Page Nav

HIDE

Grid

GRID_STYLE

Top Ad

Breaking News:

latest

অধ্যায় ৭ [ক্লাস ৬ ইতিহাস প্রশ্নও উত্তর পৃষ্ঠা - ১০৯]

Class 6 History Chapter - (Vii) All Question Answer Solved 👇   Read More Click Class - VI History Question Answer    ❏ ভেবে দেখো খুঁজে দেখো...

অধ্যায় ৭ অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা : ক্লাস ৬ ইতিহাস প্রশ্নও উত্তর

Class 6 History Chapter - (Vii) All Question Answer Solved


👇 Read More Click
Class - VI History Question Answer 

 ❏ ভেবে দেখো খুঁজে দেখো..
১. নীচের বিবৃতিগুলির সঙ্গে কোন ব্যাখ্যাটি সব থেকে বেশি মানানসই বেছে বের করোঃ
১.১) বিবৃতিঃ মৌর্য—পরবর্তী যুগে অনেকগুলি গিল্ড গড়ে উঠেছিল।
ব্যাখ্যা : ১—রাজারা ব্যাবসাবাণিজ্য বাড়ানোর জন্য গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
ব্যাখ্যা: ২—কারিগর ও ব্যবসায়ীরা গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
ব্যাখ্যা :৩—সাধারণ মানুষ টাকা লেনদেন ও গচ্ছিত রাখার জন্য গিল্ড গড়ে তুলেছিলেন।
উত্তর : ব্যাখ্যা : ২— কারিগর ও ব্যবসায়ীরা গিল্ড তুলেছিলেন।

১.২) বিবৃতি: দাক্ষিণাত্যে ভালো তুলোর চাষ হত।
ব্যাখ্যা : ১—দাক্ষিণাত্যের কালো মাটি তুলো চাষের পক্ষে ভালো ছিল।
ব্যাখ্যা : ২—দাক্ষিণাত্যের সমস্ত কৃষক শুধু তুলোর চাষ করতেন।
ব্যাখ্যা : ৩—দাক্ষিণাত্যের মাটিতে অন্য কোনো ফসল হত না।
উত্তর : ব্যাখ্যা : ১—দাক্ষিণাত্যের কালো মাটি তুলো চাষের পক্ষে ভালো ছিল।

২. সঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করোঃ 
২.১) জনপদ হল—(কৃষিভিত্তিক/শিল্পভিত্তিক/শ্রমিক ভিত্তিক) গ্রামীণ এলাকা।
উত্তর : জনপদ হল কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ এলাকা।
২.২) মৌর্য আমলে অর্থনীতি মূলত—(শিল্পের/কৃষির/ব্যাবসাবাণিজ্যের) ওপরে নির্ভর করত।
উত্তর : মৌর্য আমলে অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপরে নির্ভর করত।
২.৩) গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী আমলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে জমিদানকে বলা হয়—(সামন্ত/বেগার/অগ্রহার) ব্যবস্থা।
উত্তর : গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী আমলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে জমিদানকে বলা হয় অগ্রহার ব্যবস্থা।

৩. নিজের ভাষায় ভেবে লেখো (তিন/চার লাইন) :
৩.১) প্রথম নগরায়ণ (হরপ্পা) এবং দ্বিতীয় নগরায়ণ (মহাজনপদ) -এর মধ্যে কোন ধরনের পার্থক্য তোমার চোখে পড়ে?
উত্তর : প্রথম নগর গড়ে উঠেছিল হরপ্পা সভ্যতায় তাই তাকে বলে প্রথম নগরায়ণ। প্রায় হাজার বছরেরও পরে আবার নগর গড়ে উঠতে দেখা যায়। এই নগরায়ণ মূলত হয়েছিল উত্তর ভারতে বিশেষত গঙ্গা উপত্যকায়। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ হওয়া এই নগরায়ণ দ্বিতীয় নগরায়ণ বলে পরিচিত।

৩.২) প্রাচীন ভারতে জলসেচ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল কেন? সে যুগের জলসেচ ব্যবস্থার সঙ্গে আজকের দিনের জলসেচ ব্যবস্থার কোনো পার্থক্য তোমার চোখে পড়ে কি?
উত্তর : প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাজকীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা জলসেচ ব্যবস্থার একটা প্রধান উদাহরণ হল সুদর্শন হ্রদ। মৌর্য আমল থেকে গুপ্ত আমল পর্যন্ত ওই হ্রদের ব্যবহার ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলে ওই হ্রদটি বানানো হয়েছিল। অশোকের শাসনকালে সেচ প্রকল্পটিতে কয়েকটি সেচ খালও যোগ করা হয়। আজকের দিনে আধুনিক পদ্ধতিতে বা কৃষিজমির পাশে কোনো খাল থাকলে সেখান থেকে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়।

৩.৩) খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে কৃষির পদ্ধতি ও উৎপাদিত ফসলের মধ্যে কী কী তফাৎ দেখা যায় ?
উত্তর খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক এই বারোশো বছর কালের মধ্যে বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে কৃষিকাজ ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তর ভারতে আগের মতোই কৃষিকাজ ছিল প্রধান জীবিকা। ধান, গম, যব, আখ, কার্পাস ছিল প্রধান ফসল। দাক্ষিণাত্যের কালো মাটিতে তুলোর চাষ বেশি হত। কেরালায় গোলমরিচ ফলন বেশি হত। বিদেশের বাজারে উপমহাদেশের মসলিন ও অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা ছিল। তা ছাড়া হিরে, বৈদুর্য, মুক্তো ও মশলার কদর বিদেশের বাজারে ছিল।

৪. হাতেকলমে করো :
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত সময়ে কোন কোন পেশার মানুষদের কথা তুমি জানতে পারলে, তার তালিকা তৈরি করো। তার মধ্যে কোন কোন পেশা আজও দেখা যায়? বৈদিক সমাজে চালু জীবিকাগুলির সঙ্গে এই সময়ের পেশাগুলির কী কী মিল-অমিল দেখা যায়?
উত্তর : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে অসংখ্য ব্যবসায়ী ও কারিগর ছিল। জিনিসের গুণমান ও দাম ঠিক রাখাও সংঘের কাজের আওতায় পড়ত। লোহার জিনিস তৈরির শিল্প খুব উন্নত ছিল। তা ছাড়া এই আমলে লেখক বা করণিক ও চিকিৎসক পেশার কথা জানা যায়। জমিতে কৃষি-শ্রমিক কাজ করত। গ্রামের শাসন ছিল গ্রামণীদের হাতে। এই আমলে কারিগরি শিল্প ও পেশার বৈচিত্র্য অনেক বেড়েছিল। ভাস্কর্য ও অন্যান্য শিল্পেরও কারিগর ছিল। সেচ কাজের জন্য যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। যন্ত্রটি চাকার মতো ওই যন্ত্র বানানো ও সারানোর জন্যও কারিগর ছিল। রাজারা সেচ কাজের উন্নতির দিকে নজর দিতেন। পাশাপাশি ধনী ব্যক্তিরাও নিজেদের উদ্যোগে জলসেচের ব্যবস্থা করে দিতেন। বৈদিক যুগের সময়ে মাটির পাত্র বানানোর শিল্প খুব উন্নত হয়েছিল। কুমোরেরা চাকার ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এই পাত্র বানানো সহজ হয়। চুল্লির আঁচে পুড়িয়ে পাত্র কালো করা হত। ভালো মানের মাটি দিয়ে পাত্রগুলি তৈরি করা হত। সেগুলি আয়নার মতো চকচকে ছিল। 

বৈদিক যুগে গোরু ও ঘোড়ার বাণিজ্য চলত। কৃষিকাজে লাঙলের ব্যবহারের কথাও জানা যায়। বস্ত্র শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল বারাণসী। গয়না বানানোর শিল্পও এই সময় লক্ষ করা যায়। দামি ও আধা দামি নানারকম পাথর ও পুঁতির গয়না বানানোর কাজে ব্যবহার হত। বৈদিক যুগে জনপদ ও মহাজনপদে কৃষিজীবী জনবসতিও ছিল,মহাজনপদগুলিতে রাজকর্মচারী ও যোদ্ধাদের ভরণপোষণের প্রয়োজনীয় সম্পদ কৃষি থেকেই আসত। কৃষিকাজ ছিল সেই সময়ের প্রধান জীবিকা। সে যুগের বিভিন্ন লেখায় চাষের কাজের খুঁটিনাটি বিবরণ পাওয়া যায়। জমির উর্বরতা অনুযায়ী সেগুলিকে নানারকম ভাগে ভাগ করা হত। ধানই ছিল প্রধান ফসল ধানের মধ্যে সেরা ছিল শালি ধান। আগের মতো জমির ওপর সবার সমান অধিকার আর ছিল না।

❏  আরো পড়ুন  ❏
❍ এই অধ্যায়ঃ থেকে প্রশ্ন উত্তর প্র্যাকটিস সেট 
❏ দুই একটি কথায় উত্তর দাও :

১. মহাজন পদগুলিতে রাজকর্মচারী ও যোদ্ধাদের ভরণ পোষণের প্রয়োজন সম্পদ কী থেকে আসত?
উত্তরঃ কৃষি।
২. বেশির ভাগ মহাজনপদ কোথায় গড়ে উঠেছিল?
উত্তরঃ গঙ্গা উপত্যকা।
৩. জমির ভাগ কীভাবে করা হত।
উত্তরঃ উর্বরতা অনুযায়ী।
৪. মগধ অঞ্চলে কোন জাতীয় ধান চাষ বেশি হত?
উত্তরঃ শালি ধান চাষ।
৫. প্রথম নগরায়ণ বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের ইতিহাতে প্রথম নগর দেখা গিয়েছিল হরপ্পা সভ্যতায় তাই তাকে বলে প্রথম নগরায়ণ।
৬. কার্যাপণ কী?
উত্তরঃ কার্যাপণ ছিল বহু প্রচলিত এক ধরণের মুদ্রা।
৭. প্রাচীন ভারতে বস্ত্রশিল্পের প্রধান কেন্দ্র কোথায় ছিল?
উত্তরঃ বারাণসী।
৮. কত খ্রিস্টপূর্বাব্দ দ্বিতীয় নগরায়ণ নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর : ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
৯. প্রাচীন ভারতে কোথায় আকরিক লোহা পাওয়া যেত?
উত্তর : মধ্য গঙ্গা উপত্যকা।
১০. মৌর্য আমলে অর্থনীতি কীসের উপর নির্ভর করত?
উত্তর : কৃষির উপর।
১১. মেগাস্থিনিস ভারতের জনসমাজকে কটি ভাগে ভাগ করেন ও কী কী?
উত্তরঃ মেগাস্থিনিস ভারতের জনসমাজকে সাতটি জাতিতে বিভক্ত করে। যেমন—ব্রাহ্মণ,কৃষক, পশুপালক, শিল্পী, যোদ্ধা, গুপ্তচর এবং মন্ত্রী।
১২. ওয়ার কথার মানে কী?
উত্তরঃ শহর।
১৩. সুদর্শন হ্রদ কোথায় অবস্থিত ছিল?
উত্তরঃ কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলে সুদর্শন হ্রদ অবস্থিত।
১৪. কোন রাজার আমলে সুদর্শন হ্রদ বানানো হয়েছিল?
উত্তর :  চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের।
১৫. ভারতে কোন সময় নগরায়ণ হয়?
উত্তর : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে।
১৬. সাতবাহন রাজা হাল-এর লিখিত বইয়ের নাম কী?
উত্তরঃ গাথা সপ্তশতী।
১৭. গাথা সপ্তশতী কী ভাষায় লেখা ছিল?
উত্তরঃ প্রাকৃত ভাষায়।
১৮. গুপ্ত আমলে প্রধান ফসল কী ছিল?
উত্তরঃ ধান। 
১৯. অগ্রহার ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তরঃ গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী আমলে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে জমি দানকে অগ্রহার ব্যবস্থা বলা হয়।
২০. গুপ্ত আমলে একটি বন্দরের নাম লেখ?
উত্তরঃ তামিলনাড়ুর কাবেরীপট্টিনম।

❏ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর :
১. মৌর্যযুগে জাতিভেদ প্রথা কেমন ছিল?
উত্তরঃ মৌর্যযুগের সমাজে চতুর্বর্ণ প্রথা প্রচলিত ছিল। অর্থশাস্ত্রে মিশ্রজাতির উল্লেখ করা হয়েছে ব্রাহ্মণরা এই সময় ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের বৃত্তিও গ্রহণ করত। তবে বৈশ্য ও শূদ্রদের সঙ্গে তাদের বৈষম্য ছিল প্রকট।
২. পঞ্চমজাতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ সাধারণ শূদ্রদের নীচে আদিবাসী, উপজাতি ও চণ্ডালদের স্থান ছিল। তারা সমাজে ‘পঞ্চমজাতি’ বলে পরিচিত ছিল। পঞ্চমজাতির মধ্যে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছিল বেশি।
৩. ব্রাত্যক্ষত্রিয় বলতে কাদের বোঝায়?
উত্তর : মৌর্যোত্তর যুগে ভারতে গ্রিক, ব্যাকট্রিয়, শক, কুষাণ প্রভৃতি জাতির আগমন ঘটেছিল। এই রাজনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন বিদেশি জাতিগুলিকে ভারতীয় সমাজে ‘ব্রাত্যক্ষত্রিয়’ বলা হয়।
৪. প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যে দুটি আমদানি ও দুটি রপ্তানি দ্রব্যের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর :  প্রাচীন ভারতের বাণিজ্যে দুটি আমদানি দ্রব্য হল—(১) রেশম ও (২) প্রবাল। দুটি রপ্তানি দ্রব্য হল—(১) মশলা ও (২) চন্দনকাঠ।
৫. মৌর্যযুগের দুটি বিখ্যাত বন্দরের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর : মৌর্যযুগের দুটি বিখ্যাত বন্দর হল—(১) তাম্রলিপ্ত ও (২) ভুগুকচ্ছ। এই বন্দরগুলির মাধ্যমে বিদেশের সঙ্গে ভারতের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য চলত।
৬. অগ্রহার দান কী? কোন আমলে এই ব্যবস্থা ব্যাপক আকার ধারণ করে?
উত্তর :  কোনো ধর্মস্থান ও ব্রাহ্মণকে যে নিষ্কর জমি দান করা হত তাকে ‘অগ্রহর দান’ বলা হয়। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের পরবর্তীকালে গুপ্ত যুগে ‘অগ্রহার দান’ ব্যবস্থা ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল।
৭. গুপ্তযুগের মুদ্রার সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : গুপ্ত আমলে অনেক সোনার ও রুপোর মুদ্রা পাওয়া গেছে। সোনার মুদ্রাকে দীনার ও সুবর্ণ বলা হত আর রুপোর মুদ্রাকে রুপক বলা হত। সোনা ও রুপোর মুদ্রা ব্যাবসা বাণিজ্যের কাজে বেশি ব্যবহৃত হত। তবে রোজকার কাজকর্মে তামার মুদ্রাই ব্যবহৃত ছিল।
৮. গুপ্তযুগে জাতিভেদ প্রথা কেমন ছিল?
উত্তর : গুপ্তযুগে বর্ণাশ্রম প্রথা থাকলেও কঠোরভাবে মানা হত না। তবে ব্রাহ্মণ ও শূদ্রদের প্রতি মনোভাব ভিন্ন রকম ছিল। এই আমলে শূদ্ররা কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্য করতে পারত। চন্ডালদের অবস্থা খারাপ ছিল, তারা গ্রাম বা নগরের মধ্যে থাকতেও পারত না।
৯. গুপ্তযুগে মেয়েদের অবস্থা কীরকম ছিল?
উত্তর : এই আমলে বাল্য বিবাহের প্রথার চল ছিল। তবে সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার ছিল। মেয়েরা বিয়ের সময় কিছু সম্পদ পেতেন। ওই সম্পদের উপরে কেবল মেয়েরই অধিকার ছিল। একে স্ত্রীধন বলা হত। মেয়েরা নিজের ইচ্ছামতো ওই সম্পদের ব্যবহার করতেন। তবে স্ত্রীধন প্রথা সমস্ত বর্ণের মধ্যে চালু ছিল না।

১০. মৌর্য যুগের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ মৌর্যযুগে লিচ্ছবি, মল্ল প্রভৃতি অনার্য জাতিগুলি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে ক্ষত্রিয়ের মর্যাদা লাভ করে। মৌর্যযুগে সমাজে বিভিন্ন বর্ণের মিশ্রণ ঘটে এবং সংকর জাতির উৎপত্তি হয়। কৌটিল্য সংকর জাতির উৎপত্তির কারণ হিসেবে অনুলোম অর্থাৎ উচ্চবর্ণের পুরুষ ও নিম্নবর্ণের নারীর বিবাহকে এবং প্রতিলোম অর্থাৎ নিম্নবর্ণের পুরুষের সঙ্গে উচ্চবর্ণের নারীর বিবাহকে দায়ী করেছেন। কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্য কে বৈশ্য ও শূদ্র সমাজের সাধারণ বৃত্তি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মেগাস্থিনিস মৌর্য সমাজে সাতটি শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন। যথা—দার্শনিক, কৃষক, পশুপালন, কারিগর, সেনানী, পরিদর্শক, সভাসদ। মৌর্যযুগে নারী স্বাধীনতার উল্লেখ থাকলেও সমাজে সতীদাহ প্রথা, বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রায় লেগেই থাকত।

১১. মৌর্যোত্তর ও গুপ্তপূর্ব যুগের সমাজে জাতিভেদ প্রথা কীরূপ ছিল?
উত্তরঃ মৌর্যোত্তর ও গুপ্তপূর্ব যুগের সমাজে জাতিভেদ প্রথার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
(১) ভারতীয় সমাজে গ্রিক, শক, কুষাণ প্রভৃতি বিদেশি জাতির অনুপ্রবেশ ঘটায় ‘ব্রাত্যক্ষত্রিয়’ শ্রেণির উদ্ভব হয়। 
(২) এই যুগে স্বতন্ত্রজাতি হিসেবে বৈশ্য শ্রেণির উল্লেখ পাওয়া যায় না। তার পরিবর্তে গৃহপতি, শেটি ইত্যাদি শ্রেণির উল্লেখ আছে। 
(৩) উচ্চ বংশ, কিন্তু অবৈধভাবে জাত ব্যক্তিরাও শূদ্রশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। শূদ্ররা দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল অপরিত্যক্ত এবং পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত শূদ্রদের সমাজ বহির্ভূত মনে করা হত। 
(৪) শূদ্রদের নীচে ছিল অস্পৃশ্যরা তাদের পঞ্চম জাতি বলা হত। তারা ছিল ছিল পঞ্চম জাতির অন্তর্ভুক্ত। আদিবাসী উপজাতি চণ্ডালরা ছিল তাদের মধ্যে প্রধান। নিষাদ, কৈবর্ত প্রমুখও কর্মবিশেষে জাতিভেদ দেখা যায়।

১২. গুপ্তযুগের অর্থনৈতিক অবস্থা কীরকম ছিল?
উত্তরঃ গুপ্তযুগের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি। এই যুগে ধান, গম, যব, তিল, ডাল, ইক্ষু, জ্যাম, নাশপাতি, নারকেলের চাষ হত। স্কন্দগুপ্ত গুজরাতের বিখ্যাত জলসেচের কেন্দ্র সুদর্শন বাঁধ মেরামত করিয়ে ছিলেন। এ যুগে গোরু, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি পশুপালন করা হত। গুপ্তযুগে বস্ত্রশিল্পের অগ্রগতি ঘটেছিল। এ সময়ে মসলিন, রেশম, সুতিবস্ত্র, পশমের কাপড় প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়। অন্যান্য শিল্পের মধ্যে হাতির দাঁতের কাজ, পাথর খোদাই, ধাতুশিল্প, কান্ঠশিল্প, পোড়ামাটির কাজ জনপ্রিয় ছিল। গুপ্তযুগে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সমৃদ্ধি ঘটেছিল। গঙ্গা, যমুনা, কাবেরী প্রভৃতির মাধ্যমে জলপথে বাণিজ্য চলত মূলত চিন, পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের সঙ্গে। রপ্তানি দ্রব্য ছিল বিভিন্ন ধরনের মশলা, মৃগনাভি, চন্দন কাঠ, সুতিবস্ত্র প্রভৃতি। আমদানি দ্রব্যের মধ্যে রেশম, ঘোড়া, তামা,নীলকান্তমণি ছিল প্রধান।

১৩. মৌর্যযুগে ভারতে কৃষিব্যবস্থা কেমন ছিল?
উত্তরঃ (১) রাজা সাধারণত ফসলের এক ষষ্ঠাংশ কর পেতেন। এর নাম ছিল ভাগ।‘বলি’ বা কর ছিল অতিরিক্ত ভূমি-রাজস্ব। (২) মৌর্য পূর্ব যুগেই কৃষিব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছিল। মৌর্য শাসকেরা কৃষিব্যবস্থার ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি করেন। (৩) অর্থশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, সীতাধ্যক্ষ নামক কর্মচারী কৃষিব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করতেন। বীজ সংগ্রহ, জমিতে কৃষক নিয়োগ, কৃষককে কৃষিকাজের সরঞ্জাম জোগান দেওয়া সব কাজই সীতাধ্যক্ষ তত্ত্বাবধান করতেন। (৪) মৌর্য যুগে ধান, গম, জোয়ার, বাজরা, তুলো, আখ ইত্যাদি চাষ হত এবং কৃষিপণ্য থেকে মৌর্য রাজকোষে প্রচুর অর্থাগম হত। (৫) মেগাস্থিনিসের মতে, রাষ্ট্র কৃষিকাজে কৃষকদের উৎসাহ দিত। নতুন নতুন এলাকায় চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কৌটিল্য নতুন জনবসতি গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

১৪. মৌর্যযুগের নারীর সামাজিক মর্যাদা কেমন ছিল?
উত্তরঃ অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায়, প্রয়োজন হলে মহিলারা রাষ্ট্রীয় শিল্পসংখ্যায় বস্ত্র রং করা, সেলাই, তাঁতের কাজ, ঝুড়ি বোনা ইত্যাদি দ্বারা পরিবার প্রতিপালন করতেন। স্ত্রীলোক নৃত্য, কণ্ঠ জীবিকা নির্বাহ করতেন ও যন্ত্রসংগীতে অধ্যাপনা করে বা গুপ্তচরের কাজ করে স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার বিবাহ করতে পারতেন। মৌর্যযুগে পর্দাপ্রথার কঠোরতা ছিল না। অভিজাত পরিবারে পর্দাপ্রথা চালু থাকলেও নারী শিক্ষাকে উৎসাহ দেওয়া হত। সাধারণভাবে স্বজাতির মধ্যে বিবাহ হত। বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। নারীরা সামরিক কাজে নিয়োজিত হতেন। নারীরা ধর্মকার্যে ও অংশগ্রহণ করতেন। মৌর্যযুগে নারীর স্বতন্ত্র মর্যাদা বা স্বাধীনতা ছিল না। নারী বাল্যকালে পিতার অধীনে ছিলেন যৌবনে স্বামীর অধীনে, এবং বার্ধক্যে পুত্রের অধীনে থাকতে বাধ্য।

১৫. টীকা লেখো—সুদর্শন হ্রদ?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে রাজকীয় উদ্যোগে জলসেচ ব্যবস্থার একটা প্রধান উদাহরণ সুদর্শন হ্রদ। মৌর্য-আমল থেকে গুপ্ত আমল পর্যন্ত ওই হ্রদের ব্যবহার ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে কাথিয়াওয়াড় অঞ্চলে ওই হ্রদটি বানানো হয়েছিল। ওয়ার কথার মানে শহর। এটি একটি নদীভিত্তিক বড়ো মাপের সেচ প্রকল্প। অশোকের শাসনকালে সেচ প্রকল্পটিতে কয়েকটি সেচ খালও যোগ করাহয়। শকশাসক রুদ্রদামন ওই হ্রদটির সংস্কার করেন। বাঁধটিকে আরো বড়ো ও শক্ত করা হয়। এই পুরো কাজের বর্ণনা রুদ্রদামন জুনাগড়ে একটি শিলালেখতে খোদাই করিয়েছিলেন। গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্তের শাসনের প্রথম বছরেই আবার হ্রদটি মেরামতির দরকার হয় খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় শতক পর্যন্ত সুদর্শন হ্রদের টানা ব্যবহার হয়েছিল।

১৬. ফাসিয়ানের লেখা থেকে ভারতীয় সমাজ সম্পর্কে কী জানা যায়?
উত্তরঃ গুপ্তসম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে ফাসিয়ান চিন থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন। তার লেখায় উপমহাদেশের মানুষ ও সমাজ বিষয়ে নানান কথা জানা যায়। ফাসিয়ান লিখেছেন, উপমহাদেশে অনেকগুলি নগর ছিল। মধ্যদেশের নগরগুলি ছিল উন্নত। সেখানে জনগণ সুখে বাস করত। তবে চণ্ডালরা নগরের বাইরে থাকত বলে জানিয়ে ছেন। যারা দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল তাদের চণ্ডাল বলা হয়। এদেশের লোকেরা অতিথিদের যত্ন করত। বিদেশিদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখত। পাটলিপুত্র ছিল দেশের সেরা নগর। সেখানকার লোকেরা ছিল সুখী ও সম্পদশালী। ধনী বৈশ্যরা নগরের বিভিন্ন স্থানে দাতব্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতেন। বিনামূল্যে সেখান থেকে ঔষধ দেওয়া হত।
গরিবদের খাওয়ার ও থাকার ব্যবস্থা সেখানে ছিল।

১৭. সুয়ান-জাং-এর লেখায় ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : সুয়ান জাং-এর লেখায় ভারতবর্ষ ইন তু নামে পরিচিত হয়েছে। তাঁর মতে ইন তুর লোকেরা নিজেদের দেশকে বিভিন্ন নামে ডাকে। দেশটির পাঁচটি ভাগ—উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য, ইন-তুতে আশিটি রাজ্য আছে। প্রতিটি রাজ্যে নিজস্ব রাজা থাকলেও তারা বড়ো সম্রাটের অনুগত ছিল। সুয়ান জাং ইন তুকে মূলত গরমের দেশ বলেছেন। সেখানে নিয়মিত বৃষ্টি হয়। উত্তর ও পূর্ব অঞ্চলে মাটি খুবই উর্বর। দক্ষিণ অঞ্চল বনে ঢাকা। পশ্চিম অঞ্চলের মাটি পাথুরে ও অনুর্বর। ধান ও গম প্রধান কৃষিজ ফসল। জনগণের মধ্যে জাতিভেদ ছিল শহরের বাড়িগুলি ইট ও টালি দিয়ে তৈরি হত। বাড়ির বারান্দা তৈরি করা হত কাঠ দিয়ে। গ্রামের বাড়িগুলির দেওয়াল ও মেঝে ছিল মাটির। নানানরকম দামি ধাতু ও পাথরের ব্যাবসা চলত। শাসকরা জনগণের সুযোগ সুবিধার কথা মাথায় রাখত।

📢 PDF File Uploded Soon...

No comments

Hi Welcome ....