪৭ খ্রীঃ হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর থেকে মুসলিম বিজয় পর্যন্ত সময়কালকে ‘রাজপুত যুগ’ বলা হয়। এই পর্বে উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে রাজপুত রাজন্যবর্গ শাসন করত। সেই কারণে এই পর্বকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে রাজপুত যুগ বলে অভিহিত করা হয়।

Q39.  সংক্ষিপ্ত টিকা লিখ : আর্যভট্ট ও শুশ্ৰুত সংহিতা?
আর্যভট্ট : গুপ্তযুগে আবির্ভূত জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট ছিলেন ভারতীয় জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার প্রাণপুরুষ। ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থের রচয়িতা আর্যভট্ট আবিষ্কার করেন যে, সূর্য স্থির। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে আবর্তন করছে। তিনি আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি আবিস্কার করেন ও প্রথম সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। ৩৬৫ দিনের বছর-এ গণনা তাঁরই আবিস্কার।
শুশ্ৰুত সংহিতা :
বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক শুশ্ৰুত গুপ্ত যুগেই আবির্ভূত হন বলে ঐতিহাসিকদের অনেকে মত প্রকাশ করেন। শল্য চিকিৎসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদিসম্পন্ন শুশ্ৰুত সংহিতা গ্রন্থটি গুপ্তযুগেই রচিত হয়।

Q40. ত্রিশক্তি সংগ্রাম বলতে কি বুঝ?
উঃ হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর উত্তর ভারতে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিলে কনৌজ-এর অধিকার তথা আর্যাবর্তে প্রাধান্য স্থাপনের লক্ষ্যে যে সংগ্রাম শুরু হয় তা ত্রিশক্তিসংগ্রাম নামে খ্যাত। এই তিনটি শক্তি হলো বাংলার পাল বংশ, সালবের গুর্জর-প্রতিহার বংশ এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশ। নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলে প্রথমে রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দ ও পরবর্তীতে বাংলার ধর্মপাল ক্ষমতা দখল করেন। তবে প্রায় দু'শ বছর ব্যাপী এই যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনটি শক্তিই সামরিক দিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ও প্রায় একই সময়ে তাদের পতন ঘটেছিল।
Q41. চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে? তাঁর রাজত্বকালে ঐতিহাসিক উপাদানগুলি কি?
উঃ চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী। দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বকালের মূল ঐতিহাসিক উপাদান হলো তাঁর সভাকবি পণ্ডিত রবিকীর্তি রচিত আইহোল শিলালিপি। হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট রচিত ‘হর্ষচরিত’ গ্রন্থ থেকে উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যয়। গুজরাটে প্রাপ্ত ভূমি পট্টলী গুলি থেকেও তথ্য মেলে। পল্লব রাজ মহেন্দ্র বর্মনের কাকাক্কুটি পট্টতেও দ্বিতীয় পুলকেশী সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্তও দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বকাল সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদান।

Q42. পল্লব বংশের চারজন গুরুত্বপূর্ণ শাসকের নামোল্লেখ করো।
উঃ পল্লব রাজবংশের চারজন গুরুত্বপূর্ণ শাসক হলেন
১) মহেন্দ্র বর্মন (আনুমানিক ৬০০ – ৫৩০ খ্রীঃ)
২) নরসিংহ বর্মন (আনুমানিক ৬৩০ – ৬৬৮ খ্রীঃ)
৩) প্রথম পরমেশ্বর বর্মন (৬৭০ খ্রীঃ – ৬৯৫ খ্রীঃ)
৪) দ্বিতীয় নরসিংহ বর্মন (৬৯৫ খ্রীঃ – ৭২২ খ্রীঃ)

Q43. শশাংক কে? তাঁর কৃতিত্ব কি?
উঃ গৌড়াধিপতি শশাংক ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সার্বভৌম শাসক। ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি তাঁর রাজত্ব শুরু করেন।
শশাংকের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। রোটাসগড় লেখ অনুসারে মনে করা হয় তিনি গুপ্তরাজা মহাসেনগুপ্তের অধীনে একজন সামন্ত ছিলেন। কিন্তু কালক্রমে গুপ্তদের অধীনতা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তর ভারতের পরাক্রান্ত সম্রাট হর্ষবর্ধনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলা বিহার উড়িষ্যায়
নিজের সার্বভৌমত্ত্ব বজায় রাখেন। শশাংকই বাংলাদেশে পালবংশের ভিত্তি নির্মাণ করে গিয়েছিলেন।

Q44. গুপ্তদের উত্থানের পূর্বে উত্তর ভারতের প্রধান রাজ্যের নামোল্লেখ করো।
উঃ কুষানদের পতন ও গুপ্তদের উত্থান এই দীর্ঘ সময়ে উত্তর ভারতে কোন রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। একাধিক রাজতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। এরা হলো (ক) মঘ বা মাঘ বংশশাসিত কৌশম্বি, (খ) মিত্র বংশ শাসিত অযোধ্যা, (গ) নাগ বংশীয় রাজ্য শাসিত বিদিশায় কান্তিপুরী, মথুরা, পদ্মাবতীকে নিয়ে যমুনা উপত্যকা, (ঘ) বাকাটক বংশশাসিত মহারাষ্ট্র অঞ্চল, (ঙ) গোয়ালিয়র, (চ) রোহিলখাণ্ড, (ছ) মহারাষ্ট্র, (জ) রাজপুতানার মালব রাজ্য, (ঝ) আলোয়ার ও ভরতপুর, (ঞ) বাংলার সমতট, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কামরূপ প্রভৃতি।

Q45. রামগুপ্ত সম্পর্কে কি জান?
উঃ সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর গুপ্ত সিংহাসনে কে বসেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। বিশাখ দত্ত রচিত ‘দেবী চন্দ্রগুপ্তম’ নাটকটি এই বিতর্কের উৎস। বলা হয়েছে সমুদ্রগুপ্তের পর রাম গুপ্ত সিংহাসনে বসেন। জনৈক শক রাজার হাতে পরাস্ত হয়ে তিনি স্ত্রী ধ্রুবদেবীকে শকদের হাতে তুলে দিতে সম্মত হন। তাঁর এই কাপুরুষতায় তাঁর ভাতা চন্দ্রগুপ্ত ক্ষুব্ধ হন ও রাম গুপ্তকে হত্যা করে রাণী ধ্রুবদেবীকে উদ্ধার করেন। এর পর তাঁকে বিবাহ করে সিংহাসনে বসেন। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার অবশ্য এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন না। বিদিশ শিলালেখ অনুসারে কেউ কেউ আবার এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। কোন কোন ঐতিহাসিক আবার রাম গুপ্ত নামে মালবের এক স্থানীয় শাসকের নাম উল্লেখ করেছেন।

Q46. মাৎসন্যায় বলতে কি বুঝ?
উঃ ৬৩৮ খ্রীঃ শশাংকের মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক চরম অরাজকতা নেমে আসে। পুকুরের বড় মাছ যেমন ছোটমাছকে গ্রাস করে, তেমনি শক্তিশালী শাসক দুর্বল শাসকের স্বাধীনতা হরণ করছিল। এই পরিস্থিতি ‘মাৎসন্যায়’ নামে পরিচিত। পালরাজ ধর্মপালের খলিমপুর তাম্রলিপিতে এই ধরণের অরাজক পরিস্থিতির কথা জানা যায়। তিব্বতি লামা তারানাথ বাংলাদেশে মাৎসন্যায় এর কথা উল্লেখ করেছেন। এই সময় বাংলাদেশে কোন শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শক্তি ছিল না। ৭৫০ খ্রীষ্টাব্দে গোপাল নামক জনৈক নেতাকে বাংলার সামন্ত প্রভুরা নেতা নির্বাচন করলে এই অরাজক পরিস্থিতির অবসান হয়।
Q47. পল্লব স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য কি ছিল?
উঃ খ্রীষ্টীয় সপ্তম থেকে নবম শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালে পল্লবদের স্থাপত্য, ভাস্কর্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। পল্লব শিল্প স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ছিল। যেমন – (i) এখানে পাথর কেটে মন্দির তৈরী করা হয় বৌদ্ধ বিহারের অনুকরণে বা রথের আকৃতিতে। (ii) প্রথম মহেন্দ্র বর্মনের আমলে পল্লবদের দ্বারাই প্রথম পাহাড় কেটে মন্দির নির্মাণ চালু করেন। এটি পল্লবদের স্বাধীন শিল্প রীতি। (iii) স্তম্ভ ও মণ্ডব যুক্ত মন্দিরও তৈরী হতো। (iv) নরসিংহ বর্মন মহামল্ল রীতি চালু
করেন। যেখানে গ্রানাইট পাথর কেটে রথের আকৃতিতে মন্দির নির্মাণ করা হতো। মাদ্রাজের দক্ষিণে মহাবলীপুরমে এই ধরণের নির্মাণ শৈলীর চিহ্ন পাওয়া যায়। (v) মহামল্ল যুগের পরে পাথর দিয়ে স্বাধীন মন্দির নির্মাণ রীতি চালু হয়। কাঞ্চীর কাছে এর নিদর্শন আছে। পল্লব রাজাদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় পল্লব স্থাপত্যের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল।

No comments

Hi Welcome ....