নবম শ্রেণি : ভূগোল ও পরিবেশ | অধ্যায় : (৩) পৃথিবীপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয় ❐ আরো পড়ুনঃ নবম শ্রেণি ❍ ভূগোল ও পরিবেশ সূচিপত্...
নবম শ্রেণি : ভূগোল ও পরিবেশ | অধ্যায় : (৩) পৃথিবীপৃষ্ঠের কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয়
❐ আরো পড়ুনঃ নবম শ্রেণি
১. আন্তর্জাতিক তারিখরেখা কী? এর প্রয়োজনীয়তা লেখো। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা সর্বত্র 180° দ্রাঘিমাকে অনুসরণ করেনি কেন? অথবা, আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে স্থানভেদে একটু বাঁকিয়ে টানা হয়েছে কেন ? [1+2+2]
❒ আন্তর্জাতিক তারিখরেখা : আন্তর্জাতিক তারিখরেখা একটি কাল্পনিকরেখা, যা 180° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করে সুমেরুবিন্দু থেকে কুমেরুবিন্দু পর্যন্ত টানা হয়েছে। এই রেখা পৃথিবীর তারিখ বিভাজিকা হিসেবে কাজ করে। গোলাকার ( 360°) পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারিপাশে একবার সম্পূর্ণ আবর্তন করতে সময় নেয় 24 ঘণ্টা বা 1,440 মিনিট। এজন্য ভূপৃষ্ঠে প্রতি 1° দ্রাঘিমার ব্যবধানে সময়ের পার্থক্য হয় 4 মিনিট। আবার পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে বলে, পূর্ব দিকে স্থানীয় সময় এগিয়ে থাকে এবং পশ্চিম দিকে স্থানীয় সময় পিছিয়ে থাকে। এজন্য স্থানীয় সময় অনুসারে ভূপ্রদক্ষিণ করলে সময়, বার ও তারিখ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং কাজেরও অসুবিধা ঘটে। যেমন—180° পূর্ব এবং 180° পশ্চিম দ্রাঘিমা একটিই রেখা। অথচ একই জায়গায় পৌঁছে বিমান বা জাহাজের সময়ের ব্যবধান হয়—12 ঘণ্টা + 12 ঘণ্টা = 24 ঘণ্টা বা 1 দিন।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য 1884 সালে ‘দ্রাঘিমা ও সময় সম্পর্কিত এক ‘আন্তর্জাতিক দ্রাঘিমা সম্মেলনে' (International Meridian conference)-এ 180° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়, যা পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মধ্যে তারিখ বিভাজিকার কাজ করে। এর ফলে পূর্ব গোলার্ধগামী জাহাজ বা বিমান এই রেখাটি অতিক্রম করলে তার দিনপঞ্জিতে 1 দিন যোগ করে (অর্থাৎ, সেদিন রবিবার থাকলে সোমবার ধরে) নেয় এবং পশ্চিম গোলার্ধগামী জাহাজ বা বিমান এই রেখাটি অতিক্রম করলে 1 দিন বিয়োগ করে (অর্থাৎ, সেদিন সোমবার হলে রবিবার ধরে) নিয়ে স্থানীয় সময়ের সঙ্গে মিল রাখে।
✱ আর্ন্তজাতিক তারিখরেখা সর্বত্র 180° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ না করার কারণ : 180° দ্রাঘিমার ওপর অবস্থিত জায়গাগুলির অধিবাসীরা যাতে তাদের নিজেদের দেশের সময় ও বার অনুসারে কাজকর্ম করতে পারে তাই আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে ওইসব জায়গায় একটু পূর্বে বা পশ্চিমে জলভাগের ওপর দিয়ে বাঁকিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেমন— [1] উত্তরে র্যাঙ্গাল দ্বীপের কাছে সামান্য পশ্চিমে [2] সাইবেরিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে কিছুটা পূর্ব দিকে। [3] অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে 7° পশ্চিমে, [4] ফিজি, চ্যাথাম প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জের কাছে 11° পূর্বে বেঁকে
সম্পূর্ণভাবে জলভাগের (প্রশান্ত মহাসাগর) ওপর দিয়ে এই রেখাটি বিস্তৃত হয়েছে।
_________
২. দ্রাঘিমারেখা কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার উল্লেখ করো। [1+2+2]
❒ দ্রাঘিমারেখা: সুমেরুবিন্দু থেকে কুমেরুবিন্দু পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠের ওপর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সমান দ্রাঘিমাযুক্ত কাল্পনিক অর্ধবৃত্তাকার রেখাগুলিকে বলে দ্রাঘিমারেখা। ভূপৃষ্ঠের ওপর একই দ্রাঘিমায় অবস্থিত স্থানগুলিকে যোগ করে দ্রাঘিমারেখা আঁকা হয়।
✱ বৈশিষ্ট্য: [1] দ্রাঘিমারেখাগুলি প্রত্যেকটি অর্ধবৃত্ত [2] দ্রাঘিমারেখাগুলি পরস্পর সমান্তরাল নয়। [3] নিরক্ষীয় অঞ্চলে দ্রাঘিমারেখাগুলির পারষ্পরিক দূরত্ব বেশি এবং মেরুর দিকে ক্রমশ কম। [4] দ্রাঘিমারেখাগুলির পরিধি সমান। অর্থাৎ, প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য সমান। [5] কোনো নির্দিষ্ট দ্রাঘিমারেখা বরাবর ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানের দ্রাঘিমাংশ সমান। [6] একই দ্রাঘিমারেখার বিভিন্ন স্থানে জলবায়ুর ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। [7] একই দ্রাঘিমারেখার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সময় একইরকম হয়।
✱ ব্যবহার : [1] পৃথিবীর কোনো স্থান মূলমধ্যরেখার কতটা পূর্বে বা পশ্চিমে অবস্থিত তা দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে সহজেই জানা যায়। [2] পৃথিবীর যে-কোনো স্থানের সময় দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। [3] অনেকসময় কোনো দেশ বা রাজ্যের সীমানা নির্ধারণে দ্রাঘিমারেখা ব্যবহার করা হয়। যেমন— আফ্রিকা মহাদেশের সীমানা নির্দেশ করার জন্য দ্রাঘিমারেখার প্রয়োজন হয়।
_________
৩. অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে কীভাবে ভূপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা যায়—উদাহরণসহ লেখো। দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় সময়ের পরিবর্তন হয় কেন? [3+2]
❒ অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে ভূপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়: অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে গোলাকার ভূপৃষ্ঠের ওপর যে কোনো জায়গার অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অক্ষরেখাগুলি বৃত্তাকার এবং ভূপৃষ্ঠকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে। অন্যদিকে, দ্রাঘিমারেখাগুলি অর্ধবৃত্তাকার এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। ফলে, অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা গুলি পরস্পরকে ছেদ করে এবং ভূপৃষ্ঠে সৃষ্টি হয় এক ভৌগোলিক জালক। এই জালকের ছেদবিন্দুগুলির সাহায্যেই ভূপৃষ্ঠে যে-কোনো জায়গার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। তাই মানচিত্রে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা উভয়ই দেখানো হয়ে থাকে এবং ভূপৃষ্ঠে যে-কোনো জায়গার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার জন্য উভয়েরই প্রয়োজন হয়। কোনো জায়গার অবস্থান বা স্থানাঙ্ক জানতে হলে জায়গাটির অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা—উভয়ই জানাতে হয়। উদাহরণ—কলকাতার অবস্থান বা স্থানাঙ্ক 22°30´ উত্তর অক্ষাংশ এবং 88° 30´ পূর্ব দ্রাঘিমা। অর্থাৎ, 22°30´ উত্তর অক্ষরেখা এবং 88°30´ পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পরস্পর যেখানে ছেদ করেছে, সেই ছেদবিন্দুটিই হল ভূপৃষ্ঠের ওপর কলকাতার সঠিক অবস্থান।
✱ দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় সময়ের পরিবর্তণের কারণ: পৃথিবীপৃষ্ঠে কল্পিত দ্রাঘিমারেখাগুলি অর্ধবৃত্তাকার এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। যেহেতু সূর্যের সামনে পৃথিবী 24 ঘণ্টায় একবার করে পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে, তাই প্রতিটি দ্রাঘিমারেখাই 24 ঘণ্টায় একবার করে সূর্যের সামনে আসে। সূর্য যখন পৃথিবীর যে দ্রাঘিমারেখার ওপর লম্বভাবে অবস্থান করে, সেখানে তখন মধ্যাহ্ন হয়। এই মধ্যাহ্ন অনুসারে সেই স্থানে যে সময় গণনা করা হয়, তাকে স্থানীয় সময় বলে। সুতরাং, প্রতিটি দ্রাঘিমারেখায় বিভিন্ন সময়ে 24 ঘণ্টায় একবার করে মধ্যাহ্ন হয় এবং তাই প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়ও আলাদা। এজন্যই দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় সময়েরও পরিবর্তন হয়।
৪. অক্ষরেখা কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার উল্লেখ করো।
❒ অক্ষরেখা: ভূপৃষ্ঠকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে থাকা সম-অক্ষাংশযুক্ত কাল্পনিক বৃত্তাকার রেখাগুলিকে বলে অক্ষরেখা। ভূপৃষ্ঠের ওপর একই অক্ষাংশে অবস্থিত স্থানগুলিকে যোগ করে অক্ষরেখা আঁকা হয়।
✱ বৈশিষ্ট্য: [1] দুই মেরুবিন্দু ছাড়া বাকি সব অক্ষরেখাগুলি প্রত্যেকটি পূর্ণবৃত্ত এবং পরস্পর সমান্তরাল। [2] অক্ষাংশের মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অক্ষরেখার পরিধি কমে যায়। [3] উভয় মেরুতে অক্ষরেখা বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। [4] কোনো নির্দিষ্ট অক্ষরেখা বরাবর ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানের অক্ষাংশ সমান। [5] অক্ষরেখার পরিবর্তনের সঙ্গে তাপমাত্রারও পার্থক্য হয়। তাই ভিন্ন অক্ষাংশবিশিষ্ট স্থানগুলির জলবায়ুও ভিন্ন হয়। [6] একই অক্ষরেখায় অবস্থিত ভিন্ন স্থানের স্থানীয় সময়ও ভিন্ন হয়ে থাকে।
✱ ব্যবহার: [1] নিরক্ষরেখা ও অন্যান্য অক্ষরেখাগুলির সাহায্যেনা পৃথিবীর কোনো স্থান কতটা উত্তরে বা দক্ষিণে তা জানা যায়। [2] অক্ষরেখার সাহায্যে কোনো কোনো দেশের বা রাজ্যের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। যেমন – 48° উত্তর অক্ষরেখার সাহায্যে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। [3] অক্ষরেখার সাহায্যে পৃথিবীকে বিভিন্ন তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়।
৫. মহাবৃত্ত বলতে কী বোঝ ? প্রতিপাদ স্থান বলতে কী বোঝ ?
❒ ধারণা : ভূপৃষ্ঠের ওপর অঙ্কিত যেসব বৃত্তের কেন্দ্ৰ, পৃথিবীর কেন্দ্রের সাথে একই বিন্দুতে অবস্থান করে, তাদের মহাবৃত্ত (Great Circle) বলে। উদাহরণ—পৃথিবীর অক্ষরেখাগুলির মধ্যে নিরক্ষরেখা হল মহাবৃত্ত। কারণ—অন্যসব অক্ষরেখাগুলির মধ্যে একমাত্র নিরক্ষরেখাই এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
✱ বৈশিষ্ট্য : [a] মহাবৃত্তের চেয়ে বড়ো কোনো বৃত্ত ভূগোলকে আঁকা যায় না। [b] মহাবৃত্ত বরাবর ভূগোলককে কাল্পনিকভাবে ছেদ করলে, গোলকের দুটি সমান অংশ পাওয়া যায়। [c] মহাবৃত্তের কেন্দ্র ও ভূগোলকের কেন্দ্র এক বিন্দুতে অবস্থান করে।
✱ ব্যবহার : মহাবৃত্তের বৃত্তচাপ বরাবর দুটি বিন্দুর দূরত্ব সবচেয়ে কম হয়। এই সুবিধার জন্য সমুদ্রপথে জাহাজগুলি বা আকাশপথে বিমানগুলি এই বৃত্তচাপ বরাবর অগ্রসর হয।
❒ প্রতিপাদ স্থান :
✱ ধারণা : ভূগোলকের যে-কোনো বিন্দু থেকে কোনো কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে ভূগোলকের বিপরীত দিকের যে বিন্দুতে স্পর্শ করে, সেই বিন্দুকে প্রথম বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে।
✱ বৈশিষ্ট্য : [a] কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হয় 12 ঘণ্টা। [b] কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় 180°। [c] অক্ষাংশের মান একই হলেও কোনো স্থানের প্রতিপাদ স্থান তার বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত হয়৷
✱ গুরুত্ব : কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের দিনরাত্রি বা ঋতুর পার্থক্য দেখা যায়।
No comments
Hi Welcome ....